Sunday, May 29, 2022

সংকট

অস্তিত্বের সংকট || ধর্মীয় চেতনায় হীনমন্যতা || পার্থিব সার্থে গা ভাসিয়ে কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ।




ব্যক্তিজীবনে অস্তিত্বের সংকটবোধ (Existential Crisis in Personal Life)


আমার পরিবারে আমার পরিচয় আমি কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা ইত্যাদি। আমি সেই পরিবারের একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সেখানে আমি সবার পরিচিত। আমার কিছু সংরক্ষিত অধিকার যেমন রয়েছে সেই পরিবারে, তেমনি রয়েছে কিছু দায়িত্ব। কিন্তু  একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌছে অনুধাবন করলাম পরিবারের যেকোন বিষয়ে যা কিছুই হোকনা কেন, কোন ব্যাপারেই আমাকে কেউ কিছু জানায় না। আমার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতেও কারো কোন যায় বা আসেনা। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা এমন ধারালো যে, আমি সেই পরিবারের একজন সদস্য হলেও সেই পরিবারে আমি গুরুত্বহীন। আর একটা সময় গিয়ে দেখা গেলো, আমি সেখানে থাকা আর না থাকা কোন তারতম্য সৃষ্টি করেনা, স্বাভাবিকভাবেই একটা মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি হলো আমার ভিতর। মনে হলো আমি একটি শিকড়বিহীন বৃক্ষ, অস্তিত্বহীন কোন প্রাণী।

একটা পরিবারে কিংবা একটা সমাজে যখন বহুবছর জীবন যাপন করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই স্থানের প্রতিটা মানুষ, সেই পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সাথে অত্যন্ত নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মানবিক সম্পর্কের বন্ধন কতটা আবেগীয়, কতটা স্পর্শকাতর তা তো কেবল সেই ব্যক্তিই জানে, যে জীবনের ঘূর্ণিতে আটকে গিয়ে চোখের সামনে সব কিছুকে অপরিচিত হিসাবে খোঁজে পায়। যাদেরকে সারাজীবন আপন হিসাবে জানার পর হঠাৎ করে সবাই যখন অপরিচেতর মতো আচরণ করে, তখন তার অনুভূতিতে আকস্মিক আকাশ ফেটে পড়ার অনুভূতি তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর এই যে, মায়ার বন্ধন, নারীর টান তা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার মতো আবহ তৈরি হওয়াটাই নেহাত অস্তিত্ত্বের সংকট।

ধর্মীয় অনুভূতিতে অস্তিত্বের সংকট (Existential Crisis in Religious Sentiment)

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে, নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে জাগতিক স্বার্থ যখন ঐশ্বরিক বা পরকালের স্বার্থকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মপালনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার বাধা-বিপত্তি, জুলুম-নির্যাতন, হত্যাকান্ড ঘটানো যখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়ায়, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও তারা অতি অসহায় কিংবা নেহাত নিরীহ বই কি? আর এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের স্বার্থ বা অধিকার বহাল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদাসীনতা দেখিয়ে; কেবল মুষ্টিমেয় সম্প্রদায়ের সুবিধাবৃদ্ধি ও অধিকার সংরক্ষণ ও সকল প্রকার নিরাপত্তার চাদরে মোড়িয়ে রাখাকে নিশ্চয়ই মানবাধিকারের সমতা রক্ষা করা হয়না।  ধর্ম পালনে সচেতন গোষ্ঠীকে যদি উগ্রতা, মৌল/-বাদ অথবা জ~ঙ্গী নামক তকমা দেওয়া হয় এবং মিথ্যা অপবাদে জেল-জুলুম, নির্যাতন, ঘুম  করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। ইমানদার ও সচেতন মুসলিমের জন্য এটা এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি করে। 

যেখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে, সেখানে কেউ যখন ইসলামের সার্বিক আইন মানতে গিয়ে আর দশজন সাধারণ মুসলিমের চাইতে  করে তখন কিছু 

এটা আমার দেশ, আমার জন্মভূমি, আমার মাতৃভূমি। যখন থেকে কথা বলা শিখেছি এই মাটির উপরে তখন থেকে এই দেশের ভাষায়; মানে বাংলা ভাষায় আমি কথা বলে এসেছি। এই ভাষা যেমন আমার অস্তিত্ত্বের সাথে সংগতিপূর্ণ। যখন এই ভাষায় কথা বলতে গিয়ে কোন বাধা আসে, তখন অবশ্যই সেই অধিকার রক্ষায় কথা বলা আমার নাগরিক দায়িত্ব হয়ে যায়।

আমাদের জাতীয় পরিচয়ের পাশাপাশি আমাদের আরোও একটা বড় পরিচয় আমরা মুসলিম। মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যে। আর পৃথিবীতে মানুষের প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহ মানুষ এবং জিনকে একমাত্র মহান রবের ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। [আল কোরআন, সূরা জারিয়াহ- ২৬]

কিন্তু পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য নবী ও রাসূল আগমন করেন। আর বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। যদিও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, ইসলামকেই একমাত্র মনোনিত ধর্ম বলেছেন। তাই মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাস্বরূপ যারা মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের জন্য একই ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের চাইতে সহজ। কেননা, আদিকাল হতেই মানুষের মধ্যে একটা প্রকট ধারণা বিরাজমান, আর তা হলো পূর্ব পুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন করা তাদের জন্য আবশ্যিক মনে করে। সেক্ষেত্রে নতুন কোন ধর্ম বা নতুন কোন ঐতিহ্যকে ধারণ করা এতোটা সহজ হয় না।

কিন্তু সত্য ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও কেবল পূর্বপুরুষদের লালিত-পালিত ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে অন্য ধর্মকে সত্য ধর্ম মেনে নিতে সকল সময়েই কঠিন ছিলো। কিন্তু কথা হলো যেই ভুখন্ডের নব্বই শতাংশের বেশী মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সেখানে কোন মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে সঠিক উপায়ে ও একান্ত আনুগত্যপোষণ করে সেই ধর্ম মানতে যাবে, তখন তাকে সন্দের চোখে ফেলে দেওয়া হয়। প্রকৃত ধর্মীয় বিধান ও আইন মানার ক্ষেত্রে অত্যধিক আনুগত্য করতে গিয়ে যখন সাধারণ ধর্মাবলম্বী বা নামধারী মুসলিমদের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন তাদেরকে বিশেষ কিছু তকমা দেওয়া হয়, যেমন- জ#ঙ্গী, চরম-+প>ন্থী, মৌ*ল-বা>দ ইত্যাদি।


যখন একজন মুসলিম তার অধিকার সংরক্ষণ করে যথাযথ নিয়মে ধর্মপালন করে ও দাওয়াহ’র কাজ করে তখন কিছু মহলের লোকেদের জ্বালা ধরে যায়। হিংসা ও বিদ্বেশের জন্ম হয়। সত্য ধর্ম পালন করতে গেলে যখন তাদের কোন অবৈধ কাজ করা সম্ভব হয়না, খারাপ কাজ করতে পারেনা, জুলুম, অত্যাচার ও হারাম কাজ করা কঠিন হয়ে যায়, তখন তাদের সেই ধর্ম মেনে নেওয়া তো কোনভাবেই সম্ভব মনে হয় না। আর তাই বিশেষ কিছু তকমা বা অপবাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় বৃহৎ শক্তিকে কব্জা করে তারা সেই ধর্মাবলম্বীদের দমন করতে চায়। তারা প্রথমত চায়, তাদের মতো বাকি মুসলিমরাও খামখেয়ালিভাবে অথবা গতানুগতিক কৃত্রিমভাবে ধর্ম পালন করুক, তাতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।

নিজ দেশে ও নিজ ভূমিতে নিজ ধর্ম পালনে তোষামোদ করা, বিধর্মী ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ করা। ধর্মীয় সমালোচনায় বিভিন্ন কট্টর অপরাধ, জেল-জরিমানা, শাস্তিসহ জীবননাশের আশঙ্কা যখন কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উৎকন্ঠা সৃষ্টি করে; তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে ‘আসলেই কী আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতি? নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুনাফেক ও কাফিরের মাঝে আমরা কেবল উদ্বাস্তু? যখন কোন মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া স্বত্তেও তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দুর্লভ হয়ে পড়ে, তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেকে অত্যন্ত একা হয়ে যায়। আশপাশে হাজারো মানুষকে দেখতে পেলেও তার আদর্শ ও মূল্যবোধের জায়গায় যখন নিজেকে একাকীত্বতায় আবিষ্কার করে, তার অস্তিত্বের সংকট প্রবল হয়ে যায়।

কিন্তু সবকিছুরই শিকড় আছে। সব কিছুরই শেষ আছে। আশার কথা হলো, একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো সর্বাত্মকভাবে নিজের ঈমানকে মজবুত রেখে ইবাদতে মশগুল থাকা এবং সাধ্যমতো দ্বীনের দাওয়াহ, দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আর ইসলাম ধর্ম কোন ঠুংকো নয় যে, কোন জাতি, সম্প্রদায় চাইলেই তা নিশ্চিহ্ন করে দেবে; বরং এই ধর্ম আল্লাহর একমাত্র মনোনিত ধর্ম। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তার ধর্মকে মানুষের কাছে সমুন্নত রেখেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তিনি ইসলামকে সুরক্ষিত রাখবেন। পৃথিবীতে আদম (আঃ) থেকে শুরু করে যত নবী-রাসূল আগমণ করেছেন সকল নবী রাসূলের যুগেই কাফের মুশরেক সম্প্রদায় তাঁদের বিরোধিতা করেছেন, আল্লাহর দ্বীনকে তারা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। অথচ সেইসব কাফের সম্প্রদায়ের ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। আর তাদের জন্যও নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা গজব পাঠাবেন বা তাদেরকে ধ্বংশ করবেন। 


No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment