আপনাকে কিন্তু এই শাড়িতে অসম্ভব সুন্দও লাগছে, আজ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে।‘
কিযে বলো বোন, তা আর কোথায়? কিন্তু তোমাকেও তো কম সুন্দর লাগছেনা।’‘
আহারে, যা বললেন। ওই বিলকিস তোর অফিস কেমন চলছে?’
বিলকিস- ‘নারে সই ইদানিং আর হয়ে ওঠছেনা, ভাবছি অন্য কিছু করবো।’
‘আজ একটু আরলি বাসায় যাচ্ছিস মনে হয়, শিউলি?’
শিউলি- ‘হ্যা মালা আপ্পু। ছেলেটির দু’দিন ধরে জ্বর।আচ্ছা গাড়িটা ছাড়ছেনা কেন?’
‘সুবর্ণা তোর তো গাড়ি আছে, আজ হঠাৎ লেগুনায় ওঠেছিস যে? নিশ্চয়ই শখ করে?’
সুবর্ণা- ‘নারে, ও আজ আমার গাড়িটা নিয়ে ঘুরতে গেছে।’
‘ওটা কে? বয়ফ্রেন্ড? তোরা পারিসও। হাজবেন্ড কে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে যে বয়ফ্রেন্ড ম্যানেজ করিস!’
সুবর্ণা- ‘আচ্ছা নিঝুম, তুই কি খুব ইথিক্স মেনে চলিস?’
সুবর্ণা- ‘আচ্ছা নিঝুম, তুই কি খুব ইথিক্স মেনে চলিস?’
বিলকিস- ‘হাসি পেল আমার। যার স্বামী অন্য মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করে, নেশা করে বাড়ি ফেওে স্ত্রীর প্রতি কোন দায়িত্ববোধ নেই, সারাদিন সংসার চালানোর জন্য কাজ করতে হয়, তার আবার ইথিক্স! তোদের ইথিক্স আর মরালিটি বাক্সে বন্দি করে রাখ, ভাল থাকবে।’
সুবর্ণা- ‘শুন আমি যখন রওনকের বাসায় যাই, তখন আমার খুব ভয় হয়; মনে হয়, আমি যা করছি তা কি ঠিক করছি?’মালা- ‘ওই যে দেখছিস সামনের সিটের মহিলাটা, ধানমন্ডিতে খুব বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। দিনের বেলায় স্কুলে পড়ায়, আর রাতের বেলায় পুরুষ মানুষের সাথে টাকার বিনিময়ে......। ’শিউলি- ‘মালা আপ্পু, তোমার ছেলে মেয়ের কি খবর?’
মালা- ‘হ্যা, ওরা ভাল আছে। মেয়েটার পরীক্ষা আগামিকাল থেকে। আর ছেলেটাও পড়াশুনায় বেশ ভালো। জানিস তো খুব কষ্ট করি ওদের জন্য। তবুও নিজের ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দেইনা। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমি যদি আধ্যাতিকতা বা ধর্মীয়তার কথা বলি, তাহলে তো কোন কিছুই সৃষ্টিকর্তার অগোচরে নয়। এই যে কষ্ট করছি, এর মধ্যেও এক ধরনের শান্তি পাই। ঐশ্বরিক শান্তিও হতে পারে।
শিউলি- ‘ঠিকই বলেছো আপ্পু। ’
কন্ডাক্টর- ‘এই যে ভাই ভাড়া দেন। হা কইরা কি দেহেন? ঋাড়া দেন, ভাড়া। ’এক উদ্দেশ্যহীন যাত্রী- ‘ওহ । এই নেন মামা। আমিই এতক্ষণ কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। আমি সামন্ত। আসলে অনেক মহিলাদের সাথে কোন গাড়িতে চড়লে যা হয়। আটজন মহিলা।
প্রত্যেকেই কোন না কোন গল্প বলায় ব্যস্ত। কারখানার মেশিন যেমন বিরামহীন চলতে থাকে, তেমনি এই মহিলাদের মুখও। আর আনমনা হয়ে কখন যেন তাদের গল্পের ছলে, হারিয়ে গিয়েছি আমি নিজেই জানিনা। আর তাই তো কন্ডাক্টর ধমক দিল। আর আমাকে আজ ধমক দেওয়াটাও স্বাভাবিক। কারণ এমন একধরনের কাপড় পড়েছি, যা ওর কাপড়ের চেয়ে নিম্নমানের। এছাড়া মাথায় চুল হয়ে আছে পাগলের মতো এবড়োথেবড়ো।
তবে আমাকে ভুল বুঝবেন না। যদিও আমি একটা ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিলাম।মূলত মোহাম্মদপুর থেকে লেগুনা বাসে ওঠলাম, মহাখালী যাবো বলে। সমস্ত গাড়ি ফাঁকা কিছুক্ষণ পরেই সাত-আট জন মহিলা গাড়ীতে ওঠলো।
প্রত্যেকের হাতে একটি করে প্লাস্টিক ব্যাগ। প্রত্যেকেরই পড়নে ছেড়া কাপড়। একেকজন একেক অঞ্চলের ভাষায় কথা বলছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে, এরা ভিক্ষুক। তাদের সাথে বসতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম। কারণ এ গাড়িতে আমি একাই পুরুষ। যদিও খারাপ বোধ হতো না, যদি উচু বা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির কোন নারীর পাশে বসতাম। যাইহোক, নিজের সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা।
কিছুক্ষণ পরেই ভাবলাম, আসলে এরকম শ্রেণির মানুষদের সাথে তো কখনো কথাও হয়নি। আর তাদের জীবন সম্পর্কে ও কিছু জানি না। ভালোই হলো, একটা অভিজ্ঞতা হবে। এক মহিলা পান খাচ্ছে, পাশের অন্যজন বলছে, ‘জানস আজকে ছুটির দিন। ভাবিনাই এতটাহা পাইমো। ভালোই ইনকাম হইলো। ’
‘কত পাইছস, মরিয়ম?’
‘সাড়ে তিনশ।’
‘হ। ভালাই পাইছস। আমার আইজকা ক্যান জানি হাটতে খুব ইচ্ছা করেনাই। হেরপরেও ২০০ টাহার লাহানি পাইছি। ও জোসনা, তুই এত ভাবস কেরে? একটা পোলাইদ্দ তোর।’
‘নালো, হেইডা ভাবিনা। ভাবি কম ইনকাম অইলে জামাই গোলামের পুতেরে মদের টাহা দিবো ক্যাডায়?’
কিছুক্ষণ পরেই ভাবলাম, আসলে এরকম শ্রেণির মানুষদের সাথে তো কখনো কথাও হয়নি। আর তাদের জীবন সম্পর্কে ও কিছু জানি না। ভালোই হলো, একটা অভিজ্ঞতা হবে। এক মহিলা পান খাচ্ছে, পাশের অন্যজন বলছে, ‘জানস আজকে ছুটির দিন। ভাবিনাই এতটাহা পাইমো। ভালোই ইনকাম হইলো। ’
‘কত পাইছস, মরিয়ম?’
‘সাড়ে তিনশ।’
‘হ। ভালাই পাইছস। আমার আইজকা ক্যান জানি হাটতে খুব ইচ্ছা করেনাই। হেরপরেও ২০০ টাহার লাহানি পাইছি। ও জোসনা, তুই এত ভাবস কেরে? একটা পোলাইদ্দ তোর।’
‘নালো, হেইডা ভাবিনা। ভাবি কম ইনকাম অইলে জামাই গোলামের পুতেরে মদের টাহা দিবো ক্যাডায়?’
‘ওই পারভিন, তুই বিড়িডা ফালাইবা? মোর না ধোয়া লাগতে আছে, হেই কি বুঝ?’পারভিন- ‘ ওরে কি নাক? আই আর খাইতান্ন বিড়ি। বেক বুঝি আই এহাই খাই, আর কেউ খায় ন। কিল্লাই আর এতো দোষ কিল্লাই?’
‘ও রেশমা, তোমার পোলাডার শইলডা ভালা?’
রেশমা- ‘হয় খালা। দোয়া কইরো, কাল পোলাডার পরীক্ষা। ওর মাথার ব্রেইন অনেক ভালা। টাইননা ইংরেজি পড়তে পারে। আমার যে কি ভালা লাগে ওর পড়া শুনতে। আমি যদি পড়া জানতাম তাইলে তো আর ভিক্ষা করা লাগতো না। জানো খালা কাইল মমতাজের মা আমারে কয় কি, কয়দিন আর ভিক্ষা করবি? চল এক বাসায় একটা কাজ আছে, তোরে নিয়া যাই। খালা কাজ তো করতে ইচ্ছাই করে, কিন্তু গেল বছর মমতাজের মা এক বাড়িতে নিয়া গেল। দুইদিন কাজ করার পরেই, ওই বাসার মালিক জোর কইরা আমার সাথে খারাপ কাজ করতে চাইলো। পরে খুব কষ্টে বাঁইচা আইলাম।’
তাদের এইসব কথার আড়ালে আমি হারিয়ে যাই এক গভীর ভাবনার জালে। কি অদ্ভূত মানুষের জীবন। এ মুহুর্তেই মনে হলো কত রং, কত রূপ একটা জীবনের। জীবন আর অস্তিত্বের শিকড়ে বাঁধা তাদের এই জীবন। প্রত্যেকের জীবনটা যেনো ভিন্ন একটা পৃথিবীকে ঘিরে। প্রত্যেকেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই ব্যক্তিগত পৃথিবীর নিয়মে ছুটতে থাকে।
বাস্তবিক পৃথিবীর প্রতিবেশ, আবহাওয়া আর আধুনিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, পৃথিবীর সীমা-পরিসীমা, দেশ-কাল ও আলোকিত ভুবনের সংস্পর্শেও অনেক দূরে তারা অবস্থান করে। এসব কিছু তাদের মনে মোটেও জাগেনা, কোন ভাবনা নেই তাদের যে, পৃথিবীতে কি হচ্ছে, কেমন করে চলছে সবকিছু। এতে তাদের কোনই মাথা ব্যথা নেই। তারা শুধু তাদের গড়া পৃথিবীতে থাকতেই পছন্দ করে।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment