তোমার চোখ এত লাল কেন
নির্মলেন্দু গুণ
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক।আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেক্ট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করুক:
আমার জল লাগবে কিনা, নুন লাগবে কিনা।
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না।
এঁটো বাসন গেজ্ঞি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক।কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক: ’তোমার চোখ এত লাল কেন?’
বছর চারেক পর
--------------------------------সৃজা ঘোষ
দেখা হল বছর চারেক পর
তুইও এখন অন্য কারোর বর, অন্য কারোর ঘর।
এখন অনেক হাল্কা রঙের শার্ট,
ঠোঁটের নীচের চুম্বকটাও নেই
ভিড়ের মাঝে দেখতে পেলাম তোকে,
দাঁড়িয়ে গেলাম বিপদ পাড়াতেই।
এখন অনেক শান্ত হয়েছিস,
রগচটা সেই চোখ দুটো ‘সংসারী’…
বছর চারেক পরে আবার দেখা,
মুখ ঢেকেছে কাঙ্ক্ষিত চাপ দাড়ি!
এখন অনেক বুঝতে পারিস বুঝি?
আমার প্রিয় গন্ধটা আর মাখিস?
নতুন মানুষ আদর করার পরে-
আলগা পিঠে জল-আলপনা আঁকিস?
আমার মতন সেও কি অভিমানী?
চুল খুলে দেয়?, লাল টিপ সেও পরে?
আচ্ছা, অমন ঝক্কি পোহায় কে তোর!
কেই বা এখন মিথ্যে নালিশ করে?
নেভি ব্লু-টা ছাড়াও তো শার্ট পরিস,
আমার বেলায় রাজিই হতিস না যে?
আচ্ছা এখন বাংলা ছবি দেখিস?
নাকি আজও আঁতেল ছবি- বাজে?
এখনও কি ঠান্ডা লাগার ধাঁচ?
মাথা মুছিস কার বকুনি খেয়ে?
ফুটবলে আর হাত পা কাটিস নাকি?
ভাল্লাগে আর কাব্য করা মেয়ে?
আগের মতই দেরিতে ঘুম ভাঙে?
নাকি ‘নতুন’ আগেই জাগায় তোকে?
কানের নরম কামড়ে ধরে কেউ,
একটা কিছু বলতে চাওয়া ঝোঁকে!?
নতুন মানুষ বৃষ্টি ভালবাসে?
আমার মতন জোর করে ভেজবার?
নাকি এখন তোর বারণের জোরে,
বৃষ্টি থামায় বর্ষা হাজার বার!
সেই ব্যথাটা আজও জ্বালায় খুব?
সেও কি জানে কপাল টিপে দিতে?
আচ্ছা অমন জাপটে ধরে সে-ও?
পেছন থেকে ঝাঁপায় অতর্কিতে?
তার নিশ্চই বুকের ব্যথা নেই,
নিশ্চই নেই মন খারাপের ব্যামো?
আজকে কেমন প্রাপ্ত দেখায় তোকে,
আগের মতন নাক উঁচু নস কেন!
এই তো কেমন বেল্ট ঘড়িও পরিস,
আমার বেলাই চেনের বাড়াবাড়ি?-
নতুন মানুষ দিব্যি রেখেছে তো!
কক্ষণো তার জন্যে বলিস ‘আড়ি’?
কাবাব আজও অমন ভালবাসিস?
মাংস খেকো নাম কি দিতাম সাধে
আজকে দেখি ভিড়ের মাঝে তোকে
সত্যি গুলোই বলতে কেমন বাধে…
আচ্ছা, তোর ওই অভ্যেস টা আছে?
অল্প কথায় আজও ছেড়ে আসিস?
নতুন মানুষ ঝগড়া করার আগেই,
বুকের ভেতর অমন ভালবাসিস!
তারও হঠাৎ মন্দ কিছু হলে,
চুমুর জোরে ঘুম পাড়িয়ে দিস?
আচ্ছা সেও শক্ত করে ধরে
কাছে চেয়ে জ্বালায় অহর্নিশ?
সেও কি খুব তুই-পাগলী মেয়ে?
চশমা পড়ে? কথায় কথায় কাঁদে?
সেও কি খুব কষ্ট পেলে একা-
খুব গোপনে জায়গা খোঁজে ছাদে?
সে বুঝি খুব বকবকিয়ে নয়?
স্বল্পভাষী? চাইতি যেমন তুই?
আজকে কেমন নরম দেখায় তোকে,
একটা ভিড়ে থমকে গেছে দুই।
এই যে এখন চুপটি করে একা,
দাঁড়িয়ে আছিস নালিশ ভুলে গিয়ে
নতুন মানুষ, নতুন নতুন প্রেমে
খুব বেঁধেছে শক্ত করে নিয়ে?
আমার মত ও ও কি এত ভোগে?
শরীর খারাপ হলেই তোকে চায়?
বিদঘুটে সব গান শুনলে ওর ও
সমস্ত রাগ এমনিই কেটে যায়!
ইনসোম্যানিক সে নিশ্চই নয়?
রাত জাগবার ঝক্কিটা আর নেই…
ভীষণ ভিড়ে লুকিয়ে দেখি তোকে
হারিয়ে যাব ও চোখ ফেরালেই।
তোকে দেখে সুখীই মনে হল…
হয়ত নতুন ঘরেই বেশি আলো-
আমার মতন জ্বালায় না আর কেউ,
নতুন মানুষ আমার চেয়েও ভাল।
দেখা হল বছর চারেক পর।
তুই এখনো আমার একার ঘর
আমার একার বর ।।
কালেক্টেড || Source: https://srijaghosh.wordpress.com/category/uncategorized/page/24/
নাশকতা
--------------------------------সৃজা ঘোষ
তুই ফিরে গেলে,
আমার সমস্ত অগোচর ভিজতে বসে মেঘের নীচে।
বাক্স খুলে দেয় একলা রাতের চাঁদ, সমস্ত জ্যোৎস্না উলটে পড়ে
মেঝের উপর। অর্ক, আমি পালাতে চাই।
মৃত্যুমুখী এই গ্রহতে বড্ড অসুখ- অর্ক, আমি পালাতে চাই।
আমার সাদা মেঝেয় এখন চাপ চাপ রক্ত, কবির
মৃত্যুতে ভেসে যাচ্ছে ভূখন্ডের গর্ভ। ওরা জন্ম মানে না!
মানে না সৃষ্টির আদিম সত্য;
বুলেটপ্রুফ বুকে যারা বাঁচতে চায়, তাদের দিয়ে আর যাই হোক,
যুদ্ধ হয় না কিছুতেই। বড় বেশি অসুখ এ পোড়া পৃথিবীতে,
এখানে বাতাস বয়ে বেড়ায় বারুদের গন্ধ, বন্দুকের নল বুকে রেখে
প্রেমিক আদর চেনায় কফিনে, জংগীর মত।
ওদের আগে ভালবেসে আনো গর্বের মরণ, অহংকারের আত্মাহুতি।
প্রেম চাই; এখানে আঁধার আনো অর্ক…
নিভিয়ে দাও যেখানে যত আলো সব, যেমন করে চাঁদ নিভে যায়;
অর্ক আমায় নিয়ে চলো-
আমায় নিয়ে চলো অন্য জ্যোতিষ্কে; জ্যোতিষ্ক খুঁজে না পাও যদি,
আমার জন্যে খুঁজে আনো বিকল্প শূণ্যতা
পালিয়ে বাঁচতে না পারি, মরব।
তুই ফিরে গেলি, মেঘের নীচে দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে কবি।
ফিরে আয় অর্ক, প্রেমের আঘাতে আন সুখের রাতের খুন।
আর ততক্ষণ এত নাশকতার ভেতর স্থির অপেক্ষায় থাক চাঁদ।
কালেক্টেড || Source: https://srijaghosh.wordpress.com/category/uncategorized/page/24/
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment