জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
(৩য় পর্ব)
জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?
মোঃ অলিউল্লাহ্
মানুষ মাত্রই অজানাকে জানার কৌতুহল বা আগ্রহ। মানুষের জানার এই কৌতুহল থেকেই শেখার মানসিকতা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃত্তি আছে, তা হলো বিনা লাভে কোন কাজ করতে না চাওয়া। অর্থাৎ কোন কাজ করার পর সেই কাজের বিনিময়ে কোন সুবিধা, স্বার্থ বা লাভ না থাকলে সেই কাজ করার প্রয়োজনবোধ হয়না। কিন্তু অন্য সকল কাজের থেকে পড়াশোনা করা বা জ্ঞানার্জন করার কাজটা স্বভাবতই একটু কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ।
লেখাপড়া করার জন্য প্রয়োজন কোন এক প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুলে-মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া। শূন্য জ্ঞানের স্মৃতিতে তীলে তীলে সঞ্চয় করা জ্ঞানকে ধারণ করে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর একজন শিক্ষিত হতে পারে। যেহুতু মানবজীবন ত্রুটিপূর্ণ বা সমস্যাগ্রস্থ, তাই দীর্ঘদিন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বহু প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এসকল প্রতিকূলতা এড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই পারে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে। তাই আমরা আলোচনা করবো কেনো শিক্ষা গ্রহণ করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে এবং কোন কোন উপায় অবলম্বন করলে সহজেই এসব প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
জ্ঞানার্জনের অন্তরায়সমূহঃ
পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
১. বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবঃ একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় যদি সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ কম হয়, সেখানে সকল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ খুব কম হয়। তাই অনেকের ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার সুযোগ পায়না।
২. অভিবাবকদের সচেতনতার অভাবঃ আমাদের দেশের অভিবাবকদের শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে ধারণার অভাব ও সচেতনতার অভাবে তাদের সন্তানকে শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করতে পারেনা। জীবনযাত্রায় শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে অভিবাবকগণ তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেখান না। অধিকাংশ অভিবাবকেরই ধারণা শিক্ষিত সন্তানরা পিতা-মাতার প্রতি যত্নবান কম হয় এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনার অভাবে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না।
৩. দারিদ্রতাঃ দারিদ্রতা আমাদের দেশের একটি অন্যতম অন্তরায়। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। পরিবারের ভরণপোষন ও সকল চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষেরা সন্তানকে পড়াশোনা করানোর কথা কল্পনাও করতে পারেন না। কারন এদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বই-পুস্তক ও শিক্ষা সরঞ্জামের মূল্য অধিক হওয়াতে অভিবাবকদের আয়ের তুলনায় বাড়তি হিসাব করতে হয়, আর সেজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে।
৪. মেধা মূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাবঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় উপযুক্ত শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে পারেনা। এমনকি কিছু শিক্ষার্থী কেবল নিবিড় যত্নের অভাবে পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়, ফলে তারা অল্প বয়সেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়ে।
৫. অনাধুনিক মনোভাবঃ বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশও এখন তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে আধুনিকতার দাবিদার। কিন্তু সেই প্রযুক্তির অপব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক বিষয় বিবেচনার অভাবে তারা বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আধুনিক মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেশীর ভাগ শিক্ষকই আইটি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় অনগ্রসর, তাই তারা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে পারছেনা। আর তাই অল্পকিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা খুব দূরে যেতে পারছেনা।
পড়ের অংশ পড়তে ক্লিক করুন:
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment