Wednesday, July 21, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ২

 নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তুঃ

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রথমত সাম্য ও মানবতা, দ্বিতীয়ত, প্রেম এবং তৃতীয়ত প্রকাশ পেয়েছে বিদ্রোহের। এছাড়াও নজরুলের কবিতায় অসাম্প্রদায়িকতা, প্রকৃতি ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কবি অসাম্যবাদের বিরোদ্ধে অবস্থান ও  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রের অসহায় মানুষের দৈন্যদশা, অত্যাচার, জুলুমের চিত্র দেখে কবি সেসব মজলুম মানুষের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। প্রেম বিষয়ক কবিতায় নজরুলকে পাওয়া যায় একজন রোমান্টিক কবি হিসাবে। কবি একদিকে যেমন বিদ্রোহী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন আবার অন্যদিকে প্রেমে-বিরহে কাতর। তাইতো কবি বলেছেন, “এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।


নজরুলের চক্রবাক কাব্যটি মূলত প্রেম বিষক কাব্য। এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই প্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে। প্রেম, প্রকৃতি, সাম্য-মানবিকতার পাশাপাশি ‍শিশুতোষ কাব্য ও ছড়াও রচনা করেন। নজরুলের কবিতায় বীররস প্রবলভাবে প্রতীয়মান হলেও, আবেগ মিশ্রিত কাব্যরসও পাওয়া যায়। তিনি একজন স্বাধীনচেতা কবি। মজলুমের অত্যাচারিত অবস্থা অবলোকন করে তিনি সাধারণ ও অসহায় মানুষকে স্বাধীনভাবে বাঁচার আহবান জানান।
  

সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকাঃ

নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ধর্ম-বর্ণের সাম্য, উচু-নিচু শ্রেণীর পার্থক্য ও বৈষম্য দূর করে সাম্যতা আনয়ন ও মানবতাকে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াস মেলে। তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে মানবতাকে ঠাঁই দিয়েছেন-
                                            “গাহি সাম্যের গান-
                                        মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান!
                                            নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
                                        সব দেশে, সবকালে, ঘরেঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”
 
তিনি রাজা-প্রজার মধ্যে ভেদাবেদ দেখতে চাননি। তিনি চেয়েছেন সকলের সমান মর্যাদা। যেহেতু আমরা সবাই একই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ, তাহলে এক মানুষ অন্য মানুষকে নিচু করতে পারেনা। এক মানুষ অন্য মানুষের পিঠে পা রাখতে পারে না। যেসব মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজ্য গঠিত হয়, হাজারো প্রজার জীবন দিয়ে রাজ্য গঠন করলেও সেই প্রজারাই হয় নির্যাতিত। তিনি সেসব প্রজাদের আহবান করেছেন শৃংখলার বাধন ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে। 
                                         “গাহি সাম্যের গান-
                                        যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই।
                                                এ প্রশ্ন অতি সোজা,
                                    এক ধরনীর সন্তান, কেন কেউ রাজা, কেউ প্রজা?”

তিনি বর্ণবাদের বিরোদ্ধে কলম ধারণ করেন। সাদা-কালোর মধ্যে কোন বৈষম্য হোক সেটা তিনি পছন্দ করেননি। তাই ‘সাম’ কবিতায় তিনি বলেন-  “নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গোরস্থান,
                                            নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গির্জা-ঘর
                                            নাইকো পাইক-বরকন্দাজ নাই পুলিশের ডর।”

কবি জাতের মধ্যে ভেদাবেদ কখনোই করেন নি। তাঁর অসংখ্য কবিতায় হিন্দু-মুসলমানকে সমানভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতাটি কবির বিখ্যাত একটি কবিতা। এ কবিতায় মানবিকতা ও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরেছেন। দেশ-কাল-পাত্রের বৈষম্যে যেনো মানব জাতির মর্যাদা খুন্ন না করা হয়। অনেকে ধারণা করেন, নজরুলের সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদের মতোই। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাঁর সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদ নয়। 

পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন

পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন

 

তৃতীয় পর্বে যা আলোচনা করা হবেঃ

  • নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।

  • নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।

  • বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।

     

    বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     

     


     

 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment