Friday, September 18, 2020

পথের দিশা

পথের দিশা

মোঃ অলিউল্লাহ

 একটা সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের মধ্য দিয়ে নিজেকে খোঁজে পেয়েছি বিভিন্ন পরিচয়ে। প্রথমে তো আমার কোন ইনটেনশন ছিল না সুখ-দুঃখ কী জিনিস তা জানবার।আপন মনে হেসে খেলে সময় পার করাই সেই সময়ের সীমাবদ্ধতা ছিল। গুরুজনরা ঠিক যতটা শিক্ষা দিত মেনে চলার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তফাৎ বুজতাম না ভাল ও মন্দ কাজের। নৈতিক শিক্ষা ও প্রকৃত জ্ঞানের  পথে থাকার পথটা সংকীর্ণ ছিল। 

আমার বিচরণের  মূল উদ্দেশ্য আমার জানবার কথা নয়। তবুও মায়ের কোলে বসে বসে অনেক মূল্যবান উপদেশ ও জ্ঞানঅর্জন করেছি। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিলনা।

গতানুগতিক শিক্ষার্জন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য যে জ্ঞান অর্জন করা দরকার তাতেই মশগুল ছিলাম। শিক্ষা শেষে সেই জীবিকা নির্বাহ করার তাগিদে কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করলাম। 

কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানদানকারীর ও জীবন যাপনের উত্তম ফায়সালকারীর প্রতি যথার্থ আনুগত ছিলাম না। যে মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মত প্রত্যেকের জান মাল, জীবন যাপনের দায়িত্বে রয়েছেন; সুনিশ্চিত রিজিকদাতা ও সর্বোপরি লালনপালনকারী তার প্রতি মুখাপেক্ষী না হয়ে, আমরা বরং ভেবে নিয়েছিলাম নিজেরাই নিজেদের সর্বাপেক্ষা উত্তম পরিচালনা করতে পারব। 

কিন্তু সেই উপলব্ধি হতে অনেক দেড়ি হয়ে গেল। জীবনের সমাপ্তির লক্ষণ নিজের মধ্যে উপলব্ধি করার পর বুঝতে পারলাম ফার্স্টক্লাস পাওয়া ডাবল অনার্স ও ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রীধারী হয়েও নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। হতে পারিনি বিশেষ কেউ। যে উদ্দেশ্যে জীবনের দীর্ঘ সময় চলে গেল, তা তো সেই মহান পালনকর্তার ইচ্ছা ছাড়া সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।

তিনি যা নির্ধারণ করেছেন তার মধ্য দিয়েই আমাকে তাহার আনুগত্যে থেকে সর্বোৎকৃষ্ট জীবন যাপন করতে পারি। মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামত রাজির যৎ সামান্য আমরা খরিদ না করে পাই। তাঁকে না জেনে, না চিনে কেবল তিনি পাঠিয়েছেন সেই কারণেই হয়ত সকল নেয়ামত থেকে আমাদের বঞ্চিত করেন না। না চেয়ে, না চিনে, না জেনে যার কাছ থেকে আমরা এতো কিছু পেতে পারি, আর তাঁকে চিনতে পারলে ও তাঁর আনুগত্যে থেকে চাইলে তিনি আমাদের কিনা দিতে পারেন। 

পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে এমন একটি বাক্য কী আছে, যেটা মুমিনের ক্ষতির কারণ? এমন কোন কিছু কি আছে যা মান্য করা মানুষের দুঃসাধ্য? অথচ আমরা কতই হতভাগ্,  সেই মহাগ্রন্থের তাৎপর্য বুঝিনা ও এর বানীগুলোকে নিজেদের ভাষায় বুঝতে চাই না।  যদি বুঝতাম তাহলে তা আমাদের জন্যই কতইনা মঙ্গল জনক হতো। পৃথিবী সকল সমস্যার ফায়সালা কারী আর কোন গ্রন্থ কী আছে, আল-কুরআন ব্যতিত?

আমাদের ঈমান ও আমাদের চিন্তা শক্তি ততদিন অত্যন্ত গরিবি হালাতে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না বুঝে শির্ক করতে থাকবো। আমাদের মধ্যে কিছু অত্যন্ত বিজ্ঞ জনেরাও মনে করেন অসুস্থ হলে ডাক্তার ভাল করে দেবেন; ঘরে খাবার নাই কাজের সন্ধানে গেলে খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে কিন্তু আমরা কি ভেবেছি আসলে কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি? সুস্থ্য হবার জন্য ডাক্তার উছিলামাত্র প্রকৃত সুস্থ্যতা দানকারী তো মহান আল্লাহ তায়ালা, যদি আমরা বুঝতে পারতাম। কাজ করা কেবল খাবার আহরণের চেষ্টা, প্রকৃত রিযিকদাতা তো তিনি, যিনি মহাবিশ্বের সকল প্রাণের খাদ্যের যোগান দেন।

দেড়ি হলেও বুঝতে শিখেছি, আমি যেমন আছি অগণিত মানুষের চেয়ে উত্তম আছি আল্লাহর রহমতে। তিনি ইচ্ছা করলেই আমাদের সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবতীর্ণ করতে পারেন। আর আমাদের অকৃতজ্ঞতার জন্যে মুহুর্তের মধ্যেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন।

 

সৃষ্টি লগ্ন হতে আজঅবদি যারা নেক্কার, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন, সৎ, সুশৃংখল, জ্ঞান-অনুরাগী, পর হিতৈষী, ধৈর্য্যধারণকারী, বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন তাদেরকে কোনভাবে মন্দ বলতে পারবেন, যদি আপনি সঠিক বিবেচক হয়ে থাকেন? আর এসব গুণাবলী তো কেবল সেই অর্জন করতে পারে, যে কিনা পরহেজগার, ঈমানদার ও এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস স্থাপনকারী। সেই সুবিবেচক ও প্রকৃত পক্ষে বুদ্ধিমান যে তার চিন্তাচেতনার দ্বারা সমস্ত সৃষ্টির কথা ভাবে ও এসবের গতিবিধি নিয়ে ভাবে ও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় সমগ্র সৃষ্টি জগতের পরিচালক আর কেউ নন মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া।

আর যে তাঁর সমস্ত নেয়ামত ভোগ করার পরও তাঁকে আবিষ্কার করতে পারলনা তার মতো হতভাগা ও অকৃতজ্ঞ আর কে আছে। আমরা সবাই এটাতো জানি যে, আামাদের যেকোন সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তো জানে বিচার দিবসের কথা; সেদিনের কথা যেদিন সমস্ত জীবনের কৃতকর্ম আমাকে জান্নাত কিংবা জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে। তাহলে কী সময় আসেনি আমাদের সুপথে চলার? একটি সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অক্লান্ত শ্রম ও ত্যাগ তিতীক্ষার বিনিময়ে যদি ১৫/২০ বছর সময় অতিবাহিত করতে পারি শুধু পড়াশোনা করে, তাহলে পরকালের জীবন যাপনের (যা পৃথিবীর তুলনায় কত হাজার কোটি গুণ উত্তম) জন্য কী সামান্যও সময় ব্যয় করা উচিৎ নাা? এখনো কী সময় আসেনি পথের দিশা খোঁজে বের করার?

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুপথে আসার তৌফিক দান করোক, আমিন!


                                

    

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment