একটি তিক্ত রাত, আর তার অনুভূতি
একটা নক্সা, নীল নক্সা। বাদামী রং এর ধূসর একটা চারিপাশ। সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো মনে হচ্ছে তার কাছে। বারবার রক্তগরম চোখে জানালার বাহিরে চোখ মেলে কি যেন অবলোকন করছে সে। হঠাৎ অস্থিরতা আর প্রাণচঞ্চলতায় সে দিশেহারা। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বাসার সিলিংয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। কে যেন তাকে বলছে, ‘রুদ্র, এই রুদ্র। রুদ্র তুমি কি আমায় খুব ভাবছো। ভেবনা আমায়। তুমি শান্ত হও। প্লিজ তুমি শান্ত হও। ’আমার পরম প্রিয় বন্ধু রুদ্র। মার্জিত ব্যবহার, সুদর্শন দেখতে আর মানসিকভাবে খুবই অটুট। তবে তার ভাবনা যখন গভীরতা পৌছায় আর যখন সে স্বাভাবিক অসচেতন, তখন তার দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা দুর্বল বাহ্যিকতার প্রকাশ ঘটে।
সেদিন আমি নিজেই খুব অবাক হয়েছিলাম ওকে দেখে। সে আমায় বিষণ গম্ভীরভাবে বলতে শুরু করলো কিছু কথা। যা আসলেই স্বাভাবিক ছিলো বলে আমার মনে হয়না। তবে তা আমার সামনেই ঘটলো।
টি শার্ট টা ফ্লরে পড়ে আছে, কয়েকবার খুব সহজ দৃষ্টিতে এই ক্ষুদ্র জিনিসটাকে দেখলো সে। একটা ভারি দৃষ্টি ছেয়ে গেল বস্তুটার উপর। চক্রাকারে ঘোরছে তার মাথায় সকল ভাবনারা। বহুদিনের পতিত একটা ময়লা মাখা মগ টেবিলের উপরে আছে। সে তখন আমায় বলল- ‘ আমার মাথায় অদ্ভুত এক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের কল্পনা ঘোরফের করছে। এই মগটা বোধ হয় আমারই প্রতিচ্ছবি। তবে মগের ময়লার সাথে কিছু ক্ষুদ্র অনুজীব ও আমার দৃষ্টিগোচর হলো। তবে আমি অকার্যকর, এর মানে কী?
নিশ্চয়ই এমন কিছু একটা অতিপ্রাকৃত বিষয় আমার মধ্যে এগজিস্ট করছে। ’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো রুদ্র। আমি ওকে দেখছি, সে ঘেমে যাচ্ছে আর চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। সে আবার বলতে শুরু করলো- ‘আর সেজন্যেই আমি আলোহীন এই অন্ধকারে দীর্ঘ সময় বসে বসে কাটাই। কী জানি, কিছুই জানি না আমি। আমি জানি না কি হচ্ছে আমার মধ্যে।’
একটু পরেই- বারান্দায় রাখা খাঁচাটা ভেঙ্গে পাখিগুলো উড়ে গেল। টেবিলের উপরের ছোট্ট অ্যাকুরিয়ামটা ফ্লরে পড়ে ফেটে গেল। ছোট ছোট মাছগুলো ফøরে কিছুক্ষণ হামাগুড়ি দিতে দিতে মরে গেল। অসামান্য যন্ত্রণায় যেমন মাছগুলো মরছিলো, ঠিক তেমনটি দেখতে পেলাম রুদ্রের চেহেরায়। আর কিভাবে মৃত্যু যন্ত্রণায় কয়েকটা প্রাণ নিমেষেই হারিয়ে গেল ধরা থেকে।
আর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস রেখে গেল আমার জন্য। বলে গেল, সবাই হয়তো তোমায় ছেড়ে চলে গেছে, মরেতো যায় নি। তবে ভালবেসো তাদের স্মৃতিকে। আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না। অঝড়ে ঘেমে আমার কাপড় ভিজে গেল। চিৎকার করে রুদ্রকে যখন ধরতে যাবো, কে যেন আমায় পিছন থেকে টেনে ধরছে। রুদ্র জানালার বাহিরে শূন্যে ভেসে ভেসে আমায় হাতছানি দিচ্ছে। সে হাসছে, শুধুই হাসছে। তারপর মিশে গেছে বাতাসের সাথে। আমি স্থির হয়েও যেন ওর পিছনে পিছনে ভেসে বেড়াচ্ছি। আমাকে কেউ যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আর পারছিনা, সত্যিই পারছিনা আর।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment