উপন্যাস




                              মহাপ্রয়াণ
                                  মোঃ অলিউল্লাহ্




কিছু কথা

সকল প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল আলামিনের , যে চির অসীম , সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমতার অধিকারী। যিনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন । আর সর্বপ্রথম সেই মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যার অনুগ্রহে আমি এই ক্ষুদ্র লেখনিটুকু লিখতে সক্ষম হয়েছি। পৃথিবীতে চিরন্তন একটি নিয়ম হলো প্রাণীর জন্ম - মৃত্যু।

তবে জন্ম যে ভাবেই হোক না কেন মৃত্যুটা কিভাবে হবে , তা কেউ বলতে পারে না। আর বিধির এ করোণ বিধান কে মেনে নিতে হয় এটাই নিয়ম। ঠিক তেমনি আমার এই মহাপ্রয়াণ উপন্যাস টিতে ঐরকম একটি করুণ কাহিনীর ভার বহন করে। মহাপ্রয়াণ যার দ্বারা মৃত্যু নামক অন্তিমযাত্রাকে ভাবা হয়েছে।বর্তমান পৃথিবী ও বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে জীবম্মৃত মানুষের কাহিনী বিবৃত করেছি অতি নিপুন ভাবে। কাল্পিক এই উপন্যাস টি আমার মনের , আমার আবেগের মাধুর্য্য দ্বারা রচনা করেছি।

 এই প্রণয়োপাখ্যানটি মূলত দুটি কোমল হৃদয়ের গভীর ভালবাসার প্রতীক স্বরুপ। প্রেম মানবজীবনের একটি মৌলিক ও প্রবল অনুভূতি। প্রেমের অসীম স্পর্শে মানুষ নিজেকে খুঁজে পেতে চায়।প্রেমিক সত্তা এমন কিছুই আবিষ্কার করতে চায়, অন্য কিছুই চায়না, সে শুধু বুঝে তার প্রেমই সত্য। নদী সমুদ্র সংগমে হারিয়ে গিয়ে ভুলে যেতে চায় অতলান্ততা, জোয়ারে আবার সমুদ্র ফিরিয়ে দেয় তাকে, কিন্তু আবার ভাটায় সে নির্লজ্জের মত সমুদ্রমুখী হয়। এতে তার লজ্জা নেই বরং গর্ব ও অহংকার বেড়ে যায়। আগুনে পতঙ্গ পুড়লেও সে কেবল আগুনের পাশেই ঘুরে। 

আর আমি সেই প্রেম কে প্রাধান্য দিয়ে মানব জীবনের কিছু বাস্তব চরিত্র তুলে ধরেছি। আমার বিশ্বাস এই উপন্যাস টুকু প্রতিটা পাঠক হৃদয়ে একটু হলেও ভাবাণি¦ত করবে, তাদের মনে ব্যথা অনুভব হবে।পাঠক মহলে আমার অনুরোধ থাকবে যেন তারা এই উপন্যাসটুকু অতি মনোযোগ সহকারে পাঠ করে এবং এক বসায় পড়ে শেষ করে,তাহলেই সে তা থেকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাবে। আর এটা পড়ে যদি আপনাদের মনে একটুও ভাললাগা সৃষ্টি হয় তাহলেই আমি সার্থক , আমার লেখনি সার্থক।

( লেখক)










উৎসর্গ

মা ও বাবা কে















লেখক পরিচিতিঃ

জন্মঃ মোঃ অলিউল্লাহ, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন গুঞ্জর গ্রামে ১৯৯৩ সালের ০৫ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারী তিতুমীর কলেজে (অনার্স ১ম বর্ষে) বাঙলা বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন।এছাড়া সাউথইস্ট ইউনিভার্টিতে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স অধ্যয়নরত আছেন। লেখকের প্রথম উপন্যাস কেঁদে আর কি হবে কেঁদে আর কি হবে ,উপন্যাসটির অনেক জনপ্রিয়তা ও ভাল সাফল্যের পর এই মহাপ্রয়াণ  উপন্যাস টি রচনা করেন। আমাদের বিশ্বাস লেখকের প্রথম উপন্যাসের তুলনায় এই উপন্যাসটি বহুগুণে ভাল হবে এবং পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করবে । এই উপন্যাস টি সম্পূর্ণ কাল্পণিক । তবে এর ভিতরের কথাগুলো পাঠক মনে সাড়া জাগাবে। এটাই আমাদের কাম্য।







মহাপ্রয়াণ  (MAHAPROYAN)


       অনেক রাত। আকাশে জ্বলে রয়েছে বিশাল আলোর আলোক রশ্মি। জোনাকিরা তারার মতো মিটমিট করে জ্বলছে। মাঝে মাঝে ঝিম ঝিম শব্দ এসে কর্ণকোণে বাজছে। পূর্ণিমা রাতের সেই চাঁদটা এক অপরুপ নববধুর সাজে সেজে আছে। হেমন্তের এই রাতে যে কেউ উপযাজক হয়ে যদি এই রুপালী চাঁদের দিকে আঁখি মেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আর এই রাতটাকে উপলব্ধি করতে পারে তার আপন অস্তিত্ব থেকে তাহলে আমার বিশ্বাস তার মনে যত ক্লান্তি, যতই গম্ভীরতা থাকে তা সে চাঁদ নিমেষেই দূর করে দিবে। আর তার কঠিন মনটা একেবারেই কোমল হয়ে যাবে। সেই মানুষটি নির্বিগ্নে সকল ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতি প্রেমে মসগুল হয়ে যাবে। 

সেই সৌন্দর্য্যমন্ডিত রাত দুপুরে পুষ্পরা তার সুভাষ ছড়াবে, মাতিয়ে রাখবে পৃথিবীকে। আর মানব জাতিকে বলবে আমার এই সৌন্দর্যের অবলীলা শুধুই তোমার জন্য, আমার সুভাষ দিয়ে তোমাকে এভাবে সুভাষিত করতে চাই প্রতিটি রজনীতে। ঠিক সেই মুহুর্তে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, নির্জন চারিদিকে শুধুই একাকী আমি-বেলকোনীতে বসে। আকাশের বিশাল চাঁদটার সাথে কথা বলছি। যে চাঁদ আপন আলোয় উজ্জল করে রেখেছে সারাটা পৃথিবীকে, আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে।কিছু মেঘ তার উপর দিয়ে আলতো ভাবে ভেসে যাচ্ছে।এর মধ্যেই একটা ধমকা হাওয়া ছুটে এসেছে দূর থেকে। আর আমার মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় এই বুঝি আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো। 

আমি রিহাব, বাবা-মা দুজন-ই আমায় ছেড়ে চলে গেছে বহুদূর-দিগন্তে।এই পৃথিবীতে আমি বড়ই একা। চারিদিকে হাজারো মানুষ দেখতে পাই কিন্তু কেউ আমার আপন না। আমার বয়স এখন ২১ বছর। আমার জন্মের সময় আমার মা এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। আমি শুনেছি বাবা মাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন,বাবা নাকি মাকে অনেক বেশী ভালবাসতেন। বিয়ের আগে নাকি অনেক চেষ্টা করেছে মাকে পাওয়ার জন্য। আমার দাদার অনেক টাকা ছিলো অনেক ধনী ছিলেন তিনি।আর আমার নানা ছিলেন খুব গরীব। এছাড়াও বাবা দেখতে সুদর্শণ ছিলেন, মা ছিলেন শ্যামলা বর্ণের।বাবা সবকিছুতেই ভালো ছিলেন এত কিছুর পরেও নাকি মা বাবাকে পাত্তা দিতেন না। কিন্তু বাবাও হাল ছাড়েন নি।

এক বছর সাধনার বিনিময়ে বাবা মাকে ভালোবাসতে পারেন। আর এই ভালোবাসার টানে প্রতিটা মুহুর্ত তারা দুজন একটি গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ছিলেন। আর তাদের অনেক আশা ছিল তাদের সংসারে সুন্দর একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নিবে। যে কিনা সারাক্ষণ তাদের আনন্দ দিবে, হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখবে তাদের। তাদের ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকবে সে সন্তান। তাদের আশা পূরণ হলো কিন্তু আমি এমন হতভাগা যে তাদের আনন্দ দেব থাক, সেই মা আমার চেহেরাটাও দেখে যেতে পারেনি। আমি এমন সন্তান যার জন্মের সাথে সাথে মা এবং তিন দিনপর বাবা মারা যান।

একথা শুনেছি আমার এক কাকার কাছে। তিনিই আমাকে ছোট থেকে বড় করেন। কাকা বলেছিলেন তারা দুজন একটি দেহের মতো ছিলো। তাইতো তোমার মায়ের সাথে বাবা ও চলে গেছেন।

যে কাকা এতগুলো বছর লালন পালন করে বড় করেছে সেও এক মাস হলো আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমার ইন্টারমিডিয়েট এর রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে। আমি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু একটু ও খুশি হতে পারছিনা। কাকা বলেছিলেন আমাকে ডাক্তারি পড়াবেন। কিন্তু আজ সে স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমার আর কেউ রইলোনা। এখন আমি নিরোদ্দেশ হয়ে ঘুরছি একটি সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য। অনেক চিন্তার অবসান ঘটিয়ে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলাম ভালোভাবেই চলছিল দিনকাল।প্রথম বর্ষ শেষে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হলাম। প্রথম বর্ষের ছাত্ররা ভর্তি হওয়া শুরু করলো। 

দুমাস পর.................
আমার এক বন্ধু আমাকে বললো- রিহাব তোকে সব সময়ই দেখি একা একা চলাফেরা করিস। কারো সাথে এতটা মিশিস না, কথা বলিস না। এভাবে চলতে কি তোর ভালো লাগে? আমাদের দেখ , সবার সাথে মিশি; হাসি-খুশিতে সময় চলে যায়। আমি জানি তোর মনে অনেক কষ্ট , তাই তোকে বলছি তুই ভালো দেখে একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব র্ক তাহলে তোর অনেক ভালো লাগবে। তোর ভাল-মন্দ তার সাথে শেয়ার করবি তার ভাল-মন্দ তোর সাথে শেয়ার করবে। 

এভাবে তোদের সময়টা অনেক মজার হবে।তারপর আমি ভাবলাম কথাটা কিন্তু অতটা খারাপ বলে নি। আমার সাথে যে সব বন্ধুরা লেখাপড়া করেছে তারা সবাই অনেক আগে থেকেই মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করছে আবার কেউ কেউ প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে গেছে।কিন্তু একমাত্র আমিই কোন মেয়ের সাথে এ পর্যন্ত কথা বলিনি।

এর পরদিন কলেজে যাওয়ার পর একটি মেয়েকে দেখতে পেলাম। তার অবেনীসম্বন্ধ সংসর্পিত, রাশিকৃত, আগুলফলম্বিত কেশবার ,তদগ্রে দেহরত্ন, যেন চিত্রপটের উপর চিত্র দেখা যাচ্ছে।তার জল-তরঙ্গের মতো এলোচুলের জন্য মুখখানি সম্পূর্ণ দেখতে পারলাম না; তথাপি তার মেঘ বিচ্ছেদ লাবন্যমন্ডিত রুপখানি একটু দেখেছি যাকে দেখে কথা বলার লোভ সামলাতে ব্যর্থ হলাম। সে আমাদের কলেজের প্রথম বর্ষের একটি ছাত্রী। মেয়েটির নাম রিমা। দেখতে এতো সুন্দর না হলেও চেহেরাটা খুব মায়াবী যে কোন ছেলে তার সাথে প্রেম করতে চাইবে। শ্যামল বর্ণের মেয়েটির মাথায় কোমর পর্যন্ত চুল।

তার মৃদু পায়ে হেটে চলার শব্দ আমার কানে বাতাশের শব্দের মতো ছুয়ে যায়। আমি তাকে প্রথম দেখার পর থেকে শুধু তার চেহেরাটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠসে। দিনের বেলায় ভাবনার মাঝে ডুবে থাকি আর রাতের বেলায় স্বপ্নের মাঝে আমার সামনে এসে আমায় যন্ত্রণা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সেই আমার প্রিয়চেনা। পরদিন আমি কলেজে গেলাম একটি ক্লাসের সামনে দিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটি মধুর সুর কানে এসে বাজলো। সেই ক্লাসে চোখ ফিরাতেই দেখি রিমা। আমি তাকে দেখে আড়ালে চলে গেলাম। আর সেই সু-মধুর কন্ঠে গান শুনলাম। তার কন্ঠে গান শুনে যেনো আরো বেশী আকৃষ্ট হয়ে গেলাম তার প্রতি। ক্লাসে সে একা। একবার চি›তা করছি ভেতরে যাই আবার ভাবছি যদি সে কিছু মনে করে?

সে চিন্তা করে আর ভিতরে যাই নি। আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টে গেলাম। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করেছে, ক্লাস করলাম এরপর বাসায় গেলাম। একাকী বাসায়, এতগুলো বছর একা কাটিয়ে দিলাম নঁঃ কখনো নিজেকে এতটা একা মনে হয়নি। আজ আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বড় একা। আমি যেন অনেক কিছু জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছি। সেদিন সন্ধা সাতটার দিকে আমি ঘুমিয়ে পড়ি,আমার বাসায় আমি একা থাকি, ঘুমানোর পর.................

আমি রিমাদের বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম,রিমা আমাকে দেখে ডাকলো আমি তার ডাক শুনে তাদের বাসায় গেলাম। সে আমাকে বলল রিহাব আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো,আমি তোমাকে অনেক দিন ধরে ভড়ষষড়ি করছি, তোমার মনের আকুতি আমার হৃদয়ের কান দিয়ে শুনতে পেয়েছি। তাই আমার ভালোবাসা, আমার জীবন আমি তোমাকে উৎসর্গ করলাম।
আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমি তার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম। এবার সে আমাকে বলল তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা? এরপর আমাকে আকড়ে ধরলো এবং আমাকে ধরে.........( এরপর আর বলা চলে না)।


তখন অনেক বৃষ্টি শুরু হলো ওদের বাসায় কেউ নেই। আমরা দুজন, প্রায় এক ঘন্টা পর বৃষ্টি শেষ হলো। তাকে আমি বললাম এবার আমি যাই, সে বলল আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে? আমি বললাম একেবারে তো যাচ্ছিনা আবার পরে দেখা হবে।কিন্তু সে আমাকে ছাড়তে চাচ্ছেনা। হঠাৎ ঘুমটা ভাংলো আমি দেখতে পেলাম আমার পোষা বিড়ালটা আমার কোলে, তাহলে কী বিড়ালটাকেই এতক্ষণ(oh no)। যাই হোক নিজের কাছে খারাপ ও লাগছে আবার স্বপ্নের কথা গুলো মনে করে হাসি পাচ্ছে।

ঘড়ির দিকে তাকালাম মাত্র রাত তিনটা বাজে। পেটে মোটামুটি ক্ষুধা অনুভব করছি। এবার ভাবছি রাতে তো খাবার খেয়ে ছিলাম কিন্তু এখনই পেটে ক্ষুধা লেগে গেল! পরে মনে হলো না আমি তো না খেয়ে ই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। এখন আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারছিনা। 

এবার কিছু একটা করার চেষ্টা করলাম। ভাত রান্না করলাম,ভাত তো রান্না হয়ে গেল এবার একটা ডিম ভেজে খেয়ে ফেলি। এই ভেবে ডিম ভাজতে গেলাম কড়াই তে তেল গরম করে ডিম ভেংগে ছেড়ে দিলাম। ভাজা হয়ে গেল এবার ক্ষেতে বসলাম। খাবার মুখে দিতেই ,,,,(ওয়াক ওয়াক)....... বমি শুরু হলো। এরপর বুঝতে পারলাম ডিমটা পঁচা ছিল। নাকে সর্দি তাই গন্ধ পাইনি। না আর ভাত খাওয়া হল না। এরপর একটা ব্রেড নিলাম হাতে কিছু খাওয়ার পর মনে হলো বাসায় তো জেলি আছে জেলি দিয়ে খাই। 

আর এমন সময়ই load shedding. জেলি আর জেল এর বোতল একসাথে রাখা ছিল অন্ধকারে জেল কে জেলি মনে করে খেয়ে ফেলেছি। এবার তো অবস্থা খুবই খারাপ, বার বার ভাতরুমে যাওয়া শুরু করলাম। ওহ আজ কিযে হল আমার বুঝতেই পারছিনা। সারাদিন অসুস্থ থাকার পর বিকালের দিকে একটু সুস্থ হলাম।

আমি যে ফ্লাটে থাকি তার পাশের ফ্লাটে থাকে তন্নি রা। তন্নি এবার ক্লাস টেনে পড়ে। আমার দরজায় কলিং বাজলো দরজা খুলে দেখি অন্য দিকে ফিরে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি বললাম কাকে চান? সে পেছনে ফিরতেই, রিমা তুমি? সে তো হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এরপর আমার মনে হলো সে তো আমাকে চিনে না।

-- সে আমাকে বলল আপনি কে? আর আমি তো আপনার বাসার বেল বাজাই নি ,আমি তন্নিদের বাসায় এসেছি।
-- তখন আমি বললাম আমার মনে হয় আপনি ওই বাসার কলিং মনে করে আমার বাসার কলিং বাজিয়েছেন।
-- সে বলল হতে পারে কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
-- এমন সময় তন্নি দরজা খুলল,
রিমা আপ্পু তুমি কখন এলে? আসো আসো বাসায় আসো ,আরে রিহাব ভাইয়া কেমন আছেন ?
-- ভালো। তুমি?
-- হ্যা ভাইয়া ভাল আছি। ভাইয়া উনি আমার cousin 
-- আমি বললাম ও আচ্ছা ( যাক ভালই হলো আমার ব্যপারটা আরো সহজ হয়ে গেল)।
তন্নি আমার সমন্ধে সব বলল তাকে, যে আমি অমুক কলেজে পড়ি, যে কলেজে সে ও পড়ে। 

তখন সে বুঝতে পারলো হয়তো তাকে আমি কলেজেই দেখেছি। পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই তাকে দেখার জন্য পাগলের মতো ছুটাছুটি করলাম কিন্তু দেখতে পেলাম না। সে দিন ক্লাস করতে ভাল লাগছিল না তাই বাহিরে গিয়ে বটতলায় বসে ছিলাম। কলেজ ছুটি হয়ে গেল সবাই চলে যাচ্ছে কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। অনেকক্ষণ পর দেখি সে হেটে আসছে আমি তার সামনে গিয়ে বললাম আরে কেমন আছেন? এমন সময় একটা পাখি উপর থেকে পায়খানা করলো আর সেটা আমার মাথার উপরে পড়লো। সে এটা দেখে মুচকি হাসলো। আর কোন কথা না বলে চলে গেলো। আমি বললাম - সালার পাখি পায়খানা করার আর সময় পেলিনা। আমার খুব খারাপ লাগলো। 

তখন নিজে নিজেই বললাম না মন খারাপ হলে চলবেনা, কথায় আছে না একবার না পারিলে দেখ শতবার। আমার যখন মন খুব খারাপ থাকে তখন আমাদের ছাদে গিয়ে বসি এবং আকাশের তারার সাথে কল্পনায় খেলা করি,অন্যদিনের মতো আজ ও আমার মনটা খারাপ আর তাই ছাদে ওঠে তারার সাথে খেলা করা শুরু করলাম । তারারা তো অনেক রেগে আছে,কী ব্যপার এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? জান না তোমাকে ছাড়া আমাদের ভাল লাগেনা। আমি বললাম হ্যা জানি কিন্তু আমার তো মন ভাল ছিল সে জন্য আসি নি। আচ্ছা চল আমরা লোকোচুড়ি খেলি,তারাদের আমি নিজেই নাম দিয়েছি।

এগুলোর নাম অন্তু, সিজু,আরসাদ,রম্মিন,ফাবিহা ইত্যাদি। রম্মিন বলল আমি লোকাই তুমি ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গণণা কর এরপর আমাকে বাহির কর। আমি গুণতে শুরু করলাম,গণনার মাঝেই তন্নি আর রিমা ছাদে ওঠলো ,আর আমার পাগলামি দেখলো,আমাকে দেখে তন্নি বলল আপ্পু কথা বলো না দেখ তোমাকে দারুন একটা জিনিস দেখাচ্ছি, আমি ওদের কাউকেই দেখিনি,আমি চোখ বন্ধ করে বলছি আমার গুণা শেষ এবার বাহির করি ,রম্মিন এইতো তোমাকে দেখে ফেলেছি তুমি চাঁদের আড়ালে লুকিয়ে আছো। আচ্ছা খেলা শেষ চলো তোমাদের গান শোনাই,আমি গান গাইছি আর ওরা আড়াল থেকে শুনছে।


একাকী রাতে,পারিনি ঘুমাতে-
জেগে আছি আমি , তারারো সাথে
ব্যথা নিয়ে এই বুকেতে - ২

রজনী মাঝে, রুপালী সাজে
সেজে আছো তুমি হৃদয় আঙ্গিনাতে
আলতো ছায়ায়,আলতো মায়ায়
মেখে আছো তুমি , রঙ্গিন ঐ মেঘেতে। (ঐ)

ফুলের গন্ধে , মনানন্দে
নেচে উঠে যে মন  আজ, ছন্দে ছন্দে
কেউ না আসিতে ,ভাল না বাসিতে
পারিলো না কেহ ,আমারে বুঝিতে-(ঐ)

-- বাহ বাহ দারোন গেয়েছেন ভাইয়া।
-- তন্নি তোমরা ? কখন এলে ?
-- লজ্জায় একধম চুপসে গেছি। তবে তন্নি আগে থেকেই সব জানে। আর এতক্ষণে হয়তো বলে ও দিয়েছে সব।
-- তন্নি বললো - ভাইয়া কী লজ্জা পাচ্ছেন ?
-- না না লজ্জা পাব কেন (মনে মনে বলি মেয়ে আবার বলে,লজ্জা পাচ্ছেন)? রিমার দিকে তাকালাম তার মুখে একটু ও হাসি দেখলাম না বরং বিরক্তিকর একটা ছাপ দেখলাম তার চেহেরায়।(এটা কোন জাতের মেয়ে রে বাবা ? সালা- জন্মের সময় কী মুুখে বিষ নিয়ে জন্মেছিল কিনা কে জানে)। তার মুখে কোন কথা সরলোনা।

-- ভাইয়া আজ আমাদের বাসায় আসবেন ?
-- হ্যা অবশ্যই আসবো।
-- ভাইয়া কেন আসবেন?
--  হ্যা ! তাই তো কেন আসবো? তুমি না বললে - সে জন্য।
-- ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে আসবেন। (মেয়েদের মন স্বয়ং খুদা ও বুঝে না।)
-- তন্নি তোমার নামের অর্থ কী ?
-- একী হঠাৎ আমার নামের অর্থ নিয়ে উঠে পরে লেগেছেন কেন?
-- কেন তুমি জাননা ?
-- ওমা আপনার মনের কথা আমি কী করে জানবো?
-- না আমার মনের কথা জানার কথা বলছিনা ,তোমার নামের অর্থের কথা বলছি।
-- ও আচ্ছা তাই বলেন,না আসলেই আমার নামের অর্থ জানি না। আপনি জানেন?

----- আমি কিছুক্ষণ রিমার দিকে তাকালাম ,তাকে দেখে মনে হলো সে আমাকে সহ্য করতে পারছেনা। তখন আমি অন্য দিকে ফিরে বললাম,তন্নি পৃথিবীতে বহুরুপি মানুষ বসবাস করে,তাদের কে চেনা বা তাদের কে বুঝা বড়ই কঠিন, যেমন ধর আকাশ তার কিন্তু অনেক রং এখনি মেঘ,এখনি বৃষ্টি ,আবার এখনি রোধ; তেমনি মানুষের মনটাও। দুনিয়াটাকে ভাবলে বড় আশ্চর্য মনে হয়। একথা বলতেই আমার চোখে জল এসে গেল।

-- তন্নি আমাকে বলল - কী ব্যাপার ভাইয়া ?
-- আমি বাসায় চলে আসলাম।
-- তন্নি রিমাকে বলল আপ্পু ভাইয়া এসব কথাই কেন বলল আর কাদলো-ই বা কেনো কিছু বুঝতে পেরেছো?
-- সে একটু রেগে বলল Ñ না। তোর ভাইয়া তুই-ই বুঝ। আমার এসব ভালো লাগেনা। আপ্পু তুমি ও না!

বাসায় বসে অনেক কাদছিলাম,কেন জানি আমার বুক ফেটে কান্না আসা শুরু করলো। কাদতে কাদতে চোখ লাল করে ফেলেছি। আমার ব্যথা গুলো ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠছে আর অতীতের সকল স্মৃতিগুলো মনে পরে যাচ্ছে। খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কলেজে গেলাম,আমার এতবেশী বন্ধু নেই। তবে একটা ভাল বন্ধু আছে তার নাম নিহাম। তার সাথে আমি আমার সুখ দু:খের কথা ভাগাভাগি করি। নিহাম ক্লাসে একা বসে আছে আমি ও বসলাম তার পাশে। সে আমার দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো; এরপর বলল কী হয়েছে তোর ? আমি বললাম না কিছু না।

-- সে রেগে গিয়ে বলল কিছু না হলে তোর চোখ মুখ শুকিয়ে আছে কেন? আমার মনে হয় তুই কাল থেকে কিছুই খাস নি।
-- আরে না খেয়েছি।
-- আমি তোকে খুব ভালোভাবে চিনি, আমার সাথে মিথ্যে বলিস না। কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস? চল আমার সাথে চল।
-- কোথায়?
-- আমাদের বাসায়
-- না, নিহাম আমাকে ডিসটার্ব করিস না।
-- কেন ? কী হয়েছে তোর ?আমাকে বলবি না?
-- আমি বললাম তো কিছুই হয় নি।

-- নিহাম- ঠিক আছে আজ থেকে আমার সাথে তোর আর কোন সম্পর্ক নেই।
-- তখন আমি চিৎকার করে কেদে বললাম- তোরা সবাই আমাকে কী পেয়েছিস, যার যা ইচ্ছে হয় তাই করছিস, কেন? আমি কী অপরাধ করেছি পৃথিবীতে এসে? কেন সবাই আমার সাথে এমন করে?

-- একথা বলার পর সে বলল ঠিক আছে তোকে কিছুই বলতে হবেনা। ক্লাস চলছে, নিহাম ( মনে মনে বলছে - আজ ওর হলটা কী? সারাটা সময় চুপচাপ বসে আছে। একটা কথা ও বলল  না)।

-- ক্লাস শেষে ব্যাগ টা কাধে নিয়ে কারো দিকে না তাকিয়ে হাটা শুরু করলাম। নিহাম আমার পিছু পিছু আসছে। সে জানে আমি খুব রাগী। গাড়ীতে ওঠলাম সে ও ওঠলো। একটা সিট খালি ছিলো পাশের সিটে একটি মেয়ে বসে ছিলো কিন্তু প্রথমে আমি খেয়াল করিনি। কেননা সে জানালার দিকে মুখ করে রেখেছিল আর আমি ও ছেলে না মেয়ে না দেখে হুট করে বসে পরেছি। পরে যখন মুখ ফিরালো তখন দেখতে পেলাম এটা আর কেউ নয় রিমা। তখন আরো বেশী মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখন ভাবছি ওঠে যাব, না বসেই থাকবো, রিমা একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। 

তখন আমি ওঠে যাচ্ছিলাম (একবার কল্পনা করছি আমি যখন সিট থেকে ওঠে যাচ্ছি...... সে আমাকে বলল - কী হল ওঠে যাচ্ছেন যে ,বসেন। আমি বসলাম ,সে আমাকে দেখে হাসছে । মনটা আনন্দে ভরে গেছে)
হঠাৎ আমার ব্যাগটা তার চোখে লেগে গেল। আমি দেখি নি ,
-- সে আমাকে বলল এই যে কানা নাকি দেখে ব্যাগ নাড়তে পারেন না। অসহ্য ,কোথ থেকে যে এসব পাগল আসে?

-- আমি কিছুই বললাম না  আর বুঝতে ও পারলাম না কেন এসব বলল? তারপর বাকি রাস্তা দাড়িয়েই থাকলাম।
--  নিহাম আমাকে বলল সিট থেকে ওঠে আসলি কেন?
-- আমি চুপ করে রইলাম। গাড়ি থামলো এবং আমি নেমে গেলাম । নিহাম ও আমার সাথে আমার বাসায় আসলো। আমি বললাম কেন আসছিস? সে আমার কথার জবাব না দিয়েই বাসায় খাবার খোজা শুরু করলো। কোথাও কোন খাবার না পেয়ে চুলায় রান্না বসিয়ে দিল। আমি বললাম আমি কিছু খাব না। -- সে বলল তুই খাবিনা তাই বলে কী আমি ও খাবনা ?

-- আমি বললাম তুই তো আমার বাসায় কখনো খাসনা  তাই বললাম।
-- না ;আজ খাবো। রান্না হলো - রিহাব চল খাবার খাই।
-- আমি বললাম না আমি খাব না তুই খা।
-- সে বলল রিহাব অনেক হয়েছে এবার চল। আর না খেয়ে থাকতে পারলাম না। খাবার শেষে নিহাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলো এবার বল তোর কী হয়েছে?
-- নিহাম আবার?
-- হ্যা বল।
-- আমি তাকে বললাম - আমি একটি মেয়ে কে পছন্দ করেছি এবং ভালও বেসে ফেলেছি। আর সে আমাকে সহ্যই করতে পারেনা।

-- তখন নিহাম বলল- আরে কবে কোথায় শুনেছিস যে ফুল গাছ থেকে ফুল ছিড়তে গেলে গাছ তা সহ্য করতে পারে।  তা তাকে কী বলেছিস যে তুই তাকে ভালবাসিস ?
-- না, তার সাথে এ ব্যাপারে কোন কথাই হয় নি।
-- ও আচ্ছা এ কথা না বলতেই সহ্য করতে পারেনা ? আচ্ছা মেয়ে টি কে?
-- আমাদের কলেজে পড়ে,ফার্স্ট ইয়ার।
-- নাম কী?
--  রিমা।
-- কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে?
-- তা জানি না।
-- আচ্ছা তুই আমাকে দেখিয়ে দিস তো।
-- আরে না দরকার নেই। আমি তাকে ভুলে যেতে চেষ্টা করছি।
--  পারবি?
-- কী জানি হয়তো পারবো, হয়তো পারবোনা।
-- আচ্ছা যাই হোক তুই আমাকে দেখিয়ে দিস। আজ আমি যাই।
-- কেন আজ থেকে যাস না।
-- না রে মা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারেনা। আর মা বলেছে তোকে আমাদের বাসায় যেতে।
-- হ্যা যাবো একদিন সময় করে।

--আরে সময় করে না চল এখন চল।
-- না দুস্ত এখন না।
-- আচ্ছা তাহলে আমি চলি।
-- ঠিক আছে যা তাহলে।

এ বলে নিহাম চলে গেল। এরপর আমি ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে শুনলাম বেল বাজছে। স্বপ্ন থেকে ই দড়জা খুললাম এবং বললাম আসেন ভিতরে আসেন। কিন্তু বেল বেজেই চলছে। লাফ মেরে উঠলাম ঘুম থেকে। দরজা খুুলে দেখি একজন ডাক পিয়ন।

-- আমাকে বলছে - আপনি কি রিহাব?
-- হ্যা। সে আমার হাতে একটি চিঠি দিল। খামের উপরে শুধু একটা নাম লেখা অর্পা। আর কিছুই লেখা ছিলনা। খামটা ছিরলাম,ছোট একটা সাদা কাগজ তার মধ্যে লেখা ----

রিহাব খুব আশ্চর্য হচ্ছ , না?
ভাবছ কে এই অর্পা? এসব ভেবে কী হবে,আসলে আমাদের ভাববার মতো পৃথিবীতে অনেক কিছু রয়েছে, তাই আমার কথা না ভাবলেও চলবে। পৃথিবীতে কত কীর্তিমান মানুষ এসেছে আবার চলে ও গেছে, তাদের কে কয়জন ই বা মনে রেখেছে, আধাঁরের শেষে যখন আলো আসে তখন আলোকেই মনে পরে। আধাঁরকে নয়। গাছে যখন তাজা একটি ফুল থাকে , তখন তার দিকে সবারই নজর পরে, কিন্তু ফুলটি যখন ঝরে যায় তার দিকে কেউ ফিরে ও তাকায় না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যাই হোক , ভাল থেকো।

------ অর্পা

এই চিঠিটা পড়ে এত একটা মাথা ঘামাই নি। কেননা কে না কে লিখেছে এত চিন্তা করার সময় আছে? কিন্তু পর দিন এমন সময় আরো একটা চিঠি আসলো। চিঠির কথাগুলো কেমন যেন অদ্ভুত টাইপের। পরের দিন আরো একটা, এভাবে সপ্তাহে ৫/৬ করে চিঠি আসতে থাকলো। কিন্তু একথা কখনোই কারো কাছে বলিনি। তার চিঠি গুলোতে লেখা ছিল -

রাত্রির আকাশের নিলিমা আর অন্ধকারের কালিমা দুটাই ভিন্ন জিনিস!!
সবুজকে অবুঝ বলা যায় কিন্তু অবুঝকে সবুঝ বলে চালিয়ে দেয়া যায় না।
------- অর্পা
অন্য একটি চিঠিতে একটি গান -

তুমি কি জানো ওগো বন্ধু, হৃদয়ে বাজে কত সুর-২
আমি যদি না থাকি, চলে কি যাবে তুমি দূর বহুদূর-ঐ

বকুল বনে, চাঁদের সনে, গাইবো গান আমি সঙ্গোপনে
মিটিমিটি তারাগুলো হাসবে আকাশে, কি যেন লাগবে মধুর।

রাখালী বাশিতে,তোমার হাসিতে, রেখেছি তোমারে মুখের বাণীতে
পাখির কলতান যদি গো থেমে যায়, হবে কি তুমি শুধু মোরÑঐ

এভাবে দুএকদিন পরপর একের পর এক চিঠি আসতেই থাকলো। আমি বুঝতে পারলাম না কে এই অর্পা। যার নাম কখনোই আমি শুনি নি। প্রথমে এতটা চিন্তা হতনা। কিন্তু এখন অনেক চিন্তা করি। চিন্তা করে কি হবে? সে এক অপরিচিতা। আর আমার চেনা জানার মধ্যে একমাত্র আমার বন্ধু নিহাম আছে সে ছাড়া এখানে কেউ আমাকে চিনেনা। তাহলে কে সে?

যাই কলেজে যাই , আজ আমাকে অন্যদিনের চাইতে সুন্দর দেখাচ্ছে। রাস্তায় গিয়ে দেখি কিছু মেয়ে হেটে যাচ্ছে আর বার বার আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। আর আমি তো এখন যাকেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি খুব সন্দেহ হয়। এটাই নাকি অর্পা? 

একটি মেয়ে অন্য আরেকটি মেয়েকে বলছে- দেখ অর্তি ছেলেটি খুব স্মার্ট না?
-- হ্যা খুব স্মার্ট। ইচ্ছে করছে প্রেমের অফার করি।
-- তাই? তো যা না গিয়ে বল আমি তোমাকে ভালবাসি।
-- যাবো?
-- সে মেয়েটি হেসে বলল যা।
-- মেয়েটি সত্যি সত্যি আমার কাছে এসে বলল- আই লাভ ইউ।
অন্য মেয়েগুলো অবাক হল কেননা অর্তি এর আগে কখনো কাউকে অফার ও করেনি কারো দিকে ভালো ভাবে তাকায় ও নি। বরং আমরা এরকম করতাম আর আজ কিনা অর্তি এরকম করলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আর আমার অবস্থা সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে হসপিটালে। জ্ঞান ফেরার পর নিহাম কে দেখলাম আমার পাশে বসা।
-- আমি বললাম - আমি হসপিটালে কেন?
-- নিহাম বলল - গতকাল তোর কলেজে আসার সময় পেছন থেকে একটি নিয়ন্ত্রনহীন গাড়ী ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
-- তাহলে আমাকে হসপিটালে এনেছে কে?
-- অর্তি নামের একটি মেয়ে ও তার কিছু বান্ধবী।

তখন আমার সব মনে পরে। ঠিক এমন সময় অর্তি হসপিটালে আসলো আর এখানে একটি মজার ঘটনা ঘটলো তা হলো - সকল রোগীদের দেখতে আসলে ফল-মুল নিয়ে আসে অথবা অসুস্খ থেকে সুস্থ হলে ফুল নিয়ে আসে। সে আমার জন্য একটা গিফট নিয়ে আসছে যাতে লেখা Heppy Birth Day
-- নিহাম বলল আজ তো রিহাবের জন্মদিন না।
-- সে বলল - কেন বলুন তো।
-- নিহাম বলল কেন মানে ?

আমি বুঝতে পারলাম অর্তি বলতে চাচ্ছে আমি তো জন্মদিনের গিফট নিয়ে আসি নি।
-- অর্তি বলল sorry, actually আমি যখন ফুল কিনছিলাম তখন আমার সাথে আরেকজন লোক জন্ম দিনের গিফট কিনেছিলো হয়তো ভুল করে সেই লোকের গিফটা আমি নিয়ে এসেছি।
-- আমি বললাম - আচ্ছা ok, no problem আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
-- না না ধন্যবাদ বলতে হবেনা শুধু আমি যেটা শুনতে চাই সেটা বলে দিলেই চলবে।
-- নিহাম তো অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পরে আমাকে বলল - কিরে কি শুনতে চায় সে?
-- আমি কিছুই বললাম না। শুধু অর্তির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। কন্ঠটাও ভারি মিষ্টি। নিহাম আবারো বলল -
-- কিরে তুই ওকে আগে থেকে ই চিন্তিস নাকি?
-- এবারো কিছু না বলে একটু হাসলাম।
-- অর্তি ও আমার দিকে ফিরে মুচকি হাসলো এবং বললো আমি আজ উঠবো। kindly বলবেন কি আপনার সাথে পরবর্তিতে কোথায় দেখা করতে পারি?

এবার নিহামের ভুল ভাঙলো সে বুঝতে পারলো যে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। আমি তাকে ভুল একটা ঠিকানা দিয়ে দিলাম যেন সে আমার সাথে দে খা করতে না পারে। অর্তি চলে গেল। এবার আমি নিহাম কে প্রথমে অর্পার চিঠির গল্প এবং অর্তির propose করার কথা বললাম।
-- নিহাম বলল তোর রাশিটা কি রাশি রে?
-- আমি বললাম - কপাল পোড়া রাশি।

-- আরে না আমি seriously বলছি। দেখছিস না কত সুন্দর মেয়ে তোকে propose করছে?
-- জ্বিনা আমি  এত সুন্দর মেয়ে চাইনা। আমার রিমা কে চাই।
-- তাহলে অর্পা, অর্তি ?
-- এদের কে তোকে দিয়ে দিলাম।
-- হা হা হা ............।
পরদিন বাসায় আসলাম। দরজা খুলে দেখি ১০ টা চিঠি ফ্লরে পরে আছে। এভাবে অনেক দিন চলছিলো এর মাঝে ১ মাস ১৫ দিন ধরে রিমা কে কলেজে দেখিনি। এখন আর তাকে না দেখে থাকতে পারছিনা। তাই পাগলের মতো ছুটে গেলাম নিহামের কাছে ক্যান্টিনে ,দুস্ত কি করবো বলনা।

-- কি ব্যাপারে?
-- রিমার ব্যাপারে। আমি ও কে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিনা।
-- হুম, বুঝতে পেরেছি। ও রিহাব তোর জন্য সুখবর আছে।
-- কি রিমার খোজ পেয়েছিস?
-- আরে নাহ!
-- তাহলে?
-- গতকাল অর্তির সাথে দেখা হয়েছিলো। তাকে নাকি তুই ভুল ঠিকানা দিয়েছিস?
-- কেন তুই দেখিস নি?
-- কিভাবে? তুই কাগজে কি লেখেছিস তা কি আমি দেখেছি? সে আমাকে অনেক অনুরোধ করলো তোর ঠিকানা দেয়ার জন্য তাই কলেজের ঠিকানা দিয়েছি।
-- হা! চল মিষ্টি দোকানে যাই।
-- কেন?
-- না তুই আমার দুস্ত মানুষ , আমাকে এতবড় একটা উপকার করলি আর তোকে যদি মিষ্টি না খাওয়াই তাহলে কি হয়?
-- ঋঁহ করছিস?
-- আরে না তোর সাথে মজা করবো আমার মাথা খারাপ? সালা আমার বাসার ঠিকানা দিলে ও হত বাসা পরিবর্তন করতে পারতাম। কিন্তু এখন তো কলেজ পরিবর্তন করতে হবে মনে হচ্ছে।
-- ভালোই বলেছিস তবে আমি তোর সালা নই তোর বউয়ের বড় ভাই।
-- বাহ বাহ বিয়েই করলাম না আবার বউ; বউয়ের  বড় ভাই! তা অর্তি তোর কোন জাতের বোন হয়?
-- অর্তি নয় ,
-- তাহলে?
-- রিমা।
-- রিমা? আসলেই রিমা তোর বোন হয়?
-- আপন না -
-- তবে?
-- তবে আপন চাচাতো বোন।
-- কি বলিস আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
-- হ্যা সত্যিই বলছি।
-- তুই আমার বন্ধু একথা সে জানে?
-- হুম, সব জানে।
-- কিভাবে?
-- কেন আমি বলেছি না।
-- বললে কি হবে সে কি তোর সাথে আমাকে কখনো দেখেছে?
-- না। আমি তোর ছবি দেখিয়েছি।
-- আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বেড় হচ্ছে না। আমি অনেক excited,
-- নিহাম বলল - relax; এত excited হওয়ার কিছু নেই।
-- নিহাম তুই কি বলেছিস রিমা কে, আর সে কি বলেছে?- ( নিহামের চেহেরাটা মলিন দেখাচ্ছে,তার চেহেরায় কেমন যেন একটা গম্বীরতার ছাপ দেখতে পেলাম। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা যখন থেকে-ই নিহাম রিমার কথা বলতে শুরু করলো তখন থেকে ই তার মন টা খুব খারাপ। তাহলে কি কোন সমস্যা? না নিহাম রিমাকে পছন্দ করে ,অস্বাভাবিক কিছুনা চাচাতো বোন যেহেতো, পছন্দ করতেই পারে)।

-- শোন বি ? শোন তাহলে Ñ-----
আমি যে দিন তোর বাসায় এসেছিলাম এবং তোর মুখ থেকে রিমা নাম টি শুনেছিলাম আর তুই বলেছিলি সে আমাদের কলেজে পড়ে। সে দিন-ই অনুমান করেছিলাম এটা আমার চাচাতো বোন রিমা হতে পারে। আর তুই বলেছিলি তোদের ফ্লাটেই ওর খালার বাসা। ঠিক সেদিনই যখন আমি তোর বাসার দরজা খুললাম আমি দেখতে পেলাম রিমাকে। তখন তুই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলি। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এই সেই রিমা।
তারপর..............

-- একি নিহাম ভাই তুমি এখানে ?
-- ঝধসব প্রশ্নটা আমারো।
-- ও হ্যা এটা আমার খালার বাসা। আর তোমার ?
-- আমার ভৎরবহফ এর বাসায় এসেছিলাম।
-- এটা তোমার বন্ধুর বাসা?
-- হ্যা।
-- এরকম একটা লোক তোমার বন্ধু ?
-- কি রকম?
-- না ঠিক আছে। বাসায় যাচ্ছ?
-- হ্যা , তুই ফিরবি কখন?
-- এই তো কিছুক্ষণ পর।
-- ঠিক আছে তোর সাথে কথা আছে তারাতাড়ি চলে আসিস। এই বলে আমি বাসায় চলে গেলাম।
-- পরের দিন রিমা আমাকে বলল কি বলবে বল?
-- আমি বললাম তোর কি এখন কোন কাজ আছে ?
-- না।
-- তাহলে বস এখানে।
-- হ্যা বসলাম বল।
-- আচ্ছা রিমা তুই কি রিহাব কে জানিস?
-- তার সমন্ধে নতুন করে আর কি জানবো আর তার কথাই বা আমার সাথে কেন বলছো?
-- পুরাতন কি কি জানিস?
-- দেখো আমি যা জানি এসব শুনলে তোমার ভাল লাগবেনা। কেননা সে তোমার বন্ধু।
-- তারপরেও তুই আমাকে বল।

-- ( অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সে বলল)আমি যে দিন প্রথম কলেজে গিয়েছিলাম সে দিন কলেজের মাঠে সে আমাদের একজন প্রফেসর কে চর মারে।
-- আচ্ছা সেদিনের তারিখ টা তোর মনে আছে?
-- হ্যা। ৬ আগস্ট।

-- ঠিক আছে সে চর মেরে ছিলো কিন্তু চর টা প্রফেসর কে নয় আমাদের বন্ধু রওনক কে মেরে ছিলো। আর সেটা ছিলো অভিনয়।  ৭ আগস্ট ভৎবরহফংযরঢ় ফধু এর জন্য নাটকের রিহার্সালে চর মারার একটি শর্ট ছিলো। সে খুব ভালো অভিনয় জানে আর সে নাটকের নায়ক ছিল রিহাব। বিশ্বাস না হলে তুই রওনক কে জিজ্ঞাসা করতে পারিস।

-- আচ্ছা এটা না হয় বুঝলাম কিন্তু ১ লা নভেম্বর রাস্তায় যে গাড়িটি ভেঙ্গে ছিল এবং পুরিয়ে ছিল সেটা কে? সেটার নায়ক ও তোমার বন্ধু রিহাব-ই ছিল।
-- হ্যা সেটার নায়ক ও আমার বন্ধু রিহাব ছিল। তার আসলে অনেক দোষ। কিন্তু সে দোষটা কেন করেছে সেটা শুনতে চাইবি না।

-- হ্যা হ্যা বলো তুমি তো তোমার বন্ধুকে নির্দোষ করতেই চাইবে।
-- আমি নির্দোষ করতে চাইছিনা, সে এমনিতেই নির্দোষ।
-- কিভাবে?

-- সেদিন যে গাড়িটি ভেঙ্গেছিলো সে গাড়ীর একজন স্টাফ আমাদের কলেজের একটি মেয়েকে বিরক্ত করতে চেয়েছিলো এমনকি মেয়েটিকে সে অনেক বাজে কথা ও বলেছিলো। মেয়েটি তখন মুখ বুঝে সব সহ্য করছিলো কারন সে এখানে নিরোপায় ছিলো। এরপর যখন মেয়ে টি রিহাব কে দেখতে পেল সে রিহাব কে সবকিছু খুলে বলল। রিহাব জানতো যে গাড়িটি আমাদের কলেজের সামনে দিয়ে যাবে তখন সে আমাদের সকল বন্ধুকে নিয়ে গাড়িটি থামালো। এরপর গাড়ির স্টাফকে এইসব কথা জিজ্ঞাসা করলো এরপর সে রিহাবের সাথে সরংং নবযধাব করে। তারপর সবাই মিলে গাড়িটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এখন বল্ একটা মেয়েকে safe করা অন্যায়?

-- ও তুমি বলতে চাও সে মেয়েদের safe করে, তাহলে কিছুদিন আগে আমি একটি গাড়ি দিয়ে বাসায় আসছিলাম তখন সে আমার গায়ে স্পর্শ করেছে। এটা ও মিথ্যে?
-- হ্যা এটাও মিথ্যে। কেননা সেদিন ঐ গাড়িতে আমি ও ছিলাম। রিহাবের মনটা সেদিন অনেক খারাপ ছিলো। আর মন খারাপ নিয়ে সে গাড়িতে ওঠে বসলো বসার পরেই দেখলো পাশের সিটে তুই। আর তুই রিহাব কে সহ্য করতে পারিস না, এখন যদি দেখিস তোর পাশে সে বসে আছে তাহলে তুই আরো রেগে যেতে পারিস এই ভেবে সে গাড়ি থেকে নেমে যেতে চেয়েছিলো। আর যখন সিট থেকে উঠছিলো তখন তার কাধের ব্যাগটা তোর গায়ে লেগেছিলো। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি যে তোর গায়ে ব্যাগটা লেগেছে। আর এ জন্য তাকে ত্ইু অনেক কথাও বলেছিলি। আমি নিজের চোখে সব দেখেছি।
আর কোন অভিযোগ আছে তোর?

-- তখন রিমা আর কোন কথা বলল না (মাথাটা নীচ করে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো,তারপর একবার আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি তার মুখে একটা মায়ার ছাপ দেখতে পেলাম) সে তখন চলে গেল ,পরদিন আমাকে ডেকে বলল -
-- নিহাম ভাই আমি আসলে অনেক দুঃখিত। আমি ভুল বুঝে ওনাকে কতটা অপমান করেছি।
-- আমি বললাম দুঃখিত আমকে নয়। যাকে বলা দরকার তাকেই বল।
-- সে বলল কিন্তু আমার অনেক লজ্জা করছে।
-- এরপর তোর সাথে অনেক দিন রিমা দেখা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তোর বিভিন্ন সমস্যা দেখে আমি তাকে বলেছি পরে দেখা করতে।

-- আগামি কাল তোর সাথে রিমা দেখা করতে পারে।
-- তুই কি সত্যি বলছিস ? আমার কাছে সব স্বপ্ন স¦প্ন মনে হচ্ছে।
-- স্বপ্ন নয় সত্যি। তা এখন কি মিষ্টি খাওয়াবি না চাইনিজ?
-- তুই যা খেতে চাস তাই খাওয়াবো। বল তুই কি খাবি? নিহাম তোর ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা রে ।

-- রিহাব এসব কথা কখনোই বলবি না। তাহলে আমি তোর সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখবনা।
-- তুই পারবি আমায় ভুলে যেতে?
-- অবশ্যই পারবো ......( হেসে বলল ) না।
হা হা হা..................।

নিহাম বাসায় চলে গেল। আমি ও বাসায় ফিরে আসলাম , আমার কেমন যেন ধম বন্ধ হয়ে আসছে আর শুধু কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হাহাকারে বুকটা ফেটে যাচ্ছে । আমার বুকে এত দিন যে ব্যথা চাপা দিয়ে রেখেছিলাম আজ তা বুক ছিড়ে বেড় হয়ে আসতে চাইছে। আমি ধম নিতে পারছিনা। চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে। কার কাছে সেই ব্যথা গুলোর কথা বলতে পারবো ? কে বুঝবে আমাকে?

---- প্রিয় পাঠক
আপনাদের হয়তো প্রশ্ন জাগছে যে এখন তো রিহাবের আনন্দের দিন কিন্তু তার এখন কেন কান্না আসে? সারাদিনের আলো শেষে দিগন্তে যখন আধার নেমে আসে তখন কারো ঘরে প্রদীপ জ্বলে আবার কারো ঘর থাকে হামেশাই অন্ধকার। সে অন্ধকার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে একজন মানুষ,আর ঘুমের মাঝে প্রতি রাতেই সে একটা স্বপ্ন দেখে যে,তার চোখের সামনে থেকে আধার নামক কুয়াশা দূর হয়ে আলোর দিশারী তার সমস্ত  দুনিয়াকে  আলোকিত করে দিয়েছে । কিন্তু স্বপ্নের আলো স্বপ্নতেই মিশে যায়। তার আধার ঘরে আর প্রদীপ জ্বালানো হয় না। রিহাবের জীবনে ও সে রকম একটি ঘটনা রয়েছে। আর তা হল -








রিহাবের বাবার নাম রিফাত চৌধুরী। তিনি ছিলেন মোস্তফা চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। তার মা নেই। অসামান্য ধন সম্পদের মালিক ছিলেন মোস্তফা চৌধুরী। রিহাবের দাদা তার বাবার জন্য অনেক ধনী ব্যক্তির মেয়ে এবং সুন্দর মেয়ের সাথে বিয়ের জন্য কথা বলেন। কিন্তু  এতে তার সম্মতি ছিল না। সে একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কে বিয়ে করে। এরপর তার বাবা মোস্তফা চৌধুরী তাকে ত্যাজ্য করে বাড়ী থেকে বেড় করে দেন। এরা দুজন ঢাকায় একটি ছোট বাসা বাড়া করে থেকে ছিলেন। কিছুদিন পর মোস্তফা চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তার সহায় সম্পত্তি একটি এতিম খানার নামে লিখে দিয়ে যান। 

এর কিছুদিন  পর তিনি মারা যান। রিহাবের জন্মের সময় তার মাকে হাসপাতালে রেখে তার বাবা টাকার জন্য অনেক যায়গায় ছুটাছুটি করেন। কিন্তু কারো কাছে টাকা না পেয়ে অবশেষে নিজের বাবার কাছে গিয়েছিলেন। গিয়ে শুনলেন তার বাবা মারা গেছে আর সকল সম্পত্তি এতিমখানার নামে দিয়ে গেছেন। এরপর তিনি শূণ্য হাতে হাসপাতালে আসেন। তখন তার সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও স্ত্রী কে বাচানো সম্ভব হয় নি। অত:পর তিনি তার স্ত্রী হারানোর শোকে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আর রিহাবের যখন তিনমাস তখন তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর তার এক চাচাতো ভাই রিহাব কে লালন পালন করে বড় করেন। তবে রিহাব এমনি এক হতভাগা যার কপাল বড়ই খারাপ। তার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর তিনি ও মারা যান। এরপর থেকে রিহাব টিউশনি করে তার খরছ চালাতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তার টিউশন ও বন্ধ হয়ে গেল। একটা পার্টটাইম চাকরি পেয়েছিলো যার বেতন ২৫০০ টাকা। গত দুইমাস ধরে সে এই চাকরি করছিলো । তার বাসা বাড়াতেই ১৫০০ টাকা চলে যায় । আর বাকি টাকা দিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। একবেলা খাবার খেলে দুইবেলা না খেয়ে থাকে । প্রতিটা মুহুর্ত তাকে সংগ্রাম করে চলতে হচ্ছে।

এই অসহায় অবস্থায় তার আর কোন উপায় ছিলো না। কিন্তু একথা সে কাউ কে বুঝতে দিত না। নিজের ব্যথা নিজের মধ্যেই চাপা দিয়ে রাখতো। ছোট্ট একটা বাসায় থাকতো যেন কেউ তার ব্যথার কথা না জানতে পারে। কতদিন যে সে না খেয়ে ঘুমিয়েছে তার কোন শেষ নেই । লেখাপড়া শেষ করে রাত তিনটায় অথবা চারটায় খাবার খেয়ে ঘুমাতে  যেত। এরপর ৯ টায় ঘুম থেকে জেগে কলেজে চলে যেত। কলেজ থেকে ফেরার পথে ১০ টাকা দামের একটা ব্রেড নিয়ে এসে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পরত। সন্ধায় ঘুম থেকে ওঠে আবার পড়াশুনা শুরু করত এবং কলেজে যেত প্রায়ই পায়ে হেটে আর মাঝে মধ্যে লোকাল বাসে করে। 

জীবনের এ কঠিন পরিণতির মাঝে ও সে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যায় নি। এভাবে বেশ কয়দিন চলছিলো কিন্তু এখন সে চাকরিটাও চলে গেছে। আর এমন সময় ভালবাসা নামক কথাটি তার সামনে এসে কড়া নাড়ছে। জীবন যেখানে থমকে দাড়ায় সেখানে আবেগের কোন মূল্য থাকেনা। -অশ্রুকে হাসি দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চাইলে ও সেই হাসিটাতে অপূর্ণতা থেকে যায়। সুখের হাসি আর দু:খের হাসি কখনো এক হতে পারেনা। যখন বৃষ্টি হয় সেই বৃষ্টির মাঝেও কখনো কখনো রোধ এসে উকি মারে। তবে সেই রোধটা শোভনীয় বলে মনে হয়না।

আজ আমরা মুক্ত পৃথিবীর মানুষ হতে পেরেছি, কিন্তু নিজেরা কতটুকু মুক্ত হতে পেরেছি তা আমার বোধগম্য নয়। তবু ও একটি কথা আমরা মানুষ, যাকে বলা হয় “আসরাফুল মাখলুকাত”। আজ আমরা কতটুকু সৃষ্টির সেরা হতে পেরেছি সেটাই চিন্তা করার বিষয়? সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমরা কতটুকু সার্থক? যাই হোক এরপরেও মানুষ স্বপ্ন দেখে ,এতকিছুর পরেও মানুষ বেঁচে থাকে।

সন্ধা নামতে শুরু করলো,রিহাব ছাদে বসে আছে, চারতলা বিশিষ্ট ভবনটির ছাদের একেবারে উত্তর প্রান্তে একটি প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে ভাবনার জগতে পাড়ি জমিয়েছে। টবের মধ্যে কিছু গোলাপ, পাতা বাহার আর সন্ধামালতি ফুলের গাছ রয়েছে। রিহাব তখন দূর আকাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু পাখি নীড়ে ফিরছে। এমন সময় মাগরিবের আযান পরলো মসজিদে। অন্যান্য ফ্লাটের মানুষ গুলো যার যার ভাবে বাসায় চলে গেল। সে ভাবছে কি করবো,মসজিদে যাবো নাকি না-ই যাবো। 

আগে নিয়মিত নামায পড়তাম তবে কয়েকদিন ধরে নামায পড়া হচ্ছেনা। এই চিন্তা করে মসজিদে গেলাম। নামায শেষে ইমাম সাহেব বললেন আপনারা সবাই বসেন আল কুরআন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ্য আলোচনা হবে। আমি সাধারণত এসব কথা কখনোই শোনি না তবে আজ কেন জানি ইচ্ছে করলো কথাগুলো শুনতে। আমি বসলাম-ইমাম সাহেব বললেন হে মুসলমান ভাইয়েরা এই বিশাল পৃথিবী ,চন্দ্র,সূর্য্য,নক্ষত্র,গ্রহ-উপগ্রহ,বৃক্ষ,লতা,মানব-দানব,পশুপাখি,সাগর-পাহার সবকিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি আল্লাহ্ তায়ালা। তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালন কারী। পৃথিবীর সকল প্রাণীর খাওয়া-পরা,রোগ-শোক,মৃত্যু,আপদ-বিপদ সবকিছু সমন্ধে তিনি জ্ঞাত।

তিনি ইচ্ছে করলে কাউকে সম্মান দেন আবার তা ফিরিয়ে নেন। তিনিই একমাত্র ইলাহ যার কোন শরীক নেই। তাই আমরা তার বান্দা হিসাবে তার এবং তার সৃষ্টির উপর ইমান আনা, তার হুকুম পালন করা,তার এবং তার প্রেরিত রাসুল (সঃ) গণের দেখানো পথ অনুসরন করা একান্তই কর্তব্য। আর আমরা যদি পুরোপুরি ভাবে ইসলামকে অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসকে পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমরা পৃথিবীতে অভাব অনটন,দু:খ-কষ্ট,নাফরমানি থেকে মুক্তি পাবো এবং পরকালে জান্নাতে স্থান পাবো।

তখন একজন ব্যক্তি ইমাম সাহেব কে জিজ্ঞাসা করলেন,হুজুর আমরা বিপদ-আপদ ও অভাব থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি?
তখন হুজুর বললেন -
উজীবু দাওয়াতাদ্ দায়ি ইযা দায়ানি।
অর্থাৎ,আল্লাহ্ তায়ালা বলেন -যখন কোন প্রার্থনাকারী আমার কাছে প্রার্থনা করে তখন আমি তাহার প্রার্থনা কবুল করি।
(সূরা বাকারা-১৩৬)

আমরা নিয়মিত নামায রোজা করলে আল্লাহর জিকির করলে এসব থেকে মুক্তি পেতে পারি। এছাড়াও আল কুরআনে একটি সূরা আছে যে সূরাটি নিয়মিত পাঠ করলে আমরা বিভিন্ন ভাবে উপকার পেতে পারি। যেমন- সূরা ইয়াছিন।
১.এই সূরা কোরআনের সকল গুণের সমন্বয়ে সাধিত বলে রাসুল (স:) একে কোরআনের অন্তর বলে অবহিত করেছেন।
২. রাসুল (স:) বলেছেন যে ব্যক্তি নিয়মিত এই সূরা পাঠ করবে তার জন্য বেহেস্তের ৮ টি দরজা খোলা থাকবে।
৩.হাদিসে আছে যে রাতে শোয়ার সময় এই সূরা পাঠ  করে ঘুমাবে সকালে নিষ্পাপ অবস্থায় সে জাগ্রত হবে।

৪. নিয়মিত এই সূরা পাঠ করলে যে কোন সৎ  উদ্দেশ্য ,বিপদ-আপদ,এমনকি দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাবে।
৫. নিয়মিত এই সূরা পাঠ করলে যে কোন পাগল,রোগগ্রস্ত এবং জ্বিনগ্রস্ত ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করবে।


আমার কাছে হুজুরের কথাগুলো খুবই ভালো লাগলো। আমি চেষ্টা করলাম এসব কথা পালন করতে। রাত হল বাসায় এত বেশী খাবার-দাবার নেই। চিন্তা করছি কি খাবার খাওয়া যায়। এমন সময় কলিং বাজলো,তন্নির আম্মু এসেছে।

-- আমি বললাম - আন্টি কি খবর ,হঠাৎ আপনি- কেমন আছেন?
-- হ্যা ভালো। আমাদের বাসায় আজ বিরিয়ানি রান্না করেছি,তাই ভাবলাম তুমিও আমাদের সাথে শেয়ার করো এই ভেবে তোমার জন্য নিয়ে আসলাম।
-- আন্টি এসবের কী দরকার ছিলো? আপনারা ও যা করেন না!
-- না বাবা কি আর এমন করতে পারলাম ।

এরপর তিনি চলে গেলেন। যাক এ বেলার খাবারটা হয়ে গেল। খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে গেলাম আমি। ওদিকে রিমার চোখে ঘুম নেই, সারাক্ষণ শুধু চিন্তা হচ্ছে কাল রিহাবের সাথে দেখা হলে কি বলবো, কী পরে যাবো ,কী বললে তার ভাল লাগবে? কী করলে সে আমাকে তার ভালোবাসার মানুষ হিসাবে আপন করে নিবে। বিভিন্ন বান্ধবীরা যে ভাবে তাদের নড়ু বন্ধুদের দের সাথে পরিচিত হয়েছে, সে সব কথা গুলো সে মনে করছে কিন্তু কিছুতেই মিলাতে পারছেনা। আর বার বার আয়নায় নিজের মুখটাকে দেখছে। সে বলছে রিহাব এত সুন্দর আমাকে পছন্দ করবে তো। বিষণ ট্যানশন হচ্ছে। আচ্ছা কিভাবে তার সাথে কথা বলা শুরু করবো। যদি একটা গান দিয়ে শুরু করি তাহলে কেমন হয়। ধ্যাৎ গান দিয়ে আবার কারো সাথে কথা বলা শুরু করা যায় নাকি। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে রিমা।

একটা বটগাছ তার নিচে দাড়িয়ে রিমা,অন্ন দিকে ফিরে আছে । এমন সময় রিহাব সেখানে উপস্থিত হলো এবং বলল, ঊীপঁংব সব শুনছেন?
--  কান যেহেতু আছে অবশ্যই শুনছি।
--- না । মানে অনেকের কান থাকলেও শুনতে পায় না তো, তাই।
-- তো আপনার কী এখনো মনে হয় যে, আমি বধির?
-- না এখন বুঝতে পারছি যে,আপনার কান দুটো কালবার্ডের সুরঙ্গের মতো।
-- কী বললেন ? এ বলে পিছনে ফিরলো। তুমি? ও sorry আপনি?
---- sorry আপনি?
--- আপনি কি আমাকে ভেঙ্গাছেন?
--- আপনার কি মাথা খারাপ ? আপনাকে ভেঙ্গাবো কেন?
--- মানে? আপনি আমাকে মাথা খারাপ বললেন কেন?
--- না। কোথায় , তাই বলেছি নাকি আমি?
--- আরে এটা কি পাগল না ছাগল?
--- এই যে মিস্ মুখে জুতা দিয়ে কথা বলবেন, ওহ sorry আবার প্রথম থেকে,এই যে মুখে লাঘাম দিয়ে কথা বলবেন।
--- নাহ। এরকম নোংরা মানুষের সাথে কথা বলা যায়? নিহাম ভাই আমাকে কোথায় পাঠালো,এমন জানলে আগে আসতামই না।
--- মেয়েটা এত অভদ্র ? এটা নিহামের চাচাতো বোন? ছি:
--- আমি অভদ্র? ওয়াক থু ,থুথু মারি তোর কপালে। (ঘুম থেকে থুথু মেরেছে উপরের দিকে আর সেই থুথু নিজের উপরই পরেছে। এখন কি বাজে লাগছে।) ধ্যাৎ এটা একটা স্বপ্ন হলো?

সকাল হলো। ডিমের কুসুমের মতো বিশাল সুন্দর একটা সূর্য্য পূবাকাশে উদিত হয়েছে। আর জানালার ফাক দিয়ে সূর্য্যরে আলো প্রবেশ করেছে রিমার কক্ষে। সূর্য্যরে মৃদু আলো রিমার চোখে পরলো আর অমনি ঘুম থেকে জেগে গেল রিমা। এখনি কলেজে যেতে হবে,খুব তাড়াহুড়ো করে কলেজে আসলো রিমা। প্রথমে একটা ক্লাশ করলো তারপর ক্লাস থেকে বের হয়ে কলেজের অনেক দূরে একটা বকুল গাছের নিচে গিয়ে রিহাবের জন্য অপেক্ষা করছে। এদিকে নিহাম রিহাব কে বলছে যা তোর জন্য রিমা অপেক্ষা করছে। রিহাব বলল আমার ভয় লাগছে ওখানে গিয়ে কি বলবো ? তোর যা ইচ্ছে হয় তাই বলিস এবার যা। রিহাব বলল তাহলে যাই (আল্লাহ ই জানে আবার কোন জামেলায় পড়ি কিনা)।

রিমার কাছে গিয়ে দাড়ালাম এবং তার দিকে তাকালাম। রিমার চেহারাটা ভারি মিষ্টি দেখাচ্ছে আজ,পরনে হালকা গোলাপী রঙ্গের সেলোয়ার কামিজ,চুল গুলো এলোমেলো হয়ে বাতাসে দুল খাচ্ছে। তার সুদীর্ঘপল্লববিশিষ্ট কাজলহীন অদ্ভুত দু’টি বড়ো বড়ো কালো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার কপালের টিপটা যেন মধুপূর্ণিমা রাতের আকাশের চাঁদের মতো দেখাচ্ছে এবং আমার মনে হলো তার ওষ্ঠাধর ভাবের আভাসমাত্রে কচি কিশলয়ের মতো কেপে উঠছে। আমার ইচ্ছে হচ্ছে তার এই ম্লান চেহারা আর চাঞ্চল্যতায় মুগ্ধ হয়ে অস্তমান চন্দ্রের মতো অনিমেষভাবে তাকিয়ে থাকি সাড়াজীবনের জন্য। দৃষ্টিগোচর মনে একটি পলকেই তাকে আমার হৃদয়ে ঠাই দিয়ে ফেলেছি।

-- সে আমাকে বলল কি শুধু তাকিয়েই থাকবেন, কিছু বলবেন না?
-- আমি বললাম হুম। হ্যা অবশ্যই ।
-- সে একটু মুচকি হেসে বলল ,কী এরই মধ্যেই স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে গেলেন?
-- না , মানে। ( মনে মনে ভাবছি কী রোমান্টিক ভাব নিয়ে কথা বলছে, কথা শুনে মনে হচ্ছে আগে থেকেই হয়ত তার এরকম অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে)
-- আচ্ছা আমরা আসল কথায় যাই কি বলেন?
-- আমি বললাম - হ্যা অবশ্য।
-- সে বলল - আমি প্রথমেই আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, কেন না.....( কথা শেষ না করতেই)
-- দাড়ান দাড়ান আপনি এরকম কথা বললে আপনার সাথে আমি কোন কথা বলবোনা।
-- কিন্তু ,
-- না কোন কিন্তু নেই । আমি অতীতের সব কথা ভুলে গেছি।
-- আচ্ছা ঠিক আছে।

এরপর অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলো সে ,আমি ও কোন ভাষা খুজে পাচ্ছিনা কি বলবো। কিছুপর তাকে বললাম আচ্ছা আপনাকে নিহাম কি বলেছে?
--Actually নিহাম ভাই আমাকে কি বলেছে, সেটা আপনি ভালোভাবেই জানেন। আর আপনি আমাকে কি বলতে চাইছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি। আসলে আমি কোন কথা ঘুরিয়ে বলা পছন্দ করিনা। তাই সরাসরিই বলছি , আপনি আমাকে পছন্দ করেন আমি জানি,আর আমারো আপনাকে ভাল লেগেছে। তবে আমাদের এই ভালো লাগাটা হয়তো চিরস্থায়ী না হয়ে অস্থায়ী হতে পারে। কেননা আমরা যতটুকুই আপনার সমন্ধে আমি ও আমার সমন্ধে আপনি জানেন ততটুকু যথেষ্ট নয়। তাই আমি চাই আমরা আরো ভালোভাবে যদি উভয়ের সমন্ধে জানি তাহলে হয়তো এতে কোন খাদ থাকবেনা।

-- আপনি ঠিকই বলেছেন,হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সাড়াজীবন কান্নার চেয়ে কিছু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াই ভালো হবে। এরপর সে চলে গেল এবং বলল আপনার কাছ থেকে তিনদিন সময় নিচ্ছি তার পর আপনাকে আমার মনের কথা জানাবো। আমি বললাম ঠিক আছে। এরপর সে আমার সবকিছু জানলো আমিও তার সবকিছু জানলাম। সে বাবা মায়ের একমাত্র কন্না। তার একটি ছোট ভাই আছে। তার বাবা একজন জেল কমিশনার। তবে ফ্যামিলিতে তার মতের বিরোদ্ধে কেউ হস্তক্ষেপ করেনা। সে একটি মেয়ে হিসাবে এবং একজন ছাত্রী হিসাবে খুবই ভাল। দুইদিন পেরিয়ে আজ তিনদিন হলো আমি তার মতামতের অপেক্ষায় আছি। সে তার খালার বাসার ল্যান্ডফোনে কল করে তন্নিকে বলছে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য।

-- তন্নি আমায় ডেকে বলল , ভাইয়া তোমার ফোন।
-- কে করেছে (যদিও বুঝতে পেরেছি রিমা)?
-- রিমা আপ্পু।
-- হ্যালো।
-- I Love You.
-- কেন?
-- কেন মানে?
-- sorry , fun করলাম। আমার মতামত জানতে চাইবেনা ?
-- হ্যা বল।
-- আমি একটি কবিতার তিনটি  লাইন বলবো তা থেকে তুমি বুঝে নিবে আমার মতামত।


মম হৃদয়খানি হয়েছে জানি তব তরে পাগলিনী,
অন্ত:কুঠিরে সাজায়ে তরে রাখিবো চিরদিনী।
তব তরে সঙ্গী আমি তুই হলি মোর সঙ্গিনী। 


-- সে বলল ,
         কী বাণী সুধালে মোর তরে,
         এ মন যে আর রহেনা ঘরে।


-- আমি বললাম প্রথম দিনে এতটা ভালবাসলে যে ভালবাসা ফুরিয়ে যাবার ভয় থাকে।
-- না। এতে করে ভালবাসা ফুরাবেনা বরং আরো বৃদ্ধি পাবে।
-- তাই ?
-- হুম। আমার সারা জীবনের ভালবাসা  এতদিন এই বুকে বন্ধি ছিল । আজ ওরা মুক্ত ডানায় উড়ে বেড়াতে চাইছে।

-- তাহলে আর ওদের বাধাঁ দিওনা। উড়তে দাও ,এরা আমার হৃদয়ের গগণে উড়বে মুক্তভাবে।
-- আর বলো না। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা।
Ñ- আর ধরে রেখোনা । এবার ছেড়ে দেবার সময় এসেছে।
-- রিহাব আমি কি কল্পনা করছি জানো?
-- কি?

-- আমি  কল্পনা করছি তুমি আর আমি পরী হয়ে আকাশে উড়ছি আর সারা পৃথিবীর মানুষ অবাক নয়নে আমাদের দেখছে। এভাবে কয়েক ঘন্টা যাবৎ আমরা ভালবাসার অনুভূতি প্রকাশ করছিলাম।
হঠাৎ লাইন টা কেটে গেল। আমি ভাবতে পারছিনা যে, যা হয়েছে তাকি সত্য না স্বপ্ন। আজকের তারিখটা আমার ভালবাসার স্মৃতি হয়ে থাকবে। সেই দিনটি ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার, ৩ আশ্বিন, ১৯ শাওয়াল। ঠিক এমন সময় আমার বাসায় আরেকটি চিঠি আসলো। এটা একটু ভিন্ন ধরনের চিিিঠ।

এর ১ম দুটো লাইন মাত্র আমি পরলাম। লেখা আছে,
“ তুমি আমার যে হৃদয় আত্মা দখল করে আছো ,তাতে করে আমি যদিও মরে     যাই তবে আমার হৃদয়টা থাকবে তোমার মধ্যে বেঁচে। আমি স্বর্গে গেলে সেই স্বর্গমাঝে তোমার জন্য বিশাল এক তাজমহল তৈরী করে রাখবো যেখানে তোমার আমার প্রণয় হবে,যদিও এ সংসারে তোমাকে পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না! অপেক্ষায় থাকবো তোমার জন্য ......................।

----- অর্পা
আজ আমি আসলেই অনেক চিন্তিত । কে এই অর্পা ? আর পরিচয়ই বা কেন দিচ্ছেনা। একদিকে অভাব আমাকে তাড়া করছে ,অন্যদিকে রিমার ভালবাসা। এখন আবার নতুন করে এই অর্পা। আমি কতটা দিক নিয়ে চিন্তা করবো। পরদিন কলেজে যাবো পকেটে ১০ টাকা আছে। গাড়ীতে ওঠেছি অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর ভাড়া চাইলো ভাড়া দেয়ার জন্য পকেটে হাত দিলাম। কিন্তু টাকাটা নেই,কী লজ্জার কথা। আমি বললাম ভাই আমার টাকাটা হারিয়ে ফেলেছি, সে বলল বাটপারির আর যায়গা পান না বাসের মধ্যে বাটপারির কথা মনে হয়। যত¦সব!

আমি বললাম না ভাই আমি মিথ্যে বলছিনা। সে বলল দুর: মিয়া আর কোন কথাই কইয়েন না। এখনি বাস থেকে নেমে যান। এ বলে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দিল। তারপর বাকিটা পথ হেটে হেটে যাচ্ছিলাম। আমার চোখের জলগুলো বৃষ্টির মতো ঝড়ছিলো। আমার নিয়তি এমন হবে কখনো ভাবিনি,কলেজে গেলাম ক্লাস করছি কিন্তু পেটের ক্ষুধা অসহ্য লাগছে। সকালে কোন কিছু খাওয়া হয় নি। বাসায় গিয়ে কি খাবো তারই চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ স্যার আমাকে বলল, কি ব্যাপার রিহাব তুমি  অমনযোগী কেন? 

আমি বললাম না মানে, ঠিক আছে আজ আমাদের যে লেকচার চলছিল সেটা তুমি পুণ:রালোচনা করবে। এটা আমার আদেশ। আমি পেটের ক্ষিধায় কথা বলতে পারছিলাম না তাই স্যার অনেক খারাপ কথা বললো আমাকে। সবার চোখেই আমি একজন brilliant student,but আমার বর্তমান সময়টা কেউ জানে না। সবাই অনেক অবাক হয়ে গেল, কারন আমি কখনোই এমন ছিলাম না। যাহোক এভাবেই চলছিল অনেকদিন। আমি হারে হারে টের পেয়েছি ক্ষুধার যন্ত্রণা কাকে বলে।

আমি প্রায় পায়ে হেটে মালিবাগ রেলগেইট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত রেল রাস্তা দিয়ে হেটে যাইতাম,আর সেখানকার বস্তির মানুষ গুলোকে দেখতাম কতটা কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করে। ছোট একটি ছেলে যার বয়স ৫/৬ বছর,সে দেখলো একটি ডাস্টবিনে একটি কাগজে কিছু ভাত আছে,সেই ভাতগুলো সেখান থেকে নিয়ে তার মাকে দিল ,তার মা এগুলো পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে দু’জন মিলে খাওয়া শুরু করলো। পেটের ক্ষিধায় বুঝতে চাইলোনা সে ভাতগুলো পঁচা ছিলো। আমি তাকিয়ে ছিলাম তাদের দিকে,আর চোখ থেকে জল ফেলছিলাম।

সেই ছেলেটির মা আমাকে বলল ,গরীবের তামাশা দেখ খাড়াইয়া? যাও এখান থাইক্কা।
আমি বললাম -মাগো তুমি তো গরীব না ,তোমার তো একটি ছেলে আছে যে খাবার এনে খাওয়াতে পারে। কিন্তু মা আমার কপালে তো তাও জোটে না। কিন্তু তিনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। আমি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলাম। মানুষের কাছে খাবার চাইলে মান সম্মান বিসর্জন দিতে হবে তাই যন্ত্রনাকে বুকে চাপা মেরে একটি কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম আর তা হলো শরীর থেকে রক্ত বিক্রি করা। সপ্তাহে একবার শরীর থেকে রক্ত বিক্রি করে ক্ষিধার জ্বালা মিটাতে শুরু করলাম। 

একজন মুসলমান হওয়ার কারনে আত্মহত্যা ও করতে পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে নিজের শরীরের রক্ত খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করলাম। কিছুদিন পর মিরপুরে আমি অর্তিকে দেখতে পেয়ে অন্য দিকে চলে গেলাম কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে আবার আমার সামনেই পরলো। সে আমাকে দেখে অনেক বীপরঃবফ হয়ে গেল।

-- আমি বললাম কি খবর কেমন আছেন?
-- সে বলল আমি তো ভালই আছি কিন্তু তোমার এ অবস্থা কেন? আমি তোমাকে অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও পায়নি।
-- কেন?
-- কেন তুমি জান না?
-- না । আমি জানি না। কি আশ্চর্য্য একদিন তুমি আমাকে দেখলে আর বললে ভালবাসি। এটাকে কি ভালোবাসা বলে। ভালোবাসা কি বাজারের পণ্য যে চাইলেই পেয়ে গেলাম।
-- সে বলল - দেখ রিহাব আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি জান না হাজারো ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছিল কিন্তু কখনোই আমি রাজি হইনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমি যাকে পছন্দ করবো তাকেই ভালবাসবো। আর আজ তোমাকে বলতেই হবে তুমি আমাকে ভালবাস কিনা?

-- আমি খুব বাজে ভাষায় তাকে কিছু কথা বললাম যেন সে আমাকে ভুলে যায়। আমার অভিনয় টা কাজে লাগলো। সে আমাকে ভুল বুঝে চলে গেল আর যাওয়ার সময় বলল -
-- তুমি কখনো সুখী হতে পারবেনা।

আমি মনে মনে বললাম যার সারাটা জীবন কষ্টে কেটেছে তার আর সুখ দিয়ে কি হবে। তুমি সুখি হও। সে দিন জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পরেছিলাম। এক ভদ্র মহিলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন,তিনি আমাকে দেখে বাসায় নিয়ে গেলেন। আমাকে অনেক সেবা করে তিনি সু¯থ করলেন। আমার জ্ঞান ফিরার পর দেখলাম জনশূণ্য একটা বাসায় আমি শুয়ে আছি,দেয়ালে ১০/১১ বছরের একটি অপূর্ব সুন্দর মেয়ের ছবি ঝুলানো। মেয়েটিকে ছবিতে দেখে যেন মনে হল একজন শিল্পি তার মনের মাধুরি মিশিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করেছে। আর মনে হচ্ছে তার পবিত্রতা পুষ্পের ঘ্রাণ হয়ে সুভাষ ছড়িয়ে যায় আমার নাসিকা দেশে। পাশের রুমে একটি মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে গেলাম গিয়ে দেখলাম মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে,আমাকে দেখে কান্না বন্ধ করে দিল।

-- আর বলল - রিহাব তুমি এখন কেমন আছ?
আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তার দিকে, অনেক প্রশ্ন জাগছে একে হলো এত ছোট একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাকছে। আর সে আমার নাম জানলো কি করে?এছাড়া এতক্ষণ শুয়ে কাঁদছিলো এখন আমাকে দেখে আর কাদছেনা কেন? তার পাশে গিয়ে কপালে হাত রাখলাম মনে হচ্ছে জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। আমি তার মাথায় পানি ঢালছিলাম এমন সময় ঐ মহিলা বাসায় আসলো।

এসে আমাকে বলল-
-- একী আপনি ওঠে এসেছেন কেন, আপনি নিজেই তো অসুস্থ ?
-- আমি বললাম আমার কথা বাদদেন আর আপনি আমাকে তুমি করে বললেই খুশি হবো। তবে ওকে বাসায় একা ফেলে রেখে আপনার বাহিরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি।
-- তিনি বললেন কোন উপায় ছিলো না। বাহির থেকে খরচ আনতে হবে ওর জন্য ঔষধ আনতে হবে -- তো আমাকে তো বাহিরে যেতেই হবে।
-- আমি বললাম - কেন আপনার হাজবেন্ড?
-- না , সে আর নেই । এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।

ওনার চোখে জল দেখে বললাম sorry আমার জন্য আপনাকে কাঁদতে হলো।
--  না, না ও কিছু না। যার জীবন শুরু হয়েছে কষ্ট দিয়ে তার আবার সুখ।
-- আমি বললাম আচ্ছা আপনার মেয়ে আমার নাম  নাম জানলো কিভাবে?
-- সে ও অনেক কথা। তোমার  হয়ত কয়েকদিন ধরে খাবার খাওয়া হয় না চল খাবার খাবে।
-- না না ঠিক আছে,পরে খাবো।
-- পরে নয় এখনি আসো।

এ বলে তিনি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। এমন কি আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন। আমি অনেক অবাক হলাম আর মনে মনে ভাবলাম আমার যদি মা থাকতো তাহলে হয়ত আমাকে এভাবে আদর করে খাইয়ে দিত।
--  ওনি আমাকে বলল কি ভাবছ বাবা ?

আমি বললাম না কিছু না। আচ্ছা এবার বলুন আপনার মেয়ে আমাকে কিভাবে চিনে?
-- বাবা শুন্ তাহলে , আমার মেয়ে একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তোমাকে দেখেছিল। সেখানে দেখার পরই সে অনেক উদাসীন হয়ে যায়। বাসায় তার কোন কিছুতে মন বসছিলনা। দিনরাত শুধু তোমায় নিয়ে ভাবতো আর পায়চারী করতো।

-- আমি বললাম কিন্তু........
-- হ্যা বাবা আমি জানি তুমি কি বলবে । তুমি বলবে তার তো বয়স অনেক কম। হ্যা তোমার মতো আমিও প্রথমে অনেক অবাক হয়েছিলাম যে মাত্র দশ / এগারো বছর বয়স আমার এ মেয়েটির। যখনই তাকে এতটা চিন্তিত দেখলাম তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তোর ঘুমাতে যাস না কেন?

-- সে বলল - মা আমার ঘুম আসছেনা।
-- কেন? কি হয়েছে তোর? আমাকে বল না,
-- মা বুঝতে পারছিনা। তবে তোমাকে বলি আজ স্কুল থেকে আসার সময় একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। সে ঘঁটনাটি কি জানো?
-- ওমা আমি কি করে জানবো আমি কি তোর সাথে গিয়েছিলাম নাকি?
-- মা আজ আমি অত্যন্ত সুন্দর স্মার্ট একটি ছেলে দেখেছি। তার চেয়ে সুন্দর ছেলে আমার চোখে পড়ে নি। আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
-- একথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। তার চোখে মুখে অন্য রকম একটু ভালোবাসার ছাপ দেখতে পেলাম যা একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের চোখে দেখা যায়। আমি বললাম ছেলেটি কি তোর সাথে পড়ে?

-- সে হাসতে শুরু করলো এবং অনেকক্ষণ ধরে হাসলো।
-- আমি বললাম হাসছিস কেন?
-- সে বলল হাসবোনা তুমি যে কথা বলো না। সে ছেলে অনার্স এ পড়ে। মেডিকেল কলেজে।
-- আমি বললাম কি বলছিস তুই  তোর কি মাথা ঠিক আছে?
--সে বলল - হ্যা আমার  মাথা , পুরোপুরি ঠিক আছে।
-- তুই তাকে চিনলি কিভাবে? নাম কি তার ?

-- সে বলল আমি স্কুল থেকে আসার পথে ধানমন্ডি প্রিন্স প্লাজার সামনে দেখেছি। আর ওনার এক বন্ধু ওনাকে নাম ধরে ডেকেছিলো । কিন্তু কি নাম ধরে যে ডেকেছিলো ঠিক মনে পরছে না। মা তুমি বলতে পারো? আচ্ছা রাখো আমি মনে করছি এ বলে চিন্তা করতে করতে বারান্দায় চলে গেলো। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পরলো। আমি খুব চিন্তিত হয়ে পরলাম কী হলো মেয়েটার ? রাত যখন দু’টা বাজে সে ওঠে আমায় ডাকাডাকি শুরু করলো ।

মা ,মা ওঠো।
-- কেন?
-- তুমি না সে ছেলেটির নাম জিজ্ঞাসা করলে তার নাম আমার মনে পরেছে। তার নাম ‘রিহাব’।
-- আমি শুধু এর দিকে তাকিয়েই রইলাম। সে নাম মনে করতে পেরে কিযে আনন্দিত হয়েছে বলে বুঝাতে পারবোনা। আমি বললাম নামটা তো সকালে ও বলতে পারতি।

-- তুমি কিযে বলো না মা, সকাল হতে হতে যদি আমার মনে না থাকে! তাই।
-- ভালো করেছিস এবার ঘুমা।
-- মা নামটা তোমার ভালো লাগেনি?
-- আমি ওর দিকে তাকালাম- মা এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

আমি কিছু বললাম না। সে ঘুমিয়ে পরলো । সকালে ঘুুম থেকে জেগেই স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল, আমি ভাবলাম যে মেয়েকে অনেক কিছু বলে স্কুলে পাঠাতে হতো সেই মেয়ে আজ স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল! সেদিন স্কুলে যাওয়ার সময় বারবার রাস্তায় তোমায় খুজছিলো, কিন্তু যাওয়ার সময় দেখতে পায়নি এই বলে তার অনেক মন খারাপ ।

আসার সময় সে তোমাকে দেখতে পেলো দেখতে পেয়ে ভ্যান থেকে নেমে তোমার পিছু পিছু যাওয়া শুরু করলো এবং তোমার বাসার ঠিকানা ভালোভাবে জেনে তারপর বাসায় আসলো। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে আজ এত দেড়ী করলি কেন?

-- সে বলল - জানো মা আজ ওর বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু বাসার ভেতরে যায়নি। শুধু বাসার ঠিকানা নিয়ে চলে এসেছি। আমি তার এসব কাজে অনেক ভয় পাওয়া শুরু করলাম। কি থেকে যেন কি হয়ে যায়? পরদিন দেখলাম সে একটি চিঠি লিখছে। আর তার ভাষা গুলো এতই সুন্দর অভাবনীয়। লিখার পর আমাকে দেখিয়ে বলল মা দেখ তো চিঠিটা কেমন হয়েছে?

-- আমি বললাম খুব ভালো। কিন্তু এ চিঠি তুই কাকে লিখছিস?
-- কেন রিহাব কে।
-- রিহাব কে? এবার কিন্তু অনেক টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এতটুকু একটি মেয়ে কোথাকার কোন ছেলে কে দেখে পাগল হয়ে গেছে।

-- কিসের বাড়াবাড়ি মা ? সে তো আমার বন্ধু। আর আমার বয়স ই বা এত কম কোথায় কেন ছোটরা কি বড়দের বন্ধু হতে পারেনা? তাহলে তুমি আমাকে কেন বারবার বলতে যে তুমি আমার বন্ধু।
-- তখন আর আমি কোন আপত্তি করলাম না। কেননা আমার মেয়ের চোখের পানি কখনো আমি সহ্য করতে পারিনা। তারপরও একটা চিন্তা যে একটা অচেনা ছেলেকে চিঠি পাঠাবে ঠিকানা গোপন করে আর আমি জেনে শুনে এই রকম একটা কাজ করতে পারবো? ঠিক আছে চিঠিটা পোস্ট করে আসি। আমি চিঠিটা পাঠাই।

তারপরের দিন আমি অর্পাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম অর্ধেক পথ যাওয়ার পরই রাস্তায় তোমাকে দেখতে পেলাম। অর্পা বলল মা দেখ দেখ রিহাব । তোমাকে দেখার পর মনে হলো অর্পার দেখায় ভুল ছিল কেননা অর্পার দেয়া বর্ণনার চেয়ে তুমি আরো অনেক সুন্দর। আমি তখন ভাবলাম আমার মেয়ের পছন্দ আসলেই অনেক সুন্দর। আমরা রিক্সায় ছিলাম , রিক্সা যখন কিছুটা সামনে চলে আসলো তখনো সে তোমাকে বারবার পেছনে ফিরে দেখছিলো। আমার মনে হলো সে যদি তোমার সাথে খেলা করতে পারতো তাহলে হয়তো তারচেয়ে বেশী খুশি আর কেউ হতে পারত না।

এমন সময়ই হাসির মধ্যেই হঠাৎ অর্পা চিৎকার করে বলল -
মা আমার মাথাটা কি যেন করছে আর পেট টা ব্যথা করছে।
-- আমি বললাম কি বলছিস ব্যথা কি অনেক বেশী ?
-- হ্যা মা। তখন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলাম , ডাক্তারের চেম্বারের কাছে যেতেই বলে মা এখন আর ব্যথা করছেনা। চল আমরা ফিরে যাই।
-- আমি বিশ্বাস করলাম না কারন সে ইনজেকশন কে অনেক ভয় পেত । আমি ভাবলাম ইনজেকশনের ভয়ে মিথ্যে বলছে।
-- সে বলল - মা আমি সত্য বলছি আমার আর ব্যথা নেই।
-- তখন আমরা বাসায় চলে গেলাম। রাতে সে ঘুমিয়ে পরলো আমি ও । মধ্যরাত্রিতে সে আবার কেঁদে ওঠলো -
-- মা , মাগো আমার পেট ব্যথা করছে।

-- আমি ওকে ব্যথার ট্যাবলেট খাওয়ালাম কিন্তু কোন কাজ হলো না। ব্যথা আরো বেড়ে গেল। তখন আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । এত রাতে যে কোন হসপিটালে নিয়ে যাবো সে ব্যবস্থাও ছিলনা। নিরোপায় হয়ে আল্লাহর কাছে মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাইলাম ,কিছুক্ষণ পরে পেটের ব্যথাটা অনেতটা  কমে গেল। সকালে ঘুম থেকে জেগেই ভাল একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম অর্পাকে ।
-- ডাক্তার তাকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি কোন বাহিরের খাবার খাও?
-- না ।
-- তাহলে কি ময়লা হাতে কোন কিছু খাও ?
-- না।
-- তাহলে তো পেট ব্যথার কোন কারন খোজে পাচ্ছিনা। আচ্ছা যাই হোক আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এই ঔষধগুলো খাওয়ান এবং দেখেন কি অবস্থা।

-- এই ঔষধগুলো খাওয়ার পর প্রায় একমাস ভাল ছিলো। আর এই সময় গুলোতে প্রতিদিন তোমাকে একটা করে চিঠি লিখত। তবে আমি প্রতিবারই অবাক হতাম এত সুন্দর চিঠির ভাষা সে কোথায় পেত! তখনি ভয় হতো অনেক, যে আমার মেয়ে টা বাচবে তো? এরপর দিনদিন আমার মেয়ের চেহেরাটা কেমন যেন মলিন হয়ে যেতে শুরু করলো। এরপর আবারো সেই পেটের ব্যথা শুরু হলো । এখন আর থেমে নয় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে এ পেট ব্যথা। তার এই অবস্থা দেখে তাকে অনেক ভালো একটি হসপিটালে নিয়ে গেলাম। সেখানে ও কোন ডাক্তার তার এ ব্যথার কোন কারন আবিষ্কার করতে পারলো না।

সকল ডাক্তারদের একটাই কথা এরকম দুঃখিত আমরা আগে কখনো দেখিনি। অনেকদিনের পুরানো পেটব্যথার চিকিৎসা করেও আমরা সফল হয়েছি। এটার কোন কারনই আমরা খুজে পাচ্ছিনা। আপনি আরো ভালো ডাক্তার দ্বারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন,তবে ওকে বাচাতে পারবেন বলে আমাদের মনে হয় না। তবুও আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আপনার মেয়ে কে সুস্থ করে দেন।

-- এরপর থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি দেয় নি। মেয়েটি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু তোমাকে চিঠি লিখত আর সে চিঠিগুলো আমি পোষ্ট করতাম। কতযে আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে জল ভাসিয়েছি  তার আর ইয়ত্তা নেই। এতদিন হয়ত সে প্রার্থনার বিনিময়ে অর্পা বেঁচে আছে। তবে তার কষ্ট যে আর আমি সইতে পারছিনা। এখন মন চাইছে তার মৃত্যু কামনা করি। কেননা যে ব্যথায় তার ছোট্ট হৃদয়টাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে তার চেয়ে মৃত্যুটাই মঙ্গল।

রিহাব --  আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা আন্টি । তবে আমি কখনো অর্পাকে ক্ষমা করবোনা কারন তার এত বড় একটা ফরংবধংব থাকা সত্ত্বে ও সে একবারের জন্যও আমায় চিঠিতে লিখেনি। আর আমাকে কেন বাসার ঠিকানাটা দেয় নি।

-- না বাবা তুমি অর্পাকে ভুল বুঝ না। কেননা সে অনেক বার চেয়েছে তোমাকে আমাদের বাসার ঠিকানা দিতে কিন্তু আমিই নিষেদ করেছিলাম । তুমি জানো আজকের সমাজটা কি রকম আমরা এই সামাঝিকতার কারনে বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের মন অনেক কিছুই করতে চায়, বলতে চায় কিন্তু আমরা যে সমাজ সংস্কৃতির দেয়ালে আবদ্ধ। পৃথিবীতে বহু হৃদয় বিদারক ঘটনাই আছে যা আমরা জানি কিন্তু তা কি জানি যে, কি কারনে ঘটলো  এবং কি তার সমাধান? তুমি অপরিচিত একজন মানুষ তোমার মনের অবস্থা অথবা তুমি কেমন তা আমরা জানতাম না। আরো জানাতে ইচ্ছে হয়নি এই জন্য যে অর্পার বাবার মৃত্যুর পর অনেক বিপদে পরেছি কিন্তু এই শহরের মানুষ আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। হাজারো কষ্ট সহ্য করে জীবনের সাথে সার্ভাইব করে বেঁচে আছি।

-- আমি বুঝতে পেরেছি আন্টি আমাকে আর বুঝাতে হবেনা। তবে নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে যে আগে কেন দেখা হলো না অর্পার সাথে অবশ্য দেখা হলেই বা কি হতো আমি কি আর করতে পারতাম ওর জন্য। যাই হোক আন্টি এখন শুধু আল্লাহই পারে তাকে আপনার কোলে সুস্থ্য করে ফিরিয়ে দিতে। আমি অর্পার জন্য দোয়া করছি আপনি ওর জন্য দোয়া করবেন। আর আমি শুনেছি মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য উত্তম। আজ আমাকে বিধায় দেন আন্টি পরে আবার আসবো। (একটা কথা স্বীকার না করে পারছিনা তা হলো মানুষের হায়াত মওত রিযিক সবকিছুই তিনি অলৌকিক ভাবে ব্যবস্থা করে থাকেন। যেমন আমার অনিশ্চিত ভাগ্যে তিনি কিভাবে রিযিক দিয়ে রেখেছেন,তা আসলেই ভাববার বিষয়।)

এরপর আমার বাসায় গেলাম। বাসায় যাওয়ার পর দরজা খোলার সময় রিমার গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি তন্নি কে ডাকার বান করে ওদের দরজায় শহড়পশ করলাম। ভাগ্যক্রমে রিমা ই দরজা খুলল।

আমি বললাম কেমন আছো? সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি বুঝতে পারছি আমার প্রতি অনেক রেগে আছে। সে কোন কথা না বলে দরজা বন্ধ করে চলে গেল। আমি অনেক ক্লান্ত তাই আমার বাসায় চলে আসলাম ।

-- তাকে তার খালা জিজ্ঞাসা করলো - কে শহড়পশ করেছে রিমা?
-- সে একটু চেচিয়ে বলল - কেউ না।
-- ওনি বললেন - এখন এর মধ্যে এখন তোর হলো কি? একটু আগেই না হেসে কথা বললি। কি জানি মা , আজ কালকের মেয়েদের মনের যে কি অব¯থা , কিছুই বুঝিনা। সে আর কোন কথাই বললো না। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো। দুই ঘন্টা পর তার খালা বাহিরে গেল আর এ সুযোগে রিমা আমার বাসায় আসলো।

-- আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার তখন দরজা বন্ধ করে দিলে কেন? তার মুখে কোন কথা নেই। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে সারা শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে অনেক অভিমান নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি ওকে বসতে বললাম, সে বসলো না। দেয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে দাড়িয়ে কাদতে শুরু করল। আমি এই প্রথম তাকে কাঁদতে দেখছি। আমি বললাম রিমা কাঁদলে তোমাকে দারোন লাগে। সে আমার দিকে তাকালো একদম একটি অসহায় মেয়ের মতো। আমি তার মাথায় হাত রাখলাম, সাথে সাথে সে আমার হাতটা ঝেরে ফেলে দিলো।

-- আর বলল আমাকে স্পর্শ করবেনা, আমি তোমার কি হই? তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
-- আমি বললাম আছে তো।
--  (কাদো কাদো ভাবে) না নেই। তুমি আমার সাথে কোন কথা বলবেনা।
-- বলবো অবশ্যই বলবো ।
-- কেন?
-- তুমি আমার জীবন ,আমার আত্মা । আত্মা ছাড়া শরীর কে যেমন ভাবা যায় না তেমনি তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারবো না।

-- তাহলে এতো দিন কিভাবে ছিলে ? কাকে আবার নতুন ভাবে আত্মা করে নিয়ে ছিলে? তোমরা ছেলেরা সব পারো অভিনয় করতে তোমাদের একটুও কষ্ট হয়না।
-- আমি কি বলে রিমাকে শান্ত করবো বুঝতে পারছিনা। তারপরও বললাম রিমা একটু শান্ত হও । বিশ্বাস করো আমার একটা সমস্যা হয়েছিলো সেজন্য তোমার সাথে এতদিন দেখা করতে বা কথা বলতে পারিনি।

-- সমস্যা ? পৃথিবীটাই তো একটা সমস্যা। এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে আর কোন সমস্যা থাকবেনা।
-- আমি বললাম - তুমি ঠিকই বলেছ পৃথিবীটাই বড় সমস্যা তাই চেষ্টা করছি চলে যেতে যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি ততই মঙ্গল।

তখন সে আমার বুকে মারতে শুরু করলো আর বললো -
-- পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবি ,না ? তাহলে আমাকে ভালবাসলি কেন? এত সহজেই তোকে আমি যেতে দেব? যেখানে যাবি আমাকে সাথে নিয়েই যেতে হবে।
-- আমি বললাম ওহ ব্যথা পাই ,ছাড়ো আমাকে । ঠিক আছে যেখানে যাই তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো হয়েছে তো?

পূর্ণিমা রাত সুন্দর হয় চাঁদের আলোর জন্য ঐ চাঁদ ছাড়া রাতটা অপূর্ণ লাগে। ফুলের বাগানে ফুল না থাকলে সে বাগান এতটা সুভা পায়না। তেমনি ভালবাসার পর ভালবাসার মানুষকে দেখতে না পেলে মনের কথা না বলতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই মন অনেক খারাপ থাকে। হৃদয়ে পোষে রাখা অভিমানগুলো বাড়তে বাড়তে বিশাল আকার ধারন করে। আর যখনি প্রিয় মানুষটিকে সামনে দেখতে পায় তখন সে যেন পৃথিবীর সকল সুখ তার হাতের মুঠোয় খুজে পায়। মনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সকল কথা বলতে চায় তার ব্যকুল মন। আর দুটি হৃদয় একহয়ে অন্তরের অন্তস্থল থেকে হৃদয়ের সকল ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে মিশে যেতে চায় দু’টিআপন অস্তিত্বে।

ঠিক  তেমনি রিমা রিহাব কে এতদিন পর কাছে পেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেনা । তার সমস্ত ভালোবাসা আবেগ অনুভূতি দিয়ে রিহাবকে জড়িয়ে ধরে ,ভুলেই গেছে সে অবিবাহিত । রিমা যখন রিহাবকে বুকে জড়ালো তখন রিহাব অজ্ঞান হওয়ার ভান করে বিছানায় পড়লো ।

-- রিমা উত্তেজিত হয়ে বলল - রিহাব ,রিহাব কি হয়েছে তোমার ?
রিমা কাদতে শুরু করলো এবং কি করবে বুঝতে পারছিলনা। তাড়াহুড়া করে বালতি দিয়ে পানি  এনে রিহাবের উপর সব পানি ঢেলে দিল। রিহাব লাফ দিয়ে ওঠে গেল এবং
-- বলল হায় হায় একি করছো তুমি ।
-- রিমা বুঝতে পারলো ওর কিছুই হয়নি।

তখন সে বাসা থেকে রাগ করে বেড়িয়ে যাচ্ছিল,
-- সে মুুহুর্তে রিহাব তার হাত ধরলো তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলো-রিমা আমি শুধুই তোমাকে ভালোবাসি আর ভালবাসার মানে নুঙরামী না পবিত্রতা। আমি আর দশজন প্রেমিকদের মতো হতে চাই না যারা তাদের প্রেমিকার মন রাখতে গিয়ে ভালবাসা নামক বস্তুটিকে অপবিত্র করে ফেলে। আমার কাছে ভালবাসা কথাটির অনেক মূল্য আছে। তোমার কাছে আমার অনুরোধ তুমি আমাকে এর জন্য ভুল বুঝনা।
--  ঠিক আছে, কিন্তু এক শর্তে।
কি শর্তে?

আগামিকাল আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।
-- কোথায় ?
-- তুমি যেখানে নিয়ে যাও সেখানেই যাবো ।
--  যদি নরকে নিয়ে যাই ?
-- কোন সমস্যা নেই আমি হাসতে হাসতে নরকে চলে যাবো ।
-- ঠিক আছে নিয়ে যাবো ।
-- কোথায় নরকে?
-- আরে নাহ, স্বর্গে। কেন এখনি ভয় পেয়ে গেলে?

-- কাকে কি বলছ রিহাব, ভয়? হাসালে , তুমি কি জানো আমার ভালবাসার কাছে নরকের আগুন কিছুই না।
-- কি বলছ নরকের আগুনের চেয়ে বেশী উত্তাপ তোমার ভালবাসায়? তাহলে তো তোমাকে আর ভালবাসা যাবেনা।
-- রিহাব সব কিছু নিয়ে ভঁহ করো নঁঃ আমার ভালবাসাকে নিয়ে নয়।
-- ওরে বাবা তুমি দেখি একদম ংবৎরড়ঁং হয়ে গেলে। এমন সময় রিমার খালা বাহির থেকে বাসায় আসলো বাসায় এসে দেখে রিমা বাসায় নেই। এরপর তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পরলেন ,কোথায় গেল মেয়েটা? কোথাও খুজে না পেয়ে রিমাদের বাসায় ফোন করল সেখানে বলল - না রিমা তো আসেনি। তখন আমার বাসায় তিনি শহড়পশ করলেন আমি দরজা খুললাম। উনি আমাকে বলছিলেন বাবা আমার বোনের মেয়েটাকে বাসায় রেখে..........। এমন সময় রিমাকে দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন তুই এখানে কি করছিস? চল বাসায় চল। আমার সাথে কোন কথা বললেন না।

রিমা যাচ্ছিল আর পেছন ফিরে বারবার আমায় দেখছিল। আমিও দেখছিলাম তাকে মনে হচ্ছিল সে যেন চিরদিনের জন্য আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে। তারপর রিমাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে তার খালা আর বললেন রিমা সত্য করে একটা কথা বলবি?

-- কেন আমি কি কখনো মিথ্যে কথা বলেছি?
-- না , সেজন্যই তোকে এতটা বিশ্বাস করি।
-- বল কি জানতে চাও?
-- রিহাবের সাথে তোর কি কোন সম্পর্ক আছে?
-- কোন বাহানা করবো না ; সরাসরিই বলবো। হ্যা।
-- কি রকম?
-- আমি তাকে ভালবাসি।
-- বলিস কি তোর বাবা মা জানে ?
-- না কেউ জানে না।

-- তুই রিহাবের সমন্ধে সব জানিস?
-- না। তবে রিহাব কে জানি।
-- তুই ভুল করছিস তোর বাবা-মা কখনোই এ সম্পর্ক মেনে নিবে না।

স¤পর্ক! সম্পর্ক তার নিজের মতোই গড়ে ওঠে, এখানে কে তা মেনে নিল আর কে মানলনা তা দেখার অপেক্ষা রাখেনা। মা-বাবা আমাদের দুইজনকে আলাদা করে ফেলতে পারে কিন্তু আমাদের সম্পর্ককে কোন দিনই আলাদা করতে পারবেনা। পানি কেটে যেমন ভাগ করা যায় না ; তেমনি আমাদের দু’জনের মনকেও কেউ আলাদা করতে পারবেনা। আমরা দুইজনকে যত দূরেই থাকি না কেন আমাদের ভালবাসা থাকবে একসঙ্গে একটি মোহনার মতো। আর বাবা-মায়ের কাছেতো কখনো কোন কিছু চাইনি আজ আমার একটি চাওয়া যদি না দিতে পারে তাহলে আমার আর কিছু চাওয়ার থাকবেনা। তবে হ্যা আমি যত ব্যথাই পাইনা কেন তাদের মনে কোন কষ্ট দেব না।
-- তার খালা মনে মনে বলছে এমন মেয়ে আসলেই মা-বাবার গর্ব। আচ্ছা দেখি তোর জন্য কি করতে পারি।

-- কিছুই করতে হবেনা।
-- মানে ?
-- আমার মা-বাবাকে তুমি শুধু আমার ভালবাসার কথাই বলো অন্য কিছু বলতে হবে না।
-- খালা এখন আমি বাসায় চলে যাবো ।
-- ঠিক আছে তাহলে যা।

-- রিমা বাসায় চলে গেল। ও দিকে রিমার বাড়িতে তাকে নিয়ে সবাই চিন্তা করছে । রিমার খালা রিমাদের বাসায় আবার ফোন দিল আর বলল রিমা কে পেয়েছি ,আমাদের পাশের ফ্লাটে ছিল।
-- রিমার আম্মু বলল - পাশের ফ্লাটে কার বাসায় গিয়েছিল?
-- রিহাবের বাসায় ।
-- রিহাব কে ?
-- তুই আবার রেগে যাবি নাতো ?
-- না । রাগবোনা বলো।
-- রিমা ওকে ভালবাসে। আর এদের সম্পর্কটা অনেক গভীর। তুমি কি আগে থেকেই এসব জানতে? তাহলে আগে বলনি কেন?

-- না আমি আজই জানতে পেরেছি।
-- এখন কোথায় সে?
-- তোদের বাসায় গিয়েছে ।
-- কোথায় এখনো তো আসেনি!
-- হয়ত রাস্তায় আছে পৌছে যাবে চিন্তা করিস না।
তখনিই রিমা বাসায় পৌছল।
-- রাতে খাবার খাওয়ার পর রিমার আম্মু রিমাকে জিজ্ঞাসা করলো - আমি যে কথা শুনেছি তাকি সত্যি?
-- তুমি কি শুনেছো আমি জানি না তবে যা-ই শুনেছো হয়ত সত্যই শুনেছো॥
-- তোদের সম্পর্ক কতদিনের ?

-- সম্পর্ক বেশী দিনের না হলেও আমাদের ভালবাসা জনম জনমের তুলনায় বেশী। যা ছিন্ন করতে চাইলেও কেউ ছিন্ন করতে পারবেনা।
-- রিহাব কি করে?
-- লেখাপড়া ।
-- বাবা-মা ?
-- পৃথিবীতে তার কেউ নেই।
-- তার আর্থিক আবস্থা?
-- একটা ছোট বাসায় ভাড়া  থাকে, এছাড়া আর কিছুই নেই।
-- তাহলে?
-- তাহলে কি?

-- তুই কি মনে করিস তোর বাবা এরকম একটা সম্পর্ক মেনে নিবে?
-- না।
-- না মানে?
-- না মানে না। মেনে নিবেনা।
-- তাহলে কি করবি?
-- ভয় নেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো না।
-- রিমার আম্মু অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরে বলল - যা করবি বোঝে শুনে করিস। একথা বলে চলে গেল।

প্রথম রাত্রিতেই গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয়ে গেল রিমা। তাকে দেখে কেউ বলবেনা  যে তার মধ্যে কোন রকমের চিন্তা বিরাজ করছে। তার একটাই বিশ্বাস যে আমি যে কোন বিনিময়ে রিহাব কে পাবো। আর যদি না ও পাই তবে এ মনের মধ্যে তার অস্তিত্ব, তার ভালবাসা, তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো সাড়া জীবন। আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবো যেন মৃত্যুর পর তাকে আমি পাই। সেখানে তো বাধাঁ দেয়ার কেউ থাকবেনা, থাকবেনা কোন ধনী গরীবের বেদাবেদ। পরদিন রিমার মা তার বাবাকে সব কিছু খুলে বললো।

-- তার বাবা তাকে ডেকে বলল - রিমা তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
-- তুমি কি বলবে আমি জানি।
-- না
-- না মানে?
-- তুমি জানো না। আমি অনেকদিন আগে থেকেই তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি।
-- ভালো কথা।
-- জিজ্ঞাসা করবেনা কার সাথে?
--  একটা মূর্তির সাথে বিয়ে দিলেও আমার কোন অভিযোগ নেই।

-- ওর বাবা ভাবছে , এটা কেমন যেন অদ্ভূত টাইপের কথা মনে হচ্ছে। ওর মা বলল একজনকে ভালবাসে ; তবে সে বলছে যে কারো সাথে বিয়ে দিতে পারো কোন অভিযোগ নেই। এরপর রিমার বাবা রিমার মায়ের দিকে তাকালো। রিমার মা ও কথাটার কোন অর্থ খুজে পেল না। তখন তার মা বলল তাহলে এ বিয়েতে তুই রাজি?

-- মা কবে কোথায় শুনেছো যে কারো মুখের খাবার কেড়ে নিলে সে খুশিতে নাচতে থাকে ?
-- তখন তার মা বলল তোর কথা তো কোন কিছুই বুঝতে।

-- শোন মা তোমরা আমাকে ছোট থেকে লালন-পালন করে এত বড় করেছো এছাড়াও তুমি আমাকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করেছো। এখন তোমাদের কথা ভুলে গিয়ে আমি অন্য কারো সাথে ব্যক্তিগত ভাবে সম্পর্ক করলে তোমাদের আসির্বাদ আমি কখনোই পাবোনা। সাড়াজীবন আমাকে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। আর অন্যদিকে রিহাব আমাকে এতটাই ভালবাসে যে আমাকে না পেলে সাথে সাথে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।

আর আমি যদিও অন্য একজনকে বিয়ে করি তাহলে তার সাথে সম্পর্ক হবে আমার শরীরের , মনের
সম্পর্ক কখনোই হবেনা । কেননা এ মনটা শুধুই রিহাবের হয়ে গেছে। এখানে আর কারো স্থান হবেনা। আমার  মুখ কথা বলবে সে লোকের সাথে আর মন কথা বলবে রিহাবের সাথে, বাস্তবে ভালবাসার অভিনয় করবো তার সাথে আর তখন কল্পনায় ভালবাসবো রিহাব কে। জাগড়নে আমি অন্যের ধরনী কিন্তু স্বপ্নের ভুবণে থাকবে শুধুই রিহাব। একথা বলে চলে গেল রিমা।

-- রিমার বাবা তার মাকে বলল - আমার মেয়ের মধ্যে এত ভালবাসা কোন পৃথিবী থেকে আসলো , আমি অবাক না হয়ে পারছিনা যে এটা আমার মেয়ে। তুমি রিহাব কে দেখে এসো।
-- ঠিক আছে।
-- পরদিন রিমার মা রিহাবের বাসায় গেল,রিহাব দরজা খুলে ওনাকে সালাম দিল এবং বলল আপনাকে তো চিনতে পারলাম না!
-- আমি রিমার আম্মু।
-- ও আন্টি , আসেন বাসায় আসেন। তবে আমার বাসায় তো আপনাকে ভালভাবে বসতে দিতে ও পারবোনা।
-- তিনি হেসে বললেন আমি তো তোমার বাসায় সবসময় থাকবোনা। যে সবসময় থাকবে তাকে কোথায় রাখবে?

-- দেখেন মা আমার কিছুই নেই। আপনার মেয়েকে ভালবাসা ছাড়া কিছুই দিতে পারবোনা। আর এ অবস্থায় আপনাদের কাছে কি করে রিমাকে চাইবো তাও জানি না।
-- বাবা তুমি আমাকে মা বলে ডাকছো, আমার খুবই ভালো লাগছে। কিন্তু তুমি একটু আমার যায়গা থেকে চিন্তা করে দেখ তোমার মন কি বলে। তুমি মা হয়ে কি মেয়ে কে এমন একটা পরিস্থিতিতে পাঠাতে পারবে?

-- রিহাবের মুখে আর কোন কথা সরলোনা মাথা নিচু করে নিরব হয়ে বসে রইলো। তখন ওনি বললেন তুমি চিন্তা করোনা বাবা আমি দেখি তোমাদের জন্য কি করতে পারি। এ বলে বাসায় চলে গেলেন। দু-চোখের জল ফেলা ছাড়া রিহাবের আর কিছুই করার নেই। মনে মনে ভাবছে ,যে বাগদানে আবদ্ধ হয়ে ভালবাসার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলাম ,নিজের মনে একটি বারের জন্যও এ পরিণতির কথা ভাবা হয় নি কখনো। আকাঙ্খিত নিয়তির কাছে আজ আমি নিতান্তই বড় হতভাগ্য কেননা হৃদয় মাঝে যে  ভালবাসাকে লালন করেছি সে ভালবাসা আজ অমানিষার আধাঁরে ঢেকে গেছে , আর কোন স্বপ্ন বা বাসনা এ মনে স্থান পায় না ।

শত কষ্ট শত আর্তনাদ ক্ষিধার জ্বালা ও নিদ্রাহীনতার মাঝেও বেঁচে থাকার যে সাধ জেগেছিল মনে সে সাধ আজ মন থেকে মনান্তর হয়ে গেছে। আর কোন অভিপ্রায় নেই। এখন বুঝি আমার মহাপ্রয়াণই  মঙ্গল। অধীর আগ্রহে বসে আছি সেই অন্তিমযাত্রার অপেক্ষায়।



দিবস শেষে রবির অবসান।
নিড়ে ফেরা,সন্ধাক্ষণে পাখির কলতান।
গহনে আধার নামিছে বিষণ ,
গগ্ন মাঝে আলোর আহ্বান।

ঘন কালোমেঘ দূরের আকাশে
চন্দ্রোপরে কালো ধোয়া ভাসে।
হামেশা নিরব আনমনা মনে,
নির্জনে ভাবি জীবনে শান্তি কিষে,কিষে পরিত্রাণ।


কি ছিল চাওয়া হয়েছে কি পাওয়া,
ভাবিছি যে তারে পাবো কিনা পাবো
কত সংশয় , কতখানি ভয়।
বক্ষ কাপিছে বিষণ,ক্লান্ত হৃদয়
অত:পর , পেয়েছে যে মন সে সুখের সন্ধান?

কত প্রেম আর, কত অভিমান।
কত অভাব আর, কত পিছুটান।
আশানুরুপ সে ভালবাসা,পেল -
দুটি মন আজ একাকার হল ,হল একটি প্রাণ।

মম সুর তব গানের বীণায়।
মম বিচরণ তব আঙ্গিনায়।
মম হৃদয় সপিছি তোর লাগি ,
নিদ্রাহীন নিশী তর তরে জাগি।
তব মাঝে, হারিয়েছি যেন এ দেহ মনঃপ্রাণ।

রোদেলাকাশে হঠাৎ কালোমেঘ -
সুখ সুর মাঝে বেদনার আবেগ।
প্লাবিত হল মম হৃদয় তরে
ভাসালো সবি এক নিমেষ ঝড়ে।
সুখ নিয়ৈ বিধি ,মোরে আজ বুঝি দুঃখ করিলা দান।

আখিঁ পানে বরষা ঝরঝর ঝরে,
সুপÍ বদনখানি মনে করে।
যে রুপ করেছে পাগল আমায়
কাদাছে মোরে সে , উতলা করে  অসীম যাতনায়।
তাইতো বিবাগী হয়ে তার লাগি। ভুলে আত্মসম্মান।

মন্দ ললাটে ,নাহি জোটে তারে
তার, কোন দোষ নেই- দোষী আপনারে।
সুখের তরেতে মোর নাহি স্থান
কারন আমি - হয়ত ধরাতে নহে পুন্যবান।

মনে করি যদি সে মুখের হাসি,
ঝরায় দু’নয়নে অশ্রু রাশি-রাশি।
স্মরি কত সুর, আর কত গান
যা ছিল - তার আমার প্রণয়োপাখ্যান।


কিছুক্ষণ পর রিমা তার খালার বাসায় ফোন দিল। তখন তন্নি ফোনটা নিয়ে আমার বাসায় আসলো, এসে আমাকে বলল কি দুলাভাই কেমন আছেন ? আমার মনটা খারাপ তারপরও ওর কথাটা শুনে অবাক হয়ে তারদিকে তাকালাম। আর বললাম একটু বেশী হয়ে যাচ্ছেনা?
-- না মোটেও বেশী হচ্ছেনা। এই নেন রিমা আপ্পুর ফোন।

-- তখন আমি ফোনটা নিলাম। হ্যালো ............রিমা। রিমা কোন কথা বলছিল না আমি বললাম , রিমা ঢ়ষবধংব একটু কথা বলো। তখন সে কাঁদতে শুরু করলো। আমি বললাম রিমা আমার দুর্বলতার কারনে তোমার চোখে জল যা কখনোই আশা করিনি। আমার কষ্টটা ধোকে ধোকে আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি নিজে কষ্ট পেতাম তাতে কোন অসুবিধা ছিলনা। কিন্তু তোমার কষ্টের জন্য আমি নিজেই দায়ী।

-- তখন রিমা চিৎকার করে বলল , চুপ কর তুমি আর  একটা কথাও বলবেনা। অনেক বলেছ আর বলোনা তোমার কিষের দুর্বলতা তুমি লেখাপড়া করছো। তোমার মা-বাবা বেঁচে থাকলে কি তোমার কোন কিছুর অভাব হতো? সেটাতে তো তোমার কোন দোষ নেই। তুমি নিজেকে এত ছোট ভাবছো কেন? আর আমার কোনই কষ্ট নেই আমি তোমার রবো সারাটি জনম যুগ যুগান্তর ধরে। পরপারেও তুমি আমার হবে।

আমি বললাম রিমা তুমি আমাকে এতো ভালবেস না। আমি সে ভালবাসার মর্যাদা দিতে পারবোনা কখনো।
তুমি আমাকে কোন মর্যাদা দিতে হবেনা। যা পেয়েছি তাতেই অনেক ,তুমি শুধু আমাকে এতটুকু সুযোগ দিও যেন তোমাকে আমি আমার সমস্ত ভালবাসা দিয়ে তোমার মনের সকল কষ্ট দূর করে দিতে পারি। তোমার কষ্টগুলোকে ভাগাভাগি করে নেবো আমি।

-- একি বলছো আমার প্রাণ ,আমার সবইতো তোমার জন্য আমি তোমাকে এখন কি সুযোগ করে দেব ? তোমাকে তো অনেক আগেই আমার সর্বস্ব সপে দিয়েছি। তুমি আমার হৃদয়ের প্রতিমূর্তি ,আমার  দুনয়ন,তুমি আমার বেঁচে থাকা। তুমি বিনা এ হৃদয় কখনোই বেঁচে থাকতে পারেনা। আচ্ছা রিমা তুমি আমাকে কখনো ভুলে যাবেনা তো?
-- এটা কেমন প্রশ্ন হলো ?

-- না। এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম। আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। রিমা অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো। আমি বললাম রিমা কথা বলছো না কেন? ঢ়ষবধংব আমি তো বললাম আমি মজা করেছি।
-- তোমার দোহাই লাগে আমার ভালবাসা নিয়ে কখনো মজা করোনা। এই কথাটা আমাকে অনেক বেশী কষ্ট দেয়।

-- ঠিক আছে যাদু আর কখনো তোমাকে এসব কথা বলবোনা।
-- রিমা বলল আচ্ছা তোমার কি ফুল সবচেয়ে বেশী প্রিয়।
-- আমি বললাম - সন্ধামালতী।
-- পৃথিবীতে এতো ফুল থাকতে তোমার ‘ সন্ধামালতী’ কেন এতো প্রিয়?
-- কারন আমি যেদিন প্রকৃতভাবে তোমাকে ভালবেসেছি সেদিন সন্ধাবেলায় ঘুমে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম । আর সেই স্বপ্নে তোমাকে অনেকগুলো সন্ধামালতী ফুল তোমাকে দিয়েছিলাম। তাই আমার সন্ধা মালতী ফুল  এতো প্রিয়।

-- তাহলে এক কাজ করি আমার নাম পরিবর্তন করে ‘ সন্ধামালতী রাখি।
-- তা অবশ্য খারাপ হয়না তবে,
-- তবে কি ?
-- তবে এই নামটা আমার কাছ থেকে তোমাকে আলাদা করে ফেলছে। যদি এ নামের প্রথম অংশটা আমার নাম হয় আর শেষটা তোমার নাম তাহলে কেমন হয়?
-- তার মানে তোমার নাম সন্ধা আর আমার নাম মালতী?
-- হ্যা।
-- তাহলে তো অনেক মজা হয়। সন্ধার মালতী = সন্ধামালতী। ঠিইক আছে , এখন থেকে তুমি আমাকে মালতী বলে ডাকবে আর আমি তোমাকে সন্ধা বলে ডাকবো। আচ্ছা সন্ধা তোমার কি আলো পছন্দ না অন্ধকার?

-- অন্ধকার।
-- কেন ? সবার তো আলো পছন্দ তুমি হঠাৎ অন্ধকার পছন্দ করছো কেন?
সবার হয়তো অন্য কোন আলো নেই , সে জন্য আলোকে পছন্দ করে। আর আমার যে আলো আছে,তা অন্ধকার কে হার মানিয়ে আমার সারা ভুবনকে আলোকিত করে রাখে। সেটা কি জানো?
-- কি ই ?
-- সেটা তোমার রুপের আলো।

-- কিন্তু আমিতো দেখতে এত সুন্দর না। তুমি তোমার রুপ সমন্ধে কিছুই জানোনা জানি আমি। আমি তোমার উপরের সৌন্দর্য্য দেখে তোমাকে ভালবাসি নি। মালতী তোমার মনের সৌন্দর্য অনুভব করে তোমাকে ভালবেসেছি। আর আমার ভালবাসা স্বার্থক। আমার মনের সাথে তোমার মনের কোন অংশে অমিল নেই। আমার মনের ব্যথা তুমি বুঝতে পারো আর তোমার ব্যথা আমি। পৃথিবীতে সত্যিকারের প্রেমিক অনেক থাকতে পারে কিন্তু তুমি সবার ঊর্ধেŸ। তোমার চেয়ে বড় প্রেমিক আর কেউ হতেই পারেনা।

-- এত বেশী বলো না মালতী ,তাহলে তাদের অসম্মান করা হবে।
-- কখনো না। তুমি নিঃসন্দেহে একজন শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। আমি তোমার সাথে আজ দেখা করবো তুমি কোথায় আসবে বলো।
-- আজ?
-- হ্যা।  আমি রমনায় থাকবো তুমি ৩টা বাজে সেখানে আসবে। আসবে তো?
-- ও...ম। আচ্ছা আসবো। রিমার সব কথা রিমার আম্মু আড়াল থেকে শুনলো।
-- যখন রিমা বাসা থেকে বের হবে তখন তার মা জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাবি?
-- রিহাবের সাথে দেখা করতে যাবো। যা তবে বেশী দেড়ি করিস না।
-- আচ্ছা মা। মা তুমি আমাকে বাধাঁ দিতে চাইলে না কেন?
-- তাতে কি লাভ হতো ? তোর মনকে কি বাধাঁ দিয়ে রাখতে পারতাম ?
-- কিন্তু মা আমি কি খারাপ কাজের জন্যই যাচ্ছি না ভালকাজের জন্য যাচ্ছি তা তো তুমি জান না আর আমার বয়স কম আমি তো ভুল ও করতে পারি , রিহাব তো আমার ক্ষতিও করতে পারে।

তখন রিমার আম্মু রিমাকে একটা চড় মারলো। রিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো - তিনি বললেন যারা প্রকৃতপক্ষে ভালবাসে তারা কখনো খারাপ হতে পারেনা আর কারো ক্ষতিও করতে পারেনা। যার সাথে এতদিন ধরে প্রেম করো তার সমন্ধে এমন কথা কিভাবে বলতে পারো তুমি। তোমার কাছে রিহাবকে অপবিত্র মনে হতে পারে কিন্তু রিহাবের কাছে তোমার ভালবাসা খুবই পবিত্র।

-- সে হেসে বলল কচুঁ। পবিত্র না ছাই সে খুব খারাপ।
-- চুপ কর আর একটা কথা ও বলবি না। বাজে মেয়ে।
-- রিমা বলছে মা তুমি কি ঠিক আছো?
-- মানে কি?
-- মানে তুমি রিহাবের হয়ে আমাকে বকছ আমিতো বুঝতে পারছিনা। আমি রিহাবের বাসায় গিয়েছিলাম তার সাথে কথা বলেছি তাকে আমার খুব ভাল লেগেছে।
-- বল কি মা তোমাকে ও বস করে ফেলেছে ? সে তো সাঙ্গাতিক। আমি আরো তাকে না বলে দিতে যাচ্ছিলাম।

-- কি বলছিস ? তুই না বলার কে?
-- ওমা আমি প্রেম করলাম আর আমি না বলতে পারবোনা।
-- না। কারন আমি রিহাব কে পছšদ করেছি তার সাথেই তোর বিয়ে দেবো।
-- মা সত্যি বলছো ?
-- হ্যা।
-- ও মা, তুমি এতো ভাল। আমার মনে হয় আজ আমি আমার মাকে দেখছিনা একজন ফেরেস্তাকে দেখছি। হয়েছে হয়েছে এত প্রশংসা করতে হবেনা। এতক্ষণ তো রিহাবের দুর্নাম বললে এখন এতো খুশি হচ্ছ কেন?
-- মা তোমার মুখে এ মধুর কথাটা শুনবো বলে।
-- খুব চালাক হয়ে গেছ না?
-- ‘ হু ’। আচ্ছা মা আমি যাই।
-- যা মা ,রিহাব হয়তো তোর জন্যে অনেক চিন্তা করছে। তখন ৩:১৫ বাজে।  রিমা এসে দেখলো আমি বসে আছি।
-- ংড়ৎৎু,ংড়ৎৎু, বীঃৎবসষু ংড়ৎৎু -আমি অনেক দেড়ি করে ফেলেছি। তুমি হয়ত অনেক আগে এসে বসে আছো না?
-- আমি তার সোনাবরণ চেহেরাটা দেখছিলাম এই প্রথম তাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখছি। আমার মনে হচ্ছে এ কোন পৃথিবীর মানবী হতে পারেনা ,সে স্বয়ন আকাশের পরী । যে পরীর কথা প্রবীনদের মুখে শুনেছি; গল্পের মাঝে পড়েছি ,  অদেখা সে অবিশ্বাস্য প্রাণীটি এত সুন্দর হতে পারে কখনোই ভাবা যায় না। সাদা রঙের একটা শাড়ি আর মাথার লম্বা চুল গুলো নদীর ঢেউয়ের মতো বাতাসে দুল খাচ্ছে। আর সামান্য কিছু চুল তার মুখের সামনে দিয়ে গালকে স্পর্শ করছে ,আমার ইচ্ছে করছে ফু দিয়ে সেই চুলগুলো উড়িয়ে দেই।

কপালে কালো একটা টিপ আর সদ্যফোটা গোলাপের মতো একটা হাসি তার মুখে।
-- সে বলল - ওগো আমার প্রাণসন্ধা তুমি কি আমার সাথে অভিমান করেছো?
-- আমি বললাম - এত ভড়ৎসধষরঃু দেখাচ্ছো কেন? ভালবাসায় এত ভড়ৎসধষরঃু থাকলে সে ভালবাসা পরিপূর্ণতা পায় না। আমার অনুরোধ তোমার কাছে এমন করে আমাকে আর কখনো বলবেনা।
-- ঠিক আছে আর কখনোই বলবোনা ঢ়ৎড়সরংব.
-- আজ তোমাকে এমন একটা মজার সংবাদ শুনাবো যা তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারনি।
-- সেটা কি?

-- সেই মজার কথাটা বলার আগেই যে একটা দুঃসংবাদ শুনতে হবে তা কে জানিত। আর কতকাল ধরে সুখের মাঝে ব্যথার সুর বীণা হয়ে বাজবে? আর এটা কোন অস্বাভাবিক কথাও না। কেননা পৃথিবী সৃষ্টিলগ্নে বিধাতা দুইটা কথা চিরন্তন সত্য হিসাবে মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছেন। সেটা হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থাৎ ভালো ও মন্দ। ভালোর পাশাপাশি মন্দ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। রিমা যখন তার সুখের কথাটি বলতে চাইলো।

-- তখনি অর্পার আম্মু কাঁদো কাঁদো চেহেরায় আমাকে বলল- বাবা তুমি এখানে;আমি তোমাকে তোমার বাসায় খুজে এসেছি ; পায়নি। তারপর নিরুপায় হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এদিকে নজর পড়লো।

-- তখন আমি বললাম কি হয়েছে আন্টি ? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? অর্পার অবস্থা কি অনেক খারাপ?
-- হ্যা বাবা। ওকে গতকাল হসপিটালে ভর্তি করিয়েছি , সে এখন মৃত্যুর  সাথে লড়াই করছে। আর বারবার তোমাকে দেখতে চাইছে। আজ হয়তো তার জীবনের শেষ দিন।

-- এমন করে বলবেন না আন্টি , চলেন হস্পিটালে যাই। রিমার সাথে আর কোন কথা বলা হয়নি। আমরা হস্পিটালে চলে গেলাম। আর ওদিকে রিমা অনেকক্ষণ মন খারাপ করে বসে থেকে পরে বাসায় চলে গেল।

-- সে ভাবছে রিহাবের তো পৃথিবীতে আপন কেউ নেই ;তাহলে এ মহিলা এবং অর্পা কে? যার কথা শুনতেই আমাকে একা ফেলে চলে গেল ! তাহলে কি তার অন্য কারো সাথে...................... না -না!   এসব কথা আমি কেন ভাবছি,হয়ত তার কোন আত্মীয় হবে। কিন্তু সে আমাকে বলল না কেন? সে তো কখনোই আমার কাছে কোন কথা গোপন করে না। রিমার হাসি মাখা বদনখানি একমুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল,বলা হলোনা সেই আনন্দের কথাটি। যে যায়গা টাতে বসে এতক্ষন আমার সাথে কথা বলছিলো সে যায়গাটাতে বার বার চোখ মেলে দেখছে।
হয়ত তার কল্পিত চোখে আমার ছায়াখানি দেখতে পাচ্ছে,তাইতো সেই যায়গাটাতে হাত বুলাচ্ছে। সে বলছে -আমার এমন লাগছে কেন,আমি কি যেন হারিয়ে ফেলছি,আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে , কেন এত কষ্ট হচ্ছে আমি বুঝতে পারছিনা। তারপর একা একা বাসায় ফিরছিলো রিমা তার হাটা দেখে কেউ বলবেনা- সে সুস্থ। অসহায়ের মতো হেটে হেটে সে বাসায় গেল।
--  তার মা জিজ্ঞাসা করলো,কিরে মা তোর কি হয়েছে?

কয়েক বার এ প্রশ্নটা তার মা করলো। সে চুপ করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনেকক্ষন পর -- বলল - আমি জানি না।
-- তিনি বললেন- রিহাব তোকে কিছু বলেছে?
-- ( কেঁদে বললো) আমি জানি না মা ; আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না।
-- তখন তার মা তার খালার বাসায় ফোন দিল। ফোন দিয়ে বলল- কে?
-- তন্নি ফোন ধরলো এবং বলল খালা আমি তন্নি।
-- তন্নি রিহাব কোথায় রে ?
-- রিহাব ভাইয়া কে তো আজ দেখিনি। তাছাড়া উনার বাসায় ও তালা ঝুলানো।
-- আচ্ছা রিহাব যখন আসবে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবি।
-- ঠিক আছে খালা।


আমরা হস্পিটালে যাওয়ার পর অর্পা আমাকে দেখলো। দেখার সাথে সাথে চিৎকার শুরু করলো। আমাকে দেখার পর তার কষ্টটা শতগুনে বেড়ে গেল। আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম, সে আমার হাতে হাতটা রাখলো আর বলল -

-- তুমি কোথায় ছিলে ? আমাকে দেখতে আসলেনা কেন? তুমি জান না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা ?
কথা বলছে আর অঝর শ্রাবনের মতো চোখে জল ঝড়ছে। সে অনেক কষ্ট করে কথাগুলো বলছে। প্রতিটা কথার সাথে সাথে সে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর প্রতিটা নিশ্বাস যেন তার জীবনের শেষ নিশ্বাস। কেবিনে দরজায় দাড়িয়ে তার মা কাঁদছে।

-- অর্পা বলল - রিহাব আমি আমার মায়ের কাছে মিথ্যে বলেছি। তুমি আমার বন্ধু না; আমি তোমাকে ভালবেসেছি। আর আমি জানতাম এটা পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে একটা হাস্যকর কথা। আমি জানতাম আমি তোমাকে এই পৃথিবীতে কখনোই পাবো না। তাইতো এতো তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর পরপারে তোমার জন্য একটি তরী সাঁজিয়ে বসে থাকবো, তুমি আসবে সেখানে ; আমরা দুজন নতুন করে ঐ পৃথিবীতে জীবন শুরু করবো। আমি অনেক আগেই চলে যেতাম শুধু এই কথাটা বলার জন্য এতদিন বেঁচে ছিলাম। এখন আর আমার মরতে কোনই বাধা নেই। আর স্বর্গের মাঝে  তোমার জন্য বিশাল এক ভালবাসার সমাধী গড়বো।

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আর গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে অর্পার কথা শুনে।
-- সে আমাকে বলল - রিহাব তুমি আমাকে একটা গান শুনাবে ?
-- আমি বললাম - আমি তো ভাল গাইতে পারি না।
-- সে বলল - যা পারো তাতেই হবে। তার মা ও বলল গাও না বাবা আমার মেয়ে চাইছে। তার শেষ চাওয়াটা পূর্ণ করে দাও।

আমি যখনি গান গাওয়া শুরু করলাম প্রথম অন্তরাটা শেষ হতে না হতেই অর্পা ঘুমিয়ে পরেছে। চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে আর কখনো সে ঘুম ভাঙবার নয়। অর্পার মৃত্যুতে চারিদিক কেমন স্তব্দ হয়ে গেছে। তার মা আকাশ ফাটা এক চিৎকার মেরে তার কাছে গিয়ে পরলো। শত স্নেহের ডোর ছিন্ন করে মায়ের সামনেই মৃত্যু নামক  অমানিশায় হারিয়ে গেল অর্পা। এ মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা তিনি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। আজ বুঝি দুঃখের অগ্নিদাহে জীবনের খাদটুকু একেবারে পুড়ে গিয়ে তার মায়ের স্নেহ খাঁটি সোনার ঔজ্জ্বল্যপ্রাপ্ত হয়েছে। অর্পাকে শ্যামলগঞ্জ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলাম তার মায়ের কথায়। কারন অর্পা একদিন বলেছিলো -
-- মা,মা আমার না শহর একদম ভালো লাগেনা। তুমি আমাকে গ্রামে নিয়ে যাবে? সেখানে আমার অনেক ভালো  লাগবে।

কিন্তু তাকে আর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় নি। সেখানে একটি কবর খুড়া হলো। দারুণ উন্মাদনা বশে অবুঝ প্রলাপের মত মেয়ের কবর খুড়া দেখলো তার মা। তারপর আমরা অনেকে তার জানাযার নামাজ শেষ করে কবরের কাছে নিয়ে গেলাম। শিশু মেয়েটির মৃত্যুর কথা যতই মনে করছে ততই বুকটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যখনি অর্পাকে কবরে শায়িত করবো তখন তার মায়ের কান্না আর অশ্রুর প্লাবনে তার উত্তাপ ক্রমেক্রমে বাড়তে শুরু করলো । সে শোকাবেগ (পষরসধী) তার মেয়ের অকালমৃত্যুর কঠিন পরিণতি ও শোচনীয় অবস্থায় তার হৃদয়ে বহুগুণ ধরে ঘনীভূত হচ্ছিল। যখনি তার সৎকার শেষ হলো তখন আমি দেখতে পেলাম দূরদিগন্তে ধরনীর বুকে সন্ধার রক্তরশ্মি ঝরে পড়ছে। অর্পা গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয়ে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে। গাছের শাখারা তার স্নেহে লুটিয়ে পড়েছে। জোনাকীরা সারারাত তার কবরে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে-মূলত স্নেহের রসে সিক্ত বলেই তার কল্পনা আমার নিকট মাধুর্যমন্ডিত হয়েছে। আমার আপন না হয়েও সে যেন আমার বহু আপন ;আমার আরেক অন্তর আত্মা যা তাকে হারানোর ব্যথায় আমি অনুভব করেছি।

দুদিন ধরে অর্পার মা ও আমার কিছুই খাওয়া হয়নি। পরদিন সকালে আমরা দুজন একসাথে ঢাকায় রওয়ানা হলাম। সাড়াটা রাস্তায় তিনি কিছুই বললেন না। যখন গাড়ি থেকে নামলাম তিনি আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছেন। আমি ওনাকে বললাম মা আপনার মেয়ে চলে গেছে ; আমিতো আছি। আমি আপনার মেয়ের অভাব কিছুতেই বুঝতে দেব না। আপনি আর ভেঙ্গে পরবেন না। আজ থেকে আমি আপনার সন্তান। এ বলে অনেক সান্ত্বনা দিলাম এবং একটা হোটেলে গিয়ে কিছু খাবার খেলাম দুজন। তারপর আমি আমার বাসায় গেলাম।

তন্নি আমার বাসায় আসলো আর বলল,
-- ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলে? কয়েকদিন ধরে তোমায় দেখছিনা। খালা বলেছিলো তুমি আসলে যেন ফোন দেই। ফোন করবো?
-- হ্যা করো।
-- হ্যালো কে রিমা আপ্পু ?
-- হ্যা , রিহাব বাসায় আসছে?
-- হ্যা। এই নাও কথা বলো।
-- আমি বললাম - রিমা কেমন আছো?
সে কোন কথা বলছে না। রিমা কথা বলো।

 অনেকক্ষণ পর বলল -
-- তুমি এতটা পাষাণ, আমি অনেক আশা নিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর তুমি কিনা একটা মেয়ের জন্য আমায় ফেলে চলে গেলে? তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি?
-- আমি বললাম - রিমা আমাকে ভুল বুঝনা। আর এখন আমার মনটাও এত ভাল না। তুমি এক কাজ করো তুমি আমার বাসায় চলে আসো আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলবো।
-- না আমি পারবোনা। তুমি আমাদের বাসায় আসো।

-- আচ্ছা ঠিক আছে আমি এক ঘন্টা পর আসবো। আমি আগে কখনো রিমাদের বাসায় যায় নি। আজ প্রথম, অনেক খারাপ লাগছে কারন হাতে একটি টাকাও নেই। কিছু যে নিয়ে যাবো ওদের বাসায় তাও সম্ভব না। একবার বলি হে খুদা কেন পাঠালে এই পৃথিবীতে , কি পাপ করেছি কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম পাপ করিনি ...... পূণ্যটাই বা কি করেছি? আল্লাহ- রাসুলের কথা অনুযায়ী তো চলতেই পারি না। সে তুলনায় ভালই আছি? তারপর ও এখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

বহু দিন পর নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে দুহাত উঠিয়ে বললাম- হে খুদা তুমি একটা ব্যবস্থা করে দাও। আমাকে একটু সুখ দাও। আমি আগে ও আল্লাহকে দৃঢ় বিশ্বাস করেছি ,এখনো করি তাই বলেই আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে। নামায পড়ার পরই নিহাম আমার বাসায় আসলো।

এসেই আমাকে বলল-
-- রিহাব তোর জন্য বিশাল এক সু-খবর আছে।
-- কি সু-খবর? আমার আবার সু -খবর, হাসি পাচ্ছে বুঝলি?
-- তুই কি ভাবছিস তোর সাথে মজা করছি?
-- না , ঠিক তা নয়।
-- শোন তুই যে কলেজে একটা বৃত্তির জন্য ধঢ়ঢ়ষু করেছিলি সেটা মঞ্জুর হয়েছে। আর তিন মাস পরপর তোকে কলেজ থেকে পাঁচ টাকা করে দিবে। এ মাসের টাকাটা স্যার আমার কাছে দিয়ে দিয়েছে,এই নে।
-- নিহামের কথা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। যখন টাকাটা দিল তখন বিশ্বাস হলো। আমি অনেক বেশী আনন্দিত হলাম।

-- তখন নিহাম বলল তোর জন্য আরো ও একটা সু-খবর আছে।
-- সেটা কি?
-- আগামি কাল থেকে তোর একটা ঢ়ৎরাধঃব ঃঁঃরড়হ ঠিক করেছি। সেখানে ভাল একটা ধসড়ঁহঃ পাবি। তোর আর কোন কষ্ট থাকবেনা।
-- তখন আমি বললাম - দুস্ত তুই আমার জন্য এতকিছু করলি ? তুই মানুষ না তোকে আল্লাহ আমার কাছে দেবদূত হিসাবে পাঠিয়েছে।

-- এরকম কথা কখনোই বলবিনা। তাহলে আমি অনেক কষ্ট পাবো। তুই জানিস এসব কথা আমার ভালো লাগে না। আর এটাতো আমার দায়িত্ব ; আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
-- আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দে ঐসব কথা, এখন কি খাবি বল?
-- কেন সু-খবর দিয়েছি বলে?
-- কেন তোর কি তাই মনে হয় ?
-- আরে না , মজা করলাম।
-- নিহাম আজ তোদের বাসায় যাবো।
-- আমাদের বাসায় যাবি না রিমাদের?
-- না, মানে........
-- হয়েছে , বুঝতে পেরেছি। কখন যাবি ?
-- এই তো , এখনি।
-- তাহলে চল।
এ বলে দুজন রিমাদের বাসায় রওয়ানা করলাম। অর্ধেক রাস্তায় যাওয়ার পর নিহাম বলল -
-- রিমার জন্য ফুল নিবি না?

--হ্যা। অবশ্যই , তারপর ফুল কিনতে গেলাম। সেখানে গিয়ে ঘটলো এক মজার ঘটনা , সেখানে যাওয়ার পর নিহাম বলল -
-- রিহাব শুন , আমাদের  ফুল কেনার দরকার নেই।
-- কেন?
-- ফুল চুরি করবো।
-- মানে?
-- হ্যা , ফুল কিনে দেয়ার মধ্যে কোন মজা নেই। ফুল চুরি করে ভালবাসার মানুষকে দেয়ার মধ্যে অনেক আনন্দ আছে।
-- ও তাই। ঠিক আছে চল তাহলে । কিন্তু চুরি করবো কোথা থেকে?
-- আমার সাথে চল আমি একটা বাড়ী চিনি সেখানে অনেক রকমের ফুল গাছ আছে।
-- তাই ? ঠিক আছে তাহলে চল।

তখন আমরা দুজন ফুল চুরি করতে বের হলাম। কিন্তু অনেক দূরে যেতে হবে। আর এখন বিকাল ৪:০০ টা বাজে। আমি নিহামকে জিজ্ঞাসা করলাম - নিহাম এখন তো ৪ টা বাজে যেতে যেতে তো রাত হয়ে যাবে।
-- তখন সে বলল- আরে বেটা রাতের বেলায় চুরি করার মজাই আলাদা।
-- নিহামের কথা শুনে খানিকটা হাসলাম। সেই বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম সন্ধা ৭ টায়। সেই বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়িটা একেবারেই ফাঁকা ।
-- নিহাম বলল - রিহাব চল বাড়ির ভেতরে যাই।
-- নারে ফাঁকা বাড়ি ভেতরে গিয়ে না আবার কোন বিপদে পরি। তারচেয়ে ভাল যেটার জন্য এসেছি সেটা নিয়ে এখান থেকে যাই।
-- আরে এত ভয় কিসের ? আমরাতো ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ চুর না।
তখন বাড়ির ভেতর ঢুকলাম , ডাইনিং টেবিলে অনেক রকমের খাবার রয়েছে , এগুলো দেখে খাওয়ার লোভ বেড়ে গেল।

-- নিহাম বলল , রিহাব দেখেছিস একেই বলে কপাল, কত খাবার চল খাই।
-- তাই কি হয়? আরে এতো ভদ্রলোক সাজিস নাতো চল খাই ,একদিন চুরি করে খেলে কিছুই হবে না।
-- তারপর খাওয়া শুরু করলাম , নিহাম খাবার খুব টেস্ট হয়েছে।
-- হ্যা । এখন থেকে সব সময় চুরি করেই খাবো। তাহলে খুব টেস্ট হবে।
-- কি বলছিস ? তোর মাথা ঠিক আছে তো? যখন ধরা পরে মার খাবি সেটাও অনেক টেস্ট হবে। বুঝতে পেরেছো?

-- হু , বুঝেছি এবার চল ।
তারপর ফুলের বাগানে গিয়ে অনেক ফুল নিলাম। কিন্তু সেখানে অনেক পিঁপড়া ; নিহাম বললো ওরে বাপরে আমি শেষ।
-- আমি বললাম কেন?
-- সালা তোর জন্য এতগুলো পিঁপড়ার কামড় খেয়েছি।
-- আমার জন্য না তুই যে চুরি করে খাবার খেয়েছিস সেজন্য।
-- কেন তুই মনে হয় খাস নি ?

-- খেয়েছি আর সেজন্য পিঁপড়ার কামড়ও খেয়েছি, কিন্তু তোকে বলিনি। কারন আমার প্রিয়ার জন্য ফুল নিতে এসে আমিই যদি পিঁপড়ার কামড় খেয়ে ফিরে যাই ; তাহলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যাবে না।
-- তারপর নিহাম আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
-- আমি বললাম - কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
-- না , এমনিই চল।
বাড়ির গেইটে যাওয়ার পরই এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক বলল -
-- এই যে জনাবেরা আপনাদের কে তো চিনতে পারলাম না।
-- আমি বললাম - আপনি কে?
-- নিহাম আমাকে ইশারা করে বললো - উনি বাড়ির মালিক।
-- আমি তো একধম চুপসে গেলাম। পরে উনাকে সালাম দিলাম।
-- ভদ্রলোক বললো Ñ বাড়ির মালিক কে না বলে ফুল চুরি করা কি ঠিক হচ্ছে?
-- আমি বললাম - আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের ক্ষমা করে দেন।
-- হু , ক্ষমা? দেখে তো মনে হচ্ছে প্রেমিকাকে ফুল দেয়ার জন্য ফুল চুরি করতে এসেছো , তবে একটা শর্তে ক্ষমা করতে পারি।

-- কি শর্ত ?
-- আজ আমার সাথে তোমাদের গল্প করতে হবে।
-- হা ...। নিহাম বলল Ñ আমি পালাই তুই গল্প কর গিয়ে।
-- আমাকে একা ফেলে চলে যাবি?
-- সালা রাতের তো ১২ টা বাজবে।
-- না তার আগেই চলে যাবো।
-- ভদ্রলোক বলল - চলো আমার বাসায় চলো।


-- এই সেড়েছে রে। সালা আগেই বলেছিলাম খাবার খাওয়ার দরকার নেই। এখন বাসায় গিয়ে যখন দেখবে খাবার খেয়ে শেষ করে ফেলেছি তখন সেটার জন্য আরো জামেলায় পরতে হবে। বাসায় গেলাম উনি ডাইনিং এ তাকিয়ে দেখলো কোন খাবারই নেই। তখন আমাদের দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। তিনি আমাদের দেখে বুঝতে পারলেন যে এ কাজ আমরাই করেছি। প্রথমে অনেক ভয় পেয়েছিলাম।

-- তারপর তিনি বললেন - কোন ভয় নেই , আমার খুব ভাল লাগছে তোমরা আমার বাসায় এসে খেয়ে ছো। শুন আজ তোমাদের একটা গল্প শুনাই - তোমরা যে এভাবে চুরি করে ফুল নিতে এসেছো তেমনি আমিও আমার প্রেমিকার জন্য ফুল চুরি করতে গিয়েছিলাম ; আর ধরা পরে কঠিন শাস্তি পেয়েছিলাম। আমি যে মেয়েটিকে  ভালবাসতাম তার নাম ছিল ‘ঋত্ব্য’ । সে অপূর্ব সুন্দরী ছিলো।

-- তখন নিহাম বললো - আপনিও কিন্তু অনেক সুন্দর।
-- তিনি বললেন বাবা আমাকে গ্যাস খাওয়াচ্ছো?
-- নিহাম হেসে বললো না।
তারপর তিনি বললেন শুন বাবা আমি তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে পারতাম না। তার গলার শব্দটা একদিন না শুনলে আমি পাগল হয়ে যেতাম। তার মায়াবী মুখখানি একবারের জন্যও আমার চোখের আড়াল হতো না। সে ছিল আমার স্বপ্নে, স্বয়নে , আদো জাগড়নে।

-- নিহাম আবারো হেসে বললো এখন কি উনাকে দেখতে পান না?
-- তখন আমি বললাম - নিহাম দুষ্টমি করিস না। উনি রেগে যেতে পারেন। তারপর বলেন -
-- হ্যা শুন , সেও আমাকে ভালবাসতো। তবে তা মন থেকে নয় ; সেটা অনেক পরে বুঝেছিলাম। 

তার যা কিছু প্রয়োজন হতো তাই তাকে আমি এনে দিতাম। তার লেখাপড়ার খরছ সহ সবকিছু আমি দিতাম এমন কি আমি তাকে বিয়ে করার আগেই তাকে বিশ্বাস করে  তার জন্য একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি কিনে দিয়ে ছিলাম। সে শুধুই আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছে। কিন্তু আমি একটুও বুঝতে পারিনি। অবশেষে তার লেখা-পড়া শেষ হলো। সে সবসময় বলতো আমার লেখা-পড়া শেষ হলেই তোমাকে বিয়ে করবো।

কিন্তু লেখা-পড়া শেষ হওয়ার পরই তার বাড়িতে আমার চেয়ে একটু ভাল ঘরের ছেলের সমন্ধ আসলো। আর সে সেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেল। বিয়েও হয়ে গেল - তখন আমি সিলেটে ছিলাম। সিলেট থেকে এসেই জানতে পারলাম তার বিয়ে হয়ে গেছে। জানো তখন আমার অনেক কষ্ট হয়ে ছিলো। আমি অনেক কেঁদে ছিলাম , তার জন্য। অনেক দিন তার আশায় পথ চেয়ে বসে ছিলাম। সে কবে তার বাবার বাড়িতে আসবে ; কবে তার মুখখানি একটু দেখবো। আর যখনি সে তার বাবার বাড়িতে আসলো তখন আমি তাকে দেখতে গিয়ে ছিলাম। সে আমাকে দেখে তার মুখ ফিরিয়ে নিল। আমার কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। তবুও নির্লজ্জের মতো তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

তাকে জিজ্ঞাসা করলাম - আমি কি এমন দোষ করেছি যে তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে গেলে ?
-- সে বললো - শুন তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
-- আমি বললাম কেন ?
-- সে বললো - তুমি আমার কোন দিক থেকে যোগ্য নও।
-- আমি তাকে আর কিছুই বললাম না। আমার পথে আমি চলে আসলাম। কিন্তু তাকে কখনোই ভুলতে পারিনি। এরপর থেকে আমি অনেক কেঁদেছি তার জন্য। আজো আমি তাকে মনে করে কাঁদি তাকে এখনো অনেক ভাবি।
-- নিহাম কাঁদতে শুরু করলো। আর বলল ঁহপষব আমি আপনার সাথে মজা করেছি আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

-- তিনি বললেন - ছিঃ বাবা এমন কথা বলো না। আমি কিছুই মনে করিনি।
দুনিয়াতে কত মানুষের কত যে হৃদয় বিদারক ঘটনা রয়েছে তা আসলেই অভাবনীয়। উনার কথা গুলো শুনে বুকটাতে কেমন যেন ব্যথা অনুভব হলো। তারপর উনাকে বললাম আপনি মন খারাপ করবেন না। জীবনে যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন আর এসব ভেবে কি হবে।

-- তিনি বললেন না বাবা এখন আর ভাবতে চাই না। এবার তোমরা যেতে পারো। তোমাদের জন্য দোয়া করছি। তোমরা যেন সুখি হতে পারো।

উনার কথাগুলো শুনে খুবই ভাল লাগলো। তারপর আমরা চলে গেলাম।

তারপর রিমাদের বাসায় পৌছতে পৌছতে রাত ১০ টা বেজে গেল। রিমা আমাকে দেখে অনেক খুশি। আমি খয়েরি রঙের একটা পাঞ্জাবী পড়েছি। অবাক নয়নে রিমা তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
-- নিহাম বলল - কিরে অর্পা রিহাব আসতে না আসতেই কল্পনায়  হারিয়ে গেলি নাকি?
-- তখন রিমা হেসে বলল কল্পনায় নয় হারালে বাস্তবেই হারিয়ে যাবো।
-- তারপর নিহাম আমাকে বলল রিহাব এখন  আমি বাসায় যাই মা হয় তো অনেক চিন্তা করছে।
-- কেন বস্ না আরেকটু।
-- না রে বাসায় একটু কাজ আছে।
-- এরপর নিহাম চলে গেল। রিমা আর আমি পাশাপাশি বসে আছি।

রিমা আস্তে আস্তে আমার কাছে আসতে শুরু করলো ,
আমি তাকে বললাম - কি হচ্ছে ?
সে বলল - কোন কথা বলবেনা। আজ তুমি আমার ,শুধুই আমার। হৃদয়াঙ্গিনায় যত ভালবাসা জমাট বেধেঁছে সে ভালবাসায় তোমাকে আমি হারিয়ে নিয়ে যাবো , অচেনা এক পৃথিবীতে। যেখানে তুমি আর আমি আর কেউ থাকবেনা। আমার ভালবাসা দিয়ে তোমার মনের যত ভয় , যত সংশয় সবকিছু দূর করে দেব।

-- আমি বললাম - তাই ?
--  হ্যা।
-- তো চলই না হারিয়ে যাই। আমার সবকিছু তো তোমার জন্যই আর তুমি শুধুই আমার জন্য।
-- ইশ........এই শোন্।
-- কী ?
-- চলো আমরা ঝগড়া করি।
-- হ্যা করতে পারো।
-- তখন রিমা বলল - তুমি না একটা হাবলা।
-- আর তুমি একটা হাবলি।
-- ওমা হাবলি কোন শব্দ আছে বলে তো আগে কখনো শুনি নি।
-- শুন নি ? তাহলে তুমি একটা ,তুমি একটা ....কি বলবো? হ্যা মনে পরেছে তুমি একটা  খাটাশনী।
-- আর তুমি একটা খাটাশ।
-- তুমি খুব খারাপ।
-- না তুমি খারাপ।
-- রিমা বলল হ্যা আমি খারাপ তবে তোমার মতো না।
-- আমার মতো না মানে ?
-- হ্যা - তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারো। আমার কথা একবারও মনে করো না। কিন্তু আমি তোমাকে সবসময় মনে করি।

-- কচু মনে করো। আমি বুঝি তো তুমি আমাকে না , হয়তো অন্য কাউকে মনে করো।
-- তখন রিমা রেগে গেল আর বলল রিহাব তোমার কাছে কখনোই এসব কথা আশা করিনি। তোমার মুখে এত বাজে কথা আসতে পারে ? 
-- আরে তুমি তো একদম ংবৎরড়ঁং হয়ে গেলে। আমি তো তোমার সাথে ঠাট্টা করলাম।
-- না রিহাব ঠাট্টা সবকিছু নিয়ে হয় না। তুমি তোমার মতো সবাইকে মনে করো । এটা ঠিক না , আমার ভালবাসায় কোন প্রকার ত্রুটি নেই।

-- রিমা- থামো অনেক বলেছো।
-- না কেন থামবো? তুমি আমাকে ধাড়রফ করার চেষ্টা করছো কিন্তু সেটা মুখে বলতে পারছো না।
-- রিমা চুপ করো।
-- না কেন চুপ করবো তুমি ঐ মহিলার কথায় আমাকে ছেড়ে চলে যাও নি? আর অর্পা কে ,তুমি তো বলে ছিলে তোমার আপন কেউ নেই।
-- আমি কোন কথা বলতে পারলাম না , কারন অর্পার কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হবে। যা তার কাছে এখন ভাল লাগবেনা।

-- কথা বলছো না কেন ? অর্পা কে?
-- রিমা ওর কথা আমি তোমাকে বলতে পারবোনা ।
-- কেন বলতে পারবেনা ? এ জন্যই তো তোমাকে অবিশ্বাস করতে হবে।
-- তুমি অবিশ্বাস করলে আমার কিছুই করার নেই।
-- তার মানে অর্পার সাথে তোমার আগে সম্পর্ক ছিল?
-- আমি অনেকটা রেগে গেলাম আর বললাম রিমা - ছিঃ। তুমি এত নীচে নামতে পারো আমি কখনোই ভাবতাম না। অর্পার কথা শুনবে তো ?

ঠিক আছে বলছি-
অর্পা খুব কম বয়সের একটি মেয়ে .....................।(সব কিছু তাকে খুলে বললাম)
সেদিন যখন আমি হাসপাতালে গেলাম গিয়ে দেখতে পেলাম সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আমি তার সাথে কিছু বলার পরই সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো। আমি তোমাকে এজন্যই কথাটা বলিনি যে তার কথাটা মনে করলেই আমার অনেক খারাপ লাগবে। 

তুমি জান না সে বয়সে ছোট হতে পারে কিন্তু কথা-বার্তা আর তার চিঠির ভাষা গুলোতে এতবেশী মাধুর্য্য ছিল যা আমাকে অনেক অবাক করে দিত। আমি অনেক মুগ্ধ হয়ে যেতাম। তুমি বলো তাকে দেখতে যাওয়াটা কি আমার অপরাধ?
-- তখন রিমা বলল - আমি অনেক দুঃখিত রিহাব। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-- আমি বললাম - রিমা এসব কথা বলো না। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো আর সেজন্যই তোমার অনেক সন্দেহ , এটা স্বাভাবিক। আমি ও তোমাকে অনেক ভালবাসি।
-- হ্যা আমি জানি তো। তুমি আমাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারো না।
আমি বললাম রিমা রাগলে তোমাকে অনেক ভয়ংকর দেখায়। আমি কিন্তু খুব ভয় পেয়ে ছিলাম। আচ্ছা রিমা তুমি আমাকে কখনো ভুলে যাবে নাতো ?

-- আমার জীবন গেলে ও ভুলবো না, এক লক্ষ ভাগ গ্যারান্টি। এ বলে আমাকে বুকে টেনে নিল। আমাকে অনেক ভালবাসা দিল। তারপর রিমার মা আসলো , এসে বলল এই রিমা সারাক্ষণ কি কথাই বলবি রিহাব কে কিছু খেতে দিবি না।
তখন সে চুপি চুপি বলল - (মা খাবার দিয়েছি তো , যে খাবার খেয়েছে আর খেতে হবেনা। আমি মুচকি হাসলাম) এই তুমি খাবার খাবে?
আমি কোন সংকোচ না করে বলে দিলাম - হ্যা খাবো।
-- রিমার মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো । আর বলল আসো বাবা। খাবার খেতে বসলাম। অনেক রকমের খাবার কোন টা খেয়ে কোন টা খাবো বুঝতেই পারছিলাম না। আমি খাচ্ছিলাম এমন সময় রিমাকে রিমার মা বলল এই রিমা তুই খাবি না? সে বলল না মা আমি খেয়ে ছি।
-- কখন?
-- এইতো একটু আগে। আমি বুঝতে পেরে হাসলাম।
-- আর বললাম রিমা এখানে আসো।
-- কেন?
-- এমনি।

সে আসলো আমি তার মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিলাম। তার মা হাসছিলো। আমার তখন মনে হয়েছিল উনি উনার আর রিমার আব্বুর কথা কল্পনা করছিলো।
-- রিমা হঠাৎ বলে ও ফেলল - মা তুমি কি ভাবছো আমি জানি।
-- কি?
-- বাবা যে তোমাকে এভাবে খাইয়ে দিত তা ভাবছো । তাই না মা?
-- তার মা বলল- তোর মুখে না কোন কথা আটকায় না।
-- তখন সে হাসছিলো।
-- আমি তাকে অবাক হয়ে দেখছিলাম।

খাবার খাওয়ার পর রিমা মা এবং বাবার সাথে অনেক কথা বললাম। রিমা কে আমার সাথে বিয়ে দিতে  তাদের কোন অমত নেই। আমার খুব ভালো লাগলো তাদের সাথে কথা বলে। তারপর বাসায় রওয়ানা হলাম এমন সময় রিমা বলল -
-- তুমি যেওনা। আজ থেকে যাও। তুমি জানো তুমি চলে যাবে কথাটা শুনে আমার বুকটা হাহাকার করছে। আমার যেন মনে হচ্ছে তোমার সাথে আর কখনো আমার দেখা হবে না। আমার খুব খারাপ লাগছে।

-- তখন আমি বললাম - তা কি হয়? ঠিক আছে বিয়ের পর তোমার বাসায় এসে অনেক দিন থাকবো।
-- সে বললো আচ্ছা তাহলে চলো আমরা আজই বিয়ে করে ফেলি।
-- আমি বললাম - পাগলী মেয়ে কোথাকার।
-- তুমি দেখ তোমাকে না পেলে আমি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো।
-- আমি বললাম এসব কথা বলো না জান। এবার আমি যাই। একথা বলে বাসা থেকে বেড় হলাম রিমার চোখে জল , সে কাঁদতে শুরু করলো। আমি বললাম কাঁদছো কেন আমি কি একেবারেই যাচ্ছি নাকি আবার ফিরে আসবো তো। আর তোমার সাথে কথা তো হবেই।

-- তখন জেদ করে বলল যাও যাও। আমি তোমার জন্য কেন কাঁদবো আর কাদবো না।
-- আমি তার ভালবাসায় অন্ধ হয়ে গেলাম।

( এই ছিলো রিহাব ও রিমার ভালোবাসার কাহিনী। তারপর.........) রিমাদের বাসা থেকে রিহাব যখন তার বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে ওঠলো সে বাসটা মহাখালী রেল ক্রসিং এ গিয়ে থামলো  যাওয়ার সাথে সাথে একটা রেলগাড়ি এসে গাড়িটাকে তছনছ করে দিল। গাড়ির একটা যাত্রী ও তাদের জীবন রক্ষা পেল না। রেল স্টেশনের গার্ড সেই মুহুর্তে সেখানে ছিলো না। যার ফলে এত বড় একটি দূর্ঘটনা ঘটলো। আর এতে চির নিঃশেষ হয়ে গেল রিহাব। যন্ত্রণার দুনিয়া থেকে চির মুক্তি পেল রিহাব। কত স্মৃতি, কত কথা , কত সুর, কত গানের অবসান ঘটিয়ে চির সজ্জায় শায়িত হলো। 

রিহাবের সেই তাজা দেহটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। আর কোন পিছুটান রইলো না পৃথিবীতে। কষ্টের দিনবসানে যখন সুখের সূর্য্য উদিত হলো আর তখনি তার চলে যাওয়ার ডাক পরলো। সেই সুখ তার ভাগ্যে জুটল না। নিদারোণ পৃথিবীর স্বকরুণ আবেগ আর স্মৃতিগুলো পঞ্জীভূত হয়ে ভালবাসা নামক স্মৃতির দেয়ালে ঝুলে থাকবে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত। যে ভালবাসায় মত্ত হয়ে সকল ব্যথার কথা ভুলে থাকা যায়, পৃথিবীর শত নিয়ম মনের আড়ালে লোকায়িত থাকে , সেই ভালোবাসার ডোর ছিন্ন করে পরপারে পাড়ি জমায় রিহাব। আজ আর পাখিদের কোলাহল শুনা যায়না , চাঁদের আলো বুঝি আধাঁরে ঢেকে যাচ্ছে। পৃথিবী নিরব হয়ে আসছে আর চারিদিকে যেন বেদনার সুর বাজতে শুরু হলো।

আর অন্যদিকে অসীম আকাশ সমতুল্য গুণের অধিকারী প্রাণপ্রিয় মহীয়ষী সেই মানবী রিমাকে রেখে স্বার্থপরের মতো একাই চলে গেল। এমনটা কেন হলো ? এটা কি কারো কাম্য ছিল? এ প্রশ্নের জবাব কী পাওয়া যাবে?

স্টেশনের সকল লাশ গুলো অনুসন্ধান করে যার যার স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হলো। কিন্তু রিহাবের লাশটা এক সপ্তাহ ধরে রক্ষিত অব¯থায় ছিলো। কেউ এই লাশটা নিতে আসলোনা। কিছু দিন পর পেপারে তার ছবি ছাপিয়ে দেয়া হলো। আর এর মধ্যেই রিমার বাবা খবর পেল। তিনি ভাবছেন কি করে একথা রিমার কাছে বলবেন, কিন্তু গোপন করেই বা কয়দিন রাখা যাবে ? আজ না হোক কাল সে রিহাবের জন্য পাগলের মতো ছুটাছুটি করবে তখন তো হিতের বিপরীত ও হতে পাারে। তাই ভেবে বাসায় গিয়ে

-- রিমাকে ডাকলেন - রিমা এদিকে আয় তোর সাথে কিছু কথা আছে।
-- সে এসে বলল - বাবা কি কথা ?
-- মা রে  আজ তোকে এমন একটা কথা শুনতে হবে যা কখনোই কল্পনা করা যায় না। কিন্তু সে কথাটা বলার আগে তোকে অনেক শক্ত হতে হবে।

-- তখন রিমা বলল - বাবা রিহাবের কিছু হয়েছে?
-- তার বাবা মেয়ের এ অবস্থা দেখে কথাটা বলতে চাইলেন না। কিন্তু রিমা অনেক কাঁদতে শুরু করলো। আর বলল বাবা রিহাবের কি হয়েছে বল। বাবা তোমার দোহাই লাগে তুমি বল।
-- তখন আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। তিনি বললেন- রিহাব যে দিন আমাদের বাসায় এসেছিলো সেদিন বাসায় ফেরার পথে............................।

রিমার চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। সে কিছুই বলতে পারছিলো না। সে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে কাঁদতে পারছে না। হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর কোন কথা বলছিলো না। এ অবস্থায় তার বাবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। দুদিন ধরে তার জ্ঞান ফিরে নি। তৃতীয় দিন বেলা দুটায় তার জ্ঞান ফিরলো। কিন্তু সে কারো সাথে কথা বলে না সে শুধুই প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখে যেন মনে হয় সারাক্ষণ সে গভীর এক ভাবনার জগতে পারি জমিয়েছে। সারাক্ষণ রিহাবের স্মৃতিগুলো কে মনে করছে। যতই স্মৃতি মনে পরছে ততই উদাসীন হয়ে যাচ্ছে। একসময় আবার অজ্ঞান হয়ে পরলো।

রাতের ১২ টার দিকে জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পরই সে হাসতে শুরু করলো। তার এই অবস্থা দেখে ডাক্তার তার বাবাকে বললেন -
দেখুন আমাদের যতটুকু ধারণা আপনার মেয়ে মানসিক চাপে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তার এখন psychological treatment প্রয়োজন।
--  তিনি বললেন আমার মেয়ে ভাল হবে তো?
-- তা বলতে পারি না ভাই। কেননা এ ধরনের ঢ়ধঃরবহঃ কখনো কখনো মবহবৎধষ ঢ়ড়ংরঃরড়হ এ ফিরে আসে ; তবে সেটা খুব ৎধৎব।

রিমার বাবা অঝরে কাঁদতে শুরু করলো। মেয়ের এ পরিণতি কোন বাবা সহজে মেনে নিতে পারে ? খোদার লীলা বোঝার মতো শক্তি কারোরই নেই। রিমা রাতের বেলায় অনেক চিৎকার শুরু করলো আর রিহাবের সাথে কথা বলছিলো - রিহাব জানো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আমি সারাক্ষণ তোমার পাশে থাকবো কোথাও হারিয়ে যেতে দেব না তোমাকে। তখন দূর থেকে একটা মৃদু আলো এসে রিমাকে বলল -রিমা আসো তোমাকে নিতে এসেছি ; তুমি যাবে না আমার সাথে ? রিমা এক দৌড় দিয়ে বাহিরে চলে গেল। সে যতই সামনে যাচ্ছে ততই রিহাবের ছায়া দেখতে পাচ্ছিল এবং সে ছায়ার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূরে হারিয়ে গেল। এমন করে বহুদূরে চলে গেল রিমা । কেউ তাকে খুজে পেল না। এখন তার ঠিকানা রাস্তা,মাঠ,ঘাট। পাগলিনী মেয়েটি  নদীতীর আর পথে পথে হেটে খুজে ফিরছে তার অর্ধাঙ্গকে,তার অস্তিত্বকে , তার আপন স্বত্তাকে যাকে ছাড়া সে পরিপূর্ণ একটি দেহ ও একটি মনের অধিকারী হতে পারে না। এ দুজন যে একটি প্রাণ।

 রিহাব চলে যাওয়াতে রিমা তার অর্ধপ্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। রিমা তার প্রিয়তম কে হারিয়ে শোকাবেগের উত্থান-পতনকে মেনে নিয়ে আজ
বিবাগী হয়ে ফিরছে রাস্তায় রাস্তায়। কখনো তাকে দেখা যায় গাছের তলে , কখনো আবার ফুটপাতে। তার বাবা-মা তাকে খুজে বাড়িতে নিয়ে গেলেও পরে আবার দূরে পালিয়ে যায়। তার পাগলামী দিনদিন বাড়তে শুরু করে। তার সেই মায়াবী চেহেরা ,তার চাঞ্চল্যতা , সেই হাসি , আলতো ভালবাসা , ছোট ছোট দুষ্টুমি কোথায় হারিয়ে গেল? আজ তাকে দেখে প্রতিটা মানুষের চোখে জল আসবে। কিন্তু কেন এমন হয় ?

নিজের অশ্রু ধরে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমি জানি না এই রচনা কার মনে কতটুকু স্মৃতি জাগড়িত করে। এটা যদিও একটা কল্পনা তবুও এটা বাস্তব। কেননা আমরা প্রতিপদক্ষেপে এই কথাগুলোর সম্মুখিন হই। তবে আমাদের কারোরই জানা নেই এমন টা কেন হয়। মানুষ কেন এতটা কাঁদে, মানুষকে কেন এতটা কাঁদতে হয়।

আমাদের মাঝে খুজলে এমন অনেক রিহাব কে খুজে পাওয়া যাবে। এমন অনেক রিমাকে আমরা দেখতে পাবো এই সমাজে। তবে রিমা আর রিহাবের কাহিনী পড়ে যদিও মনে একটু কষ্ট অনুভব হয়। কিন্তু তাদের যে পরিণতি হয়েছে তার কি কোন সুষ্ঠু সমাধান নেই পৃথিবীতে ? সেই প্রশ্নটা কি আমাদের মনে জাগে? আর কতকাল এরকম যাতনায় ভুগবে পৃথিবীর মানুষ্যজাত ? আর কতকাল ভালবাসা কাঁদবে হাহাকার করে? কেউ কি জানে তার কি উত্তর?






--- সমাপ্ত ---























































































































































































































































































No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment