কবিতা

পথের বিপরীতে

কর্ম, আধুনিকতা আর নান্দনিকতা সবটা জুড়েই শহুরে পরিবেশ
সদা খেটে ক্লান্ত সবাই, নেশা তবে একটা রয়েই যায়
বড় হবার প্রবল ইচ্ছা, তারই সাথে উন্নত জীবনে পা মাড়াতে চায়।
সেই সরু পথে ধূলিকনা গুলোর সাথে আর সমন্ধ নেই।
দু’ধারে সবুজ ফসলের মাঠ আর বক্তার মতো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা- তাল গাছটার কথা মনে পড়ে না কিছুতেই। 

এখানে যখন ল্যাম্পপোস্ট গুলো জ্বলে ওঠে, 
ওই খানেতে তখন সাদা বকেরা নীল আকাশে ভেসে ভেসে নীড় খোঁজে নিত।
অস্বাভাবিক চিৎকার কোলাহোল ও যান্ত্রিক শব্দ-ধোয়ায় মজ্জিত চারিপাশ।
সময় নেই একটিবার, মাথা তুলে দেখিবার, অস্ত যাওয়া ঐ নীল আকাশ।
কিন্তু দেখা হয়েছিল, গোমতীর ধারে ধারে হাটতে হাটতে
মনে পড়ে, সূর্য্য ডোবার সেই অবকাশে চারিপাশ কেমন গম্ভীর হয়ে আসতে?

দৈত্যাকৃতির কড়ই গাছটার ভুতুরে ঢালগুলো?
কেমন ছমে ছমে ছিল কবরস্থানের ঝিঝিপোকার শব্দ ও জোনাকীর আলো?
মা বকবে, তবুও খেলা শেষ হতোনা সন্ধ্যা নামার আগে।
 বাড়িতে পৌছে পিঠা-পিঠি বড়ভাই বলতো, বড় দুর্দশা আছে দু’জনের ভাগে।
ঘরের পিছনে বেড়ার ফাঁক দিয়ে উকি মেরে দেখতাম, মা কি করছে-
ফিসফিস করে, আধার ঘরে ডোকে। কেরসিনের আলোতে বসে যেতাম পড়তে।

এখানে এসব নান্দনিকাই যত ‍সুখ, ডিজিটাল হয়ে বস্তুবাদে মিশে
যন্ত্রনিয়েই কাটে সাড়াদিন,ভোর হয়েছে কখন, আর সন্ধ্যা হলো কখন হিসাব রাখে কীসে? 

তবে এবার ঘটলো মজার ঘটনা, শহরেও নাকি থাকতে মনে চায়না-
ছুটির দিনে একটু সুযোগ পেলেই, গায়ের পথে ছুটার কিছু বায়না।
একটু নিবিড়ে, একটু সুখের ছোয়া
জনশূন্যে, সরিষার মাঠে আর সূর্য্যমুখী ক্ষেতের আইল ধরে।
হাটাহাটি আর গল্পস্বল্প নিয়ে, অন্য রকম একটি দিনের চলে যাওয়া।

শহরের পথে আবার ফিরে আসা, নিজেকে ঝড়ানো কর্মব্যস্ততায়-
সময়ে সময়ে সেই স্মৃতি মনে করে, ইংরেজিতে ‘নশটালজিক’ হয়ে যাই। 
আনন্দ আজ ভেবে এমন কথা, ফিরছি মোরা আবার সেই,
সুখের আঁচলের তলে, গায়ের পথে নীড়ের ঠিকানায়।
                                         (মোঃ অলিউল্লাহ্)                           




                                                                                                                   



 স্নেহের স্মৃতি

                   মোঃ অলিউল্লাহ

দিনান্তের ক্ষণে উর্ধ্ব গগনে অস্ত যাওয়া রবি,
দিব্য আদেশে এসেছি ভবে,হারাবে একদিন সবি।
তবুও গোধূলি দেখতে ভারি বিষন্নতায় ভরা,
যদিও রঙ্গিন সবার আঁখিতে আলোকিত এ ধরা।
রাতদুপুরে হঠাৎ করে চোখে ভাসিল সে আঁখি
বুক ফাটে যার আর্তনাদে-শুধু অশ্রুঝরার বাকি।

হাসির আড়ালে শোকের ছায়ারা করছিল যে তাড়া,
তবুও বুঝেনি বদনখানিরে দু’একজন কে ছাড়া।
হাহাকারে তার প্রাণটি কাঁদে,বাহিরে অন্য রূপ
তাহার এমন ক্ষণটিতে যে আমরা সবাই চুপ।
শ্রেণিকক্ষে সম্মুখে দাঁড়ায়ে কথা বলছেন একা,
আমরা সকলে শিক্ষার্থী আর তিনি শিক্ষিকা।

মাঘের দিনের এই দিনটিতে কঠিন স্মৃতির জালে,
বিষাদে ভাসায়ে বাবা যে তাহার দূরাকাশে গেল চলে।
না ফেরার দেশে পারি জমালো নিজের মতো করে,
বড় অভাগী করিয়া তাহারে রেখে গেল দূরে সরে।
বাবা,বাবা বলে কত না ডাকিত ছোট্ট বয়স থেকে
সেই বাবা আজ তাহারে ছাড়ি কোন আকাশে থাকে?

না জানি তাহার স্মৃতির দেয়ালে কত কিছু আছে লেখা-
দিবস-রজনী কল্পিত চোখে সকলই হয় যে দেখা।
“ক্লান্তিলগ্নে বটতলে আমি, তুমি হয়ে ছিলে ছায়া
ভ্রান্তিকালে শাসনের ছলে তুমি দিয়েছিলে মায়া।
কত না শ্রমে কাঁটায়েছ দিন শুধুই মোদের লাগি
এখন বুঝি গগনে মিশিয়া, দেখ মোরে সদা জাগি।

তুমি তো আছো অনেক ভালো, আমিও মন্দ নই
মাঝে মাঝে তব স্মৃতির চারণে বড়ই ব্যাকুল হই।
মনে পড়ে বাবা,সেই শৈশবে আঙ্গুল ধরিয়া মোর-
আলতো পায়ে হাটিতাম আমি নিয়ে যেতে বহুদূর?
সরু পথ ধরে হেটে চলিতাম বড়ই মজা করে,
পিছনে তুমি অতি চিন্তিত, না জানি আমি যাই পড়ে।

অনতিদূরে ডাকিয়া মোরে তুলিয়া নিতে কোলে,
তবুও দিতে না হাটিতে মোরে একটু হেলেধুলে।
কিঞ্চিত কোন ব্যথায় আমার ,তুমি হতে দিশেহারা
কি করিবে তখন ভেবে না পেতে হয়ে আত্মহারা।
তব সেই দিনের ঐ মেয়েটি আজ আর নইকো তেমন
সুখে-দুঃখে তার দিন চলে যায়,সকলের কাঁটে যেমন।

এখন আর সেই পূর্ণিমা শশী লাগেনা তেমন ভালো,
ব্যস্ততার ঐ বস্তুবাদে সবই কেবলি হারালো।
তথাপি যদি সেই স্বাদ জাগে আমি ছুটে যাই ছাদে
তখনই আবার মনে পরে তোমায় বিষণ আর্তনাদে।
কি ছিল ব্যথা না কহিলে কবু,যদি না কষ্ট পাই
এখন যে মোর পরান মানেনা, কি দিয়া তারে বুঝাই?

সদা রাখিতে বুকেতে জড়ায়ে এমন মাঘের শীতে,
তোমার মেয়ে যে শীতার্ত আজ, এই মহা ধরনীতে।
দেখ কি তুমি নয়ন মেলিয়া,বাড়াও কি ঐ দু’হাত-
যেমন রাখিতে তোমার বাহুতলে নিশি হইতে প্রভাত?
প্রকৃতি আজ বড় স্তব্ধ,নত হয়ে মোর পানে চায়
কারন আমি বলি না কাউকে,শুধু বলি যে তায়।

এরাই আমার শান্ত¡না আজ,এরাই আমার সাথী,
সদাই এদের তরে জানাই মনের সকল মিনতি।
বিধাতার তরে বলি বারে বারে,একটু দেখিবার দাও-
নাইবা যদি দেখাবে হেথায়, সেথায় তুলে নাও।
তবুও আবার মিলিতে পারিব আমার বাবার সনে,
তখনই হয়তো মিটিবে জ্বালা,যা আছে মোর মনে।”

পুনরায় বলে-“বাবা তো গেল,স্মৃতিগুলো কেন না নিলো-
এরা যেন মোরে (কর্ণকিনারে)করুণ সুরে করছে এলোমেলো।”
শান্ত¡না না যে চায় না কারো,বলে শুধু বিধাতারে-
“খোদা তুমি বড়ই মহান, বেস্ত দিও মোর পিতারে।”
তাহার কন্ঠে গলা মিলায়ে মোরাও প্রার্থনা করি,


ফেরেস্তাকুল যেন তাহারে বেহেস্তে নেয় বরণ করি।
                                                                                                            



     শুকনো পাতা
       মোঃ অলিউল্লাহ্

কালের আবর্তনে ছুটে চলেছে দিন - অন্তহীন
থামিবার উপায় নাহি আজ কোনো
হিম বাতায়নে,নিরব পুষ্পের সৌরভ বর্ণনাহীন,
জোনাকিদের আসরে অমৃত সুধা যেনো।

নাহি ফেরাবে মোরে,যদি চলে যাই দূরে-
তবুও মন ভাববে তখন সেই স্মৃতি,
সেই  বট বৃক্ষের তল রবে শূন্য পরে,
আগন্তুক দেখে বসতে, সে করবে মিনতি।

কভু যদি দেখ চাহি,কোন পথিকের পানে
ক্লান্ত সে ভীষণ,তন্দ্রারা চোখে করে দিশেহারা,
দূর হতে দেখ তারে,মৃদুমুগ্ধ সেই ক্ষণে
যাবে মিশে,তার তরে সবই বিলায়ে আত্মহারা।

পৌষের এই স্মৃতিময় অবারিত দিন,
ফিরিবে কি কোন দিন?
হয়ত হইবে সেই পথিক,গন্তব্যহীন
হারাবে এ ধরা হতে চিরতরে,হয়ে চির অমলিন।

রাশি রাশি ফুল ফুটেছে বনে,
আগমণী বার্তা বয়ে আনছে ক্ষণে ক্ষণে।
নব আনন্দ ঘন মুহুর্তের এই দিনে,
লোক লোকালয়ে আর পাখির গুঞ্জনে।

এসেছে আবার ফিরে,কত দিন পর
কত রূপে বহুরূপি,বন-তৃণ-লতা,
এরই মাঝে হয় সুখী,কবু দুঃখী অন্তর,
অবশেষে ঝড়ে পড়ে শুকনো পাতা।


                                                                                                            





































2 comments:

  1. Osadharon bhaiya.. R Miss ke toh koyek bar erokom nijer kosto lukiye rakhte dekhechi.. Allah Miss ke ro strength dek, etai doa kori.. Miss is justú like an angel to me..

    ReplyDelete
  2. Osadharon bhaiya.. R Miss ke toh koyek bar erokom nijer kosto lukiye rakhte dekhechi.. Allah Miss ke ro strength dek, etai doa kori.. Miss is justú like an angel to me..

    ReplyDelete

Thanks for your comment