Thursday, September 5, 2019

এই আমি, আর এই আমার নগরী

এই আমি, আর এই আমার নগরী

 মোঃ অলিউল্লাহ্


 মুখটা যখন শুকনো পাতার মতো মুচরে থাকে, আর দু’টো চোখে ছল ছল করতে থাকা বিষাক্ত দু’ফোটা অশ্রু বড় জোর করেও যখন বাহির হবার অবকাশটুকু পায়না; কেবল দীর্ঘ অপলক চাহনিতে ঐ অসীম আকাশটার দিকেই তাকিয়ে থাকি উদ্দেশ্যহীন, মানসিক সান্ত্বনা ও আকাঙ্ক্ষিত হতাশার সামান্য নিবিড়তা আর স্তব্ধতায়। সহানুভূতির পারাবার পেরিয়ে কোন এক বিষন্ন, ক্লান্ত আর অত্যন্ত ভয়ংকর সন্ধ্যার তীরে, আমার তরী ডুবতে চলেছে। 

অদৃষ্ট আমার স্বপ্নবাস্তব পৃথিবীতে স্রোতের জলে ভাসতে ভাসতে কল্পনাগুলো হয়তো সত্যি হলেও কোন ক্ষতি ছিল না; ছিল না কোন মহাপ্রাপ্তি--বরং পরম প্রিয় দু’চারটা মানুষ (মা-বাবা-শুভাকাঙ্ক্ষি ভাই ও বন্ধুরা অথবা আরোও একটু বেশি প্রত্যাশী প্রিয় কেউ) দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে পারতো, যাক এতগুলো বছর আর সেই প্রত্যেকটি সময়ের সাথে মিশে যাওয়া বহু কষ্টে অর্জিত আমাদের সেই অর্থ আর স্নেহের প্রতিদানটা অতি কিঞ্চিত হলেও পূরণ করলে। 

তিলে তিলে গড়ে তুলেছি তোমায় সেই হামাগুড়ি দিয়ে চলতে থাকা থেকে আজকের এই বাউন্ডুলের গলিতে গলিতে ও সরু রাস্তায় হিসেবহীন দিনভর পথচলা পর্যন্ত। বহুকালের বোজা বইতে থাকা সেই প্রাণীগুলো হয়তো একমূহর্তের জন্য হলেও দমফেলে বলতে পারতো-উদ্ধার করেছো বটে। 

ভাবতেই নিজের প্রতি কেমন ঘেন্না হচ্ছে- এমনই যদি ঘটতো, তবে সেটা আমার সাথে ঘটতে যাবে কেন? এতো সহজেই যদি এই মহান ব্যক্তিরা এমন হতচ্ছেড়া অকম্মার কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, তাহলে যদি আবার মহাভারতের গঠনবিন্যাসে ভুল প্রমাণিত হয়! 

বিষণ সর্বনাশে ভৌতিক সেই মধ্যরাতের স্থবির সময়টুকু যেন হামেশাই আমায় পেয়ে বসল, প্রিয়ারূপী কালরূপ এক প্রতিচ্ছবি যেন রাক্ষসীরূপে আমাতে আছড় করে। আমি হারিয়ে যাই কর্মহীন, অদূর বাস্তবভাবনা ফেলে, মোহতৃপ্তির আনন্দঘন আবেগ-আপ্লুত আর ক্ষণ চৈতন্যের মহাপ্রাপ্তির অন্ধ সুরঙ্গে। অজ্ঞান আমি, সুদীর্ঘকালের অঙ্কে। 

কেবল চেতনায় আমার যত দূরহ ভাবনা ও দুশ্চিন্তার সমারোহ; যেখানে লক্ষকোটি অপরিচিত হাসিমাখা বদনের পাশে হাজার বছরের দুঃখভারাক্রান্ত কিছু অতি পরিচিত মুখ, বড্ড অতিষ্ট এবং নিন্দিত চাহনিতে সামান্য পলকে একটিবার আমার এই মন্থর দুর্ভাবনার বেদনাচিহ্ণিত মুখখানা দেখে, তাৎক্ষনাৎ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। 



ভাগ্যে অবিশ্বাসী আমার মৃত্যুজ্বালায় অগ্নিনির্বাপক হিসেবে তা কাজ করে আমার জন্য। পেছনে ধূসর প্রতিবেশ- মরুভূমির শেষ, সামনেই মহাসমুদ্র ছিলামতো বেশ, পেলাম না কী এজীবনে! মর্তে জন্মে যে মর্তের স্বাদ অমৃত বোধ হয়, নরকে কী সেই স্বাদ আস্বাদনের উপায়মাত্র কল্পনা করা সম্ভব? 

জ্বরমুখে যেমন সকল খাদ্যই অখাদ্য বলে গণ্য হয়, তেমনি নরকের অগ্নিতাপে অনুভূতি বরফশীতল আর মন্থর হবে। কল্পনাতীত আবেগ ভোতা হয়ে, লোহা অনলে পুড়ে যেমন লালিমা তৈরি হলেও এর কোন চেতনা বোধ সম্ভব নয়--তেমনি অগ্নিদাহ দেহখানিরও কোন হিতাহিত বোধ থাকার কথা নয়।

 স্বর্গ হয়তো কিছুটা ওরকমই, যেখানে বেদনা বোঝার অনুভুতি বিলোপ্ত হবে। সহস্র বিঘা জমির মাঝখানে ছাতার মতো বটবৃক্ষ যেমন সকল ঋতুতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে প্রকৃতির লড়াইয়ে টিকে থাকে। তেমনটা কেন জানি আমারো ইচ্ছে করে। বড় বেশি ইচ্ছে করে এই মর্তেই মিশে থাকতে।


No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment