নির্মলেন্দুগুণ


নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী[১] (জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫, আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ), যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত,তিনি একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা,
এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।

                                                                                                            

নির্মলেন্দুগুণ এর জনপ্রিয় কবিতা সমূহঃ


পৃথিবী 
নির্মলেন্দুগুণ

তুমি ডেকেছিলে, আমি চলে এসেছিলাম একা ।
কোনো কিছু সঙ্গে নিইনি, সঙ্গে করে নিইনি পানীয়,
তিল-তিসি-তামা বা বিছানা বালিশ, তুমি বলেছিলে
সব পাওয়া যাবে, –এ শহর নেশার ও নারীর ।
তুমি ডেকেছিলে, জননীর কোমল বিছানা ছেড়ে
চলে এসেছিলাম, শুধু তোমার ডাকে ।

পেছন থেকে অদৃশ্য নিয়তি এসে পাপের পিচ্ছিল লেজ
টেনে ধরেছিল । সর্বশেষ স্পর্শের আনন্দে উন্মাতাল
মায়ের বিছানা জড়িয়ে ধরেছিল তার শিশুকে ।
দীর্ঘশ্বাসের শব্দে এলোমেলো হয়েছিল জন্মের প্রথম চুল,
সাজানো ভুবন ফেলে চলে এসেছিলাম একা;
শুধু তোমার ডাকে। -শুদু তোমার ডাকে।

তুমি ডেকেছিলে, পরীর বাগান ছেড়ে চলে এসেছিলাম ।
তুমি ডেকেছিলে, কোমল কিচেন ছেড়ে চলে এসেছিলাম ।
তুমি ডেকেছিলে, শুঁড়িখানার মাতাল আনন্দ ছেড়ে
চলে এসেছিলাম একা, শুধু তোমার জন্যে ।
তুমি মাটির ফোঁটার একটি তিলক দিয়ে
আমাকে ভোলাতে চাও?

আমি খাদ্য চাই ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মতো, দ্রৌপদীর মতো
বস্ত্র চাই, চাই সর্বগ্রাসী প্রেম, চাই শূর্পণখার মতো নারী,
চাই আকন্ঠ নিমগ্ন নেশা, চাই দেশী মদ ।
আমার সমস্ত ক্ষুধা তোমাকে মিটাতে হবে,হে পৃথিবী,
তুমি বলেছিলে অভাব হবে না, এ-পৃথিবী নেশা ও নারীর,
আমি চলে এসেছিলাম একা, শুধু তোমার জন্যে ।


                                                                                                            
তুলনামূলক হাত


তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷
তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই
খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;
আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর
চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷
তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে
খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,
সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷
তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন
তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷
আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো
তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷
তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে
আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি
তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো
আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই
হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷

                                                                                                            

তোমার চোখ এতো লাল কেন?

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’


                                                                                                            

শুধু তোমার জন্য

কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে
গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও
কতবার যে আমি সে কথা বলিনি
সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।
তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য
দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম
আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ
এই ওঠো,
আমি, আমি
আর অমি এ-কী শুনলাম
এমত উল্লাসে নিজেকে নিক্ষেপ করবো তোমার উদ্দেশ্যে
কতবার যে এরকম একটি দৃশ্যের কথা আমি মনে মনে
কল্পনা করেছি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন।
আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,
আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য,
আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।
তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।

                                                                                                            

পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু

একদিন চাদঁ উঠবে না, সকাল দুপুরগুলো
মৃতচিহ্নে স্থির হয়ে রবে
একদিন অন্ধকার সারা বেলা প্রিয়বন্ধু হবে
একদিন সারাদিন সূর্য উঠবে না।
একদিন চুল কাটতে যাবোনা সেলুনে
একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো
একদিন কালো চুলগুলো খসে যাবে, একদিন
কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না।
একদিন জনসংখ্যা কম হবে এ শহরে
ট্রেনের টিকিট কেটে
একটি মানুষ কাশবনে গ্রামে ফিরবে না
একদিন পরাজিত হবো।
একদিন কোথাও যাবো না, শূণ্যস্থানে তুমি
কিম্বা অন্য কেউ বসে থেকে বাড়াবে বয়স
একদিন তোমাকে শাসন করা অসম্ভব ভেবে
পূর্ণিমার রাত্রে মরে যাবো।
একদিন সারাদিন কোথাও যাবো না।

                                                                                                            



আবার যখনই দেখা হবে

আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেব স্ট্রেটকাটঃ ‘ভালোবাসি
এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে ওঠে,
অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়,
আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষ চিরে
তোমার প্রতিমা। দেয়ালে টাঙ্গানো কোন প্রথাসিদ্ধ
দেবীচিত্র নয়, রক্তের ফ্রেমে বাঁধা হৃদয়ের কাচে
দেখবে নিজের মুখে ভালোবাসা ছায়া ফেলিয়াছে।

এরকম উন্মোচনে যদি তুমি আনুরাগে মুর্ছা যেতে চাও
মূর্ছা যাবে,জাগাবো না,নিজের শরীর দিয়ে কফিন বানাবো।

ভালোবাসি বলে দেব স্ট্রেটকাট, আবার যখনই দেখা হবে।

                                                                                                            


আসমানী প্রেম

নেই তবু যা আছের মতো দেখায়
আমরা তাকে আকাশ বলে ডাকি,
সেই আকাশে যাহারা নাম লেখায়
তাদের ভাগ্যে অনিবার্য ফাঁকি !

জেনেও ভালোবেসেছিলাম তারে ,
ধৈর্য ধরে বিরহ ভার সবো ;
দিনের আলোয় দেখাবো নিষ্প্রভ
জ্বলবো বলে রাতের অন্ধকারে ।

আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে
মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে ?
আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে
গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে !

মাটি হলে পাবে শস্য- বীজে
বাতাস হলে পাবে আমায় ঝড়ে !
মৃত্যু হলে বুঝবে আমি কি যে ,
ছিলেম তোমার সারাজীবন ধরে !

                                                                                                            

মোনালিসা

চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই
সদ্য-রজঃস্বলা এক কিশোরীরে
যে জানে না, কী কারণে হঠাৎ এমন
তীব্র তুমুল আনন্দ-কাতরতা
ছড়িয়ে পড়েছে তার নওল শরীরে।

মনুর ভাষায় গৌরী, এইটুকুনু মেয়ে
চমকে ওঠে নিজের পানে চেয়ে
দেখে তার অঙ্গজুড়ে ফুলের উৎসব।
মনে হয় ছড়িয়ে পড়েছে মর্ত্যে
নার্গিস আর বার্গিসের স্বর্গপুষ্পঘ্রাণ।
মাকে ডেকে মেয়েটি শুধায়
আমার শরীরে ফুলের সৌরভ কেন?
মেয়েরা বুঝি ফুলের উদ্যান?’

মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা বলেন,
বোকা মেয়ে, কিচ্ছু বোঝে না,আয়,
আজ আমি কুসুমগরমজলে
তোকে নিজ হাতে গোসল করাব।
মার বুকে মাথা পেতে মেয়েটি তখন
নিজেই কখন যেন মা হয়ে যায়।

এই লাভাস্রোত, এই সঙ্গকাতরতা
তাকে শেষে কোথায় ভাসিয়ে নেবে
জানে না সে; বোঝে না সে
তার বৃক্ষপত্রে কার হাওয়া লাগে?
অগ্নিকুন্ডে বায়ুর মতন ছুটে এসে
কে তাকে জড়াবে আদরে, সোহাগে?

জানে না সে, বোঝে না সে তার চোখে,
ঠোঁটে, তলপেটে, ঘুমভাঙা স্তনে
জেগেছে যে ঢেউ তার গন্তব্য কোথায়?
আনন্দ পুরুষে? নাকি আনন্দ সন্তানে?

এইসব দেহতত্ত্ব জানার আগেই,
এইসব গূঢ় গোপন রহস্যভেদ
হওয়ার আগেই
আষাঢ়ের এক বৃষ্টিভেজা রাতে
মোনালিসার বিয়ে হয়ে গেল
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সাথে।

লিওনার্দো অতঃপর দীর্ঘ রাত্রি জেগে
জীবনের শেষ রং দিয়ে
তাঁর প্রিয়তমা তরুণী ভার্যা
মোনালিসাকে ক্যানভাসে আঁকলেন।

শিল্পের ঔরসে মোনালিসা গর্ভবতী হলে
স্বর্গ থেকে মখলুকাতে পুষ্পবৃষ্টি হলো।
সিন্ধুর বিজয়রথ পশিল নদীতে
শান্ত হলো ক্ষিপ্তোন্মত্ত সমুদ্রের জল।

মোনালিসা, য়ুরোপের প্রথম রমণী
পুরুষের কান্ড দেখে হাসে।

                                                                                                            

দুজনের ভাত

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
মনে কি পড়ে না? পড়ে ।
ভালো কি বাসি না? বাসি ।
শ্লথ টেপ থেকে সারা দিন জল ঝরে,
সেই বেনোজলে এঁটো মুখ ধুয়ে আসি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
প্রেম কি জাগে না? জাগে ।
কিছু কি বলি না? বলি ।
তিতাস শিখায় যতটুকু তাপ লাগে,
অনুতাপে আমি তার চেয়ে বেশি গলি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
আমি কি কাঁদি না? কাঁদি ।
কাঁচা কাকরুল ভাজার কবিতা লেখি,
বড়-ডেকচিতে দুজনের ভাত রাঁধি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে-খেতে
কিছু কি ভাবি না? ভাবি ।
ভেবে কি পাই না? পাই ।
তবু কি ফুরায় তুমি-তৃষ্ণার দাবী?
ভাত বলে দেয়, তুমি নাই, তুমি নাই ।

                                                                                                            

আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও

তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হব,
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও।
এই নাও আমার যৌতুক, এক-বুক রক্তের প্রতিজ্ঞা।
ধুয়েছি অস্থির আত্মা শ্রাবণের জলে, আমিও প্লাবন হব,
শুধু চন্দনচর্চিত হাত একবার বোলাও কপালে।
আমি জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উড়াব গাণ্ডীব,
তোমার পায়ের কাছে নামাব পাহাড়।
আমিও অমর হব, আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও।
পায়ের আঙুল হয়ে সারাক্ষণ লেগে আছি পায়ে,
চন্দনের ঘ্রাণ হয়ে বেঁচে আছি কাঠের ভিতরে।
আমার কিসের ভয় ?
কবরের পাশে থেকে হয়ে গেছি নিজেই কবর,
শহীদের পাশে থেকে হয়ে গেছি নিজেই শহীদ,
আমার আঙুল যেন শহীদের অজস্র মিনার হয়ে
জনতার হাতে হাতে গিয়েছে ছড়িয়ে।
আমার কিসের ভয় ?
তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হব,
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও
এই দেখো অন্তরাত্মা মৃত্যুর গর্বে ভরপুর,
ভোরের শেফালি হয়ে পড়ে আছে ঘাসে।
আকন্দ-ধুন্দুল নয়, রফিক-সালাম-বরকত-আমি;
আমারই আত্মার প্রতিভাসে এই দেখ আগ্নেয়াস্ত্র,
কোমরে কার্তুজ, অস্থি ও মজ্জার মধ্যে আমার বিদ্রোহ,
উদ্ধত কপাল জুড়ে যুদ্ধের এ-রক্তজয়টিকা।
আমার কিসের ভয় ?
তোমার পায়ের নিচে আমিও কবর হব,
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও।

                                                                                                            

টেলিফোনে প্রস্তাব
আমি জানি, আমাদের কথার ভিতরে এমন কিছুই নেই,
অনর্থ করলেও যার সাহায্যে পরস্পরের প্রতি আমাদের
দুর্বলতা প্রমাণ করা সম্ভব। আমিও তো তোমার মতোই
অসম্পর্কিত-জ্ঞানে এতদিন উপস্থাপন করেছি আমাকে।
তুমি যখন টেলিফোন হয়ে প্রবেশ করেছো আমার কর্ণে-
আমার অপেক্ষাকাতর হৃৎপিণ্ডের সামান্য কম্পনও আমি
তোমাকে বুঝতে দিই নি। দুর্বলতা ধরা পড়ে যায় পাছে।
তুমিও নিষ্ঠুর কম নও, তুমি বুঝতে দাওনা কিছু। জানি,
আমার কাছেই তুমি শিখেছিলে এই লুকোচুরি করা খেলা।
কিন্তু এখন, যখন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে আমাদের বেলা,
তখন ভেতরের চঞ্চলতাকে আমরা আর কতটা লুকাবো?
অস্ত যাবার আগে প্রবল সূর্যও চুম্বন করে পর্বত শিখর,
আর আমরা তো দুর্বল মানুষ, মিলনে বিশ্বাসী নর-নারী।
কার ভয়ে, কী প্রয়োজনে আমরা তাহলে শামুকের মতো
স্পর্শমাত্র ভিতরে লুকাই আমাদের পল্লবিত বাসনার শূঁড়।
তার চেয়ে চল এক কাজ করি, তুমি কান পেতে শোনো,
তুমি শুধু শোনো, আর আমি শুধু বলি, বলি, ভালবাসি।

                                                                                                            

উপেক্ষা
অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উৎস গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷

আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?

                                                                                                            


আশাগুলি

জ্যা-মুক্ত হয়নি চিত্ত
অধীর মিলনে কোনোদিন ।
পরশে খুলেছে দ্বার, বারবার
কেটেছে অস্থির ঘুমে
শূন্য চিরশয্যা তুমি-হীন ।

অপক্ব মৈথুনে বিবসনা
শ্লীলতা ভাঙেনি শব্দ,
আমাদের অবিমৃষ্য যুগলযৌবন
অথচ জেগেছে কামে
সুপ্তোত্থিতে, প্রিয়তমে
মুখর মৃণালে, প্রিয় নামে ।

তোমাকে বেসেছি ভালো
তীব্রতম বেদনার লাগি ।
মৃত্যুর শিয়রে বসি
সেই প্রিয় মুখে রাত্রি জাগি
একদিন উচ্চরিত প্রার্থনার ভাষা;
করেছিনু আশা, আজ পূর্ণ হবে ।

                                                                                                            

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment