গোলাপের রাজ্জ্যে আমরা দু’জন
মোঃ অলিউল্লাহ্
স্বপ্ন-বাস্তবতার মাঝামাঝি তো আমরা সবাই, কাটাচ্ছি আত্মকেন্দ্রিক জীবন। সময়ে-অসময়ে নানান রকমের ভালো উদ্যোগ নেওয়ার বাসনাগুলো যখন ধূমরে মরে বাস্তবতার আত্মকেন্দ্রিকতায়, তখন আর কী, নিজের মনকে প্রশান্তি দিতে ছুটে চলি উদ্দেশ্যহীন পথে।স্বপ্নময় করে রাখতে মন চায়, জীবনের প্রতিটা মুহুর্তকে।
আর তাই তো, আজও হারিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকার অদূরে, সাভার জেলার অসাধারণ মনোমুগ্ধকর একটি পল্লীগ্রামে। যেখানে নেই, শহরের কোলাহল, যানবাহনের অসহ্য শব্দ দূষণ, নেই কোন প্রযুক্তিগত আধুনিকতার ব্যস্ততা।
তবে আছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়াবতী পল্লী জননী। কিন্তু আর সাধারণ গ্রামের মতো, এটি একটি গ্রাম হলেও এর নামটি একটু ভিন্ন। কারো মনে হতেই পারে, যে ঘুমের ঘোরে কোন এক অচেনা জায়গায় চলে এসেছি যেখানে কেউ আমাকে চিনে না। চারিদিকটা কেমন লাল-সবুজের বিজয় মিছিল হয়ে চোখের সামনে ভাসছে।
Awesome Photo From Rose Garden |
গ্রামটির নাম ‘গোলাপ গ্রাম’। তবে এর আরো একটি নাম আছে, সাদুল্লাপুর। তুরাগ নদীর তীরে ভিন্ন সৌন্দর্যের একটি সমারোহ, যেখানে সাড়া গ্রাম জুড়ে গোলাপের ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। দু’চোখ যতদূর যায়, গোলাপের মাঠ চোখে পড়ে। দেখেই হারিয়ে যাওয়া যায় গোলাপের মাঠে লাল সবুজের স্বপ্নপুরে।সেখানে ১ ঘন্টা ট্রলারে চড়ে যাওয়া যায়, কিন্তু আমরা গিয়েছি একটু ভিন্নভাবে।
মটরবাইকে করে, উড়তে উড়তে। আমরা মানে, আমি আর আমার বন্ধু সুমন। উড়তে উড়তে মানে, সে মটরসাইকেল চালাতে এতটাই সিদ্ধহস্ত যে যত দ্রুত গতিতে চালানো যায়, ততই দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই আমার ভয় হতো। তথাপি, আমার মন হারিয়ে যেতো গ্রামের পথের দু’পাশে বয়ে যাওয়া মাইল ঝুড়ে গোলাপের মাঠ। উপরের দিকটা লালে লাল, আর চারিপাশ সবুজে আচ্ছন্ন।
তারপরই ছুটে চললাম, হেমায়েতপুর। পাগলাগারদে, অর্থাৎ পাবনা হেমায়েতপুর নয়; এটি সাভার হেমায়েত পুর। কাশবনের ছোট ছোট কাশফুলেগুলো মন মাতানো, হৃদয় ভোলানো সুরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাতাসের তরঙ্গে ভাসছিল। লোভ সামলাতে না পেরে এদের মাথার ওপর শুয়ে পরলাম। কারণ গাছগুলো বড় হলে এদের ওপর শুয়ে ছবি তুলতে পারতাম।
Golap Gram, Rose Garden |
যেখানেই একটু বেশি ভাল লাগে সেখানে ছবি তোলা। আর তাই হাতের ডিজিটাল ক্যামেরাটাও ছিল ভিষন ব্যস্ত। সুমনও ব্যস্ত ছিল, বাইক চালানোর কাজে। আর আমি সুযোগ পেলেই প্রকৃতির ছবি ক্যামেরার ফাঁদে বন্দি করা আর ভিডিও করায় মগ্ন।
তার সাথে বেসুরা গলায় গান, আহা, কেউ শুনলে জীবনে আর কখনো আমার গলায় গান শুনতে চাইবেনা। তবে আমার ঐ বেসুরা গলা চিৎকার করতে মোটেও খারাপ লাগেনা।
তারপর আর কি, ধীরে রাত হয়ে এলো, আবার সেই গতানুগতিক পথে। শহরের হাই-ওয়েতে ওঠে ফিরে আসা। কিন্তু সেখানে আনন্দের কমতি ছিলনা। ফাঁকা রাস্তায়, ৬০-৭০ গতিতে মটর সাইকেল চালানো। আর রাস্তার দু’পাশে ভিন্ন রকমের জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো রঙ্গীন করে রেখে শহর ও তার অদূরের এই হাইওয়েকে।
কিন্তু ততক্ষণে, আমাদের চেহেরা আর আগের সেই চেহেরার মতো নেই, শতবছর অযত্নে পড়ে থাকা মূর্তির মতো। অথবা কিছুটা ফ্যাকাশে মেঘলা আকাশের মতো।এরপরেও সমস্ত মিলিয়ে, দিনসেরা মাস্তিতে কাটলো জীবনের আরো একটি দিন।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment