Tuesday, October 20, 2020

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || মহেন্দ্র চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের আলোচিত চরিত্রসমূহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবং বিশ্লেষণাত্মক বৈশিষ্টসমূহ তুলে ধরা হলো। 

‘চোখের বালি’ উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি। নিম্নে এসব চরিত্রের পুঙ্খানোপুঙ্খ আলোচনা করা হলো।

  মহেন্দ্র  

মহেন্দ্র সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। মহেন্দ্র শৈশবেই তার বাবাকে হারিয়েছে। তার মা রাজলক্ষী। আর দশজন মাকে যেরূপ সম্বোধন কিংবা সম্মান করে, মহিনের ব্যবহার তেমন ছিল না। সে বাইশ বছর বয়সে এমএ পাশ করে ডাক্তারি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। আরম্বরপূর্ণ জীবনযাপন ও স্বেচ্ছাচারিত তার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলেও উপন্যাসের শুরুর দিকে সে তার মাকে ছাড়া কোন কিছুই করতে পারতো না। অর্থাৎ খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মায়ের আচলের নীচে থাকায় অভ্যস্ত।

রাজলক্ষী ও হরিমতি শৈশবের বান্ধবী ও একগ্রামের মেয়ে। হরিমতির কথায় রাজলক্ষী যখন মহিনকে তার বিধবা মেয়ে বিনোদনীকে বিয়ে করতে বলে তখন সে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। মাকে খুশি করার জন্য কোন রকম বলে দেয় যে, বিয়ে করবে। পরে আবার ইতস্তত করে বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে তার মা বিনোদিনীর মাকে পাকা কথা দিলেও পরে না বলতে হয়।

বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।” শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে।


মহেন্দ্রের কাকী অন্নপূর্ণাকে সে যারপরনাই ভালোবাসে। কিন্তু অন্নপূর্ণা তার বোনের মেয়ে আশালতাকে বিয়ে করতে বললে, সে নিজে না করতে পারবেনা তাই বিহারীর জন্য দেখতে যেতে রাজি হয়। অন্যদিকে বিহারীও অন্নপূর্ণাকে দেবীর মতো ভক্তি ও অনেক শ্রদ্ধা করে। আর সেজন্য অন্নপূর্ণাকে সে না বলতে পারে না। মহেন্দ্র অনেক সাজসজ্জা করে বিহারীকে নিয়ে কন্যা দেখতে বের হয়।


কন্যার জেঠা অনুকূল বাবু তার তিনতলা বাড়ি সুসজ্জিত করে রেখেছেন। আশাকে দেখার পর বিহারীর উপর জোরপূর্বক চাপানো সিদ্ধান্ত ভুলে গিয়ে বিহারিকে বলে মহিন আশাকে পছন্দ করেছে। ওদিকে বিহারীরও আশাকে ভালো লেগেছে, কিন্তু মহেন্দ্রের ভাব বুঝতে পেরে সে তাকেই বিয়ে করতে বলে। মহেন্দ্র তার মাকে আশার কথা বলায়, রাজলক্ষী মনোক্ষুন্ন হয় এবং অন্নপূর্ণার প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে। অথচ অন্নপূর্ণা এর কিছুই জানেনা। পরে মহিনের জেদের কাছে হার মেনে মা তাকে বিয়ে করাতে রাজি হয়।


পরে বিহারী অন্নপূর্ণাকে অনুরোধ করলে সে তার বোনঝির সাথে মহিনের বিয়ে দিতে রাজি হয়। অন্নপূর্ণা আশার জন্য বিহারীকে পছন্দ করলেও মহিনের জেদের কারনে আশার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মহিন নববধুর প্রতি খুবই অনুরাগী তাকে ছাড়া যেনো এক বেলাও চলে না। তার কিছু কিছু বারাবারিতে তা মা খুবই বিরক্ত। 

ডাক্তার হবার যে ইচ্ছা পোষন করেছিলো তা ধীরে ধীরে শেষ হতে চলল। মহিনের ডাক্তারি ছেড়ে স্ত্রীকে পড়াশোনা করানো নতুন দায়িত্ব হয়ে ওঠল। অবশ্য সেসব বেশিদিন চলল না, স্বামী-স্ত্রী সোহাগ, মান-অভিমান ও বিবাহিত জীবনের উপর শুরু হতে চলল নতুন ঘটনা।


মহিনের মা তার জন্মভূমি যাওয়ার পর কিছুকাল অবস্থান করে সেখানে বিনোদিনীর আদর যত্নে খুবই আনন্দিত। বিহারে তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে বিনোদিনীকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। যেই বিনোদিনীকে একদিন মহিন ও বিহারী অবহেলা করে বিয়ে করতে চায়নি, তাকে দেখে দু’জনেরই চরিত্রের চোখ কপালে উঠেছে। 


বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকলপ্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে।

যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে এভাবে সে তার স্বামীকে বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। 

মহিন চরিত্রটি সর্বদাই দুটানায় ছিলো। তার চরিত্রে সুশিক্ষিতের আধিক্য থাকলেও নিজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় চরিত্রের দুর্বল দিক হিসাবে ফুটে ওঠে। বিহারি তার খুব কাছের বন্ধু হলেও সে নিজ কামনা-বাসনা পূরণ করতে তাকেও ঠকাতে দ্বিধা করেনি। যেই বিনোদিনীকে প্রথমে অবহেলাবসত বিয়ে করতে রাজি হয়নি, তার ছলনায় পরেই শেষ পর্যন্ত তার সংসার ভাঙ্গে। পরিণতিতে সে নিজের স্ত্রীকে যেমন হারায়, তেমনি বিনোদিনীকেও পায়না। 


চরিত্রের উভয় সংকট ও মানসিক দুর্বলতা প্রথমত মায়ের সাথে দূরত্ব ও অযত্নের পরিচয় দেয়। প্রিয় স্ত্রীকে হারায় ও বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়। সমগ্র উপন্যাস জুরে যে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল মহেন্দ্র, তার পরিণতি হয়েছে খুব করুণ।

----------------------------------------------------

* বিনোদিনী চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র






লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ ‍উপন্যাস

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment