Showing posts with label প্রবন্ধ. Show all posts
Showing posts with label প্রবন্ধ. Show all posts

Sunday, May 18, 2025

যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

 যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

                                                                                   মোঃ অলিউল্লাহ

সমস্ত পৃথিবীর মানুষের ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রে অবস্থান যে বিষয়টির, তা হলো টাকা ও সম্পদ। শৈশব ও কৈশোর পেরোলেই যেন প্রতিটা মানুষের জীবনে তৈরি হয় স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্খা। আর জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে গেলে অর্থ বা সম্পদের বিকল্প নেই। মানব জাতি ছাড়াও পৃথিবীর সকল প্রাণীরই বেঁচে থাকতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটা প্রাণীর জন্যই রিযিকের ফায়সালা করে রেখেছেন। সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক যে উপাদনা গুলো তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য, বাসস্থান ও জৈবিক চাহিদা। 

যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানব জাতি, তাই মানুষের জন্য রয়েছে কিছু বাড়তি উপাদান। যেমন:- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন। তবে প্রকৃতির সকল প্রাণীর সাথে মানুষের জীবনের সামঞ্জস্যতার বিবেচনায়, একটি মানুষের জীবনে যে আহা মরি কোন পার্থক্য নেই তা উপলোব্ধির সময় ও সুযোগ মানুষের হয় না। যদি কোন মানুষ চিন্তা করে একটি পাখিকে নিয়ে, পাখিটির বাঁচার জন্য দরকার খাবার, আর সেই খাবারের আহরণ করে ও সামান্য পরিশ্রম করে পাখি তার খাবার জোগায়। দয়াময় আল্লাহ তার  পাখির সেই সামান্য চেষ্টা ও শ্রমের উসিলায় তাকে রিযিক দান করেন। তেমনি পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা করেন মহান রাব্বুল আলামিন।

 

 মানুষের জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য কি, তা বোধগম্য হয়ে ওঠে না মরার আগ পর্যন্ত বহু মানুষের। কেউ কেউ জীবনকে অনুসন্ধান করেন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছু মানুষকে সঠিক পথে হয়তো নিয়ে যায়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষকে নিয়ে যায় ভ্রান্তির পথে, গোমরাহির পথে।


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, June 12, 2022

সব মানুষই পাগল

 সব মানুষই পাগল

মোঃ অলিউল্লাহ্


প্রকৃতির প্রতিটা উপাদানেরই নির্দিষ্ট সীমারেখা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর প্রকৃতির  এই নির্দিষ্ট সীমা যখন অতিক্রম করা হয়, তখনই ঘটে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। কৃত্রিমতা বা আর্টিফিশিয়ালিটি সব সময়ই প্রাকৃতিক উপাদানের উপর একটা অতিরিক্ত প্রলেপন। যেমন- মহান আল্লাহ কোন মানুষকে নির্দিষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, অথচ একজনের মনে হলো আমার চেহেরায় মেকআপ করলে আমাকে আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। আর তাই সে নিজেকে সব সময়ই কৃত্রিম সাজসজ্জার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে রাখতে চায়, কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়সে কিন্তু ঠিকই তার এই আর্টিফিশিয়ালিটি আর কাজে আসেনা, তার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে; এমনকি কখনো কখনো সেই কৃত্রিমতার জন্য তার স্বাস্থ্যহানি বা ক্ষতিও হয়ে থাকে। 


প্রকৃতি সর্বদাই নির্দিষ্ট রূপে ভারসাম্য বজায় থাকে, কিন্তু যখনই প্রকৃতিতে জোর করে কৃত্রিমতাকে চাপানোর চেষ্টা করা হয় তখন প্রকৃতি তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সেটা কিছু আগে অথবা পরে। 


পৃথিবীতে মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার যে বিধান রয়েছে, সেই আইন বা বিধান মেনে চললে কোন মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেনা। কোন জীবন ব্যবস্থায় যতক্ষণ সুশৃঙ্খল ও আইন মানার প্রবণতা থাকে, সে জীবন ব্যবস্থা সবদিক থেকে ভারসাম্য বজায় থাকে।


এবার আসি আসল কথায়, আসলে আমার এই ভাবনা অনেকের কাছে অতি তুচ্ছ মনে হতে পারে। অনেকে ভাবতে পারেন এসব পাগলের প্রলাপ, অথচ আমি সেসব মানুষের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা পাগলামি নিয়েই কথা বলছি।


দেখুন, একজন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে যতক্ষণ সে তার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণে ঠিক যতটা তার দরকার ততটাই সে পায়।  অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে কোন মানুষের যতটুকু যা প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই তার যথেষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যখন এর কম অথবা বেশি হয় তখনই বিপর্যয় ঘটে। ধরা যাক, একজনের পেটে ক্ষুধা লেগেছে, তার পেট ভরার জন্য যতটুকু খাবার দরকার ঠিক ততটাই তার জন্য যথেষ্ট। এর কম হলে পেট ভরবেনা অস্বস্তি লাগবে, আবার যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খায় তখন বদহজম হবে, আর তাতেও তার অস্বস্তি লাগবে। ঠিক তেমনি জীবন ধারনের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন, ঠিক তা থাকলেই সুন্দরভাবে জীবন কেটে যাবে। এর কম-বেশি হলেই জীবনে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। 


মানুষের মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে আবশ্যিক বিষয়গুলোর বাইরে যা আছে তা-ই কৃত্রিমতা। অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এইসব চাহিদা একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন। আরোও স্পষ্ট করে যদি মৌলিক চাহিদার কথা বলি তাহলো ক্ষুধা, নিদ্রা, মৈথুন। এগুলোর মধ্যে কোনটির অভাব হলেই জীবনযাপনে বাধাগ্রস্থ হবে। আবার এসব চাহিদার পরেও যাদের আরো অনেক চাহিদা তৈরি হয় তা নেহাত বিলাসিতার শামিল। এর মানে হলো এই যে, কেউ খাবার খেতে বসল, আর তার সামনে বিশ-ত্রিশটি আইটেমের খাবার পরিবেশন করা হলো। হয় সে সবগুলো থেকে একটু একটু করে টেস্ট করবে, না হয় দু'য়েকটা আইটেম দিয়েই খেয়ে উঠবে। এখানে মুদ্দা কথা হলো একজন ব্যক্তির খাবারের জন্য ঠিক যতটুকু খাবার দরকার ততটুকুই পরিবেশন করাটা স্বাভাবিক, এর বেশি করাটা অস্বাভাবিক বা বিলাসিতা। আর একটা সহজ ব্যাপার হলো অপচয়ের পরিণতি অভাব। এই কথার অর্থ হলো যদি একজনের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হয়, তাহলে অচিরেই সে অভাবগ্রস্থ হবে। যা কিনা তার জীবন যাপনের জন্য একটি বিপর্যয় বা প্রতিবন্ধকতা। 


প্রাকৃতিকভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার, তার বাইরে যে সকল বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে তা হলো, চিত্তবিনোদন, সামাজিক পদমর্যাদা, ব্যক্তিত্ববোধ ও নিজেকে মানুষের চোখে শ্রেষ্ঠ করে তোলার একটা আপ্রাণ চেষ্টা। সেটা হতে পারে ক্ষমতার মাধ্যমে বা নিজের অবস্থান দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করে লোকের চোখে নিজেকে জনপ্রিয় ভাবার মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি। এই যে একধরনের চাহিদা, এটা খুবই মনস্তাত্ত্বিক ও মানুষের এক ধরনের ইলিউশান বা মোহ। আর এই মোহের কারনে মানুষ যারপরনাই ভূমিকা পালন করতে পারে। এক কথায়, এটা মানুষের একধরনের পাগলামি। ঠিক এই জায়গাটায় এসে সব মানুষই পাগল।


দেখেন, আপনার একান্ত মৌলিক চাহিদাগুলো যখন মিটে যায়, তখন আপনি স্বস্তিতে থাকেন। আর কথায় তো আছেই, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। যখন আপনার গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা মিটানোর পর স্বস্তিতে আছেন, তখন আপনার বিলাসী মন আরোও স্বস্তি বা ভালো থাকতে চাইবে। অর্থাৎ আরও কিভাবে ভালো থাকা যায় সেই চিন্তা আপনাকে অনবরত পোক করতে থাকবে। আর আপনি তখন আরও একটু বেশি ভালো থাকার কথা চিন্তা করে হয়তো অনেক পরিকল্পনা করবেন। এই যেমন- লোকের চোখে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কোন নেতা হলেন বা নিজের প্রতিভা দেখিয়ে হিরো কিংবা মডেল হলেন; যা আপনাকে একটা বাড়তি আত্মতৃপ্তি দেবে। তখন আপনি আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলতেই পারেন, আরেহবাহ আমি তো বিশাল কাজ করে ফেলেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা একধরনের মোহ বা মায়া। মৌলিক চাহিদার বাইরে যে চাহিদাই আসে তা আপনার মধ্যে মোহ তৈরি করে। 


এই দুনিয়ায় একেকজন মানুষ একেকটা জিনিসের প্রতি পাগল। কেউ পাগল ক্ষমতার, কেউ ধনসম্পদ বা টাকার পাগল, কেউ কারো প্রেমে পাগল, কেউবা জনপ্রিয় হবার পাগল, কেউ আবার ভাবের পাগল। যাইহোক, আমার এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এই পাগলামি বা এইসব চাহিদা কেবল মানুষকে বস্তবাদী ও দুনিয়ামুখী করে তুলে। দুনিয়াতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কিংবা নিজের অস্তিত্বকে স্থায়ী রূপ দিতে আমরা কত কিছুই না করতে চাই। দুনিয়াকে পর্যাপ্তভাবে ভোগ করার মানসিকতার কারনে আমরা আমাদের আসল পরিচয় ভুলে যাই। মহান সৃষ্টিকর্তা কোন উদ্দেশ্যে আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার কথা ভুলে যাই। 


আমাদের এই ভোগবাদী মনোভাবের কারনে আমরা যারপরনাই খারাপ কাজে লিপ্ত হই। এই দুনিয়ায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ঘোষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, হত্যা, নির্যাতন, জুলুম ও অত্যাচার সবই সংগঠিত হয় এই ভোগবাদকে কেন্দ্র করে। যা প্রকৃতির প্রতিকূলে গিয়ে সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। অথচ একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খুব বেশী কিছু দরকার পড়েনা। যদি কেউ ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলে, তাহলে সে নিশ্চিত ভাবে সেই স্বাভাবিক জীবন ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। একজন মুসলিম হিসাবে আমি ইসলাম ধর্মকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করি। আর আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। 


যেখানে ভোগবাদ মানুষের মধ্যে মোহ তৈরি করে তাকে দুনিয়া মুখী করে তুলে, সেখানে ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ একজন মানুষকে সর্বোচ্চ  নৈতিক হতে সাহায্য করে। তার ভিতর কেবল দুনিয়ার প্রতি লোভ লালসা নয়, যেখানে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল থাকতে হবে সেই ভাবনা তার মধ্যে কাজ করে। সে মৃত্যুকে ভয় করে, মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে ভয় করে, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে দুনিয়ায় ভাল কাজ করে। 


যার ভিতর দ্বীনের প্রতি গভীর বিশ্বাস আছে, সে ভোগবাদী না হয়ে বরং দুনিয়াতে কোনভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাববে। আর তাই এই বস্তুবাদ মানুষের ক্ষণিকের মোহ বা ইলিউশান ছাড়া কিছুই না। কারন প্রতিটা প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর একজন মানুষ যখন মরে যায়, তখন দুনিয়ায় তার কোন অস্তিত্বই থাকেনা। যদিও বস্তবাদীরা কিছু মৃত মানুষের ইহলৌকিক কৃতকর্মের জন্য তাদের স্মরণীয় বা অমর বলে দাবী করে। আর এটাও তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কিংবা মোহ মায়ার প্রতিফলন ছাড়া কিছুই না। 


কেনো একজন মানুষ মরে গেলে তার কোন অস্তিত্ব থাকেনা? 

কারন ব্যক্তি নিজেই নিজের উপস্থিতি দেখছেনা। যেখানে আমি নেই, সেখানে আমার অস্তিত্ব কি করে থাকতে পারে। যে পৃথিবীতে ভাল থাকার জন্য এতো কিছু করছি, কতদিন আমি এখানে থাকতে পারবো? প্রতিটা মানুষের একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা বা ভ্যালিডিটি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, এই ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে গেলেই চলে যেতে হবে দুনিয়া ছেড়ে। কোথায় যাবো আমরা মৃত্যুর পর? কী হবে আমাদের সাথে? আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা এতো সুন্দর চিন্তা শক্তি ও বিবেক দেওয়া সত্ত্বেও যখন মানুষ ভ্রান্ত পথে চলতে চলতে পথভোলা হয়ে যায়, তারা পাগল ছাড়া আর কি?  তাদের ভোগবাদ বা বস্তুবাদী মানসিকতা তাদের মধ্যে যে মোহ বা পাগলামির জন্ম দিয়েছে, সেই মোহে তারা অন্ধ। তারা তাদের জ্ঞানের সীমাকে সংকোচিত করে রেখেছে। আর সেজন্যই তাদের এই দুনিয়াপনা বা ভোগবাদ তাদেরকে পাগল হিসাবে সাব্যস্ত করেছে।


শেষ কথা হলো আমার এই লেখার প্রসঙ্গটিকে অনেকে ভুল ব্যাখা করতে পারেন। তারা হয়তো বলতে পারেন, শুধু যদি মৌলমানবিক চাহিদা পূরণ করেই মানুষ খান্ত হয়ে যায়, তাহলে তো মানুষের সৃজনশীলতার প্রকাশ পাবেনা। মানুষ একটা গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষ যদি কেবল আখিরাত নিয়ে ভাবে তাহলে দুনিয়ায় তো অচলাবস্থা তৈরি হয়ে যাবে। দেখুন, আমি আমার কথাগুলো দ্বারা শুধুমাত্র বুঝাতে চেয়েছি, কেউ যেনো ভোগবাদে এতটাই আসক্ত না হয়, যাতে করে সে আখেরাত বিমুখী হয়ে যায়। দুনিয়ায় সর্বোচ্চ নৈতিকতা ও ভাল কাজের মাধ্যমেই যেনো তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে। কেউ যেনো দুনিয়ার মোহে পড়ে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুমের মতো অনৈতিক না হয়। পৃথিবীতে কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেনো বিনা দ্বিধায় কেউ পাপ না করে ফেলে এটাই বুঝাবার চেষ্টা করেছি।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Saturday, June 11, 2022

শিক্ষা বনাম সফলতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৫ম পর্ব)

শিক্ষা বনাম সফলতা 

মোঃ অলিউল্লাহ্

জাগতিক পৃথিবীতে যেসমস্ত সার্বজনীন বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা হয় তাই শিক্ষা। শিক্ষার মূল কাজ হলো সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করা। যেখানে শিক্ষার মানেই হলো সমস্যা চিহ্নিত করে সুষ্ঠু সমাধান করা, সেখানে সফলতা নামক একটা আপেক্ষিক ব্যাপারকে তার প্রতিবন্ধকরূপে দেখাতে চান কিছু ভ্রান্ত ধারণার বাহক। শিক্ষার মৌলিক ধারণা হলো উপায়।  তেমনি সফলতা তখনই আসে যখন সফলতা পাওয়ার জন্য উপায় বের হয়। আর যেকোন প্রকার সফলতা শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষা ছাড়া সফলতাকে ভাবা অসম্ভব। 

অন্যদিকে সফলতা বিষয়টা কেবল একধরনের মানসিক প্রশান্তি। সফল হতে সবাই চায়; এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে জীবনে ব্যর্থ হতে চায়। আর তাই সফলতাকে মনিষীরা বলেছেন আপেক্ষিক। যার অর্থ হলো, এটি যেকোন উপায়েই হতে পারে। কথার কথা, একজন ব্যক্তি খুবই সাধারণ ; তার কোন বিত্ত বৈভব নেই, সে লোকের চোখে এতটা সমাদৃত না। সে খুব ধনী ও না, আবার সে জনপ্রিয়ও না। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপনে সে খুব বেশী সমস্যাগ্রস্থ, যেকোনভাবে তার জীবন কেটে যাচ্ছে। আর এই সাধারণ জীবনে তার অতৃপ্তি নেই, সে মনে করে আমার খুব বেশী কিছু না থাকলেও আমি অসুখী নই, আমার যা আছে তাই নিয়ে আমি ভাল আছি। এই যে তার জীবনে সে অতি অল্পতেই সন্তুষ্ট এটাই তার কাছে সফলতা। 

আবার অনেকে দাবী করে জীবনে অগাধ সম্পদ ও অর্থের মালিক হওয়াই সফলতা। কিন্তু ভালভাবে খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে তার এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সে পুরোপুরি সুখি না।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জনের অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৪র্থ পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

৬. শিক্ষার মূল্যবোধ কমে যাওয়া ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের মূল্যায়নের অভাবঃ বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার বেশ কিছু সিস্টেমেটিক সমস্যা রয়েছে। যেমন- গতানুগতিক ধারায় সাধারণ শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়ন করা। বিশেষ করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকিং সেক্টর বাদে প্রায় সকল শাখাতেই শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও ভালো কোন পেশায় নিযুক্ত হতে পারেনা। যেহেতু আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে, তাই শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ও কারীগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে শিক্ষাজীবন শেষে ভালো কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হতে পারতো। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার পরও পেশাজীবনে সফলতা পায়না, অথবা নিম্নমুখী জীবনযাপন করে। অন্যদিকে লেখাপড়া না করেও অনেক মানুষ ব্যবসায় বা টেকনিক্যাল কাজে দক্ষতার দ্বারা অধিক উপার্জন করতে সক্ষম হয়। আর তাই  আমাদের সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রতি মূল্যবোধ কমে গেছে এবং তাদের গুরুত্বও কমে গেছে। যেহেতু টাকাই মানুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু সেখানে অল্প আয় করা শিক্ষিত ব্যক্তিদের সম্মান নাই বললেই চলে। এছাড়া এদেশে হাজার হাজার শিক্ষিত ব্যক্তি বছরের পর বছর বেকার হিসেবে জীবন কাটায়, তাই শিক্ষার ব্যাপারে অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের  উদ্বিগ্নতা ও অনিশ্চয়তার কোন অবকাশ নেই। যেকারণে শিক্ষার প্রতি তাদের অনাগ্রহ ও আপত্তি তৈরি হয়।

৭. সুদক্ষ শিক্ষকের অভাবঃ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন সাধিত হয়। আর সেই পরিবর্তনের সাথে যখন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা খাপখাইয়ে নিতে না পারে তখন তার প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর বর্তায়। যেমন- আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সারা পৃথিবী নিজের যেভাবে পরিবর্তন করছে, সেই ধারায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আর সেজন্য কর্মমুখী বা জীবনমুখী শিক্ষার প্রবণতা কম। সুদক্ষ শিক্ষক গড়ে না ওঠার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।

৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জামের অভাবঃ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষা সামগ্রীর অপর্যাপ্ততার  কারনে উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে প্রায়োগিক ও বাস্তবিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হচ্ছে না। আর তাই কর্মক্ষেত্রে এদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু পড়াশোনা করার পর সকল শিক্ষার্থীই ভালো কর্মক্ষেত্রে যেতে চায়, কিন্তু সঠিক প্রেকট্রিক্যাল নলেজের অভাবে তারা সেই কাজের জন্য নির্বাচিত হয় না। ফলে বেকারত্ব তৈরি হয়।

৯. শিক্ষা কারিকুলামে হালনাগাত ও গবেষণার অভাবঃ এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো সেই মান্দাতার আমলের সিলেবাস পরিলক্ষিত হয়। গধবাদা বা গতানুগতি শিক্ষা পদ্ধতির কারনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান কর্মক্ষেত্র ও চাহিদামতো শিক্ষাব্যবস্থায় হালনাগাতের অভাবে পুরানো বস্তাপঁচা শিক্ষা প্রদান এখনো শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমের উপর গবেষণার অভাব রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যতকে পিছিয়ে দেয়।

১০. শিক্ষকদের প্রাইভেট বা কোচিং শিক্ষা পদ্ধতিঃ খুবই দুঃখজনক ও হতাশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার পরও তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক নিযুক্ত করে কিংবা কোচিং এ গিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়। এটা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ, অন্যদিকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই তাদের সন্তানকে সেই পড়াশোনার খরচের যোগান দিতে পারেন। যাদের টাকা আছে তারা পড়াশোনায় এগিয়ে যায়, আর যার টাকার অভাব সে পড়াশোনা থেকে ছিটকে যায়। এভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা সৃষ্টি হয়।

১১.  শিক্ষা বিষয়ক প্রচারণার অভাবঃ সারাদেশে বিভিন্ন মিডিয়া অসংখ্য বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করলেও আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে মিডিয়ার প্রচারণা খু্বই সীমিত। মিডিয়ার এমন দায়সারা মনোভাবের ফলে জন সাধারণের মধ্যে দিনের পর দিন শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। অনেকাংশেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য বিকল্প মাধ্যম খোঁজে নেয়।

১২. সামাজিক অবক্ষয়ঃ আমাদের দেশের তরুণ সমাজে যথাযথ তদারকির অভাবে কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন বাজে অভ্যাসে জড়িয়ে যায়। অসৎ সঙ্গ ও তরুণ ছেলে-মেয়েদের অবাদে মেলামেশার ফলে পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযুগী না হয়ে, ঝগড়া-বিবাদ, আড্ডা দেওয়া, অপ্রয়োজনে খেলাধূলায় সময় নষ্ট করা ও প্রেম-ভালবাসায় জড়িত হয়ে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।

১৩. মাদক ও অপরাধ প্রবণতাঃ যুবক ছেলে-মেয়েদের একটা অংশ কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন খারাপ সঙ্গে মিশে অপরাধ কাজে আসক্ত হয়। এসব শিক্ষার্থীদের খামখেয়ালীপনার কারনে অল্প বয়সেই তারা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে।

১৪. আইন ও অনুশাসনের অভাবঃ আজকাল তরুণ সমাজের অবক্ষয় এতোই বেড়েছে যে, তারা না মানে পারিবারিক নিয়ম-শৃংখলা, না মানে সমাজের কোন অনুশাসন। যে কারনে তাদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১৫. বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে না পারাঃ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একান্তই শিক্ষার্থীসূলভ। তারা একেকটা স্টুডেন্ট এর নিডব্যসিস সিলেবাস প্রনয়ন করেন। এমনকি তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই প্রেক্টিক্যাল এবং সীমিত। এমনো দেখা গেছে, তাদের মাধ্যমিকের আগে কোন পরীক্ষা-ই নেই। সেখানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের ভিত্তিতে তাদের পছন্দসই বিষয়ে পড়ানো হয়। আর তাতে করে কোন এক নির্দিষ্ট বিষয়ে তারা দক্ষতা অর্জন করে এবং ক্যারিয়ারে সেই শিক্ষার প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করে।

অপর দিকে আমাদের দেশে ক্লাস ওয়ান থেকেই ডজন খানে বই পড়ানো হয়। ক্লাস সেভেন-এইটের সিলেবাস ক্লাস ওয়ানেই পড়ানো হয়; যা কিনা কোনভাবেই শিক্ষার্থীদের বোধগম্য নয়। আর ক্লাসটেস্ট, উইক্লি টেস্ট, মানথলি টেস্ট, সেমিস্টার এমন অসংখ্য পরীক্ষায় সারাবছর শিক্ষার্থীদেরকে একধরনের রেটরেইসের মতো চালাতে থাকে। সার্বক্ষণিক পড়াশোনার মধ্যে থাকা ছেলে-মেয়েগুলো কার্য ক্ষেত্রে কিছুই জানেনা। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায় গলদ আছে। আর এমন ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এক মরিচিকার নাম।


১৬.  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের অচলাবস্থাঃ এদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, শতকরা পাঁচ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি অনূকুলে নেই। আর এমন পরিবেশে পড়াশোনা করাতে অনেক অভিবাবকরাই শঙ্কা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্রীদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কোনটাই ঠিক মতো খোঁজে পাওয়া যাবেনা।

১৭.  জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেই তিন/চার জন ছেলে মেয়ে থাকে। অধিক সদস্যের পরিবারে সকলের মৌলমানবিক চাহিদা পূরণের পর শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় খুবই দুঃসাধ্য। তাই অনেক অভিবাবক শিশু সন্তানকে আয় রোজগারে নিযুক্ত করে দেন। তাতে করে শৈশবেই তাদের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেতে হয়।

১৮. বাল্য বিবাহঃ খুবই সাধারণ একটি বিষয় হলো এদেশে বাল্য বিবাহ। ছেলে-মেয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই, তাদেরকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের আগেই স্কুল থেকে ঝড়ে যায়।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৩য় পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


মানুষ মাত্রই অজানাকে জানার কৌতুহল বা আগ্রহ। মানুষের জানার এই কৌতুহল থেকেই শেখার মানসিকতা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃত্তি আছে, তা হলো বিনা লাভে কোন কাজ করতে না চাওয়া। অর্থাৎ কোন কাজ করার পর সেই কাজের বিনিময়ে কোন সুবিধা, স্বার্থ বা লাভ না থাকলে সেই কাজ করার প্রয়োজনবোধ হয়না। কিন্তু অন্য সকল কাজের থেকে পড়াশোনা করা বা জ্ঞানার্জন করার কাজটা স্বভাবতই একটু কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ।

লেখাপড়া করার জন্য প্রয়োজন কোন এক প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুলে-মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া। শূন্য জ্ঞানের স্মৃতিতে তীলে তীলে সঞ্চয় করা জ্ঞানকে ধারণ করে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর একজন শিক্ষিত হতে পারে। যেহুতু মানবজীবন ত্রুটিপূর্ণ বা সমস্যাগ্রস্থ, তাই দীর্ঘদিন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বহু প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এসকল প্রতিকূলতা এড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই পারে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে। তাই আমরা আলোচনা করবো কেনো শিক্ষা গ্রহণ করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে এবং কোন কোন উপায় অবলম্বন করলে সহজেই এসব প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

১. বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবঃ একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় যদি সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ কম হয়, সেখানে সকল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ খুব কম হয়। তাই অনেকের ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার সুযোগ পায়না।

২. অভিবাবকদের সচেতনতার অভাবঃ আমাদের দেশের অভিবাবকদের শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে ধারণার অভাব ও সচেতনতার অভাবে তাদের সন্তানকে শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করতে পারেনা। জীবনযাত্রায় শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে অভিবাবকগণ তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেখান না। অধিকাংশ অভিবাবকেরই ধারণা শিক্ষিত সন্তানরা পিতা-মাতার প্রতি যত্নবান কম হয় এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনার অভাবে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না।


৩. দারিদ্রতাঃ দারিদ্রতা আমাদের দেশের একটি অন্যতম অন্তরায়। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। পরিবারের ভরণপোষন ও সকল চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষেরা সন্তানকে পড়াশোনা করানোর কথা কল্পনাও করতে পারেন না। কারন এদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বই-পুস্তক ও শিক্ষা সরঞ্জামের মূল্য অধিক হওয়াতে অভিবাবকদের আয়ের তুলনায় বাড়তি হিসাব করতে হয়, আর সেজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে। 

৪. মেধা মূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাবঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় উপযুক্ত শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে পারেনা। এমনকি কিছু শিক্ষার্থী কেবল নিবিড় যত্নের অভাবে পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়, ফলে তারা অল্প বয়সেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়ে।

৫. অনাধুনিক মনোভাবঃ বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশও এখন তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে আধুনিকতার দাবিদার। কিন্তু সেই প্রযুক্তির অপব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক বিষয় বিবেচনার অভাবে তারা বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের  শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আধুনিক মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেশীর ভাগ শিক্ষকই আইটি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় অনগ্রসর, তাই তারা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে পারছেনা। আর তাই অল্পকিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা খুব দূরে যেতে পারছেনা।

পড়ের অংশ পড়তে ক্লিক করুন:

সম্পূর্ণ পড়ুন...

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

  জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(২য় পর্ব)

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

মোঃ অলিউল্লাহ্


আমাদের সমাজ বাস্তবতা আমাদের কিছু আপেক্ষিক বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। যেহেতু জীবনের সকল চাহিদা পূরণ করতে টাকা বা অর্থ-সম্পদ অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই আমাদের সমাজে টাকাকে সেকেন্ড গড বা সৃষ্টিকর্তার পরে সবচেয়ে বেশী মূল্যায়ন করা হয়। এমনকি কিছু মানুষের কাছে তো টাকাই সব। তাদের ধারণা, টাকা থাকলে সব করা যায়।

কিন্তু শিক্ষা বা জ্ঞান থাকলেও টাকা না থাকলে তার জ্ঞান মূল্যহীন হয়ে যায়। আজকাল টাকা দিয়ে সম্মানও কেনা যায়; এমনকি কৃত্রিম সনদও কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু লাখো জ্ঞানী মানুষ আছে, যারা টাকার অভাবে মূর্খকে প্রভু মানে,  খুবই নগন্য জীবনযাপন করে, অন্যের কাছে হাত পাতে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে সারাজীবন হতাশার গ্লানি বয়ে বেড়ায়।

কিন্তু এই প্রসঙ্গে একটা তিক্ত সত্য লুকিয়ে থাকে তা হলো, প্রকৃত জ্ঞানী বা শিক্ষিত ব্যক্তি কখনো জীবনে ব্যর্থ হয়না। তার জ্ঞানার্জন যদি সঠিকভাবে নেওয়া হয়ে থাকে, সে আদর্শের দিক থেকে যতটুকু উচ্চতায় অবস্থান করবে তেমনি, তার জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা উপার্জন কিংবা সম্পদ অর্জনের কমতি থাকবেনা। 

আমি শুরুতেই বলেছি, শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করতে হবে। লক্ষ্যহীন তরী যেমন সঠিক তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যহীন শিক্ষাও সফলতা আনতে পারেনা। যে জীবনে শিক্ষাকে একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছে, সে কখনো জীবনে কোন কিছুতেই অভাবী হতে পারেনা। 

'সঠিক শিক্ষালাভে কোন অভাব থাকতে পারেনা, যার অভাব আছে সে সঠিকভাবে শিক্ষালাভ করেনি।'


সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

  • পড়াশোনা করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
  • শিক্ষা লাভে বাধা বা অন্তরায়।
  • পড়াশোনার ব্যাপারে বিভিন্ন লোককথা ও সমালোচনা।
  • শিক্ষিত ব্যক্তিদের সামাজিক মূল্যবোধ।

(১ম পর্ব)

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

মোঃ অলিউল্লাহ্

দেখুন আমরা সবাই কমবেশি জানি পড়াশোনা কেনো করবো। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে, অর্থাৎ আমি আসলেই জীবনে কী হতে চাই তা বুঝতে না পারার কারণে শিক্ষা জীবন শুরু হলেও কারো মাধ্যমিক পাশ করেই শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যায়। কারো কারো উচ্চ মাধ্যমিক করেই শেষ  কিংবা ডিগ্রি স্নাতক পযর্ন্ত করা হলেও জীবনের সঠিক লক্ষ্য না বুঝার কারনে শিক্ষার গুরুত্ব হারিয়ে যায়।

আর তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই যা যা করতে হবেঃ


১। শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন কী জানতে হবে।
২। কেন শিক্ষা লাভ করবো জানতে হবে।
৩। একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
৪। জীবনকে একটা উন্নত ও অন্যের থেকে আলাদা মান দেবার জন্য জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৫। নিজের লক্ষ্য পৌছানোর জন্য বদ্ধপরিকর হতে হবে।
৬। পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবতাকে জানতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি জীবনমুখী কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
৭। শিক্ষাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে নিবিড়ভাবে জীবনের প্রয়োজনীতা পূরণ করতে সেই জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।
৮। নিজেকে অন্যের সামনে আদর্শবান করতে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৯। পৃথিবীকে জানতে, পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস,  বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা জানতে পড়াশোনা করতে হবে।
১০। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সৎ জীবনযাপন করার জন্য জ্ঞানার্জন অতি প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Wednesday, October 21, 2020

মুক্তির পথ || মোঃ অলিউল্লাহ

 স্বপ্ন তো প্রায় প্রতিরাতেই দেখি। কিছু স্বপ্ন থাকে যা ভালো লাগার, আর কিছু স্বপ্ন থাকে যা অপ্রত্যাশিত। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার আগ্রহ আমার আছে। কিন্তু কে খুব ভালো ব্যাখা দিতে পারে সেটা জানা নাই। কিন্তু আজ শেষরাতের স্বপ্নটা আমায় এতটাই উদাসীন করে তুলল, খুব কৌতুহলী হলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গেলে হয়তো উনি আমায় ভাল একটা ব্যাখা দিতে পারবে। সারাদিন অনেক কিছুই ভেবেছি। কিন্তু ব্যাখ্যা যতটুকু নিজে করতে পেরেছি, সেটা নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে ইতিবাচকভাবেই করেছি। তথাপি একজন আলেমের সাথে দেখা মিলল। সালাম দিয়ে উনার কাছে কিছুটা সময় চাইলাম। কিছুটা কৌতুহল দেখতে পেলাম উনার চোখে-মুখে।

‘কি বলতে চান? একটু সংক্ষেপে বলবেন। আমার কিছু কাজ আছে।’

কিভাবে বলা শুরু করবো ভাবছি। কিন্তু মনে হচ্ছে আমার বলতে একটু বেশি সময় লাগবে। আমি কি অন্য কোন দিন আসবো?

‘কত সময় লাগতে পারে? ত্রিশ মিনিটে হবে?’

হ্যা আশা করছি এর মধ্যে শেষ করতে পারবো। তবে আরো কিছু সময় লেগে গেলে...।

‘আচ্ছা বলুন। কি বলতে চান।’

আমি আসলে আজ শেষ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটা নিয়ে সারাদিন ভেবেছি। নিজের মতো দু’য়েকটা ব্যাখাও দাড় করিয়েছি। কিন্তু এতে আমি তৃপ্ত নই। আমি চাইছি, কেউ একজন আরো ভাল কোন ব্যাখ্যা আমায় দিতে পারবে, সেজন্যেই...।

‘দাড়ান দাড়ান। আপনি ভুল করছেন। আমি আসলে স্বপ্নের এতো ভাল ব্যাখ্যা দেওয়ার জ্ঞান রাখিনা। আপনি বরং অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারেন।’

তবে আমার মনে হচ্ছে, কথাগুলো শুনে কিছু একটা আমায় বলবেন, যা থেকে আমি শিক্ষা নিতে পারবো।

‘দেখুন আমারও ইচ্ছে হচ্ছে আপনার কথাগুলো শুনি। কিন্তু আপনার কোন কাজে আসবো কিনা জানিনা। আচ্ছা বলুন, কী দেখেছেন স্বপ্নে।’

আমি দেখলাম আমি একটা অচেনা দেশের অচেনা এক শহরে কাজে কাজ করতে গিয়েছি। যেদিন সেখানে পৌছলাম, সেদিনই সেখানে একটা দূর্যোগ শুরু হলো। আগে শহরের বর্ণনা দিয়ে নেই। শহরটা খুবই ছোট একটা দ্বীপ এর মতো। একতলা বিশিষ্ট কিছু বাড়ি ও কিছু টিনের ঘর দেখতে পাচ্ছিলাম। বাড়ি গুলো একটা অন্যটা থেকে দূরবর্তী ছিলো। কিন্তু প্রত্যেকটা বাড়িই আধুনিক স্টাইলে ডেকোরেট করা, অর্থাৎ দেখে মনে হবে অভিজাত বা রুচিশীল মানুষের শখের বাড়ি। কিন্তু শহরে যে খুব ধনী মানুষ আছে এমন নয়। আমার স্বপ্নটার সাথে দু’য়েকটা কাহিনীর মিল আছে। প্রথমত আমি নূহ (আঃ) জীবনী পড়ে যা জানতে পেরেছি তার সাথে কিছুটা মিল আছে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের একটি চলচ্চিত্রের একটা অংশের সাথে মিল খোঁজে পাই। কিন্তু যেই ব্যাপারটা জন্য আমি কোন আলেমের কাছে স্বপ্নের ব্যাখা চাইছি সেটা খুব আশ্চর্যজনক।

এবার বলছি কি ঘটছিলো সেখানে। কোথা থেকে যেনো পানির ঢল এসে সবকিছু প্লাবিত করে দিচ্ছিল। চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গেলো। অসংখ্য মানুষের চিৎকার যেনো এক মুহুর্তের মধ্যে পানির সাথে মিলিয়ে গেলো। ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, গৃহপালিত প্রাণীসহ সবকিছু এক মুহূর্তের মধ্যে পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছিল। অনেক দূরে দেখতে পেলাম মসজিদে যে গালিচা বা প্লাস্টিকের যে জায়নামাজ থাকে, সেগুলো ভেসে ভেসে আসছে। অলৌকিকভাবে কিছু মানুষ সেই গালিচার উপর দাড়িয়ে রয়েছে স্থিরভাবে। কিন্তু তারা ডুবে যাচ্ছে না। তারা সবাই নামাজে দাড়ানোর মতো খুবই শৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে আছে। গালিচা গুলো সব ভেসে ভেসে একজায়গায় এসে একত্রিত হলো।

‘তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’

দুঃখিত আমি আমার অবস্থানের কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। আমি অনেকটা দূরে একটা উচুঁ  টিলার উপর দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম। দেখলাম তখনো সেই টিলায়  পানি পৌছায়নি। টিলার চূড়ায় একটা টিনের ঘর রয়েছে। ঘরে অনেক পুরাতন আসবাবপত্র। কৃষ্ণবরে্ণর দুইজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে আছে। বাহিরে কী হচ্ছে সেসব নিয়ে তাদের মধ্যে কোন উদ্বেগ দেখতে পায়নি। তবে ঘরের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো আমার দুঃসম্পর্কের এক মামা। উনি আমায় বলল- ‘তুমি এই বিপদের মধ্যে এখানে কেন আসছো? আমরাও বিপদের বাইরে না। যেকোন সময় আমাদের বাড়িও ডুবে যেতে পারে।’


আমি ওনাকে অনেক অনুরোধ করলাম এই ঘরে আমাকে আশ্রয় দিতে। উনি প্রথমে ইতস্তত করছিল, পরে বলল- ‘টাকা পয়সা আছে তোমার কাছে?’

আমি বললাম- টাকা পয়সা যা ছিলো এদেশে আসার পথেই খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি আপনাদের ঘরের সকল কাজ করে দেবো। দয়া করে আমাকে থাকতে দেন। উনি রাজি হলো। এরপর যা দেখলাম, তা আরো বেশি লোমহর্ষক। দূরের সেই গালিচায় যারা রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন অনেকগুলো খাবার নিয়ে প্রত্যেকের কাছে যাচ্ছে, আর বলছে ‘যার যার কাছে টাকা আছে দাও এবং খাবার কিনে খাও।’

দূরে হলেও কী করে যেনো আমি তাদের সকল কথা শুনতে পাচ্ছি। একজন লম্বা ব্যক্তি তার শিশু পুত্রকে কুলে নিয়ে কাঁদছে। হয়তো তার স্বজনরা পানিতে তলিয়ে গেছে।

‘আচ্ছা এখানে আপনাকে একটু থামতে বলছি। আর জানতে চাইছি, আপনি গত কয়েকদিনে আর কোন আজব স্বপ্ন দেখেছেন কিনা?’

হ্যা দেখেছি। দুইদিন আগে যে স্বপ্নটা দেখলাম,  সেটা কিছুটা আশ্চর্যজনক ও অনেকটা ছাড়া ছাড়া স্বপ্ন ছিলো। 

‘সেই স্বপ্নটা কি ছিলো? সংক্ষেপে বলেন।’

কিন্তু আপনার তো দেড়ি হয়ে যাবে।

‘আচ্ছা আপনি সময় নিয়ে ভাববেন না। আমার যে কাজটা ছিলো তা পরে করলেও চলবে।’

ঠিক আছে, তাহলে বলছি। সেই স্বপ্নটায় আমি আমার শৈশবের বয়সে ফিরে গিয়েছি। আমার এক বন্ধুকে নিয়ে হিন্দুদের পূজা দেখতে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। আকাশে ঝলমলে বাজি ফুটতে দেখে খুব আনন্দিত ছিলাম আমরা। সেটা ছিল রাতের বেলা। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেখানে নাচ-গান, সার্কাস, বিভিন্ন মূর্তি দেখেছি। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় আমরা অন্ধকারে পথ ভুলে যাই। তখন আমরা দুজনেই হাটতে হাটতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর কোনমতেই হাটতে পারছিলাম না। পা ব্যথা হয়ে এসেছিল। ওহ আমার বন্ধু প্রথমে সেখানে যেতে চাইছিলনা। সে বলছিল হিন্দুদের পূজোয় গেলে, তার মা জানতে পারলে তাকে বকা দিবে। কিন্তু আমি তাকে জোর করে নিয়ে যাই। পথ হারাবার পর ধীরে ধীরে সব কিছু খুব ভৌতিক হতে শুরু করে। চারিপাশে নানা প্রকার শব্দ হচ্ছিল। ভূতুরে কিছু দৃশ্যও দেখে খুব ভয় পেলাম।  একটা সময় দুজন  কাঁদতে কাঁদতে একস্থানে বসে পড়লাম। তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ফজরের আযান শুনতে পেলাম। তারপর আমি ফজরের নামাজ আদায় করে নেই।

‘আপনি নিয়মিত নামাজ পড়েন?’

চেষ্টা করি। যদিও আগে নিয়মিত ছিলাম না।

‘তারপর কি হলো বলেন।’

আগের স্বপ্নের কথা বলবো? নাকি আজকেরটা?

‘হ্যা আজকে যেটা দেখেছেন, সেটা বলুন।’

তারপর আমি দেখলাম, যারা খাবার নিয়ে যাচ্ছিল তাদের খাবার শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু পরবর্তীতে আর খাবারের কোন জোগান নেই। এটা নিয়ে অবশ্য তাদের কোন অনুতাপ নেই। আমি ঘরে ভিতর গেলাম। দুই/তিন এভাবে কেটে গেল। তারপর বাহিরের আর কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না। দেখতেও পাচ্ছিলাম না কিছু। সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেলো। এরপরেই শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। আমি যেই ঘরে ছিলাম সেই ঘরের লোকজন প্রথমে খাবার না পেয়ে ছটফট করছিল এরপর অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি বিষণ ভয়ার্ত চোখে দেখতে লাগলাম বৃষ্টির কী তান্ডবলীলা। ধীরে ধীরে ঘরের চাল ফোটা হয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টির পানিতে সারা ঘর ভিজে গেল এবং বাহিরে পানির ঢল ভিতরে আসতে শুরু করল।

ভয়ে আর আর্তনাদে আর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভব করলাম। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। ঘড়িতে সময় তখন ৫:১০ মিনিট। ফজরের নামাজ আদায় করলাম।

‘আপনি বলছিলেন আপনার স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা করেছেন। কী ব্যাখ্যা করেছেন সেটা শুনতে চাই।’

না তেমন গুরুত্ববহ কিছু না।

‘তবুও বলুন।’

আমার মনে হয়েছে প্রথম স্বপ্নের সাথে দ্বিতীয় স্বপ্নের যোগসূত্র আছে।

‘কীভাবে?’

প্রথমত পূর্বের স্বপ্নের সময় ও পরবর্তী স্বপ্নের সময় খুব কাছাকাছি। প্রথম স্বপ্নে অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তু ছিলো, তেমনি দ্বিতীয় স্বপ্নেও সুপারন্যাচারাল অনেক কিছু দেখলাম। প্রথম স্বপ্নে আমরা যাচ্ছিলা মূর্তিপূজা দেখতে এবং ফেরার পথে আমরা অনেক ভয় পাই ও বিপদে পড়ি। দ্বিতীয় স্বপ্নেও অনেক বিপদ ও ভয় পেয়েছি। 

‘আপনি বলছিলেন কোন এক বিষয়ের কারনে আপনি স্বাভাবিক কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীর কাছে না গিয়ে বিজ্ঞ আলেম খোঁজ করছিলেন। সেটা কেন?’

ও হ্যা, সেটা মূলত স্বপ্ন দেখার সময়ের কারণে এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি অলৌকিক ধাচের কিছু স্বপ্ন দেখছি। আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, যেদিন থেকে আমি আমার জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চাইলাম এবং নিজের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন বোধ করলাম, সেদিন থেকেই এই ধরনের স্বপ্ন এমনকি বাস্তবেও অনেক ঘটনা যেগুলো আমার সাথে ঘটছে সেসবের মিল খোঁজে পেলাম। আমি ধরে নিলাম ব্যাপারটা ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। 


হতে পারে এটা আমার জীবনের পরিবর্তনের কারণে হেদায়াতের ইঙ্গিত, যাতে করে আমি জীবন যাপনের সকল ব্যাপারে আরো বেশি সাবধান হতে পারি। জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা চালিয়ে নিতে পারি। আমার প্রথম  স্বপ্ন আমার জন্য অনেকটা সাইরেনের মতো বোধ করছি, আমি নিজেকে ও নিজের আচরণ এবং দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আমার সামনে অনেক বাধা আসবে। আদৌ আমি আমার সরল পথে কতদূর যেতে পারবো সে বিষয়ে আমি সন্ধিহান। আমার পূর্বেকার যাপিত জীবনের অনেক কিছুই অভ্যাসে পরিণত হওয়ায়, সেসব বাহ্যিক ‍দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটতে চায়। আমি সেটাকে আরো প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরবর্তী স্বপ্নকে অভিজ্ঞতা হিসাবে গ্রহণ করতে পারি। এটা কেবল আমার স্বপ্নের ইতিবাচক দিক, যা আমার কল্যাণের উদ্দেশ্যে ভেবেছি।


আরেকটা হলো নেতিবাচক দিক। সেটা নিয়ে আমি খুব ভীতসন্ত্রস্ত। যেহেতু দু’টো স্বপ্নই অতিপ্রাকৃত উপাদান নির্ভর এবং দূর্যোগ কবলিত, তাই আমি জীবনে অনেক বড় বিপদ আশঙ্কা করছি। এমনকি সেই বিপদ থেকে উৎরানোর কোনো সুযোগও না থাকতে পারে। 

‘বুঝলাম। আমি জানি আপনি আমার বলার অপেক্ষায় রয়েছেন যে আমি কী বলবো। আমি আসলে বিশেষ কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু আপনার ধারণাগুলোতে কিছুটা সহমত পোষণ করবো। তবে আপনাকে বলবো, যে জীবন থেকে আপনি পরিত্রান পেতে চান, সে জীবন পরিহার করুন। আপনার বিশ্বাসের খুটিটা আরো মজবুত করেন। জীবনের আসল উদ্দেশ্য, দুনিয়া ও আখিরাত, জন্ম-মৃত্যু ও দুনিয়ার সকল সৃষ্টির প্রতি অবলোকন করে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করুন। গতানুগতিক বা স্বভাব ধর্ম পালন না করে, কেবল পরকালের কথা হিসাব করে আরো বেশি যত্নবান হয়ে ইবাদত করুন।

মনে রাখবেন, শয়তান প্রতিনিয়ত আপনাকে ধোকা দিতে চাইবে। আপনার নামাজ পড়া, সকল ইবাদত সম্পন্ন করার পরও আপনাকে ইসলামের আদর্শ বহির্ভূত কাজ করার জন্য শয়তান আপনাকে উস্কানি দেবে।’

কী রকম?

‘এই ধরুন আপনি সবই করছেন, কিন্তু মনে মনে ভাবলেন নামাজ তো একটু পরেও পড়া যাবে। সবই তো করছি, দ ‘য়েকটা গান শুনলে বা একটা সিনেমা দেখলে কী এমন পাপ হবে? ইসলামের আদর্শ মতোই তো চলছি, কিন্তু আপনার মনের অজান্তেই কিছু ছোট ছোট মিথ্যে বলছেন, টাকনোর নিচে কাপড় পরিধান করছে। কুরআন ও হাদিসের নিষেধ অমান্য করে খামখেয়ালি জীবন যাপন করছেন। তার মানে আপনি নামাজ রোজা করলেও ধর্মীয় বন্ধনে অটুট নন। আপনার বিশ্বাস এখনো অনেক নড়বড়ে।’

আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আরোও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বলবেন কী?

‘হ্যা, বলবো। আপনি এখন থেকে সর্বদাই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন। পরকাল নিয়ে অনেক বেশী ভাববেন। দুনিয়াবী চাহিদার মতো করেই পরকালের চাহিদাকে গুরুত্ব দিন। বেশি বেশি নৈতিক শিক্ষা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন। নিজে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করুন এবং পরিবার পরিজনদের রক্ষা করার চেষ্টা করুন। আমার উপদেশ আপনার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। তবে আমার ভাবনায় যতটুকু আসলো আপনাকে বললাম। তবে আপনি আরোও বড় কোন বুজুর্গ ব্যক্তির স্বরণাপন্ন হতে পারেন।’

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, October 15, 2020

তোমার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান

 সেই প্রথম উপলব্ধি আমার যখন তুমি নিরক্ষর হয়েও আমায় অনেক কিছুই শিখাতে শুরু করলে। তোমার আমার সম্পর্কটা সামান্যও দূরত্বের ছিলনা। যদিও আমার আগে তুমি আরো সাতজনকে এই পৃথিবীর আলোতে করেছো আলোকিত। আমার মনে পড়ে, ধীরে ধীরে শৈশব পেড়িয়ে কৈশরে প্রবেশ করলেও আমি তোমার আচল ছাড়িনি। তুমি আমায় ছেড়ে দাও নি একেলা, যেভাবে অন্যান্যদের পথ চলতে কিছুটা ছেড়ে দিয়েছিলে। তুমি প্রাকৃতিক আধুনিকতায় অসম্ভব আধুনিক ছিলে, কিন্তু প্রথাগত ও রীতিসম্মত আধুনিকতার ধার ধারনি। প্রকৃতি তোমায় আমার প্রতি একটু বাড়তি যত্নশীল করেছিল বলেই আমার মধ্যে তুমি নতুন আবিষ্কার করতে চেয়েছো।


এতো আবেগী তুমি আর এতো বেশী সংবেদনশীল যে আমার সামান্য অসদাচরনেই মারাত্মক বেদনাবোধ করতে। আবার আমার অতি তুচ্ছ চাহিদাগুলোকেও অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে তা পূর্ণ করবার তাগিদে ওঠে পড়ে লাগতে। আমি অভাবের ভাবটা বুঝবার আগেই কেমন যেনো তুমি বুঝে যেতে এটা আমার দরকার। অপ্রতুল সব ইচ্ছা পূরণে যখন তোমার কাছে একটার পর একটা বায়না ধরতাম, আমি দেখেছি তোমায়, কী করতে তুমি তা পাইয়ে দিতে আমাকে। আমি দেখেছি কত মানুষের কত অপবাদ ও কত যাতনা সহ্য করেছো আমার জন্য। কিন্তু আমি জানতে চায়নি কেন এতসব করছ আমার জন্য। আর আমার এটাও সঙ্কা ছিলো যে, তুমি আমাকে সাফল্যের চূড়ায় অবতীর্ণ করলেও তার বিনিময়ে আমি তোমায় কিছুই দিতে পারবোনা।


আমার আসঙ্কাগুলো সত্যি হোক তা আমি চাইনি মন থেকে। কিন্তু তুমি সেটাই করলে, যেটা আমার অবচেতন মন বলে দিয়েছিলো। আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছো, আমি যেখানেই থাকতাম। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত তুমি আমার মধ্যে বিরাজ করেছো, যদিও তোমার আরো সন্তানেরা বিদ্যমান ছিলো। সবার প্রতিই সমান মনোযোগ তোমার, তুমি বলতে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম না, যেভাবে বিশ্বাস করেনি তোমার অন্য সন্তানরা। তারা ভাবতো সবচেয়ে বেশী আমাকেই ভালোবাসো। আমিও তাই বিশ্বাস করতাম। কেন জানি আমাকেই তুমি নির্ভরযোগ্য ভাবতে সব সময়।


আবার আমার সকল প্রয়োজনে, বাবা ও মায়ের দায়িত্বটা তুমি একাই নিয়ে নিতে। সেই আদীম ও অনাধুনিক মা কিভাবে উচ্চ শিক্ষিত মায়ের চেয়েও বেশী যত্নশীল হয়ে ওঠতে পারে সেটা তোমায় হারিয়ে বুঝতে পেরেছি। ছোট একটা অপারেশনে আমি একসপ্তাহ হাসপাতালে ছিলাম। আর কাউকে সেখানে পাইনি, তোমাকে ছাড়া। তুমি সর্বদা নিজেকেই আমার জন্য নির্ভরযোগ্য করে রাখতে। আর তুমি জানতে তোমাকে ছাড়া আমি, আমার অন্য ভাই বোনেরা খুবই অসচল। তুমি ততদিন রয়ে গেলে যতদিন আমরা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারি।


কিছু অসাধারণ অভ্যাস ছিল তোমার, যা তুমি আমাদের শিখাতে চেয়েছো। তোমার কিছু গুণাবলী স্বভাবজাতভাবে আমরা পেয়ে গেছি। কিন্তু তুমি মহান রাব্বুল আলামিনের কিছু বৈশিষ্ট খুব যত্নে আকড়ে ধরেছিলে, প্রবল সমস্যাতেও যা কিঞ্চিত নড়ভড়ে হয়নি। আমার ধ্যান ধারণা এই পৃথিবীর বিলাসীতা, আড়ম্বর ও সৌখিনতায় পৌছেগিয়েছিল। আর সেই অবস্থায় তুমি আমায় পৌছে দিয়েছো। কিন্তু নিজেকে তুমি করে রেখেছো স্বভাবজাত অভাবী, অনাহারী, অসহায় আর প্রচন্ডরকমের ধর্মভীরু। আমি ভাবতাম তুমি ধর্ম নিয়ে একটু বাড়াবাড়িই করছো, ধর্মকে এতো মানার কি আছে (আল্লাহ আমায় করুক)। কিন্তু তুমি সমস্ত কাজ করে, চিন্তা ও সকল দায়-দায়িত্ব পালন করেও সৃষ্টি কর্তার শুকরিয়া গোজার করা ও প্রার্থনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে দ্বিধান্বিত হওনি। 

সৃষ্টিকর্তার নিকট তোমার সমুন্নত ও সুউচ্চ প্রাপ্তি কামনা করছি। আমার পাপ মুখে তোমার মঙ্গল কামনা করছি। যা তুমি করে গিয়েছি পরকালের জন্যে সেসব যেনো সামান্যও বৃথা না যায়, বরং আল্লাহ তায়ালা যেন তোমার সমস্ত চেষ্টার জন্য অতিরিক্ত সওয়াব বরাদ্দ করে তোমায় জান্নাতের সমুন্নত আশ্রয়ে অবতীর্ণ করেন। 

আমি তোমার চলে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক মনে করছিনা কোনভাবেই। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন ইচ্ছাকেই উপেক্ষা করার সাহস আমাদের নেই। তিনি অবশ্যই তোমাকে তোমার যথার্থ মর্যাদা দিয়েছেন এই পৃথিবীতে আর তেমনই পুরস্কার হয়তো দিবেন আখিরাতে। সারা জীবনে তোমার যে যন্ত্রণা, তোমার শ্রম ও তোমার সকল ত্যাগের পরিমাণ হিসাব করলে নিজেকে কোনভাবেই তুলনা করতে পারিনা। একজন নারী হয়ে তুমি যা কিছু করেছো, আমি তোমার সন্তান- একজন পুরুষ হয়ে সেই সবের অর্ধেক ও করতে অক্ষম। 

তোমার চলে যাওয়ার পর থেকেই তুমি বার বার ফিরে আসো আমার কাছে। একেকরাতে একেকভাবে তুমি স্বপ্ন হয়ে আসো। প্রথমদিকে তোমার আগমণ আমায় সান্ত্বনা দিতো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই আমি বিরহ কাতর হচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি, যেভাবে তোমার অস্তিত্ব আমায় ঘিরে ছিলো যতদিন তুমি ছিলে, এখনো তোমার অস্তিত্ব আমায় সেই ভাবেই অনুসরন করছে। মাগো কেন চলে গেলে? আমার যে বড্ড একা লাগছে মা। তোমায় ছাড়া কি করে থাকি, তুমি কী দেখছো না?

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, February 20, 2020

তখনকার ও এখনকার রবীন্দ্রনাথ || মো অলিউল্লাহ্

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সাহিত্য কর্ম।

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও দর্শন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ কবি, উপন্যাসিক, কথা শিল্পি, চিত্রশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী।

## কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শন ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে পর্বভিত্তিক আলোচনাঃ এই লেখাগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সকল রচনার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, বিষয়বস্তু ও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র রচনার ভূমিকা ও তাৎপর্য আলোচিত হবে।

[১ম পর্ব]

শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‍যিনি সাহিত্য, দর্শন, সঙ্গীত অর্থাৎ শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় বিচরণকারী। মহাজগতে সার্বজনীন আধুনিক ও উন্নত মানসিকতায় সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু একই সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি যা সৃষ্টি করে গেছেন মানুষের মাঝে সেই সৃষ্টিগুলো যেনো প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত, সার্বজনীন বিরাজমান সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র ও অন্যান্য সৃষ্টির মতোই চিরন্তন ভাস্বর এ পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তখনকার কথা বলতে বুঝানো হয়েছে, সেই স্বর্ণযুগকে যে যুগের ধূলিকনারা তাঁর পা স্পর্শ করতে পেড়েছে। সে যুগের নির্মল বায়ো, প্রকৃতি ও পরিবেশ তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছে অর্থাৎ ওনার জীবদ্দশার কথা বলা হয়েছে।

মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, আসছে ও আসবে। কিন্তু এমন ক্ষণজন্মা মানুষ যে পৃথিবীতে এসেছে ও তাঁর অস্তিত্বকে চিরকালের মতো রেখে গেছেন মানুষের মাঝে, যেটা সবাই পারে না। তিনি তো প্রথমবার এসেছিলেন  ১৮৬১ সালের ৭ই মে, কিন্তু তিনি মানুষের মাঝে এসেছেন বারবার, প্রতিদিন, প্রতিবার।যখনই কেউ তাঁর কোন একটা উপন্যাস, একটা নাটক, একটা কবিতা, একটা গল্প কিংবা একটা গান শুনেন তখনই সেই ব্যক্তির অন্তঃদৃষ্টিতে কিংবা তাদের অনুভূতিতে রবীন্দ্রনাথ বিরাজ করতে শুরু করেন। 

তাঁর কৃতকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হলে পৃথিবীর যে কোন বিখ্যাত লেখককেও দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হবে। তাই আগেই হার মেনে নিচ্ছি, আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির দোষগুণ বিচার করতে পারবোনা, অন্যকারো সাথে তাঁকে তুলনাও করতে পারবোনা; এমনকি তাঁকে নিয়ে যা-ই বলবো তা একেবারে আমার কিঞ্চিত জ্ঞান থেকে বলবো। সুতরাং কেউ আমার এ লেখার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম বা শিল্পকে সীমাবদ্ধ করবেন না।

আগে বলে নেই তাঁর বিচরণ সম্পর্কে। তিনি প্রথমেই একজন কবি এবং শিশুকাল হতে বার্ধক্য পর্যন্ত তিনি ছিলেন কবি। যিনি আট বছর বয়সেই লিখে ফেলেন চমকপ্রদ কবিতা এবং এর পর থেকে সহস্রাধিক কবিতা লেখেন তিনি। শুধু বাঙালি কবি বলে তাঁকে সীমাবদ্ধ করা যাবেনা, কেননা তাঁর কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ অসংখ্য শ্রেষ্ঠ বিদেশী কবিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর সেকারণেই হয়তো তিনি কবিদের কবি অথবা কবিগুরু। তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু হলো মানুষ, ধর্ম, শ্রেণী, সমাজ, মানবতা, দর্শন ও তত্ত্বকথা। তাঁর কবিতার গভীরতা ও তত্ত্বের ব্যাপকতা অসীম। 

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা “অভিলাষ”। তাঁর কবিত্বের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায় বিশেষ কতগুলো কাব্য দ্বারা। “বনফুল”, “সোনারতরী”, “চিত্রা”, “চৈতালি”, “কল্পণা’, “ক্ষণিকা” ইত্যাদি। এসব কাব্যে কবির মর্ত্যের প্রতি অনুরাগ, মানবপ্রেম, মানবমনের খুশি, অশ্রুসিক্ত বেদনা, আবেগ ও অনুভূতি মাখা বিচিত্র চেতনা সমৃদ্ধ রোমান্টিকতা। এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। কাব্যের সার্থকতায় তিনি পৌছেছেন বিশ্বকবি, গুরুদেব ও কবিগুরুর আসনে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। তিনি রচনা করেছেন
 একহাজার নয়শ (১৯০০) এর অধিক গান। বাংলা সঙ্গীতের সুরের মধ্যে তিনি তাঁর প্রতিফলন জন্ম দিলো এক অত্যাধুনিক মাত্রা। বাঙালি লোকসঙ্গীত, ধ্রুপদী সঙ্গীতের পাশাপাশি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আদলে সৃষ্টি করলেন নিজস্ব মাধুর্য আর সমসাময়িক নব্য স্টাইল। যা প্রাচীন সঙ্গীত, আধুনিক সঙ্গীত ও উত্তরাধুনিক সঙ্গীতের সীমানা ছাড়িয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর সঙ্গীত হিসেবে বিবেচিত। আমরা যতই ইংলিশ, বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় নতুন প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত গান শুনিনা কেন, হৃদয়ের অপূরণীয় স্বাদকে আস্বাদিত করে শেষ পর্যন্ত  রবীন্দ্র সঙ্গীত।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Monday, February 17, 2020

ইগো’র তাড়নার ভাল ও মন্দ দিক || EGO: Positive Ego and Negative Ego || মোঃ অলিউল্লাহ্

ইগো (EGO) কী? 

মানুষের মনে কেন ইগো তৈরি হয়? 

ইগো কয়ভাগে বিভক্ত? কীভাবে ইগো নিয়ন্ত্রণ করবেন? 

ইতিবাচক ইগো মানুষের সম্পর্কে কতটা ভূমিকা পালন করে? 

আপনার নেগেটিভ  ইগো আপনাকে কতটা অশান্তিতে রাখছে? 

নেগেটিভ ইগো হতে পজিটিভ ইগো’তে কীভাবে আসতে পারেন? 

ইগোকে  ইতিবাচকভাবে প্রয়োগ করা কেন জরুরী? 



আমরা মানুষ, যা আমাদের আসল পরিচয়। আমাদের আরো কিছু পরিচয় পাওয়া যায় আমাদের চারিত্রিক বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে। আমাদের আছে অনুভূতি শক্তি বোধ শক্তি, আছে আবেগ, মায়া, মোহ, রাগ, অভিমান, অহংবোধ, দাম্বিকতা, স্থবিরতা, জিগাংসার মতো নানা ধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া। ‘ইগো’ (EGO) আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের জীবনে আমরা কতইনা মানুষের সাথে পরিচিত হই। গড়ে ওঠে সম্পর্ক ও দুঃসম্পর্ক। বিশেষ করে যখন থেকেই আমরা আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও আত্মসম্ভ্রম সম্পর্কে বুঝতে শিখে যাই তখন থেকেই আমরা বিভিন্ন মানুষের কথায় কিংবা তাদের আচরণের দিকে লক্ষ্য করি।


কিছু সময় আমরা বেশ বিরক্তিকর বা হতাশাজনক অভিজ্ঞতা পাই। আমাদের আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত আচরণ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রায়ই আমরা মানসিকভাবে আহত হই। তারপরেই আমাদের সুক্ষ্ম চিন্তা-চেতনা বা বিবেচক মন সেই ব্যাপারে আমাদের আবেগের মধ্যে এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির তৈরি করে। আমরা পরিস্থিতির কবলে পড়ে কখনো রেগে যাই, কখনো রাগকে চেপে রেখে তাদের সেই হতাশাপূর্ণ স্মৃতিতে বুকে ধারণ করি। কখনো আবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাই।

মূলত আমাদের High-Consciousness মানসিকতা আমাদের মনে কোন তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। আর তখনই আমরা ইগো’তে তাড়িত হই। শুধু তাই নয়, ইগো’র তাড়নায় আমরা অনেক সময় আত্মতুষ্টিবোধ করি, কখনো অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববোধ বা নিজেকে বারবার ভুল ও সঠিকের সাথে তুলনা করতে থাকি। অধিকাংশ সময়ই আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তা ও যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেই। নিজের ভাবনা-চিন্তা ও যুক্তিকে বাস্তবসম্মত মনে করে ও অন্যের ভাবনা-চিন্তাকে ভুল ভেবে বা তাদের আচরণ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে ভুল হিসাবে বিবেচনা করে, একধরনের রাগ বা অভিমানের মধ্যে বসবাস করি।

‘ইগো’ (EGO) কেবল মানুষের মনকেই নিয়ন্ত্রণ করেনা, তৈরি করে অন্তঃদ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক বিরোধী মনোভাবাপন্ন। সম্পর্কের ফাটল ধরানো এমনকি যেকোন ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা। তবে আমরা এমন এক আন্তঃসম্পর্কীয় দ্বন্দ্ব বা পারস্পরিক যোগাযোগের দ্বিধান্বিত অবস্থায় থাকি যেখানে, মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক ভেবে কিছু করার অবকাশ খুব কম থাকে। ব্যক্তি বিশেষে কিছুটা ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে একটা বড় প্রশ্ন হলো, কী এই ইগো? কী এর সমস্যা? কেন আমরা ইগো’তে তাড়িত হই? এ প্রশ্নের প্রথম উত্তর হয়তো এমন যে, মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে অর্থাৎ এই তত্ত্বটি সম্পর্কে জ্ঞান নেই। কিংবা এটা জানাটাও কারো পক্ষে এতো জরুরী হয়ে পড়ে নি।

কিন্তু আসলেই কী এই সম্পর্কে জানা উচিৎ? নাকি ‘ইগো’ (EGO) সম্পর্কে জানলে আরো বিপদ বেড়ে যাবে? যেমন; যাহা জানিনা তাহাতে কোনই ভুল নাই, জানিলেই  মানিতে হইবে। না মানিয়া উপায় থাকিবেনা। যারা অতিমাত্রায় Self-Conscious বা যাদের ‍Sense of Esteem or Sense Consciousness সম্পর্কে সচেতন তারা পড়ে উভয় সংকটে। একদিকে যেমন নিজের ইগো সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণহীন ও অবগত অন্যদিকে এর প্রভাব বা প্রতিকূলতায় চিন্তিত।

যদি আপনি ইগো’ তে থেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে সেই অহংবোধকে ইতিবাচকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। তবে নেতিবাচক ইগো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে ও নেতিবাচক ইগো’র কুফল সম্পর্কে জানতে হবে। যাতে আপনি নেতিবাচক কিছু না করেন। আপনি যদি কেবল সমস্যা চান, তবে একটি নেতিবাচক অহংবোধ নিজের মধ্যে বজায় রাখতে পারেন। কিন্তু তা আপনার মানসিক অশান্তির কারন হতে পারে। আপনি যদি সুখ এবং অশান্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন, তাহলে একসাথে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মনোভাব সম্পর্কে সচেতন হবেন। অশান্তি হতে আপনি যদি মুক্তি পেতে চান, তবে প্রথমেই ভুল বিশ্বাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত বা যুক্তিসম্মত বিষয়ে বিশ্বাসকে দৃঢ় করুন।

ইতিবাচক ইগোঃ প্রতিটি মানুষেরই ইগো আছে। কিন্তু তাদের ইগো’র প্রয়োগ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। কিন্তু ইতিবাচক ইগো আপনাকে সুখের প্রতি আকৃষ্ট করবে। সুখী হওয়ার জন্য ইতিবাচক অহংবোধ থাকা আবশ্যক। আপনার ইতিবাচক ইগো নিজের ও অপরের শান্তির কথা বিবেচনা করবে ও বাস্তবতা ও পরিস্থিতি বিবেচনার পক্ষে কাজ করবে। ইতিবাচক ইগো কেবল একপাক্ষিক মতবাদে কিংবা একপাক্ষিক যুক্তিতে নির্ভরযোগ্য নয়। ইতিবাচক ইগো উভয় পক্ষের সকল অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার উপর গুরুত্ব প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুই বা ততোদিক পরামর্শকের সরণাপন্ন হওয়া জরুরী, কেননা আপনি নিজেও বুঝবেন না যে আপনি একটি ভুল বিশ্বাসের উপর বিদ্যমান।

আর তাই বুদ্ধিমান তারাই যারা স্বীয় উক্তি বা আচরণের স্বরূপ বিশ্লেষণ করে ও কারো উপর অভিমানের বোঝা বাড়ানোর আগে, সেই ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কথা ভেবে তার প্রতি নিজের রাগ বা অভিমানকে প্রশ্রয় দেয়।

আমি বলছিনা যে, কেউ দোষ করলেও জোরপূর্বক নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে বহু ইতিবাচক যুক্তি দাড় করিয়ে কেবল শান্তির জন্য একটি ভুল বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন আর এর মধ্য  দিয়ে নিজের সংযম প্রমাণ করেন। এটা খুব সহজ কাজ নয়। ভুল সর্বদাই ভুল। কালো সর্বদাই কালো। কালোকে আলোকিত চোখে দেখে সুগভীর মহৎ ভাবনায় নিমজ্জিত ও ব্যাপকতর ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে সাদা করতে যাওয়া যে বোকামী। কারণ এতে শুধু নিজেকেই মানানো যায়, আত্মতুষ্টির জন্যে। কিন্তু তা সর্বজন স্বীকৃত হবেনা। তবে আপনি বলবেন, আমি তো আবার সেই ইগো’তেই সীমাবদ্ধ রইলাম? আমি তো আবার অশান্তিতেই থাকলাম? মুক্তি কোথায় পেলাম?

অন্যায়কে সমর্থন করার শান্তি খুব স্থায়ী নয়। কিন্তু যদি প্রকৃত মুক্তিই চান, তাহলে অন্যায়কে মনে রাখুন এবং অপরাধীকে ভুলে যান। অথবা তাকে বুঝিয়ে দিন, তার বিশ্বাস সম্পর্কে, যদি সে বুঝতে সক্ষম হয়। তানাহলে মনে রাখুন তাকে ভবিষ্যতের জন্যে। যেনো তার মুখাপেক্ষী হতে গিয়ে আপনাকে হেনস্ত না হতে হয়। কেবল প্রতিশোধস্পৃহাকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পূর্বের ন্যায় সম্পর্ক বজায় রাখুন  নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে।

‘নেগেটিভ ইগো’ একটি মন্দ প্রবৃত্তি। ‘নেগেটিভ ইগো’তে থাকা আর নিজেকে কারাগারে বন্দি করা একই কথা। আপনার চিন্তাভাবনাটি এমন হওয়া উচিত যে, আপনার পথে যাই আসুক না কেন এটি আপনার অতীতের ভুলগুলির কারণে আসে। তাই এটি গ্রহণ করুন এবং এটি আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে ‘জমা’ করুন। যখন কেউ আপনাকে অপমান করে, তখন অপমানটি গ্রহণ করুন এবং যদি আপনি তার সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলতে চান বা যোগাযোগ বন্ধ করতে চান, তবে তাকে আঘাত করবেন না। আপনি যদি পার্থিব জীবনের যোগাযোগ চালিয়ে যেতে চান, তবে তা মনে রেখেই ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।

অবশেষে একটা কথাই বলবো, কাউকে অহেতুক ভুল বুঝবেন না। প্রমাণ ছাড়া দোষী বানাবেন না। যথাযথ অপরাধ পাওয়ার পরও তাকে তার ভুলের সংশোধনে সহায়তা করুন। নিজের বিশ্বাসের প্রতি আরো বেশি স্থির হোন। মানসিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে বাড়াতে চেষ্টা করুন। ইগো নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে যে সুখ পাবেন, তা অশান্তি হতে শ্রেয়। কিন্তু কমন সেন্স থাকা আবশ্যক কিছু ব্যাপারে, যা আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। আপনার ব্যক্তিত্বকে জলাঞ্জলী দিয়ে কারো সাথে আপোষ করার মানে ইগো নিয়ন্ত্রণ নয়। বরং সময় ও পরিস্থিতিকে বোঝার চেষ্টা করুন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় নিন। প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পূর্বে পর্যাপ্ত ভাবুন। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান আপনিই করতে পারবেন। 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, February 16, 2020

যেদিন তুমিও বুঝতে শিখবে || মোঃ অলিউল্লাহ্

যেদিন তুমিও বুঝতে শিখবে

ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞাটা যে ভালো ভাবে শেখেনি, তার জন্য জীবনে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। যেকোন মানুষের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলা থেকে শুরু করে একমুহুর্তে অপরিচিতের সাথে ঘনিষ্ঠতা পাতিয়ে ফেলা, যেকোন অসাধ্য কাজ সাধন করার ক্ষেত্রেও তার কোন জুড়ি নেই। কিছু মানুষ তার মুখের উপর একগুচ্ছ অপমানজনক কথা শুনিয়ে দিলেও সেই ব্যক্তিটি মুচকি হেসে অন্য কথার প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য পাল্টে দিতে পারে। আবার কিছু মানুষ তার এমন গোবেচারা স্বভাবের জন্য তাকে খুব পছন্দও করেন। 

কিন্তু সমস্যা হলো ব্যক্তিত্ব বা ইগো বেশি হওয়া। কারণ একদিকে যেমন আমি কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না বা কারো করোণা চাইনা, তেমনি নিজের সামর্থের বাইরে গিয়ে কিছু করবার দুঃসাহস দেখাতে পারিনা। যদি সেটা পারতাম, তাহলেও বরং কিছু মানুষের,বিশেষ করে কাছের মানুষগুলোর মুখে বেশ বাহবা পেতাম। কিন্তু ওই যে বেহায়া স্বভাবের কিংবা অতিমাত্রায় আপোষজনক চরিত্রের ব্যক্তি হতে পারলাম না, সে কারণে হয়তো সাধ্যের উর্ধ্বে গিয়েও কারো মনে আনন্দের জোয়ার এনে দিতে পারি না।

“কথায় আছে, যে গরু দুধ দেয়, সে গরুর লাথি খাওয়া ও ভাল।” তবে সেটা আমার মানতে সমস্যা নেই, যখন আমি একান্তই মূর্খ্য, পরনির্ভশীল, চেষ্টাহীন ও বোধশক্তিহীন হতাম তখন। কিন্তু আমার জ্ঞান সামান্য হলেও আমি  যে মানুষের পাশ কাটিয়ে কথা বলার অর্থ, চোখের ইশারা আর ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির মানেটা বুঝি। তাই যারা দু’পয়সার সহযোগিতার নাম করে আমার গোষ্ঠী উদ্ধার করে দেবার মতো ভাব করে,তাদের সাথে যে আপোষ করতে একটু দ্বিধা হয় বটে।

সেজন্য আমি তোমাকে বারবার বোঝাতে চাই, এরা কারা। তুমি তবুও ভুলের জগতে বসবাস করো। কারণ তুমি দেখনি আপনজনের ভয়াবহতা। তুমি দেখনি স্বার্থের জন্য তারা কতটা বিপদজনক হতে পারে। তুমি দেখনি তারা তোমার অসহায়ত্বে কতটা সুযোগ সন্ধানী হতে পারে। একবার ভেবে দেখো, ছোটকাল হতে তাদের যতটা আপন ভেবে বড় হয়েছো, তার বিনিময়ে কতটা প্রাপ্তি মিলেছে তোমার ভাগ্যে। 

মানুষতো কুকুরকেও লালন-পালন করে। খাওয়ায়, থাকতে দেয়। বিনিময়ে কুকুর তাদের সামান্য নিরাপত্তা দেবার চেষ্টা করে। সেই হিসাব করলে তুমিও কি তাদের জন্য কিছু করনি? আর সেটা করে তুমি কতটা পেয়েছো তাদের কাছ থেকে? তুমি হয়তো ভাবছো অনেক কিছুই পেয়েছো, কিন্তু আমি বলবো কিছুই পাওনি। যা পেয়েছো, তা তোমাকে অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে। আবার সেটার জন্য বারবার স্মরণ করিয়েও দিয়েছে তোমায়, যে কতটা করছে তোমার জন্য তারা।

আসলে তুমি এখনো বাস্তবতা দেখো নি। আর যত দিন যাবে, তুমি ততবেশি আবেগপ্রবণ আর খামখেয়ালি হবে। কারণ তুমি এমন থাকতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করো। যাই হোক, আমি সেটা পারিনা। আমি পারি না, কারো মুখের কালো চাহনি সহ্য করতে। আমি পারিনা, অযাচিতভাবে কারো মনোরঞ্জন করতে। আমি পারিনা, কারো কাছে দায়বদ্ধ থাকতে এবং সারাজীবন তার দেওয়া গ্লানি বয়ে বেড়াতে। 

তবে তুমি বলবে, তাহলে কী তোমার কারোর সহযোগিতা দরকার নেই? তুমি কি সারাজীবন নিজের উপর নির্ভর করে চলতে পারবে? তুমি কি কখনো বিপদে পরবেনা, যখন তোমাকে কেউ সাহায্য করতে আসবে?

তোমার প্রশ্নের জবাবটা তোমার প্রশ্নেই আছে। শুধু তোমার বা তথাকথিত সেই সাহায্যার্থীর বোঝার ভুল আছে। সাহায্য করা বলতে কাউকে কিনে নেওয়া বা তাকে সারা জীবনের জন্য উদ্ধার করা বোঝায় না। যে প্রকৃত সাহায্যকারী সে কখনো সাহায্য করে নিজের ঢোল নিজে পিটায় না। বরং সে সংযমী হয়। যে প্রকৃত সাহায্যকারী সে কাউকে সাহায্য করতে পারলে তার মনের প্রশান্তি খোঁজে পায়। সে অন্যের ভাগ্য গড়ে দেবার থেকে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে। কারণ সে জানে, সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সেই সামর্থ্য দেয়না, যে অন্যের সহযোগিতা করবে।





সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, September 1, 2019

অবস্থান, মোঃ অলিউল্লাহ

অবস্থান

 মোঃ অলিউল্লাহ


সময়ের স্রোতে ভেসে যায় প্রাচীন-অর্বাচীন, বদলে যায় চিরচেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ, বিলুপ্ত হয়ে যায় টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাওয়া পৃথিবীর অসংখ্য প্রাণ। টিকে থাকার লড়াইয়ে যারা একটু বেশি এগিয়ে, তারাই সব থেকে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। বিলুপ্ত হওয়া পৃথিবীর সকল উপাদানের কথা শুধু পাঠ্য বই, যাদুঘর, উইকিপিডিয়া এবং কিছু নস্টালজিক মানুষের স্মৃতিতে ধারন করে।

বিদ্যমান অস্তিত্বের সকল প্রাণীই হয়তো আধুনিক। ইদানিং আধুনিক কথাটাও কেমন সেকেলি মনে হয়। এই শব্দটাতেও কেমন জড়িয়ে গেছে আদীমতা। প্রজন্মকেও মানুষ টপকে যেতে পারে, তবে পরবর্তীকালে নিজেকে কোন না কোন প্রজন্মের ভিতর করে আবদ্ধ। তানাহলে যে আইডেনটিটি ক্রাইসিসে বাধা পড়ে যাবে। কারণ পৃথিবীর সকল উপাদানই যে কোন না কোন স্থান, কাল, পাত্রবেধে সুনির্ধারিত।



ইতিহাসের পাতায় পাতায় সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও যুগের বিবর্তনের কথা  উল্লেখ রয়েছে। আমরা গতানুগতিক জীবনধারা ও অদ্যোপ্রান্ত বিবেচনা করলে, নিজেদের একটা সময়ে ফেলতে হয়। সময়ের দাবীতে আমরা আধুনিকতাকে হারিয়েছি নান্দনিকতায়। সেই অর্থে আমরা উত্তরাধুনিক কিংবা তাকেও অতিক্রম করার পথে।

তবে হিসাবটা একটু অন্যভাবে করলে দেখবো কিছু দিক থেকে আমরা আবার আদীমের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। যেমন আমাদের পোষাক পরিচ্ছেদ, প্রাচীনকালে গাছের ছাল ও পশুর চামড়া পরিধান করে মানুষ তাদের শরীরকে আবৃত করতো। সেই পোষাকের যে বৈশিষ্ট ছিলো সেটা ছিলো সময়োপযোগী। আমাদের বর্তমানের ফ্যাশন ডিজাইনাররা হয়তো সেই পথেই হাটছেন। সভ্য জাতির মধ্যে স্টাইল কিংবা ফ্যাশনেবল ডিজাইন উপহার দিতে গিয়ে এ যুগের নারী-পুরুষকে সাজাচ্ছেন অর্ধ-উলঙ্গ করে।

খাদ্যাভ্যাসেও আমরা কিছু দিক দিয়ে সেই দিকেই যাচ্ছি। প্রাচীনকালে বেঁচে থাকার জন্যে মানুষ বিভিন্ন পশুপাখি পুড়িয়ে খেতো। ইদানিং আমরা বারবিকিউ নামে পাখি ও মুরগি পুড়িয়ে খাওয়ার প্র্যাক্টিস করছি। যাক, মজা করেই দু’য়েকটা কথা বললাম। মজা দেখা এবং মজার করার মধ্যে একধরনের আনন্দ আছে।

সেদিন ইজি বাইকে করে বাজারে যাচ্ছিলাম। স্বাভাবিকভাবে ঐ ইজিবাইকে ছয়জন যাত্রী বসতে পারে। কিন্তু সেখানকার ড্রাইভাররা সবসময় আটজনকে নিয়ে জোরপূর্বক যাতায়াত করে। এতে সাধারণ মানুষের কি ভোগান্তি হলো, তা দেখার সময় নেই ওদের। সমাজকর্তাদেরও সে ব্যাপারে দায় নেই।

যাত্রীদের মধ্যে দুইজন দোকান্দার , চারজন খেটেখাওয়া কৃষক পর্যায়ের, একজনের পেশা চিহ্নিত করা গেল না। সবার মধ্যে একধরনের অস্বস্তিবোধ দেখতে পেলাম। সবার কথা ঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। যতদূর বুঝতে পারলাম, একজন বলল- ‘গাড়ির যেই অবস্তা, যেইকোনো সময় খালে পইড়াযাইবোগা।’

অন্যজন বলল,‘পইড়ে গেলে জানি ডাইন দিহে পড়ে, তাইলে শিশু কাহায় নিচে পড়বো। শিশু কাহার শইলে যেই শক্তি, গাড়ির নিচে পড়লেও কিছু অইতোনা।’
পাশে বসা দোকান্দার বলল- ‘হ ঠিক কইছস, শিশু কাহায় সত্তর বছরেও কি শক্তি গত্তরে। কিন্তু আড্ডি ছাড়া আর কিছু শইলে দেখা যায় না।’।
যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সে সব কথা শুনছে আর মুচকি হাসছে। কারণ সে জানে তার বয়স অনেক হয়েছে, শরীরে শক্তি বলতে আর বেশি নেই। তাই লোকে তাকে নিয়ে হেয়ালি করে।

মধ্য বয়সী সেই ভদ্র লোকটি বলে উঠলো,‘দুনিয়া পাল্ডাই গেছেগা। এহন আগের মতো আর মানুষের মইধ্যে মায়া নাই। কেউ মইরা গেলেও কারো কিচ্ছু আইয়ে যায়না। আগের দিনে কুত্তাগুলা মাইনসের গু খাইতো। এহন আর কুত্তা গু খায়না, কারন মাইনসে ঘুষ খায়, সুদ খায়, পারলে মাইনসেরে ধইরা মাইনসে খায়। আগে গরু মরলে হাজার হাজার হুগুন মাডিতে নাইম্মা আইতো, এহন আর হুগুন মাডিতে নামেনা। উপরে থাইক্কা মাইনসের তামসা দেহে। মরা গরুর গোসতও মাইনসে খাইয়া লায়, হুগুন আর কি খাইবো।’

কিছুটা অবাক হয়েই দেখলাম ওনাকে। পাল্টে যাওয়া পৃথিবীর প্রত্যক্ষদর্শী। আমার এক স্যার ছিলো, বাতেন স্যার। ওনি বলেছিলো, ‘আমরা এখন অনেক আধুনিক। ছোট বেলায় মা ডিম ভেজে দিতো। আমরা বলতাম, ভাজা। আরো আছে সিদ্ধ ও আধা সিদ্ধ ডিম। কিন্তু এখন আমরা ইংরেজদের মুখের থুথু ফেলার সাথে সাথে যে ইংরেজি ভাষা বের হতো, সেই কয়েকটা ভাষা শিখে সেইসব খাবারকে বলি ওমলেট, মামলেট ....। আমাদের দেশের  বিএ, এম এ পাশ করা ছেলেটা দশ হাজার টাকা বেতনে চাকরিতে ঢুকে। তাও আবার শতকরা দশজন। আর নব্বইজন বেকার। কিন্তু খেলার মাঠে যেই ছেলেটা কোনদিন স্কুলে যায়নি, কোন কাজ শিখে নি, সেই ছেলে বাম হাত ঘুরিয়ে একটা বল  করে আরেকজন ব্যাট ধরে পিটায়। ওদের আয় মাসে লাখ টাকার ওপরে।

আমাদের দেশেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রয়েছে ক্লাসিফিকেশন। আমরা মানুষের জীবদ্দশায় তাদের কয়েকটা শ্রেণিতে বিভক্ত করে থাকি। উচ্চবৃত্ত, মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত। আরো আছে উচ্চ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত। কিন্তু এই পৃথিবীর কিছু মানুষ আছে যারা জীবন যাপন করছে ঠিকই, কিন্তু সে আদৌ জানে না, সে আসলে কোন শ্রেণী বিলং করছে।


স্বাভাবিক শারিরীক গঠন নিয়ে যেসব মানুষ তাদের সচেষ্টা দ্বারা অর্থ আয় করে এবং সেইরূপে জীবন যাপন করে তাদের নিজস্ব একটা ব্যক্তি পরিচয় বা সমাজে একটা অবস্থান তৈরী হয়। কিন্তু যদি বলা হয়, একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কথা, বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধীসহ যারা বামুন কিংবা শারীরিকভাবে অস্বাভাবিক গঠনের তাদের জীবনের প্রতিটা দিন যে কতটা দুর্বিসহ আর প্রতিকূলতায় আবদ্ধ তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাদের বেঁচে থাকার অর্থটা হয়তো কোন ডিকশনারীতে পাওয়া যাবেনা।

তাহলে তারা কোন শ্রেণীতে পড়ে? আমাকে অনেক ভাবতে হবে। আপনাদের ভাবতে হবে কিনা জানিনা। আমরা যারা প্রতিনিয়ত আমাদের ছোট ছোট সমস্যাগুলো নিয়ে এত বেশী চিন্তিত, সেখানে তাদের সমস্যা নিয়ে তাদের অনুভূতি কি হতে পারে?

আমাদের দিনদিন তৈরী হচ্ছে বৈরী মনোভাব, প্রতিহিংসার অস্থিরতা, টিকে থাকার লড়াই, হারজিতের প্রতিযোগিতা আর বেড়ে চলছে নোংরা রাজনীতি ও অসুস্থ মানসিকতা।

আমাদের আতংক এখন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস কিংবা বন্যার পর মহামারি নয়। প্রাকৃতিক প্রকৃতি আমাদের ভীত করতে না পারলেও মনুষ্য প্রকৃতির নিয়ে আমরা মারাত্মক ভীত।

পৃথিবীতে এমন প্রাণী হয়তো দু’য়েকটা মিলবেনা যে প্রাণী সমগোত্রীয় শিশু প্রাণীর উপর জৈবিক চাহিদা কিংবা রিপুর তাড়নায় ঝাপিয়ে পড়েছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন পাশবিক ও নোংরা মানসিকতা দেখা যায় যে, সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকেও ধর্ষণ করতে ছাড় দেয় না। কোন গর্ভবর্তী নারীকেও কিছু নরপশু ধর্ষণ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ে।

সকল প্রাণীই কোন না কোন মাধ্যমে জীবন টিকিয়ে রাখে। তাদের মধ্যেও সামাজিক অবস্থান নিয়ে শ্রেণী বিভক্তি আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।মানুষের তথাকথিত ব্যক্তিত্ববোধের কাছে উচু-নিচু ভেদাভেদ আর শ্রেণী বৈষম্য খুবই সার্বজনিন।
এখানে কেউ যদি টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা করে আর তা যদি ক্ষমতাবলে গোপন রাখতে পারে, তাহলে তার সামাজিক মর্যাদা রয়ে যায় অক্ষুন্ন।

কিন্তু কয়েকটা বখাটে ছেলে জোর করে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করলে, তাকে বেছে নিতে হয় মৃত্যুর পথ কিংবা গৃহহীন হয়ে বাড়ি ছেড়ে দূরে গিয়ে থাকতে হয়। সেখানেও তার মুক্তি নেই, সুযোগের ব্যবহার করে সুশীল শ্রেণীর কিছু মানুষ তাকে বাধ্য করে বেশ্যা হিসাবে পরিণত হতে। সেখানে সারাজীবন তাকে বাচঁতে হয় মুখ লুকিয়ে, কোন রকম সামাজিক মর্যাদা না পেয়ে। তাকে কোন শ্রেণীতে রাখা যায় কি?

এ দেশের সকল পাগল ব্যক্তিরা কোন শ্রেণীর। যারা দিন-রাত উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবন যাপন করে। যারা জানেনা অতীত কি, বর্তমান কি আর ভবিষ্যত কি। যারা কালকের জন্য স্বপ্ন দেখার মানে বুঝে না। যারা জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি পার্থক্য বুঝেনা, তাদের কথা কী বলা যায়? অথচ এই জগৎ সংসারই কিনা তাদের এই অবস্থার জন্য দায়ী।

আধুনিকতার মোড়কে আমরা নিজেদের বেধে নিয়েছি ঠিকই, সত্যিকারের আধুনিক কি আমরা হতে পেরেছি? ডিজিটাল যুগের নানা রকম ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র আবিষ্কার করে এবং তা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানুষকেও একধরনের যন্ত্রে পরিণত করলো এই যান্ত্রিকতা। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন সকল যন্ত্র ও সামাজিক মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে আমাদের জীবনের সকল মূহুর্তকে। হাসি, কান্না, অভিমান ও অনুভূতির নানা অভিজ্ঞতা দ্বারা আমরা হয়ে ওঠেছি পন্য, আমরাই ক্রেতা আবার আমরাই বিক্রেতা। কত বৈচিত্র এই নান্দনিকতার!
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Saturday, March 30, 2019

এই আমাদের ভাল থাকা

এই আমাদের ভাল থাকা

             মোঃ অলিউল্লাহ্


বাংলা প্রবন্ধ - এই আমাদের ভাল থাকা, মোঃ অলিউল্লাহ্



ক্রমাণ্বয়ে এ শহরটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রায় নয় মিলিয়ন মানুষের বসবাস এ শহরে, যা দিনদিন এটি বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে। একটা মারাত্মক সংকট আমাদের তাড়া করছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে নানা রকম অসামঞ্জস্যতা ও অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার কারণে। যান্ত্রিকতার সাথে সাথে এখানকার মানুষগুলোও যন্ত্রের মতো পরিশ্রম করে, সকাল-সন্ধ্যা, দিনে-রাতে। প্রশ্ন কতটা নিরাপদে আছি আমরা?

সড়ক দূর্ঘটনা, ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়া, অগ্নিকান্ড, নানা রকম ভোগান্তি ছাড়াও রয়েছে, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কলহ এবং সংঘর্ষ। নিরাপত্তা নেই জেনেও আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলি এক ভয়াবহ বিপদের দিকে। 

কিছুদিন আগের একটি ভয়াবহ তান্ডবের কথা বলি। ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কয়েকটি বহুতল ভবন পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। প্রায় ৮১ জনের মৃত্যু আর অর্ধশতাধিক মানুষ হয়েছে মারাত্মকভাবে আহত। অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হলেও সত্যি যে, আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় তেরো ঘন্টা লেগে গিয়েছিল।

এই আমাদের ভাল থাকা, মোঃ অলিউল্লাহ্


এমন কিছু দৃশ্য চোখের সামনে আসে যা মর্মান্তিকতাকে পাশ কাটিয়ে আরো বেশি বিধ্বংসী মনে হয়। মানুষের দেহ পুড়ে কঙ্কালও ছাই হয়ে যায়। একটি বাচ্চাকে বাঁচাতে দুই যুবক তাকে জড়িয়ে ধরেছিল, কিন্তু মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি সেই শিশু। অথচ সেই জড়িয়ে ধরা অবস্থাটি ছিল দৃশ্যমান। অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে বাঁচাতে না পেরে স্বামীর সহমরণ।

কিছুদিন যেতে না যেতেই আরো একটি বিধ্বংসী দূর্ঘটনা ঘটে গেল ২৮ মার্চ ২০১৯ তারিখে। বনানী কামাল আতাতুর্ক সড়কের পাশে এফআর টাওয়ার ২২তলা ভবনে আগুন লেগে মর্মান্তিক মৃত্যুর পথে ঢলে পড়ে অনেক মানুষ। প্রাণের সাথে লড়াই করে অনেকে কোন রকমে ফিরতে পারলে দাবানল কেড়ে নেয় তাদের অঙ্গ। জীবন বাজি রেখে অনেকেই উদ্ধার করেছেন ভয়াবহ আতংককে উপেক্ষা করে।
প্রবন্ধ এই আমাদের ভাল থাকা


শতশত মানুষের চোখের সামনে কিভাবে দোযখের দাবানল জ্বলে ওঠে তা সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। দুইদিন পর অর্থাৎ ৩০ মার্চ ২০১৯ তারিখ শনিবার সকালে আরেক তান্ডব শুরু হয় ভোর পাচঁটায় গুলশান কাঁচাবাজারে। কোন ব্যক্তির হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও খেটে খাওয়া সাধারণ ব্যবসায়ীরা হয়েছেন নিঃশ্ব। কাঁচা বাজারের শতাধিক দোকানের জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এমনই সকল বিপদকে উপেক্ষা করে আমাদের শহুরে জীবন। ঢাকা শহরের ফুটপাতেও গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষ। রাস্তায় বেপোরোয়া গাড়ি চলাচলের জন্য প্রতিদিনই ঘটে বিভিন্ন দূর্ঘটনা। হাজারো রকমের সমস্যা জীর্ণশীর্ণ আমাদের এই শহুরে জীবন। তবুও আমাদের ভাল থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। আছি তো ভাল কোন রকম।

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

 বাংলা প্রবন্ধ - বিপন্ন সময়ের কথা

অন্য সকল কবিতা, গল্প ও উপন্যাস পড়তে ক্লিক করুনঃ 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Saturday, April 28, 2018

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও তাঁর শিল্পকর্ম

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও তাঁর শিল্পকর্মঃ

বাংলা সাহিত্যের বিশাল আকাশে তিনি উড়ে বেরিয়েছেন স্বাধীন পাখির মতো। নিজের মনের কথাগুলো এবং সমাজবাস্তবার প্রতিটা প্রতিচ্ছবি খুব সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখেছেন আর সেসবকে উপজীব্য করেছেন তাঁর লেখনিতে। তিনি আর কেউ নন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। যার পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয়, তিনি  এক অসামান্য কথাশিল্পি, ‍যিনি আপন নিষ্ঠা ও মনস্বতায় স্বতন্ত্র। প্রকট চেতনাপ্রবাহী প্রকরণিক উৎকর্ষতা ও কাল চৈতন্যানুগ বিষয়বস্তুর ঋদ্ধতার গুণে তাঁর শিল্পচর্চায় আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে আর চেতনায় আমাদের বিবেকবোধের জাগরণ ঘটে।

তাঁর তিনটি বিরলপ্রজ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছে আরোও সমৃদ্ধ। সেসব কর্ম বিরল প্রজ হলেও, আত্ম-আবিষ্কার স্পৃহা ও ধীসম্পন্নতার কারনে তা হয়ে ‍উঠেছে অতুলনীয়। এ তিনটি উপন্যাস হলো- ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪), ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। এসব উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নতুন আবিষ্কার ও সমাজ-ব্যক্তিসংলগ্নতা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা দখল করে রয়েছে। মানবীয় অস্তিত্বের ক্লানিহীন সাধনায় তিনি সর্বদা ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে। তিনি আবিষ্কার করতে চেয়েছেন যে, নিরস্তিত্ত্বে জীবন থাকতে পারেনা, আর তাই অাধাঁর পেরিয়ে আলোর পানে অস্তিত্বের অন্বেষনে সফল দায়িত্ববান হয়ে উঠাই তাঁর সাহিত্যে মৌল উপজীব্য।

একটা বিশেষ বস্তু থেকে সেই বস্তুর মর্মবাণীকে আবিষ্কার করাই তাঁর সাহিত্যের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। তিনি অন্বেষণ করেছেন তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে, খোঁজেছেন তাদের অবস্থান- ‘আমি’, ‘সে’, ‘ওরা’ এসব ব্যক্তি সত্ত্বা আর তাদের অস্তিত্বের অবস্থান থেকে। ব্যক্তিচেতনার পাশাপাশি তিনি দার্শনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সমাজচেতনা, বস্তুভেদী ও বস্ত অতিক্রমী হতে গিয়ে। তিনি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উভয় প্রান্তে তাঁর নায়কদের করেছেন বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত বহিরাগত, আবার উন্মুখ ও সমাজচ্যুত নয় এমন। কাহিনীগুলোতে শুরুর দিকে দেখা যায় বস্তুবাদ কিন্তু পরবর্তীতে তা ক্রমশই সত্যের অতলে ডুবে যেতে থাকে। তিনি বাস্তববাদী হয়েও আমরা তাকে তখন দেখতে পাই একজন অন্তর্বাস্তবাদী হিসাবে। 

তাঁর বর্ণিত কাহিনীগুলো শুরুতে যেমন সাবলীল ও সরলতায় মোড়ানো থাকে, পরবর্তীতে তা হয়ে ওঠে অতি বিশ্লেষণধর্মী। তবে যতদূর জানা যায় তাঁর এ অস্তিত্ববাদী মনোভাব তাঁকে প্রভাবিত করেছে বহুকাল প্যারিস প্রবাসের ফলে। তাঁর শিল্পকর্ম আরো বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন কেউ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা ধরনের বিষয়বস্তুর পরোখ করে।সমাজ মনস্কতা, জীবনঘনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে জীভন ও সমাজের যে চিত্ররূপ তাঁর শিল্পে চিত্রিত হয়েছে তাতে সামন্ত জীবনবাদের প্রতি, ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতি তীব্র ঘৃণা, তীক্ষ্ণ তিরস্কার উচ্চারিত হয়েছে। জীবনকে অবলোকন করা যে মাত্রাবোধ তাঁর মধ্যে বহমান তা তাঁর মৌলিক এবং স্বসময়ের প্রতি দার্শনিক মনোভাবের জন্ম দিয়েছে।

এদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনার ধারপ্রান্তে গিয়ে তিনি আধুনিক
ব্যক্তিমনের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এখানকার ধর্ম সম্পৃক্ত ব্যক্তি, পীর-দরবেশ-খাদেমদের চারিত্রিক অসঙ্গতি, তাদের ফ্রয়েডীয় বিচ্ছিন্নতা ও লিবিডো চেতনা উপভৌগিক মানসিকতার রূপকল্পে তিনি প্রবলভাবে সচেষ্ট ছিলেন। যদি আমরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, এখানে একদল ভাগ্য বিপর্যস্ত মানুষের সাথে একজন কপট ও চতুর ব্যক্তি ধর্মকে পুঁজি করে সামান্য কোরআনের জ্ঞানকে নিজ সার্থহাসিলে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে , সেসব সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণায় মেতে উঠেছে। ধর্মের প্রতি সেসময়ের মানুষের বিশেষ দূর্বলতা ও খোদাভীতির ফলেই মজিদের মতো ব্যক্তিরা মানুষের আবেগ আর অনুভূতির সাথে জোয়া খেলেছে, করেছে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল।

‘চাঁদের অমাবস্যা’যেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও চেতনাপ্রবাহে বৈশিষ্টমন্ডিত সেখানে শিল্পীর মনোযোগ কেড়েছে সমাজসচেতনতা। ব্যক্তি সমাজের বাইরে নয় এটাই তারঁ লক্ষ্যবস্তু আর সেকারণে ব্যক্তিসত্তা ও সমাজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও একই সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তিসত্তাটির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।যে গ্রামে উপন্যাসের ভিত্তিভূমি তার- বড়বাড়ি, স্কুলের শিক্ষক, পুলিশ- সবই যথেষ্টভাসে স্পষ্ট হয়ে উঠে। এখানে দেখা যায় ব্যক্তিসত্তার বহিঃপ্রকাশ ও ধারাবর্ণণার পশ্চাৎ জমিনে সমাজ সত্তাকে সচেতনভাবে সক্রিয় করে রেখেছেন। এখানে আমরা দেখি কিভাবে ধর্মের প্রতি বিদ্রুপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীকে পরোক্ষরূপে তুলে ধরা হয়েছে।

লেখকের সমাজসচেতনতার অন্যতম প্রয়াস ফুটে উঠে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসে। এখানে দেখানো হয় মুস্তফার অস্তিত্ব ও তার নৈতিক অপর্যাপ্ততা, অধঃপতন হয় একটি পরিবারের, পিতার নিঃসঙ্কোচ পশুতে পরিণত হওয়া এবং একটি গ্রামের লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন। এখানে আমরা ঘটনা গুলোকে আবিষ্কার করি অন্য এক অনুঘটনার শর্ত হিসেবে, কর্ম যেখানে কারণের শর্ত, একটি টার্নিং পয়েন্টের পর অন্য এক টার্নিং পয়েন্ট। যা অনেকটা অতিনাটকীয় মূর্তিধারণ করে। প্রত্যেকটি চরিত্রই যেখানে স্বাধীনভাবে নিজ আকাশে উড়ে বেড়ায়। 

চরিত্র নির্মাণ ও কাহিনী রূপায়ণের ক্ষেত্রে তিনি যে কতটা যত্নশীল ছিলেন তা কেবল স্পষ্ট হয় তাঁর সাহিত্যকর্মে সতর্ক ও গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে। তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু, ঘটনাপ্রবাহ, প্রেক্ষাপট, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবই যেন আপন মৃত্তিকা সংলগ্ন। তিনি পরম যত্নে সমাজ-বাস্তবতা ও ব্যক্তির মধ্যকার সময়ের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাকে নিজ হাতে থরেবিথরে সাজিয়ে একটি আল্টিমেট রেজাল্ট হিসাবে পাঠকের সামনে আয়নার মতো তুলে ধরেন।



সাহিত্য সমালোচনায় পঠিত বই সমূহ এবং তথ্যসূত্র/তথ্যের উৎসঃ
উইকিপিডিয়া, ‘লালসালু’ উপন্যাস, ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাস, ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাস, বিভিন্ন সমালোচিত বই ও নবদূত গাইড।






সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, April 13, 2017

তিক্ত অনুভূতি

তিক্ত অনুভূতি
অস্তিত্বের সংকট নাকি আত্মবিশ্বাসের? নাকি জীবনের আসল মানে খোঁজতে গিয়ে হঠাৎ সকল রাগ ও বিপ্লবী বা প্রতিবাদী মনোভাবের পরাজয়ের গ্লানি? নাকি নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো? আমি জানি না, কিছুই জানি না আমি। কখনোই নিজের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে প্রচন্ড রকমের আমোদে গা ভাসায়না কেউ, তবে তাদের চলতি পথটাও কেবল থমকে যায়না। যেমন আমার হলো।

বিবেকবোধ, বিবেচনা আর প্রতিবাদী মনোভাবের পারস্পরিক সংঘর্ষে প্রতিটাই হয়েছে চূর্ণবিচূর্ণ। পরে আছে ছোট অভিমানের টুকরো। তবে এরাও আবার আধ-মরা। বাঁচা-মরার মাঝামাঝি টিকে থাকার লড়াইটাই হয়তো সর্বশেষ অভিপ্রায় হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এই টিকে থাকাটা যেন ভয়ানক রূপ না নেয়, আর তাই যত চেতনার জলাঞ্জলি, রক্তকণিকাগুলো হিম বরফের ন্যায় স্তম্ভিত হবার পালা।

এবার আর জেগে ওঠবেনা, তাই আর অভিজাতশ্রেণীর, ক্ষমতাসীন বা অত্যাচারীর কোন সঙ্কা থাকলোনা। ন্যায়ের আর অধিকার আদায়ের জন্য কোন মিছিলের আভাস রইলোনা। এবার ক্ষিপ্ত-বাকরোদ্ধ টগবগ করা রক্তগুলোর তাপমাত্রা বাড়বেনা, মাথা হতে জেদের অতিমাত্রায় ঘাম ঝরবেনা। তবে আজ তোমাদের একেবারেই স্বস্তি হলো। নৈরাজ্য, অত্যাচার, অবিচার, কপটতা আর লালসার জোয়ার বয়ে যাক জগৎময়। হস্তীর পদতলে ক্ষুদ্র প্রাণীরা আজ পিশে যাক নিমেষেই। তাতে কোমায় থাকা অনুভূতিগুলোর কিছুটা হলেও যাবে কিংবা আসবেনা। নিরবতার পথ চলার শুরু হলো তবে এখান থেকেই।।।।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, April 4, 2017

Silent Sorrows

Silent Sorrows

I saw a lot of flowers in a garden, so charming and pleasing to enjoy the natural artistic scenery. There were various types of flower and I look at all species. Butterflies are doing there common duty along with the bees. They make it over interesting and definitely outstanding.

Instead of flower, nothing can be shown more delightful and peaceful but the thing is different when we neglect some things or we really don't know the significance or we can not make it valuable. Human being, is the greatest creature of the earth, pointed by Almighty Allah. Perhaps, the designation may be the ultimate, if we could make it properly use. Unfortunately we are unable to think about the significance of the designation, rather than we concern more about the designation of our present state or situation. 

On the other hand flowers remain same as their quality and their common characteristics. I don't emphasis on the prestigious issue of human being, but as human we should try to be peaceful with a perfect or suitable beautiful mind. God, bless us to be more conscious about our original characteristic. (Oliullah)
      
সম্পূর্ণ পড়ুন...