Saturday, June 14, 2025

কথার আড়ালে কিছু কথা

 সময় খুবই আন প্রেডিক্টেবল। যখন যা ঘটে, ঘটার পরই কেবল তা উপলব্ধি করা যায়। আগে কিছুই বুঝা যায় না। 

ঘটনা প্রবাহ দুই ধরনের। এক. যে ঘটনার ইমপেক্ট সীমিত সময়ের জন্য। দুই. যেটার প্রভাব দীর্ঘদিন পড়তে থাকে।

শৈশব কৈশোর, পড়াশোনা, পরিকল্পনা আর ক্যারিয়ার ভাবনায় চলে গেল এক খন্ড জীবন। 

💐এই খন্ডে অবশ্য কিছু ধমকা হাওয়া গায়ে লেগে ছিল। দু'একটা মনুষ্য চরিত্র আমার সময়ের সঙ্গী হয়ে ছিল। আমার ব্যক্তিগত জীবন ভাবনা ও তাদের জীবনের ব্যক্তিগত পিছুটান আর দূর্বলতা অসামঞ্জস্য বলে আমার জীবনের পূর্ণাঙ্গ অংশ হতে পারল না। 

🎯ক্যারিয়ার আর জীবন নদীর প্রতিটা নতুন ঢেউয়ের সাথে ভাসতে ভাসতে কখন যেন পরিকল্পিত সব ভাবনারা এলো মেলো হয়ে একাকার হয়ে গেছে। 

🎈হাটতে শুরু করলাম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে চেষ্টা করলাম। একটা মানুষকে ঘিরে বাঁচতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার অধৈর্য ও তাদের পারস্পরিক নীচু মানসিকতা ও অন্তর দ্বন্দ্ব একটা সুন্দর সম্পর্ককে ১ মাসের মধ্যেই কবর রচনা করে দিল। তাদের এতটুকু বোধগম্য হয় নি যে, একটা সম্পর্ক কে সম্পূর্ণ বুঝতে হলে ১ মাস সময় কোন ভাবেই বেশি নয়।

🔷জীবনের সর্বোচ্চ সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরেও নিজের কিছু উদাসীনতা ও খামখেয়ালি মনোভাবের কারনে জীবনের শ্রেষ্ঠ ধাক্কা খাইলাম। 

🔶পরিবারের পছন্দসই নিলাকে বিয়ে করতে রাজি হই। নিলা ও নিলার পরিবারের সকলের পছন্দ হয় আমাকে। বিয়ে হয়ে গেল খুবই কম সময়ে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রইল। 

💠 নীলা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই নীলাকে স্বামীর বাড়ি পাঠাতে তাদের অনেক ভয়। এছাড়া নীলা উচ্চ শিক্ষিত হতে চায়, নিজের পায়ে দাড়াতে চায়। স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করতে চায়। 

❗যেখানে আমার ঘোর আপত্তি। কেননা, আমি উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। ঘর জামাই হয়ে থাকার সম্ভাবনা দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হলাম। তাছাড়া নীলা টপ টু বটম একটা আধুনিক ওভার স্মার্ট মেয়ে। তাকে পূর্ণাঙ্গ  স্বাধীনতা দেওয়া মানে নিজের নাকে শিকল লাগিয়ে অন্য কাউকে টানতে দেওয়া। সেই আশঙ্কায় অতি অল্প সময়ে জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।

🔺নীলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তিন মাস যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর সে আমাকে ফেইক ডিভোর্স লেটার পাঠায়। কেননা, নীলার বয়স কম হওয়ার নিকাহ নামা সম্পন্ন না হয়ে কেবল ধর্মীয় রেওয়াজ অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। 

🧭মানসিক চাপ আর একাকীত্ব ক্রমান্বয়ে আমাকে ডুবাতে থাকল। 

💧তনিমা আমার ফুফাতো বোন। বয়সে আমার অনেক ছোট। 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, May 18, 2025

যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

 যে চিন্তায় দিশেহারা মানুষ

                                                                                   মোঃ অলিউল্লাহ

সমস্ত পৃথিবীর মানুষের ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রে অবস্থান যে বিষয়টির, তা হলো টাকা ও সম্পদ। শৈশব ও কৈশোর পেরোলেই যেন প্রতিটা মানুষের জীবনে তৈরি হয় স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্খা। আর জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে গেলে অর্থ বা সম্পদের বিকল্প নেই। মানব জাতি ছাড়াও পৃথিবীর সকল প্রাণীরই বেঁচে থাকতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিটা প্রাণীর জন্যই রিযিকের ফায়সালা করে রেখেছেন। সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক যে উপাদনা গুলো তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য, বাসস্থান ও জৈবিক চাহিদা। 

যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানব জাতি, তাই মানুষের জন্য রয়েছে কিছু বাড়তি উপাদান। যেমন:- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন। তবে প্রকৃতির সকল প্রাণীর সাথে মানুষের জীবনের সামঞ্জস্যতার বিবেচনায়, একটি মানুষের জীবনে যে আহা মরি কোন পার্থক্য নেই তা উপলোব্ধির সময় ও সুযোগ মানুষের হয় না। যদি কোন মানুষ চিন্তা করে একটি পাখিকে নিয়ে, পাখিটির বাঁচার জন্য দরকার খাবার, আর সেই খাবারের আহরণ করে ও সামান্য পরিশ্রম করে পাখি তার খাবার জোগায়। দয়াময় আল্লাহ তার  পাখির সেই সামান্য চেষ্টা ও শ্রমের উসিলায় তাকে রিযিক দান করেন। তেমনি পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা করেন মহান রাব্বুল আলামিন।

 

 মানুষের জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য কি, তা বোধগম্য হয়ে ওঠে না মরার আগ পর্যন্ত বহু মানুষের। কেউ কেউ জীবনকে অনুসন্ধান করেন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছু মানুষকে সঠিক পথে হয়তো নিয়ে যায়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষকে নিয়ে যায় ভ্রান্তির পথে, গোমরাহির পথে।


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, May 13, 2025

'চোখের বালি' উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় উপন্যাস 'চোখের বালি' রাজলক্ষ্মী চরিত্র 

'চোখের বালি' উপন্যাসের মনস্ত্বাত্তিক ও বাস্তবিক প্রেক্ষাপটঃ

'চোখের বালি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। সাহিত্য সমালোচকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এ উপন্যাসের মধ্য দিয়েই বাংলা উপন্যাসের বাঁক পরিবর্তন ঘটেছে । 'চোখের বালি' উপন্যাসটি একটি চরিত্রনির্ভর উপন্যাস, যেখানে কাহিনীর চেয়ে চরিত্রগুলোকে সনাক্ত করা যায় খুব সহজে এবং প্রতিটি চরিত্রই যেন লেখকের একেকটি জীবন্ত ও বাস্তব চরিত্র চিত্রায়ন করেছেন। তাই এই উপন্যাস কাহিনীনির্ভর তা বলা যায় না। উক্ত উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে, যেখানে একটি উপন্যাসের কাহিনী হতে চরিত্রগুলো পরিলক্ষিত হয় বেশী।
 
 

'চোখের বালি' স্নেহ সুলভ দৃষ্টিভঙ্গিঃ 

উক্ত উপন্যাসের চার নারী চরিত্রের মধ্যে রাজলক্ষ্মী চরিত্রটি অন্যতম। 'চোখের বালি'র নায়ক চরিত্র মহেন্দ্রের মা রাজলক্ষ্মী।স্বামীর মৃত্যুর পর হতে সমাজ সংসারে পুত্র মহেন ছাড়া আর কিছু রাজলক্ষ্মী বোঝে না, মহেনই তার সব। উপন্যাসটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে রাজলক্ষ্মীর পরিবারকে কেন্দ্র করেই। রাজলক্ষ্মী ধনী বিধবা।  তার একমাত্র পুত্র মহেন্দ্রকে নিয়েই সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। আর দশজন মায়ের চেয়ে রাজলক্ষ্মী কিছুটা আলাদা। তার দৃষ্টিকোণ থেকে তার ছেলে মহেন্দ্রের চেয়ে ভাল ছেলে আর একটিও হয় না । 
 
মহেন যখন পড়াশোনায় এমএ পাস করে ফেলেছে এবং ডাক্তারি পড়া শোনা করছে তখনো তার মা তাকে আঁচলছাড়া করে না। মহেনের আহার, বিহার, আরাম— সবই রাজলক্ষ্মী কে ঘিরে। মা ছেলের যেন সব কিছুতেই দারোণ আদিক্ষ্যেতা। মা হিসাবে নিজের কাছে যেটা ভাল মনে হয় সে সম্পর্কে বিশ্বের লোককে উপেক্ষা করার মতো একটা স্বাভাবিক জেদ তার ছিল । তদুপরিও মহেনের যা কিছু ভাল লাগে রাজলক্ষ্মীর তা ভাল না লাগলেও সে তা ভাল না লাগিয়ে পারে না । 
 
 

রাজলক্ষী চরিত্রের দোষ-ত্রুটিঃ

মা হিসাবে রাজলক্ষী চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো তার ছেলে যত অন্যায়, যত ভুলই করুক না কেন সে বিষয়ে যে কোন প্রকারেই হোক তা আড়াল করে রাজলক্ষ্মী বরং অন্যকে দোষারোপ করবে। রাজলক্ষ্মীর ইচ্ছে হয়েছে মহেন্দ্র বিয়ে করুক। কিন্তু মহেন বিয়ে করতে রাজি নয়। রাজলক্ষ্মী তার জা অন্নপূর্ণাকে নালিশ করে জানায় যে, অন্নপূর্ণা বলেছে— এখন ছোট ছেলেটির মতো ব্যবহার মানায় না। এতেই রাজলক্ষ্মী অন্নপূর্ণার উপর ক্ষেপে ওঠে— মহেন যদি অন্যদের চেয়ে মাকে একটু বেশি ভালবাসে তবে অন্যদের তাতে কী? রাজলক্ষ্মী তার সইয়ের সুদর্শনা সুশিক্ষিতা মেয়ে বিনোদিনীকে মহেনের সাথে বিয়ের কথা বলে কিন্তু মহেন বিয়েতে রাজি হয় না। অথচ জা অন্নপূর্ণার বোনঝি আশাকে বিহারীর জন্য দেখতে গিয়ে নিজেই পছন্দ করে বসে।
 
যদিও রাজলক্ষ্মী মহেনের এহেন কাজে মত দেয় নি, তাই দেখে মহেন বাড়ি ত্যাগ করে মেসে গিয়ে ওঠে। রাজলক্ষ্মী ছেলেকে খুব ভাল করেই জানে, তাই গোলযোগ হবার ভয়ে আশাকেই বউ করে ঘরে আনে আর সমস্ত দোষ দেয় অন্নপূর্ণাকে। কিন্তু মহেন যখন আবার আশালতাকে ফেলে বিনোদিনীর দিকে ঝুঁকে রাজলক্ষ্মী ছেলের দোষ না দিয়ে আশাকে দোষারোপ করতে শুরু করে। রাজলক্ষীর ধারণা, পুরুষ মানুষ কিছুটা বেপোরোয়া ও বিপথে যেতেই পারে, কিন্তু বউয়ের উচিত তাকে সামলে রাখা।
 
‘চোখের বালি' উপন্যাসের কাহিনীতে আবর্তন বিবর্তন ঘটিয়েছে তার পুত্র সর্বস্ব অভিমান ও বেসামাল মানসিকতা, যা তার চরিত্রকে কেন্দ্রে বসিয়ে দেয়। রাজলক্ষ্মীর অভিমানই পুত্রবধূ আশাকে খর্ব করেছে, আর একহাতে বিনোদিনীকে দিয়ে পুত্রকে প্রলুব্ধ করিয়েছে। এই উপন্যাসের রাজলক্ষ্মীর মধ্য দিয়ে আমরা প্রথম রক্তমাংসে গড়া আধুনিক মা চরিত্রের চিত্র পাই। সে কিন্তু শুধু মা নয়, একজন নারীও। ফলে তার আত্মকামিতায় আঘাতকারী পুত্রবধূর সুখ, এমনকি সন্তানের সুখও তার সহ্য হয় নি। বিনোদিনীর মাধ্যমে সে আশার প্রতি প্রতিশোধ নিয়েছে। অবুঝ পুত্রপরায়ণতা রাজলক্ষ্মী চরিত্রের দুর্বলতা এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

 

রাজলক্ষী চরিত্রের ইর্ষা ও স্বভাবজাত দূর্বলতাঃ

আশালতার প্রতি রাজলক্ষীর মনোকষ্টের তিনটি বিশেষ কারণ খোঁজে পাওয়া যায়। এক- তার পুত্র মহেন্দ্র তার জা অন্নপূর্ণার বোনঝি আশাকে বিয়ে করেছে। সে যে কেবল অবহেলিত হয়েছে, তা নয়, আশার সাথে অন্নপূর্ণার পূর্ব থেকেই সম্পর্ক রয়েছে বলে রাজলক্ষ্মীর খুব অসন্তোষ । 
দুই— গর্বধারণকৃত মাতৃ হৃদয়ের অতি স্বাভাবিক ভাবনাগত ঈর্ষা। যেই ছেলে এতদিন তার আঁচলে বাধা ছিল, এখন সে নব্য বিবাহিত এবং স্ত্রীর প্রতি অধিক আনুগত্যশীল ।
তিন— মহেনের নব্য বিবাহিত স্ত্রী আশার গৃহকর্মে অনভিজ্ঞতা ও অপটুতা। আশাকে বিয়ে করার পর রাজলক্ষ্মী তার ছেলেকে পরীক্ষা পাসের প্রস্তুতি নিতে বললেও সে আশাকে নিজের কাছে রেখে ঘরকন্নার কাজ করায়। মহেনের এরূপ দৃশ্য মোটেও সহ্য হয় না ৷ তাই রাজলক্ষ্মী আশাকে মহেনের কাছে দিয়ে দেয়। 
 
 

বিনোদিনীর প্রতি মোহ ও সন্তানের প্রতি জেদের স্বরূপঃ

রাজলক্ষ্মী তার পুত্রের স্ত্রৈণ ও বেহাল অবস্থা পরিলক্ষণ করে মান-অভিমান বুকে পোষে গ্রামের বাড়ি দেখার নাম করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বারাসতে যাওয়ার পর বিধবা বিনোদিনীকে দেখে তার উপর যারপরনাই মায়া জন্মায়। রাজলক্ষী বিনোদিনীর সেবা ও যত্নে বিষণ রকমের সন্তুষ্ট। বিনোদিনীর শিক্ষা-দীক্ষা, আধুনিকতা ও রুচিশীলতা, বুদ্ধি-সেবা-যত্নে তার বধূ বিদ্বেষ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিয়ে না করে যে কি পরিমাণ  ঠকেছে, তা প্রমাণ করতেই যেন রাজলক্ষ্মী বিনোদিনীর উপর সংসারের কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। আশার অনুপস্থিতিতে মহেন্দ্রের পরিচর্যার ভার দিয়েছে বিনোদিনীর উপর। রাজলক্ষ্মী ছেলের অপরাধ না দেখে বিনোদিনীর ঘাড়েই মহেন্দ্রের স্খলনের দোষ চাপিয়ে দেয় ।
 

আশার প্রতি বিশ্বাস ও যথাযথ মূল্যায়নঃ

 বিনোদিনীও যখন তার আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়, তখন পুনরায় তার মন ভেঙ্গে যায়। সে আশার উপর বিশ্বাস ফিরে পায় এবং প্রসন্ন হন। পুত্রকে গৃহবাসী না করতে পারায় রাজলক্ষ্মী সম্পূর্ণ দোষ চাপায় আশার উপর এবং তার উপর বিরক্ত হয়। কিন্তু রাজলক্ষ্মীর শারীরিক অসুস্থতার কারনে আশার উদ্বেগ ও ব্যাকুলতা মিশ্রিত পরিচর্যা দেখে রাজলক্ষী অবশেষে আশার যথার্থ মূল্য দিতে বাধ্য হয়।  মা হিসাবে রাজলক্ষ্মীর যে পুত্রসর্বস্বতা ও মাত্রাতিরিক্ত আদিক্ষ্যেতার কারণেই মহেন্দ্র নির্লজ্জ, অসংযত ভোগলিপ্সু হয়ে ওঠে, তা বুঝতে পারে। পুত্রবধূ আশার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজলক্ষ্মী তার পছন্দের বিনোদিনীর দ্বারা পুত্রকে প্রলুব্ধ করেছে। অতি মাত্রায় অভিমান ও প্রবল আবেগপ্রবণতা যে রাজলক্ষ্মীর নিজের গৃহে নিজে6ই বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল, সেটা বুঝতে আর তার বাকি রইলো না।
 
রাজলক্ষ্মীর আবেগ ও অভিমানের দুলাচল থেকে বের হয়ে সে তার পুত্রের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি সদা জাগ্রত এবং যে সূক্ষ্ম অনুভূতি জ্ঞাপন করে তাতে মহেন্দ্র-বিনোদিনীর অশালীন ও অনুচিত ঘনিষ্ঠতা তার দৃষ্টি এড়ায়নি। ‘চোখের বালি' উপন্যাসের সকল চরিত্রের মধ্যে যে জটিলতা, সক্রিয়তা ও প্রবাহমানতা তার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে রাজলক্ষ্মী চরিত্র। ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে যে বৃত্তাকার প্রেমের কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে তা কেবল মহেন্দ্র-বিনোদিনী-বিহারী-আশা-মহেন্দ্র এর মধ্যে ঘূর্ণায়িত হয়েছে। এ বৃত্তের কেন্দ্রে রয়েছে রাজলক্ষ্মী। রাজলক্ষীর এমন মানসিকতাই মূলত পুতুল নাচের অদৃশ্য সুতা হাতে রেখে সবাইকে তারই ইচ্ছেমত নাচিয়েছে এবং শেষে সুতার একটানে সবাইকে তার মৃত্যুশয্যায় টেনে এনে নিজেদের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে সর্বৈব বিচারে ‘চোখের বালি' উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী অত্যাধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে উজ্জীবিত মা-চরিত্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ৷ 
 

* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র

 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, May 8, 2025

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।। বিহারি চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিহারী চরিত্র আলোচনা ও বিশ্লেষণ

‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি একটি ত্রিভোজ আকৃতির মানব প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। উক্ত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মহেন্দ্র হলেও সামগ্রিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় বিহারি চরিত্র হিসাবে সফল।  কেননা সমগ্র উপন্যাস জুড়েই বিহারী একটি উল্লেখযোগ্য পুরুষালি চরিত্রের ধারক ও বাহক। 

 মহেন্দ্রের মায়ের চোখে বিহারি তার সন্তানের চেয়ে অধিক যোগ্য ও কর্মঠ। মহেন্দ্রকে দিয়ে যে কাজ অসাধ্য সেই কাজ বিহারি অনায়াসে করে দেয়। আনুগত্যের দিক দিয়েও বিহারীর চরিত্র উত্তম।

 

মননশীল ও রুচিশীলতার ক্ষেত্রে বিহারী অনন্য। বিহারির ভাবনা-চিন্তা মহেন্দ্রের মতো নয়। কিন্তু মহেন্দ্রের প্রতি বন্ধুত্ব ও মহেন্দ্রের মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা তার জন্য বিহারী সর্বদাই নিজেকে আনুগত্যশীল ও দায়িত্বশীল হিসাবে পরিচয় দেয়। 


 মহেনের মা যখন বিনোদিনীকে ঘরে আনতে চায় তখন মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিধবা বলে অবজ্ঞা করে এবং বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।”

 

শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে। বিহারির মানস যেন লেখকের আত্ম ব্যক্তি রূপ প্রকাশ করে। এমনো হতে পারে সকল চরিত্রের মধ্যে বিহারি চরিত্রকে লেখক একটু বাড়তি যত্ন করে তৈরি করেছেন। বিহারির দায়িত্ব ও কর্তব্য বিবেচনায় সে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। 


কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসের ক্লাইমেক্সটা একটু অন্য রূপে প্রকাশ পায়, যখন মহেন্দ্র বিয়ে করে, সংসার করা শুরু করার পর কিছুকাল পরে বিনোদিনী মহেন্দ্রদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। বিনোদিনীর রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে আশালতা যেমনটি নির্ভলশীল না হয়ে পারেনি, তেমনি মহেন্দ্র ও বিহারিও কোন অংশে বিনোদিনীর মোহ ও আকাঙ্খার ফাঁদে কম আটকায় নি। মহেন্দ্রের চারিত্রিক হীনমন্যতা যখন বিনোদিনীর পাবার প্রবল আকাঙ্খায় পৌছায়, তখন বিহারি নিজের অবস্থান ও অস্ত্বিত্বের সংকটে ভোগে। 


 

বিনোদিনীর প্রতি বিহারির যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা একজন সুন্দরী, রূপবতী ও যৌবনাদীপ্ত নারীর না বুঝার কথা নয়। আর সে সেই দূর্বলতাকে পুঁজি করে বিহারী ও মহেন্দ্র উভয়ের ক্ষেত্রেই তার চতুরতা চালিয়ে যায়। পুরুষ মন এমন চতুরতায় আগে কখনো অভ্যস্ত নয়, তাই বিহারিও মহেন্দ্রের মতো নাকানি-চুবানি কম খায় নি। এই দিক থেকে বিহারি চরিত্রের কিছুটা দূর্বলতা ফুটে উঠে।

 

বিহারি চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং অন্যকে অগ্রাধিকার অতিরিক্ত মনোভাব। কেবল বন্ধু মহেন্দ্রেকে মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিহারি তার যথাপযোক্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন রকমের ছাপ পড়েছে। কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসটি লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে একটি। শেষের কবিতা উপন্যাসের মতো এ উপন্যাসেও লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ করা, চরিত্র নিয়ে খেলা করা এবং জীবন বাস্তবতার মধ্য থেকে মানব চরিত্রের বিভিন্ন প্রতীকি নিদর্শন তুলে ধরেন। যা মানব জীবনের অতি সাবলীল ও সুবাস্তব চিত্র।



* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র


 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, May 1, 2025

কম্পিউটার দোকানের ব্যবসা

কিভাবে অল্প পুঁজি দিয়ে হালাল উপায়ে টাকা আয় করবেন


আপনি যখন হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করার কথা ভাববেন, তখন যেকোন পেশাকে আপনার সম্মান করতে হবে। 
প্রথমত আপনাকে মনে রাখতে হবে, যেহেতু আপনি বেকার অথবা আপনার আয় করার মত বড় কোন পুঁজি নাই, তাই অল্প পুঁজিতে মানসম্পন্ন টাকা উপার্জন করতে হলে যে কোন পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত ভাবতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার লক্ষ্য যদি স্থির থাকে ছোট ব্যবসা থেকেই একদিন অনেক বড় হতে পারবেন।

কোন কোন ব্যবসা অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারবেন?

১। কম্পিউটার ব্যবসাঃ কম্পোজ, ফটোকপি, প্রিন্ট, ছবি প্রিন্ট, বিভিন্ন অনলাইনের আবেদনসহ ব্যাপক কাজের সম্ভাবনা রয়েছে। 

কম্পিউটার ব্যবসা করতে পুঁজি কেমন লাগবে?

১। কম্পিউটার ব্যবসা করার জন্য প্রথমেই আপনাকে যে কোন বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অফিস এলাকায় ছোট পরিসরে দোকান নিতে পারেন। 

কোথায় কত টাকা দরকার?

১। দোকান ভাড়া বছরে : ২৫,০০০/- থেকে ৩০,০০০/-

২। একটি কম্পিউটার সেট: ৩০,০০০/- থেকে ৪০,০০০/-

৩। ১টি প্রিন্টার মেশিন - ১৫০০০-২০,০০০/-

৪। ফটোকপি মেশিন ১টি - ৫০,০০০/- থেকে ৬০,০০০/- টাকা।

৫। লেমিনেটিং মেশিন - ৫০০০ - ৭০০০ টাকা।

৬। চেয়ার টেবিল ও অন্যান্য জিনিসপত্র - ২০,০০০/- - 

অর্থাৎ ১২০,০০০/- থেকে ১৫০,০০০/- টাকা থাকলেই আপনি এই ব্যবসাটি সহজেই করতে পারবেন।

কম্পিউটার ব্যবসায় লাভ কেমন?

১। কম্পিউটার ব্যবসায় যেহেতু কাগজ ও কালি লাগে তাই খুবই অল্প খরচে অধিক লাভ করা যায়। যেমন: একটি পেপার কালিসহ ২ টাকার মতো খরচ হয়, যা অনায়াসে ৮-১০ টাকা দাম নেয়া যায়। 

২। প্রতিদিন গড়ে ১৫০০-২০০০ টাকা কাজ করলে সব খরচ বাদে কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ টাকা আয় হয়।

৩। মাসে গড়ে ৩৫,০০০/- থেকে ৪০,০০০/- হাজার টাকা সহজেই আয় করা সম্ভব। 

অতএব, আপনার চেষ্টা ও পরিশ্রম সঠিক থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

মনে রাখবেন: চেষ্টা ও শ্রম আপনার; রিজিকের ফয়সালা করার দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তার। নিয়মিত ইবাদত করুন ও আল্লাহর উপর নির্ভর করুন।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, April 29, 2025

ক্যারিয়ার ভাবনা

ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা আর না, আর না

জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পার করার পরই চলে আসে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা। আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম সহজ কিছু কর্ম উদ্যোগ।

সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবন শেষ করেও অনেকে ভাল কোন পেশায় যেতে পারেন না। থাকতে হয় বেকার। পেতে হয় হতাশার নানা কথা।

আমার এ পোস্ট মূলত সেইসব হতাশাগ্রস্থ লোকদের জন্য যারা একটি কাজের অভাবে বেকার জীবন যাপন করতেছেন।
বেকারত্ব একটি অভিশাপ তাই, একদিনও বেকার না থেকে আপনার শিক্ষা ও কর্ম দক্ষতার উপর নির্ভর করে যে বিষয়ে আপনি ভালো বুঝেন সেই বিষয়ের উপর বেশি করে সময় দিন। 
যেকোন পেশার জন্য যে বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগীহওয়ার প্রয়োজন:
১। হাতে কলমে পরিকল্পনা সেটআপ করা।
২। পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমানে যে কাজের গুরুত্ব বেশি সেই কাজের উপর প্রশিক্ষণ নেওয়া। 
৩। স্বল্প পরিসরে হলেও সেই দক্ষতার ভিত্তিতে একটি কর্ম সংস্থান তৈরি করার চেষ্টা করা। তা না হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জানার চেষ্টা করা ও আবেদন করা।
৪। বেকার সময় নষ্ট না করে ছোট ছোট কাজ করে তা সেল করার উদ্যোগ নেওয়া। 
৫। নিজের উপর ইনভেস্ট করা। যেমন: নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করা। যেকোন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে মজবুত দক্ষতা অর্জন করা।

ভালো ক্যারিয়ারের জন্য কোন কোন বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে।

১। আপনি যেই কাজে পারদর্শী সেই কাজে প্রচুর সময় দেন এবং উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা করুন।
২। মানুষ কি বলল তা মনোযোগ না দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। পরিশ্রম করুন, সফলতা আসবেই।
৩। পুঁজি কম থাকলে অল্প পুঁজি দিয়ে যেসব লাভ জনক ব্যবসা আছে সেগুলো নিয়ে স্টাডি করুন, যেকোন একটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। 
৪। লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। হাল ছাড়া যাবে না।
৫। চাকরি হোক কিংবা ব্যবসা, যেটাই হোক আপনি পর্যাপ্ত সময়, শ্রম ও ধৈর্য ধরতে পারলে সফলতা আসতে বাধ্য। 

উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে যেসব বিষয় অবশ্যই করণীয়ঃ

১। পড়াশোনা। 
২। প্রশিক্ষণ (বিশেষ করে টেকনিক্যাল ট্রেনিং, যেমন: আইটি, ইলেকট্রিক, মটর মেকানিক, রেফ্রিজারেটর, সিভিল, টেক্সটাইল ইত্যাদি)। 
৩। দক্ষতার উপর নির্ভর করে কাজের সন্ধান করা, পারলে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়া। 
৪। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করা। 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, June 28, 2022

ভাল লাগার অন্য নাম

 ভাল লাগার অন্য নাম

মোঃ অলিউল্লাহ্


ভাল লাগার অন্য নাম,

তুমি আমি মিলে ভালবাসার খাম।

যে অভিমানে মনের গহীনে,

ভালবাসা জমে সংগোপনে, 

না বলা সে কথা, না দেখানো সে আবেগ-

দূরত্ব বাড়ায়, মন দূরে হারায় নিয়ে প্রবল বেগ।


তবুও আসি ছুটে, ঐ মিষ্টি ঠোঁটে

বলো যদি ভালবাসি, তবে ফিরে আসি।

রয়ে যাই তোমারি, ভুলে সব অভিমান

থাকবো তোমারি, পিছু ফেলে পিছুটান।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, June 12, 2022

সব মানুষই পাগল

 সব মানুষই পাগল

মোঃ অলিউল্লাহ্


প্রকৃতির প্রতিটা উপাদানেরই নির্দিষ্ট সীমারেখা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর প্রকৃতির  এই নির্দিষ্ট সীমা যখন অতিক্রম করা হয়, তখনই ঘটে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। কৃত্রিমতা বা আর্টিফিশিয়ালিটি সব সময়ই প্রাকৃতিক উপাদানের উপর একটা অতিরিক্ত প্রলেপন। যেমন- মহান আল্লাহ কোন মানুষকে নির্দিষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, অথচ একজনের মনে হলো আমার চেহেরায় মেকআপ করলে আমাকে আরও আকর্ষণীয় দেখাবে। আর তাই সে নিজেকে সব সময়ই কৃত্রিম সাজসজ্জার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে রাখতে চায়, কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়সে কিন্তু ঠিকই তার এই আর্টিফিশিয়ালিটি আর কাজে আসেনা, তার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে; এমনকি কখনো কখনো সেই কৃত্রিমতার জন্য তার স্বাস্থ্যহানি বা ক্ষতিও হয়ে থাকে। 


প্রকৃতি সর্বদাই নির্দিষ্ট রূপে ভারসাম্য বজায় থাকে, কিন্তু যখনই প্রকৃতিতে জোর করে কৃত্রিমতাকে চাপানোর চেষ্টা করা হয় তখন প্রকৃতি তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সেটা কিছু আগে অথবা পরে। 


পৃথিবীতে মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার যে বিধান রয়েছে, সেই আইন বা বিধান মেনে চললে কোন মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেনা। কোন জীবন ব্যবস্থায় যতক্ষণ সুশৃঙ্খল ও আইন মানার প্রবণতা থাকে, সে জীবন ব্যবস্থা সবদিক থেকে ভারসাম্য বজায় থাকে।


এবার আসি আসল কথায়, আসলে আমার এই ভাবনা অনেকের কাছে অতি তুচ্ছ মনে হতে পারে। অনেকে ভাবতে পারেন এসব পাগলের প্রলাপ, অথচ আমি সেসব মানুষের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা পাগলামি নিয়েই কথা বলছি।


দেখুন, একজন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে যতক্ষণ সে তার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণে ঠিক যতটা তার দরকার ততটাই সে পায়।  অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে কোন মানুষের যতটুকু যা প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই তার যথেষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যখন এর কম অথবা বেশি হয় তখনই বিপর্যয় ঘটে। ধরা যাক, একজনের পেটে ক্ষুধা লেগেছে, তার পেট ভরার জন্য যতটুকু খাবার দরকার ঠিক ততটাই তার জন্য যথেষ্ট। এর কম হলে পেট ভরবেনা অস্বস্তি লাগবে, আবার যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি খায় তখন বদহজম হবে, আর তাতেও তার অস্বস্তি লাগবে। ঠিক তেমনি জীবন ধারনের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন, ঠিক তা থাকলেই সুন্দরভাবে জীবন কেটে যাবে। এর কম-বেশি হলেই জীবনে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। 


মানুষের মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে আবশ্যিক বিষয়গুলোর বাইরে যা আছে তা-ই কৃত্রিমতা। অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এইসব চাহিদা একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন। আরোও স্পষ্ট করে যদি মৌলিক চাহিদার কথা বলি তাহলো ক্ষুধা, নিদ্রা, মৈথুন। এগুলোর মধ্যে কোনটির অভাব হলেই জীবনযাপনে বাধাগ্রস্থ হবে। আবার এসব চাহিদার পরেও যাদের আরো অনেক চাহিদা তৈরি হয় তা নেহাত বিলাসিতার শামিল। এর মানে হলো এই যে, কেউ খাবার খেতে বসল, আর তার সামনে বিশ-ত্রিশটি আইটেমের খাবার পরিবেশন করা হলো। হয় সে সবগুলো থেকে একটু একটু করে টেস্ট করবে, না হয় দু'য়েকটা আইটেম দিয়েই খেয়ে উঠবে। এখানে মুদ্দা কথা হলো একজন ব্যক্তির খাবারের জন্য ঠিক যতটুকু খাবার দরকার ততটুকুই পরিবেশন করাটা স্বাভাবিক, এর বেশি করাটা অস্বাভাবিক বা বিলাসিতা। আর একটা সহজ ব্যাপার হলো অপচয়ের পরিণতি অভাব। এই কথার অর্থ হলো যদি একজনের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হয়, তাহলে অচিরেই সে অভাবগ্রস্থ হবে। যা কিনা তার জীবন যাপনের জন্য একটি বিপর্যয় বা প্রতিবন্ধকতা। 


প্রাকৃতিকভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার, তার বাইরে যে সকল বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে তা হলো, চিত্তবিনোদন, সামাজিক পদমর্যাদা, ব্যক্তিত্ববোধ ও নিজেকে মানুষের চোখে শ্রেষ্ঠ করে তোলার একটা আপ্রাণ চেষ্টা। সেটা হতে পারে ক্ষমতার মাধ্যমে বা নিজের অবস্থান দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করে লোকের চোখে নিজেকে জনপ্রিয় ভাবার মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি। এই যে একধরনের চাহিদা, এটা খুবই মনস্তাত্ত্বিক ও মানুষের এক ধরনের ইলিউশান বা মোহ। আর এই মোহের কারনে মানুষ যারপরনাই ভূমিকা পালন করতে পারে। এক কথায়, এটা মানুষের একধরনের পাগলামি। ঠিক এই জায়গাটায় এসে সব মানুষই পাগল।


দেখেন, আপনার একান্ত মৌলিক চাহিদাগুলো যখন মিটে যায়, তখন আপনি স্বস্তিতে থাকেন। আর কথায় তো আছেই, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। যখন আপনার গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা মিটানোর পর স্বস্তিতে আছেন, তখন আপনার বিলাসী মন আরোও স্বস্তি বা ভালো থাকতে চাইবে। অর্থাৎ আরও কিভাবে ভালো থাকা যায় সেই চিন্তা আপনাকে অনবরত পোক করতে থাকবে। আর আপনি তখন আরও একটু বেশি ভালো থাকার কথা চিন্তা করে হয়তো অনেক পরিকল্পনা করবেন। এই যেমন- লোকের চোখে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কোন নেতা হলেন বা নিজের প্রতিভা দেখিয়ে হিরো কিংবা মডেল হলেন; যা আপনাকে একটা বাড়তি আত্মতৃপ্তি দেবে। তখন আপনি আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলতেই পারেন, আরেহবাহ আমি তো বিশাল কাজ করে ফেলেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা একধরনের মোহ বা মায়া। মৌলিক চাহিদার বাইরে যে চাহিদাই আসে তা আপনার মধ্যে মোহ তৈরি করে। 


এই দুনিয়ায় একেকজন মানুষ একেকটা জিনিসের প্রতি পাগল। কেউ পাগল ক্ষমতার, কেউ ধনসম্পদ বা টাকার পাগল, কেউ কারো প্রেমে পাগল, কেউবা জনপ্রিয় হবার পাগল, কেউ আবার ভাবের পাগল। যাইহোক, আমার এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এই পাগলামি বা এইসব চাহিদা কেবল মানুষকে বস্তবাদী ও দুনিয়ামুখী করে তুলে। দুনিয়াতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কিংবা নিজের অস্তিত্বকে স্থায়ী রূপ দিতে আমরা কত কিছুই না করতে চাই। দুনিয়াকে পর্যাপ্তভাবে ভোগ করার মানসিকতার কারনে আমরা আমাদের আসল পরিচয় ভুলে যাই। মহান সৃষ্টিকর্তা কোন উদ্দেশ্যে আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার কথা ভুলে যাই। 


আমাদের এই ভোগবাদী মনোভাবের কারনে আমরা যারপরনাই খারাপ কাজে লিপ্ত হই। এই দুনিয়ায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ঘোষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, হত্যা, নির্যাতন, জুলুম ও অত্যাচার সবই সংগঠিত হয় এই ভোগবাদকে কেন্দ্র করে। যা প্রকৃতির প্রতিকূলে গিয়ে সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। অথচ একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খুব বেশী কিছু দরকার পড়েনা। যদি কেউ ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলে, তাহলে সে নিশ্চিত ভাবে সেই স্বাভাবিক জীবন ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। একজন মুসলিম হিসাবে আমি ইসলাম ধর্মকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করি। আর আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। 


যেখানে ভোগবাদ মানুষের মধ্যে মোহ তৈরি করে তাকে দুনিয়া মুখী করে তুলে, সেখানে ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ একজন মানুষকে সর্বোচ্চ  নৈতিক হতে সাহায্য করে। তার ভিতর কেবল দুনিয়ার প্রতি লোভ লালসা নয়, যেখানে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল থাকতে হবে সেই ভাবনা তার মধ্যে কাজ করে। সে মৃত্যুকে ভয় করে, মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে ভয় করে, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে দুনিয়ায় ভাল কাজ করে। 


যার ভিতর দ্বীনের প্রতি গভীর বিশ্বাস আছে, সে ভোগবাদী না হয়ে বরং দুনিয়াতে কোনভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাববে। আর তাই এই বস্তুবাদ মানুষের ক্ষণিকের মোহ বা ইলিউশান ছাড়া কিছুই না। কারন প্রতিটা প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর একজন মানুষ যখন মরে যায়, তখন দুনিয়ায় তার কোন অস্তিত্বই থাকেনা। যদিও বস্তবাদীরা কিছু মৃত মানুষের ইহলৌকিক কৃতকর্মের জন্য তাদের স্মরণীয় বা অমর বলে দাবী করে। আর এটাও তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কিংবা মোহ মায়ার প্রতিফলন ছাড়া কিছুই না। 


কেনো একজন মানুষ মরে গেলে তার কোন অস্তিত্ব থাকেনা? 

কারন ব্যক্তি নিজেই নিজের উপস্থিতি দেখছেনা। যেখানে আমি নেই, সেখানে আমার অস্তিত্ব কি করে থাকতে পারে। যে পৃথিবীতে ভাল থাকার জন্য এতো কিছু করছি, কতদিন আমি এখানে থাকতে পারবো? প্রতিটা মানুষের একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা বা ভ্যালিডিটি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, এই ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে গেলেই চলে যেতে হবে দুনিয়া ছেড়ে। কোথায় যাবো আমরা মৃত্যুর পর? কী হবে আমাদের সাথে? আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা এতো সুন্দর চিন্তা শক্তি ও বিবেক দেওয়া সত্ত্বেও যখন মানুষ ভ্রান্ত পথে চলতে চলতে পথভোলা হয়ে যায়, তারা পাগল ছাড়া আর কি?  তাদের ভোগবাদ বা বস্তুবাদী মানসিকতা তাদের মধ্যে যে মোহ বা পাগলামির জন্ম দিয়েছে, সেই মোহে তারা অন্ধ। তারা তাদের জ্ঞানের সীমাকে সংকোচিত করে রেখেছে। আর সেজন্যই তাদের এই দুনিয়াপনা বা ভোগবাদ তাদেরকে পাগল হিসাবে সাব্যস্ত করেছে।


শেষ কথা হলো আমার এই লেখার প্রসঙ্গটিকে অনেকে ভুল ব্যাখা করতে পারেন। তারা হয়তো বলতে পারেন, শুধু যদি মৌলমানবিক চাহিদা পূরণ করেই মানুষ খান্ত হয়ে যায়, তাহলে তো মানুষের সৃজনশীলতার প্রকাশ পাবেনা। মানুষ একটা গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষ যদি কেবল আখিরাত নিয়ে ভাবে তাহলে দুনিয়ায় তো অচলাবস্থা তৈরি হয়ে যাবে। দেখুন, আমি আমার কথাগুলো দ্বারা শুধুমাত্র বুঝাতে চেয়েছি, কেউ যেনো ভোগবাদে এতটাই আসক্ত না হয়, যাতে করে সে আখেরাত বিমুখী হয়ে যায়। দুনিয়ায় সর্বোচ্চ নৈতিকতা ও ভাল কাজের মাধ্যমেই যেনো তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে। কেউ যেনো দুনিয়ার মোহে পড়ে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুমের মতো অনৈতিক না হয়। পৃথিবীতে কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেনো বিনা দ্বিধায় কেউ পাপ না করে ফেলে এটাই বুঝাবার চেষ্টা করেছি।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Saturday, June 11, 2022

শিক্ষা বনাম সফলতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৫ম পর্ব)

শিক্ষা বনাম সফলতা 

মোঃ অলিউল্লাহ্

জাগতিক পৃথিবীতে যেসমস্ত সার্বজনীন বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা হয় তাই শিক্ষা। শিক্ষার মূল কাজ হলো সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করা। যেখানে শিক্ষার মানেই হলো সমস্যা চিহ্নিত করে সুষ্ঠু সমাধান করা, সেখানে সফলতা নামক একটা আপেক্ষিক ব্যাপারকে তার প্রতিবন্ধকরূপে দেখাতে চান কিছু ভ্রান্ত ধারণার বাহক। শিক্ষার মৌলিক ধারণা হলো উপায়।  তেমনি সফলতা তখনই আসে যখন সফলতা পাওয়ার জন্য উপায় বের হয়। আর যেকোন প্রকার সফলতা শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষা ছাড়া সফলতাকে ভাবা অসম্ভব। 

অন্যদিকে সফলতা বিষয়টা কেবল একধরনের মানসিক প্রশান্তি। সফল হতে সবাই চায়; এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে জীবনে ব্যর্থ হতে চায়। আর তাই সফলতাকে মনিষীরা বলেছেন আপেক্ষিক। যার অর্থ হলো, এটি যেকোন উপায়েই হতে পারে। কথার কথা, একজন ব্যক্তি খুবই সাধারণ ; তার কোন বিত্ত বৈভব নেই, সে লোকের চোখে এতটা সমাদৃত না। সে খুব ধনী ও না, আবার সে জনপ্রিয়ও না। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপনে সে খুব বেশী সমস্যাগ্রস্থ, যেকোনভাবে তার জীবন কেটে যাচ্ছে। আর এই সাধারণ জীবনে তার অতৃপ্তি নেই, সে মনে করে আমার খুব বেশী কিছু না থাকলেও আমি অসুখী নই, আমার যা আছে তাই নিয়ে আমি ভাল আছি। এই যে তার জীবনে সে অতি অল্পতেই সন্তুষ্ট এটাই তার কাছে সফলতা। 

আবার অনেকে দাবী করে জীবনে অগাধ সম্পদ ও অর্থের মালিক হওয়াই সফলতা। কিন্তু ভালভাবে খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে তার এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সে পুরোপুরি সুখি না।
সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জনের অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৪র্থ পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

৬. শিক্ষার মূল্যবোধ কমে যাওয়া ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের মূল্যায়নের অভাবঃ বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার বেশ কিছু সিস্টেমেটিক সমস্যা রয়েছে। যেমন- গতানুগতিক ধারায় সাধারণ শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যয়ন করা। বিশেষ করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকিং সেক্টর বাদে প্রায় সকল শাখাতেই শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও ভালো কোন পেশায় নিযুক্ত হতে পারেনা। যেহেতু আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে, তাই শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ও কারীগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে শিক্ষাজীবন শেষে ভালো কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হতে পারতো। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার পরও পেশাজীবনে সফলতা পায়না, অথবা নিম্নমুখী জীবনযাপন করে। অন্যদিকে লেখাপড়া না করেও অনেক মানুষ ব্যবসায় বা টেকনিক্যাল কাজে দক্ষতার দ্বারা অধিক উপার্জন করতে সক্ষম হয়। আর তাই  আমাদের সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রতি মূল্যবোধ কমে গেছে এবং তাদের গুরুত্বও কমে গেছে। যেহেতু টাকাই মানুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু সেখানে অল্প আয় করা শিক্ষিত ব্যক্তিদের সম্মান নাই বললেই চলে। এছাড়া এদেশে হাজার হাজার শিক্ষিত ব্যক্তি বছরের পর বছর বেকার হিসেবে জীবন কাটায়, তাই শিক্ষার ব্যাপারে অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের  উদ্বিগ্নতা ও অনিশ্চয়তার কোন অবকাশ নেই। যেকারণে শিক্ষার প্রতি তাদের অনাগ্রহ ও আপত্তি তৈরি হয়।

৭. সুদক্ষ শিক্ষকের অভাবঃ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজের সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন সাধিত হয়। আর সেই পরিবর্তনের সাথে যখন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা খাপখাইয়ে নিতে না পারে তখন তার প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর বর্তায়। যেমন- আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সারা পৃথিবী নিজের যেভাবে পরিবর্তন করছে, সেই ধারায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আর সেজন্য কর্মমুখী বা জীবনমুখী শিক্ষার প্রবণতা কম। সুদক্ষ শিক্ষক গড়ে না ওঠার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।

৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জামের অভাবঃ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষা সামগ্রীর অপর্যাপ্ততার  কারনে উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে প্রায়োগিক ও বাস্তবিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হচ্ছে না। আর তাই কর্মক্ষেত্রে এদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু পড়াশোনা করার পর সকল শিক্ষার্থীই ভালো কর্মক্ষেত্রে যেতে চায়, কিন্তু সঠিক প্রেকট্রিক্যাল নলেজের অভাবে তারা সেই কাজের জন্য নির্বাচিত হয় না। ফলে বেকারত্ব তৈরি হয়।

৯. শিক্ষা কারিকুলামে হালনাগাত ও গবেষণার অভাবঃ এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো সেই মান্দাতার আমলের সিলেবাস পরিলক্ষিত হয়। গধবাদা বা গতানুগতি শিক্ষা পদ্ধতির কারনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান কর্মক্ষেত্র ও চাহিদামতো শিক্ষাব্যবস্থায় হালনাগাতের অভাবে পুরানো বস্তাপঁচা শিক্ষা প্রদান এখনো শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমের উপর গবেষণার অভাব রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যতকে পিছিয়ে দেয়।

১০. শিক্ষকদের প্রাইভেট বা কোচিং শিক্ষা পদ্ধতিঃ খুবই দুঃখজনক ও হতাশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার পরও তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক নিযুক্ত করে কিংবা কোচিং এ গিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়। এটা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ, অন্যদিকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই তাদের সন্তানকে সেই পড়াশোনার খরচের যোগান দিতে পারেন। যাদের টাকা আছে তারা পড়াশোনায় এগিয়ে যায়, আর যার টাকার অভাব সে পড়াশোনা থেকে ছিটকে যায়। এভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা সৃষ্টি হয়।

১১.  শিক্ষা বিষয়ক প্রচারণার অভাবঃ সারাদেশে বিভিন্ন মিডিয়া অসংখ্য বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করলেও আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে মিডিয়ার প্রচারণা খু্বই সীমিত। মিডিয়ার এমন দায়সারা মনোভাবের ফলে জন সাধারণের মধ্যে দিনের পর দিন শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। অনেকাংশেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য বিকল্প মাধ্যম খোঁজে নেয়।

১২. সামাজিক অবক্ষয়ঃ আমাদের দেশের তরুণ সমাজে যথাযথ তদারকির অভাবে কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন বাজে অভ্যাসে জড়িয়ে যায়। অসৎ সঙ্গ ও তরুণ ছেলে-মেয়েদের অবাদে মেলামেশার ফলে পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযুগী না হয়ে, ঝগড়া-বিবাদ, আড্ডা দেওয়া, অপ্রয়োজনে খেলাধূলায় সময় নষ্ট করা ও প্রেম-ভালবাসায় জড়িত হয়ে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়।

১৩. মাদক ও অপরাধ প্রবণতাঃ যুবক ছেলে-মেয়েদের একটা অংশ কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন খারাপ সঙ্গে মিশে অপরাধ কাজে আসক্ত হয়। এসব শিক্ষার্থীদের খামখেয়ালীপনার কারনে অল্প বয়সেই তারা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে।

১৪. আইন ও অনুশাসনের অভাবঃ আজকাল তরুণ সমাজের অবক্ষয় এতোই বেড়েছে যে, তারা না মানে পারিবারিক নিয়ম-শৃংখলা, না মানে সমাজের কোন অনুশাসন। যে কারনে তাদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১৫. বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে না পারাঃ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একান্তই শিক্ষার্থীসূলভ। তারা একেকটা স্টুডেন্ট এর নিডব্যসিস সিলেবাস প্রনয়ন করেন। এমনকি তাদের পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই প্রেক্টিক্যাল এবং সীমিত। এমনো দেখা গেছে, তাদের মাধ্যমিকের আগে কোন পরীক্ষা-ই নেই। সেখানে শিক্ষার্থীদের পছন্দের ভিত্তিতে তাদের পছন্দসই বিষয়ে পড়ানো হয়। আর তাতে করে কোন এক নির্দিষ্ট বিষয়ে তারা দক্ষতা অর্জন করে এবং ক্যারিয়ারে সেই শিক্ষার প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করে।

অপর দিকে আমাদের দেশে ক্লাস ওয়ান থেকেই ডজন খানে বই পড়ানো হয়। ক্লাস সেভেন-এইটের সিলেবাস ক্লাস ওয়ানেই পড়ানো হয়; যা কিনা কোনভাবেই শিক্ষার্থীদের বোধগম্য নয়। আর ক্লাসটেস্ট, উইক্লি টেস্ট, মানথলি টেস্ট, সেমিস্টার এমন অসংখ্য পরীক্ষায় সারাবছর শিক্ষার্থীদেরকে একধরনের রেটরেইসের মতো চালাতে থাকে। সার্বক্ষণিক পড়াশোনার মধ্যে থাকা ছেলে-মেয়েগুলো কার্য ক্ষেত্রে কিছুই জানেনা। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায় গলদ আছে। আর এমন ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এক মরিচিকার নাম।


১৬.  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের অচলাবস্থাঃ এদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, শতকরা পাঁচ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি অনূকুলে নেই। আর এমন পরিবেশে পড়াশোনা করাতে অনেক অভিবাবকরাই শঙ্কা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্রীদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কোনটাই ঠিক মতো খোঁজে পাওয়া যাবেনা।

১৭.  জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেই তিন/চার জন ছেলে মেয়ে থাকে। অধিক সদস্যের পরিবারে সকলের মৌলমানবিক চাহিদা পূরণের পর শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় খুবই দুঃসাধ্য। তাই অনেক অভিবাবক শিশু সন্তানকে আয় রোজগারে নিযুক্ত করে দেন। তাতে করে শৈশবেই তাদের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যেতে হয়।

১৮. বাল্য বিবাহঃ খুবই সাধারণ একটি বিষয় হলো এদেশে বাল্য বিবাহ। ছেলে-মেয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই, তাদেরকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের আগেই স্কুল থেকে ঝড়ে যায়।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

 

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(৩য় পর্ব)

জ্ঞানার্জন বা পড়াশোনা কী আসলেই অনেক কঠিন কাজ?

মোঃ অলিউল্লাহ্


মানুষ মাত্রই অজানাকে জানার কৌতুহল বা আগ্রহ। মানুষের জানার এই কৌতুহল থেকেই শেখার মানসিকতা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃত্তি আছে, তা হলো বিনা লাভে কোন কাজ করতে না চাওয়া। অর্থাৎ কোন কাজ করার পর সেই কাজের বিনিময়ে কোন সুবিধা, স্বার্থ বা লাভ না থাকলে সেই কাজ করার প্রয়োজনবোধ হয়না। কিন্তু অন্য সকল কাজের থেকে পড়াশোনা করা বা জ্ঞানার্জন করার কাজটা স্বভাবতই একটু কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ।

লেখাপড়া করার জন্য প্রয়োজন কোন এক প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুলে-মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া। শূন্য জ্ঞানের স্মৃতিতে তীলে তীলে সঞ্চয় করা জ্ঞানকে ধারণ করে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর একজন শিক্ষিত হতে পারে। যেহুতু মানবজীবন ত্রুটিপূর্ণ বা সমস্যাগ্রস্থ, তাই দীর্ঘদিন পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বহু প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এসকল প্রতিকূলতা এড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই পারে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে। তাই আমরা আলোচনা করবো কেনো শিক্ষা গ্রহণ করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে এবং কোন কোন উপায় অবলম্বন করলে সহজেই এসব প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

জ্ঞানার্জনের  অন্তরায়সমূহঃ

পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরার ছাত্রজীবনে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

১. বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবঃ একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় যদি সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ কম হয়, সেখানে সকল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ খুব কম হয়। তাই অনেকের ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার সুযোগ পায়না।

২. অভিবাবকদের সচেতনতার অভাবঃ আমাদের দেশের অভিবাবকদের শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে ধারণার অভাব ও সচেতনতার অভাবে তাদের সন্তানকে শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করতে পারেনা। জীবনযাত্রায় শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে অভিবাবকগণ তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রদানে উৎসাহ দেখান না। অধিকাংশ অভিবাবকেরই ধারণা শিক্ষিত সন্তানরা পিতা-মাতার প্রতি যত্নবান কম হয় এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনার অভাবে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না।


৩. দারিদ্রতাঃ দারিদ্রতা আমাদের দেশের একটি অন্যতম অন্তরায়। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। পরিবারের ভরণপোষন ও সকল চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষেরা সন্তানকে পড়াশোনা করানোর কথা কল্পনাও করতে পারেন না। কারন এদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বই-পুস্তক ও শিক্ষা সরঞ্জামের মূল্য অধিক হওয়াতে অভিবাবকদের আয়ের তুলনায় বাড়তি হিসাব করতে হয়, আর সেজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে। 

৪. মেধা মূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাবঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় উপযুক্ত শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে পারেনা। এমনকি কিছু শিক্ষার্থী কেবল নিবিড় যত্নের অভাবে পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়, ফলে তারা অল্প বয়সেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়ে।

৫. অনাধুনিক মনোভাবঃ বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশও এখন তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে আধুনিকতার দাবিদার। কিন্তু সেই প্রযুক্তির অপব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক বিষয় বিবেচনার অভাবে তারা বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের  শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আধুনিক মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেশীর ভাগ শিক্ষকই আইটি ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় অনগ্রসর, তাই তারা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে পারছেনা। আর তাই অল্পকিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা খুব দূরে যেতে পারছেনা।

পড়ের অংশ পড়তে ক্লিক করুন:

সম্পূর্ণ পড়ুন...

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

  জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

(২য় পর্ব)

শিক্ষা না থাকলেও জীবন চলে, কিন্তু টাকা না থাকলে জীবন চলেনা।

মোঃ অলিউল্লাহ্


আমাদের সমাজ বাস্তবতা আমাদের কিছু আপেক্ষিক বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। যেহেতু জীবনের সকল চাহিদা পূরণ করতে টাকা বা অর্থ-সম্পদ অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই আমাদের সমাজে টাকাকে সেকেন্ড গড বা সৃষ্টিকর্তার পরে সবচেয়ে বেশী মূল্যায়ন করা হয়। এমনকি কিছু মানুষের কাছে তো টাকাই সব। তাদের ধারণা, টাকা থাকলে সব করা যায়।

কিন্তু শিক্ষা বা জ্ঞান থাকলেও টাকা না থাকলে তার জ্ঞান মূল্যহীন হয়ে যায়। আজকাল টাকা দিয়ে সম্মানও কেনা যায়; এমনকি কৃত্রিম সনদও কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু লাখো জ্ঞানী মানুষ আছে, যারা টাকার অভাবে মূর্খকে প্রভু মানে,  খুবই নগন্য জীবনযাপন করে, অন্যের কাছে হাত পাতে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে সারাজীবন হতাশার গ্লানি বয়ে বেড়ায়।

কিন্তু এই প্রসঙ্গে একটা তিক্ত সত্য লুকিয়ে থাকে তা হলো, প্রকৃত জ্ঞানী বা শিক্ষিত ব্যক্তি কখনো জীবনে ব্যর্থ হয়না। তার জ্ঞানার্জন যদি সঠিকভাবে নেওয়া হয়ে থাকে, সে আদর্শের দিক থেকে যতটুকু উচ্চতায় অবস্থান করবে তেমনি, তার জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা উপার্জন কিংবা সম্পদ অর্জনের কমতি থাকবেনা। 

আমি শুরুতেই বলেছি, শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করতে হবে। লক্ষ্যহীন তরী যেমন সঠিক তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যহীন শিক্ষাও সফলতা আনতে পারেনা। যে জীবনে শিক্ষাকে একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছে, সে কখনো জীবনে কোন কিছুতেই অভাবী হতে পারেনা। 

'সঠিক শিক্ষালাভে কোন অভাব থাকতে পারেনা, যার অভাব আছে সে সঠিকভাবে শিক্ষালাভ করেনি।'


সম্পূর্ণ পড়ুন...

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

  • পড়াশোনা করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
  • শিক্ষা লাভে বাধা বা অন্তরায়।
  • পড়াশোনার ব্যাপারে বিভিন্ন লোককথা ও সমালোচনা।
  • শিক্ষিত ব্যক্তিদের সামাজিক মূল্যবোধ।

(১ম পর্ব)

জ্ঞান অর্জন বা পড়াশোনা কেনো করবেন?

মোঃ অলিউল্লাহ্

দেখুন আমরা সবাই কমবেশি জানি পড়াশোনা কেনো করবো। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে, অর্থাৎ আমি আসলেই জীবনে কী হতে চাই তা বুঝতে না পারার কারণে শিক্ষা জীবন শুরু হলেও কারো মাধ্যমিক পাশ করেই শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যায়। কারো কারো উচ্চ মাধ্যমিক করেই শেষ  কিংবা ডিগ্রি স্নাতক পযর্ন্ত করা হলেও জীবনের সঠিক লক্ষ্য না বুঝার কারনে শিক্ষার গুরুত্ব হারিয়ে যায়।

আর তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই যা যা করতে হবেঃ


১। শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন কী জানতে হবে।
২। কেন শিক্ষা লাভ করবো জানতে হবে।
৩। একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
৪। জীবনকে একটা উন্নত ও অন্যের থেকে আলাদা মান দেবার জন্য জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৫। নিজের লক্ষ্য পৌছানোর জন্য বদ্ধপরিকর হতে হবে।
৬। পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবতাকে জানতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি জীবনমুখী কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
৭। শিক্ষাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করে নিবিড়ভাবে জীবনের প্রয়োজনীতা পূরণ করতে সেই জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।
৮। নিজেকে অন্যের সামনে আদর্শবান করতে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
৯। পৃথিবীকে জানতে, পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস,  বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা জানতে পড়াশোনা করতে হবে।
১০। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সৎ জীবনযাপন করার জন্য জ্ঞানার্জন অতি প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Sunday, May 29, 2022

সংকট

অস্তিত্বের সংকট || ধর্মীয় চেতনায় হীনমন্যতা || পার্থিব সার্থে গা ভাসিয়ে কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ।




ব্যক্তিজীবনে অস্তিত্বের সংকটবোধ (Existential Crisis in Personal Life)


আমার পরিবারে আমার পরিচয় আমি কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা ইত্যাদি। আমি সেই পরিবারের একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সেখানে আমি সবার পরিচিত। আমার কিছু সংরক্ষিত অধিকার যেমন রয়েছে সেই পরিবারে, তেমনি রয়েছে কিছু দায়িত্ব। কিন্তু  একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌছে অনুধাবন করলাম পরিবারের যেকোন বিষয়ে যা কিছুই হোকনা কেন, কোন ব্যাপারেই আমাকে কেউ কিছু জানায় না। আমার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতেও কারো কোন যায় বা আসেনা। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা এমন ধারালো যে, আমি সেই পরিবারের একজন সদস্য হলেও সেই পরিবারে আমি গুরুত্বহীন। আর একটা সময় গিয়ে দেখা গেলো, আমি সেখানে থাকা আর না থাকা কোন তারতম্য সৃষ্টি করেনা, স্বাভাবিকভাবেই একটা মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি হলো আমার ভিতর। মনে হলো আমি একটি শিকড়বিহীন বৃক্ষ, অস্তিত্বহীন কোন প্রাণী।

একটা পরিবারে কিংবা একটা সমাজে যখন বহুবছর জীবন যাপন করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই স্থানের প্রতিটা মানুষ, সেই পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সাথে অত্যন্ত নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মানবিক সম্পর্কের বন্ধন কতটা আবেগীয়, কতটা স্পর্শকাতর তা তো কেবল সেই ব্যক্তিই জানে, যে জীবনের ঘূর্ণিতে আটকে গিয়ে চোখের সামনে সব কিছুকে অপরিচিত হিসাবে খোঁজে পায়। যাদেরকে সারাজীবন আপন হিসাবে জানার পর হঠাৎ করে সবাই যখন অপরিচেতর মতো আচরণ করে, তখন তার অনুভূতিতে আকস্মিক আকাশ ফেটে পড়ার অনুভূতি তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর এই যে, মায়ার বন্ধন, নারীর টান তা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার মতো আবহ তৈরি হওয়াটাই নেহাত অস্তিত্ত্বের সংকট।

ধর্মীয় অনুভূতিতে অস্তিত্বের সংকট (Existential Crisis in Religious Sentiment)

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে, নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে জাগতিক স্বার্থ যখন ঐশ্বরিক বা পরকালের স্বার্থকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মপালনের ক্ষেত্রে নানা প্রকার বাধা-বিপত্তি, জুলুম-নির্যাতন, হত্যাকান্ড ঘটানো যখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়ায়, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও তারা অতি অসহায় কিংবা নেহাত নিরীহ বই কি? আর এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের স্বার্থ বা অধিকার বহাল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদাসীনতা দেখিয়ে; কেবল মুষ্টিমেয় সম্প্রদায়ের সুবিধাবৃদ্ধি ও অধিকার সংরক্ষণ ও সকল প্রকার নিরাপত্তার চাদরে মোড়িয়ে রাখাকে নিশ্চয়ই মানবাধিকারের সমতা রক্ষা করা হয়না।  ধর্ম পালনে সচেতন গোষ্ঠীকে যদি উগ্রতা, মৌল/-বাদ অথবা জ~ঙ্গী নামক তকমা দেওয়া হয় এবং মিথ্যা অপবাদে জেল-জুলুম, নির্যাতন, ঘুম  করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। ইমানদার ও সচেতন মুসলিমের জন্য এটা এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি করে। 

যেখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে, সেখানে কেউ যখন ইসলামের সার্বিক আইন মানতে গিয়ে আর দশজন সাধারণ মুসলিমের চাইতে  করে তখন কিছু 

এটা আমার দেশ, আমার জন্মভূমি, আমার মাতৃভূমি। যখন থেকে কথা বলা শিখেছি এই মাটির উপরে তখন থেকে এই দেশের ভাষায়; মানে বাংলা ভাষায় আমি কথা বলে এসেছি। এই ভাষা যেমন আমার অস্তিত্ত্বের সাথে সংগতিপূর্ণ। যখন এই ভাষায় কথা বলতে গিয়ে কোন বাধা আসে, তখন অবশ্যই সেই অধিকার রক্ষায় কথা বলা আমার নাগরিক দায়িত্ব হয়ে যায়।

আমাদের জাতীয় পরিচয়ের পাশাপাশি আমাদের আরোও একটা বড় পরিচয় আমরা মুসলিম। মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যে। আর পৃথিবীতে মানুষের প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহ মানুষ এবং জিনকে একমাত্র মহান রবের ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। [আল কোরআন, সূরা জারিয়াহ- ২৬]

কিন্তু পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য নবী ও রাসূল আগমন করেন। আর বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। যদিও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, ইসলামকেই একমাত্র মনোনিত ধর্ম বলেছেন। তাই মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাস্বরূপ যারা মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের জন্য একই ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের চাইতে সহজ। কেননা, আদিকাল হতেই মানুষের মধ্যে একটা প্রকট ধারণা বিরাজমান, আর তা হলো পূর্ব পুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন করা তাদের জন্য আবশ্যিক মনে করে। সেক্ষেত্রে নতুন কোন ধর্ম বা নতুন কোন ঐতিহ্যকে ধারণ করা এতোটা সহজ হয় না।

কিন্তু সত্য ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও কেবল পূর্বপুরুষদের লালিত-পালিত ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে অন্য ধর্মকে সত্য ধর্ম মেনে নিতে সকল সময়েই কঠিন ছিলো। কিন্তু কথা হলো যেই ভুখন্ডের নব্বই শতাংশের বেশী মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সেখানে কোন মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে সঠিক উপায়ে ও একান্ত আনুগত্যপোষণ করে সেই ধর্ম মানতে যাবে, তখন তাকে সন্দের চোখে ফেলে দেওয়া হয়। প্রকৃত ধর্মীয় বিধান ও আইন মানার ক্ষেত্রে অত্যধিক আনুগত্য করতে গিয়ে যখন সাধারণ ধর্মাবলম্বী বা নামধারী মুসলিমদের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন তাদেরকে বিশেষ কিছু তকমা দেওয়া হয়, যেমন- জ#ঙ্গী, চরম-+প>ন্থী, মৌ*ল-বা>দ ইত্যাদি।


যখন একজন মুসলিম তার অধিকার সংরক্ষণ করে যথাযথ নিয়মে ধর্মপালন করে ও দাওয়াহ’র কাজ করে তখন কিছু মহলের লোকেদের জ্বালা ধরে যায়। হিংসা ও বিদ্বেশের জন্ম হয়। সত্য ধর্ম পালন করতে গেলে যখন তাদের কোন অবৈধ কাজ করা সম্ভব হয়না, খারাপ কাজ করতে পারেনা, জুলুম, অত্যাচার ও হারাম কাজ করা কঠিন হয়ে যায়, তখন তাদের সেই ধর্ম মেনে নেওয়া তো কোনভাবেই সম্ভব মনে হয় না। আর তাই বিশেষ কিছু তকমা বা অপবাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় বৃহৎ শক্তিকে কব্জা করে তারা সেই ধর্মাবলম্বীদের দমন করতে চায়। তারা প্রথমত চায়, তাদের মতো বাকি মুসলিমরাও খামখেয়ালিভাবে অথবা গতানুগতিক কৃত্রিমভাবে ধর্ম পালন করুক, তাতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।

নিজ দেশে ও নিজ ভূমিতে নিজ ধর্ম পালনে তোষামোদ করা, বিধর্মী ও নাস্তিকদের সাথে আপোষ করা। ধর্মীয় সমালোচনায় বিভিন্ন কট্টর অপরাধ, জেল-জরিমানা, শাস্তিসহ জীবননাশের আশঙ্কা যখন কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উৎকন্ঠা সৃষ্টি করে; তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে ‘আসলেই কী আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতি? নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুনাফেক ও কাফিরের মাঝে আমরা কেবল উদ্বাস্তু? যখন কোন মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া স্বত্তেও তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দুর্লভ হয়ে পড়ে, তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেকে অত্যন্ত একা হয়ে যায়। আশপাশে হাজারো মানুষকে দেখতে পেলেও তার আদর্শ ও মূল্যবোধের জায়গায় যখন নিজেকে একাকীত্বতায় আবিষ্কার করে, তার অস্তিত্বের সংকট প্রবল হয়ে যায়।

কিন্তু সবকিছুরই শিকড় আছে। সব কিছুরই শেষ আছে। আশার কথা হলো, একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো সর্বাত্মকভাবে নিজের ঈমানকে মজবুত রেখে ইবাদতে মশগুল থাকা এবং সাধ্যমতো দ্বীনের দাওয়াহ, দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আর ইসলাম ধর্ম কোন ঠুংকো নয় যে, কোন জাতি, সম্প্রদায় চাইলেই তা নিশ্চিহ্ন করে দেবে; বরং এই ধর্ম আল্লাহর একমাত্র মনোনিত ধর্ম। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তার ধর্মকে মানুষের কাছে সমুন্নত রেখেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তিনি ইসলামকে সুরক্ষিত রাখবেন। পৃথিবীতে আদম (আঃ) থেকে শুরু করে যত নবী-রাসূল আগমণ করেছেন সকল নবী রাসূলের যুগেই কাফের মুশরেক সম্প্রদায় তাঁদের বিরোধিতা করেছেন, আল্লাহর দ্বীনকে তারা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। অথচ সেইসব কাফের সম্প্রদায়ের ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। আর তাদের জন্যও নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা গজব পাঠাবেন বা তাদেরকে ধ্বংশ করবেন। 


সম্পূর্ণ পড়ুন...

Thursday, November 18, 2021

তাহার স্মৃতিতে আমি

 কেন যেন মনে হয় সে ফিরবে কোন এক অবকাশে।

শরতের বাতাশে কাশফুলগুলো দূরে যাবে মিশে।

লেকের ধারের বেঞ্চটা পরে থাকবে ফাকা,

চারিপাশে সে দেখতে পাবে, আমার ছবি আকা।

সেই কাঁধে মাথা রেখে, জগতের ভাবনারা তাকে করে দিশেহারা,

একদিন সবকিছুই পাবে সে আগের মতো,

দাড়িয়ে থাকবে আমি ছাড়া।

ভাঙ্গবেনা ভুল তার যতদিন বেঁচে আছি,

আসবেনা সব ভুলে, কেবল আমার হয়ে, কাছাকাছি।

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Friday, July 23, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ৩

 নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনাঃ

আগের পর্বগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, যে নজরুলের কাব্যের মূল দুইটি বিষয় হলো প্রেম ও বিদ্রোহ। প্রেম বিষয়ক কাব্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘অগ্নিবীণা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘চক্রবাক’, ‘ছায়ানট’, ‘দুলনচাপা’। নজরুলের প্রেমের কবিতা বাংলাকাব্যের বহুকাল আগের গীতিধর্মী যোগসূত্র পাওয়া যায়। প্রেম মানেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ, প্রেম মানেই বিরহ, প্রেম মানেই নানা রকমের অনুভূতির লেনদেন। তেমনি নজরুলের কবিতায়ও আবেদ, দুঃখ-বিরহ মিশ্রিত রোমান্টিক কবিসত্ত্বার পরিচয় পাওয়া যায়। নজরুলের কাব্যে আবেগ ও বিরহ সমানতালে পাওয়া যায়। কারাগারে বন্দি হয়েও তিনি প্রেমের কবিতা রচনা করেছেন। ‘দোলনচাপা’ কাব্যটি তিনি রচনা করেন কারাগারে বন্দি অবস্থায়। তিনি তাঁর প্রিয়তমার স্মরনে লিখেছেন-          
“এত দিনে অবেলায়-
প্রিয়তম!
ধূলি-অন্ধ ঘূর্ণি সম
দিবাযামী
যবে আমি
নেচে ফিরি র”ধিরাক্ত মরণ-খেলায়-
এ দিনে অ-বেলায়
জানিলাম, আমি তোমা’ জন্মে জন্মে চিনি।
পূজারিণী!”
 
 

 নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপঃ

নজরুলের কাব্যে  প্রকৃতি, প্রেম ও বিদ্রোহ এই তিনে মিলে একাকার। প্রকৃতি প্রেমের ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিশেষকরে ‘চক্রবাক’ কাব্যে। প্রকৃতি-প্রেম এবং বিরোহ দ্বারা তিনি কাব্য জগতে এক অপূর্ব সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির টানে তিনি সারাজীবন ছুটেছেন এদেশ-ওদেশ এবং একশহর হতে অন্য শহরে। তাঁর রচিত খুব অল্প কবিতাই খোঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে প্রকৃতি ও অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করেননি। কাজী নজরুল মানেই প্রকৃতি প্রেমী কবি। আর সেকারনেই তিনি লিখেছেন- 
 
“বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী ! 
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হ’য়ে এল বিদায়ের রাতি ! 
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি, 
আজ হ’তে হ’ল বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি ”
চট্টলা শহরে বেড়াতে গিয়ে বন্ধুর বাসার ঘরের পাশের গোবাক তরু গাছের সাথে কবির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রতিরাতে জানালা খোলে গাছের পাতাদের সাথে নিবিড়ে কথা বলা। কবি হৃদয়ের বিরহ-বেদনার কথা তাদের সাথে প্রকাশ করা। শেষবেলায় কবি যখন বিদায় নেবে, তখন এসব গাছের দিকে চেয়ে কবি বিরহকাতর। প্রকৃতি প্রেমের নিদর্শন হিসাবেই কবির বেশ কিছু কাব্য ফুলের নামে ও বৃক্ষের নামে রচনা করেছেন। ‘দোলনচাঁপা’, ‘ঝিঙেফুল’, ‘ফণীমনসা’, ‘রাঙা-জবা’, ‘মহুয়া’—আরোও বহু নাম। 

বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাবঃ

কাজী নজরুল ইসলামের প্রকৃত পরিচয় তিনি বিদ্রোহী কবি। নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। তাঁর কলমী আন্দোলন ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নির্মাণ করে বিদ্রোহী কবিতা। আর তাই  প্রতিবাদী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল এর বিদ্রোহী-সত্তার ভিতরে বহুমাত্রা লক্ষ্য দেখা যায়। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জাত-বর্ণ ও ধর্মীয় বিভক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বিদ্রোহ ছাড়াও সকল ক্ষেত্রে অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। 
 
নজরুলের বিদ্রোহের স্বরূপ উন্মোচিত হয় ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়। এই কবিতায় তাঁর বলিষ্ঠ কন্ঠ ও বজ্রনিনাদ। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি বলেন,
 
“আমি দুর্ব্বার, আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃংখল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি  মানিনাকো কোন আইন।”

নজরুল এই কবিতার দ্বারা শোষক শ্রেণীর প্রতি তীব্র হুংকার দেন। অনাচার ও অত্যাচারের বিরোদ্ধে সাধারণ মানুষের নিয়মের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার মুক্তির আহ্বান জানান। নজরুলের বিদ্রোহ একটি সত্যকে প্রকাশ করা। আর সেই সত্য হলো মুক্তির ও কল্যাণের সত্য। তাঁকেই প্রথমবারের মতো দেখা যায়, পূর্ণভাবে ভারতের স্বাধীণতা চাইতে। তাঁর কন্ঠের বজ্রনিনাদ, বলিষ্ঠ বিদ্রোহ চেতনার ফলাফল ফুটে ওঠে তার লেখার মধ্য দিয়ে।
 
“আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, 
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা ”

নজরুল কখনো ভীত হননি কোন শাস্তির ভয়ে। সেকারণেই বারবার জুলুম সহ্য করে কারাবরণ করেও তাঁকে ধমাতে পারেনি কেউ। আর এই কারনেই তিনি বিদ্রোহী কবি।

পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন

 

পার্ট-২ পড়তে ক্লিক করুন


 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Wednesday, July 21, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ২

 নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তুঃ

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রথমত সাম্য ও মানবতা, দ্বিতীয়ত, প্রেম এবং তৃতীয়ত প্রকাশ পেয়েছে বিদ্রোহের। এছাড়াও নজরুলের কবিতায় অসাম্প্রদায়িকতা, প্রকৃতি ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কবি অসাম্যবাদের বিরোদ্ধে অবস্থান ও  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রের অসহায় মানুষের দৈন্যদশা, অত্যাচার, জুলুমের চিত্র দেখে কবি সেসব মজলুম মানুষের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। প্রেম বিষয়ক কবিতায় নজরুলকে পাওয়া যায় একজন রোমান্টিক কবি হিসাবে। কবি একদিকে যেমন বিদ্রোহী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন আবার অন্যদিকে প্রেমে-বিরহে কাতর। তাইতো কবি বলেছেন, “এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।


নজরুলের চক্রবাক কাব্যটি মূলত প্রেম বিষক কাব্য। এই কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই প্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে। প্রেম, প্রকৃতি, সাম্য-মানবিকতার পাশাপাশি ‍শিশুতোষ কাব্য ও ছড়াও রচনা করেন। নজরুলের কবিতায় বীররস প্রবলভাবে প্রতীয়মান হলেও, আবেগ মিশ্রিত কাব্যরসও পাওয়া যায়। তিনি একজন স্বাধীনচেতা কবি। মজলুমের অত্যাচারিত অবস্থা অবলোকন করে তিনি সাধারণ ও অসহায় মানুষকে স্বাধীনভাবে বাঁচার আহবান জানান।
  

সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকাঃ

নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ধর্ম-বর্ণের সাম্য, উচু-নিচু শ্রেণীর পার্থক্য ও বৈষম্য দূর করে সাম্যতা আনয়ন ও মানবতাকে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াস মেলে। তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে মানবতাকে ঠাঁই দিয়েছেন-
                                            “গাহি সাম্যের গান-
                                        মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান!
                                            নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
                                        সব দেশে, সবকালে, ঘরেঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”
 
তিনি রাজা-প্রজার মধ্যে ভেদাবেদ দেখতে চাননি। তিনি চেয়েছেন সকলের সমান মর্যাদা। যেহেতু আমরা সবাই একই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ, তাহলে এক মানুষ অন্য মানুষকে নিচু করতে পারেনা। এক মানুষ অন্য মানুষের পিঠে পা রাখতে পারে না। যেসব মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজ্য গঠিত হয়, হাজারো প্রজার জীবন দিয়ে রাজ্য গঠন করলেও সেই প্রজারাই হয় নির্যাতিত। তিনি সেসব প্রজাদের আহবান করেছেন শৃংখলার বাধন ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে। 
                                         “গাহি সাম্যের গান-
                                        যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই।
                                                এ প্রশ্ন অতি সোজা,
                                    এক ধরনীর সন্তান, কেন কেউ রাজা, কেউ প্রজা?”

তিনি বর্ণবাদের বিরোদ্ধে কলম ধারণ করেন। সাদা-কালোর মধ্যে কোন বৈষম্য হোক সেটা তিনি পছন্দ করেননি। তাই ‘সাম’ কবিতায় তিনি বলেন-  “নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গোরস্থান,
                                            নাইকো এখানে কালা ও ধলার আলাদা গির্জা-ঘর
                                            নাইকো পাইক-বরকন্দাজ নাই পুলিশের ডর।”

কবি জাতের মধ্যে ভেদাবেদ কখনোই করেন নি। তাঁর অসংখ্য কবিতায় হিন্দু-মুসলমানকে সমানভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতাটি কবির বিখ্যাত একটি কবিতা। এ কবিতায় মানবিকতা ও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরেছেন। দেশ-কাল-পাত্রের বৈষম্যে যেনো মানব জাতির মর্যাদা খুন্ন না করা হয়। অনেকে ধারণা করেন, নজরুলের সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদের মতোই। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাঁর সাম্যবাদ মার্ক্সীয় সাম্যবাদ নয়। 

পার্ট-১ পড়তে ক্লিক করুন

পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন

 

তৃতীয় পর্বে যা আলোচনা করা হবেঃ

  • নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।

  • নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।

  • বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।

     

    বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন

     

     


     

 

সম্পূর্ণ পড়ুন...

Tuesday, July 20, 2021

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের ভূমিকা || পার্ট - ১

 আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

 ১. বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্ব।

 ২. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনা।

৩. নজরুলের কবিতার বিষয়বস্তু।

৪. সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকা।

৫. নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা।

৬. নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ।

৭. বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব।

 

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের কৃতিত্বঃ

বাংলা সাহিত্য গগনের এক অত্যুজ্জল নক্ষত্র কবি নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তাঁর পদচারণা নেই। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, নাচ, অভিনয়, ইসলামী সঙ্গীতসহ আরোও বহু ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তবে এতো সব বিষয়কে ছাপিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা কাব্যের রাজাধিরাজ। তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সমকালীন সময়ের সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব কবি হিসেবেই অত্যাধিক খ্যাত।  বাংলা কবিতায় অন্য সকল কবিরা যখন সাধারণ গতাণুগতিক ধারায় কবিতা রচনা করছিলো, তখন নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন। তিনি যেমন সারাজীবন দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে বড় হয়েছেন, তেমনি তিনি অভাবী, গরিব, দুঃখী, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশ শোষণের বিরোদ্ধে কথা বলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেন। তাঁর কলমী আন্দোলন ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ নির্মাণ করে বিদ্রোহী কবিতা। আর তাই  প্রতিবাদী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

দেশের মানুষের দৈন্যদশা ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষাবলম্বনের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে তাঁর দেশ প্রেম। সাপ্তাহিক ধূমকেতু পত্রিকায় লেখার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যের দরবারে পুরোপুরি প্রবেশ করেন। হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ শাসনের বিরোদ্ধে আরো বেশি সোচ্চার। অসাম্য ও অসত্যের বিরোদ্ধে তিনি শুরু করেন প্রচন্ড বিদ্রোহ। মুসলিম জাতিকে তাদের অতীত এতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুনিয়েছিলেন জাগরণের বাণী। তিনি দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছিলেন পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে দিয়ে মুক্ত-স্বাধীন জীবনের প্রতি এগিয়ে আসতে। এতে নজরুলের দেশপ্রেম কতটা প্রখর ছিলো বোঝা যায়। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যটি তাঁর প্রতিবাদী কাব্যের অন্যতম। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলো হলো- অগ্নিবিনা,    সঞ্চিতা , ফনিমনসা , চক্রবাক, মরুভাস্কর ইত্যাদি। 
 
বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজী নজরুল ইসলামের  যেসব কাব্য পড়ানো হয় তার মধ্যে ‘সাম্যবাদী’, ‘চক্রবাক’, ‘ফনিমনসা’ ও ‘অগ্নিবিনা’ কাব্য অন্যতম। বর্তমানে যেসকল শিক্ষার্থীরা বাংলা সাহিত্যে অধ্যায়নরত আছেন, তাদের বাংলা সাহিত্যে নজরুল কাব্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও এর উত্তরের দিকটি মাথায় রেখে ‘সাম্যবাদী’, ‘চক্রবাক’, ও ‘অগ্নিবিনা’ কাব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।
 

 জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চেতনাঃ

 সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর কবিতার প্রতি বিশেষ দরদ। সব বিষয়কে ছাপিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা কাব্যের রাজাধিরাজ। তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সমকালীন সময়ের সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব কবি হিসেবেই অত্যাধিক খ্যাত।  বাংলা কবিতায় অন্য সকল কবিরা যখন সাধারণ গতাণুগতিক ধারায় কবিতা রচনা করছিলো, তখন নজরুল ইসলাম  সমসাময়িক অন্যায়-অত্যাচারের বিরোদ্ধে কলম ধরেন।
সাহিত্যিক গুণাগুন ও বৈশিষ্ট বিবেচনায় তিনি জাত কবিদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন এবং তাঁর কাব্য রচনা এক অনন্য মাত্রায় স্থান পায়। তাঁর কবিতার শব্দ, বাক্যগঠন, ছন্দ ও ভাষা এতোটাই প্রাঞ্জল যে, সমসাময়িক কবিরা তাঁর ধারে কাছেও ভিরতে পারেন নি। স্বদেশী ভাষা ছাড়াও অসংখ্য বিদেশী ভাষার শব্দ তাঁর কবিতাকে অলংকৃত করে।


কাব্য রচনার ভাষাশৈলী শিল্পের উচ্চমান দখল করে আছে। তিনি কাব্য রচনার ক্ষেত্রে আরবি, ফারসি, হিন্দি ও উর্দু শব্দের প্রয়োগ করেন। তিনি এমন কিছু বিদেশী শব্দ কবিতায় ব্যবহার করেছেন, যেগুলো সহজেই বাংলা শব্দের সাথে মিলে গিয়েছে। এমনকি অনেক শব্দকে বাংলা বলেই মনে হয়। ভিন্ন রূপটিও দেখিয়েছেন, যেমন- জাহান্নাম, ঈমান, আসমান, হিম্মত, জানাজা শব্দগুলো বাংলা শব্দের রূপ দিতে চাইলেও তা আরবি-ফারসিই রয়ে গেছে। তাঁর ফারসি ভাষা ও আরবি ভাষা বেশ সমালোচিত ও বিতর্কত; তথাপি তিনি ব্যক্তিগত ধরনে বিশ্বাসী ছিলেন। বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম কিংবা বাগ-বিধানের প্রতি এতোটা খেয়াল করেননি। নিজস্ব ধরন প্রকাশ পেয়েছে কবিতায় এবং কাব্য নির্মানের যাদু জানা ছিলো তাঁর।

যেহেতু এই বিষয়ের আলোচনা কিছুটা দীর্ঘ হবে, তাই কয়েকটি পর্বে লেখার চেষ্টা করছি। প্রতিটি পর্বের লিংক নিচে দেওয়া থাকবে, আপনারা ক্লিক করেই অন্য পর্বের আর্টিকেলটি পড়তে পারবেন। এই পর্বটি এখানেই শেষ করলাম।
 
 

পার্ট-২ পড়তে ক্লিক করুন

পার্ট-৩ পড়তে ক্লিক করুন।

 

সাম্যবাদী কবি হিসাবে নজরুলের ভূমিকা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
নজরুলের কবিতায় প্রেম চেতনা অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
নজরুলের কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের স্বরূপ অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে- 
 
বিদ্রোহী কবি হিসাবে কাজী নজরুলের আবির্ভাব অংশটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে-
 
 
কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের বিষয়বস্তু কী? ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের মূলভাব আলোচনা কর। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের  স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যে কাদের সাম্যের কথা বলা হয়েছে?
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের নাম কবিতা ‘সাম্যবাদী’র মূলভাব আলোচনা করো।
‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘মানুষ’ কবিতার মূলসুর কি?
‘সাম্যবাদী’ কাব্যে ‘বারাঙ্গনা’ ও নারী কবিতায় কোন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে? পড়তে ক্লিক করুন।
 
 
‘চক্রবাক’ কাব্যের মূলভাব আলোচনা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের বিষয়বস্তু কি? ‘চক্রবাক’ কাব্যে প্রেমের স্বরূপ ফুটে ওঠেছে আলোচনা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের নাম কবিতা ‘চক্রবাক’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো। ‘চক্রবাক’ কাব্যের  ‘কুহেলিকা’ কবিতার ভাববস্তু কী? ‘চক্রবাক’ কাব্যের ‘তোমারে পড়িছে মনে’ কবি কার কথা মনে করে কবিতাটি রচনা করেন? পড়তে ক্লিক করুন।
 




 
সম্পূর্ণ পড়ুন...

Monday, July 19, 2021

অর্থ যখন অনর্থ || মোঃ অলিউল্লাহ

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। তাঁহার নামেই শুরু করছি। আমি তৌসিফ। আমরা তিন ভাই-বোন, অর্থাৎ দুই ভাই এক বোন। আমি মেঝো। আমার বড় ভাই আমার থেকে দুই বছরের বড় হলেও আমার বোন সুবর্ণা আমার থেকে সাত বছরের ছোট। আমার বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ছোট বড় কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মিলিয়ে আমাদের আটটা বাড়ি আছে। গাড়িও আছে চারটা। আশ্চর্য হলেও সত্যি আমি কোন গাড়ি ব্যবহার করিনা; এমনকি আটটি বাড়ির মধ্যে ছয়টি বাড়িতেই আমার কখনো যাওয়া হয়নি। স্থায়ীভাবে আমরা সবাই একই বাড়িতে বসবাস করছি। আমার বড় ভাই বাবার মতোই বিচক্ষণ আর উচ্চাবিলাসী। পড়াশোনায় খুব সুবিধা করতে না পারলেও তার বিচক্ষণতার ছাপ পাওয়া যায়, বাবার সাথে ব্যবসায় ক্ষেত্রে। কোন রকম ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেই সে বাবার সাথে ব্যবসায়ের হাল ধরেছে। তার তুলনায় আমি পরিবারের সবার কাছে অকম্মার ঢেকি।

কারণ বাবার কোথায় কোন ব্যবসায় আছে, কোন কিছুই আমি জানি না। আমার বোনটিও অনেকটা বড় ভাইয়ের মতোই বিচক্ষণ এবং বিলাসী। বড় লোকের মেয়ে হিসেবে বিলাসী হওয়াটা তাকে মানায়। আমি তার এবং পরিবারের সবারই চক্ষুশূল। সকলের অপ্রিয় হওয়ার কারনটা পরে বলছি। আমার আরোও একটা পরিচয় আছে আমার পরিবারে ‘পাগল’। পরিবারের বাইরেও আত্মীয় মহলে এই নামের পরিচিতি আছে। আমাকে পাগল বলার কারনটা বলার আগে বলে নেওয়া ভাল যে, গল্পটি মূলত আমার বোন সুবর্ণাকে নিয়ে। সে এখন হসপিটালের আইসিওতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ডাক্তাররা বলছে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম, মাথায় তীব্র আঘাতের কারণে অনেক বড় ফ্রেকচার হয়েছে। আমার বোনটির এই দশার জন্য দায়ী আমার বাবা অঢেল টাকা, মায়ের অত্যাধিক আধিক্ষ্যেতা এবং বড় ভাইয়ের পশ্রয়। যদিও এখন দায় সারাভাবে সবাই নিজের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। হসপিটালে কেবল আমিই আছি ওকে দেখার জন্যে।

দীর্ঘদিন ধরে একটা ছেলের সাথে তার রিলেশন ছিলো। মূলত ছেলেটা তার সৌন্দর্যে যতটা না তাকে ভালোবেসেছে, তার টাকাকে বেসেছে বেশি। বিষয়টা সুবর্ণা বুঝতো, কারন শুরু থেকেই বিভিন্ন সময় রৌনক তার কাছ থেকে হিসেব ছাড়া টাকা নিয়েছে কিন্তু তাকে হারানোর ভয়ে আমার বোন কখনো কোন এটেম্পট নেয়নি। সুবর্ণার টাকার প্রতি খুব ফেসিনেশন ছিলো, শৈশব থেকেই সে বিলাসী জীবন-যাপন করেছে। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনেই অর্থ ব্যয় করেছে বেশি। তার বেশ কয়েকটা ভিসা ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে তার অযৌক্তিক অর্থ ব্যয় দেখে আমার মা কিছুটা সাবধান হতে চাইলেন, আর তার ক্রেডিট কার্ডগুলো লুকিয়ে রাখলেন।

ঠিক সেই মুহুর্তে রৌনক নাকি তার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা চেয়েছিলো। সে জানে রৌনক টাকাটা পেলে আর দেশে থাকবেনা; এমনকি তার প্রতি যে রৌনকের কোন আন্তরিকতা নেই এটা অনেক আগেই বুঝেছে। কিন্তু তার প্রতি দুর্বলতার জন্য তাকে ছাড়তে পারেনি। পরশু দিন সকালে আমার স্ত্রীকে সুবর্ণা কেঁদে কেঁদে বলছিলো, “ভাবি, আমার সব শেষ হয়ে গেলো। রৌনক আর আমাকে চায় না। সে আমাকে ডিচ করেছে। আমার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা চেয়েছিলো, আমি দিতে রাজি হইনি। তাই সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি এখন কী করবো ভাবি?”


সুমি আমার স্ত্রী, তাকে বললো, “তুমি ধৈর্য ধরো। যে তোমাকে ভালোবাসবে সে টাকা নয়, যেকোন মূল্যে তোমাকেই চাইতো। সে তোমাকে চায় না এটা তুমি ভালো করে জানো। শান্ত হও। স্বাভাবিক জীবন-যাপন করো। হয়তো তোমার জন্য ভালোই হয়েছে।”

কিন্তু এতে সে কনভিন্স নয়। সকল বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ ফোন দিলে রেসপন্স করেনা। সারাদিন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমায় আর মাদক সেবন করে। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। যখনই তার কোন সমস্যা হতো সে এমন করতো।

গতকাল সে মায়ের ঘরে গিয়ে তার সাথে চড়াও হয়। মাকে বলে- “আম্মু আমার কার্ডগুলো দিবে কিনা বলো?”

মা বলল- “কিছুদিন পরে দেবো।”

“আমার এখনই লাগবে। তুমি এখনি আমাকে আমার কার্ডগুলো দিবে।”

ওর দুর্ব্যবহারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায়, মা তার কার্ডগুলো ফেরত দিলো। সে তখন মাকে বললো, “এখন থেকে আমি ধানমন্ডির আটতলা ভবনে থাকবো। আমি এখনই চলে যাবো সব কিছু নিয়ে।”

মা বললো, “কেনো কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেনো?”

“তোমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।” 

এই বলে চলে গেলো। শুনেছি ব্যাংকে যত টাকা ছিলো সব টাকা তুলে নিয়ে বাসার সিন্ধুকে রেখেছে। ওর ফোন কল রেকর্ডার অন করা থাকতো। কল রেকর্ড থেকে জানতে পারি, সুশ্মিতা নাতে ওর এক বান্ধবী কল দিয়েছিলো। কল করে যা বলল- “সুবর্ণা চল ঢাকার বাইরে থেকে ঘোরে আসি।”

“নারে, আমি এখন কোথাও যাবোনা।”

সুশ্মিতা- “কেনো?’’

“রৌনক আমাকে ডিচ করেছে। আমার মন খুব খারাপ। এছাড়া আমি বাসা থেকে ধানমন্ডির বাসায় চলে এসেছি। কয়েকদিন যাবৎ কেউ একজন আমার ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে। আমার ফোনে বারবার ওটিপি’র এসএমএস আসছে। ওটিপি কন্ফার্ম কনফার্ম করতে পারছেনা, তাই টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেনা। কিন্তু আমার মনে হয় একসময় সে একাউন্ট হ্যাকও করে ফেলবে। তাই ব্যাংকের সকল টাকা তুলে সিন্ধুকে এনে রেখে দিয়েছি। এই অবস্থায় আমার ঢাকার বাইরে যাওয়া ঠিক হবেনা। তুই না হয় আমার বাসায় চলে আয়, দু’জন মিলে গল্প করবো।”

সুশ্মিতা- “ঠিক আছে আমি বিকালে আসবো।”

“ঠিক আছে।”

বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারলাম, সুশ্মিতা চারটা বাজে বাসায় এসেছে। প্রথমে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক কথা বলতে দেখলাম। এরপর উভয়ে উভয়ের সাথে চড়াও হয়ে কি যেনো বলছিলো। সুবর্ণা অন্য রুমে গেলো সুশ্মিতাকে বসিয়ে। এবার সুশ্মিতা সিন্ধুকের হ্যান্ডেল ধরে টান দিয়ে সিন্ধুুকের দরজা খুলে ফেললো, যদিও এটা সিকিউরলি লক করা ছিলো। সুবর্ণা পাশের রুম থেকে এসে দেখলো, সিন্ধুকটি খোলা এবং কোন টাকা এর ভিতর নেই। হঠাৎ করে রৌনক ভেসে উঠল তাদের মাঝে। তার হাতে ছিলো অনেক বড় ড্রিল মেশিন ও মাথায় হেলমেট। অর্থাৎ সে যেকোন উপায়ে বাসায় প্রবেশ করে সিন্ধুকের পিছন থেকে খুব সতর্কভাবে ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে সকল টাকা সরিয়ে ফেলে এবং পরে সুবর্ণাকে জানায় সে কিভাবে সবকিছু করল।


সুবর্ণা তাদের হেন ঘটনায় চড়াও হলে রৌনকের হাতে থাকা ড্রিল মেশিন দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং সুবর্ণা রক্তাক্ত হয়ে  মাাটিতে লুটিতে পড়ল।। এরপর ওরা  পালিয়ে  গেলো। সুশ্মিতার ফোন ট্রেস করে জানা যায়, রৌনকের সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিলো। এছাড়া রৌনক এই বাড়িতে এর আগেও দুইবার এসেছিলো, তা সিসিক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়। যেহেতু রৌনক আগে থেকেই বাসার অবস্থান জানতো, তাই সুশ্মিতার কাছ থেকে টাকার সন্ধান পেয়ে তা সরিয়ে নেওয়ার মাস্টার প্লান করে।  যদিও সব কিছুই প্রকাশ পেয়েছে এবং তাদের দু’জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মোটের উপরে আমার বোন হসপিটালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

এবার আসি মূল গল্পে। আমাকে বাসায় সবাই পাগল বলতো। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি নিয়মিত নামাজ, রোজার প্রতি খুব আন্তরিক ছিলাম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কখনো অর্থ অপচয় করতাম না। সকলর শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশতাম এবং সাধারণ মানুষের মতো সারাদিন পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক পরিশ্রমের কাজ করতাম। সুযোগ পেলেই মানুষের কাজে সাহায্য করতাম। সবাই আমাকে পছন্দ করতো। উচুশ্রেণীর চেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষের সাথেই আমি বেশি মিশেছি; এমনকি কখনো খুব দামী পোষাক ও পড়িনি। সাধারণ এই জীবনযাপনে আমার বাসার সবাই আমার প্রতি বেশ বিরক্ত হতো। এছাড়া বড় ভাইয়ের মতো আমিও যদি ব্যবসায় মনোযোগী হতাম তাহলে হয়তো আমাদের সম্পদ আরো বেশি হতো, এই ধারণা তাদের। স্কুল পাশের পর থেকেই আমি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম। বাবার কাছে খুব কম সময়ই টাকা চেয়েছি। কখনো টাকা দিতে চাইলে আমি নিতাম না, তাই তাদের কাছে আমাকে অস্বাভাবিক মনে হতো। 

যেহেতু আমার পরিবারের লোকজনের ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অনিহা তাই আমার সবরকমের ইবাদত তাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতো। শিক্ষামূলক কোন কথা বললেই আমাকে বলতো আমি পাগল। আমি উন্মাদ। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ; এমনকি দু’য়েকবার আামার মা আমাকে মানসিক ডাক্তার দেখাতেও নিয়ে গিয়েছিলেন। যখন রাগ করার মানে বুঝতাম না তখন কেউ আমায় পাগল বললে আমি খুব ক্ষেপে যেতাম। যখন বুঝলাম রেগে গিয়ে নিজের আচরণকে অসংযত ও উগ্র করে আমি বরং ভুল মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি, তখন থেকে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। আমি শিখেছি ধৈর্য্যই মহত্তের লক্ষণ। যাকে আল্লাহ হেদায়াত না দেন, সে আমার কথায় কতটাইবা পরিবর্তন হবে। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।”-সুরা-আশ-শূরা, আয়াত-১৩

এবং আরোও বলেন, “আর যাকে আল্লাহ্‌ হেদায়াত করেন তার জন্য কোন পথভ্রষ্টকারী নেই; আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্ৰহণকারী নন?” - সুরা- আয-যুমার, আয়াত-৩৭

আমার পরিবারের প্রতিটি মানুষ অর্থ, আভিজাত্য আর আধুনিক পৃথিবীর সাথে স্রোতে গা-ভাসিয়ে চলে। দুনিয়াটা তাদের কাছে কৃত্রিম স্বর্গ। কিন্তু তারা জানতে কিংবা বুঝতে চায় না, একদিন সন্ধ্যা হবে, আলো ফুরাবে, পাখিদের কোলাহোল স্তব্দ হবে, অন্ধকারে আবৃত হবে পৃথিবী। তখন তাকে দাড়াতে হবে চরম বাস্তবতায়। যেদিন নিশ্বাসটা বন্ধ হবে, এরপর থেকেই তাদের দুনিয়ার রংঢং শেষ হয়ে যাবে। শেষ হবে অবৈধ সম্পর্কের ও হারাম জীবিকার।

সুবর্ণা শৈশব থেকেই ছিলো খামখেয়ালি স্বভাবের। বিশেষ করে অপচয়ের ক্ষেত্রে তার জুড়ি নেই। জীবনে অভাব কী জিনিস জানেনি সে। দেখেনি বাহিরের জগতের বাসিন্দাদের। অহংকার, বিলাসীতা, অবাধ মেলামেশা এবং মাদক সবকিছুর মূলেই ছিলো প্রচুর টাকা পয়সার সহজলভ্যতা। ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইসলামের অনুশাসন কখনোই পায় নি। সকলের বাড়তি আদর এবং শাসনের অভাবে যারপরনাই চলাফেরা করতো সে। অন্য সকলের মতো সে আমাকে পছন্দ করতো না আমি ইবাদত করি বলে। তার কাছে আল্লাহর উপাসনা করা পাগলামি ছাড়া কিছু না। মৃত্যুর পরে আখেরাতে নেই কোন বিশ্বাস। যদিও আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা ওকেশনাল ধার্মিক; মানের ঈদ উদযাপন এবং লোক দেখানো ধর্ম পালন।

আজ সুবর্ণার এমন অবস্থার জন্য দায়ী আমার বাবা-মা ও বড় ভাই। ছোট শিশুর হাতে যেখানে খেলনা তুলে দেওয়ার কথা, তাকে দেওয়া হয়েছিল টাকা। সারাদিন টাকা নিয়ে খেলতো। দিনদিন যখন বড় হচ্ছিল তখনো তাকে টাকার সঠিক ব্যয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়নি, বরং দামি দামি ড্রেস, স্কুটি, গাড়ি, মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপ হাতে তুলে দিয়েছে শৈশবেই। যা পেয়ে সে মেতে থাকতো হৈ চৈ বিনোদন, সিনেমা, আড্ডাবাজি, ভিডিও গেমস এবং রোটিন বিহীন অনিয়মের জীবন। যেখানে অর্থের অভাবে মানুষ তার সামান্য শখ পূরণ করতে পারেনা, সেখানে অর্থ তার জীবনকে নরকে পরিণত করেছে।







সম্পূর্ণ পড়ুন...