Showing posts with label ইসলামের আলোকে জীবনযাপণ. Show all posts
Showing posts with label ইসলামের আলোকে জীবনযাপণ. Show all posts

Sunday, May 18, 2025

যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

 যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

                                                                                   মোঃ অলিউল্লাহ

সমস্ত পৃথিবীর মানুষের ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রে অবস্থান যে বিষয়টির, তা হলো টাকা ও সম্পদ। শৈশব ও কৈশোর পেরোলেই যেন প্রতিটা মানুষের জীবনে তৈরি হয় স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্খা। আর জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে গেলে অর্থ বা সম্পদের বিকল্প নেই। মানব জাতি ছাড়াও পৃথিবীর সকল প্রাণীরই বেঁচে থাকতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটা প্রাণীর জন্যই রিযিকের ফায়সালা করে রেখেছেন। সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক যে উপাদনা গুলো তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য, বাসস্থান ও জৈবিক চাহিদা। 

যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানব জাতি, তাই মানুষের জন্য রয়েছে কিছু বাড়তি উপাদান। যেমন:- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন। তবে প্রকৃতির সকল প্রাণীর সাথে মানুষের জীবনের সামঞ্জস্যতার বিবেচনায়, একটি মানুষের জীবনে যে আহা মরি কোন পার্থক্য নেই তা উপলোব্ধির সময় ও সুযোগ মানুষের হয় না। যদি কোন মানুষ চিন্তা করে একটি পাখিকে নিয়ে, পাখিটির বাঁচার জন্য দরকার খাবার, আর সেই খাবারের আহরণ করে ও সামান্য পরিশ্রম করে পাখি তার খাবার জোগায়। দয়াময় আল্লাহ তার  পাখির সেই সামান্য চেষ্টা ও শ্রমের উসিলায় তাকে রিযিক দান করেন। তেমনি পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা করেন মহান রাব্বুল আলামিন।

 

 মানুষের জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য কি, তা বোধগম্য হয়ে ওঠে না মরার আগ পর্যন্ত বহু মানুষের। কেউ কেউ জীবনকে অনুসন্ধান করেন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছু মানুষকে সঠিক পথে হয়তো নিয়ে যায়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষকে নিয়ে যায় ভ্রান্তির পথে, গোমরাহির পথে।


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, June 12, 2022

সব মানুষই পাগল

 সব মানুষই পাগল

মোঃ অলিউল্লাহ্


প্রকৃতির প্রতিটা উপাদানেরই নির্দিষ্ট সীমারেখা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর প্রকৃতির  এই নির্দিষ্ট সীমা যখন অতিক্রম করা হয়, তখনই ঘটে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। কৃত্রিমতা বা আর্টিফিশিয়ালিটি সব সময়ই প্রাকৃতিক উপাদানের উপর একটা অতিরিক্ত প্রলেপন। যেমন- মহান আল্লাহ কোন মানুষকে নির্দিষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, অথচ একজনের মনে হলো আমার চেহেরায় মেকআপ করলে আমাকে আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। আর তাই সে নিজেকে সব সময়ই কৃত্রিম সাজসজ্জার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে রাখতে চায়, কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়সে কিন্তু ঠিকই তার এই আর্টিফিশিয়ালিটি আর কাজে আসেনা, তার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে; এমনকি কখনো কখনো সেই কৃত্রিমতার জন্য তার স্বাস্থ্যহানি বা ক্ষতিও হয়ে থাকে। 


প্রকৃতি সর্বদাই নির্দিষ্ট রূপে ভারসাম্য বজায় থাকে, কিন্তু যখনই প্রকৃতিতে জোর করে কৃত্রিমতাকে চাপানোর চেষ্টা করা হয় তখন প্রকৃতি তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সেটা কিছু আগে অথবা পরে। 


পৃথিবীতে মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার যে বিধান রয়েছে, সেই আইন বা বিধান মেনে চললে কোন মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেনা। কোন জীবন ব্যবস্থায় যতক্ষণ সুশৃঙ্খল ও আইন মানার প্রবণতা থাকে, সে জীবন ব্যবস্থা সবদিক থেকে ভারসাম্য বজায় থাকে।


এবার আসি আসল কথায়, আসলে আমার এই ভাবনা অনেকের কাছে অতি তুচ্ছ মনে হতে পারে। অনেকে ভাবতে পারেন এসব পাগলের প্রলাপ, অথচ আমি সেসব মানুষের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা পাগলামি নিয়েই কথা বলছি।


দেখুন, একজন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে যতক্ষণ সে তার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণে ঠিক যতটা তার দরকার ততটাই সে পায়।  অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে কোন মানুষের যতটুকু যা প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই তার যথেষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যখন এর কম অথবা বেশি হয় তখনই বিপর্যয় ঘটে। ধরা যাক, একজনের পেটে ক্ষুধা লেগেছে, তার পেট ভরার জন্য যতটুকু খাবার দরকার ঠিক ততটাই তার জন্য যথেষ্ট। এর কম হলে পেট ভরবেনা অস্বস্তি লাগবে, আবার যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খায় তখন বদহজম হবে, আর তাতেও তার অস্বস্তি লাগবে। ঠিক তেমনি জীবন ধারনের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন, ঠিক তা থাকলেই সুন্দরভাবে জীবন কেটে যাবে। এর কম-বেশি হলেই জীবনে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। 


মানুষের মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে আবশ্যিক বিষয়গুলোর বাইরে যা আছে তা-ই কৃত্রিমতা। অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এইসব চাহিদা একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন। আরোও স্পষ্ট করে যদি মৌলিক চাহিদার কথা বলি তাহলো ক্ষুধা, নিদ্রা, মৈথুন। এগুলোর মধ্যে কোনটির অভাব হলেই জীবনযাপনে বাধাগ্রস্থ হবে। আবার এসব চাহিদার পরেও যাদের আরো অনেক চাহিদা তৈরি হয় তা নেহাত বিলাসিতার শামিল। এর মানে হলো এই যে, কেউ খাবার খেতে বসল, আর তার সামনে বিশ-ত্রিশটি আইটেমের খাবার পরিবেশন করা হলো। হয় সে সবগুলো থেকে একটু একটু করে টেস্ট করবে, না হয় দু'য়েকটা আইটেম দিয়েই খেয়ে উঠবে। এখানে মুদ্দা কথা হলো একজন ব্যক্তির খাবারের জন্য ঠিক যতটুকু খাবার দরকার ততটুকুই পরিবেশন করাটা স্বাভাবিক, এর বেশি করাটা অস্বাভাবিক বা বিলাসিতা। আর একটা সহজ ব্যাপার হলো অপচয়ের পরিণতি অভাব। এই কথার অর্থ হলো যদি একজনের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হয়, তাহলে অচিরেই সে অভাবগ্রস্থ হবে। যা কিনা তার জীবন যাপনের জন্য একটি বিপর্যয় বা প্রতিবন্ধকতা। 


প্রাকৃতিকভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার, তার বাইরে যে সকল বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে তা হলো, চিত্তবিনোদন, সামাজিক পদমর্যাদা, ব্যক্তিত্ববোধ ও নিজেকে মানুষের চোখে শ্রেষ্ঠ করে তোলার একটা আপ্রাণ চেষ্টা। সেটা হতে পারে ক্ষমতার মাধ্যমে বা নিজের অবস্থান দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করে লোকের চোখে নিজেকে জনপ্রিয় ভাবার মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি। এই যে একধরনের চাহিদা, এটা খুবই মনস্তাত্ত্বিক ও মানুষের এক ধরনের ইলিউশান বা মোহ। আর এই মোহের কারনে মানুষ যারপরনাই ভূমিকা পালন করতে পারে। এক কথায়, এটা মানুষের একধরনের পাগলামি। ঠিক এই জায়গাটায় এসে সব মানুষই পাগল।


দেখেন, আপনার একান্ত মৌলিক চাহিদাগুলো যখন মিটে যায়, তখন আপনি স্বস্তিতে থাকেন। আর কথায় তো আছেই, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। যখন আপনার গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা মিটানোর পর স্বস্তিতে আছেন, তখন আপনার বিলাসী মন আরোও স্বস্তি বা ভালো থাকতে চাইবে। অর্থাৎ আরও কিভাবে ভালো থাকা যায় সেই চিন্তা আপনাকে অনবরত পোক করতে থাকবে। আর আপনি তখন আরও একটু বেশি ভালো থাকার কথা চিন্তা করে হয়তো অনেক পরিকল্পনা করবেন। এই যেমন- লোকের চোখে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কোন নেতা হলেন বা নিজের প্রতিভা দেখিয়ে হিরো কিংবা মডেল হলেন; যা আপনাকে একটা বাড়তি আত্মতৃপ্তি দেবে। তখন আপনি আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলতেই পারেন, আরেহবাহ আমি তো বিশাল কাজ করে ফেলেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা একধরনের মোহ বা মায়া। মৌলিক চাহিদার বাইরে যে চাহিদাই আসে তা আপনার মধ্যে মোহ তৈরি করে। 


এই দুনিয়ায় একেকজন মানুষ একেকটা জিনিসের প্রতি পাগল। কেউ পাগল ক্ষমতার, কেউ ধনসম্পদ বা টাকার পাগল, কেউ কারো প্রেমে পাগল, কেউবা জনপ্রিয় হবার পাগল, কেউ আবার ভাবের পাগল। যাইহোক, আমার এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এই পাগলামি বা এইসব চাহিদা কেবল মানুষকে বস্তবাদী ও দুনিয়ামুখী করে তুলে। দুনিয়াতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কিংবা নিজের অস্তিত্বকে স্থায়ী রূপ দিতে আমরা কত কিছুই না করতে চাই। দুনিয়াকে পর্যাপ্তভাবে ভোগ করার মানসিকতার কারনে আমরা আমাদের আসল পরিচয় ভুলে যাই। মহান সৃষ্টিকর্তা কোন উদ্দেশ্যে আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার কথা ভুলে যাই। 


আমাদের এই ভোগবাদী মনোভাবের কারনে আমরা যারপরনাই খারাপ কাজে লিপ্ত হই। এই দুনিয়ায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ঘোষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, হত্যা, নির্যাতন, জুলুম ও অত্যাচার সবই সংগঠিত হয় এই ভোগবাদকে কেন্দ্র করে। যা প্রকৃতির প্রতিকূলে গিয়ে সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। অথচ একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খুব বেশী কিছু দরকার পড়েনা। যদি কেউ ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলে, তাহলে সে নিশ্চিত ভাবে সেই স্বাভাবিক জীবন ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। একজন মুসলিম হিসাবে আমি ইসলাম ধর্মকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করি। আর আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। 


যেখানে ভোগবাদ মানুষের মধ্যে মোহ তৈরি করে তাকে দুনিয়া মুখী করে তুলে, সেখানে ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ একজন মানুষকে সর্বোচ্চ  নৈতিক হতে সাহায্য করে। তার ভিতর কেবল দুনিয়ার প্রতি লোভ লালসা নয়, যেখানে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল থাকতে হবে সেই ভাবনা তার মধ্যে কাজ করে। সে মৃত্যুকে ভয় করে, মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে ভয় করে, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে দুনিয়ায় ভাল কাজ করে। 


যার ভিতর দ্বীনের প্রতি গভীর বিশ্বাস আছে, সে ভোগবাদী না হয়ে বরং দুনিয়াতে কোনভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাববে। আর তাই এই বস্তুবাদ মানুষের ক্ষণিকের মোহ বা ইলিউশান ছাড়া কিছুই না। কারন প্রতিটা প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর একজন মানুষ যখন মরে যায়, তখন দুনিয়ায় তার কোন অস্তিত্বই থাকেনা। যদিও বস্তবাদীরা কিছু মৃত মানুষের ইহলৌকিক কৃতকর্মের জন্য তাদের স্মরণীয় বা অমর বলে দাবী করে। আর এটাও তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কিংবা মোহ মায়ার প্রতিফলন ছাড়া কিছুই না। 


কেনো একজন মানুষ মরে গেলে তার কোন অস্তিত্ব থাকেনা? 

কারন ব্যক্তি নিজেই নিজের উপস্থিতি দেখছেনা। যেখানে আমি নেই, সেখানে আমার অস্তিত্ব কি করে থাকতে পারে। যে পৃথিবীতে ভাল থাকার জন্য এতো কিছু করছি, কতদিন আমি এখানে থাকতে পারবো? প্রতিটা মানুষের একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা বা ভ্যালিডিটি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, এই ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে গেলেই চলে যেতে হবে দুনিয়া ছেড়ে। কোথায় যাবো আমরা মৃত্যুর পর? কী হবে আমাদের সাথে? আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা এতো সুন্দর চিন্তা শক্তি ও বিবেক দেওয়া সত্ত্বেও যখন মানুষ ভ্রান্ত পথে চলতে চলতে পথভোলা হয়ে যায়, তারা পাগল ছাড়া আর কি?  তাদের ভোগবাদ বা বস্তুবাদী মানসিকতা তাদের মধ্যে যে মোহ বা পাগলামির জন্ম দিয়েছে, সেই মোহে তারা অন্ধ। তারা তাদের জ্ঞানের সীমাকে সংকোচিত করে রেখেছে। আর সেজন্যই তাদের এই দুনিয়াপনা বা ভোগবাদ তাদেরকে পাগল হিসাবে সাব্যস্ত করেছে।


শেষ কথা হলো আমার এই লেখার প্রসঙ্গটিকে অনেকে ভুল ব্যাখা করতে পারেন। তারা হয়তো বলতে পারেন, শুধু যদি মৌলমানবিক চাহিদা পূরণ করেই মানুষ খান্ত হয়ে যায়, তাহলে তো মানুষের সৃজনশীলতার প্রকাশ পাবেনা। মানুষ একটা গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষ যদি কেবল আখিরাত নিয়ে ভাবে তাহলে দুনিয়ায় তো অচলাবস্থা তৈরি হয়ে যাবে। দেখুন, আমি আমার কথাগুলো দ্বারা শুধুমাত্র বুঝাতে চেয়েছি, কেউ যেনো ভোগবাদে এতটাই আসক্ত না হয়, যাতে করে সে আখেরাত বিমুখী হয়ে যায়। দুনিয়ায় সর্বোচ্চ নৈতিকতা ও ভাল কাজের মাধ্যমেই যেনো তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে। কেউ যেনো দুনিয়ার মোহে পড়ে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুমের মতো অনৈতিক না হয়। পৃথিবীতে কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেনো বিনা দ্বিধায় কেউ পাপ না করে ফেলে এটাই বুঝাবার চেষ্টা করেছি।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, May 29, 2022

সংকট

অস্তিত্বের সংকট || ধর্মীয় চেতনায় হীনমন্যতা || পার্থিব সার্থে গা ভাসিয়ে কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ।




ব্যক্তিজীবনে অস্তিত্বের সংকটবোধ (Existential Crisis in Personal Life)


আমার পরিবারে আমার পরিচয় আমি কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা ইত্যাদি। আমি সেই পরিবারের একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সেখানে আমি সবার পরিচিত। আমার কিছু সংরক্ষিত অধিকার যেমন রয়েছে সেই পরিবারে, তেমনি রয়েছে কিছু দায়িত্ব। কিন্তু  একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌছে অনুধাবন করলাম পরিবারের যেকোন বিষয়ে যা কিছুই হোকনা কেন, কোন ব্যাপারেই আমাকে কেউ কিছু জানায় না। আমার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতেও কারো কোন যায় বা আসেনা। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা এমন ধারালো যে, আমি সেই পরিবারের একজন সদস্য হলেও সেই পরিবারে আমি গুরুত্বহীন। আর একটা সময় গিয়ে দেখা গেলো, আমি সেখানে থাকা আর না থাকা কোন তারতম্য সৃষ্টি করেনা, স্বাভাবিকভাবেই একটা মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি হলো আমার ভিতর। মনে হলো আমি একটি শিকড়বিহীন বৃক্ষ, অস্তিত্বহীন কোন প্রাণী।

একটা পরিবারে কিংবা একটা সমাজে যখন বহুবছর জীবন যাপন করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই স্থানের প্রতিটা মানুষ, সেই পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সাথে অত্যন্ত নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মানবিক সম্পর্কের বন্ধন কতটা আবেগীয়, কতটা স্পর্শকাতর তা তো কেবল সেই ব্যক্তিই জানে, যে জীবনের ঘূর্ণিতে আটকে গিয়ে চোখের সামনে সব কিছুকে অপরিচিত হিসাবে খোঁজে পায়। যাদেরকে সারাজীবন আপন হিসাবে জানার পর হঠাৎ করে সবাই যখন অপরিচেতর মতো আচরণ করে, তখন তার অনুভূতিতে আকস্মিক আকাশ ফেটে পড়ার অনুভূতি তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর এই যে, মায়ার বন্ধন, নারীর টান তা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার মতো আবহ তৈরি হওয়াটাই নেহাত অস্তিত্ত্বের সংকট।

ধর্মীয় অনুভূতিতে অস্তিত্বের সংকট (Existential Crisis in Religious Sentiment)

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে, নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে জাগতিক স্বার্থ যখন ঐশ্বরিক বা পরকালের স্বার্থকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মপালনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার বাধা-বিপত্তি, জুলুম-নির্যাতন, হত্যাকান্ড ঘটানো যখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়ায়, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও তারা অতি অসহায় কিংবা নেহাত নিরীহ বই কি? আর এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের স্বার্থ বা অধিকার বহাল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদাসীনতা দেখিয়ে; কেবল মুষ্টিমেয় সম্প্রদায়ের সুবিধাবৃদ্ধি ও অধিকার সংরক্ষণ ও সকল প্রকার নিরাপত্তার চাদরে মোড়িয়ে রাখাকে নিশ্চয়ই মানবাধিকারের সমতা রক্ষা করা হয়না।  ধর্ম পালনে সচেতন গোষ্ঠীকে যদি উগ্রতা, মৌল/-বাদ অথবা জ~ঙ্গী নামক তকমা দেওয়া হয় এবং মিথ্যা অপবাদে জেল-জুলুম, নির্যাতন, ঘুম  করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। ইমানদার ও সচেতন মুসলিমের জন্য এটা এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি করে। 

যেখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে, সেখানে কেউ যখন ইসলামের সার্বিক আইন মানতে গিয়ে আর দশজন সাধারণ মুসলিমের চাইতে  করে তখন কিছু 

এটা আমার দেশ, আমার জন্মভূমি, আমার মাতৃভূমি। যখন থেকে কথা বলা শিখেছি এই মাটির উপরে তখন থেকে এই দেশের ভাষায়; মানে বাংলা ভাষায় আমি কথা বলে এসেছি। এই ভাষা যেমন আমার অস্তিত্ত্বের সাথে সংগতিপূর্ণ। যখন এই ভাষায় কথা বলতে গিয়ে কোন বাধা আসে, তখন অবশ্যই সেই অধিকার রক্ষায় কথা বলা আমার নাগরিক দায়িত্ব হয়ে যায়।

আমাদের জাতীয় পরিচয়ের পাশাপাশি আমাদের আরোও একটা বড় পরিচয় আমরা মুসলিম। মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যে। আর পৃথিবীতে মানুষের প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহ মানুষ এবং জিনকে একমাত্র মহান রবের ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। [আল কোরআন, সূরা জারিয়াহ- ২৬]

কিন্তু পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য নবী ও রাসূল আগমন করেন। আর বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। যদিও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, ইসলামকেই একমাত্র মনোনিত ধর্ম বলেছেন। তাই মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাস্বরূপ যারা মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের জন্য একই ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের চাইতে সহজ। কেননা, আদিকাল হতেই মানুষের মধ্যে একটা প্রকট ধারণা বিরাজমান, আর তা হলো পূর্ব পুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন করা তাদের জন্য আবশ্যিক মনে করে। সেক্ষেত্রে নতুন কোন ধর্ম বা নতুন কোন ঐতিহ্যকে ধারণ করা এতোটা সহজ হয় না।

কিন্তু সত্য ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও কেবল পূর্বপুরুষদের লালিত-পালিত ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে অন্য ধর্মকে সত্য ধর্ম মেনে নিতে সকল সময়েই কঠিন ছিলো। কিন্তু কথা হলো যেই ভুখন্ডের নব্বই শতাংশের বেশী মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সেখানে কোন মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে সঠিক উপায়ে ও একান্ত আনুগত্যপোষণ করে সেই ধর্ম মানতে যাবে, তখন তাকে সন্দের চোখে ফেলে দেওয়া হয়। প্রকৃত ধর্মীয় বিধান ও আইন মানার ক্ষেত্রে অত্যধিক আনুগত্য করতে গিয়ে যখন সাধারণ ধর্মাবলম্বী বা নামধারী মুসলিমদের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন তাদেরকে বিশেষ কিছু তকমা দেওয়া হয়, যেমন- জ#ঙ্গী, চরম-+প>ন্থী, মৌ*ল-বা>দ ইত্যাদি।


যখন একজন মুসলিম তার অধিকার সংরক্ষণ করে যথাযথ নিয়মে ধর্মপালন করে ও দাওয়াহ’র কাজ করে তখন কিছু মহলের লোকেদের জ্বালা ধরে যায়। হিংসা ও বিদ্বেশের জন্ম হয়। সত্য ধর্ম পালন করতে গেলে যখন তাদের কোন অবৈধ কাজ করা সম্ভব হয়না, খারাপ কাজ করতে পারেনা, জুলুম, অত্যাচার ও হারাম কাজ করা কঠিন হয়ে যায়, তখন তাদের সেই ধর্ম মেনে নেওয়া তো কোনভাবেই সম্ভব মনে হয় না। আর তাই বিশেষ কিছু তকমা বা অপবাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় বৃহৎ শক্তিকে কব্জা করে তারা সেই ধর্মাবলম্বীদের দমন করতে চায়। তারা প্রথমত চায়, তাদের মতো বাকি মুসলিমরাও খামখেয়ালিভাবে অথবা গতানুগতিক কৃত্রিমভাবে ধর্ম পালন করুক, তাতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।

নিজ দেশে ও নিজ ভূমিতে নিজ ধর্ম পালনে তোষামোদ করা, বিধর্মী ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ করা। ধর্মীয় সমালোচনায় বিভিন্ন কট্টর অপরাধ, জেল-জরিমানা, শাস্তিসহ জীবননাশের আশঙ্কা যখন কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উৎকন্ঠা সৃষ্টি করে; তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে ‘আসলেই কী আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতি? নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুনাফেক ও কাফিরের মাঝে আমরা কেবল উদ্বাস্তু? যখন কোন মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া স্বত্তেও তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দুর্লভ হয়ে পড়ে, তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেকে অত্যন্ত একা হয়ে যায়। আশপাশে হাজারো মানুষকে দেখতে পেলেও তার আদর্শ ও মূল্যবোধের জায়গায় যখন নিজেকে একাকীত্বতায় আবিষ্কার করে, তার অস্তিত্বের সংকট প্রবল হয়ে যায়।

কিন্তু সবকিছুরই শিকড় আছে। সব কিছুরই শেষ আছে। আশার কথা হলো, একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো সর্বাত্মকভাবে নিজের ঈমানকে মজবুত রেখে ইবাদতে মশগুল থাকা এবং সাধ্যমতো দ্বীনের দাওয়াহ, দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আর ইসলাম ধর্ম কোন ঠুংকো নয় যে, কোন জাতি, সম্প্রদায় চাইলেই তা নিশ্চিহ্ন করে দেবে; বরং এই ধর্ম আল্লাহর একমাত্র মনোনিত ধর্ম। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তার ধর্মকে মানুষের কাছে সমুন্নত রেখেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তিনি ইসলামকে সুরক্ষিত রাখবেন। পৃথিবীতে আদম (আঃ) থেকে শুরু করে যত নবী-রাসূল আগমণ করেছেন সকল নবী রাসূলের যুগেই কাফের মুশরেক সম্প্রদায় তাঁদের বিরোধিতা করেছেন, আল্লাহর দ্বীনকে তারা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। অথচ সেইসব কাফের সম্প্রদায়ের ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। আর তাদের জন্যও নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা গজব পাঠাবেন বা তাদেরকে ধ্বংশ করবেন। 


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Monday, July 19, 2021

অর্থ যখন অনর্থ || মোঃ অলিউল্লাহ

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। তাঁহার নামেই শুরু করছি। আমি তৌসিফ। আমরা তিন ভাই-বোন, অর্থাৎ দুই ভাই এক বোন। আমি মেঝো। আমার বড় ভাই আমার থেকে দুই বছরের বড় হলেও আমার বোন সুবর্ণা আমার থেকে সাত বছরের ছোট। আমার বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ছোট বড় কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মিলিয়ে আমাদের আটটা বাড়ি আছে। গাড়িও আছে চারটা। আশ্চর্য হলেও সত্যি আমি কোন গাড়ি ব্যবহার করিনা; এমনকি আটটি বাড়ির মধ্যে ছয়টি বাড়িতেই আমার কখনো যাওয়া হয়নি। স্থায়ীভাবে আমরা সবাই একই বাড়িতে বসবাস করছি। আমার বড় ভাই বাবার মতোই বিচক্ষণ আর উচ্চাবিলাসী। পড়াশোনায় খুব সুবিধা করতে না পারলেও তার বিচক্ষণতার ছাপ পাওয়া যায়, বাবার সাথে ব্যবসায় ক্ষেত্রে। কোন রকম ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেই সে বাবার সাথে ব্যবসায়ের হাল ধরেছে। তার তুলনায় আমি পরিবারের সবার কাছে অকম্মার ঢেকি।

কারণ বাবার কোথায় কোন ব্যবসায় আছে, কোন কিছুই আমি জানি না। আমার বোনটিও অনেকটা বড় ভাইয়ের মতোই বিচক্ষণ এবং বিলাসী। বড় লোকের মেয়ে হিসেবে বিলাসী হওয়াটা তাকে মানায়। আমি তার এবং পরিবারের সবারই চক্ষুশূল। সকলের অপ্রিয় হওয়ার কারনটা পরে বলছি। আমার আরোও একটা পরিচয় আছে আমার পরিবারে ‘পাগল’। পরিবারের বাইরেও আত্মীয় মহলে এই নামের পরিচিতি আছে। আমাকে পাগল বলার কারনটা বলার আগে বলে নেওয়া ভাল যে, গল্পটি মূলত আমার বোন সুবর্ণাকে নিয়ে। সে এখন হসপিটালের আইসিওতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ডাক্তাররা বলছে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম, মাথায় তীব্র আঘাতের কারণে অনেক বড় ফ্রেকচার হয়েছে। আমার বোনটির এই দশার জন্য দায়ী আমার বাবা অঢেল টাকা, মায়ের অত্যাধিক আধিক্ষ্যেতা এবং বড় ভাইয়ের পশ্রয়। যদিও এখন দায় সারাভাবে সবাই নিজের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। হসপিটালে কেবল আমিই আছি ওকে দেখার জন্যে।

দীর্ঘদিন ধরে একটা ছেলের সাথে তার রিলেশন ছিলো। মূলত ছেলেটা তার সৌন্দর্যে যতটা না তাকে ভালোবেসেছে, তার টাকাকে বেসেছে বেশি। বিষয়টা সুবর্ণা বুঝতো, কারন শুরু থেকেই বিভিন্ন সময় রৌনক তার কাছ থেকে হিসেব ছাড়া টাকা নিয়েছে কিন্তু তাকে হারানোর ভয়ে আমার বোন কখনো কোন এটেম্পট নেয়নি। সুবর্ণার টাকার প্রতি খুব ফেসিনেশন ছিলো, শৈশব থেকেই সে বিলাসী জীবন-যাপন করেছে। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনেই অর্থ ব্যয় করেছে বেশি। তার বেশ কয়েকটা ভিসা ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে তার অযৌক্তিক অর্থ ব্যয় দেখে আমার মা কিছুটা সাবধান হতে চাইলেন, আর তার ক্রেডিট কার্ডগুলো লুকিয়ে রাখলেন।

ঠিক সেই মুহুর্তে রৌনক নাকি তার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা চেয়েছিলো। সে জানে রৌনক টাকাটা পেলে আর দেশে থাকবেনা; এমনকি তার প্রতি যে রৌনকের কোন আন্তরিকতা নেই এটা অনেক আগেই বুঝেছে। কিন্তু তার প্রতি দুর্বলতার জন্য তাকে ছাড়তে পারেনি। পরশু দিন সকালে আমার স্ত্রীকে সুবর্ণা কেঁদে কেঁদে বলছিলো, “ভাবি, আমার সব শেষ হয়ে গেলো। রৌনক আর আমাকে চায় না। সে আমাকে ডিচ করেছে। আমার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা চেয়েছিলো, আমি দিতে রাজি হইনি। তাই সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি এখন কী করবো ভাবি?”


সুমি আমার স্ত্রী, তাকে বললো, “তুমি ধৈর্য ধরো। যে তোমাকে ভালোবাসবে সে টাকা নয়, যেকোন মূল্যে তোমাকেই চাইতো। সে তোমাকে চায় না এটা তুমি ভালো করে জানো। শান্ত হও। স্বাভাবিক জীবন-যাপন করো। হয়তো তোমার জন্য ভালোই হয়েছে।”

কিন্তু এতে সে কনভিন্স নয়। সকল বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ ফোন দিলে রেসপন্স করেনা। সারাদিন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমায় আর মাদক সেবন করে। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। যখনই তার কোন সমস্যা হতো সে এমন করতো।

গতকাল সে মায়ের ঘরে গিয়ে তার সাথে চড়াও হয়। মাকে বলে- “আম্মু আমার কার্ডগুলো দিবে কিনা বলো?”

মা বলল- “কিছুদিন পরে দেবো।”

“আমার এখনই লাগবে। তুমি এখনি আমাকে আমার কার্ডগুলো দিবে।”

ওর দুর্ব্যবহারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায়, মা তার কার্ডগুলো ফেরত দিলো। সে তখন মাকে বললো, “এখন থেকে আমি ধানমন্ডির আটতলা ভবনে থাকবো। আমি এখনই চলে যাবো সব কিছু নিয়ে।”

মা বললো, “কেনো কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেনো?”

“তোমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।” 

এই বলে চলে গেলো। শুনেছি ব্যাংকে যত টাকা ছিলো সব টাকা তুলে নিয়ে বাসার সিন্ধুকে রেখেছে। ওর ফোন কল রেকর্ডার অন করা থাকতো। কল রেকর্ড থেকে জানতে পারি, সুশ্মিতা নাতে ওর এক বান্ধবী কল দিয়েছিলো। কল করে যা বলল- “সুবর্ণা চল ঢাকার বাইরে থেকে ঘোরে আসি।”

“নারে, আমি এখন কোথাও যাবোনা।”

সুশ্মিতা- “কেনো?’’

“রৌনক আমাকে ডিচ করেছে। আমার মন খুব খারাপ। এছাড়া আমি বাসা থেকে ধানমন্ডির বাসায় চলে এসেছি। কয়েকদিন যাবৎ কেউ একজন আমার ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে। আমার ফোনে বারবার ওটিপি’র এসএমএস আসছে। ওটিপি কন্ফার্ম কনফার্ম করতে পারছেনা, তাই টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেনা। কিন্তু আমার মনে হয় একসময় সে একাউন্ট হ্যাকও করে ফেলবে। তাই ব্যাংকের সকল টাকা তুলে সিন্ধুকে এনে রেখে দিয়েছি। এই অবস্থায় আমার ঢাকার বাইরে যাওয়া ঠিক হবেনা। তুই না হয় আমার বাসায় চলে আয়, দু’জন মিলে গল্প করবো।”

সুশ্মিতা- “ঠিক আছে আমি বিকালে আসবো।”

“ঠিক আছে।”

বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারলাম, সুশ্মিতা চারটা বাজে বাসায় এসেছে। প্রথমে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক কথা বলতে দেখলাম। এরপর উভয়ে উভয়ের সাথে চড়াও হয়ে কি যেনো বলছিলো। সুবর্ণা অন্য রুমে গেলো সুশ্মিতাকে বসিয়ে। এবার সুশ্মিতা সিন্ধুকের হ্যান্ডেল ধরে টান দিয়ে সিন্ধুুকের দরজা খুলে ফেললো, যদিও এটা সিকিউরলি লক করা ছিলো। সুবর্ণা পাশের রুম থেকে এসে দেখলো, সিন্ধুকটি খোলা এবং কোন টাকা এর ভিতর নেই। হঠাৎ করে রৌনক ভেসে উঠল তাদের মাঝে। তার হাতে ছিলো অনেক বড় ড্রিল মেশিন ও মাথায় হেলমেট। অর্থাৎ সে যেকোন উপায়ে বাসায় প্রবেশ করে সিন্ধুকের পিছন থেকে খুব সতর্কভাবে ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে সকল টাকা সরিয়ে ফেলে এবং পরে সুবর্ণাকে জানায় সে কিভাবে সবকিছু করল।


সুবর্ণা তাদের হেন ঘটনায় চড়াও হলে রৌনকের হাতে থাকা ড্রিল মেশিন দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং সুবর্ণা রক্তাক্ত হয়ে  মাাটিতে লুটিতে পড়ল।। এরপর ওরা  পালিয়ে  গেলো। সুশ্মিতার ফোন ট্রেস করে জানা যায়, রৌনকের সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিলো। এছাড়া রৌনক এই বাড়িতে এর আগেও দুইবার এসেছিলো, তা সিসিক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়। যেহেতু রৌনক আগে থেকেই বাসার অবস্থান জানতো, তাই সুশ্মিতার কাছ থেকে টাকার সন্ধান পেয়ে তা সরিয়ে নেওয়ার মাস্টার প্লান করে।  যদিও সব কিছুই প্রকাশ পেয়েছে এবং তাদের দু’জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মোটের উপরে আমার বোন হসপিটালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

এবার আসি মূল গল্পে। আমাকে বাসায় সবাই পাগল বলতো। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি নিয়মিত নামাজ, রোজার প্রতি খুব আন্তরিক ছিলাম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কখনো অর্থ অপচয় করতাম না। সকলর শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশতাম এবং সাধারণ মানুষের মতো সারাদিন পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক পরিশ্রমের কাজ করতাম। সুযোগ পেলেই মানুষের কাজে সাহায্য করতাম। সবাই আমাকে পছন্দ করতো। উচুশ্রেণীর চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথেই আমি বেশি মিশেছি; এমনকি কখনো খুব দামী পোষাক ও পড়িনি। সাধারণ এই জীবনযাপনে আমার বাসার সবাই আমার প্রতি বেশ বিরক্ত হতো। এছাড়া বড় ভাইয়ের মতো আমিও যদি ব্যবসায় মনোযোগী হতাম তাহলে হয়তো আমাদের সম্পদ আরো বেশি হতো, এই ধারণা তাদের। স্কুল পাশের পর থেকেই আমি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম। বাবার কাছে খুব কম সময়ই টাকা চেয়েছি। কখনো টাকা দিতে চাইলে আমি নিতাম না, তাই তাদের কাছে আমাকে অস্বাভাবিক মনে হতো। 

যেহেতু আমার পরিবারের লোকজনের ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অনিহা তাই আমার সবরকমের ইবাদত তাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতো। শিক্ষামূলক কোন কথা বললেই আমাকে বলতো আমি পাগল। আমি উন্মাদ। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ; এমনকি দু’য়েকবার আামার মা আমাকে মানসিক ডাক্তার দেখাতেও নিয়ে গিয়েছিলেন। যখন রাগ করার মানে বুঝতাম না তখন কেউ আমায় পাগল বললে আমি খুব ক্ষেপে যেতাম। যখন বুঝলাম রেগে গিয়ে নিজের আচরণকে অসংযত ও উগ্র করে আমি বরং ভুল মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি, তখন থেকে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। আমি শিখেছি ধৈর্য্যই মহত্তের লক্ষণ। যাকে আল্লাহ হেদায়াত না দেন, সে আমার কথায় কতটাইবা পরিবর্তন হবে। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।”-সুরা-আশ-শূরা, আয়াত-১৩

এবং আরোও বলেন, “আর যাকে আল্লাহ্‌ হেদায়াত করেন তার জন্য কোন পথভ্রষ্টকারী নেই; আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্ৰহণকারী নন?” - সুরা- আয-যুমার, আয়াত-৩৭

আমার পরিবারের প্রতিটি মানুষ অর্থ, আভিজাত্য আর আধুনিক পৃথিবীর সাথে স্রোতে গা-ভাসিয়ে চলে। দুনিয়াটা তাদের কাছে কৃত্রিম স্বর্গ। কিন্তু তারা জানতে কিংবা বুঝতে চায় না, একদিন সন্ধ্যা হবে, আলো ফুরাবে, পাখিদের কোলাহোল স্তব্দ হবে, অন্ধকারে আবৃত হবে পৃথিবী। তখন তাকে দাড়াতে হবে চরম বাস্তবতায়। যেদিন নিশ্বাসটা বন্ধ হবে, এরপর থেকেই তাদের দুনিয়ার রংঢং শেষ হয়ে যাবে। শেষ হবে অবৈধ সম্পর্কের ও হারাম জীবিকার।

সুবর্ণা শৈশব থেকেই ছিলো খামখেয়ালি স্বভাবের। বিশেষ করে অপচয়ের ক্ষেত্রে তার জুড়ি নেই। জীবনে অভাব কী জিনিস জানেনি সে। দেখেনি বাহিরের জগতের বাসিন্দাদের। অহংকার, বিলাসীতা, অবাধ মেলামেশা এবং মাদক সবকিছুর মূলেই ছিলো প্রচুর টাকা পয়সার সহজলভ্যতা। ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইসলামের অনুশাসন কখনোই পায় নি। সকলের বাড়তি আদর এবং শাসনের অভাবে যারপরনাই চলাফেরা করতো সে। অন্য সকলের মতো সে আমাকে পছন্দ করতো না আমি ইবাদত করি বলে। তার কাছে আল্লাহর উপাসনা করা পাগলামি ছাড়া কিছু না। মৃত্যুর পরে আখেরাতে নেই কোন বিশ্বাস। যদিও আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা ওকেশনাল ধার্মিক; মানের ঈদ উদযাপন এবং লোক দেখানো ধর্ম পালন।

আজ সুবর্ণার এমন অবস্থার জন্য দায়ী আমার বাবা-মা ও বড় ভাই। ছোট শিশুর হাতে যেখানে খেলনা তুলে দেওয়ার কথা, তাকে দেওয়া হয়েছিল টাকা। সারাদিন টাকা নিয়ে খেলতো। দিনদিন যখন বড় হচ্ছিল তখনো তাকে টাকার সঠিক ব্যয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়নি, বরং দামি দামি ড্রেস, স্কুটি, গাড়ি, মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপ হাতে তুলে দিয়েছে শৈশবেই। যা পেয়ে সে মেতে থাকতো হৈ চৈ বিনোদন, সিনেমা, আড্ডাবাজি, ভিডিও গেমস এবং রোটিন বিহীন অনিয়মের জীবন। যেখানে অর্থের অভাবে মানুষ তার সামান্য শখ পূরণ করতে পারেনা, সেখানে অর্থ তার জীবনকে নরকে পরিণত করেছে।







সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, July 18, 2021

হেদায়াতের সুর, মোঃ অলিউল্লাহ্

 হেদায়েতের সুর

ওহে মুসলমান, সময় থাকিতে সৎ পথে আসো, মজবুত করো ঈমান।

নাই বেশি দেড়ি,ফুরাবে বেলা, নষ্ট করোনা সময় করে অবহেলা।

যে ভবের মায়ায় রয়েছো মাতিয়া, রহিম-রহমান নাম ভুলিয়া,

কি জবাব দেবে হিসাবের দিনে, যবে শূন্য আমল নিয়ে যাবে চলিয়া?


নির্বোধ তুমি করো উপহাস, যে ডাকে তোমায় সৎ পথে আসো,

পথভ্রষ্ট হয়ে আনন্দে হাসো, উদ্দেশ্যহীন তরীতে ভাসো।

নামাজ পড়না, রাখোনা রোজা, বাড়াচ্ছ দিনদিন পাপের বোঝা,

কড়ায়-গণ্ডায় হিসেব নেবে- হারাম কাজের পাইবে সাজা।


ওহে মুসলমান, সত্যের পথে হও আগুয়ান

ছেড়ে দাও আজি ধান্দাবাজি, চুরি, সুদ, ঘোষ আর মিথ্যে বলা,

দিনশেষ হলে সব হারাবে, শেষ হয়ে যাবে এ পথ চলা।

মুসলিম বাবার ছেলে হলেই, হবে কী মুসলমান? 

ঈমানদার হতে না পারিলে, আল্লাহ-রাসূল না চিনিলে

তুমি কেমন মুসলমান? 


ওহে মুসলমান, এখনি সময় ফিরে আসিবার দ্বীনের পথ ধরে,

মসগুল থাকো ইবাদতে দিবস-রজনী জুড়ে, নূরের প্রদীপে আলোকিত করো তব অন্তরে।

কোরআন বুঝে তিলাওয়াত করো, হাদিস পড়ো রোজ,

দ্বীনের কাজে আগুয়ান হয়ে সত্যের করো খোঁজ।


স্মরণ করো বিপদ এলে, মুক্ত করেন কে?

সারা জাহান নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ করেছেন যে।

কবরের ডাক আসবে যখন, থাকবে কী আর উপায়?

তাইতো আজই সাদা কাফনে তৈরি করো তোমায়।


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, July 15, 2021

ব্যবসায় করতে গিয়ে কতটা লাভ করা জায়েজ?

 আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন ব্যবসায়িরা পন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মুনাফা ধরে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েজ? 

ইসলামের দৃষ্টিতে কোন লাভের সীমা নির্ধারণ করা আছে কিনা যে, এর চেয়ে বেশি লাভ করা যাবেনা, তা জানার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।


এ প্রসঙ্গে সূরা আলে ইমরানের ২৯ নং আয়াতে এই বিষয়ের মূলনীতি নিয়ে বলা হয়েছে- “ হে ঈমানদারেরা তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করোনা, তবে তোমরা একে অন্যের সম্পদ ভোগ করতে পারো কেনা-বেচার মাধ্যমে।”

এই আয়াত থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম, তা হলো কোন বিক্রেতার নির্ধারিত দামে কোন ক্রেতা সেই পন্য খুশি মনে কিনতে রাজি থাকলে বিক্রেতার জন্য সেই লাভ জায়েজ আছে।

এছাড়া বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লাভের কোন পার্সেন্টেজ নির্ধারিত করে দেওয়া হয় নি। কোরআন কিংবা হাদিসে এর বেশি তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। 

কিন্তু পন্য বিক্রি করতে গিয়ে তিনটি কথা গুরুত্ব সহকারে মাথায় রাখতে হবে। তা হলো-

১. বিক্রেতা এমন কোন মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারে যাতে ক্রেতা রাজি হয়ে যেতে পারে। যেমন- বিক্রেতা বলল আমার পন্য এতো টাকায় কেনা, আসলে এর থেকে কমে কেনা। এরূপ মিথ্যে বলা যাবে না।

২. কোন পন্যের দাম ক্রেতার জানা নাই ভেবে বিক্রেতা যদি চড়া মূল্য হাকিয়ে নেয়। এরকম করাটা অন্যায় হবে। নবী করিম (সঃ) বলেন, সেই লোক আমার উম্মত হতে পারেনা, যে ধোকা দিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়।

৩. পুরাতন পন্যকে নতুন বলে প্রতারণা করা জায়েজ হবেনা।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ওই ব্যক্তির উপর রহম করবেন, যে ব্যক্তি বিক্রি করার সময় কোমলতার পরিচয় দেয়। 

যার সাথে লেনদেন করবে তার জন্য যেনো লেনদেন সহজ হয়। খুব বেশি চড়া মূল্য, অনৈহ্য মূল্য বা অযুক্তিক মূল্য, যা ক্রেতার জন্য কষ্ট হয়ে গেলো, সেটা মুমিনের চরিত্র হতে পারেনা। খেয়াল রাখতে হবে ক্রেতার জন্য তা যেনো জুলুম হয়ে না যায়, খুব কষ্ট যেনো না হয়। এটাই নৈতিক হবে। তবে একে হারাম বলা যাবেনা।

সূত্র: শায়খ আহমাদুল্লাহ

 

#ইসলামে ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিধান; #বেচা-কেনায় কতটুকু লাভ করা শরীয়তে জায়েজ;  #বিক্রেতা কতটা লাভ করতে পারবে; # পন্য বিক্রয়ে জুলুম না করা;  #ইসলামি শরীয়তে পন্য কেনাবেচা; #ক্রেতার সাথে মিথ্যা বলে বিক্রি করা;

সম্পূর্ণ পড়ুন...

জীবনের বাঁক

 জীবনের বাঁক

মোঃ অলিউল্লাহ্

কত দিন পর একটা সুন্দর সকাল দেখছো তাই না? মনে পড়ে ঠিক কত দিন হয়েছে ভোরে ওঠে ফজরের নামাজ পড়ে নির্জন পিচঢালা পথে হাটতে বের হওনি? বহুদিন আগে একবার তুমি আমি আমাদের গ্রামের পিচঢালা পথে এমন কাকডাকা ভোরে হাটতে বের হয়ে ছিলাম মনে আছে?

“আছে না আবার। অবশ্যই মনে আছে। তখন আমি বাড়ির নতুন বউ। আমি বাড়ির বাইরে যাবো না বলার পরও তোমার চাপাচাপিতে বোরকা পরে হাটতে বের হয়ে ছিলাম। রাস্তার দুই পাশে তাল গাছের সারি, মাঠ জুড়ে ফসল। স্তব্ধ সকালে নির্জনতায় আমরা দুজন ভোরের হাওয়ায় মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলাম।”

 তোমার মুখটা আজ অন্যদিনের চাইতে প্রাণবন্ত লাগছে, মনে হচ্ছে লাবণ্যময়ী একটা মায়াবী বদন। 

অর্পিতা- হয়েছে, হয়েছে। এই সকাল বেলায় আমার প্রশংসা করে মন প্রফুল্ল করতে হবে না। আমি এমনিতেই খুশি।

আবিদ হাসান - আমি সেটাই বলছিলাম, কোন প্রশংসা না করলেও আজ তোমায় অন্যরকম দেখাচ্ছে। কিন্তু বললে নাতো?

অর্পিতা- কী বলবো?

আবিদ হাসান - এইযে তোমায় প্রশ্ন করলাম, কতদিন পর এমন একটা সুন্দর সকাল দেখছো?

অর্পিতা- মনে নেই। আর ভাবতেও ইচ্ছে করছেনা। এখন শুধু ইচ্ছে করছে, এই মুগ্ধ আবহাওয়ায় মিশে গিয়ে স্নিগ্ধ-সুভাষিত ফুলের ঘ্রাণ টেনে নেই নাক দিয়ে। পাখিদের কিচিরমিচিরে কান পেতে রাখি অনেকটা সময়, শুনতে চাই ও বুঝতে চাই ওরা কি বলা-বলি করছে। কীসে এত আনন্দ ওদের? ঠিক কী এমন আনন্দে ওরা প্রতিভোরে জেগে ওঠে আর মেতে ওঠে কিচিরমিচিরে? ঐ নদীর মাঝখান থেকে ছুটে আসা শীতল হাওয়াটা কেবল আমার মুখে এসে পড়েনা; আমার প্রশ্বাসকে থামিয়ে দিয়ে নিশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে সমস্ত শরীরে একটা অলৌকিক অনুভূতির শিহরণ জাগায়। তুমিই বলো এমন পরিবেশে কী অন্য কিছু ভাবা যায়?

আবিদ হাসান - আমি কী জন্য প্রশ্ন করেছি, তা তুমি ভালো করেই বুঝে গেছো। তাই আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো। আসলে প্রতিদিনই ভাবি বিষয়টা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলি। কথা বলা উচিৎ। দেখো, জীবনটা কি? কেন আমরা দুনিয়াতে এলাম? জীবন ফুরিয়ে গেলে আমরা কোথায় যাবো? কী হবে আমাদের সাথে, সেটা কমবেশি আমরা সবাই জানি।

অর্পিতা- এই সাজ সকালে এসব নিয়ে কথা না বললে হয় না? কত সুন্দর একটা সকাল বলো। এই দেখো কতগুলো বকুল ফুল পরে আছে, আমাকে কিছু কুড়িয়ে দাও না। বাসায় গিয়ে মালা গাঁথবো।

আবিদ হাসান -  তুমি আর সিরিয়াস হবে না (মুচকি হেসে)। এই নাও তোমার বকুল ফুল। গাছের তাজা ফুল।

অর্পিতা- তুমি গাছ থেকে কেনো ছিড়তে গেলে। গাছের ফুল গাছেই সুন্দর।

আবিদ হাসান -আরে নাহ, ছিড়ি নি। ডাল ধরে ঝাকি দিয়েছি, আর অনেকগুলো ফুল ঝরে পড়লো। এমনিতেই ঝরে যেতো রোধ ওঠলে। চলো নদীর ঘাটে গিয়ে বসি। (হাটতে, হাটতে) একটা মজার ব্যাপার কী জানো, ঢাকা আসার পর আমি যতবারই বাসা পরিবর্তন করেছি, প্রতিটা জায়গাতেই একটা অসম্ভব সুন্দর আকর্ষণীয় জায়গা খুঁজে পেয়েছি; যেখানে আমি প্রায় প্রতিদিন গিয়ে বসতাম, অবসর সময় কাটাতাম, মন খারাপ হলেই চুপচাপ একাকী বসে ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতাম। এখানে আসার পরও এই গোদারাঘাট ও নদীর পাড়টা আমার খুব ভাল লাগে। বিশেষকরে এই সকালবেলাটা। কারণ কিছুক্ষণ পর থেকেই এখানে হাট বসবে, প্রচুর লোকসমাগম হবে। তখন আর চাইলেও এই নির্জনতা উপভোগ করা যাবেনা। 

অর্পিতা- ঢাকা আর কোথায় কোথায় এমন জায়গা ছিল, যেখানে তুমি সময় কাটাতে? আমায় নিয়ে যাবে সেই জায়গা গুলোতে? আমার বিশ্বাস এই জায়গাটির মতো, অন্য জায়গাগুলোও মনোমুগ্ধকর হবে। বাই দ্য ওয়ে, তুমি কিন্তু আমায় সেই বিয়ের পর থেকেই, আশা দিয়ে যাচ্ছো কক্সবাজার নিয়ে যাবে, কিন্তু নিয়ে তো যাচ্ছো না। সুযোগ পেলেই ওখানকার এটা সুন্দর, ওইটা সুন্দর বলে আমায় লোভ দেখাও। নিজে তো বিয়ের আগেই গিয়ে ঘুরে ফিরে সব শেষ করে ফেলেছো।

আবিদ হাসান - হা, হা। কী যে বল, ঘুরাফেরার কী শেষ আছে? আরো কত বাকি। নিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ। ঢাকায় একটা জায়গার নাম ছিল বাসাবো বাগানবাড়ি। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই একটা জায়গা ছিলো কালিবাড়ি মন্দির। বিশালাকারের একটি দিঘি ছিলো এবং চারিপাশে বিশাল বিশাল বটগাছ ও অন্যান্য গাছ ছিল। বসে সময় কাটানোর জন্য বেস্ট টাইম ছিল ভোর সকালে ও বিকাল বেলায়। আরেকটা জায়গা আমার খুব প্রিয় ছিল। বালুঘাট, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভিতরে একটা জায়গা ছিল লাল দিঘির পাড় নামে। বিকেল বেলা টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা কাটাতাম সেখানে। ভীষণ ভালো লাগতো। সবাই যেতে পারতোনা সেখানে, সিভিলরা ঢুকতে পারতোনা। আমার বিশেষ পাশ ছিলো। আরোও অনেক সুন্দর জায়গা ছিল, যেখানে আমি সময় কাটিয়েছি। এখন আর আগের মত সেসব জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে কিনা জানা নেই। শুন, একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবো, উত্তর দিবে?

অর্পিতা- আমি জানি যত গল্পই করিনা কেন, তোমার মাথার ভিতর যেই কথাটা ঘুরছে সেটা না বলা অবদি তোমার শান্তি নেই। আচ্ছা বলোতো জীবনের কোন সময়টা সব থেকে বেশি আনন্দের? মানে শৈশবকাল, কৈশোরকাল ও শেষ বয়সে। -(গুদারাঘাটে বেঞ্চে বসে।)

আবিদ হাসান - বিষয়টা আপেক্ষিক ও  কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক।

অর্পিতা- কেমন? বুঝিয়ে বলোতো।

আবিদ হাসান - যেমন ধরো অধিকাংশ মানুষই উত্তর দিবে, সব থেকে আনন্দের সময় হলো শৈশবকাল। কারন ওই সময় জীবন নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা, পিছুটান, ক্যারিয়ার কোন কিছু নিয়েই ভাবতে হয় না। মনের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো যায়, যা সারাজীবন স্মৃতির পাতায় পঞ্জীভূত থাকে। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো কোন দায়িত্বই পালন করতে হয় না। কিন্তু জীবনের যোগ-বিয়োগের হিসাবে এই শৈশবের কোন মূল্যই নাই। তবে কৈশোরকালকে অনেকেই বলে জীবনের বেস্ট টাইম। এই কথাটাও আপেক্ষিক। যেমন কেউ বলল জীবনে সফল হওয়ার জন্য কৈশোরই শ্রেষ্ঠ সময়। এখন প্রশ্ন হলো- সফলতা কী? হাজারটা উত্তর আসবে, যার সুনির্ধারিত কোন উত্তর নেই। শেষ বয়সে মানুষ মূল্যহীন হয়ে যায়। গুরুত্ব হারায় সাথে হারায় সুদীর্ঘকালে গড়ে তোলা স্ট্রং পারসোনালিটিও। যে ব্যক্তি হিসাবে কম গ্রাহ্য তার ব্যক্তিত্ব আর কতটা। আবার অনেকে ডিফারেন্টও হয়। অনেকের শৈশব, কৈশোরের মতো শেষ বয়সটাও সমানতালে সুন্দর হয়ে থাকে। কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব তখনই প্রকাশ পায়, যখন অনন্তকালের জীবনের বুনিয়াদ তৈরি করে নেওয়া যায়। জীবনের যে অংশে সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করে, তার সঠিক ফলাফল লাভের যোগ্য হয়, সেই সময়টিই শ্রেষ্ঠ সময়।

আমি বলবো আমার জীবনের আসল সময় হলো একটা টার্নিং পয়েন্ট বা আমুল পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে আমি চিনেছি নিজেকে অনেকটা। আমি জেনেছি এই দুনিয়ার পরেও আরো একটা জগৎ আছে। আমি উপলব্ধি করেছি এই পৃথিবী নেহাত সৃষ্টি করা হয়নি এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীকেও অহেতুক সৃষ্টি করা হয়নি। সবকিছুর পিছনে একটা মোটিভ রয়েছে। আমার সব থেকে বড় যে পরিবর্তন, তা হলো আমার দৃষ্টিভঙ্গি; আমি জানতে শুরু করলাম প্রকৃত মানুষ কেমন আর জানলাম আমার আসল পরিচয় আমি মুসলমান। আর যখন জানলাম, আমি মুসলমান, তখন আমার দায়িত্ব বেড়ে গেলো। সেই দায়িত্ব আমাকে বলতে চাইলো, ‘You should do something different, Not like others; who doesn't care about after death. It does matter for me, how I treat my time and what will happen to me after ending the time’.

তুমি কি জানতে চাও আমার সে অবস্থার কথা?

অর্পিতা- হ্যা, বলো।

আবিদ হাসান - যখন আমি ভাসছিলাম একটা মাঝিহীন নৌকায়? গন্তব্য না জানা এক যাত্রায় আমি ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। আমি ছিলাম এক উন্মাদ। আমি নিজের ক্যারিয়ার, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ঘূর্ণিতে চক্রাকারে ঘুরছিলাম। তখন কেউ একজন অথবা কোন এক দৈব ধমকা হাওয়া বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে আমার দৃষ্টিকে অবনত করল, আমার উচ্চাভিলাষ গুলো একই রেখে শুধু ধরণটা দিলো পাল্টে অর্থাৎ দুনিয়ার অট্রালিকা, পাহারসম সম্পদ আভিজাত্য আর আত্মসম্ভ্রমের মিছে অহমিকার কথা গেলাম ভুলে। কী জানি হলো আমার মাথাটায়, সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছিল, তারপর স্বচ্ছ চোখ দিয়ে আকাশটাকে দেখতে লাগলাম, কে এই আকাশে মালিক? কে এই সুবিন্নস্ত জমিনের মালিক? পৃথিবীর সকল প্রাণের পালনকর্তা কে? কোন সে ড্রাইভার যে সমস্ত বিশ্ব-ভ্রমান্ডকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি? কেন নিয়ে যাচ্ছেন?

অর্পিতা- সত্যি বলতে কী যখনই জীবনের মানে খুঁজতে চেষ্টা করি, মৃত্যু নিয়ে ভাবি এবং পরকালের কথা কল্পনা করি, তখনই আল্লাহর প্রতি অনেক ভয় জাগে। ভালো কাজ করতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সামান্য হারামও যেন আমায় স্পর্শ না করে। কিন্তু পরক্ষণেই শয়তানের প্রলোভনে আটকে যাই। এক ওয়াক্ত/ দুই ওয়াক্ত নামাজ ছাড়তে ছাড়তে একটা সময় দীর্ঘ গ্যাপ হয়ে যায়। এমনটা কেন হয় জানিনা। কিন্তু তুমি যখনই আমায় অনুপ্রাণিত করো, আমি নতুন উদ্যম খোঁজে পাই। আবার নতুন করে শুরু করি।

আবিদ হাসান- মুসলমানের প্রধান শত্রু শয়তান। সে চাইবেই আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমাদের আসল চ্যালেঞ্জ হলো শয়তানের ধোকায় না পড়ে, বরং শয়তানকে ধোকা দেওয়া। আমাদের ঈমান খুব মজবুত নয়, তাই খুব সহজেই আমরা হেদায়াতের পথ হতে সরে যাই।

অর্পিতা- Exactly, মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই কি মৃত্যুর পর আখেরাত আছে? জান্নাত-জাহান্নাম আছে? নাকি নাই। লক্ষ-কোটি অমুসলিমরা সবাই কি জাহান্নামে যাবে? তারা সবাই কি ভুল? এমন সব প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খায়।

আবিদ হাসান- সেজন্য ঈমানকে আগে মজবুত করতে হবে। একটা বহুতল ভবনের ভিত্তি যদি মজবুত না হয়, তাহলে তা অচিরেই দশে পরে যাবে। তেমনি মুসলমানের ঈমান যদি মজবুত না হয়, তাহলে সে প্রকৃত মুসলমান থাকবেনা। তোমার আশপাশে হাজারো মুসলমান দেখতে পাবে- কেউ নামধারী অর্থাৎ মুসলমান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নিয়েছে বলে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেয়। কেউ আবার বছরে বা সপ্তাহে দু’য়েকবার নামাজ পরে আর ইসলামের অন্যসব বিষয় তোয়াক্কাই করেনা। কেউ কেউ আছেন নিয়মিত নামাজ, রোযাসহ ইসলামের সকল রোকনই সম্পন্ন করেন, কিন্তু তা যথাযথ ভাবে করেন না। আবার আরেক দল আছেন যারা খুবই পুঙ্খানোপুঙ্খভাবে ইসলামের প্রতিটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন, বিশ্লেষণ করেন, জ্ঞানার্জন করে সঠিক বা উত্তম বিষয়টি গ্রহণ করেন আর সেই অনুরূপ আমল করার চেষ্টা করেন। যারা কালে-ভদ্রে ধর্মপালন করেন, তারা শয়তানের হাতের পুতুল। মাঝে মাঝে শয়তান অবসরে গেলে তাদের ভালো কাজ করতে মন চায়, এছাড়া যত হারাম কাজই করুক না কেন, তাদের বিবেক তখন ঘুমিয়ে থাকে।

আমাদের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পার হয়ে যায় কেবল দুনিয়া নামক ব্যাপারটা মাথায় ঘুরাফেরার মধ্য দিয়ে। যে বিদ্যা অর্জন করি সকল কিছু অন্য নয়নে দেখতে পাবো বলে, সেই বিদ্যান চোখ তো সাধারণ চোখের মতই দেখে সবকিছু। অর্থোপার্জন তো লেখাপড়া না করলেও করা যায়। সামান্য যেকোন কাজ শিখে নিয়েই বছরের পর বছর কাজ করে শ্রম দিয়ে টাকা উপার্জন করা যায়। তাহলে এত সময় দিয়ে শিক্ষালাভ করার দরকার কি? সতেরো-আঠারো বছর বিদ্যার্জন করে আমিও যদি সেই অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করি, মিথ্যে বলি, ঘোষ খাই, সুদ খাই, পরের হক নষ্ট করি, আমানতের খেয়ানত করি, গুরুজনকে অসম্মান করি, অধ:স্তনদের অবজ্ঞা করি, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেপরোয়া আচরণ করি, লোলোপ দৃষ্টি দিয়ে কাউকে স্ক্যান করে নেই এক মুহুর্তেই এবং সেই নেশার ঘোরে রাত্রি যাপন করে দেহ-মনের ক্রিড়ায় লড়াই করি, তাহলে এতো বছরের বিদ্যা থেকে কি গ্রহণ করলাম?

শৈশবের আদর্শলিপির আদর্শ আমাদের মাঝে কোথায়? আমরা কোথায় রক্ষা করলাম, আত্মীয়তার বন্ধন? কোথায় খোঁজ নিলাম প্রতিবেশীর? কোথায় কারো বিপদে এগিয়ে গেলাম? কবে অনাহারীকে আহার দিলাম? কবে অসুস্থকে সেবা করলাম? এসবইতো আমরা বইয়ে পড়েছি, কিন্তু বইয়ের পড়া গুলো আমাদের তো কিছুই দিলনা।

তাই অন্য নয়নে দেখা হলোনা সেই বিদ্যান নয়নের। 

তবে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“ ৩৮. এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশী ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল,

   ৩৯. জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা৷

   ৪০. আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত  রেখেছিল 

   ৪১.তার ঠিকানা হবে জান্নাত ৷

   ৪৬) যেদিন এরা তা দেখে নেবে সেদিন এর অনুভব করবে যেন ( এরা দুনিয়ায় অথবা মৃত অবস্থায় ) একদিন বিকালে বা সকালে অবস্থান করছে মাত্র ৷” 

                                                                    ------- সুরা- আন নাযিয়াত, আয়াত-৩৮-৪১ এবং ৪৬


যদি একান্তই আমরা শিক্ষার মর্যাদা ও গুণাগুণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারতাম এবং এক ভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারতাম, তাহলে সেই বইয়ের কথাগুলো আবার মনে করতাম। আল্লাহর বাণীগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করতাম। দুনিয়ার ক্ষণিকের সময়টাকে বেশী ভালো না ভেবে আখেরাতের কথা ভাবতে শুরু করতাম। যে মেধা আমায় একজন ভাল ছাত্রে পরিণত করেছে, আমায় একজন  ভালো কর্মজীবী করেছে, সেই মেধার সঠিক প্রয়োগে যদি অনন্তকাল থাকার জায়গাটা বাছাই করতে না পারি অর্থাৎ এখনকার এই মৃদুমুগ্ধ সকালের চাইতে লক্ষ্য-কোটিগুণ উত্তম জায়গাটা না বাছাই করে , দুনিয়ায় উৎকৃষ্ট ভেবে পরকালের নিকৃষ্ট জায়গায় আশ্রয় পাই, তাহলে আমরা আমাদের মেধার সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলাম না। আমাদের বিদ্যা বা মেধা ও বিবেকবোধ দুইয়ে মিলে যদি পরকালের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল না বাছাই করতে পারি, তাহলে সেই বিদ্যা পরিত্যাজ্য ছাড়া কিছুই নয়। 

 

 আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট থাকা উচিৎ। আর সেই টার্নিং পয়েন্ট হবে জীবন বদলানোর মতো উদ্যোগ। সঠিক সময়ে আমাদের রবের ডাকে সারা না দিলে, বিশ্ব নবীর পথ অনুসরণ না করলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। সামান্য জীবনের ক্যারিয়ার গড়তে আমরা ১৫-২০ বছরের প্রস্তুতি নেই। আর যেই স্থানে অনন্তকালের আবাস্থল সেই স্থানের জন্যে কী আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার নেই?

আমাদের এই পরিবর্তন কেবল আখেরাতের পুঁজিই নয়, বরং দুনিয়াতেও আমরা খোঁজে পাবো চমৎকার এক জীবন। যা জীবনকে কতটা সুখ দিতে পারে, কতটা শ্রেষ্ঠ মনোসত্ত্ব তৈরি করতে পারে, তা কল্পনাই করা যাবেনা।

সারা জীবনে এতো জ্ঞানার্জন, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা-ই যে বিষয়টিতে আমাদের কনভিন্স করাতে পারলোনা, সেখানে আমাদের বিবেকের নবজাগরন আমাদের কনভিন্স করল। সারাদিনে মহান আল্লাহর সামনে পাঁচবার দাড়াতে পারা। গিবত বা পরনিন্দা করা এটা কেবল পরচর্চা নয়; নিজের ব্যক্তিত্বের সংকটও তৈরি করে। বরং যেকোন মানুষের উপস্থিতিতে যতটা উত্তম আচরণে আর সামনে গুণান্বিত হওয়া যায়, তার পিছনে তেমনই হওয়া উচিৎ, এতে কেবল লোকের মুখেই ভালো হওয়া নয়; নিজের আত্মতৃপ্তির জায়গাটাও হয় সমৃদ্ধ। 

এটা একটা মজার অনুভূতি যে, আমরা সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত কোন মানুষের সম্পর্কে সমালোচনা, নিন্দা, কটুকথা, হিংসা বা বাজে মন্তব্য না করেই একটি দিন পার করতে পারলাম। সারাদিন মিথ্যে না বলে একটা দিন কাটাতে পারলাম। সারাদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারলাম। একটা দিনে আমি অসংখ্যবার আমাদের খালিকের কথা স্মরণ করেছি, তাঁর শোকর গোজার করেছি, তাঁর প্রশংসা করেছি মনে মনে।

আমাদের দ্বারা যদি সারাদিনে কারো কোন ক্ষতি না হয়। কারো অপকার অনিষ্ট না হয়। বিপরীত লিঙ্গের এমন কারো দিকে না তাকানো, যাকে দেখা আমাদের জন্য হারাম; এমনকি একটি দিনে কোন প্রকার হারাম লেনদেন না করা। পারলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করা, অসহায়কে সাহায্য করার চেষ্টা করা আর অসুস্থ্য কেউ থাকলে সেবা করার চেষ্টা করা। আর এই সবই করে আমাদের পালনকর্তার ভয়ে ও তাঁকে সন্তুষ্ট করতে যা কিছু করা হয় সবকিছুর জন্য অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে। সত্যি বলছি, জীবনে এরচেয়ে ভালো অনুভূতি আর কখনো হয়না।

এভাবে একটা মানুষ নিজেকে বদলাতে পারলে, সে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবে তার অতীত ও বর্তমানের অনুভূতি দ্বারা। যখন সে বেহিসেবি দিন কাটিয়েছিলো, এখনকার হিসেব করা দিনগুলোর তাৎপর্য বুঝতে পারবে। আর তখনি একজন সঠিকভাবে দ্বীনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া করছি, যে তিনি আমাকে দয়া করেছেন, আমার ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগ্রত করেছেন। ‍বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সঃ) এর দেখানো পথে চলবার মতো তৌফিক দিয়েছেন। আল্লাহ যেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেইভাবেই আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দেন, আমিন।

অর্পিতা-  মাশা আল্লাহ্। আল্লাহ মেহেরবান। আলহামদুলিল্লাহ, তুমি একজন মুসলমান হিসাবে দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করছো। আল্লাহ হেফাযত করুন, আমিন।  আমিও চেষ্টা করি নিয়মিত আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলার, যদিও মাঝে মাঝে অনমনস্ক হয়ে শয়তানের ধোকায় পড়ে সময় নষ্ট করি, বিপথে চলে যাই। কিন্তু তোমাকে পাশে পেয়ে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। একজন ভালো সঙ্গীই পারে খুব সহজে তার সঙ্গিনীকে হেদায়াতের পথে নিয়ে আসতে। একজন খারাপ মানুষ যেভাবে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে, তেমনি একজন ভালো মানুষের প্রভাবেও অপরজন ভালো হতে পারে। 

ঠিক বলেছো।

অর্পিতা-আমার ভালো লাগে, যখন তুমি নিয়মিত কোরআন ও হাদিসের বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করো এবং আমাকেও সেইভাবে নির্দেশনা দাও। আলহামদুলিল্লাহ।

তুমি দ্বীনের প্রতি খুবই আন্তরিক, মাশা আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসাবে পেয়েছি এবং আমি আশা করছি ভবিষ্যতে আরো ভালোভাবে দ্বীনের পথে চলবে এবং দ্বীনের কাজ করবে, ইনশা আল্লাহ।

অর্পিতা- ইনশা আল্লাহ।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, December 8, 2020

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হলে যা করবেন।

 মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সকল নেয়ামত দান করেছেন আমাদের। আবার মানুষকে বিপদ দিয়ে, রোগ ও অভাব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে পরীক্ষা করেন। কিন্তু সকল সমস্যার সমাধানও তিনি দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করি, আর তাই যখনই আমরা এমন বিপদে পড়বো তখন আমাদের সকলের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করবো।

দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা অনুভব হলে এই দোয়া পড়বেনঃ

উচ্চারণঃ আউ’যুবিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া আহাযিযু।

অর্থঃ যে ক্ষতি আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশংকা করছি তা হতে আমি আল্লাহর মর্যাদা ও তাঁর কুদরতের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসলিম)


পরম করুণাময় আল্লাহ এই দোয়ার বরকতে আপনাকে ব্যথা মুক্ত করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে প্রতিপালক আমাদের দুনিয়ার সমস্ত নেয়ামত দান করেছেন, তাঁর শুকরিয়া গোজার করা উচিত। প্রতি নিয়ত আল্লাহর অনুগত প্রকাশ করা, কুরআন ও হাদিসের পথে চলা এবং আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে খাস নিয়তে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করে প্রার্থনা করলে, আল্লাহ হয়তো আমাদের সকল ব্যথা দূর করে দেবেন ইনশা আল্লাহ।

সম্পূর্ণ পড়ুন...