Thursday, February 20, 2020

তখনকার ও এখনকার রবীন্দ্রনাথ || মো অলিউল্লাহ্

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সাহিত্য কর্ম।

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও দর্শন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ কবি, উপন্যাসিক, কথা শিল্পি, চিত্রশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী।

## কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শন ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে পর্বভিত্তিক আলোচনাঃ এই লেখাগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সকল রচনার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, বিষয়বস্তু ও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র রচনার ভূমিকা ও তাৎপর্য আলোচিত হবে।

[১ম পর্ব]

শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‍যিনি সাহিত্য, দর্শন, সঙ্গীত অর্থাৎ শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় বিচরণকারী। মহাজগতে সার্বজনীন আধুনিক ও উন্নত মানসিকতায় সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু একই সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি যা সৃষ্টি করে গেছেন মানুষের মাঝে সেই সৃষ্টিগুলো যেনো প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত, সার্বজনীন বিরাজমান সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র ও অন্যান্য সৃষ্টির মতোই চিরন্তন ভাস্বর এ পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তখনকার কথা বলতে বুঝানো হয়েছে, সেই স্বর্ণযুগকে যে যুগের ধূলিকনারা তাঁর পা স্পর্শ করতে পেড়েছে। সে যুগের নির্মল বায়ো, প্রকৃতি ও পরিবেশ তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছে অর্থাৎ ওনার জীবদ্দশার কথা বলা হয়েছে।

মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, আসছে ও আসবে। কিন্তু এমন ক্ষণজন্মা মানুষ যে পৃথিবীতে এসেছে ও তাঁর অস্তিত্বকে চিরকালের মতো রেখে গেছেন মানুষের মাঝে, যেটা সবাই পারে না। তিনি তো প্রথমবার এসেছিলেন  ১৮৬১ সালের ৭ই মে, কিন্তু তিনি মানুষের মাঝে এসেছেন বারবার, প্রতিদিন, প্রতিবার।যখনই কেউ তাঁর কোন একটা উপন্যাস, একটা নাটক, একটা কবিতা, একটা গল্প কিংবা একটা গান শুনেন তখনই সেই ব্যক্তির অন্তঃদৃষ্টিতে কিংবা তাদের অনুভূতিতে রবীন্দ্রনাথ বিরাজ করতে শুরু করেন। 

তাঁর কৃতকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হলে পৃথিবীর যে কোন বিখ্যাত লেখককেও দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হবে। তাই আগেই হার মেনে নিচ্ছি, আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির দোষগুণ বিচার করতে পারবোনা, অন্যকারো সাথে তাঁকে তুলনাও করতে পারবোনা; এমনকি তাঁকে নিয়ে যা-ই বলবো তা একেবারে আমার কিঞ্চিত জ্ঞান থেকে বলবো। সুতরাং কেউ আমার এ লেখার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম বা শিল্পকে সীমাবদ্ধ করবেন না।

আগে বলে নেই তাঁর বিচরণ সম্পর্কে। তিনি প্রথমেই একজন কবি এবং শিশুকাল হতে বার্ধক্য পর্যন্ত তিনি ছিলেন কবি। যিনি আট বছর বয়সেই লিখে ফেলেন চমকপ্রদ কবিতা এবং এর পর থেকে সহস্রাধিক কবিতা লেখেন তিনি। শুধু বাঙালি কবি বলে তাঁকে সীমাবদ্ধ করা যাবেনা, কেননা তাঁর কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ অসংখ্য শ্রেষ্ঠ বিদেশী কবিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর সেকারণেই হয়তো তিনি কবিদের কবি অথবা কবিগুরু। তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু হলো মানুষ, ধর্ম, শ্রেণী, সমাজ, মানবতা, দর্শন ও তত্ত্বকথা। তাঁর কবিতার গভীরতা ও তত্ত্বের ব্যাপকতা অসীম। 

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা “অভিলাষ”। তাঁর কবিত্বের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায় বিশেষ কতগুলো কাব্য দ্বারা। “বনফুল”, “সোনারতরী”, “চিত্রা”, “চৈতালি”, “কল্পণা’, “ক্ষণিকা” ইত্যাদি। এসব কাব্যে কবির মর্ত্যের প্রতি অনুরাগ, মানবপ্রেম, মানবমনের খুশি, অশ্রুসিক্ত বেদনা, আবেগ ও অনুভূতি মাখা বিচিত্র চেতনা সমৃদ্ধ রোমান্টিকতা। এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। কাব্যের সার্থকতায় তিনি পৌছেছেন বিশ্বকবি, গুরুদেব ও কবিগুরুর আসনে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। তিনি রচনা করেছেন
 একহাজার নয়শ (১৯০০) এর অধিক গান। বাংলা সঙ্গীতের সুরের মধ্যে তিনি তাঁর প্রতিফলন জন্ম দিলো এক অত্যাধুনিক মাত্রা। বাঙালি লোকসঙ্গীত, ধ্রুপদী সঙ্গীতের পাশাপাশি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আদলে সৃষ্টি করলেন নিজস্ব মাধুর্য আর সমসাময়িক নব্য স্টাইল। যা প্রাচীন সঙ্গীত, আধুনিক সঙ্গীত ও উত্তরাধুনিক সঙ্গীতের সীমানা ছাড়িয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর সঙ্গীত হিসেবে বিবেচিত। আমরা যতই ইংলিশ, বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় নতুন প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত গান শুনিনা কেন, হৃদয়ের অপূরণীয় স্বাদকে আস্বাদিত করে শেষ পর্যন্ত  রবীন্দ্র সঙ্গীত।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment