Thursday, May 8, 2025

চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।। বিহারি চরিত্র

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিহারী চরিত্র আলোচনা ও বিশ্লেষণ

‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি একটি ত্রিভোজ আকৃতির মানব প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। উক্ত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মহেন্দ্র হলেও সামগ্রিক দৃষ্টিকোন বিবেচনায় বিহারি চরিত্র হিসাবে সফল।  কেননা সমগ্র উপন্যাস জুড়েই বিহারী একটি উল্লেখযোগ্য পুরুষালি চরিত্রের ধারক ও বাহক। 

 মহেন্দ্রের মায়ের চোখে বিহারি তার সন্তানের চেয়ে অধিক যোগ্য ও কর্মঠ। মহেন্দ্রকে দিয়ে যে কাজ অসাধ্য সেই কাজ বিহারি অনায়াসে করে দেয়। আনুগত্যের দিক দিয়েও বিহারীর চরিত্র উত্তম।

 

মননশীল ও রুচিশীলতার ক্ষেত্রে বিহারী অনন্য। বিহারির ভাবনা-চিন্তা মহেন্দ্রের মতো নয়। কিন্তু মহেন্দ্রের প্রতি বন্ধুত্ব ও মহেন্দ্রের মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা তার জন্য বিহারী সর্বদাই নিজেকে আনুগত্যশীল ও দায়িত্বশীল হিসাবে পরিচয় দেয়। 


 মহেনের মা যখন বিনোদিনীকে ঘরে আনতে চায় তখন মহেন্দ্র বিনোদিনীকে বিধবা বলে অবজ্ঞা করে এবং বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।”

 

শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে। বিহারির মানস যেন লেখকের আত্ম ব্যক্তি রূপ প্রকাশ করে। এমনো হতে পারে সকল চরিত্রের মধ্যে বিহারি চরিত্রকে লেখক একটু বাড়তি যত্ন করে তৈরি করেছেন। বিহারির দায়িত্ব ও কর্তব্য বিবেচনায় সে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। 


কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসের ক্লাইমেক্সটা একটু অন্য রূপে প্রকাশ পায়, যখন মহেন্দ্র বিয়ে করে, সংসার করা শুরু করার পর কিছুকাল পরে বিনোদিনী মহেন্দ্রদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। বিনোদিনীর রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে আশালতা যেমনটি নির্ভলশীল না হয়ে পারেনি, তেমনি মহেন্দ্র ও বিহারিও কোন অংশে বিনোদিনীর মোহ ও আকাঙ্খার ফাঁদে কম আটকায় নি। মহেন্দ্রের চারিত্রিক হীনমন্যতা যখন বিনোদিনীর পাবার প্রবল আকাঙ্খায় পৌছায়, তখন বিহারি নিজের অবস্থান ও অস্ত্বিত্বের সংকটে ভোগে। 


 

বিনোদিনীর প্রতি বিহারির যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা একজন সুন্দরী, রূপবতী ও যৌবনাদীপ্ত নারীর না বুঝার কথা নয়। আর সে সেই দূর্বলতাকে পুঁজি করে বিহারী ও মহেন্দ্র উভয়ের ক্ষেত্রেই তার চতুরতা চালিয়ে যায়। পুরুষ মন এমন চতুরতায় আগে কখনো অভ্যস্ত নয়, তাই বিহারিও মহেন্দ্রের মতো নাকানি-চুবানি কম খায় নি। এই দিক থেকে বিহারি চরিত্রের কিছুটা দূর্বলতা ফুটে উঠে।

 

বিহারি চরিত্রের অন্যতম দূর্বলতা হলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং অন্যকে অগ্রাধিকার অতিরিক্ত মনোভাব। কেবল বন্ধু মহেন্দ্রেকে মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে বিহারি তার যথাপযোক্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন রকমের ছাপ পড়েছে। কিন্তু চোখের বালি উপন্যাসটি লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে একটি। শেষের কবিতা উপন্যাসের মতো এ উপন্যাসেও লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ করা, চরিত্র নিয়ে খেলা করা এবং জীবন বাস্তবতার মধ্য থেকে মানব চরিত্রের বিভিন্ন প্রতীকি নিদর্শন তুলে ধরেন। যা মানব জীবনের অতি সাবলীল ও সুবাস্তব চিত্র।



* মহেন্দ্র চরিত্র

* আশা চরিত্র

* রাজলক্ষী চরিত্র

* বিহারী চরিত্র

* অন্নপূর্ণা চরিত্র


 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment