Sunday, April 29, 2018

যা কিছু আজব, স্বপ্নেই তা সম্ভব

যা কিছু আজব, স্বপ্নেই তা সম্ভব

কি মনে হচ্ছে? স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলতে যাচ্ছি? আসলে তা নয়। আমার গল্পটি স্বপ্ন দেখার বিচিত্রতা নিয়ে। আর এ গল্পের বিশেষ চরিত্র আমি, আর আমার স্বপ্নে পরিচয় হওয়া দুই বন্ধু অর্ক আর নির্মলা।

প্রায় প্রতিরাতেই তো আমরা কিছু না কিছু স্বপ্নে দেখি। বিঃদ্রঃ আমার এক বন্ধুকে ঠিক এই কথাটাই বলতে গেলাম। সালা ভুল ধরাতে খুব এক্সপার্ট আর সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক কিছু মোটেই ওর সহ্য হয় না। কথাটা বলার সাথে সাথেই আমায় থামিয়ে দিয়ে বলল- ‘প্রায় প্রতিরাতে তুই ঘুমাতে যাস? এই ডাহা মিথ্যেটাও আমায় বিশ্বাস করতে হবে?’ 

Sorry কিছু মনে করবেন না। আসলে আমার বন্ধুর কথা সত্যি, প্রায় প্রতিরাতে আমার ঘুম হয়না। তবে এটা ঠিক, প্রতিরাতে ঘুম না হলেও, রাতের বদলে দিনে কিন্তু ঠিকই ঘুম হয়। আর সেজন্য আপনিও হয়তো প্রশ্ন করে বসবেন, কেন স্বপ্ন কি দিনের ঘুমে আসেনা। সে কথাই বলছি।টানা কিছু ছুটির দিন পেলাম আর রীতিমতো ঘুমাতে শুরু করলাম। গার্ডেনিং, পাখিপোষা, অ্যাকুরিয়ামে মাছদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ঘুমানোও আমার একটা শখের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

কি আর করার। তো যা বলছিলাম, আমি এক আলো-বাতাসে ঘেরা নির্জন বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি নিজে থেকে বুঝতে না পারলেও আমার মনে হচ্ছিল কি যেন একটা বড় বিপদ। আমার সাথে অপরিচিত একটা ছেলে। আমাকে বলল- ‘তাড়াতাড়ি চলো। ট্রেন টা ছেড়ে দিবে। ট্রেন ছেড়ে দিলে আমরা ঠিক সময়ে যেতে পারবোনা।’ আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না, কোথায় যাচ্ছি আমরা।

কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম, বিশাল এক পাহাড়ের কাছে গিয়ে আমরা পৌছলাম। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড়ের নিচ থেকে বিশাল গাছ গুলোকে মনে হচ্ছে ছোট বনসাই এর মতো। একটি মেয়ে, সেও আমার অপরিচিত, তার নামই নির্মলা। এসে আমার পাশে থাকা ছেলেটিকে বলল- ‘তোমরা এসে গেছো? খুব ভাল করেছো। এখন আমরা পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে মেঘেদের সাথে খেলা করবো। সত্যি বলছি, আমি যেন স্বপ্নেই আরেক স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। এমনিতেই প্রকৃতির প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা। তারপর আবার কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে পর্বতারোহণ। ভাবতেই ভাল লাগছিলো।

মেঘেদের গায়ে মেখে আমরা পর্বতচূড়ায় আরোহণ করলাম ঠিকই। কিন্তু ওঠার পর দেখলাম অবাক কাণ্ড। যে পথ বেয়ে আমরা ওঠলাম, সেরকম কোন পথই সেখানে নেই। আর প্রায় এত উচুঁ থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামতে গেলে, আর যাই হোক (বাকি অংশ না বলা থাক)। তবে সেই মূহুর্তে আমাদের মধ্যে এই ভাবনা মোটেও ছিলনা যে আমরা কিভাবে নিচে যাবো। বরং হুট করেই দেখলাম, অর্ক ওপরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে উড়তে শুরু করলো। নির্মলা আমায় বলল- ‘আমরা কিন্তু আজ উড়ে উড়ে অনেক দূর যাবো। তুমি কি ভয় পাচ্ছো?’ আমি একটু গলা ঝেড়ে নিয়ে বললাম। নিশ্চয়ই মজা করছো আমার সাথে তাই না? আমি আবার উড়বো কি করে। সে বলল- ‘আরে বোকা, এই পাহাড়ে ওঠতে পারলে সবাই উড়তে পারে। কিন্তু সবাই এই পাহাড়ে ওঠতে পারে না।আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা এখানে ওঠতে পেরেছি। চলো চলো, রাত হয়ে গেলে আকাশে উড়ে পৃথিবীর কিছু দেখতে পাবো না।’

একথা বলে সে, উড়ে গেলো। আমি বারবার ইতস্তত করছি। ওরা মনে হয় যাদু জানে। কিন্তু আমি যদি উড়তে যাই, যদি নিচের দিকে পড়ে যাই? পড়ে ভাবলাম, যা-ই হোক একবার উড়ার চেষ্টা করে দেখি।দেখলাম আমি খুব স্বাচ্ছন্দে উড়তে পারছি। আমার আনন্দ কে দেখে। আমরা তিনজন উড়ে উড়ে পৃথিবীর সব কিছু দেখছি। মাঝে মাঝে দু’য়েকটা পাখিও আমাদের সঙ্গে আমোদে সঙ্গী হচ্ছে। কিছু দূর উড়ার পর ভিন্ন দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আকাশে দেখা মিলল, একটি রঙ ধনুর। রঙ ধনুর রঙ মিলিয়ে যাবার আগেই একটি বড় লেখা চোখে পড়লো। সেখানে লেখা আছে, আপনি লেভেল ফাইভ অতিক্রম করতে বিলম্ব করেছেন। আপনার বন্ধুরা সফল ভাবে অতিক্রম করেছে, তারা আরো কিছু মহাদেশ ঘোরে দেখতে পারবে। কিন্তু আপনাকে এখান থেকে ফিরে যেতে হবে।

আমি বিষণ কষ্ট পেলাম। হাওমাও করে কাঁদতে শুরু করলাম ওদের জন্য। ওরা যে লাইন অতিক্রম করেছে, ওপার থেকে আমার জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করছে। কিন্তু ওদের ফেরার কোন পথ নেই। আমি আবার পিছনের দিকে ফিরতে শুরু করলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এক অাগুনের পাহার, হয়তো আগ্নেয়গিড়ি হতে পারে। আমি ওপরের দিখে ওঠতে শুরু করলাম। কিন্তু সামনে আরেকটা ওয়ারনিং আসলো আমার জন্য। এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে লেভেল ফোর অতিক্রম করতে হবে, তানাহলে আমি উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবো। আমি এবার প্রচন্ড গতিতে উড়তে শুরু করলাম। 

আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম, একটা লাল রঙ্গের পাখি আমার পাশে উড়ছে। আমাকে সে বলল- ‘তোমার বিপদ আমি বুঝতে পারছি। তোমার জীবনের সমস্ত অর্জনের বিনিময়ে কেন তুমি আকাশে উড়তে চাইলে। তোমার জীবনের কী কোন দাম নেই। তোমার জীবন এখন দ্বিধাগ্রস্থ। তোমার কোন আপনজন তোমাকে আর ফেরত চায় না। তুমি সবাইকে ছেড়ে একা বাঁচতে চেয়েছো। একাই পৃথিবীর সকল আনন্দ উপভোগ করবে ভেবেছো। তাই তুমি আজ নিঃসঙ্গ। তুমি চাইলেও তোমার পাশে কাউকে পাবে না। তুমি সারা জীবন যে জ্ঞান আহরণ করেছো, তা শুধু নাম মাত্র।আজ আর তোমার সে জ্ঞানের কোন মূল্যায়ন নেই। তুমি তোমার পাশের কোন মানুষের জন্য কিছুই করনি কোনদিন। সারাক্ষণ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে। যেকোন মানুষ তোমায় কিছু বলতে এলে, তুমি গরগর করে তোমার গল্প শুনিয়ে দিতে। তাদের সুযোগ দিতে না বলার। তুমি এমন কেন? আর সেজন্যই আজ তোমার গল্প কেউ শুনবেনা।এই যে আমাকে দেখছো, আমিও একটু পর তোমায় ফেলে চলে যাবো।’

আমি খুব অসহায়ের মতো পাখিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম আর এর কথাগুলো শুনলাম। আমি ভাবতে চাইছিলাম না পিছন ফিরে। যা হবার তা তো হয়েছে। কিন্তু আমার একবারের জন্য ও মনে পড়ছেনা যে আমি আমার জীবনের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে আকাশে উড়ার চুক্তি করেছি। আমি কি এতটাই বোকা হয়ে গেলাম। আমি এক মূহুর্তের জন্য ভাবলাম হয়তো আমি এ বোকামিটা করেছি। তাতে কি, ফেরার পর আমি আমার সব কিছু ঠিক করে নেব। আমি নিজেকে পাল্টে ফেলবো। আমি শুধু আমাকে ঘিরে নয়, সকলকে ঘিরে বাঁচবো।একটু পড়েই আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসলো। সকল ক্ষমতা আমি হারাতে শুরু করলাম। এদিকে এক ঘন্টা শেষ হতে আর সামান্য সময় বাকি। আমি আর কোন আশা খোঁজে পেলাম না। আকাশ থেকে বার্তা এলো-  

‘তোমার সময় শেষ। তুমি আর উড়তে পারছো না। তুমি ভুলে গেছো যে তোমার সাথে কি চুক্তি হয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক, কেউ পিছনের কথা মনে রাখেনা। প্রতিশ্রুতি ভুলতে পারলে, স্বাধীন হওয়া যায়। প্রতিশ্রুতি মানেই তো দায়বদ্ধতা। তুমি সে দায় এড়িয়ে আপন প্রশান্তি খোঁজতে চেয়েছিলে। তুমি দেখতে চেয়েছিলে পৃথিবী আর মহাশূন্যের বিচিত্রতা। তোমার মতো পৃথিবীর অনেকেই তো মহাশূন্যে এসেছিল- অনেক কিছু আবিষ্কার করার নেশায়। তাঁরা কি আজো বেঁচে  আছে? সুতরাং তোমার মন খারাপ হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে তাদের আর তোমার মধ্যে পার্থক্য একটাই তাঁরা নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চেয়েছিল মানুষের উপকারের জন্য। তারা শুধু নিজ প্রজন্ম নিয়ে নয়, পরবর্তী কয়েক প্রজন্মকে কিছু উপহার দেবে বলে জীবন বাজি রেখে এসেছিল। আর তুমি এসেছো মাত্র ঘোরে দেখতে। মনকে প্রফুল্ল করতে। আর তোমাকে এখন সবচেয়ে বড় সত্যটা মেনে নিতে হবে, সেটা হলো জীবনের অন্তিম সময়। যেটা সকল মানুষকে গ্রহণ করতে হয়।’

সত্যি সত্যি আমি নিচের দিকে ঝড়ে পরছিলাম। প্রচন্ড বায়ো চাপ আমায় আঘাত হানতে শুরু করলো। আমি হিতাতিত জ্ঞান হারালাম।ধূমকেতুর বেগে আমি নিচের দিকে পড়তে থাকলাম। বাতাশের চাপে যে আমার দেহের চামড়াগুলো থেতলে যাচ্ছিল। ভূপৃষ্ঠের কয়েক হাজার ফিট উচুঁতে আসার আগেই আমি জ্ঞান হারালাম। তবে ধপাস করে মাটিতে পড়ার মতো একটা অনুভূতি হলো। আর তারপরেই এক লাফে ঘুম থেকে জেগে ওঠলাম। চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম, আমি কি আসলেই বেঁচে আছি?






No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment