Monday, June 4, 2018

আমি শুধুই একটা মানুষ (অডিও বুক)

আমি শুধুই একটা মানুষ 

এই গল্পটির অডিও ভার্সন শুনতে নিচের ভিডিও লিংকটিতে ক্লিক করুন। এছাড়া ইউটিউভে গিয়েও গল্পটি শুনতে পারেন ও ডাউনলোড করে নিতে পারেন খুব সহজে। বই কিংবা ওয়েবসাইটে গল্প পড়ার সময় পাচ্ছেন না, ভাবনা নেই। এখন আপনার হাতে থাকা ফোনে অডিও বুকটি ডাউনলোড করে নিন আর সময় সুযোগে শুনে নিন মজার এ গল্পটি। আশা করি খুবই আনন্দ পাবেন। আপনাদের আনন্দ দিতে পারলেই আমার এ প্রয়াস সার্থক হবে। 


অন্য সকল অডিও গল্প সহজে পেতে আমার ইউটিউভ চ্যানেল এ ভিজিট করুন - https://www.youtube.com/channel/UCikiVn_5hwcutkiWOSmMY4g/videos


  • চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইভ করুন।
  • লাইক দিন। 
  • কমেন্ট করুন।
  • শেয়ার করুন।
  • সকল অডিও এবং ভিডিও দ্রুত পেতে ভিডিওর বেল আইকনটিতে ক্লিক করুন।

সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন


আমি শুধুই একটা মানুষ!


বৈশাখের তীব্র রোদে র্সূয শিখায় সমস্ত ঘা ঘামে ভেজা। অর্পূব - যেন চিতা বাঘের মতো একটা দৌড় দিয়ে একটা নির্জন ঘনকৃষ্ণ বৃক্ষাদির ছায়ায়, একটা নদীতীরে এসে দাড়য়িে হাঁপাচ্ছ। আমার বন্ধু প্রণব হঠাৎ সেই পথইে হেটে যাচ্ছিল।   অপূর্ব আর প্রণব উভয়ে পূর্ব পরিচিত।   দু’জনে একই কলেজে পড়াশুনা করে।   প্রণব একটু চঞ্চল স্বভাবের।  তবে কারো ব্যক্তিগত বিষয় জানার আগ্রহ দেখায় না; বরং হেয়ালি করে তা এড়িয়ে যেতে চায়।   চলুন দেখি কি হবে সামনে........প্রণব- ভেবে ছিলাম আজ তোর সাথে দেখা করবো।   ভালোই হল তোকে পেয়ে।   খুব ভাল আছিস তাই না?অপূর্ব- (একটু মুখটা বাঁকা করে) আমার বাড়িতে একটা কুকুর আছে,  জানিস তো?প্রণব- হ্যা।   কিন্তু কি হয়েছে? অপূর্ব- মা হয়েছে।   অত্যন্ত চমৎকার  চারটে বেড়াল ছানা জন্ম দিয়েছে।   আর তুই তো জানিস,  আমি বেড়াল ছানা খুব পছন্দ করি।   তাই মনটা খুব ভাল,  খুব আনন্দিত আমি। প্রণব- যা, তা আবার হয় নাকি।   কুকুর বেড়াল ছানা জন্ম দেয় কি করে?


অপূর্ব- আরে হয় হয়।   মাঝে মাঝে হয়ে যায়। তা কেন দেখা করতে চেয়েছিস আমার সাথে?

প্রণব- ও হ্যা।   তোর কাছে আমার ম্যানেজমেন্ট বইটা আছে না? (মাথা নিচে করে নিচু স্বরে) ভাবছি একটা নাটক লিখবো।
অপূর্ব- কিরে ম্যানেজমেন্ট বইয়ে নাটক লেখার সূত্র আছে নাকি?
প্রণব- আরে নাহ।   তা নয়।   বইটা দরকার। অপূর্ব- তো বই দরকার হলে বই নিয়ে যাবি।   কিন্তু বইয়ের সাথে নাটকের কি সম্পর্ক? দুস্ত সুযোগ বুঝে নিজেকে জাহির করতে হয়, বুঝলি?

প্রণব অপ্রস্তুত হয়ে চলে গেল।   অপূর্ব আবার মন খারাপ করে নদীর পাড়ে গিয়ে বসল।  কিছুদূরে তাকিয়ে দেখলো একটি সাদা বক অনেকক্ষণ ধরে একটি মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে।   শেষ পর্যন্ত একটি মাছ ধরতে পারলেও ঠোট ফসকে মাছটি পানিতে পড়ে যায়।   তা দেখে অপূর্ব নিজের সাথে মাছটাকে এক মুহূর্তের জন্য তুলনা করে নিল।  কে বেশি হতাশ মাছ? না আমি নিজে? ভবঘুরের মতো দীর্ঘকাল কাটিয়ে একটা সময় পেটের দায় অনুভব করলাম।   


আর তখনই নানা কাজের সুযোগের আশায় এখানে-সেখানে ঘুরেছি।  কিন্তু কোন জায়গায় একটা কাজ পেলাম না।  লোকে বলে এটা নাকি বয়সের ফের।  আমি নাকি বয়সে কাজের জন্য উপযুক্ত নই।  এমন একটা সময় নাকি আসবে যখন আমি কাজ খোঁজার আগেই পেয়ে যাব।   বলি কবে আসবে সেদিন? 

আর ততদিন কি আমি অনশন করবো? আর্থিক সঙ্কট, নৈতিক অবক্ষয় আর মানসিক দুঃচিন্তার বয়স বোধ হয় এটাই।   পেটে খাবার থাকুক না থাকুক তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভুলে না।  শত হতাশা বুকে চাপা দিয়ে মানুষ এগিয়ে চলে একটি দূরবর্তী স্বপ্নের কিনারায় পৌছানোর লক্ষ্যে।তার মাঝে একটি সুক্ষ্ম চাহিদা মানুষকে তাড়া করে।   যা অপূর্বকেও প্রতিনিয়ত তাড়া করছে।   খুব ইচ্ছে ছিল ভাল একটা মেয়েকে ভালবাসবে।   নিজে গিয়ে কোন মেয়ের কাছে তার মনের কথা বলার সাহস তার কখনোই নেই।  তার ইচ্ছে কোন না কোন মেয়ে আছে যে তাকে এসে বলবে  ‘আমি তোমাকে ভালবাসি।  ’ কিন্তু তার সে ইচ্ছে অপূর্ণ রইলো।  কোন উপায় বুদ্ধি খুজে পাওয়া হলো না তার।  

 কিন্তু রিপুর তাড়না আর মানসিক যন্ত্রণা তার নিত্য সঙ্গী।   তার কলেজে একটি মেয়েকে প্রায়ই সে আড়াল থেকে দেখে।  খবর নিয়ে জানতে পেরেছে মেয়েটি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আর সে প্রথম বর্ষের।   একদিন ভাগ্যগুণে তার সাথে দেখা ও কথা হলো-মহেষপুর গ্রামের একটি মেলায়।   মেয়েটির নাম সুমনা।মেলার একটু দূরে,  একটা নির্জন গাছের নিচে বসে আনমণা হয়ে একটি গান গাইছিল।  অতিশয় প্রাণমুগ্ধকরী কন্ঠের সে অধিকারিনী নয়।   গানটা যেন অর্ধেকটা কবিতা আর অর্ধেকটা গল্প।   গানের সুর অপূর্বের কানে পৌাছালে সে কিছুটা দুষ্টুমির ছলেই ব্যঙ্গ করে গাইতে শুরু করল।  কিন্তু জানা ছিলনা এই মেয়েটিই সুমনা।সুমনা - এই শুন। অপূর্ব- দেখে তো অবাক।   থত মত খেয়ে বলল তুমি,  না মানে আপনি!সুমনা- তুমি আমাকে চিনো? 

অপূর্ব- হ্যা,  না।   আমি কি চিনি? কই নাতো।   (কিছু সময় চুপ করে থেকে) চিনি।   বিদ্যাঠাকুর কলেজের ছাত্রী।   আমি আপনাকে খুব, খুব, খুব (ভালবাসি বলতে চেয়ে ও বলা হল না) ভয় পাই।সুমনা - কেন?অপূর্ব- ( কিন্তু ধৈর্য্য সীমা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল) আমি আপনাকে খুব ভালবাসি।সুমনা- তুমি তো আমার চেয়ে ছোট।   আর তোমাকে তো আমি ভালভাবে জানিও না।অপূর্ব- আপনার নানা নানি জানতো?সুমনা- মানে ?অপূর্ব- মানে আপনার নানা নানি বিয়ের আগে দু’জন দু’জন কে জানতো?সুমনা - (একটু মুচকি হেসে) তুমি তো খুব চালাক।অপূর্ব- তার মানে আপনি রাজি?সুমনা- কখন বললাম? সকালে খেয়েছো? 

অপূর্ব- ও বাবা আপনি তো খুব কেয়ারিং।   এখনি এত কেয়ারিং?সুমনা- শুন,  জনাব পাগলের ছোট ভাই।   আমি বলতে চেয়েছি,  তুমি সকালে কোন নেশা দ্রব্য পান করেছো কিনা।অপূর্ব- আমার বড় ভাই নেই ।   তাই বাধ্য হয়ে তার দায়িত্বটা পালন করতে চাইছি।   বিশ্বাস করেন বড় ভাই থাকলে আমি সত্যিই আপনাকে ভালবাসতাম না।   আমার ভাইকে পাঠিয়ে দিতাম। সুমনা রীতিমতো অবাক।  অবশেষে দেখলো তার সাথে কথা বলে পারা যাবেনা।  তাই হাটতে শুরু করলো।এরপর অনেকবার অপূর্ব তাকে ভালবাসার কথা বলে কিন্তু কোনই ফল হয়নি।  সুমনা কখনোই তাকে ভালোবাসতে রাজি হয় নি।   কিন্তু বিভিন্ন কারনে অপূর্বের সাথে দেখা করতো।   

ধীরে ধীরে কথাবলা,  পথচলা,  গল্পকরা,  মাঝে মাঝে দূরে বেড়াতে যাওয়া।   একরাতে, পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে নিজের আপন মহিমায় পৃথিবীকে আলোকিত করছে।  সবুজ গাছপালাগুলো  চাঁদের আলোয় অন্ন এক রঙে সেজেছে।  সুমনা গায়ের সরু পথ দিয়ে রাত-দুপুরে ছোট্টবনের ভিতর দিয়ে হেটে অপূর্বের দরজায় এসে কড়া নাড়ল।   অপূর্ব গভীর ঘুমে স্বপ্নে নিমগ্ন।   তার মধ্যে নারী কন্ঠের সাথে স্বপ্নের মিলন ঘটল।  কয়েক বার ডাকার পর স্বপ্নটা যেন সত্যি হল।   দরজা খুলে দেখল কোন এক অচেনা দেশের রাজকন্যা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে, জগৎ রূপসীর বেশে চন্দ্রিমার উজ্জলতায় আবর্তিত, ঝর্ণাধারার মতো তার অঙ্গশুভা চারিদিকে যেন বাতাসের সাথে একটা রঙ মিশিয়ে দিচ্ছে।  নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা অপূর্বের।তাই পুণরায় চোখটা কচলে নিয়ে ভালভাবে দেখল।   

কোন কথা না বলে আগে তাকে ঘরে নিয়ে গেল।  বার বার সুমনার মুখের দিকে তাকিয়ে একটি প্রশ্ন করার চেষ্টা করছে।   কিন্তু কোন এক অবচেতন স্পৃহা তাকে আত্মভুলা করে দিচ্ছে।   সুমনা তার দিকে দেখে বলল-‘জানি,  তোমার মন তোমাকে নানা প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।   আমি এখন তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দেবনা।  তবে আমি তোমাকে এখন যা বলব তুমি তাই করবে।   কোন প্রশ্ন করবেনা।   তুমি এখন সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষি রেখে আমাকে বিয়ে করবে।   

বিয়ে হয়ে গেলে তুমি আমার সাথে এক অচেনা জায়গায় যাবে।  সেখানে আমরা আমাদের সংসার জীবন শুরু করবো।সত্যিই স্বপ্ন নয়; বাস্তব আর বাস্তবতার কল্পিত রূপ।  আবেগ আর কল্পনার বেড়াজালে সীমাবদ্ধ ভাবনা গুলো কিছু সময়ের জন্য বহুদূরে পাড়ি জমিয়েছে।  অপূর্ব রাজি হলো।  বিয়েটাও হলো।  সুমনার বহুদূরেও যাওয়া হলো।  তবে অপূর্বের সাথে নয়; একাকী।  কাঙ্ক্ষিত বাসনার রুদ্ধ কারাগারে অপূর্ব ধৈর্হ্যহীন।  মেনে নেয়ার মানসিকতা হারিয়ে বসেছে ইতিপূর্বেই।  হয়তো মেনে নেয়া যেতো, যদি মানুষের স্থলে অন্য জীব কিংবা পাথর হত।
..............................

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment