যেদিন তুমিও বুঝতে শিখবে
ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞাটা যে ভালো ভাবে শেখেনি, তার জন্য জীবনে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। যেকোন মানুষের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলা থেকে শুরু করে একমুহুর্তে অপরিচিতের সাথে ঘনিষ্ঠতা পাতিয়ে ফেলা, যেকোন অসাধ্য কাজ সাধন করার ক্ষেত্রেও তার কোন জুড়ি নেই। কিছু মানুষ তার মুখের উপর একগুচ্ছ অপমানজনক কথা শুনিয়ে দিলেও সেই ব্যক্তিটি মুচকি হেসে অন্য কথার প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য পাল্টে দিতে পারে। আবার কিছু মানুষ তার এমন গোবেচারা স্বভাবের জন্য তাকে খুব পছন্দও করেন।
কিন্তু সমস্যা হলো ব্যক্তিত্ব বা ইগো বেশি হওয়া। কারণ একদিকে যেমন আমি কারো মুখাপেক্ষী হতে চাই না বা কারো করোণা চাইনা, তেমনি নিজের সামর্থের বাইরে গিয়ে কিছু করবার দুঃসাহস দেখাতে পারিনা। যদি সেটা পারতাম, তাহলেও বরং কিছু মানুষের,বিশেষ করে কাছের মানুষগুলোর মুখে বেশ বাহবা পেতাম। কিন্তু ওই যে বেহায়া স্বভাবের কিংবা অতিমাত্রায় আপোষজনক চরিত্রের ব্যক্তি হতে পারলাম না, সে কারণে হয়তো সাধ্যের উর্ধ্বে গিয়েও কারো মনে আনন্দের জোয়ার এনে দিতে পারি না।
“কথায় আছে, যে গরু দুধ দেয়, সে গরুর লাথি খাওয়া ও ভাল।” তবে সেটা আমার মানতে সমস্যা নেই, যখন আমি একান্তই মূর্খ্য, পরনির্ভশীল, চেষ্টাহীন ও বোধশক্তিহীন হতাম তখন। কিন্তু আমার জ্ঞান সামান্য হলেও আমি যে মানুষের পাশ কাটিয়ে কথা বলার অর্থ, চোখের ইশারা আর ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির মানেটা বুঝি। তাই যারা দু’পয়সার সহযোগিতার নাম করে আমার গোষ্ঠী উদ্ধার করে দেবার মতো ভাব করে,তাদের সাথে যে আপোষ করতে একটু দ্বিধা হয় বটে।

মানুষতো কুকুরকেও লালন-পালন করে। খাওয়ায়, থাকতে দেয়। বিনিময়ে কুকুর তাদের সামান্য নিরাপত্তা দেবার চেষ্টা করে। সেই হিসাব করলে তুমিও কি তাদের জন্য কিছু করনি? আর সেটা করে তুমি কতটা পেয়েছো তাদের কাছ থেকে? তুমি হয়তো ভাবছো অনেক কিছুই পেয়েছো, কিন্তু আমি বলবো কিছুই পাওনি। যা পেয়েছো, তা তোমাকে অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে। আবার সেটার জন্য বারবার স্মরণ করিয়েও দিয়েছে তোমায়, যে কতটা করছে তোমার জন্য তারা।
আসলে তুমি এখনো বাস্তবতা দেখো নি। আর যত দিন যাবে, তুমি ততবেশি আবেগপ্রবণ আর খামখেয়ালি হবে। কারণ তুমি এমন থাকতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করো। যাই হোক, আমি সেটা পারিনা। আমি পারি না, কারো মুখের কালো চাহনি সহ্য করতে। আমি পারিনা, অযাচিতভাবে কারো মনোরঞ্জন করতে। আমি পারিনা, কারো কাছে দায়বদ্ধ থাকতে এবং সারাজীবন তার দেওয়া গ্লানি বয়ে বেড়াতে।
তবে তুমি বলবে, তাহলে কী তোমার কারোর সহযোগিতা দরকার নেই? তুমি কি সারাজীবন নিজের উপর নির্ভর করে চলতে পারবে? তুমি কি কখনো বিপদে পরবেনা, যখন তোমাকে কেউ সাহায্য করতে আসবে?
তোমার প্রশ্নের জবাবটা তোমার প্রশ্নেই আছে। শুধু তোমার বা তথাকথিত সেই সাহায্যার্থীর বোঝার ভুল আছে। সাহায্য করা বলতে কাউকে কিনে নেওয়া বা তাকে সারা জীবনের জন্য উদ্ধার করা বোঝায় না। যে প্রকৃত সাহায্যকারী সে কখনো সাহায্য করে নিজের ঢোল নিজে পিটায় না। বরং সে সংযমী হয়। যে প্রকৃত সাহায্যকারী সে কাউকে সাহায্য করতে পারলে তার মনের প্রশান্তি খোঁজে পায়। সে অন্যের ভাগ্য গড়ে দেবার থেকে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে। কারণ সে জানে, সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সেই সামর্থ্য দেয়না, যে অন্যের সহযোগিতা করবে।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment