এদিন স্বপ্নের দিন হবে
মোঃ অলিউল্লাহ্
যুগ যুগ ধরে কতশত মহাপুরুষেরা পা মারিয়েছে এ
ধূলির পৃথিবীতে, তার তো কোন ইয়ত্তা নেই। সেই সাথে সহস্র সংখ্যক
ভীরু-কাপুরুষের অস্তিত্বও ছিল, আছে, থাকবে। তাদের নিয়ে আমার কথা বা মাথা
ব্যথা কোনটাই নেই। শুধু গোলাটে জলের ফাকে খেলা করা সেই ছোট্ট একটা কীটকে
দেখে আমি কৌতুহলী। চঞ্চল তার অবারিত বন্ধনহীন ছুটে চলায়। ঘাস ফড়িং আর
জোনাকীর কথাই বলি, যারা পৃথিবীতে কতই না মহিমা নিয়ে বেঁচে থাকে। এরা কারো
কোন ক্ষতি করেনা, সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা ভরে নানা রূপে এদের সাঝিয়েছে,
মানুষের চোখে এদের ভাল লাগবে বলে। এরা সৃষ্টির সেরা জীব নয়, আর তাই এদের
কোন আক্রোশ নেই।
এরা আশরাফুল মাখলুকাত নয়, আর এদের কোন লোভ নেই,
বেঁচে থাকার দৃঢ় লড়াই নেই। নিজের ক্ষমতার প্রয়োগ করে খ্যাতির দরবারে নিজেকে
জাহির করার কোন অভিপ্রায় নেই। নেই সীমাহীন ষড়যন্ত্র আর কৌশলগত
বুদ্ধিমত্তা, যা দ্বারা পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে।পৃথিবীর সকল
মানুষ নিজেকে নিজের ব্যক্তিত্বকে নিজের চাওয়া পাওয়াকে সামনে রাখতে চায়,
অগ্রাধিকার দিতে চায়। যা এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো চায় না।
এরা কাউকে
বিব্রত করেনা, এরা কারো প্রতিহিংসায় মরেনা, এরা কারো চোখের ঘুম হারাম করে
দেয় না।শুধুই স্বাধীনভাবে বাতাসের সাথে হেলে ধুলে ভেসে বেড়ায়, আর সুযোগ
পেলেই একটু বসে জিরায়। যা মানুষ পারেনা। মানুষ কোন দিনই এদের মতো স্বাধীন
নয়।
এদের নির্ধারিত সকল কিছুর যোগান থাকে, যা মানুষের থাকেনা। যাই হোক ওই
সব নিয়েও আমার তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ ঘাস, ফড়িং আর জোনাকীর কাছে তো
আমরা দৈত্যের মতো, শুধু এদের বোঝার ক্ষমতা নেই। আবার হয়তো থাকতেও পারে।
আজকাল বড় বেশী, পৃথিবীটাকে ভাল লেগে গেছে। মনমতো সারাদেহের প্রবল ইচ্ছাভরে
এই পৃথিবীর অক্সিজেন গ্রহণ করি, পাখিদের গান গুলো যেন, বাধ্যযন্ত্র ছাড়াই
কোন মেলডিয়াস বা কোন যাদুকরী ছন্দে মন মাতায়। আকুল প্রয়াসে কান দু’টো খোলে
রাখি সেই সুর শুনবো বলে। গাড়ির জানালার পাশে বসে যখন প্রকৃতির সৌন্দর্য
দেখি, হাজার বছরের জন্য বেঁচে থাকতে ইচ্ছে পেয়ে বসে। মাঝে মাঝে দু’চোখে ঘুম
চলে আসে, তবে আমি ঘুমিয়ে পড়িনা। যদি এই অল্প সময়ের জন্য সৌন্দর্য কোথাও
হারিয়ে যায়। প্রতিটা মুহূর্ত যেন কেমন উপভোগ্য হয়ে ওঠেছে। একটা মুহুর্তও
অবলীলায় হারিয়ে যেতে দিতে মন চায় না।
কেন সবকিছু এত ভাল লাগে জানি
না। আমার যা ভাল লাগে অন্য কারো তা নাও লাগতে পারে। এই যেমন- অপরিচিত এক
মেয়েলোকের কোলে ছোট ফুট ফুটে একটি শিশু, বছর খানেকের বেশি বয়স হবে না, আমার
দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হাসিতে ব্যস্ত। মনে হচ্ছে, সে আমার বহুকালের পরিচিত।
দ্রুতভাবনায় আমি সেই শিশুটি হয়ে যাই, অথবা তার মতো অন্য একটি শিশু হয়ে তার
সাথে খেলা করি। একজন ভিখারিকে দেখে আমার আফসোস হয়, তবে ঘৃণা হয় না। ভাল
বাসতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো আর বেশি দিন বাঁচবো না।তাই
পৃথিবীটা আমার কাছে এত সুন্দর মনে হচ্ছে। অনেকের কাছে শুনেছি, মৃত্যুর আগে
নাকি পৃথিবীটা অনেক সুন্দর দেখায়। মরতে তো একদিন হবেই।
কেমন জানি
বাতাসগুলো, হঠাৎ করেই ভায়োলিনের মতো, কানের কাছে সুর তোলে। রাতের আধারটা
যেন, ব্লাক হোলের মতো।নিশ্চয়ই এর চারিপাশে ভয়ংকর কিছু ঘোরে বেড়ায়।
পূর্ণিমার চাঁদ যখন আকাশে ঘোর ঘোর করে, তখন মনে হয়, আকাশের পরীরা মেঘের
আড়ালে ঘোরে বেড়ায়। ইচ্ছে করে সারা রাত শহরের খোলা পথে হেটে হেটে রাত পার
করে দেই। মাঝে মধ্যে করিও। আকাশে পূর্ণিমার আলো থাকুক-আর নাইবা থাকুক,
রাস্তার দু’পাশে ল্যাম্প পোস্টগুলো রাত প্রহরীর মতো হারিকেন হাতে নিয়ে
দাড়িয়ে থাকার মতোই দাড়িয়ে থাকে। এক একটা পথ যেন, নিবিড়ভাবে কান পেতে আমার
খালী পায়ের শব্দ শোনে। সুযোগ পেলেই বেলকোনীতে বসে রাতের অনেকটা সময় পার
করে।
মাঝে মাঝে নিজেকে অসুস্থ মনে হয়। বিশেষ করে যখন রেগে যাই।
কখনো মনে হয়, আমি অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার এ ভোগছি। আবার কখনো মনে হয়,
আমার হয়তো কোন ফবিয়া আছে। আবার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি, সবাই তো যে কোন
রকমের হতে পারে। মানুষ তো বিভিন্ন রকমের হবেই। আমিতো একান্তই আমার মতো।
ভুল, শুদ্ধ, রাগ-অনুরাগ এসব মিলিয়েই তো মানুষ। তবে কেন জানি, অন্যায়টাকে
আমি কোন ভাবেই সহ্য করতে পারিনা। আরো কিছু জিনিস, যেমন- অসুস্থ মানসিকতা,
প্রতিহিংসা, সংকোচিত মানসিকতা, কপট, ধূর্ত, ওয়াদা ভঙ্গকারী, আর যে শুধু
সারাক্ষণ মানুষের ভুল ধরায় ও সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে।
অন্য কারো ভালো
লাগতেও পারে। সবাই তো অন্যায় ও অস্বাভাবিক অসংগতির সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে,
আমি কেন পারছিনা। আর সেজন্য আমার নিজেকে অসুস্থ মনে হয়। সংস্কৃতি আর
প্রকৃতি এই দুটোই আমার ভাল লাগে। সারাক্ষণ কল্পনা আর বাস্তবতার মধ্যে
সেতুবন্ধন গড়তে আমি ব্যস্ত। অনাকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে কাঙ্ক্ষিত হিসাবে
বাস্তবায়ন করা আমার ইচ্ছে নয়, তবে খুব স্বপ্ন দেখি যে একদিন পৃথিবীটা আরো
অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। একদিন এ পৃথিবীর সকলের মূখে হাসি লেগে থাকবে। সেদিন
কারো মন খারাপ থাকবে না। সেই দিনটিতে কেউ শোকে কাতর হবে না। সেদিন কেউ
একাকীত্বতায় কাতর হবে না। সেদিন কেউ প্রয়োজনের বাহিরে কিছু চাইবে না। সেদিন
কেউ কোন মানুষের ক্ষতি চাইবেনা। সেদিন কেউ কারো দিকে বাকা চোখে তাকাবেনা।
সেদিন কেউ কারো দিকে প্রতিহিংসায় জ্বলে মরবেনা। সেদিন কারো কোন কিছুতে
বিতৃষ্ণা লাগবেনা, হাহাকার লাগবেনা, মানসিক যন্ত্রণা থাকবেনা। শুধু একটা
দিন এমন হবে। স্রেফ একটা দিন।
স্রেফ একটা দিন পৃথিবীতে আসবে যেদিন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবেনা। শুধু একটা দিন।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment