Thursday, September 5, 2019

বাংলা নাটক_ ব্যবহার || মোঃ অলিউল্লাহ্

ব্যবহার
মোঃ অলিউল্লাহ্



[প্রথম অঙ্ক- দৃশ্য এক]


মামা জুতাটা সেলাই করে দাও তো।
কেন আপনার মায়ের আপন ভাই নেই?
আছে। কিন্তু কেন?
তাহলে কি পৃথিবীতে নেই?
হ্যা। পৃথিবীতেই আছে। কেন বলতো?
মামা আছে। পৃথিবীতেও আছে। তো আমাকে এত মামা ডাকতে স্বাদ হলো কেন? আমি টাকার জন্য জুতা সেলাই করি, মামা ডাকেন-চাচা ডাকেন আর ফুফা ডাকেন টাকা ছাড়া কাজ করবো না।

এই তুমি কি ঢাকায় নতুন এসেছো? আর এত বেশি কথা বল কেন? আমি কি তোমায় বলেছি আমি টাকা দেব না?
তো টাকা-ই যদি দিবেন মামা ডাকার কি দরকার? বেশি কথা আমরা কইলে দোষ। নেতারা যখন মঞ্চে ওইঠা মিথ্যা মিথ্যা বক্তিতা দেয়। মানুষকে উস্কানি দেয় আর দেশে যত খারাপ কাজ আছে ওদের লোক দিয়া করাইয়া নেয়,ওইগুলা দোষের কিছুনা।

এই দাও আমার জুতা দাও। তোমাকে আমার জুতা সেলাই করতে হবে না।
আরে ঠিক আছে কইরা দিতাছি। কিযে ভাব দেখান আপনেরা! পারেন আমাগো সাথেই। কোন ভদ্রলোকের সাথে তো পারেন না এমন করতে।

আমি রাসেদ। মায়ের হোটেলের একমাত্র খরিদ্দার। বাবা পাঁচ বছর আগেই হোটেল চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে, যে দুনিয়া চালায় তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেছেন। এরপর থেকে হোটেলের দায়িত্ব পরে মায়ের ওপর। মা বেশ ভালই চালাচ্ছে। আমার কোন টাকা লাগে না। প্রতিদিন অনেক ভাল ভাল খাবার খেতে দেন আর খাবারের পর কোল ড্রিংকস হিসেবে গালাগাল দেন। সকালে বের হয়ে ছিলাম মায়ের আসির্বাদ নিয়ে, চাকরি খুজবো বলে। তখনও খেয়ে বের হয়েছিলাম, খাবার নয়; লাথি। সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলাম আর জিমের গাইড ভেবে পাঞ্চ খেয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই দেখি মা লাথি মেরে আমায় ঘুম ভাঙাচ্ছে। এটাই আমার প্রত্যেকদিনের আসির্বাদ।

[চলুন দেখে আসি-

(মায়ের পার্ট- (ছেলে ঘুমুচ্ছে)
রাসেদ, ও রাসেদ ঘুম থেকে ওঠবিনা। কত বেলা হয়েছে তার কোন খবর কি আছে? বলদের বাচ্চা বলদ, বলদের মতো শুধু ঘুমাবে। (থুক্কু এটা কি বললাম। তা কি সম্ভব?)
গেট আপ, গেট আপ। অনেক বেলা হয়ে গেছে।

ছেলে- (ওঠে বসে চোখ মুচরাচ্ছে। তারপর আবার শুয়ে পরলো।) নাহ আরেকটু ঘুমাই।
মা- (রেগে) বুঝছি তোরে লাথি মাইরা বাপের নাম না ভুলাতে পারলে তুই ওঠবিনা। (নিচু স্বরে- ওহ বাপের নাম ভুলে গেলে লোকে কি বলবে? থাক বাপের নাম ভুলতে হবে না।)

ছেলে- (শুয়ে) মা, বাবাকে তোমার ইদানিং পছন্দ হচ্ছে না?
মা- (নিচু স্বরে) কেন বলতো?
ছেলে- (হাসির ছলে) না মানে, কথায় কথায় তুমি বলো আমার বাপের নাম ভুলিয়ে দিবে। আচ্ছা তোমার কি কাউকে পছন্দ, আই মিন তুমি কি কারো প্রেমে পড়েছো?
মা- (রেগে) ওরে বদের বাচ্ছা। (একথা বলেই লাথি)


[দৃশ্য-দুই]

এক অফিসে গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার এক বন্ধুও সেখানটার কেন্ডিডেট। বন্ধু হলেও সে কোনদিনই আমার ভাল চাইত না। আমায় দেখেই তার চোখ কপালে উঠার চেষ্টা করল। তার নাম গালিব। তবে আমরা সবাই গালি বলেই ডাকি। তবে গালি বলে অন্যদের কাছে পরিচয় দিতে দিতে অনেকে আবার মিসগাইড হয়ে ওকে নানান ভাবে গালমন্দ করে।

দেখুন তাহলে

ইমরান- এই সালা,ভার্সিটি যাবি না? (গালিব চুপ) ওই বলদ। ওই ভোদাই। আমার কথা শুনিস না?
গালিব- (রেগে গিয়ে ) ওই তোরা আমায় সবসময় গালি দিস কেন?
ইমরান- (উত্তরে বলে) আরে সবাই তো জানে তোর নাম গালি। তাই আমরা গালি দেই।
আসলে ওর এই অবস্থার জন্য আমিই বেশি দায়ী। কারণ এই কথাটা আমিই ছড়িয়েছি। আর একারণেই ও আমায় সহ্য করতে পারে না। তো ওকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকলো। সে ভাল ইন্টারভিউ দিল এবং ওর চাকরি হয়ে যাওয়ার পসিবিলিটি নব্বইভাগ।

 [ইন্টারভিউ বোর্ড (জাকারিয়া,গিয়াস, একজন মেয়ে)- ওকে ইউ আর সো স্মার্ট এন্ড  স্কিল্ড। সো ইউ আর হায়ার্ড।ইউ ক্যান জয়েন এট আওয়ার কোম্পানী।]

তারপরেই আমার ডাক পড়লো। আমি ভিতরে গেলাম।
(ইন্টারভিউ বোর্ড এ) বসতে বলল না, কিন্তু আমি এত ভদ্রতা না দেখিয়ে বসে গেলাম।
(ইন্টারভিউ বোর্ড এ) আমায় জিজ্ঞাসা করলো- কিছু বলেন।
আমি বললাম- কিছু।

ওনারা আমার কথা বুঝল না, বলল হ্যা কিছু।
আমি আবারো বললাম- কিছু।
কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে একজন বলল- হ্যা । কিছু বলেন।
আমি তখন একটু জোরেই উত্তর দিলাম- বললাম তো কিছু।

তখন আরেকজন বলল- এক্সকিউজ মি, আপনাকে বলেছি আপনার সম্পর্কে কিছু বলতে। এবার বুঝতে পেরেছেন?

আমি কিছুটা থতমত হয়ে বললাম, আমি রাসেদ। আমার বাবার নাম অমুক চৌধুরী। আমি কইয়া যা মডার্ন ইউনিভারসিটি থেকে এমবিএ কমপ্লিট করেছি।

(ইন্টারভিউ বোর্ড ) একভদ্রলোক আমায় থামিয়ে দিয়ে বললেন-‘আপনি যা বলেছেন, তা আমরা সিভিতে দেখেছি। নতুন কিছু বলেন।

আমি (মনে মনে নিচু সুরে বললাম), সালা সিভিতে দেখলে আবার প্রশ্ন করতে হয় নাকি। তারপর বললাম- নতুন কি বলবো। আমার সম্পর্কে সবকিছুই তো কোথাও না কোথাও বলেছি। নতুন কিছু নাই । আর যদি পরে খুঁজে পাই তাহলে জানাবো।

(ইন্টারভিউ বোর্ড ) আমায় তখন বললো- আমরাও আপনাকে জানাবো চাকরির ব্যাপারে এবার আসুন।
আমি জানি আমার চাকরি হবে না। তাই আমার বন্ধু চাকরি পেয়ে যাবে এটাতো হতে পারে না।
আমি বললাম, স্যার আরেকটা কথা ছিলো।

(ইন্টারভিউ বোর্ড ) কি কথা?
আমার আগে একটা ছেলে এসেছিল, নাম গালিব?
(ইন্টারভিউ বোর্ড)- হ্যা, এসেছিল। কিন্তু কেন?

স্যার, ও আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়েছি। আমার ভিতরে প্রবেশের আগে গালিব আমায় বলল আমি যেন আপনাদের তার সম্পর্কে অনেক ভাল কিছু বলি। তাকে যেন চাকরিটা দিতে বলি। আচ্ছা আপনারাই বলেন আমি কি ওর চাকরির জন্য কিছু করতে পারি বলেন? এই যে আমি একটা ভাল ইন্টারভিউ দিলাম।

ও যদি এইভাবে দিতে পারতো তাহলে তো ওর চাকরিটা হয়ে যেত। বেচারা।
সবাই খুব বিরক্ত হলো ওর কারণে। দুজনেরই চাকরিটা হলো না।


[দ্বিতীয় অঙ্ক- দৃশ্য এক]

ইন্টারভিউ শেষে আমি এক পার্কে বসেছিলাম, দেখা হলো এক ব্যক্তির সাথে তার নাম সোহাগ।
সোহাগ- (হাসি মুখ করে) ভাই আপনার নাকি মন খারাপ?
রাসেদ- আপনাকে কে বলল?
সোহাগ- না আপনি নাকি প্রেমে ব্যর্থ?
রাসেদ- আরে আজব তো, আপনার কি কোন সমস্যা আছে?
সোহাগ- আপনার নাকি অল্পতেই অনেক গরম হয়ে যায়?
রাসেদ- মানে?

সোহাগ- না, মানে আপনার নাকি অল্পতেই খুব মাথা গরম হয়ে যায়?
রাসেদ- দেখুন, এসব বাজে কথা না বলে, আপনার মতলব কি বলেন তো?
সোহাগ- আমার মতলব থানা। (রাসেদের দিকে তাকিয়ে। রাসেদ অবাক হয়ে) বুঝলেন নাতো? মানে আমার বাড়ি,চাঁদপুর । মতলব থানা।
রাসেদ- হ্যা, তো আমি কি করবো?

সোহাগ- না না, আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনার সাথে একটু গল্প করতে চাই।
রাসেদ- ও আচ্ছা, নিশ্চয়ই অবসর সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য আমাকে ব্যবহার করছেন?
সোহাগ- ব্যবহার?

রাসেদ- ওহ ,ব্যবহার কি বুঝলেন না? যেমন ধরেন, রাজনীতিতে নেতারা সাধারন মানুষকে ব্যবহার করে। কর্মস্থানে উচু পদের লোকেরা নিচুপদের লোকদের ব্যবহার করে। বড় দেশ ছোট দেশকে সুযোগে ব্যবহার করে। একবন্ধু কোন প্রয়োজনে অন্য বন্ধুকে ব্যবহার করে। গার্ল ফ্রেন্ড উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বয়ফ্রেন্ড কে ব্যবহার করে। কোন কোন বয়ফ্রেন্ড আবার সুপ্রিয় কথা বলে, গালফ্রেন্ডকে পটিয়ে জৈবিক ক্রিয়া সাধনের জন্য মেয়েটিকে ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সকল মানুষ কোন না কোন ভাবে অন্যদের ব্যবহার করছে।

তবে জিনিস পত্র ব্যবহারে বিষয়টা তো আছেই। মজার ব্যাপার কি জানেন, কাউকে ব্যবহার হয়ে গেলে না, পরে আর তার কথা কারো মনে থাকে না। আর এটাই বড় তিক্ত ঘটনা।




------সমাপ্ত-------

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment