Sunday, July 18, 2021

শেষ চিরকুট || মোঃ অলিউল্লাহ্

 মুখে না বললেও মনের ভিতরের মানুষটা কেন জানি চাইছিলো আমার অতি আদরে,যত্নে লালিত-পালিত সন্তানরা একবার আসুক; অন্তত জানালার বাইরে থেকে তাকিয়ে দেখে যাক আমার যাবার মুহুর্তটা। জানি কেউ আসবেনা, তবুও বিষণ আর্তনাদ নিয়ে তাদের এক মুহুর্তের জন্য দেখতে লোভাতুর চোখ দু’টো জানালা দিয়ে বারবার বাইরের দিকে তাকায়। এতোদিনে এই শূন্য ঘরটিতে একা থেকেও কষ্টের যন্ত্রণা, বুকের ভিতরের ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলেও চোখের পানিগুলোকে বেড়িয়ে আসতে দেয়নি। যে মানুষটার সাথে পয়ত্রিশ বছর সংসার করেছি সেও পাশে নেই, প্রথম পরিচয়ের দিন থেকে শুরু করে শেষ দেখা অবদি সকল স্মৃতিগুলো চোখের সামনে যখন ভেসে আসছে; তখন অশ্রুগুলোকে ঝরে যেতে আর কিভাবে বাধা দেই। অতি আপনজন কেউ থাকলে; যে এই করোনার কোনো তোয়াক্কা না করেই  সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার কাছে চলে আসতো, আদর করে কপালে চুমো খেতো আর সেবা দিয়ে সুস্থ্য করতে চাইতো, সেই মা আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে এক যুগ হয়ে গেলো। আজ আমার ষাট, কিছুদিন আগে-পরে তো চলে যেতেই হতো, ওইসব করোনা টরোনা কিছু না; শুধু চলে যাবার বাহানা। জীবনের রূপ দেখা হলো পুরোটাই, সকল খ্যাতি, ব্যাংকের সকল টাকা আর সকল সম্পত্তি ইতিমধ্যেই তোমাদের কাছে পৌছে দেবার ব্যবস্থা করে গেলাম। ভেবোনা তোমরা কেউ দেখতে আসোনি বলে আমি কষ্ট পেয়েছি, এমন পরিস্থিতিই হয়তো আমার জীবনের শেষ ফলাফল ছিলো। মনে হচ্ছে আর খুব বেশি সময় নেই, পৃথিবীটা ঘুরছে চোখের সামনে, শরীরটা কেমন নিথর বরফ খন্ডের ন্যায় পড়ে রয়েছে বিছানার উপর। মনটা এখনো বেঁচে থাকলেও মনের জোরটা এতক্ষণে মরে গেছে। যেই খাতা কলম দিয়ে কত কিছুই না লিখেছি সারাজীবন; আজ সেই প্রিয় কলমটাও বিট্রে করছে, আর লিখতে দিচ্ছে না কিছু। শরীরটার সাথে একরকম যুদ্ধ করেই এতটুকুন লিখতে পেরেছি। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মানুষ। বিদায়!!!

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment