Showing posts with label অতিপ্রাকৃত/ রহস্য/ ভৌতিক গল্প. Show all posts
Showing posts with label অতিপ্রাকৃত/ রহস্য/ ভৌতিক গল্প. Show all posts

Wednesday, October 21, 2020

মুক্তির পথ || মোঃ অলিউল্লাহ

 স্বপ্ন তো প্রায় প্রতিরাতেই দেখি। কিছু স্বপ্ন থাকে যা ভালো লাগার, আর কিছু স্বপ্ন থাকে যা অপ্রত্যাশিত। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার আগ্রহ আমার আছে। কিন্তু কে খুব ভালো ব্যাখা দিতে পারে সেটা জানা নাই। কিন্তু আজ শেষরাতের স্বপ্নটা আমায় এতটাই উদাসীন করে তুলল, খুব কৌতুহলী হলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গেলে হয়তো উনি আমায় ভাল একটা ব্যাখা দিতে পারবে। সারাদিন অনেক কিছুই ভেবেছি। কিন্তু ব্যাখ্যা যতটুকু নিজে করতে পেরেছি, সেটা নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে ইতিবাচকভাবেই করেছি। তথাপি একজন আলেমের সাথে দেখা মিলল। সালাম দিয়ে উনার কাছে কিছুটা সময় চাইলাম। কিছুটা কৌতুহল দেখতে পেলাম উনার চোখে-মুখে।

‘কি বলতে চান? একটু সংক্ষেপে বলবেন। আমার কিছু কাজ আছে।’

কিভাবে বলা শুরু করবো ভাবছি। কিন্তু মনে হচ্ছে আমার বলতে একটু বেশি সময় লাগবে। আমি কি অন্য কোন দিন আসবো?

‘কত সময় লাগতে পারে? ত্রিশ মিনিটে হবে?’

হ্যা আশা করছি এর মধ্যে শেষ করতে পারবো। তবে আরো কিছু সময় লেগে গেলে...।

‘আচ্ছা বলুন। কি বলতে চান।’

আমি আসলে আজ শেষ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটা নিয়ে সারাদিন ভেবেছি। নিজের মতো দু’য়েকটা ব্যাখাও দাড় করিয়েছি। কিন্তু এতে আমি তৃপ্ত নই। আমি চাইছি, কেউ একজন আরো ভাল কোন ব্যাখ্যা আমায় দিতে পারবে, সেজন্যেই...।

‘দাড়ান দাড়ান। আপনি ভুল করছেন। আমি আসলে স্বপ্নের এতো ভাল ব্যাখ্যা দেওয়ার জ্ঞান রাখিনা। আপনি বরং অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারেন।’

তবে আমার মনে হচ্ছে, কথাগুলো শুনে কিছু একটা আমায় বলবেন, যা থেকে আমি শিক্ষা নিতে পারবো।

‘দেখুন আমারও ইচ্ছে হচ্ছে আপনার কথাগুলো শুনি। কিন্তু আপনার কোন কাজে আসবো কিনা জানিনা। আচ্ছা বলুন, কী দেখেছেন স্বপ্নে।’

আমি দেখলাম আমি একটা অচেনা দেশের অচেনা এক শহরে কাজে কাজ করতে গিয়েছি। যেদিন সেখানে পৌছলাম, সেদিনই সেখানে একটা দূর্যোগ শুরু হলো। আগে শহরের বর্ণনা দিয়ে নেই। শহরটা খুবই ছোট একটা দ্বীপ এর মতো। একতলা বিশিষ্ট কিছু বাড়ি ও কিছু টিনের ঘর দেখতে পাচ্ছিলাম। বাড়ি গুলো একটা অন্যটা থেকে দূরবর্তী ছিলো। কিন্তু প্রত্যেকটা বাড়িই আধুনিক স্টাইলে ডেকোরেট করা, অর্থাৎ দেখে মনে হবে অভিজাত বা রুচিশীল মানুষের শখের বাড়ি। কিন্তু শহরে যে খুব ধনী মানুষ আছে এমন নয়। আমার স্বপ্নটার সাথে দু’য়েকটা কাহিনীর মিল আছে। প্রথমত আমি নূহ (আঃ) জীবনী পড়ে যা জানতে পেরেছি তার সাথে কিছুটা মিল আছে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের একটি চলচ্চিত্রের একটা অংশের সাথে মিল খোঁজে পাই। কিন্তু যেই ব্যাপারটা জন্য আমি কোন আলেমের কাছে স্বপ্নের ব্যাখা চাইছি সেটা খুব আশ্চর্যজনক।

এবার বলছি কি ঘটছিলো সেখানে। কোথা থেকে যেনো পানির ঢল এসে সবকিছু প্লাবিত করে দিচ্ছিল। চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গেলো। অসংখ্য মানুষের চিৎকার যেনো এক মুহুর্তের মধ্যে পানির সাথে মিলিয়ে গেলো। ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, গৃহপালিত প্রাণীসহ সবকিছু এক মুহূর্তের মধ্যে পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছিল। অনেক দূরে দেখতে পেলাম মসজিদে যে গালিচা বা প্লাস্টিকের যে জায়নামাজ থাকে, সেগুলো ভেসে ভেসে আসছে। অলৌকিকভাবে কিছু মানুষ সেই গালিচার উপর দাড়িয়ে রয়েছে স্থিরভাবে। কিন্তু তারা ডুবে যাচ্ছে না। তারা সবাই নামাজে দাড়ানোর মতো খুবই শৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে আছে। গালিচা গুলো সব ভেসে ভেসে একজায়গায় এসে একত্রিত হলো।

‘তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’

দুঃখিত আমি আমার অবস্থানের কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। আমি অনেকটা দূরে একটা উচুঁ  টিলার উপর দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম। দেখলাম তখনো সেই টিলায়  পানি পৌছায়নি। টিলার চূড়ায় একটা টিনের ঘর রয়েছে। ঘরে অনেক পুরাতন আসবাবপত্র। কৃষ্ণবরে্ণর দুইজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে আছে। বাহিরে কী হচ্ছে সেসব নিয়ে তাদের মধ্যে কোন উদ্বেগ দেখতে পায়নি। তবে ঘরের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো আমার দুঃসম্পর্কের এক মামা। উনি আমায় বলল- ‘তুমি এই বিপদের মধ্যে এখানে কেন আসছো? আমরাও বিপদের বাইরে না। যেকোন সময় আমাদের বাড়িও ডুবে যেতে পারে।’


আমি ওনাকে অনেক অনুরোধ করলাম এই ঘরে আমাকে আশ্রয় দিতে। উনি প্রথমে ইতস্তত করছিল, পরে বলল- ‘টাকা পয়সা আছে তোমার কাছে?’

আমি বললাম- টাকা পয়সা যা ছিলো এদেশে আসার পথেই খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি আপনাদের ঘরের সকল কাজ করে দেবো। দয়া করে আমাকে থাকতে দেন। উনি রাজি হলো। এরপর যা দেখলাম, তা আরো বেশি লোমহর্ষক। দূরের সেই গালিচায় যারা রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন অনেকগুলো খাবার নিয়ে প্রত্যেকের কাছে যাচ্ছে, আর বলছে ‘যার যার কাছে টাকা আছে দাও এবং খাবার কিনে খাও।’

দূরে হলেও কী করে যেনো আমি তাদের সকল কথা শুনতে পাচ্ছি। একজন লম্বা ব্যক্তি তার শিশু পুত্রকে কুলে নিয়ে কাঁদছে। হয়তো তার স্বজনরা পানিতে তলিয়ে গেছে।

‘আচ্ছা এখানে আপনাকে একটু থামতে বলছি। আর জানতে চাইছি, আপনি গত কয়েকদিনে আর কোন আজব স্বপ্ন দেখেছেন কিনা?’

হ্যা দেখেছি। দুইদিন আগে যে স্বপ্নটা দেখলাম,  সেটা কিছুটা আশ্চর্যজনক ও অনেকটা ছাড়া ছাড়া স্বপ্ন ছিলো। 

‘সেই স্বপ্নটা কি ছিলো? সংক্ষেপে বলেন।’

কিন্তু আপনার তো দেড়ি হয়ে যাবে।

‘আচ্ছা আপনি সময় নিয়ে ভাববেন না। আমার যে কাজটা ছিলো তা পরে করলেও চলবে।’

ঠিক আছে, তাহলে বলছি। সেই স্বপ্নটায় আমি আমার শৈশবের বয়সে ফিরে গিয়েছি। আমার এক বন্ধুকে নিয়ে হিন্দুদের পূজা দেখতে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। আকাশে ঝলমলে বাজি ফুটতে দেখে খুব আনন্দিত ছিলাম আমরা। সেটা ছিল রাতের বেলা। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেখানে নাচ-গান, সার্কাস, বিভিন্ন মূর্তি দেখেছি। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় আমরা অন্ধকারে পথ ভুলে যাই। তখন আমরা দুজনেই হাটতে হাটতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর কোনমতেই হাটতে পারছিলাম না। পা ব্যথা হয়ে এসেছিল। ওহ আমার বন্ধু প্রথমে সেখানে যেতে চাইছিলনা। সে বলছিল হিন্দুদের পূজোয় গেলে, তার মা জানতে পারলে তাকে বকা দিবে। কিন্তু আমি তাকে জোর করে নিয়ে যাই। পথ হারাবার পর ধীরে ধীরে সব কিছু খুব ভৌতিক হতে শুরু করে। চারিপাশে নানা প্রকার শব্দ হচ্ছিল। ভূতুরে কিছু দৃশ্যও দেখে খুব ভয় পেলাম।  একটা সময় দুজন  কাঁদতে কাঁদতে একস্থানে বসে পড়লাম। তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ফজরের আযান শুনতে পেলাম। তারপর আমি ফজরের নামাজ আদায় করে নেই।

‘আপনি নিয়মিত নামাজ পড়েন?’

চেষ্টা করি। যদিও আগে নিয়মিত ছিলাম না।

‘তারপর কি হলো বলেন।’

আগের স্বপ্নের কথা বলবো? নাকি আজকেরটা?

‘হ্যা আজকে যেটা দেখেছেন, সেটা বলুন।’

তারপর আমি দেখলাম, যারা খাবার নিয়ে যাচ্ছিল তাদের খাবার শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু পরবর্তীতে আর খাবারের কোন জোগান নেই। এটা নিয়ে অবশ্য তাদের কোন অনুতাপ নেই। আমি ঘরে ভিতর গেলাম। দুই/তিন এভাবে কেটে গেল। তারপর বাহিরের আর কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না। দেখতেও পাচ্ছিলাম না কিছু। সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেলো। এরপরেই শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। আমি যেই ঘরে ছিলাম সেই ঘরের লোকজন প্রথমে খাবার না পেয়ে ছটফট করছিল এরপর অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি বিষণ ভয়ার্ত চোখে দেখতে লাগলাম বৃষ্টির কী তান্ডবলীলা। ধীরে ধীরে ঘরের চাল ফোটা হয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টির পানিতে সারা ঘর ভিজে গেল এবং বাহিরে পানির ঢল ভিতরে আসতে শুরু করল।

ভয়ে আর আর্তনাদে আর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভব করলাম। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। ঘড়িতে সময় তখন ৫:১০ মিনিট। ফজরের নামাজ আদায় করলাম।

‘আপনি বলছিলেন আপনার স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা করেছেন। কী ব্যাখ্যা করেছেন সেটা শুনতে চাই।’

না তেমন গুরুত্ববহ কিছু না।

‘তবুও বলুন।’

আমার মনে হয়েছে প্রথম স্বপ্নের সাথে দ্বিতীয় স্বপ্নের যোগসূত্র আছে।

‘কীভাবে?’

প্রথমত পূর্বের স্বপ্নের সময় ও পরবর্তী স্বপ্নের সময় খুব কাছাকাছি। প্রথম স্বপ্নে অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তু ছিলো, তেমনি দ্বিতীয় স্বপ্নেও সুপারন্যাচারাল অনেক কিছু দেখলাম। প্রথম স্বপ্নে আমরা যাচ্ছিলা মূর্তিপূজা দেখতে এবং ফেরার পথে আমরা অনেক ভয় পাই ও বিপদে পড়ি। দ্বিতীয় স্বপ্নেও অনেক বিপদ ও ভয় পেয়েছি। 

‘আপনি বলছিলেন কোন এক বিষয়ের কারনে আপনি স্বাভাবিক কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীর কাছে না গিয়ে বিজ্ঞ আলেম খোঁজ করছিলেন। সেটা কেন?’

ও হ্যা, সেটা মূলত স্বপ্ন দেখার সময়ের কারণে এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি অলৌকিক ধাচের কিছু স্বপ্ন দেখছি। আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, যেদিন থেকে আমি আমার জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চাইলাম এবং নিজের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন বোধ করলাম, সেদিন থেকেই এই ধরনের স্বপ্ন এমনকি বাস্তবেও অনেক ঘটনা যেগুলো আমার সাথে ঘটছে সেসবের মিল খোঁজে পেলাম। আমি ধরে নিলাম ব্যাপারটা ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। 


হতে পারে এটা আমার জীবনের পরিবর্তনের কারণে হেদায়াতের ইঙ্গিত, যাতে করে আমি জীবন যাপনের সকল ব্যাপারে আরো বেশি সাবধান হতে পারি। জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা চালিয়ে নিতে পারি। আমার প্রথম  স্বপ্ন আমার জন্য অনেকটা সাইরেনের মতো বোধ করছি, আমি নিজেকে ও নিজের আচরণ এবং দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আমার সামনে অনেক বাধা আসবে। আদৌ আমি আমার সরল পথে কতদূর যেতে পারবো সে বিষয়ে আমি সন্ধিহান। আমার পূর্বেকার যাপিত জীবনের অনেক কিছুই অভ্যাসে পরিণত হওয়ায়, সেসব বাহ্যিক ‍দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটতে চায়। আমি সেটাকে আরো প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরবর্তী স্বপ্নকে অভিজ্ঞতা হিসাবে গ্রহণ করতে পারি। এটা কেবল আমার স্বপ্নের ইতিবাচক দিক, যা আমার কল্যাণের উদ্দেশ্যে ভেবেছি।


আরেকটা হলো নেতিবাচক দিক। সেটা নিয়ে আমি খুব ভীতসন্ত্রস্ত। যেহেতু দু’টো স্বপ্নই অতিপ্রাকৃত উপাদান নির্ভর এবং দূর্যোগ কবলিত, তাই আমি জীবনে অনেক বড় বিপদ আশঙ্কা করছি। এমনকি সেই বিপদ থেকে উৎরানোর কোনো সুযোগও না থাকতে পারে। 

‘বুঝলাম। আমি জানি আপনি আমার বলার অপেক্ষায় রয়েছেন যে আমি কী বলবো। আমি আসলে বিশেষ কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু আপনার ধারণাগুলোতে কিছুটা সহমত পোষণ করবো। তবে আপনাকে বলবো, যে জীবন থেকে আপনি পরিত্রান পেতে চান, সে জীবন পরিহার করুন। আপনার বিশ্বাসের খুটিটা আরো মজবুত করেন। জীবনের আসল উদ্দেশ্য, দুনিয়া ও আখিরাত, জন্ম-মৃত্যু ও দুনিয়ার সকল সৃষ্টির প্রতি অবলোকন করে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করুন। গতানুগতিক বা স্বভাব ধর্ম পালন না করে, কেবল পরকালের কথা হিসাব করে আরো বেশি যত্নবান হয়ে ইবাদত করুন।

মনে রাখবেন, শয়তান প্রতিনিয়ত আপনাকে ধোকা দিতে চাইবে। আপনার নামাজ পড়া, সকল ইবাদত সম্পন্ন করার পরও আপনাকে ইসলামের আদর্শ বহির্ভূত কাজ করার জন্য শয়তান আপনাকে উস্কানি দেবে।’

কী রকম?

‘এই ধরুন আপনি সবই করছেন, কিন্তু মনে মনে ভাবলেন নামাজ তো একটু পরেও পড়া যাবে। সবই তো করছি, দ ‘য়েকটা গান শুনলে বা একটা সিনেমা দেখলে কী এমন পাপ হবে? ইসলামের আদর্শ মতোই তো চলছি, কিন্তু আপনার মনের অজান্তেই কিছু ছোট ছোট মিথ্যে বলছেন, টাকনোর নিচে কাপড় পরিধান করছে। কুরআন ও হাদিসের নিষেধ অমান্য করে খামখেয়ালি জীবন যাপন করছেন। তার মানে আপনি নামাজ রোজা করলেও ধর্মীয় বন্ধনে অটুট নন। আপনার বিশ্বাস এখনো অনেক নড়বড়ে।’

আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আরোও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বলবেন কী?

‘হ্যা, বলবো। আপনি এখন থেকে সর্বদাই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন। পরকাল নিয়ে অনেক বেশী ভাববেন। দুনিয়াবী চাহিদার মতো করেই পরকালের চাহিদাকে গুরুত্ব দিন। বেশি বেশি নৈতিক শিক্ষা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন। নিজে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করুন এবং পরিবার পরিজনদের রক্ষা করার চেষ্টা করুন। আমার উপদেশ আপনার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। তবে আমার ভাবনায় যতটুকু আসলো আপনাকে বললাম। তবে আপনি আরোও বড় কোন বুজুর্গ ব্যক্তির স্বরণাপন্ন হতে পারেন।’

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, April 29, 2018

যা কিছু আজব, স্বপ্নেই তা সম্ভব

যা কিছু আজব, স্বপ্নেই তা সম্ভব

কি মনে হচ্ছে? স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলতে যাচ্ছি? আসলে তা নয়। আমার গল্পটি স্বপ্ন দেখার বিচিত্রতা নিয়ে। আর এ গল্পের বিশেষ চরিত্র আমি, আর আমার স্বপ্নে পরিচয় হওয়া দুই বন্ধু অর্ক আর নির্মলা।

প্রায় প্রতিরাতেই তো আমরা কিছু না কিছু স্বপ্নে দেখি। বিঃদ্রঃ আমার এক বন্ধুকে ঠিক এই কথাটাই বলতে গেলাম। সালা ভুল ধরাতে খুব এক্সপার্ট আর সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক কিছু মোটেই ওর সহ্য হয় না। কথাটা বলার সাথে সাথেই আমায় থামিয়ে দিয়ে বলল- ‘প্রায় প্রতিরাতে তুই ঘুমাতে যাস? এই ডাহা মিথ্যেটাও আমায় বিশ্বাস করতে হবে?’ 

Sorry কিছু মনে করবেন না। আসলে আমার বন্ধুর কথা সত্যি, প্রায় প্রতিরাতে আমার ঘুম হয়না। তবে এটা ঠিক, প্রতিরাতে ঘুম না হলেও, রাতের বদলে দিনে কিন্তু ঠিকই ঘুম হয়। আর সেজন্য আপনিও হয়তো প্রশ্ন করে বসবেন, কেন স্বপ্ন কি দিনের ঘুমে আসেনা। সে কথাই বলছি।টানা কিছু ছুটির দিন পেলাম আর রীতিমতো ঘুমাতে শুরু করলাম। গার্ডেনিং, পাখিপোষা, অ্যাকুরিয়ামে মাছদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ঘুমানোও আমার একটা শখের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

কি আর করার। তো যা বলছিলাম, আমি এক আলো-বাতাসে ঘেরা নির্জন বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি নিজে থেকে বুঝতে না পারলেও আমার মনে হচ্ছিল কি যেন একটা বড় বিপদ। আমার সাথে অপরিচিত একটা ছেলে। আমাকে বলল- ‘তাড়াতাড়ি চলো। ট্রেন টা ছেড়ে দিবে। ট্রেন ছেড়ে দিলে আমরা ঠিক সময়ে যেতে পারবোনা।’ আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না, কোথায় যাচ্ছি আমরা।

কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম, বিশাল এক পাহাড়ের কাছে গিয়ে আমরা পৌছলাম। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড়ের নিচ থেকে বিশাল গাছ গুলোকে মনে হচ্ছে ছোট বনসাই এর মতো। একটি মেয়ে, সেও আমার অপরিচিত, তার নামই নির্মলা। এসে আমার পাশে থাকা ছেলেটিকে বলল- ‘তোমরা এসে গেছো? খুব ভাল করেছো। এখন আমরা পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে মেঘেদের সাথে খেলা করবো। সত্যি বলছি, আমি যেন স্বপ্নেই আরেক স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। এমনিতেই প্রকৃতির প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা। তারপর আবার কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে পর্বতারোহণ। ভাবতেই ভাল লাগছিলো।

মেঘেদের গায়ে মেখে আমরা পর্বতচূড়ায় আরোহণ করলাম ঠিকই। কিন্তু ওঠার পর দেখলাম অবাক কাণ্ড। যে পথ বেয়ে আমরা ওঠলাম, সেরকম কোন পথই সেখানে নেই। আর প্রায় এত উচুঁ থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামতে গেলে, আর যাই হোক (বাকি অংশ না বলা থাক)। তবে সেই মূহুর্তে আমাদের মধ্যে এই ভাবনা মোটেও ছিলনা যে আমরা কিভাবে নিচে যাবো। বরং হুট করেই দেখলাম, অর্ক ওপরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে উড়তে শুরু করলো। নির্মলা আমায় বলল- ‘আমরা কিন্তু আজ উড়ে উড়ে অনেক দূর যাবো। তুমি কি ভয় পাচ্ছো?’ আমি একটু গলা ঝেড়ে নিয়ে বললাম। নিশ্চয়ই মজা করছো আমার সাথে তাই না? আমি আবার উড়বো কি করে। সে বলল- ‘আরে বোকা, এই পাহাড়ে ওঠতে পারলে সবাই উড়তে পারে। কিন্তু সবাই এই পাহাড়ে ওঠতে পারে না।আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা এখানে ওঠতে পেরেছি। চলো চলো, রাত হয়ে গেলে আকাশে উড়ে পৃথিবীর কিছু দেখতে পাবো না।’

একথা বলে সে, উড়ে গেলো। আমি বারবার ইতস্তত করছি। ওরা মনে হয় যাদু জানে। কিন্তু আমি যদি উড়তে যাই, যদি নিচের দিকে পড়ে যাই? পড়ে ভাবলাম, যা-ই হোক একবার উড়ার চেষ্টা করে দেখি।দেখলাম আমি খুব স্বাচ্ছন্দে উড়তে পারছি। আমার আনন্দ কে দেখে। আমরা তিনজন উড়ে উড়ে পৃথিবীর সব কিছু দেখছি। মাঝে মাঝে দু’য়েকটা পাখিও আমাদের সঙ্গে আমোদে সঙ্গী হচ্ছে। কিছু দূর উড়ার পর ভিন্ন দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আকাশে দেখা মিলল, একটি রঙ ধনুর। রঙ ধনুর রঙ মিলিয়ে যাবার আগেই একটি বড় লেখা চোখে পড়লো। সেখানে লেখা আছে, আপনি লেভেল ফাইভ অতিক্রম করতে বিলম্ব করেছেন। আপনার বন্ধুরা সফল ভাবে অতিক্রম করেছে, তারা আরো কিছু মহাদেশ ঘোরে দেখতে পারবে। কিন্তু আপনাকে এখান থেকে ফিরে যেতে হবে।

আমি বিষণ কষ্ট পেলাম। হাওমাও করে কাঁদতে শুরু করলাম ওদের জন্য। ওরা যে লাইন অতিক্রম করেছে, ওপার থেকে আমার জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করছে। কিন্তু ওদের ফেরার কোন পথ নেই। আমি আবার পিছনের দিকে ফিরতে শুরু করলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এক অাগুনের পাহার, হয়তো আগ্নেয়গিড়ি হতে পারে। আমি ওপরের দিখে ওঠতে শুরু করলাম। কিন্তু সামনে আরেকটা ওয়ারনিং আসলো আমার জন্য। এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে লেভেল ফোর অতিক্রম করতে হবে, তানাহলে আমি উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবো। আমি এবার প্রচন্ড গতিতে উড়তে শুরু করলাম। 

আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম, একটা লাল রঙ্গের পাখি আমার পাশে উড়ছে। আমাকে সে বলল- ‘তোমার বিপদ আমি বুঝতে পারছি। তোমার জীবনের সমস্ত অর্জনের বিনিময়ে কেন তুমি আকাশে উড়তে চাইলে। তোমার জীবনের কী কোন দাম নেই। তোমার জীবন এখন দ্বিধাগ্রস্থ। তোমার কোন আপনজন তোমাকে আর ফেরত চায় না। তুমি সবাইকে ছেড়ে একা বাঁচতে চেয়েছো। একাই পৃথিবীর সকল আনন্দ উপভোগ করবে ভেবেছো। তাই তুমি আজ নিঃসঙ্গ। তুমি চাইলেও তোমার পাশে কাউকে পাবে না। তুমি সারা জীবন যে জ্ঞান আহরণ করেছো, তা শুধু নাম মাত্র।আজ আর তোমার সে জ্ঞানের কোন মূল্যায়ন নেই। তুমি তোমার পাশের কোন মানুষের জন্য কিছুই করনি কোনদিন। সারাক্ষণ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। যেকোন মানুষ তোমায় কিছু বলতে এলে, তুমি গরগর করে তোমার গল্প শুনিয়ে দিতে। তাদের সুযোগ দিতে না বলার। তুমি এমন কেন? আর সেজন্যই আজ তোমার গল্প কেউ শুনবেনা।এই যে আমাকে দেখছো, আমিও একটু পর তোমায় ফেলে চলে যাবো।’

আমি খুব অসহায়ের মতো পাখিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম আর এর কথাগুলো শুনলাম। আমি ভাবতে চাইছিলাম না পিছন ফিরে। যা হবার তা তো হয়েছে। কিন্তু আমার একবারের জন্য ও মনে পড়ছেনা যে আমি আমার জীবনের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে আকাশে উড়ার চুক্তি করেছি। আমি কি এতটাই বোকা হয়ে গেলাম। আমি এক মূহুর্তের জন্য ভাবলাম হয়তো আমি এ বোকামিটা করেছি। তাতে কি, ফেরার পর আমি আমার সব কিছু ঠিক করে নেব। আমি নিজেকে পাল্টে ফেলবো। আমি শুধু আমাকে ঘিরে নয়, সকলকে ঘিরে বাঁচবো।একটু পড়েই আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসলো। সকল ক্ষমতা আমি হারাতে শুরু করলাম। এদিকে এক ঘন্টা শেষ হতে আর সামান্য সময় বাকি। আমি আর কোন আশা খোঁজে পেলাম না। আকাশ থেকে বার্তা এলো-  

‘তোমার সময় শেষ। তুমি আর উড়তে পারছো না। তুমি ভুলে গেছো যে তোমার সাথে কি চুক্তি হয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক, কেউ পিছনের কথা মনে রাখেনা। প্রতিশ্রুতি ভুলতে পারলে, স্বাধীন হওয়া যায়। প্রতিশ্রুতি মানেই তো দায়বদ্ধতা। তুমি সে দায় এড়িয়ে আপন প্রশান্তি খোঁজতে চেয়েছিলে। তুমি দেখতে চেয়েছিলে পৃথিবী আর মহাশূন্যের বিচিত্রতা। তোমার মতো পৃথিবীর অনেকেই তো মহাশূন্যে এসেছিল- অনেক কিছু আবিষ্কার করার নেশায়। তাঁরা কি আজো বেঁচে  আছে? সুতরাং তোমার মন খারাপ হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে তাদের আর তোমার মধ্যে পার্থক্য একটাই তাঁরা নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চেয়েছিল মানুষের উপকারের জন্য। তারা শুধু নিজ প্রজন্ম নিয়ে নয়, পরবর্তী কয়েক প্রজন্মকে কিছু উপহার দেবে বলে জীবন বাজি রেখে এসেছিল। আর তুমি এসেছো মাত্র ঘোরে দেখতে। মনকে প্রফুল্ল করতে। আর তোমাকে এখন সবচেয়ে বড় সত্যটা মেনে নিতে হবে, সেটা হলো জীবনের অন্তিম সময়। যেটা সকল মানুষকে গ্রহণ করতে হয়।’

সত্যি সত্যি আমি নিচের দিকে ঝড়ে পরছিলাম। প্রচন্ড বায়ো চাপ আমায় আঘাত হানতে শুরু করলো। আমি হিতাতিত জ্ঞান হারালাম।ধূমকেতুর বেগে আমি নিচের দিকে পড়তে থাকলাম। বাতাশের চাপে যে আমার দেহের চামড়াগুলো থেতলে যাচ্ছিল। ভূপৃষ্ঠের কয়েক হাজার ফিট উচুঁতে আসার আগেই আমি জ্ঞান হারালাম। তবে ধপাস করে মাটিতে পড়ার মতো একটা অনুভূতি হলো। আর তারপরেই এক লাফে ঘুম থেকে জেগে ওঠলাম। চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম, আমি কি আসলেই বেঁচে আছি?






সম্পূর্ণ পড়ুন...