Saturday, June 9, 2018

আজও মনে পড়ে তোমায়


আজও মনে পড়ে তোমায়

মোঃ অলিউল্লাহ্



আজ রমজান মাসের তেইশ তারিখ। বছরের অন্য সব মাস গুলো থেকে এ মাসের কার্যক্রম কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় মাসটিকে বিশেষ মনে হয়। শেষ রাতের আবহটা আমি যেমন করে সারা বছর দেখি, আর সবাই সেটা দেখার সুযোগ পায় না।তাই তাদের জন্যও রমজান মাসের রাত্রিবেলাটা হয়তো বিশেষ কিছু। তবে তা সবার জন্য নাও হতে পারে, কারন অনেকেই রাতের পরিবেশ ও আবহ ভালবাসেনা। সাহিত্যের কিছু কিছু গল্পে রাত্রিবেলাকে বিপদসঙ্কুল বলা হয়েছে। অনেকের ধারণা দিনের বেলায় যেসব অতৃপ্ত আত্মা কিংবা ভয়ংকর কোন অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকেনা, সেসব প্যারানরমাল ইনসিডেন্ট রাতের বেলায় হয়ে থাকে। তাই রাত নিয়ে অনেক কৌতুহল ও আশঙ্কা রয়েছে। শুনেছি রমজান মাসে এসব প্যারানরমাল ঘটনা ঘটে না। সৃষ্টিকর্তা এই মাসে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকেন।
অধিকাংশ রাতেই আমি সেহরী পর্যন্ত জেগে কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকি বলে রাতের আবহ এবং শুনশান নিবিরতা আমি উপভোগ করি। মধ্যরাতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা খুব কম। মাঝে মাঝে হাটতে বের হলে মালবাহী ট্রাক বেশি চলতে দেখা যায়। রাস্তা-ঘাটে আর কিছু থাকুক না থাকুক দু’য়েকটা কুকুর থাকবে নিশ্চিত। একদিন হাটতে হাটতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রবেশ করলাম। হাটার জন্য খুব নিরাপদ জায়গা ক্যান্টনমেন্ট। ইদানিং রাতের বেলায় সেখানে প্রবেশ নিষেধ। আগে তেমনটা ছিলনা। অসম্ভব সুন্দর রাত্রি। আকাশে চাঁদ ও তারাদের খুনসুটি। ক্যান্টনমেন্ট এর কৃত্রিম সৌন্দর্য রাতের বেলায় যেন আরো বাহারি রূপে সেঝে থাকে। ঘন্টা দু’য়েক হাটাহাটির পর এক মিলিটারী পুলিশের সাথে সাক্ষাৎ হলো।
নিয়মানুযায়ী উনি আমায় প্রশ্ন করলেন, আপনার পরিচয়?
আমি উত্তর দিলাম, আমি স্টুডেন্ট।(মানি ব্যাগ থেকে কার্ড বের করে দেখালাম।) আশপাশেই থাকি। রাতের বেলায় হাটতে ভাল লাগে, তাই হাটাহাটি করছি।
ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে আপনার বাসা?
বললাম, না। বাহিরে।
হাটাহাটি করবেন তো এখানে কেন? আপনি জানেন না ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতরে রাতের বেলায় হাটাহাটি করা নিষেধ?
সামান্য হেসে উত্তর দিলাম, আসলে কোথাও এমন কোন কিছু দেখতে পাই নি। পেলে আসতাম না। প্রবেশের সময় খুব যত্ন করে চারদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম কোন সাইনবোর্ড এ রাতে প্রবেশ নিষেধ লেখা আছে কিনা। দেখতে না পেয়ে দ্বিধা না করে হাটতে শুরু করলাম।
ঠিক আছে, অনেক রাত হয়েছে। বাসায় চলে যান। আর এভাবে সেনানিবাসে প্রবেশ করবেন না।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
ফেরার পথে দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি দাড়িয়ে আছে। টহল দিচ্ছে। একটা দুইটা গাড়ি ও মটর সাইকেল ধরছে আর মামলা দিচ্ছে। মনে মনে সঙ্কিত হলাম। কি জানি আমাকে কোন প্রশ্ন করে কিনা? করলে করবে। আমার কাছে তো কার্ড আছে, দেখিয়ে দেবো। একজন পুলিশ চোখ খাড়া করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমিও উনার দিকে তাকিয়ে সামনে হাটতে শুরু করলাম। কোন প্রশ্ন করলো না। হয়তো পুরোপুরি সন্দেহ করে উঠতে পারেনি। পুলিশের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথম দায়িত্ব হলো কাউকে সন্দেহ করা। বাসার কাছে চলে এসেছি। নাইটগার্ড বাঁশি বাজাচ্ছে।তিন রাস্তার মোড়ে অনেকগুলো কুকুর মিটিং করতে বসেছে। নিশ্চয়ই ওদের মধ্যে কোন এক কুকুর অন্যায় করেছে। কুকুরদের আইন খুব শক্ত আইন, আইন ভঙ্গ করলেই শাস্তি। এলাকাভেদে একেকটা কুকুর নেতৃত্ব দিবে। অন্য কোন কুকুর সেখানে গিয়ে মাতবরী করতে পারবেনা। একটা কুকুর অন্যসব কুকুরের দিকে তাকিয়ে ঘ্যাও ঘ্যাও করছে। মনে হচ্ছে শাসাচ্ছে।

বাকিরা সবাই চুপচাপ। একটা কুকুর আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য ঘ্যাও করলো। মনে হচ্ছে সে, কুকুরদের সরদারের কাছে অনুমতি চাইছে আমাকে তাড়া করার। কুকুরের সরদার দুইবার ঘ্যাও ঘ্যাও করলো। মনে হলো, সে বলল- না দরকার নাই। প্রায়শই কুকুরদের এমন বিচার কার্যক্রম চলে। এমনও হতে পারে এরা ঢাকার বাড়ির মালিকদের নিয়ে সমালোচনা করে। অধিকাংশ বাড়ির মালিক গেইটে তালা দিয়ে রাখে সেখানে কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ। হয়তো তারা স্ট্রাইক করবে, এসব বাড়ির মালিকদের বিরোদ্ধে।
কয়েক বছর ধরেই রমজান মাসে সেহরীর সময়ে একজন ব্যক্তি গলা ফাটিয়ে বলে, রোজাদার ভাই ও বোনেরা ঘুম থেকে উঠুন। সেহরীর সময় হয়েছে। আর ঘুমাবেন না। উঠুন।
খুব দ্রুতপায়ে হাটতে থাকে আর এভাবে গলা ফাটিয়ে ডাকতে থাকে। ভদ্রলোকের কন্ঠটা অনেক সুন্দর। যেহেতু অধিকাংশ রাতেই আমি জেগে থাকি, তাই অন্যদের জেগে উঠার আগেই আমি উনাকে শুনতে পাই। আমার খুব কৌতুহল ছিল উনাকে দেখার। কিন্তু কখনোই সামনাসামনি দেখিনি। মনের ভিতর উনার সম্পর্কে একটা ধারণা ছিল যে, উনি হয়তো বয়স্ক হবেন। অর্থাৎ ষাট/সত্তর তো হবেনই। কিন্তু না।অফিস ছুটি থাকায় দুপুরে একটু ঘুমানোর সুযোগ হলো।

ঘুমটা চোখে লেগে আসতেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। এমন সময় বাসায় কেউ ফেরার কথা না। দরজা খুলে দেখলাম মধ্য বয়স্ক একভদ্রলোক। আমায় বলল, আমি প্রতিদিন শেহরীর সময় ডাকি। বিনিময়ে সবাই আমাকে কিছু সহযোগিতা করে। আপনি করতে পারেন। না করলেও সমস্যা নেই। আমি আগ্রহ নিয়েই উনাকে দশ টাকা সহযোগিতা করলাম। উনার দিকে খুব আগ্রহ নিয়ে তাকালাম কিছুক্ষণ।
কোন অদেখা মানবীকে দেখার অনেক আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এপ্রথম কোন এক সাধারণ মানুষকে দেখার আগ্রহ হলো আমার। তিন/চার দিন পরেই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবো। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলেই আমার কয়েকটা বন্ধুর সাথে ঘুরাফেরা করার ‍সুযোগ হয়। কিন্তু ওরা আমার মত কর্ম থেকে তেমন একটা ছুটি নিতে পারেনা। কারন ওরা নিজস্ব কর্মস্থলে কাজ করে আর আমি একটা অফিসে। প্রায় প্রতিবারই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করা হয়। এবার হয়তো তা হচ্ছে না। মনের অবস্থা খুব ভাল না। আর তা ছাড়া বন্ধুদের সাথে খানিকটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। আসলে বয়স বাড়লে যা হয়। শায়ানের সেই গানটা মনে পড়ে গেলো, ‘কেনো বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়?’

আমি যতটা ভবঘুরে স্বভাবের ওরা ততটা নয়। তাই অনেক সময় আমি ওদের ইনসিস্ট করি ঘুরতে যেতে। তেমনটিই ঘটে ছিল গত বছর ঈদের ছুটিতে।আমার বন্ধু রুমেন।
আমার প্রতি ওর অনকে অভযিোগরে একটি হলো- সত্যি বলছি তোর এসব ছন্নছাড়া ভাবসাব আমার মোটেও ভাল লাগেনা। যত বারই ছুটিতে বাড়িতে আসিস তোর একটা না একটা বায়না থাকে। তাও আবার অজানায় হারিয়ে যাওয়ার বায়না। দেখ তুই পড়াশোনা করিস তাই তোকে বাউন্ডুলেপণা মানায়, আমি ছোট একটা ব্যবসা করে আমার সংসার চালাতে হয়।
আমি তখন তাকে বললাম, সালা তুই একটা স্বার্থপর। বছরে দু’একবার বাড়িতে আসি আর এসেই তো আগে তোর সাথে দেখা করি। তুই ছাড়া আমার আর কে এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে বলতে পারিস? আর তুই আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছিস? ওকে ফাইন আমি ছেড়ে দিলাম বন্ধুত্বের কথা, একজন মানুষের রিফ্রেশমেন্টের জন্যও তো কিছু সময় নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসা দরকার তাই না? আর বাংলাদেশের মতো এতো সুন্দর একটা দেশে জন্মগ্রহণ করেও যদি এদেশের সৌন্দর্য না দেখে মরে যাস, আমার তো মনে হয় তোর জীবনটাই বৃথা। আচ্ছা আমায় বলতো, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে নিজে জড়িয়ে রাখা আর প্রতি রাতে এসে ঘুমানোর নামই কি জীবন?
শোন তোর এসব শক্ত ব্যাকরণের কথা আমি বুঝি না। আমি বুঝি আমার জীবন চালাতে হলে আর পরিবারকে দেখতে হলে এই নিয়মমাফিক কর্মতালিকা সম্পাদন না করে উপায় নেই।
কিন্তু তোর কি জীবনে আর কোন শখ নেই । শুধু কাজ আর কাজ? আমরা কাল ঘুরতে যাচ্ছি, এন্ড ইটস্ ফাইনাল।
জানি তোকে বুঝিয়ে কাজ হবে না। আর কে কে যাবে?
শুভ আর রুমেল। সকালে চলে আছিস।
ঠিক আছে যাবো কিন্তু একটা শর্ত আছে। যে কোন সুন্দরি মেয়ে দেখলেই তুই তার জন্য পাগল হতে পারবিনা আর তার সাথে কোন রকম ভাব জমাতে পারবিনা। রাজি থাকলে বল।
হ্যা একদম রাজি। শুধু  ওই মেয়েটার দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে তো পারবো?
হুম তা পারবি।
কিরে  শুভ রুমেল কোথায়? সকাল হয়ে এলো ওরা তো কেউ এলোনা।
আরে ভাবিস না চলে আসবে। এই তো চলে আসছে। কি নিরব  ভাই চিন্তায় পরে গেছ, ভাবছ আমি যাবো না?
আমি জানতাম তোরা সবাই যাবি। তবে দেড়ি করতে ভাল লাগেনা। চল চল গাড়ি ছেড়ে দিবে।
কিন্তু আমরা যাবো কোথায় ভাই?
যাবো ফেনী জেলায়,খুব সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে ওখানে। প্রথমেই যাবো বিলোনিয়া স্থলবন্দর, তারপর রাঝাজির দিঘী আর সবশেষে মুহুরি সেচ প্রকল্প।
রুমেল- শুভ তুই জানালার পাশে বসবিনা,আমি ওই পাশে বসব। একী নিরব, এটা কিন্তু ঠিক না আমি ওকে ওঠতে বললাম আর তুই বসে গেলি?
আরে এটা কোন ব্যাপার না। তুই বস। একী সমগ্র বাংলাদেশের প্রকৃতি এই লোকালবাসের সীটে আসলো কী করে?
রুমেন- তোর মাথাটা আবার গেছে তাই না? আজ যদি কোন মেয়েকে দেখে ইবটিজিং করিস আমি কিন্তু ইবটিজার বলে চিৎকার করে তোকে পাবলিকের মার খাওয়াবো।
তোকে কে বলেছে আমি মেয়ের দিকে তাকিয়েছি? আমি তো দেখছি পৃথিবীর বিকল্প সৌন্দর্যকে।
রুমেন- ওহ তুইতো প্রকৃতি দেখছিস, তো চোখে চশমা কেন? প্রকৃতিকে খালি চোখে দেখতে হয়। তানাহলে প্রকৃতির অসম্মান হয়।
না না, বিষয়টা তা না। আমিতো ফ্রিকুয়েন্সির জন্য চশমা পড়েছি।
রুমেন- মানে?
হায়রে মাথামোটা। এটা বুঝলি না,আমি যে চশমার ভিতর থেকে প্রকৃতিকে দেখবো সেটা তো সে বুঝতে পারবেনা। সে ভাববে আমি তোর দিকে তাকিয়ে আছি।
ওহ তাই না?
এই দ্যাখ দ্যাখ প্রকৃতির চুলগুলো এমনভাবে ছেড়ে রেখেছে যেনো পাহাড় থেকে ঘরিয়ে পড়া ঝর্ণা।
রুমেন- সালা লম্পট। আজ পর্যন্ত একশো দশজনের সাথে তোর প্রেম হয়েছে। আরে একটা মানুষের বড়জোর সেঞ্চুরি করার মানসিকতা থাকতে পারে। কিন্তু তোর তো দেখি হাজারের কোঠা শেষ হলেও চরিত্র পাল্টাবেনা।
তা কি করে হয় বল? মানুষের কী সৌন্দর্যকে অস্বীকার করার দুঃসাহস আছে। ফাহিয়েন, ভাস্কো দাগামা, কলম্বাস এমনসব ব্যক্তিরা পৃথিবীকে আবিষ্কারের জন্য এবং এর সৌন্দর্যকে অবলোকন করার জন্য দেশের পর দেশ ঘুরেছে। আর আমি তো মাত্র বাংলাদেশে থাকা প্রকৃতিগুলোকে দেখি। আসলে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভালোত, তাই যা কিছুই দেখি সুন্দর দেখায়।
দেড় ঘন্টা পর। গাড়ি থামলো চট্টগ্রামের মিরেরসরাই। রুমেন বলল, কীরে এটা কোথায় আসলাম?
আগে তো আমরা কখনো  এখানে আসিনি। চল কাউকে জিজ্ঞাসা করি। আচ্ছা ভাই এখান থেকে ফেনী বিলোনিয়া স্থলবন্দর কতদূর?
কি বলছেন? এটা চট্টগ্রাম। বহুদূর এখান থেকে বিলোনিয়া। তিন-চার ঘন্টা লেগে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং আপনি এখানে মহামায়া ইকোপার্ক আছে, ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে অনেক সুন্দর ঝর্ণাও আছে।
শুভ- আগেই বলেছিলাম ফালতু একটা জার্নি হবে। তাই হলো ত?
আচ্ছা দেখি না। কি দেখতে পাই। শুধু শুধু মন খারাপ করার কি আছে? ওই যে বোট, চল বোট ভাড়া করে নেই।
রুমেন- বোট কত ভাই?
মাঝি- আটশ টাকা। মোট আটজন ওঠতে পারবেন।
না না আমরা এই ক’জনই  যাবো।
রুমেন শোন ওই যে মেয়েগুলো না ওরা মনে হয় যাবে, আমাদের সাথে।
দেখ নিরব, এমনিতেই কিন্তু মনমেজাজ খারাপ আছে। একজায়গায় যেতে গিয়ে অন্য জায়গায় চলে আসছি। সুতরাং নো হাংকি পাংকি।
আমি বললাম, আরে হাংকি পাংকি না। ওর নাম পিংকি। দেখ ওর বুকের উপর স্কুল ড্রেস এর নেম প্লেট এ নাম লেখা।
নিরব, মেয়েদের বুকের দিকে তাকাতে হয় না। চরিত্রটা একটু ভালো কর।
আরে নাহ। আমি তো ওর নাম দেখছিলাম। কিন্তু ঈদের ছুটিতে কি কোন স্কুল/কলেজ খোলা থাকে? নিশ্চিত এই মেয়ে তার সহজ-সরল বাবা-মা কে গুল খাইয়ে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে আসছে।
রুমেন- তোর মাথায় এসব ছাড়া আর কিছু আসে না, তাই না?
আমি হাসলাম। কিছু বললাম না। বোটে ওঠলাম। আমার কথা মতো মেয়েটাকে আমাদের বোটে নিয়ে নিল। মেয়েটা আসলে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে আসেনি, ছোট বোনকে নিয়ে ঘুরতে আসছে। রুমেন বারবার আমার দিকে তাকিয়ে আমায় ইশারা করে বলছে, দুস্ত এটলিস্ট এই মেয়েটাকে ছেড়ে দে। অনেক করেছিস জীবনে। আমার সম্পর্কে ওর ভিতরে শুধুই নেগেটিভ ধারণা। ও ভাবছে,মেয়েটাকে আমি পটাবো আর প্রপোজ করবো।

আসলে মেয়েটা দেখতে বিষন সুন্দরী। ওর ঠোটগুলো ভেজা ভেজা, যেনো বৃষ্টির জলে ভেজা রক্ত জবা। চোখের দিকে তো তাকাতেই পারিনি। মনে হচ্ছিল শতবর্ষ ধরে আলোকরশ্মি তার চোখের সাথে পাঞ্জা ধরছে। চোখের পাতা কলাপাতার বাতাসে উড়ার মতো নড়াচড়া করছে। আমি একমুহুর্তে তার চোখের মায়ায় পড়ে গেলাম। এ যেন এক মহামায়া।
রুমেন আমায় বলল, কিরে কি দেখছিস?  ঋর্ণা তো এই দিকে।
আমি বললাম, কোথায় ঋর্ণা ? ঋর্ণা তো শুকিয়ে গেছে। ও কাঁদলে ওর চোখে ঋর্ণাধারা বয়ে যাবে। কিন্তু আমি চাই না ও কান্না করুক। আমি চাই ও সারাজীবন এভাবে হাসুক।
রুমেন- বুঝছি, এই পাগল পাগলাগারদেও নিরাপদ না।
ওরা নৌকা থেকে নেমে ঋর্ণার কাছে গেলো। মেয়েটি নৌকা থেকে নামছে। পায়ে নুপুর পড়ে আছে। খুব যত্ন করে যখন সেলোয়ার উপরের দিকে তুলছিল, আমি ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এত সুন্দর একটা মানুষের পা! মেয়েটি মিষ্টি গলায় বললো, আপনি নামবেন না?
আমি বললাম, তুমি আমায় নামাবে? আমি তো তোমাতেই নামতে চাই।
মেয়েটি বলল, সরি আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছিনা।
আমি বললাম, মেয়েরা আসলে কখনো বুঝে না আমায়। সে মুচকি হাসলো। বুঝলাম আমার কথা তার ভাল লেগেছে। নিশ্চয়ই এত সুন্দর করে তার সাথে আগে কেউ কথা বলে নি।
সে বলল, আপনি মেয়েদের পটাতে পাড়েন তাই না?
আমি বললাম, পারি না। তবে তুমি চাইলে সারা জীবন ধরে তোমায় পটাতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
সে আবার হাসলো। বলল- আমি চাই না। আসুন ঋর্ণার কাছে যাই।
আমি বললাম, ঋর্ণা কি তোমার থেকে বেশী সুন্দর? এই মহামায়া ইকো পার্ক  হয়তো যুগযুগ ধরে তোমার অপেক্ষায় ছিল। তুমি তোমার পা মারিয়েছো বলে এ পার্কের নামকরণ সার্থক হলো।
মেয়েটি ভিরভির করে কী যেন বললো। নিশ্চয়ই আমাকে পাগল ভাবছে। কি জানি লম্পট ও ভাবতে পারে। মেয়ে মানুষের মন, ভাবনাগুলো কখনো শিকলে বাধা থাকার কথা না। আমি পিছন পিছন গেলাম, ঋর্ণা দেখতে নয়। পিংকিকে দেখতে। ওর নামটা আমার খুব ভাল লাগেনি। এত সুন্দর একটা মেয়ের নাম পিংকি হবে কেন? ওর বাবা-মা নাম রাখার ক্ষেত্রে যতœবান হতে পারেন নি। ওর নাম হতে পারতো জগৎ বিখ্যাত। মোনালিসাও হতে পারতো। লিওনার্দো বেচেঁ থাকলে ওর একটা পর্ট্রইেট করতো। পেইন্টের নাম দিতো মোনালিসা দি গ্রেট অথবা মর্ডাণ মোনালিসা। দুইটাই হতে পারতো। মেয়েটার হাটার ধরন আরো ভালো লাগে।  শুনেছি কোন মেয়ের মায়ায় পড়লে তার সবই ভাল লাগে। আমারো হয়তো সে অবস্থাই হয়েছে।
পাহাড়ের কিনারা বেয়ে সে খানিকটা উপরে উঠেছে ঠিকই এখন নামতে ভয় পাচ্ছে। ও হয়তো ভাবছে এখান থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙ্গে গেলে আমি আর ওকে পছন্দ করবোনা। কিন্তু তা নয়, ওর একটা হাত কিংবা পা ভেঙ্গে গেলে ওকে পাওয়া আমার জন্য সহজ হতো। আমার সঙ্গে কোন প্রতিযোগী থাকতো না। কিন্তু তা আমি চাই না। আমি সামনে এগিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, আমার হাতটা ধরো।

ও কোন সংকোচ করলো না। দিব্বি হাত ধরে নেমে এলো। আমি বললাম, কোন পুরুষ মানুষের হাত বুঝি এই প্রথম ধরলে?
সে উত্তর দিলো না, আমার বাবার হাত আমি বহুবার ধরেছি।
আমি বললাম, তাহলে কারেক্ট আছে। বাবার হাত ধরেই তো বরের হাত ধরতে হয়।
সে ভ্রু-কুচকে বলল, জ্বি কিছু বলছেন?
না, মানে বাবার হাত ধরা খুব আনন্দের একটা ব্যাপার।
ও না বোঝার ভান করে বলল, জ্বি।
সন্ধ্যা হয়ে এলো। চলুন নৌকায় ফিরে যাই।
আমি বললাম, নৌকায় ফিরে যেতে আপত্তি নেই আমার। কিন্তু এমন যদি হতো এই নৌকায় সারাজীবন তোমাকে নিয়ে থেকে যেতে পারতাম! নদীতে নদীতে তোমায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাটিয়ে দিতে পারতাম!
ও তখন বলল- জ্বি না মিস্টার, আপনার সে আশা পূরণ হবার নয়। কারণ আমার বেদেনি হবার কোন ইচ্ছা নেই। আপনি বরং কোন এক বেদের মেয়ে জোসনাকে খোঁজে নিতে পারেন।
আমি তখন বললাম, তোমার কথায় আমার সামান্য আপত্তি আছে। বেদের মেয়ে জোসনা না হয়ে মোনালিসা ও তো হতে পারতো। অবশ্য বেদের মেয়ে মোনালিসার ছবি লিওনার্দো সাহেব আঁকতো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আপাতত বেদের মেয়ে পিংকি হলেও আমার কোন আপত্তি নেই।
পিংকি একটু রাগের ভান করে বলল, আপনার আপত্তির কাঁথা-বালিশ। চলেন যাই।
বললাম, যেতেই হবে? না গেলে হয় না?
পিংকি বলল- ওমা তো যাবো না?
আমি বললাম, হ্যা তোমাকে তো যেতে হবে। আচ্ছা, চলো না পালিয়ে যাই।
পিংকি বলল, মিস্টার রোমান্টিক বয় এসব রোমাঞ্চকর কথা কথা বলে কোন লাভ নেই। রাস্তা মাপেন। আমার পালিয়ে যাবার কোন শখ নেই।
এ বলে পিংকি নৌকায় ওঠলো, আমিও ওঠলাম। বাকিরা সবাই ফিরে এসেছে। মাঝি নৌকা ভাসিয়ে দিলো। পানির ঢেউয়ের মতো আমার মনে পিংকির চেহেরা, তার চাহনি, তার কথা বলা, হাসি আর উড়ন্ত চুল ঢেউ খেতে থাকলো।
নৌকা পাড়ে ভিরলো। পিংকি নেমে গেলো। কিছুদূর গিয়ে একবার পিছন ফিরে তাকালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মায়াচ্ছলে একবার হাসলাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে না হেসে পারলোনা। খুব জোর করে ঘাড় ফিরিয়ে সামনে হাটতে শুরু করলো। সে হয়তো ভাবছে, আচ্ছা পাগল একটা! তার কথা আমার এখনো মনে আছে। সে হয়তো আমাকে ভুলে গেছে, দু’য়েকদিন পরেই। শুনেছি পৃথিবী গোলাকার বলে, একজন মানুষের সাথে ঘুরে ফিরে আবার দেখা হওয়ার চান্স থাকে। আবার যদি পিংকির সাথে দেখা হয়, আমি ওকে হাটু ঘেরে বসে প্রপোজ করবো। সেদিন ভুলে গিয়েছিলাম। সেদিন যদি এভাবে প্রপোজ করতাম, পিংকি হয়তো আমায় ভাল না বেসে পারতো না। মিস ইউ পিংকি।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment