Tuesday, May 13, 2025
'চোখের বালি' উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী চরিত্র
আশার প্রতি বিশ্বাস ও যথাযথ মূল্যায়নঃ
Thursday, May 8, 2025
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।। বিহারি চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিহারী চরিত্র আলোচনা ও বিশ্লেষণ
‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি একটি ত্রিভোজ আকৃতির মানব প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। উক্ত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মহেন্দ্র হলেও সামগ্রিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় বিহারি চরিত্র হিসাবে সফল। কেননা সমগ্র উপন্যাস জুড়েই বিহারী একটি উল্লেখযোগ্য পুরুষালি চরিত্রের ধারক ও বাহক।
মহেন্দ্রের মায়ের চোখে বিহারি তার সন্তানের চেয়ে অধিক যোগ্য ও কর্মঠ। মহেন্দ্রকে দিয়ে যে কাজ অসাধ্য সেই কাজ বিহারি অনায়াসে করে দেয়। আনুগত্যের দিক দিয়েও বিহারীর চরিত্র উত্তম।
মননশীল ও রুচিশীলতার ক্ষেত্রে বিহারী অনন্য। বিহারির ভাবনা-চিন্তা মহেন্দ্রের মতো নয়। কিন্তু মহেন্দ্রের প্রতি বন্ধুত্ব ও মহেন্দ্রের মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা তার জন্য বিহারী সর্বদাই নিজেকে আনুগত্যশীল ও দায়িত্বশীল হিসাবে পরিচয় দেয়।
মহেনের মা যখন বিনোদিনীকে ঘরে আনতে চায় তখন মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিধবা বলে অবজ্ঞা করে এবং বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।”
শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে। বিহারির মানস যেন লেখকের আত্ম ব্যক্তি রূপ প্রকাশ করে। এমনো হতে পারে সকল চরিত্রের মধ্যে বিহারি চরিত্রকে লেখক একটু বাড়তি যত্ন করে তৈরি করেছেন। বিহারির দায়িত্ব ও কর্তব্য বিবেচনায় সে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।
কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসের ক্লাইমেক্সটা একটু অন্য রূপে প্রকাশ পায়, যখন মহেন্দ্র বিয়ে করে, সংসার করা শুরু করার পর কিছুকাল পরে বিনোদিনী মহেন্দ্রদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। বিনোদিনীর রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে আশালতা যেমনটি নির্ভলশীল না হয়ে পারেনি, তেমনি মহেন্দ্র ও বিহারিও কোন অংশে বিনোদিনীর মোহ ও আকাঙ্খার ফাঁদে কম আটকায় নি। মহেন্দ্রের চারিত্রিক হীনমন্যতা যখন বিনোদিনীর পাবার প্রবল আকাঙ্খায় পৌছায়, তখন বিহারি নিজের অবস্থান ও অস্ত্বিত্বের সংকটে ভোগে।
বিনোদিনীর প্রতি বিহারির যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা একজন সুন্দরী, রূপবতী ও যৌবনাদীপ্ত নারীর না বুঝার কথা নয়। আর সে সেই দূর্বলতাকে পুঁজি করে বিহারী ও মহেন্দ্র উভয়ের ক্ষেত্রেই তার চতুরতা চালিয়ে যায়। পুরুষ মন এমন চতুরতায় আগে কখনো অভ্যস্ত নয়, তাই বিহারিও মহেন্দ্রের মতো নাকানি-চুবানি কম খায় নি। এই দিক থেকে বিহারি চরিত্রের কিছুটা দূর্বলতা ফুটে উঠে।
বিহারি চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং অন্যকে অগ্রাধিকার অতিরিক্ত মনোভাব। কেবল বন্ধু মহেন্দ্রেকে মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিহারি তার যথাপযোক্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন রকমের ছাপ পড়েছে। কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসটি লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে একটি। শেষের কবিতা উপন্যাসের মতো এ উপন্যাসেও লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ করা, চরিত্র নিয়ে খেলা করা এবং জীবন বাস্তবতার মধ্য থেকে মানব চরিত্রের বিভিন্ন প্রতীকি নিদর্শন তুলে ধরেন। যা মানব জীবনের অতি সাবলীল ও সুবাস্তব চিত্র।
* আশা চরিত্র
* অন্নপূর্ণা চরিত্র
Saturday, June 11, 2022
শিক্ষা বনাম সফলতা
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
(৫ম পর্ব)
শিক্ষা বনাম সফলতা
মোঃ অলিউল্লাহ্
জ্ঞানার্জনের অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
(৪র্থ পর্ব)
জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?
মোঃ অলিউল্লাহ্
জ্ঞানার্জনের অন্তরায়সমূহঃ
জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
(৩য় পর্ব)
জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?
মোঃ অলিউল্লাহ্
জ্ঞানার্জনের অন্তরায়সমূহঃ
শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
(২য় পর্ব)
শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।
মোঃ অলিউল্লাহ্
'সঠিক শিক্ষালাভে কোন অভাব থাকতে পারেনা, যার অভাব আছে সে সঠিকভাবে শিক্ষালাভ করেনি।'
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
- পড়াশোনা করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
- শিক্ষা লাভে বাধা বা অন্তরায়।
- পড়াশোনার ব্যাপারে বিভিন্ন লোককথা ও সমালোচনা।
- শিক্ষিত ব্যক্তিদের সামাজিক মূল্যবোধ।
(১ম পর্ব)
জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?
আর তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই যা যা করতে হবেঃ
Friday, July 23, 2021
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ৩
নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনাঃ
ধূলি-অন্ধ ঘূর্ণি সম
দিবাযামী
যবে আমি
নেচে ফিরি র”ধিরাক্ত মরণ-খেলায়-
এ দিনে অ-বেলায়
জানিলাম, আমি তোমা’ জন্মে জন্মে চিনি।
পূজারিণী!”
নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপঃ
বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাবঃ
পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন
পার্ট-২ পড়তে ক্লিক করুন
Wednesday, July 21, 2021
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ২
নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তুঃ
সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকাঃ
পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন
পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন
তৃতীয় পর্বে যা আলোচনা করা হবেঃ
নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।
নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।
বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন
Tuesday, July 20, 2021
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ১
আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
১. বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব।
২. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা।
৩. নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তু।
৪. সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকা।
৫. নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।
৬. নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।
৭. বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্বঃ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনাঃ
সাহিত্যিক গুণাগুন ও বৈশিষ্ট বিবেচনায় তিনি জাত কবিদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন এবং তাঁর কাব্য রচনা এক অনন্য মাত্রায় স্থান পায়। তাঁর কবিতার শব্দ, বাক্যগঠন, ছন্দ ও ভাষা এতোটাই প্রাঞ্জল যে, সমসাময়িক কবিরা তাঁর ধারে কাছেও ভিরতে পারেন নি। স্বদেশী ভাষা ছাড়াও অসংখ্য বিদেশী ভাষার শব্দ তাঁর কবিতাকে অলংকৃত করে।
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের নাম কবিতা ‘সাম্যবাদী’র মূলভাব আলোচনা করো।
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতার মূলসুর কি?
‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ‘বারাঙ্গনা’ ও নারী কবিতায় কোন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে? পড়তে ক্লিক করুন।
Thursday, October 22, 2020
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র
- সাহিত্য বিশ্লেষণ, সমালোচনায় মোঃ অলিউল্লাহ
‘চোখের বালি’ উপন্যাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিনোদিনী। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রাখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ চরিত্রটি অতি যত্নে গড়া এবং শিল্পীর চরিত্র নির্মাণের নিপুন কৌশল প্রস্ফুটিত হয় বিনোদিনী চরিত্রের মাধ্যমে। বিনোদিনীকে উপস্থাপন করা হয় প্রাপ্ত বসয়স্ক, সুদর্শনা, দক্ষ এবং বিধবা হিসাবে। বিনোদিনীর বাবার আর্থিক অবস্থা সচল না হওয়া সত্ত্বেও সে মেয়েকে মিশনারী মেম রেখে অতিযত্নে পড়াশোনা ও কারুকার্য শিখিয়েছিলেন।
তবে মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার উদাসীনতা ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিনোদিনীর বিধবা মাতা সংসারের অভাবের জন্য মেয়েকে পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। একই গ্রামের মেয়ে বিনোদিনীর মা হরিমতি ও রাজলক্ষী। শৈশবের খেলার সাথী। তাই রাজলক্ষীর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে তার ছেলে মহেন্দ্র দ্বিধায় পরে যায় এবং বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে রাজলক্ষীর জন্মভূমি বারাসতের গ্রাম সম্পর্কিয় এক ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে বিনোদিনীকে তার মা বিয়ে দেয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই বিনোদিনীর স্বামী মারা যায়।
মহেন্দ্র অবশ্য তার কাকীমার বোনঝি আশাকে বিয়ে করে স্বাচ্ছন্দেই সংসার করছিলো। নবদম্পতির কোনরূপ আহ্লাদের বাকি রইলোনা। এমনকি মহেন্দ্রের মা যখন তার জন্মভূমিতে বেরাতে যায়, সেখানে বিহারীর মাধ্যমে তার মাকে চিঠি পাঠায়। কিন্তু মাকে দেওয়া চিঠি যখন বিনোদিনী পরে শোনাচ্ছিল, তখন চিঠির কিছু অংশ পরে বুঝতে পেরেছিলো এই চিঠিতে কেবল স্বামী-স্ত্রির প্রণয়-উপাখ্যান লেখা বৈ কিছু নাই। তাই চিঠি খানা নিজের কাছে রেখে দেয় এবং পরে একেলা ঘরে সেই পড়ে বিনোদিনীর মনে অন্য রকম এক অনুভূতি খেলা করে। বিনোদিনী স্বামী সোহাগ ভালোভাবে বুঝবার আগেই বিধবা হয়, তাই আশা ও মহেন্দ্রের বিবাহ উত্তর সকল বিষয়গুলো চিঠি পড়ে অনুধাবন করছিলো ও নিজের অনূভুতির সাথে মিলিয়ে নিয়েছিল।
বিনোদিনী ভালো করেই জানতো মহেন্দ্র ও বিহারীর সাথে তার বিবাহের কথা-বার্তা হয়েছে। তারা দু’জনেই বিনোদিনীকে দেখতে যাওয়া ও প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু রাজলক্ষী জন্মভূমিতে ফিরে যাবার বিনোদিনীর অধিক যত্নে খুবই তৃপ্ত হয় এবং বাড়ি ফেরার সময় বিনোদিনীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। বিনোদিনী ও আশার মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়। যেহেতু বিনোদিনী সকল কাজেই খুব পারদর্শী তাই আনাড়ি আশাকে কারুকার্য ও ঘরের কাজ শিখানোর মাধ্যমে দু’জন দুজনের সখী হয়ে যায়। আশা তার সইকে নিজের বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মহেন্দ্র এমন অসাধারণ সুন্দরী নারী এর আগে কখনো দেখেনি।
অন্যদিকে বিনোদিনীও আশা ও মহেন্দ্রের বৈবাহিক জীবনভোগের দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে না পেরে তাদেরকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। দিনের পর দিন বিনোদিনীর নিপুন কর্মদক্ষতা, ইংরেজিতে কথা বলা ও তার সৌন্দর্যের জন্য মহেন্দ্রের মনে আচর কাটে। একসময় মহেন্দ্র বিনোদিনীর প্রেমের ফাঁদে বন্দী হয় এবং নিজের স্ত্রীর সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। অন্যদিকে মহিনের বাড়িতে প্রায়ই বিহারী আসে এবং বিনোদিনীর আপ্যায়ন ও আতিথেয়তায় পরিতৃপ্ত হয়। এমনকি বিহারী যখন দূরে চলে যেতো তখন বিনোদিনী অতিযত্নে তার ঘর গোছানো, গ্লাসে ফুল সাজানো ও ঘরটিকে সাজিয়ে ঘুছিয়ে পরিপাটি করে রাখতো।
বিহারী ধীরে ধীরে বিনোদিনীতে মুগ্ধ হয়ে যায়। বিনোদিনী সবই বুঝতে পারে। একদিকে যেমন মহেন্দ্র তার জন্য অত্যন্ত উদাসীন ও তাকে ছাড়া অতি অক্ষম বোধ করে অন্য দিকে তার স্ত্রীর সাথে ক্রমেই ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে থাকে। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে পারেনি, এভাবে সে তার স্বামী বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। আশা তাদের প্রেমালাপ ও দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে এক সময় মহেন্দ্রকে মুক্তি দিলো।
বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইংরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকল প্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল।
বিনোদিনী চরিত্রের দ্বৈতরূপ ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অংকন করেছেন। বিনোদিনী একদিকে নিজের প্রতি অবহেলাকারীদের নাকে দড়ি লাগিয়ে ঝুলিয়েছে অন্যদিকে নিজের কামনা-বাসনার উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। কিন্তু উপন্যাসের শেষের দিকে মহেন্দ্রকে করুণ পরিণতিতে প্রতিফলিত করেছে। চরিত্রের সার্থকতা বিবেচনায় বিনোদনী চরিত্রটি সফল ও ভাস্বর।
* আশা চরিত্র
* রাজলক্ষী চরিত্র
* বিহারী চরিত্র
* অন্নপূর্ণা চরিত্র
Tuesday, October 20, 2020
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || মহেন্দ্র চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের আলোচিত চরিত্রসমূহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবং বিশ্লেষণাত্মক বৈশিষ্টসমূহ তুলে ধরা হলো।
‘চোখের বালি’ উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি। নিম্নে এসব চরিত্রের পুঙ্খানোপুঙ্খ আলোচনা করা হলো।
মহেন্দ্র
মহেন্দ্র সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। মহেন্দ্র শৈশবেই তার বাবাকে হারিয়েছে। তার মা রাজলক্ষী। আর দশজন মাকে যেরূপ সম্বোধন কিংবা সম্মান করে, মহিনের ব্যবহার তেমন ছিল না। সে বাইশ বছর বয়সে এমএ পাশ করে ডাক্তারি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। আরম্বরপূর্ণ জীবনযাপন ও স্বেচ্ছাচারিত তার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলেও উপন্যাসের শুরুর দিকে সে তার মাকে ছাড়া কোন কিছুই করতে পারতো না। অর্থাৎ খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মায়ের আচলের নীচে থাকায় অভ্যস্ত।
রাজলক্ষী ও হরিমতি শৈশবের বান্ধবী ও একগ্রামের মেয়ে। হরিমতির কথায় রাজলক্ষী যখন মহিনকে তার বিধবা মেয়ে বিনোদনীকে বিয়ে করতে বলে তখন সে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। মাকে খুশি করার জন্য কোন রকম বলে দেয় যে, বিয়ে করবে। পরে আবার ইতস্তত করে বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে তার মা বিনোদিনীর মাকে পাকা কথা দিলেও পরে না বলতে হয়।
বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।” শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে।
মহেন্দ্রের কাকী অন্নপূর্ণাকে সে যারপরনাই ভালোবাসে। কিন্তু অন্নপূর্ণা তার বোনের মেয়ে আশালতাকে বিয়ে করতে বললে, সে নিজে না করতে পারবেনা তাই বিহারীর জন্য দেখতে যেতে রাজি হয়। অন্যদিকে বিহারীও অন্নপূর্ণাকে দেবীর মতো ভক্তি ও অনেক শ্রদ্ধা করে। আর সেজন্য অন্নপূর্ণাকে সে না বলতে পারে না। মহেন্দ্র অনেক সাজসজ্জা করে বিহারীকে নিয়ে কন্যা দেখতে বের হয়।
কন্যার জেঠা অনুকূল বাবু তার তিনতলা বাড়ি সুসজ্জিত করে রেখেছেন। আশাকে দেখার পর বিহারীর উপর জোরপূর্বক চাপানো সিদ্ধান্ত ভুলে গিয়ে বিহারিকে বলে মহিন আশাকে পছন্দ করেছে। ওদিকে বিহারীরও আশাকে ভালো লেগেছে, কিন্তু মহেন্দ্রের ভাব বুঝতে পেরে সে তাকেই বিয়ে করতে বলে। মহেন্দ্র তার মাকে আশার কথা বলায়, রাজলক্ষী মনোক্ষুন্ন হয় এবং অন্নপূর্ণার প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে। অথচ অন্নপূর্ণা এর কিছুই জানেনা। পরে মহিনের জেদের কাছে হার মেনে মা তাকে বিয়ে করাতে রাজি হয়।
পরে বিহারী অন্নপূর্ণাকে অনুরোধ করলে সে তার বোনঝির সাথে মহিনের বিয়ে দিতে রাজি হয়। অন্নপূর্ণা আশার জন্য বিহারীকে পছন্দ করলেও মহিনের জেদের কারনে আশার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মহিন নববধুর প্রতি খুবই অনুরাগী তাকে ছাড়া যেনো এক বেলাও চলে না। তার কিছু কিছু বারাবারিতে তা মা খুবই বিরক্ত।
ডাক্তার হবার যে ইচ্ছা পোষন করেছিলো তা ধীরে ধীরে শেষ হতে চলল। মহিনের ডাক্তারি ছেড়ে স্ত্রীকে পড়াশোনা করানো নতুন দায়িত্ব হয়ে ওঠল। অবশ্য সেসব বেশিদিন চলল না, স্বামী-স্ত্রী সোহাগ, মান-অভিমান ও বিবাহিত জীবনের উপর শুরু হতে চলল নতুন ঘটনা।
মহিনের মা তার জন্মভূমি যাওয়ার পর কিছুকাল অবস্থান করে সেখানে বিনোদিনীর আদর যত্নে খুবই আনন্দিত। বিহারে তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে বিনোদিনীকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। যেই বিনোদিনীকে একদিন মহিন ও বিহারী অবহেলা করে বিয়ে করতে চায়নি, তাকে দেখে দু’জনেরই চরিত্রের চোখ কপালে উঠেছে।
বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকলপ্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে।
যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে এভাবে সে তার স্বামীকে বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
মহিন চরিত্রটি সর্বদাই দুটানায় ছিলো। তার চরিত্রে সুশিক্ষিতের আধিক্য থাকলেও নিজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় চরিত্রের দুর্বল দিক হিসাবে ফুটে ওঠে। বিহারি তার খুব কাছের বন্ধু হলেও সে নিজ কামনা-বাসনা পূরণ করতে তাকেও ঠকাতে দ্বিধা করেনি। যেই বিনোদিনীকে প্রথমে অবহেলাবসত বিয়ে করতে রাজি হয়নি, তার ছলনায় পরেই শেষ পর্যন্ত তার সংসার ভাঙ্গে। পরিণতিতে সে নিজের স্ত্রীকে যেমন হারায়, তেমনি বিনোদিনীকেও পায়না।
চরিত্রের উভয় সংকট ও মানসিক দুর্বলতা প্রথমত মায়ের সাথে দূরত্ব ও অযত্নের পরিচয় দেয়। প্রিয় স্ত্রীকে হারায় ও বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়। সমগ্র উপন্যাস জুরে যে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল মহেন্দ্র, তার পরিণতি হয়েছে খুব করুণ।
----------------------------------------------------
* আশা চরিত্র
* রাজলক্ষী চরিত্র
* বিহারী চরিত্র
* অন্নপূর্ণা চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন উপন্যাস ও বিস্তারিত আলোচনা
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাসাহিত্যে সর্বমোট ১৩ টি (তেরো) উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃ্দ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ও বহুল আলোচিত উপন্যাসসমূহ হলোঃ
=>> বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩)
=>> রাজর্ষি (১৮৮৭)
=>> চোখের বালি (১৯০৩)
=>> নৌকাডুবি (১৯০৬)
=>> প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮)
=>> ঘরে বাইরে (১৯১৬)
=>> যোগাযোগ (১৯২৯)
=>> শেষের কবিতা (১৯২৯)
=>> মালঞ্চ (১৯৩৪)
চোখের বালিঃ
‘চোখের বালি’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের সর্বাধিক সমাধৃত ও বহুল আলোচিত উপন্যাস। এ উপন্যাসের
আলোচ্য বিষয় হলো মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, বিধবা বিবাহের সমস্যা এবং পারিবারিক বিভিন্ন রকম আবেগধর্মী, সংবেদশীলতা, বিদ্বেষ, পরকিয়া ও সাংসারিক কলহ। এই উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি।
ঘরে বাইরেঃ
‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের খুবই জনপ্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয় ত্রিকোন
প্রেমের ঘটনা, বৈপ্লবিক জাতীয়বাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, নিখিলেস ও বিমলার সাংসারিক টানাপোড়েন, সন্দীপ ও বিমলার পরকিয়া সম্পর্ক। এছাড়াও ধর্মীয় মনোভাব, নৈতিকতা ও স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ উদঘাটন উল্লেখযোগ্য। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে একজন নারীর স্বাধীনতার সীমা অতিক্রম ও গৃহ অভ্যন্তরে নারীর পরাধীন অবস্থা সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
নৌকাডুবিঃ
‘নৌকাডুবি’ রবীন্দ্রনাথের অন্য সকল উপন্যাস হতে ভিন্নতা দেখা গেছে। তবে জীবনের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি
ও সমাজসচেতনতা এখানে ফুটে ওঠে। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রমেশ।
বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য সমালোচনা
বলে নিচ্ছি রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে কতটুকুঃ
* তিনি সর্বমোট কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন ৫২ (বায়ান্নটি)।
* উপন্যাস ১৩ টি।
* নাটক ৩৮ টি।
* প্রবন্ধ ৩৬ টি।
* ছোটগল্প ৯৫ টি।
*সঙ্গীত ১৯১৫ টি।
এছাড়া ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘গীতবিতান’, ‘পত্রসাহিত্য’ রচনা করেন ও ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার তাঁর ভান্ডারে জমা পড়ে। তিনি কবি, চিত্রকর, গায়ক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা আর একজর বিজ্ঞ দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেবল বাংলা সাহিত্য নয় বরং অন্যান্য সকল সাহিত্যের সাথে তুলনা করলেও এমন একজন সাহিত্যিক খোঁজে পাওয়া বিরল। আমি প্রথমত রবীন্দ্র উপন্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। এখানে উপন্যাসের বিষয়বস্তু, পটভূমি, প্রশ্নপত্র বিবেচনা করে সেসবের উত্তরের নিমিত্তে তৈরি করবো বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্নোত্তর। এভাবে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাহিত্যের প্রতিটি বিষয় নিয়ে লিখবো।
রবীন্দ্র উপন্যাস পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ
লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ উপন্যাস