আমি বৃষ্টি ভেজা জোৎস্না দেখেছি। দেখেছি সে জোৎস্নার কান্না। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে সেই চাঁদের আলোটা এমন ভান করেছিলো যেন, সে মহাসুখী। বিরহ তাকে স্পর্শ করতে পারেনা কখনো। কিন্তু তথাকথিত চাঁদের কলঙ্কের কথাও তো কেউ না কেউ জানে। চাঁদ সগৌরবে সুবিশাল আলোর মশাল হয়ে রাতের আকাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো অবস্থান করে। কিন্তু আমরা তো এও জানি মাঝে মাঝে আকাশের ঘনকালো মেঘগুলো যখন সে চাঁদের মুখের উপর দিয়ে ভেসে বেড়ায়, তখন তার অহমিকা কিছুটা হলেও ধূসরিত হয়। তুমি অপরূপ সুন্দর, বিচিত্র তোমার রূপের ঝলকানি। পৃথিবীর সকল মানুষ তোমায় দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটায় আর মনের প্রশান্তি খোঁজে পায়। কিন্তু সবাই হয়তো সে চাঁদের শূণ্যতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়না, কারো হয়তো জানার ইচ্ছেটাও নেই সে চাঁদের বিরহের কথা।
‘আবির ভাই, দুই দিন অফিসে আসলেন না, ঘটনা কী? অফিসে তো দুই দিন শোক দিবস পালন করছিলো।’
‘কেনো সবাই কি ভেবে নিয়েছে, আমি মারা গেছি?’
‘আরেহ না ভাই, আপনি অফিসে না আসলে তো অফিসের পরিবেশ খুব শান্ত হয়ে যায়। ছোটবেলায় যখন আমাদের রেখে বাবা-মা কোথাও বেড়াতে যেতো, তখন বাড়িটা খুব ভারী ও নিরিবিলি হয়ে যেতো। আপনি অফিসে না থাকলে ঠিক তেমন মনে হয়।’
‘অনেক বলছেন ভাই। এতোটা নিতে পারবোনা।’
‘নিতে না পারলে ফেরত দিয়ে দেন।’
‘হা হা, আপনি খুব মজার মানুষ ভাই।’
‘আপনার মতো আর হতে পারলাম কোথায়। আপনি তো ফেমাস ভাই।’
‘আচ্ছা ভালো কথা, আমার বন্ধুকে একটা ফোন করা উচিৎ। কিরে রিয়াম, কি খবর? ভালভাবে পৌছেছিস?’
‘হ্যা দুস্ত। খুব সুন্দর ভাবে সব কিছু শেষ হলো। তোর মামা তো আমাকে কিছুই করতে দিলো না। থাকা, খাওয়া, হসপিটালে ছুটাছুটি সব কিছুতে ওনি অবিশ্বাস্য সহযোগিতা করেছে। ওনি থাকাতে আমার বাড়তি কোন চিন্তাই করতে হয়নি। আশা করছি দু’য়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবো।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। ভালোভাবে আসিস।’
‘কিরে রিয়াম, শুনলাম নতুন বাড়ি করছিস?’
‘তেমন কিছু না। খুব সাধারণ একটা বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হচ্ছে। নিরব তোর একটা ফেবার লাগতে পারে আমার।’
‘বলিস। বান্দা যেকোন প্রয়োজনে হাজির।’
‘আরে বলিস না, তুই তো জানিস আমি কারো সাথে ঝামেলা করা পছন্দ করি না। কিন্তু জলিল চাচা, মানে আমার বাড়ির পিছনে যে বাড়িটা সে বাড়ির মালিক, আমার বাধা হয়ে ওঠেছে। আমার বাড়িটা একটু উচু হওয়াতে, ওনার বাড়ির আঙ্গিনায় আমার বাড়ির বৃষ্টির পানি পরে। এটা নিয়ে উনি খুব খারাপ খারাপ কথা শুনিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ভাবছি বাড়ির পিছনে একটা ড্রেন তৈরি করে দিলে পানিটা ওনার বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে পরবেনা। কিন্তু কাজটা তোকে করে দিতে হবে, কারণ এটা করতে গিয়ে ওনার বাড়ীর সীমানা ঘেষে ড্রেনটা করতে হবে। এটা ওনি সহজভাবে নিবেন না। তোকে তো পছন্দ করে, তোকে কিছু বলবেন না।’
‘হুম, বুঝতে পারলাম। হয়ে যাবে। তুই ভাবিস না।’
‘নিরব, আবির কি ফেবার চাইল তোর কাছে? সে তো হাজী মহসিনের জ্ঞাতি ভাই। তারও সাহায্য লাগে?’
‘শুন সোহাগ, সে বরাবরই মানুষের সামনে মহাপুরুষ সেজে থাকে। মানুষকে দেখাতে চায় যেকোন মানুষের সমস্যায় সে নিয়োজিত প্রাণ। কখনো কোন মানুষের সাথে ঝামেলায় জড়ায় না নিজেকে। কেউ অন্যায় করলেও সে নিজে তার প্রতিবাদ করেনা। কখনো কারো সাথে বিতন্ডা হবার আগেই অন্য কারো ঘাড়ে অতি কৌশলে সে দায় তুলে দেয়; যাতে নিজেকে কোন দায় না নিতে হয়। এমনকি সে সবার সামনে দেখাতে চায় সে খু তুমি নিজেকে আড়াল করে আমাকে ওনার সামনে মন্দ করে তুলছো। মনেমনে ভাবলো নিরব। কিছুদিন আগে ওর সাথে একটা প্রজেক্ট)।
‘আবির তোর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো, সময় হবে তোর?’
‘না, মোটেই সময় নাই আমার’
‘আবির সিরিয়াস কথা আছে।’
‘কোন সিরিয়াস কথা না।’
‘আরে নাহ, সত্যিই কথা আছে।’
‘সিরিয়াস কথা বলার জন্য তোর আমার কাছে অনুমতি নেয়া লাগবে?’
‘আরেহ, না। শুন না, আমার সাথে তোকে একজায়গায় যেতে হবে।’
‘কোথায়?’
‘চল স্কুলের ছাদে গিয়ে বসি।’
‘হুম, আমার তো মাথা খারাপ, রাতের এগারোটায় আমি তোর সাথে স্কুলের ছাদে যাবো আর তুই আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেল আরকি। নারে ভাই এত কম বয়সে আমার মরার ইচ্ছা নাই। সালা এখনো বিয়েটা পর্যন্ত করি নাই। এখন মরে গেলে কেমনে হবে?’
‘তোর কি সব কথায় হেয়ালি করতেই হবে? বলতাম তো, সিরিয়াস কথা আছে।’
‘আচ্ছা তাহলে চল বকুল গাছের তলায় বেঞ্চিতে বসে কথা বলি।’
‘তাও তুই ছাদে যাবি না? সালা বিয়ে বাকি তাই মরতে চাচ্ছোনা, বিয়ে করে যখন মরে গিয়ে বেঁচে থাকবা তখন বুঝবা।’
‘কি বলিস এসব। তা আবার হয় নাকি। বিয়ে হচ্ছে পৃথিবীতে সুখে থাকার সবচেয়ে জেনুইন সিদ্ধান্ত। অনেক অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আর তুই যে এত অভিজ্ঞদের মতো কথা বলছিস, কয়টা বিয়ে করছিস?’
‘আচ্ছা এই অবস্থা তাহলে? চল চল, বিয়ে নিয়ে লড়াই করার সময় নাই।’
‘হুম, বলতো কী বলতে চাস?’
‘আমার বোনটা অসুস্থ্য অনেক দিন ধরে তুই তো জানিস। এ পর্যন্ত প্রায় লাখের উপরে খরচ হয়ে গেছে। বাবাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। বাড়িটা ছাড়া আমাদের আর কোন সম্বল নেই। এমন একটা বিপদ হলো দুস্ত, আমার চাকরিটাও হচ্ছে না। দিনদিন যেন ও কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পেটের ব্যথায় এত চিৎকার করে, যা শুনলে বুকের ভিতরে খুব যন্ত্রণা হয়। কখনো নিরোপায় হয়ে শুনি আবার কখনো দূরে কোথাও চলে যাই।’
‘কতদিন হলো?’
‘প্রায় তিনবছর।’
‘কি করবি এখন?’
‘জানিনা রে, আমি সত্যিই কিছু জানিনা। কিছু ভাবতে পারছিনা আর।’
গাছের একটা ছোট্ট শুকনো ডাল নিরবের পায়ের কাছে পড়লো। আবির নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। দু’য়েকবার কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। নিরব আনমনা হয়ে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে মাটি খুড়তে লাগলো।
‘সায়মা কি স্কুলে যায় এখন?’
‘দুই-তিন মাস ধরে যাচ্ছে না। ক্লাস সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ করেছিল কোনভাবে। এখনতো বিছানা থেকেই ওঠতে পারে না।’
‘আচ্ছা। ঠিক আছে আমি কাল তোর সাথে দেখা করবো। এখন বাড়ি যা। অনেক রাত হয়ে এসেছে।’
‘আবির, আবির, ওঠছিস ঘুম থেকে?’
‘মা ওঠেছি। কিছু বলবে?’
‘তোর রমিজ কাকা খোঁজে গেলো তোকে। কি যেন বলতে চাইলো, পরে আবার কি ভেবে চলে গেলো।’
‘আচ্ছা মা আমি যাচ্ছি।’
‘কোথায় যাচ্ছিস? খেয়ে যাবি না? নাস্তা হয়েছে তো, আবির।’
‘কাকা, আসসালামু আলাইকুম। আমায় খোঁজ করেছিলেন, মা বলল।’
‘হ্যা বাবা। আমাকে একটা ফেভার করতে হবে যে।’
‘কি করতে হবে তাই বলেন।’
‘আমার মেয়েটা ঢাকা থেকে বাড়ি আসবে। তোমার যদি খুব ব্যস্ততা না থাকে আমার মেয়েটাকে এগিয়ে আনবে। আমার আবার স্কুলের মিটিং থাকতে হবে। না থাকলে হেড স্যার রাগারাগি করবেন।’
‘কাকা, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি নিয়ে আসবো।’
‘তুমি অর্পিতা না?’
‘হ্যা আবির ভাই। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী। আপনার মনে আছে আমাকে আপনি সবসময় পিচ্ছু বলে ডাকতেন? শুরুতে অবশ্য পিচ্ছি বলতেন। কিন্তু একদিন আচ্ছেমতো আপনার কানমলে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে পিচ্ছি থেকে পিচ্ছু বলে ডাকতেন। আর আমাদের বাড়ি এলেই আমার বই থেকে নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করতাম আপনাকে। প্রশ্ন করার সাথে সাথে আপনি উত্তর দিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে দু’য়েকটা উত্তর দিতে না পারলে আপনার মন খারাপ হয়ে যেতো। খুব লজ্জা অনুভব করতেন আপনি। আর আপনি না পারলে আমার খুব আনন্দ হতো। মনে হতো এইবার আপনাকে হারিয়ে দিলাম।’
‘হয়েছে হয়েছে এবার থামো। পাকনা দাদিমা আমার। কত বড় হয়ে গেছো, কাকা শুধু শুধুই আমায় তোমাকে নিতে পাঠালো। তুমি ঢাকা থেকে একা একা চলে আসছো, আর এই সামান্য পথটা তোমায় এগিয়ে নিতে হবে, এটা কোন কথা হলো?’
‘আপনি আসলেন কেন? বাবা তো এমনিতেই একটু বেশি করে। আচ্ছা আবির ভাই, আপনি বিয়ে করেছেন?’
‘ঐ পিচ্ছু, পাকনা কথা কম। ছোটদের এত বেশি কথা বলতে হয় না।’
‘হা? কি বললেন? আমি আর ছোট নাই। এখন অনেক বড় হয়েছি। আপনিই না একটু আগে বললেন? নিজে কি বলে, নিজেই ভুলে যায়।’
‘এই যে বাড়ি দিয়ে গেলাম, কাকা আসলো বলো।’
‘না বলবো না। বাবা আসলে বলবো আপনি নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছেন। আমি যেতে চাইনি বলে, আমায় স্টেশনে একা ছেড়ে চলে গেছেন।’
‘ওরে বাবা, কী ভয়ংকর মেয়ে হয়েছে। এই তুমি গ্রামে আসছো কেন? কয়দিন পরতো গ্রামের মানুষ বিপদে পড়বে তোমায় নিয়ে। আচ্ছা আমি গেলাম।’
‘আবির ভাইয়া, এতবার বলতে হবে না। আমি জানি আপনি চাচ্ছেন আপনাকে আমি বলি- না ভাইয়া যাবেন না, একটু বসেন। চা খেয়ে যান। আর সেই সুযোগে আরো কিছুক্ষণ আমার সাথে সময় কাটাতে চান।’
‘সেরেছেরে, এই মেয়ে তো মারাত্মক বিপদজনক। এই তুমি কি ঢাকায় ছিলে নাকি লন্ডনে ছিলে? কী পরিমাণে দুষ্টু হয়েছে। দাড়াও কাকাকে বলে একসপ্তাহে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো।’
‘তাহলে আপনারই ক্ষতি। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া একটা মেয়েকে হারাতে হবে।’
‘বাহবা, আসছে আমার বিশ্ব সুন্দরী, তাকে নাকি প্রথম দেখেই প্রেমে পড়েছি। ধ্যাৎ কার সাথে বকবক করছি আমি। এই গেলাম।’
‘যান যান, আমি জানি আবার আমায় দেখার জন্য চলে আসবেন।’
‘খাইছে আমারে। এই মেয়ে থেকে একশো গজ দূরে থাকতে হবে। না হলে যেকোন সময় গলার কাটা হয়ে লেগে থাকবে। কী মেয়ে কী হয়েছে!’
‘ওই একা একা বকবক করছিস কেন? কোথায় গিয়েছিলি?’
‘ওহ রিয়াম তোর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিলাম। ভালই হলো তোকে পেয়ে গেছি। চল আমার সাথে।’
‘কোথায়?’
‘তোর চোখ মুখ শুকিয়ে আছে, সকাল থেকে নিশ্চই কিছু খাসনি। আমিও নাস্তা করিনি এখনো। কিরে আমার দিকে তাকিয়ে কী দেখছিস? চল, চল। রফিক ভাই, চটজলদি আমাদের পরোটা দাও।’
‘আবির ভাই পরোটা তেলে ভাজা, নাকি তেল ছাড়া? আর সাথে কি খাইবেন? সবজি, ডাল না ডিম ভাজা?’
‘তেল ছাড়া আর ডিম ভাজা দাও। সাথে সবজিও দাও।’
‘দিতাছি ভাই, একটু বহেন।’
‘রফিক ভাই তোমার ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি নিয়েছিলো?’
‘আবির ভাই আমি কী আর ভর্তি করাইতে পারতাম। ওই স্কুলে তো শিক্ষিত লোকের ছেলে-মেয়েদের পড়ায়। আমি মুর্খ মানুষ। আপনার ভাবিরে নাকি আপনি বলছিলেন নিয়া যাইতে, সে লইয়া গেছিল। আপনার কথা বলতেই নাকি ভর্তি করাইয়া নিলো।’
‘আরে না, মুর্খ-শিক্ষিত না, সবাইকেই ভর্তি নেয়। শুধু তারা জানতে চায় বাবা-মা শিক্ষিত কিনা। বাবা-মা শিক্ষিত হলে, ছেলে-মেয়েদের সহজে পড়াশোনা করানো যায়।’
‘বিল দেওয়া লাগবোনা আবির ভাই। আপনি যান তো।’
‘আরে কী বলেন, এটা আপনার ব্যবসা। এটা দিয়ে আপনার সংসার চলে। এই নেন। পড়ে এসে চা খেয়ে যাবো ফ্রি তে। মন খারাপ করবেন না।’
‘আইচ্ছা আইসেন ভাই। কী ভালো মানুষ! এই যুগে কারো জন্য কেউ চিন্তা করে!’
‘রিয়াম, তুই কালই একবার তোর বোনকে নিয়ে ঢাকায় চলে যা। তোর থাকার ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। মাহবুব নামে একজন ডাক্তার আছে। ওনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ওনার সাথে সব সমস্যা খুলে বলবি, যা যা প্রয়োজন ওনি বলে দিবে কি করতে হবে। যাওয়ার পর আমার সাথে কথা বলিয়ে দিস। আর এই টাকা টা রাখ, এখানে বিশ হাজার টাকা আছে।’
‘আবির, এত টাকা আমি তোকে কিভাবে ফেরত দেবো? আর কোথায় কিভাবে কী করবো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।’
‘তোর কিছুই বুঝতে হবে না। কাল সকালেই রওয়ানা হয়ে যা।’
‘ঠিক আছে দুস্ত। কিন্তু তুই আমার জন্য যা করছিস তার কোন বিনিময় হয় না।’
‘ঠিক আছে দুস্ত। কিন্তু তুই আমার জন্য যা করছিস তার কোন বিনিময় হয় না।’
‘আবির ভাই, দুই দিন অফিসে আসলেন না, ঘটনা কী? অফিসে তো দুই দিন শোক দিবস পালন করছিলো।’
‘কেনো সবাই কি ভেবে নিয়েছে, আমি মারা গেছি?’
‘আরেহ না ভাই, আপনি অফিসে না আসলে তো অফিসের পরিবেশ খুব শান্ত হয়ে যায়। ছোটবেলায় যখন আমাদের রেখে বাবা-মা কোথাও বেড়াতে যেতো, তখন বাড়িটা খুব ভারী ও নিরিবিলি হয়ে যেতো। আপনি অফিসে না থাকলে ঠিক তেমন মনে হয়।’
‘অনেক বলছেন ভাই। এতোটা নিতে পারবোনা।’
‘নিতে না পারলে ফেরত দিয়ে দেন।’
‘হা হা, আপনি খুব মজার মানুষ ভাই।’
‘আপনার মতো আর হতে পারলাম কোথায়। আপনি তো ফেমাস ভাই।’
‘আচ্ছা ভালো কথা, আমার বন্ধুকে একটা ফোন করা উচিৎ। কিরে রিয়াম, কি খবর? ভালভাবে পৌছেছিস?’
‘হ্যা দুস্ত। খুব সুন্দর ভাবে সব কিছু শেষ হলো। তোর মামা তো আমাকে কিছুই করতে দিলো না। থাকা, খাওয়া, হসপিটালে ছুটাছুটি সব কিছুতে ওনি অবিশ্বাস্য সহযোগিতা করেছে। ওনি থাকাতে আমার বাড়তি কোন চিন্তাই করতে হয়নি। আশা করছি দু’য়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবো।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। ভালোভাবে আসিস।’
‘কিরে রিয়াম, শুনলাম নতুন বাড়ি করছিস?’
‘তেমন কিছু না। খুব সাধারণ একটা বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হচ্ছে। নিরব তোর একটা ফেবার লাগতে পারে আমার।’
‘বলিস। বান্দা যেকোন প্রয়োজনে হাজির।’
‘আরে বলিস না, তুই তো জানিস আমি কারো সাথে ঝামেলা করা পছন্দ করি না। কিন্তু জলিল চাচা, মানে আমার বাড়ির পিছনে যে বাড়িটা সে বাড়ির মালিক, আমার বাধা হয়ে ওঠেছে। আমার বাড়িটা একটু উচু হওয়াতে, ওনার বাড়ির আঙ্গিনায় আমার বাড়ির বৃষ্টির পানি পরে। এটা নিয়ে উনি খুব খারাপ খারাপ কথা শুনিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ভাবছি বাড়ির পিছনে একটা ড্রেন তৈরি করে দিলে পানিটা ওনার বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে পরবেনা। কিন্তু কাজটা তোকে করে দিতে হবে, কারণ এটা করতে গিয়ে ওনার বাড়ীর সীমানা ঘেষে ড্রেনটা করতে হবে। এটা ওনি সহজভাবে নিবেন না। তোকে তো পছন্দ করে, তোকে কিছু বলবেন না।’
‘হুম, বুঝতে পারলাম। হয়ে যাবে। তুই ভাবিস না।’
‘নিরব, আবির কি ফেবার চাইল তোর কাছে? সে তো হাজী মহসিনের জ্ঞাতি ভাই। তারও সাহায্য লাগে?’
‘শুন সোহাগ, সে বরাবরই মানুষের সামনে মহাপুরুষ সেজে থাকে। মানুষকে দেখাতে চায় যেকোন মানুষের সমস্যায় সে নিয়োজিত প্রাণ। কখনো কোন মানুষের সাথে ঝামেলায় জড়ায় না নিজেকে। কেউ অন্যায় করলেও সে নিজে তার প্রতিবাদ করেনা। কখনো কারো সাথে বিতন্ডা হবার আগেই অন্য কারো ঘাড়ে অতি কৌশলে সে দায় তুলে দেয়; যাতে নিজেকে কোন দায় না নিতে হয়। এমনকি সে সবার সামনে দেখাতে চায় সে খু তুমি নিজেকে আড়াল করে আমাকে ওনার সামনে মন্দ করে তুলছো। মনেমনে ভাবলো নিরব। কিছুদিন আগে ওর সাথে একটা প্রজেক্ট)।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment