Friday, April 27, 2018

হাসনাহেনা

   হাসনাহেনা   

প্রকৃতির অনিবার্য নিয়মেই সবাই ঘুমিয়ে আছে। এখন রাত চারটা বেজে প্রায় দশ মিনিট। প্রত্যেক রাতের মতো জেগে আছি আজো। কেউ কেউ বলে তোর হয়ত ইনসোমনিয়া হয়েছে। তাদের কথায় কর্ণপাত না করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। কারণ আমি জানি আমার কিছুই হয় নি। আমার যখন ইচ্ছা ঘুমাতে পারি আর যখন ইচ্ছা জেগে থাকতে পারি। তবে আজ অন্যদিনের তুলনায় খুব গরম লাগছে।

কিছুক্ষণ ঘরে পায়চারি করার পর, ভাবলাম একবার ছাদে যাই।দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলাম। আমার জানা ছিলনা যে আজ আকাশে এত সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ তার আত্মমহিমায় আলোকিত করে রেখেছে জগৎময়। দু’এক পা হেটে সামনে যেতেই দু’ফোটা শিশিরের জল আমার পায়ে পড়ল।নিচে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যামালতী গাছের পাতাটা নড়ছে। হঠাৎ একটা মৃদু আওয়াজ কানে এসে পৌছল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম সুশীতল।

 আমার বয়সী, তবে আমায় ভাই বলে ডাকে। আমি যে ফ্লাটে থাকি তার দু’তলায় থাকে সে। সুশীতল কোন কথা না বলে আমার পাশে এসে দাড়িয়ে রইল। আমি খুব নিরবে একটা কোমল বাতাসের ধ্বনি অনুভব করছিলাম। আর তখনি শুনতে পেলাম একটা দীর্ঘ নিশ্বাসের আওয়াজ। আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অন্যমনস্কতার ভান করে সুশীতলের কাধে হাতটা রাখলাম। 

সে বলল,  ‘রেজওয়ান ভাই একটা কথা কি জানেন, কেউ যখন অনেক বেশী ব্যথা পায়, তখন তার চোখের জল ফুরিয়ে যেতে থাকে। আগে সামান্য দুঃখ পেলেই চোখে খুব জল এসে যেত। ইদানিং আর এমন হয়না।’

আমি তাকে বললাম, তোমার ব্যথা যদি অনেক বেশী থাকে তাহলে কিছু অংশ আকাশের এই চাঁদটাকে দিয়ে দাও। দেখছ না চাঁদটা কি সগৌরবে অত্যন্ত সুখভরে ভীষণ প্রশান্তির হাসি হাসছে? মনে হচ্ছে তার কোন ব্যথা নেই। আর একমাত্র ওকে দিতে পার তোমার ব্যথাগুলো।কারণ এ পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক মানুষ আছে যারা অন্যের দুঃখের ভার বহন করে।

সে বলল- ‘ভাই আপনাকে দেখলে আমার মনের কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়। কারণ আপনার কথাগুলো শুধুই দুই ঠোটের নড়া-চড়ার শব্দ নয়; বরং কিছু ভাল সান্ত্বনা। আর আপনার মুখের কথাগুলো যেন আমার কাছে প্রতিটা প্রজ্জলিত তারকার মতো।’

 তার এমন কথা শুনে আমি মৃদু হাসলাম আর বললাম, তাহলে এক কাজ করো, তুমি পার্থিব সকল কাজগুলো থেকে ছয় মাসের জন্য অব্যাহতি নাও। আর সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাক। অবশ্য তখন তুমি শুধু আমার চেহেরায় তোমার সান্ত্বনাই খুজে পাবেনা; বরং আমার চেহেরাটা তোমার কাছে ফ্যাকাশে মনে হবে। তবে অনুরোধ থাকবে দীর্ঘকাল ধরে তাকিয়ে থেকোনা, তাহলে হয়তো ভেসে ওঠতে পারে নানা ধরনের চিত্রসমূহ।যা তোমাকে আনন্দ দেয়ার চেয়ে হয়ত কষ্টটাই বেশী দিবে।  বলো কি হয়েছে তোমার?
 ‘ভাই আপনার কাছে কখনো কিছু গোপন করবোনা। ছোটবেলা থেকে নানা পরিবেশের সাথে নিজেকে মিলাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরিবেশ সবসময়ই কেন জানি আমার বিপরীতে অবস্থান করে। আমি স্নিগ্ধ সকালে কোন স্থানে যাব বলে মন্তব্য করলে তখন দেখা যায় তীব্র রোধ। আর আমি যতই ভাল পথে হাটার চেষ্টা করি সে পথটা আমার জন্য হয়ে ওঠে দুর্বোধ্য।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment