Monday, February 17, 2020

ইগো’র তাড়নার ভাল ও মন্দ দিক || EGO: Positive Ego and Negative Ego || মোঃ অলিউল্লাহ্

ইগো (EGO) কী? 

মানুষের মনে কেন ইগো তৈরি হয়? 

ইগো কয়ভাগে বিভক্ত? কীভাবে ইগো নিয়ন্ত্রণ করবেন? 

ইতিবাচক ইগো মানুষের সম্পর্কে কতটা ভূমিকা পালন করে? 

আপনার নেগেটিভ  ইগো আপনাকে কতটা অশান্তিতে রাখছে? 

নেগেটিভ ইগো হতে পজিটিভ ইগো’তে কীভাবে আসতে পারেন? 

ইগোকে  ইতিবাচকভাবে প্রয়োগ করা কেন জরুরী? 



আমরা মানুষ, যা আমাদের আসল পরিচয়। আমাদের আরো কিছু পরিচয় পাওয়া যায় আমাদের চারিত্রিক বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে। আমাদের আছে অনুভূতি শক্তি বোধ শক্তি, আছে আবেগ, মায়া, মোহ, রাগ, অভিমান, অহংবোধ, দাম্বিকতা, স্থবিরতা, জিগাংসার মতো নানা ধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া। ‘ইগো’ (EGO) আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের জীবনে আমরা কতইনা মানুষের সাথে পরিচিত হই। গড়ে ওঠে সম্পর্ক ও দুঃসম্পর্ক। বিশেষ করে যখন থেকেই আমরা আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও আত্মসম্ভ্রম সম্পর্কে বুঝতে শিখে যাই তখন থেকেই আমরা বিভিন্ন মানুষের কথায় কিংবা তাদের আচরণের দিকে লক্ষ্য করি।


কিছু সময় আমরা বেশ বিরক্তিকর বা হতাশাজনক অভিজ্ঞতা পাই। আমাদের আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত আচরণ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রায়ই আমরা মানসিকভাবে আহত হই। তারপরেই আমাদের সুক্ষ্ম চিন্তা-চেতনা বা বিবেচক মন সেই ব্যাপারে আমাদের আবেগের মধ্যে এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির তৈরি করে। আমরা পরিস্থিতির কবলে পড়ে কখনো রেগে যাই, কখনো রাগকে চেপে রেখে তাদের সেই হতাশাপূর্ণ স্মৃতিতে বুকে ধারণ করি। কখনো আবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাই।

মূলত আমাদের High-Consciousness মানসিকতা আমাদের মনে কোন তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। আর তখনই আমরা ইগো’তে তাড়িত হই। শুধু তাই নয়, ইগো’র তাড়নায় আমরা অনেক সময় আত্মতুষ্টিবোধ করি, কখনো অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববোধ বা নিজেকে বারবার ভুল ও সঠিকের সাথে তুলনা করতে থাকি। অধিকাংশ সময়ই আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তা ও যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেই। নিজের ভাবনা-চিন্তা ও যুক্তিকে বাস্তবসম্মত মনে করে ও অন্যের ভাবনা-চিন্তাকে ভুল ভেবে বা তাদের আচরণ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে ভুল হিসাবে বিবেচনা করে, একধরনের রাগ বা অভিমানের মধ্যে বসবাস করি।

‘ইগো’ (EGO) কেবল মানুষের মনকেই নিয়ন্ত্রণ করেনা, তৈরি করে অন্তঃদ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক বিরোধী মনোভাবাপন্ন। সম্পর্কের ফাটল ধরানো এমনকি যেকোন ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা। তবে আমরা এমন এক আন্তঃসম্পর্কীয় দ্বন্দ্ব বা পারস্পরিক যোগাযোগের দ্বিধান্বিত অবস্থায় থাকি যেখানে, মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক ভেবে কিছু করার অবকাশ খুব কম থাকে। ব্যক্তি বিশেষে কিছুটা ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে একটা বড় প্রশ্ন হলো, কী এই ইগো? কী এর সমস্যা? কেন আমরা ইগো’তে তাড়িত হই? এ প্রশ্নের প্রথম উত্তর হয়তো এমন যে, মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে অর্থাৎ এই তত্ত্বটি সম্পর্কে জ্ঞান নেই। কিংবা এটা জানাটাও কারো পক্ষে এতো জরুরী হয়ে পড়ে নি।

কিন্তু আসলেই কী এই সম্পর্কে জানা উচিৎ? নাকি ‘ইগো’ (EGO) সম্পর্কে জানলে আরো বিপদ বেড়ে যাবে? যেমন; যাহা জানিনা তাহাতে কোনই ভুল নাই, জানিলেই  মানিতে হইবে। না মানিয়া উপায় থাকিবেনা। যারা অতিমাত্রায় Self-Conscious বা যাদের ‍Sense of Esteem or Sense Consciousness সম্পর্কে সচেতন তারা পড়ে উভয় সংকটে। একদিকে যেমন নিজের ইগো সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণহীন ও অবগত অন্যদিকে এর প্রভাব বা প্রতিকূলতায় চিন্তিত।

যদি আপনি ইগো’ তে থেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে সেই অহংবোধকে ইতিবাচকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। তবে নেতিবাচক ইগো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে ও নেতিবাচক ইগো’র কুফল সম্পর্কে জানতে হবে। যাতে আপনি নেতিবাচক কিছু না করেন। আপনি যদি কেবল সমস্যা চান, তবে একটি নেতিবাচক অহংবোধ নিজের মধ্যে বজায় রাখতে পারেন। কিন্তু তা আপনার মানসিক অশান্তির কারন হতে পারে। আপনি যদি সুখ এবং অশান্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন, তাহলে একসাথে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মনোভাব সম্পর্কে সচেতন হবেন। অশান্তি হতে আপনি যদি মুক্তি পেতে চান, তবে প্রথমেই ভুল বিশ্বাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত বা যুক্তিসম্মত বিষয়ে বিশ্বাসকে দৃঢ় করুন।

ইতিবাচক ইগোঃ প্রতিটি মানুষেরই ইগো আছে। কিন্তু তাদের ইগো’র প্রয়োগ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। কিন্তু ইতিবাচক ইগো আপনাকে সুখের প্রতি আকৃষ্ট করবে। সুখী হওয়ার জন্য ইতিবাচক অহংবোধ থাকা আবশ্যক। আপনার ইতিবাচক ইগো নিজের ও অপরের শান্তির কথা বিবেচনা করবে ও বাস্তবতা ও পরিস্থিতি বিবেচনার পক্ষে কাজ করবে। ইতিবাচক ইগো কেবল একপাক্ষিক মতবাদে কিংবা একপাক্ষিক যুক্তিতে নির্ভরযোগ্য নয়। ইতিবাচক ইগো উভয় পক্ষের সকল অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার উপর গুরুত্ব প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুই বা ততোদিক পরামর্শকের সরণাপন্ন হওয়া জরুরী, কেননা আপনি নিজেও বুঝবেন না যে আপনি একটি ভুল বিশ্বাসের উপর বিদ্যমান।

আর তাই বুদ্ধিমান তারাই যারা স্বীয় উক্তি বা আচরণের স্বরূপ বিশ্লেষণ করে ও কারো উপর অভিমানের বোঝা বাড়ানোর আগে, সেই ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কথা ভেবে তার প্রতি নিজের রাগ বা অভিমানকে প্রশ্রয় দেয়।

আমি বলছিনা যে, কেউ দোষ করলেও জোরপূর্বক নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে বহু ইতিবাচক যুক্তি দাড় করিয়ে কেবল শান্তির জন্য একটি ভুল বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন আর এর মধ্য  দিয়ে নিজের সংযম প্রমাণ করেন। এটা খুব সহজ কাজ নয়। ভুল সর্বদাই ভুল। কালো সর্বদাই কালো। কালোকে আলোকিত চোখে দেখে সুগভীর মহৎ ভাবনায় নিমজ্জিত ও ব্যাপকতর ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে সাদা করতে যাওয়া যে বোকামী। কারণ এতে শুধু নিজেকেই মানানো যায়, আত্মতুষ্টির জন্যে। কিন্তু তা সর্বজন স্বীকৃত হবেনা। তবে আপনি বলবেন, আমি তো আবার সেই ইগো’তেই সীমাবদ্ধ রইলাম? আমি তো আবার অশান্তিতেই থাকলাম? মুক্তি কোথায় পেলাম?

অন্যায়কে সমর্থন করার শান্তি খুব স্থায়ী নয়। কিন্তু যদি প্রকৃত মুক্তিই চান, তাহলে অন্যায়কে মনে রাখুন এবং অপরাধীকে ভুলে যান। অথবা তাকে বুঝিয়ে দিন, তার বিশ্বাস সম্পর্কে, যদি সে বুঝতে সক্ষম হয়। তানাহলে মনে রাখুন তাকে ভবিষ্যতের জন্যে। যেনো তার মুখাপেক্ষী হতে গিয়ে আপনাকে হেনস্ত না হতে হয়। কেবল প্রতিশোধস্পৃহাকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পূর্বের ন্যায় সম্পর্ক বজায় রাখুন  নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে।

‘নেগেটিভ ইগো’ একটি মন্দ প্রবৃত্তি। ‘নেগেটিভ ইগো’তে থাকা আর নিজেকে কারাগারে বন্দি করা একই কথা। আপনার চিন্তাভাবনাটি এমন হওয়া উচিত যে, আপনার পথে যাই আসুক না কেন এটি আপনার অতীতের ভুলগুলির কারণে আসে। তাই এটি গ্রহণ করুন এবং এটি আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে ‘জমা’ করুন। যখন কেউ আপনাকে অপমান করে, তখন অপমানটি গ্রহণ করুন এবং যদি আপনি তার সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলতে চান বা যোগাযোগ বন্ধ করতে চান, তবে তাকে আঘাত করবেন না। আপনি যদি পার্থিব জীবনের যোগাযোগ চালিয়ে যেতে চান, তবে তা মনে রেখেই ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।

অবশেষে একটা কথাই বলবো, কাউকে অহেতুক ভুল বুঝবেন না। প্রমাণ ছাড়া দোষী বানাবেন না। যথাযথ অপরাধ পাওয়ার পরও তাকে তার ভুলের সংশোধনে সহায়তা করুন। নিজের বিশ্বাসের প্রতি আরো বেশি স্থির হোন। মানসিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে বাড়াতে চেষ্টা করুন। ইগো নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে যে সুখ পাবেন, তা অশান্তি হতে শ্রেয়। কিন্তু কমন সেন্স থাকা আবশ্যক কিছু ব্যাপারে, যা আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। আপনার ব্যক্তিত্বকে জলাঞ্জলী দিয়ে কারো সাথে আপোষ করার মানে ইগো নিয়ন্ত্রণ নয়। বরং সময় ও পরিস্থিতিকে বোঝার চেষ্টা করুন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় নিন। প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পূর্বে পর্যাপ্ত ভাবুন। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান আপনিই করতে পারবেন। 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment