Showing posts with label সাহিত্য সমালোচনা. Show all posts
Showing posts with label সাহিত্য সমালোচনা. Show all posts

Tuesday, May 13, 2025

'চোখের বালি' উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় উপন্যাস 'চোখের বালি' রাজলক্ষ্মী চরিত্র 

'চোখের বালি' উপন্যাসের মনস্ত্বাত্তিক ও বাস্তবিক প্রেক্ষাপটঃ

'চোখের বালি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। সাহিত্য সমালোচকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এ উপন্যাসের মধ্য দিয়েই বাংলা উপন্যাসের বাঁক পরিবর্তন ঘটেছে । 'চোখের বালি' উপন্যাসটি একটি চরিত্রনির্ভর উপন্যাস, যেখানে কাহিনীর চেয়ে চরিত্রগুলোকে সনাক্ত করা যায় খুব সহজে এবং প্রতিটি চরিত্রই যেন লেখকের একেকটি জীবন্ত ও বাস্তব চরিত্র চিত্রায়ন করেছেন। তাই এই উপন্যাস কাহিনীনির্ভর তা বলা যায় না। উক্ত উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে, যেখানে একটি উপন্যাসের কাহিনী হতে চরিত্রগুলো পরিলক্ষিত হয় বেশী।
 
 

'চোখের বালি' স্নেহ সুলভ দৃষ্টিভঙ্গিঃ 

উক্ত উপন্যাসের চার নারী চরিত্রের মধ্যে রাজলক্ষ্মী চরিত্রটি অন্যতম। 'চোখের বালি'র নায়ক চরিত্র মহেন্দ্রের মা রাজলক্ষ্মী।স্বামীর মৃত্যুর পর হতে সমাজ সংসারে পুত্র মহেন ছাড়া আর কিছু রাজলক্ষ্মী বোঝে না, মহেনই তার সব। উপন্যাসটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে রাজলক্ষ্মীর পরিবারকে কেন্দ্র করেই। রাজলক্ষ্মী ধনী বিধবা।  তার একমাত্র পুত্র মহেন্দ্রকে নিয়েই সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। আর দশজন মায়ের চেয়ে রাজলক্ষ্মী কিছুটা আলাদা। তার দৃষ্টিকোণ থেকে তার ছেলে মহেন্দ্রের চেয়ে ভাল ছেলে আর একটিও হয় না । 
 
মহেন যখন পড়াশোনায় এমএ পাস করে ফেলেছে এবং ডাক্তারি পড়া শোনা করছে তখনো তার মা তাকে আঁচলছাড়া করে না। মহেনের আহার, বিহার, আরাম— সবই রাজলক্ষ্মী কে ঘিরে। মা ছেলের যেন সব কিছুতেই দারোণ আদিক্ষ্যেতা। মা হিসাবে নিজের কাছে যেটা ভাল মনে হয় সে সম্পর্কে বিশ্বের লোককে উপেক্ষা করার মতো একটা স্বাভাবিক জেদ তার ছিল । তদুপরিও মহেনের যা কিছু ভাল লাগে রাজলক্ষ্মীর তা ভাল না লাগলেও সে তা ভাল না লাগিয়ে পারে না । 
 
 

রাজলক্ষী চরিত্রের দোষ-ত্রুটিঃ

মা হিসাবে রাজলক্ষী চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো তার ছেলে যত অন্যায়, যত ভুলই করুক না কেন সে বিষয়ে যে কোন প্রকারেই হোক তা আড়াল করে রাজলক্ষ্মী বরং অন্যকে দোষারোপ করবে। রাজলক্ষ্মীর ইচ্ছে হয়েছে মহেন্দ্র বিয়ে করুক। কিন্তু মহেন বিয়ে করতে রাজি নয়। রাজলক্ষ্মী তার জা অন্নপূর্ণাকে নালিশ করে জানায় যে, অন্নপূর্ণা বলেছে— এখন ছোট ছেলেটির মতো ব্যবহার মানায় না। এতেই রাজলক্ষ্মী অন্নপূর্ণার উপর ক্ষেপে ওঠে— মহেন যদি অন্যদের চেয়ে মাকে একটু বেশি ভালবাসে তবে অন্যদের তাতে কী? রাজলক্ষ্মী তার সইয়ের সুদর্শনা সুশিক্ষিতা মেয়ে বিনোদিনীকে মহেনের সাথে বিয়ের কথা বলে কিন্তু মহেন বিয়েতে রাজি হয় না। অথচ জা অন্নপূর্ণার বোনঝি আশাকে বিহারীর জন্য দেখতে গিয়ে নিজেই পছন্দ করে বসে।
 
যদিও রাজলক্ষ্মী মহেনের এহেন কাজে মত দেয় নি, তাই দেখে মহেন বাড়ি ত্যাগ করে মেসে গিয়ে ওঠে। রাজলক্ষ্মী ছেলেকে খুব ভাল করেই জানে, তাই গোলযোগ হবার ভয়ে আশাকেই বউ করে ঘরে আনে আর সমস্ত দোষ দেয় অন্নপূর্ণাকে। কিন্তু মহেন যখন আবার আশালতাকে ফেলে বিনোদিনীর দিকে ঝুঁকে রাজলক্ষ্মী ছেলের দোষ না দিয়ে আশাকে দোষারোপ করতে শুরু করে। রাজলক্ষীর ধারণা, পুরুষ মানুষ কিছুটা বেপোরোয়া ও বিপথে যেতেই পারে, কিন্তু বউয়ের উচিত তাকে সামলে রাখা।
 
‘চোখের বালি' উপন্যাসের কাহিনীতে আবর্তন বিবর্তন ঘটিয়েছে তার পুত্র সর্বস্ব অভিমান ও বেসামাল মানসিকতা, যা তার চরিত্রকে কেন্দ্রে বসিয়ে দেয়। রাজলক্ষ্মীর অভিমানই পুত্রবধূ আশাকে খর্ব করেছে, আর একহাতে বিনোদিনীকে দিয়ে পুত্রকে প্রলুব্ধ করিয়েছে। এই উপন্যাসের রাজলক্ষ্মীর মধ্য দিয়ে আমরা প্রথম রক্তমাংসে গড়া আধুনিক মা চরিত্রের চিত্র পাই। সে কিন্তু শুধু মা নয়, একজন নারীও। ফলে তার আত্মকামিতায় আঘাতকারী পুত্রবধূর সুখ, এমনকি সন্তানের সুখও তার সহ্য হয় নি। বিনোদিনীর মাধ্যমে সে আশার প্রতি প্রতিশোধ নিয়েছে। অবুঝ পুত্রপরায়ণতা রাজলক্ষ্মী চরিত্রের দুর্বলতা এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

 

রাজলক্ষী চরিত্রের ইর্ষা ও স্বভাবজাত দূর্বলতাঃ

আশালতার প্রতি রাজলক্ষীর মনোকষ্টের তিনটি বিশেষ কারণ খোঁজে পাওয়া যায়। এক- তার পুত্র মহেন্দ্র তার জা অন্নপূর্ণার বোনঝি আশাকে বিয়ে করেছে। সে যে কেবল অবহেলিত হয়েছে, তা নয়, আশার সাথে অন্নপূর্ণার পূর্ব থেকেই সম্পর্ক রয়েছে বলে রাজলক্ষ্মীর খুব অসন্তোষ । 
দুই— গর্বধারণকৃত মাতৃ হৃদয়ের অতি স্বাভাবিক ভাবনাগত ঈর্ষা। যেই ছেলে এতদিন তার আঁচলে বাধা ছিল, এখন সে নব্য বিবাহিত এবং স্ত্রীর প্রতি অধিক আনুগত্যশীল ।
তিন— মহেনের নব্য বিবাহিত স্ত্রী আশার গৃহকর্মে অনভিজ্ঞতা ও অপটুতা। আশাকে বিয়ে করার পর রাজলক্ষ্মী তার ছেলেকে পরীক্ষা পাসের প্রস্তুতি নিতে বললেও সে আশাকে নিজের কাছে রেখে ঘরকন্নার কাজ করায়। মহেনের এরূপ দৃশ্য মোটেও সহ্য হয় না ৷ তাই রাজলক্ষ্মী আশাকে মহেনের কাছে দিয়ে দেয়। 
 
 

বিনোদিনীর প্রতি মোহ ও সন্তানের প্রতি জেদের স্বরূপঃ

রাজলক্ষ্মী তার পুত্রের স্ত্রৈণ ও বেহাল অবস্থা পরিলক্ষণ করে মান-অভিমান বুকে পোষে গ্রামের বাড়ি দেখার নাম করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বারাসতে যাওয়ার পর বিধবা বিনোদিনীকে দেখে তার উপর যারপরনাই মায়া জন্মায়। রাজলক্ষী বিনোদিনীর সেবা ও যত্নে বিষণ রকমের সন্তুষ্ট। বিনোদিনীর শিক্ষা-দীক্ষা, আধুনিকতা ও রুচিশীলতা, বুদ্ধি-সেবা-যত্নে তার বধূ বিদ্বেষ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিয়ে না করে যে কি পরিমাণ  ঠকেছে, তা প্রমাণ করতেই যেন রাজলক্ষ্মী বিনোদিনীর উপর সংসারের কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। আশার অনুপস্থিতিতে মহেন্দ্রের পরিচর্যার ভার দিয়েছে বিনোদিনীর উপর। রাজলক্ষ্মী ছেলের অপরাধ না দেখে বিনোদিনীর ঘাড়েই মহেন্দ্রের স্খলনের দোষ চাপিয়ে দেয় ।
 

আশার প্রতি বিশ্বাস ও যথাযথ মূল্যায়নঃ

 বিনোদিনীও যখন তার আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়, তখন পুনরায় তার মন ভেঙ্গে যায়। সে আশার উপর বিশ্বাস ফিরে পায় এবং প্রসন্ন হন। পুত্রকে গৃহবাসী না করতে পারায় রাজলক্ষ্মী সম্পূর্ণ দোষ চাপায় আশার উপর এবং তার উপর বিরক্ত হয়। কিন্তু রাজলক্ষ্মীর শারীরিক অসুস্থতার কারনে আশার উদ্বেগ ও ব্যাকুলতা মিশ্রিত পরিচর্যা দেখে রাজলক্ষী অবশেষে আশার যথার্থ মূল্য দিতে বাধ্য হয়।  মা হিসাবে রাজলক্ষ্মীর যে পুত্রসর্বস্বতা ও মাত্রাতিরিক্ত আদিক্ষ্যেতার কারণেই মহেন্দ্র নির্লজ্জ, অসংযত ভোগলিপ্সু হয়ে ওঠে, তা বুঝতে পারে। পুত্রবধূ আশার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজলক্ষ্মী তার পছন্দের বিনোদিনীর দ্বারা পুত্রকে প্রলুব্ধ করেছে। অতি মাত্রায় অভিমান ও প্রবল আবেগপ্রবণতা যে রাজলক্ষ্মীর নিজের গৃহে নিজে6ই বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল, সেটা বুঝতে আর তার বাকি রইলো না।
 
রাজলক্ষ্মীর আবেগ ও অভিমানের দুলাচল থেকে বের হয়ে সে তার পুত্রের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি সদা জাগ্রত এবং যে সূক্ষ্ম অনুভূতি জ্ঞাপন করে তাতে মহেন্দ্র-বিনোদিনীর অশালীন ও অনুচিত ঘনিষ্ঠতা তার দৃষ্টি এড়ায়নি। ‘চোখের বালি' উপন্যাসের সকল চরিত্রের মধ্যে যে জটিলতা, সক্রিয়তা ও প্রবাহমানতা তার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে রাজলক্ষ্মী চরিত্র। ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে যে বৃত্তাকার প্রেমের কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে তা কেবল মহেন্দ্র-বিনোদিনী-বিহারী-আশা-মহেন্দ্র এর মধ্যে ঘূর্ণায়িত হয়েছে। এ বৃত্তের কেন্দ্রে রয়েছে রাজলক্ষ্মী। রাজলক্ষীর এমন মানসিকতাই মূলত পুতুল নাচের অদৃশ্য সুতা হাতে রেখে সবাইকে তারই ইচ্ছেমত নাচিয়েছে এবং শেষে সুতার একটানে সবাইকে তার মৃত্যুশয্যায় টেনে এনে নিজেদের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে সর্বৈব বিচারে ‘চোখের বালি' উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী অত্যাধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে উজ্জীবিত মা-চরিত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ৷ 
 

* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র

 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, May 8, 2025

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।। বিহারি চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিহারী চরিত্র আলোচনা ও বিশ্লেষণ

‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি একটি ত্রিভোজ আকৃতির মানব প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। উক্ত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মহেন্দ্র হলেও সামগ্রিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় বিহারি চরিত্র হিসাবে সফল।  কেননা সমগ্র উপন্যাস জুড়েই বিহারী একটি উল্লেখযোগ্য পুরুষালি চরিত্রের ধারক ও বাহক। 

 মহেন্দ্রের মায়ের চোখে বিহারি তার সন্তানের চেয়ে অধিক যোগ্য ও কর্মঠ। মহেন্দ্রকে দিয়ে যে কাজ অসাধ্য সেই কাজ বিহারি অনায়াসে করে দেয়। আনুগত্যের দিক দিয়েও বিহারীর চরিত্র উত্তম।

 

মননশীল ও রুচিশীলতার ক্ষেত্রে বিহারী অনন্য। বিহারির ভাবনা-চিন্তা মহেন্দ্রের মতো নয়। কিন্তু মহেন্দ্রের প্রতি বন্ধুত্ব ও মহেন্দ্রের মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা তার জন্য বিহারী সর্বদাই নিজেকে আনুগত্যশীল ও দায়িত্বশীল হিসাবে পরিচয় দেয়। 


 মহেনের মা যখন বিনোদিনীকে ঘরে আনতে চায় তখন মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিধবা বলে অবজ্ঞা করে এবং বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।”

 

শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে। বিহারির মানস যেন লেখকের আত্ম ব্যক্তি রূপ প্রকাশ করে। এমনো হতে পারে সকল চরিত্রের মধ্যে বিহারি চরিত্রকে লেখক একটু বাড়তি যত্ন করে তৈরি করেছেন। বিহারির দায়িত্ব ও কর্তব্য বিবেচনায় সে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। 


কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসের ক্লাইমেক্সটা একটু অন্য রূপে প্রকাশ পায়, যখন মহেন্দ্র বিয়ে করে, সংসার করা শুরু করার পর কিছুকাল পরে বিনোদিনী মহেন্দ্রদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। বিনোদিনীর রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে আশালতা যেমনটি নির্ভলশীল না হয়ে পারেনি, তেমনি মহেন্দ্র ও বিহারিও কোন অংশে বিনোদিনীর মোহ ও আকাঙ্খার ফাঁদে কম আটকায় নি। মহেন্দ্রের চারিত্রিক হীনমন্যতা যখন বিনোদিনীর পাবার প্রবল আকাঙ্খায় পৌছায়, তখন বিহারি নিজের অবস্থান ও অস্ত্বিত্বের সংকটে ভোগে। 


 

বিনোদিনীর প্রতি বিহারির যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা একজন সুন্দরী, রূপবতী ও যৌবনাদীপ্ত নারীর না বুঝার কথা নয়। আর সে সেই দূর্বলতাকে পুঁজি করে বিহারী ও মহেন্দ্র উভয়ের ক্ষেত্রেই তার চতুরতা চালিয়ে যায়। পুরুষ মন এমন চতুরতায় আগে কখনো অভ্যস্ত নয়, তাই বিহারিও মহেন্দ্রের মতো নাকানি-চুবানি কম খায় নি। এই দিক থেকে বিহারি চরিত্রের কিছুটা দূর্বলতা ফুটে উঠে।

 

বিহারি চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং অন্যকে অগ্রাধিকার অতিরিক্ত মনোভাব। কেবল বন্ধু মহেন্দ্রেকে মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিহারি তার যথাপযোক্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন রকমের ছাপ পড়েছে। কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসটি লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে একটি। শেষের কবিতা উপন্যাসের মতো এ উপন্যাসেও লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ করা, চরিত্র নিয়ে খেলা করা এবং জীবন বাস্তবতার মধ্য থেকে মানব চরিত্রের বিভিন্ন প্রতীকি নিদর্শন তুলে ধরেন। যা মানব জীবনের অতি সাবলীল ও সুবাস্তব চিত্র।



* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র


 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Saturday, June 11, 2022

শিক্ষা বনাম সফলতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৫ম পর্ব)

শিক্ষা বনাম সফলতা 

মোঃ অলিউল্লাহ্

জাগতিক পৃথিবীতে যেসমস্ত সার্বজনীন বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা হয় তাই শিক্ষা। শিক্ষার মূল কাজ হলো সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করা। যেখানে শিক্ষার মানেই হলো সমস্যা চিহ্নিত করে সুষ্ঠু সমাধান করা, সেখানে সফলতা নামক একটা আপেক্ষিক ব্যাপারকে তার প্রতিবন্ধকরূপে দেখাতে চান কিছু ভ্রান্ত ধারণার বাহক। শিক্ষার মৌলিক ধারণা হলো উপায়।  তেমনি সফলতা তখনই আসে যখন সফলতা পাওয়ার জন্য উপায় বের হয়। আর যেকোন প্রকার সফলতা শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষা ছাড়া সফলতাকে ভাবা অসম্ভব। 

অন্যদিকে সফলতা বিষয়টা কেবল একধরনের মানসিক প্রশান্তি। সফল হতে সবাই চায়; এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে জীবনে ব্যর্থ হতে চায়। আর তাই সফলতাকে মনিষীরা বলেছেন আপেক্ষিক। যার অর্থ হলো, এটি যেকোন উপায়েই হতে পারে। কথার কথা, একজন ব্যক্তি খুবই সাধারণ ; তার কোন বিত্ত বৈভব নেই, সে লোকের চোখে এতটা সমাদৃত না। সে খুব ধনী ও না, আবার সে জনপ্রিয়ও না। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপনে সে খুব বেশী সমস্যাগ্রস্থ, যেকোনভাবে তার জীবন কেটে যাচ্ছে। আর এই সাধারণ জীবনে তার অতৃপ্তি নেই, সে মনে করে আমার খুব বেশী কিছু না থাকলেও আমি অসুখী নই, আমার যা আছে তাই নিয়ে আমি ভাল আছি। এই যে তার জীবনে সে অতি অল্পতেই সন্তুষ্ট এটাই তার কাছে সফলতা। 

আবার অনেকে দাবী করে জীবনে অগাধ সম্পদ ও অর্থের মালিক হওয়াই সফলতা। কিন্তু ভালভাবে খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে তার এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সে পুরোপুরি সুখি না।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জনের অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৪র্থ পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

৬. শিক্ষার মূল্যবোধ কমে যাওয়া ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের মূল্যায়নের অভাবঃ বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার বেশ কিছু সিস্টেমেটিক সমস্যা রয়েছে। যেমন- গতানুগতিক ধারায় সাধারণ শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়ন করা। বিশেষ করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকিং সেক্টর বাদে প্রায় সকল শাখাতেই শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও ভালো কোন পেশায় নিযুক্ত হতে পারেনা। যেহেতু আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে, তাই শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ও কারীগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে শিক্ষাজীবন শেষে ভালো কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হতে পারতো। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার পরও পেশাজীবনে সফলতা পায়না, অথবা নিম্নমুখী জীবনযাপন করে। অন্যদিকে লেখাপড়া না করেও অনেক মানুষ ব্যবসায় বা টেকনিক্যাল কাজে দক্ষতার দ্বারা অধিক উপার্জন করতে সক্ষম হয়। আর তাই  আমাদের সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রতি মূল্যবোধ কমে গেছে এবং তাদের গুরুত্বও কমে গেছে। যেহেতু টাকাই মানুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু সেখানে অল্প আয় করা শিক্ষিত ব্যক্তিদের সম্মান নাই বললেই চলে। এছাড়া এদেশে হাজার হাজার শিক্ষিত ব্যক্তি বছরের পর বছর বেকার হিসেবে জীবন কাটায়, তাই শিক্ষার ব্যাপারে অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের  উদ্বিগ্নতা ও অনিশ্চয়তার কোন অবকাশ নেই। যেকারণে শিক্ষার প্রতি তাদের অনাগ্রহ ও আপত্তি তৈরি হয়।

৭. সুদক্ষ শিক্ষকের অভাবঃ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন সাধিত হয়। আর সেই পরিবর্তনের সাথে যখন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা খাপখাইয়ে নিতে না পারে তখন তার প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর বর্তায়। যেমন- আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সারা পৃথিবী নিজের যেভাবে পরিবর্তন করছে, সেই ধারায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আর সেজন্য কর্মমুখী বা জীবনমুখী শিক্ষার প্রবণতা কম। সুদক্ষ শিক্ষক গড়ে না ওঠার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।

৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জামের অভাবঃ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষা সামগ্রীর অপর্যাপ্ততার  কারনে উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে প্রায়োগিক ও বাস্তবিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হচ্ছে না। আর তাই কর্মক্ষেত্রে এদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু পড়াশোনা করার পর সকল শিক্ষার্থীই ভালো কর্মক্ষেত্রে যেতে চায়, কিন্তু সঠিক প্রেকট্রিক্যাল নলেজের অভাবে তারা সেই কাজের জন্য নির্বাচিত হয় না। ফলে বেকারত্ব তৈরি হয়।

৯. শিক্ষা কারিকুলামে হালনাগাত ও গবেষণার অভাবঃ এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো সেই মান্দাতার আমলের সিলেবাস পরিলক্ষিত হয়। গধবাদা বা গতানুগতি শিক্ষা পদ্ধতির কারনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান কর্মক্ষেত্র ও চাহিদামতো শিক্ষাব্যবস্থায় হালনাগাতের অভাবে পুরানো বস্তাপঁচা শিক্ষা প্রদান এখনো শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমের উপর গবেষণার অভাব রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যতকে পিছিয়ে দেয়।

১০. শিক্ষকদের প্রাইভেট বা কোচিং শিক্ষা পদ্ধতিঃ খুবই দুঃখজনক ও হতাশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার পরও তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক নিযুক্ত করে কিংবা কোচিং এ গিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়। এটা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ, অন্যদিকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই তাদের সন্তানকে সেই পড়াশোনার খরচের যোগান দিতে পারেন। যাদের টাকা আছে তারা পড়াশোনায় এগিয়ে যায়, আর যার টাকার অভাব সে পড়াশোনা থেকে ছিটকে যায়। এভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা সৃষ্টি হয়।

১১.  শিক্ষা বিষয়ক প্রচারণার অভাবঃ সারাদেশে বিভিন্ন মিডিয়া অসংখ্য বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করলেও আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে মিডিয়ার প্রচারণা খু্বই সীমিত। মিডিয়ার এমন দায়সারা মনোভাবের ফলে জন সাধারণের মধ্যে দিনের পর দিন শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। অনেকাংশেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য বিকল্প মাধ্যম খোঁজে নেয়।

১২. সামাজিক অবক্ষয়ঃ আমাদের দেশের তরুণ সমাজে যথাযথ তদারকির অভাবে কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন বাজে অভ্যাসে জড়িয়ে যায়। অসৎ সঙ্গ ও তরুণ ছেলে-মেয়েদের অবাদে মেলামেশার ফলে পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযুগী না হয়ে, ঝগড়া-বিবাদ, আড্ডা দেওয়া, অপ্রয়োজনে খেলাধূলায় সময় নষ্ট করা ও প্রেম-ভালবাসায় জড়িত হয়ে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।

১৩. মাদক ও অপরাধ প্রবণতাঃ যুবক ছেলে-মেয়েদের একটা অংশ কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন খারাপ সঙ্গে মিশে অপরাধ কাজে আসক্ত হয়। এসব শিক্ষার্থীদের খামখেয়ালীপনার কারনে অল্প বয়সেই তারা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে।

১৪. আইন ও অনুশাসনের অভাবঃ আজকাল তরুণ সমাজের অবক্ষয় এতোই বেড়েছে যে, তারা না মানে পারিবারিক নিয়ম-শৃংখলা, না মানে সমাজের কোন অনুশাসন। যে কারনে তাদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১৫. বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে না পারাঃ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একান্তই শিক্ষার্থীসূলভ। তারা একেকটা স্টুডেন্ট এর নিডব্যসিস সিলেবাস প্রনয়ন করেন। এমনকি তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই প্রেক্টিক্যাল এবং সীমিত। এমনো দেখা গেছে, তাদের মাধ্যমিকের আগে কোন পরীক্ষা-ই নেই। সেখানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের ভিত্তিতে তাদের পছন্দসই বিষয়ে পড়ানো হয়। আর তাতে করে কোন এক নির্দিষ্ট বিষয়ে তারা দক্ষতা অর্জন করে এবং ক্যারিয়ারে সেই শিক্ষার প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করে।

অপর দিকে আমাদের দেশে ক্লাস ওয়ান থেকেই ডজন খানে বই পড়ানো হয়। ক্লাস সেভেন-এইটের সিলেবাস ক্লাস ওয়ানেই পড়ানো হয়; যা কিনা কোনভাবেই শিক্ষার্থীদের বোধগম্য নয়। আর ক্লাসটেস্ট, উইক্লি টেস্ট, মানথলি টেস্ট, সেমিস্টার এমন অসংখ্য পরীক্ষায় সারাবছর শিক্ষার্থীদেরকে একধরনের রেটরেইসের মতো চালাতে থাকে। সার্বক্ষণিক পড়াশোনার মধ্যে থাকা ছেলে-মেয়েগুলো কার্য ক্ষেত্রে কিছুই জানেনা। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায় গলদ আছে। আর এমন ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এক মরিচিকার নাম।


১৬.  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের অচলাবস্থাঃ এদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, শতকরা পাঁচ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি অনূকুলে নেই। আর এমন পরিবেশে পড়াশোনা করাতে অনেক অভিবাবকরাই শঙ্কা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্রীদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কোনটাই ঠিক মতো খোঁজে পাওয়া যাবেনা।

১৭.  জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেই তিন/চার জন ছেলে মেয়ে থাকে। অধিক সদস্যের পরিবারে সকলের মৌলমানবিক চাহিদা পূরণের পর শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় খুবই দুঃসাধ্য। তাই অনেক অভিবাবক শিশু সন্তানকে আয় রোজগারে নিযুক্ত করে দেন। তাতে করে শৈশবেই তাদের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেতে হয়।

১৮. বাল্য বিবাহঃ খুবই সাধারণ একটি বিষয় হলো এদেশে বাল্য বিবাহ। ছেলে-মেয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই, তাদেরকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের আগেই স্কুল থেকে ঝড়ে যায়।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৩য় পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


মানুষ মাত্রই অজানাকে জানার কৌতুহল বা আগ্রহ। মানুষের জানার এই কৌতুহল থেকেই শেখার মানসিকতা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃত্তি আছে, তা হলো বিনা লাভে কোন কাজ করতে না চাওয়া। অর্থাৎ কোন কাজ করার পর সেই কাজের বিনিময়ে কোন সুবিধা, স্বার্থ বা লাভ না থাকলে সেই কাজ করার প্রয়োজনবোধ হয়না। কিন্তু অন্য সকল কাজের থেকে পড়াশোনা করা বা জ্ঞানার্জন করার কাজটা স্বভাবতই একটু কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ।

লেখাপড়া করার জন্য প্রয়োজন কোন এক প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুলে-মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া। শূন্য জ্ঞানের স্মৃতিতে তীলে তীলে সঞ্চয় করা জ্ঞানকে ধারণ করে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর একজন শিক্ষিত হতে পারে। যেহুতু মানবজীবন ত্রুটিপূর্ণ বা সমস্যাগ্রস্থ, তাই দীর্ঘদিন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বহু প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এসকল প্রতিকূলতা এড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই পারে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে। তাই আমরা আলোচনা করবো কেনো শিক্ষা গ্রহণ করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে এবং কোন কোন উপায় অবলম্বন করলে সহজেই এসব প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

১. বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবঃ একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় যদি সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ কম হয়, সেখানে সকল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ খুব কম হয়। তাই অনেকের ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার সুযোগ পায়না।

২. অভিবাবকদের সচেতনতার অভাবঃ আমাদের দেশের অভিবাবকদের শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে ধারণার অভাব ও সচেতনতার অভাবে তাদের সন্তানকে শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করতে পারেনা। জীবনযাত্রায় শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে অভিবাবকগণ তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেখান না। অধিকাংশ অভিবাবকেরই ধারণা শিক্ষিত সন্তানরা পিতা-মাতার প্রতি যত্নবান কম হয় এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনার অভাবে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না।


৩. দারিদ্রতাঃ দারিদ্রতা আমাদের দেশের একটি অন্যতম অন্তরায়। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। পরিবারের ভরণপোষন ও সকল চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষেরা সন্তানকে পড়াশোনা করানোর কথা কল্পনাও করতে পারেন না। কারন এদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বই-পুস্তক ও শিক্ষা সরঞ্জামের মূল্য অধিক হওয়াতে অভিবাবকদের আয়ের তুলনায় বাড়তি হিসাব করতে হয়, আর সেজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে। 

৪. মেধা মূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাবঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় উপযুক্ত শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে পারেনা। এমনকি কিছু শিক্ষার্থী কেবল নিবিড় যত্নের অভাবে পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়, ফলে তারা অল্প বয়সেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়ে।

৫. অনাধুনিক মনোভাবঃ বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশও এখন তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে আধুনিকতার দাবিদার। কিন্তু সেই প্রযুক্তির অপব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক বিষয় বিবেচনার অভাবে তারা বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের  শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আধুনিক মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেশীর ভাগ শিক্ষকই আইটি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় অনগ্রসর, তাই তারা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে পারছেনা। আর তাই অল্পকিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা খুব দূরে যেতে পারছেনা।

পড়ের অংশ পড়তে ক্লিক করুন:

সম্পূর্ণ পড়ুন...

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

  জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(২য় পর্ব)

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

মোঃ অলিউল্লাহ্


আমাদের সমাজ বাস্তবতা আমাদের কিছু আপেক্ষিক বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। যেহেতু জীবনের সকল চাহিদা পূরণ করতে টাকা বা অর্থ-সম্পদ অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই আমাদের সমাজে টাকাকে সেকেন্ড গড বা সৃষ্টিকর্তার পরে সবচেয়ে বেশী মূল্যায়ন করা হয়। এমনকি কিছু মানুষের কাছে তো টাকাই সব। তাদের ধারণা, টাকা থাকলে সব করা যায়।

কিন্তু শিক্ষা বা জ্ঞান থাকলেও টাকা না থাকলে তার জ্ঞান মূল্যহীন হয়ে যায়। আজকাল টাকা দিয়ে সম্মানও কেনা যায়; এমনকি কৃত্রিম সনদও কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু লাখো জ্ঞানী মানুষ আছে, যারা টাকার অভাবে মূর্খকে প্রভু মানে,  খুবই নগন্য জীবনযাপন করে, অন্যের কাছে হাত পাতে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে সারাজীবন হতাশার গ্লানি বয়ে বেড়ায়।

কিন্তু এই প্রসঙ্গে একটা তিক্ত সত্য লুকিয়ে থাকে তা হলো, প্রকৃত জ্ঞানী বা শিক্ষিত ব্যক্তি কখনো জীবনে ব্যর্থ হয়না। তার জ্ঞানার্জন যদি সঠিকভাবে নেওয়া হয়ে থাকে, সে আদর্শের দিক থেকে যতটুকু উচ্চতায় অবস্থান করবে তেমনি, তার জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা উপার্জন কিংবা সম্পদ অর্জনের কমতি থাকবেনা। 

আমি শুরুতেই বলেছি, শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করতে হবে। লক্ষ্যহীন তরী যেমন সঠিক তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যহীন শিক্ষাও সফলতা আনতে পারেনা। যে জীবনে শিক্ষাকে একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছে, সে কখনো জীবনে কোন কিছুতেই অভাবী হতে পারেনা। 

'সঠিক শিক্ষালাভে কোন অভাব থাকতে পারেনা, যার অভাব আছে সে সঠিকভাবে শিক্ষালাভ করেনি।'


সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

  • পড়াশোনা করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
  • শিক্ষা লাভে বাধা বা অন্তরায়।
  • পড়াশোনার ব্যাপারে বিভিন্ন লোককথা ও সমালোচনা।
  • শিক্ষিত ব্যক্তিদের সামাজিক মূল্যবোধ।

(১ম পর্ব)

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

মোঃ অলিউল্লাহ্

দেখুন আমরা সবাই কমবেশি জানি পড়াশোনা কেনো করবো। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে, অর্থাৎ আমি আসলেই জীবনে কী হতে চাই তা বুঝতে না পারার কারণে শিক্ষা জীবন শুরু হলেও কারো মাধ্যমিক পাশ করেই শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যায়। কারো কারো উচ্চ মাধ্যমিক করেই শেষ  কিংবা ডিগ্রি স্নাতক পযর্ন্ত করা হলেও জীবনের সঠিক লক্ষ্য না বুঝার কারনে শিক্ষার গুরুত্ব হারিয়ে যায়।

আর তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই যা যা করতে হবেঃ


১। শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন কী জানতে হবে।
২। কেন শিক্ষা লাভ করবো জানতে হবে।
৩। একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
৪। জীবনকে একটা উন্নত ও অন্যের থেকে আলাদা মান দেবার জন্য জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৫। নিজের লক্ষ্য পৌছানোর জন্য বদ্ধপরিকর হতে হবে।
৬। পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবতাকে জানতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি জীবনমুখী কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
৭। শিক্ষাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে নিবিড়ভাবে জীবনের প্রয়োজনীতা পূরণ করতে সেই জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।
৮। নিজেকে অন্যের সামনে আদর্শবান করতে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৯। পৃথিবীকে জানতে, পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস,  বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা জানতে পড়াশোনা করতে হবে।
১০। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সৎ জীবনযাপন করার জন্য জ্ঞানার্জন অতি প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Friday, July 23, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ৩

 নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনাঃ

আগের পর্বগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, যে নজরুলের কাব্যের মূল দুইটি বিষয় হলো প্রেম ও বিদ্রোহ। প্রেম বিষয়ক কাব্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘অগ্নিবীণা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘চক্রবাক’, ‘ছায়ানট’, ‘দুলনচাপা’। নজরুলের প্রেমের কবিতা বাংলাকাব্যের বহুকাল আগের গীতিধর্মী যোগসূত্র পাওয়া যায়। প্রেম মানেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ, প্রেম মানেই বিরহ, প্রেম মানেই নানা রকমের অনুভূতির লেনদেন। তেমনি নজরুলের কবিতায়ও আবেদ, দুঃখ-বিরহ মিশ্রিত রোমান্টিক কবিসত্ত্বার পরিচয় পাওয়া যায়। নজরুলের কাব্যে আবেগ ও বিরহ সমানতালে পাওয়া যায়। কারাগারে বন্দি হয়েও তিনি প্রেমের কবিতা রচনা করেছেন। ‘দোলনচাপা’ কাব্যটি তিনি রচনা করেন কারাগারে বন্দি অবস্থায়। তিনি তাঁর প্রিয়তমার স্মরনে লিখেছেন-          
“এত দিনে অবেলায়-
প্রিয়তম!
ধূলি-অন্ধ ঘূর্ণি সম
দিবাযামী
যবে আমি
নেচে ফিরি র”ধিরাক্ত মরণ-খেলায়-
এ দিনে অ-বেলায়
জানিলাম, আমি তোমা’ জন্মে জন্মে চিনি।
পূজারিণী!”
 
 

 নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপঃ

নজরুলের কাব্যে  প্রকৃতি, প্রেম ও বিদ্রোহ এই তিনে মিলে একাকার। প্রকৃতি প্রেমের ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিশেষকরে ‘চক্রবাক’ কাব্যে। প্রকৃতি-প্রেম এবং বিরোহ দ্বারা তিনি কাব্য জগতে এক অপূর্ব সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির টানে তিনি সারাজীবন ছুটেছেন এদেশ-ওদেশ এবং একশহর হতে অন্য শহরে। তাঁর রচিত খুব অল্প কবিতাই খোঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে প্রকৃতি ও অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করেননি। কাজী নজরুল মানেই প্রকৃতি প্রেমী কবি। আর সেকারনেই তিনি লিখেছেন- 
 
“বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী ! 
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হ’য়ে এল বিদায়ের রাতি ! 
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি, 
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি ”
চট্টলা শহরে বেড়াতে গিয়ে বন্ধুর বাসার ঘরের পাশের গোবাক তরু গাছের সাথে কবির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রতিরাতে জানালা খোলে গাছের পাতাদের সাথে নিবিড়ে কথা বলা। কবি হৃদয়ের বিরহ-বেদনার কথা তাদের সাথে প্রকাশ করা। শেষবেলায় কবি যখন বিদায় নেবে, তখন এসব গাছের দিকে চেয়ে কবি বিরহকাতর। প্রকৃতি প্রেমের নিদর্শন হিসাবেই কবির বেশ কিছু কাব্য ফুলের নামে ও বৃক্ষের নামে রচনা করেছেন। ‘দোলনচাঁপা’, ‘ঝিঙেফুল’, ‘ফণীমনসা’, ‘রাঙা-জবা’, ‘মহুয়া’—আরোও বহু নাম। 

বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাবঃ

কাজী নজরুল ইসলামের প্রকৃত পরিচয় তিনি বিদ্রোহী কবি। নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। তাঁর কলমী আন্দোলন ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নির্মাণ করে বিদ্রোহী কবিতা। আর তাই  প্রতিবাদী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল এর বিদ্রোহী-সত্তার ভিতরে বহুমাত্রা লক্ষ্য দেখা যায়। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জাত-বর্ণ ও ধর্মীয় বিভক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিদ্রোহ ছাড়াও সকল ক্ষেত্রে অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। 
 
নজরুলের বিদ্রোহের স্বরূপ উন্মোচিত হয় ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়। এই কবিতায় তাঁর বলিষ্ঠ কন্ঠ ও বজ্রনিনাদ। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি বলেন,
 
“আমি দুর্ব্বার, আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃংখল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি  মানিনাকো কোন আইন।”

নজরুল এই কবিতার দ্বারা শোষক শ্রেণীর প্রতি তীব্র হুংকার দেন। অনাচার ও অত্যাচারের বিরোদ্ধে সাধারণ মানুষের নিয়মের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার মুক্তির আহ্বান জানান। নজরুলের বিদ্রোহ একটি সত্যকে প্রকাশ করা। আর সেই সত্য হলো মুক্তির ও কল্যাণের সত্য। তাঁকেই প্রথমবারের মতো দেখা যায়, পূর্ণভাবে ভারতের স্বাধীণতা চাইতে। তাঁর কন্ঠের বজ্রনিনাদ, বলিষ্ঠ বিদ্রোহ চেতনার ফলাফল ফুটে ওঠে তার লেখার মধ্য দিয়ে।
 
“আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, 
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা ”

নজরুল কখনো ভীত হননি কোন শাস্তির ভয়ে। সেকারণেই বারবার জুলুম সহ্য করে কারাবরণ করেও তাঁকে ধমাতে পারেনি কেউ। আর এই কারনেই তিনি বিদ্রোহী কবি।

পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন

 

পার্ট-২ পড়তে ক্লিক করুন


 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Wednesday, July 21, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ২

 নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তুঃ

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রথমত সাম্য ও মানবতা, দ্বিতীয়ত, প্রেম এবং তৃতীয়ত প্রকাশ পেয়েছে বিদ্রোহের। এছাড়াও নজরুলের কবিতায় অসাম্প্রদায়িকতা, প্রকৃতি ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কবি অসাম্যবাদের বিরোদ্ধে অবস্থান ও  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রের অসহায় মানুষের দৈন্যদশা, অত্যাচার, জুলুমের চিত্র দেখে কবি সেসব মজলুম মানুষের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। প্রেম বিষয়ক কবিতায় নজরুলকে পাওয়া যায় একজন রোমান্টিক কবি হিসাবে। কবি একদিকে যেমন বিদ্রোহী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন আবার অন্যদিকে প্রেমে-বিরহে কাতর। তাইতো কবি বলেছেন, “এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।


নজরুলের চক্রবাক কাব্যটি মূলত প্রেম বিষক কাব্য। এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই প্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে। প্রেম, প্রকৃতি, সাম্য-মানবিকতার পাশাপাশি ‍শিশুতোষ কাব্য ও ছড়াও রচনা করেন। নজরুলের কবিতায় বীররস প্রবলভাবে প্রতীয়মান হলেও, আবেগ মিশ্রিত কাব্যরসও পাওয়া যায়। তিনি একজন স্বাধীনচেতা কবি। মজলুমের অত্যাচারিত অবস্থা অবলোকন করে তিনি সাধারণ ও অসহায় মানুষকে স্বাধীনভাবে বাঁচার আহবান জানান।
  

সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকাঃ

নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ধর্ম-বর্ণের সাম্য, উচু-নিচু শ্রেণীর পার্থক্য ও বৈষম্য দূর করে সাম্যতা আনয়ন ও মানবতাকে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াস মেলে। তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে মানবতাকে ঠাঁই দিয়েছেন-
                                            “গাহি সাম্যের গান-
                                        মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান!
                                            নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
                                        সব দেশে, সবকালে, ঘরেঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”
 
তিনি রাজা-প্রজার মধ্যে ভেদাবেদ দেখতে চাননি। তিনি চেয়েছেন সকলের সমান মর্যাদা। যেহেতু আমরা সবাই একই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ, তাহলে এক মানুষ অন্য মানুষকে নিচু করতে পারেনা। এক মানুষ অন্য মানুষের পিঠে পা রাখতে পারে না। যেসব মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজ্য গঠিত হয়, হাজারো প্রজার জীবন দিয়ে রাজ্য গঠন করলেও সেই প্রজারাই হয় নির্যাতিত। তিনি সেসব প্রজাদের আহবান করেছেন শৃংখলার বাধন ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে। 
                                         “গাহি সাম্যের গান-
                                        যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই।
                                                এ প্রশ্ন অতি সোজা,
                                    এক ধরনীর সন্তান, কেন কেউ রাজা, কেউ প্রজা?”

তিনি বর্ণবাদের বিরোদ্ধে কলম ধারণ করেন। সাদা-কালোর মধ্যে কোন বৈষম্য হোক সেটা তিনি পছন্দ করেননি। তাই ‘সাম’ কবিতায় তিনি বলেন-  “নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গোরস্থান,
                                            নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গির্জা-ঘর
                                            নাইকো পাইক-বরকন্দাজ নাই পুলিশের ডর।”

কবি জাতের মধ্যে ভেদাবেদ কখনোই করেন নি। তাঁর অসংখ্য কবিতায় হিন্দু-মুসলমানকে সমানভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতাটি কবির বিখ্যাত একটি কবিতা। এ কবিতায় মানবিকতা ও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরেছেন। দেশ-কাল-পাত্রের বৈষম্যে যেনো মানব জাতির মর্যাদা খুন্ন না করা হয়। অনেকে ধারণা করেন, নজরুলের সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদের মতোই। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাঁর সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদ নয়। 

পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন

পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন

 

তৃতীয় পর্বে যা আলোচনা করা হবেঃ

  • নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।

  • নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।

  • বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।

     

    বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     

     


     

 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, July 20, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ১

 আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

 ১. বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব।

 ২. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা।

৩. নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তু।

৪. সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকা।

৫. নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।

৬. নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।

৭. বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।

 

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্বঃ

বাংলা সাহিত্য গগনের এক অত্যুজ্জল নক্ষত্র কবি নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তাঁর পদচারণা নেই। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, নাচ, অভিনয়, ইসলামী সঙ্গীতসহ আরোও বহু ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে এতো সব বিষয়কে ছাপিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা কাব্যের রাজাধিরাজ। তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সমকালীন সময়ের সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব কবি হিসেবেই অত্যাধিক খ্যাত।  বাংলা কবিতায় অন্য সকল কবিরা যখন সাধারণ গতাণুগতিক ধারায় কবিতা রচনা করছিলো, তখন নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। তাঁর কলমী আন্দোলন ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নির্মাণ করে বিদ্রোহী কবিতা। আর তাই  প্রতিবাদী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

দেশের মানুষের দৈন্যদশা ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষাবলম্বনের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে তাঁর দেশ প্রেম। সাপ্তাহিক ধূমকেতু পত্রিকায় লেখার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যের দরবারে পুরোপুরি প্রবেশ করেন। হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ শাসনের বিরোদ্ধে আরো বেশি সোচ্চার। অসাম্য ও অসত্যের বিরোদ্ধে তিনি শুরু করেন প্রচন্ড বিদ্রোহ। মুসলিম জাতিকে তাদের অতীত এতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুনিয়েছিলেন জাগরণের বাণী। তিনি দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছিলেন পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে দিয়ে মুক্ত-স্বাধীন জীবনের প্রতি এগিয়ে আসতে। এতে নজরুলের দেশপ্রেম কতটা প্রখর ছিলো বোঝা যায়। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যটি তাঁর প্রতিবাদী কাব্যের অন্যতম। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলো হলো- অগ্নিবিনা,    সঞ্চিতা , ফনিমনসা , চক্রবাক, মরুভাস্কর ইত্যাদি। 
 
বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজী নজরুল ইসলামের  যেসব কাব্য পড়ানো হয় তার মধ্যে ‘সাম্যবাদী’, ‘চক্রবাক’, ‘ফনিমনসা’ ও ‘অগ্নিবিনা’ কাব্য অন্যতম। বর্তমানে যেসকল শিক্ষার্থীরা বাংলা সাহিত্যে অধ্যায়নরত আছেন, তাদের বাংলা সাহিত্যে নজরুল কাব্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও এর উত্তরের দিকটি মাথায় রেখে ‘সাম্যবাদী’, ‘চক্রবাক’, ও ‘অগ্নিবিনা’ কাব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।
 

 জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনাঃ

 সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর কবিতার প্রতি বিশেষ দরদ। সব বিষয়কে ছাপিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা কাব্যের রাজাধিরাজ। তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সমকালীন সময়ের সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব কবি হিসেবেই অত্যাধিক খ্যাত।  বাংলা কবিতায় অন্য সকল কবিরা যখন সাধারণ গতাণুগতিক ধারায় কবিতা রচনা করছিলো, তখন নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন।
সাহিত্যিক গুণাগুন ও বৈশিষ্ট বিবেচনায় তিনি জাত কবিদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন এবং তাঁর কাব্য রচনা এক অনন্য মাত্রায় স্থান পায়। তাঁর কবিতার শব্দ, বাক্যগঠন, ছন্দ ও ভাষা এতোটাই প্রাঞ্জল যে, সমসাময়িক কবিরা তাঁর ধারে কাছেও ভিরতে পারেন নি। স্বদেশী ভাষা ছাড়াও অসংখ্য বিদেশী ভাষার শব্দ তাঁর কবিতাকে অলংকৃত করে।


কাব্য রচনার ভাষাশৈলী শিল্পের উচ্চমান দখল করে আছে। তিনি কাব্য রচনার ক্ষেত্রে আরবি, ফারসি, হিন্দি ও উর্দু শব্দের প্রয়োগ করেন। তিনি এমন কিছু বিদেশী শব্দ কবিতায় ব্যবহার করেছেন, যেগুলো সহজেই বাংলা শব্দের সাথে মিলে গিয়েছে। এমনকি অনেক শব্দকে বাংলা বলেই মনে হয়। ভিন্ন রূপটিও দেখিয়েছেন, যেমন- জাহান্নাম, ঈমান, আসমান, হিম্মত, জানাজা শব্দগুলো বাংলা শব্দের রূপ দিতে চাইলেও তা আরবি-ফারসিই রয়ে গেছে। তাঁর ফারসি ভাষা ও আরবি ভাষা বেশ সমালোচিত ও বিতর্কত; তথাপি তিনি ব্যক্তিগত ধরনে বিশ্বাসী ছিলেন। বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম কিংবা বাগ-বিধানের প্রতি এতোটা খেয়াল করেননি। নিজস্ব ধরন প্রকাশ পেয়েছে কবিতায় এবং কাব্য নির্মানের যাদু জানা ছিলো তাঁর।

যেহেতু এই বিষয়ের আলোচনা কিছুটা দীর্ঘ হবে, তাই কয়েকটি পর্বে লেখার চেষ্টা করছি। প্রতিটি পর্বের লিংক নিচে দেওয়া থাকবে, আপনারা ক্লিক করেই অন্য পর্বের আর্টিকেলটি পড়তে পারবেন। এই পর্বটি এখানেই শেষ করলাম।
 
 

পার্ট-২ পড়তে ক্লিক করুন

পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন।

 

সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে- 
 
বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
 
কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের বিষয়বস্তু কী? ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের মূলভাব আলোচনা কর। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের  স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে কাদের সাম্যের কথা বলা হয়েছে?
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের নাম কবিতা ‘সাম্যবাদী’র মূলভাব আলোচনা করো।
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতার মূলসুর কি?
‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ‘বারাঙ্গনা’ ও নারী কবিতায় কোন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে? পড়তে ক্লিক করুন।
 
 
‘চক্রবাক’ কাব্যের মূলভাব আলোচনা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের বিষয়বস্তু কি? ‘চক্রবাক’ কাব্যে প্রেমের স্বরূপ ফুটে ওঠেছে আলোচনা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের নাম কবিতা ‘চক্রবাক’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের  ‘কুহেলিকা’ কবিতার ভাববস্তু কী? ‘চক্রবাক’ কাব্যের ‘তোমারে পড়িছে মনে’ কবি কার কথা মনে করে কবিতাটি রচনা করেন? পড়তে ক্লিক করুন।
 




 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, October 22, 2020

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র

 চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র

     - সাহিত্য বিশ্লেষণ, সমালোচনায় মোঃ অলিউল্লাহ

‘চোখের বালি’ উপন্যাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিনোদিনী। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রাখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ চরিত্রটি অতি যত্নে গড়া এবং শিল্পীর চরিত্র নির্মাণের নিপুন কৌশল প্রস্ফুটিত হয় বিনোদিনী চরিত্রের মাধ্যমে। বিনোদিনীকে উপস্থাপন করা হয় প্রাপ্ত বসয়স্ক, সুদর্শনা, দক্ষ এবং বিধবা হিসাবে। বিনোদিনীর বাবার আর্থিক অবস্থা সচল না হওয়া সত্ত্বেও সে মেয়েকে মিশনারী মেম রেখে অতিযত্নে পড়াশোনা ও কারুকার্য শিখিয়েছিলেন।


তবে মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার উদাসীনতা ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিনোদিনীর বিধবা মাতা সংসারের অভাবের জন্য মেয়েকে পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। একই গ্রামের মেয়ে বিনোদিনীর মা হরিমতি ও রাজলক্ষী। শৈশবের খেলার সাথী। তাই রাজলক্ষীর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে তার ছেলে মহেন্দ্র দ্বিধায় পরে যায় এবং বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে রাজলক্ষীর জন্মভূমি বারাসতের গ্রাম সম্পর্কিয় এক ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে বিনোদিনীকে তার মা বিয়ে দেয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই বিনোদিনীর স্বামী মারা যায়। 


মহেন্দ্র অবশ্য তার কাকীমার বোনঝি আশাকে বিয়ে করে স্বাচ্ছন্দেই সংসার করছিলো। নবদম্পতির কোনরূপ আহ্লাদের বাকি রইলোনা। এমনকি মহেন্দ্রের মা যখন তার জন্মভূমিতে বেরাতে যায়, সেখানে বিহারীর মাধ্যমে তার মাকে চিঠি পাঠায়। কিন্তু মাকে দেওয়া চিঠি যখন বিনোদিনী পরে শোনাচ্ছিল, তখন চিঠির কিছু অংশ পরে বুঝতে পেরেছিলো এই চিঠিতে কেবল স্বামী-স্ত্রির প্রণয়-উপাখ্যান লেখা বৈ কিছু নাই। তাই চিঠি খানা নিজের কাছে রেখে দেয় এবং পরে একেলা ঘরে সেই পড়ে বিনোদিনীর মনে অন্য রকম এক অনুভূতি খেলা করে। বিনোদিনী স্বামী সোহাগ ভালোভাবে বুঝবার আগেই  বিধবা হয়, তাই আশা ও মহেন্দ্রের বিবাহ উত্তর সকল বিষয়গুলো চিঠি পড়ে অনুধাবন করছিলো ও নিজের অনূভুতির সাথে মিলিয়ে নিয়েছিল।


বিনোদিনী ভালো করেই জানতো মহেন্দ্র ও বিহারীর সাথে তার বিবাহের কথা-বার্তা হয়েছে। তারা দু’জনেই বিনোদিনীকে দেখতে যাওয়া ও প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু রাজলক্ষী জন্মভূমিতে ফিরে যাবার বিনোদিনীর অধিক যত্নে খুবই তৃপ্ত হয় এবং বাড়ি ফেরার সময় বিনোদিনীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। বিনোদিনী ও আশার মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়। যেহেতু বিনোদিনী সকল কাজেই খুব পারদর্শী তাই আনাড়ি আশাকে কারুকার্য ও ঘরের কাজ শিখানোর মাধ্যমে দু’জন দুজনের সখী হয়ে যায়। আশা তার সইকে নিজের বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মহেন্দ্র এমন অসাধারণ সুন্দরী নারী এর আগে কখনো দেখেনি।


অন্যদিকে বিনোদিনীও আশা ও মহেন্দ্রের বৈবাহিক জীবনভোগের দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে না পেরে তাদেরকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। দিনের পর দিন বিনোদিনীর নিপুন কর্মদক্ষতা, ইংরেজিতে কথা বলা ও তার সৌন্দর্যের জন্য মহেন্দ্রের মনে আচর কাটে। একসময় মহেন্দ্র বিনোদিনীর প্রেমের ফাঁদে বন্দী হয় এবং নিজের স্ত্রীর সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। অন্যদিকে মহিনের বাড়িতে প্রায়ই বিহারী আসে এবং বিনোদিনীর আপ্যায়ন ও আতিথেয়তায় পরিতৃপ্ত হয়। এমনকি বিহারী যখন দূরে চলে যেতো তখন বিনোদিনী অতিযত্নে তার ঘর গোছানো, গ্লাসে ফুল সাজানো ও ঘরটিকে সাজিয়ে ঘুছিয়ে পরিপাটি করে রাখতো। 

বিহারী ধীরে ধীরে বিনোদিনীতে মুগ্ধ হয়ে যায়। বিনোদিনী সবই বুঝতে পারে। একদিকে যেমন মহেন্দ্র তার জন্য অত্যন্ত উদাসীন ও তাকে ছাড়া অতি অক্ষম বোধ করে অন্য দিকে তার স্ত্রীর সাথে ক্রমেই ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে থাকে। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে পারেনি, এভাবে সে তার স্বামী বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। আশা তাদের প্রেমালাপ ও দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে এক সময় মহেন্দ্রকে মুক্তি দিলো।

বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইংরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকল প্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল। 

বিনোদিনী চরিত্রের দ্বৈতরূপ ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অংকন করেছেন। বিনোদিনী একদিকে নিজের প্রতি অবহেলাকারীদের নাকে দড়ি লাগিয়ে ঝুলিয়েছে অন্যদিকে নিজের কামনা-বাসনার উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। কিন্তু উপন্যাসের শেষের দিকে মহেন্দ্রকে করুণ পরিণতিতে প্রতিফলিত করেছে। চরিত্রের সার্থকতা বিবেচনায় বিনোদনী চরিত্রটি সফল ও ভাস্বর।

* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র






লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ ‍উপন্যাস



সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, October 20, 2020

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || মহেন্দ্র চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের আলোচিত চরিত্রসমূহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবং বিশ্লেষণাত্মক বৈশিষ্টসমূহ তুলে ধরা হলো। 

‘চোখের বালি’ উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি। নিম্নে এসব চরিত্রের পুঙ্খানোপুঙ্খ আলোচনা করা হলো।

  মহেন্দ্র  

মহেন্দ্র সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। মহেন্দ্র শৈশবেই তার বাবাকে হারিয়েছে। তার মা রাজলক্ষী। আর দশজন মাকে যেরূপ সম্বোধন কিংবা সম্মান করে, মহিনের ব্যবহার তেমন ছিল না। সে বাইশ বছর বয়সে এমএ পাশ করে ডাক্তারি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। আরম্বরপূর্ণ জীবনযাপন ও স্বেচ্ছাচারিত তার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলেও উপন্যাসের শুরুর দিকে সে তার মাকে ছাড়া কোন কিছুই করতে পারতো না। অর্থাৎ খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মায়ের আচলের নীচে থাকায় অভ্যস্ত।

রাজলক্ষী ও হরিমতি শৈশবের বান্ধবী ও একগ্রামের মেয়ে। হরিমতির কথায় রাজলক্ষী যখন মহিনকে তার বিধবা মেয়ে বিনোদনীকে বিয়ে করতে বলে তখন সে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। মাকে খুশি করার জন্য কোন রকম বলে দেয় যে, বিয়ে করবে। পরে আবার ইতস্তত করে বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে তার মা বিনোদিনীর মাকে পাকা কথা দিলেও পরে না বলতে হয়।

বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।” শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে।


মহেন্দ্রের কাকী অন্নপূর্ণাকে সে যারপরনাই ভালোবাসে। কিন্তু অন্নপূর্ণা তার বোনের মেয়ে আশালতাকে বিয়ে করতে বললে, সে নিজে না করতে পারবেনা তাই বিহারীর জন্য দেখতে যেতে রাজি হয়। অন্যদিকে বিহারীও অন্নপূর্ণাকে দেবীর মতো ভক্তি ও অনেক শ্রদ্ধা করে। আর সেজন্য অন্নপূর্ণাকে সে না বলতে পারে না। মহেন্দ্র অনেক সাজসজ্জা করে বিহারীকে নিয়ে কন্যা দেখতে বের হয়।


কন্যার জেঠা অনুকূল বাবু তার তিনতলা বাড়ি সুসজ্জিত করে রেখেছেন। আশাকে দেখার পর বিহারীর উপর জোরপূর্বক চাপানো সিদ্ধান্ত ভুলে গিয়ে বিহারিকে বলে মহিন আশাকে পছন্দ করেছে। ওদিকে বিহারীরও আশাকে ভালো লেগেছে, কিন্তু মহেন্দ্রের ভাব বুঝতে পেরে সে তাকেই বিয়ে করতে বলে। মহেন্দ্র তার মাকে আশার কথা বলায়, রাজলক্ষী মনোক্ষুন্ন হয় এবং অন্নপূর্ণার প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে। অথচ অন্নপূর্ণা এর কিছুই জানেনা। পরে মহিনের জেদের কাছে হার মেনে মা তাকে বিয়ে করাতে রাজি হয়।


পরে বিহারী অন্নপূর্ণাকে অনুরোধ করলে সে তার বোনঝির সাথে মহিনের বিয়ে দিতে রাজি হয়। অন্নপূর্ণা আশার জন্য বিহারীকে পছন্দ করলেও মহিনের জেদের কারনে আশার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মহিন নববধুর প্রতি খুবই অনুরাগী তাকে ছাড়া যেনো এক বেলাও চলে না। তার কিছু কিছু বারাবারিতে তা মা খুবই বিরক্ত। 

ডাক্তার হবার যে ইচ্ছা পোষন করেছিলো তা ধীরে ধীরে শেষ হতে চলল। মহিনের ডাক্তারি ছেড়ে স্ত্রীকে পড়াশোনা করানো নতুন দায়িত্ব হয়ে ওঠল। অবশ্য সেসব বেশিদিন চলল না, স্বামী-স্ত্রী সোহাগ, মান-অভিমান ও বিবাহিত জীবনের উপর শুরু হতে চলল নতুন ঘটনা।


মহিনের মা তার জন্মভূমি যাওয়ার পর কিছুকাল অবস্থান করে সেখানে বিনোদিনীর আদর যত্নে খুবই আনন্দিত। বিহারে তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে বিনোদিনীকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। যেই বিনোদিনীকে একদিন মহিন ও বিহারী অবহেলা করে বিয়ে করতে চায়নি, তাকে দেখে দু’জনেরই চরিত্রের চোখ কপালে উঠেছে। 


বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকলপ্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে।

যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে এভাবে সে তার স্বামীকে বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। 

মহিন চরিত্রটি সর্বদাই দুটানায় ছিলো। তার চরিত্রে সুশিক্ষিতের আধিক্য থাকলেও নিজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় চরিত্রের দুর্বল দিক হিসাবে ফুটে ওঠে। বিহারি তার খুব কাছের বন্ধু হলেও সে নিজ কামনা-বাসনা পূরণ করতে তাকেও ঠকাতে দ্বিধা করেনি। যেই বিনোদিনীকে প্রথমে অবহেলাবসত বিয়ে করতে রাজি হয়নি, তার ছলনায় পরেই শেষ পর্যন্ত তার সংসার ভাঙ্গে। পরিণতিতে সে নিজের স্ত্রীকে যেমন হারায়, তেমনি বিনোদিনীকেও পায়না। 


চরিত্রের উভয় সংকট ও মানসিক দুর্বলতা প্রথমত মায়ের সাথে দূরত্ব ও অযত্নের পরিচয় দেয়। প্রিয় স্ত্রীকে হারায় ও বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়। সমগ্র উপন্যাস জুরে যে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল মহেন্দ্র, তার পরিণতি হয়েছে খুব করুণ।

----------------------------------------------------

* বিনোদিনী চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র






লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ ‍উপন্যাস
সম্পূর্ণ পড়ুন...

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন উপন্যাস ও বিস্তারিত আলোচনা

শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাসাহিত্যে সর্বমোট ১৩ টি (তেরো) উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃ্দ্ধ করেছিলেন।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ও বহুল আলোচিত উপন্যাসসমূহ হলোঃ

=>> বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩)

=>> রাজর্ষি (১৮৮৭)

=>> চোখের বালি (১৯০৩)

=>> নৌকাডুবি (১৯০৬)

=>> প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮)

=>> ঘরে বাইরে (১৯১৬)

=>> যোগাযোগ (১৯২৯)

=>> শেষের কবিতা (১৯২৯)

=>> মালঞ্চ (১৯৩৪)


চোখের বালিঃ 

‘চোখের বালি’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের সর্বাধিক সমাধৃত ও বহুল আলোচিত উপন্যাস। এ উপন্যাসের


আলোচ্য বিষয় হলো মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, বিধবা বিবাহের সমস্যা এবং পারিবারিক বিভিন্ন রকম আবেগধর্মী, সংবেদশীলতা, বিদ্বেষ, পরকিয়া ও সাংসারিক কলহ। এই উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি।

বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন




ঘরে বাইরেঃ

‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের খুবই জনপ্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয় ত্রিকোন


প্রেমের ঘটনা, বৈপ্লবিক জাতীয়বাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, নিখিলেস ও বিমলার সাংসারিক টানাপোড়েন, সন্দীপ ও বিমলার পরকিয়া সম্পর্ক। এছাড়াও ধর্মীয় মনোভাব, নৈতিকতা ও স্বদেশ  প্রেমের  স্বরূপ উদঘাটন উল্লেখযোগ্য। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে একজন নারীর স্বাধীনতার সীমা অতিক্রম ও গৃহ অভ্যন্তরে নারীর পরাধীন অবস্থা সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।

বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন




নৌকাডুবিঃ

‘নৌকাডুবি’ রবীন্দ্রনাথের অন্য সকল উপন্যাস হতে ভিন্নতা দেখা গেছে। তবে জীবনের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি


ও সমাজসচেতনতা এখানে ফুটে ওঠে। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রমেশ।

বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন











সম্পূর্ণ পড়ুন...

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য সমালোচনা

বাংলা সাহিত্যের গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নতুন করে বলবার কিছুই নেই। যা কিছুই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বলা হবে তা হবে খুবই সীমাবদ্ধ। কিন্তু তিনি সাহিত্যের এমন কোন সীমা নেই যা অতিক্রম করেন নি। সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ান নি। তিনি সাহিত্যের সকল শাখাকে ভেঙ্গেচূড়ে গড়েছেন নতুন আঙ্গিকে। বাংলা সাহিত্যের পরিপক্বতা পেয়েছে তাঁর হাত ধরেই। সাহিত্যের যদি কোন অপূর্ণতা থাকে তা পূর্ণতা পেয়েছে তাঁর রচনার ভান্ডারে। কিন্তু আমি প্রকৃতপক্ষে সেসব বলতে এখানে আসিনি, আর আমার উদ্দেশ্যটাও একটু ভিন্ন। আমি মূলত সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ও সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও অন্যান্য সাহিত্যের উপাদান নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। যাতে যে কেউ সাহিত্যের বিভিন্ন গতানুগতিক প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য গদবাধা গাইড বই ও নোটের উপর নির্ভর করতে না হয়। যেন এই সাহিত্য বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রয়োগ করতে পারে। আমি আশা করছি সকল স্তরের শিক্ষার্থীরাই এই সাহিত্য সমালোচনার দ্বারা উপকৃত হবে।

বলে নিচ্ছি রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে কতটুকুঃ

* তিনি সর্বমোট কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন ৫২ (বায়ান্নটি)।

* উপন্যাস ১৩ টি।

* নাটক ৩৮ টি।

* প্রবন্ধ ৩৬ টি। 

* ছোটগল্প ৯৫ টি।

*সঙ্গীত ১৯১৫ টি।

এছাড়া ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘গীতবিতান’, ‘পত্রসাহিত্য’ রচনা করেন ও ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার তাঁর ভান্ডারে জমা পড়ে। তিনি কবি, চিত্রকর, গায়ক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা আর একজর বিজ্ঞ দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেবল বাংলা সাহিত্য নয় বরং অন্যান্য সকল সাহিত্যের সাথে তুলনা করলেও এমন একজন সাহিত্যিক খোঁজে পাওয়া বিরল। আমি প্রথমত রবীন্দ্র উপন্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। এখানে উপন্যাসের বিষয়বস্তু, পটভূমি, প্রশ্নপত্র বিবেচনা করে সেসবের উত্তরের নিমিত্তে তৈরি করবো বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্নোত্তর। এভাবে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাহিত্যের প্রতিটি বিষয় নিয়ে লিখবো। 


রবীন্দ্র উপন্যাস পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ





লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ ‍উপন্যাস

সম্পূর্ণ পড়ুন...