পথে-ঘাটে
মোঃ অলিউল্লাহ্
হতচ্ছাড়া হিসেবে কদর আছে ওর কাছে আমার। মাঝে মাঝে ও আমার প্রতি খুব বিরক্ত। আবার কখনো কখনো আমি নিজেই গায়ে পড়ে অভিবাবকত্ব দেখাতে যাই। আমরা দু’জনেই নিজ মতের বাইরে গিয়ে কিছু করতে খুব একটা বাধ্য না। কিন্তু প্রায় সবসময়ই নিজেদের মধ্যে দুনিয়ার যত সমস্যা আছে, সেসব বিষয় নিয়ে শলা-পরামর্শ করি। দু’জনই দু’জনকে চটপটে অনেক সমাধান দিয়ে ফেলি একমূহুর্তে। যদিও সেই সমাধানের দ্বারপ্রান্তেও দুইজন পা মাড়াই না।
এই ‘ও’ টা আমার একমাত্র বান্ধবী ফাহমিদা। হতচ্ছেড়া জেনেও এই হতচ্ছেড়িটা আমায় বন্ধু বলে দাবি করে। প্রতিদিনের মতো সেদিন আমার অফিস যাতায়াত নিয়ে ওঠে পরে লেগেছো ও। বলে বসল, ‘ওই তুমি একটা বাইক কিনো। প্রতিদিন এত লেট করে বাসায় ফিরো আর গাড়িতে এত ঝামেলা করে যাওয়া-আসা করো’।
বললাম, আমায় বিয়ে করবা?
সে বলল, ‘বাইক কেনার সাথে তোমাকে বিয়ে করার কি সম্পর্ক?’
না মানে আমি তোমার বাবার কাছ থেকে বাইক কেনার টাকাটা পেতাম আর আমার বাসায় তো গ্যারেজ নাই। তো তোমার বাসায় থাকতেও পারতাম আর গ্যারেজ এর টাকাটাও বেঁচে যেতো। আর ফুয়েল এর জন্য তো তুমি আছোই। সপ্তাহে দুইদিন ফুয়েল এর খরচ দিলেই চলবে।
‘শয়তান! একটা ভাল পরামর্শ দিলাম আর তুমি আমার সাথে ফাজলামি শুরু করে দিয়েছো।’
আরে নাহ। আমি খুব সিরিয়াস।
ফোনের লাইনটাই দিলো কেটে। এবার নিজে নিজে কিছুক্ষণ হেসে নিলাম। আসলে প্রতিদিন অফিসে যাওয়া ও আসায় আমার ২৪ ঘন্টার ৪ ঘন্টা চলে যায়। এই সময়ের বিভক্তিতে আমার ব্যক্তিগত যে সময়ের রুটিন তা তো যাচ্ছেই পাশাপাশি নির্ধারিত অফিস টাইম থেকেও কিছু সময় এখানে চলে যায়। আমার ভাগের যে সময় যাচ্ছে, সেটা নিয়ে তো আর খবরদারি করার কেউ নেই। কিন্তু অফিসের সময়ের জন্য কিন্তু প্রায়শই খবরদারির কৃপণতা হয় না।
তা যেমনই হোক, চলার পথে কিন্তু নানা ধরনের আনন্দও পেয়ে থাকি। কিছুদিন আগে লোকাল বাসে চড়ে অফিস যাচ্ছিলাম। রীতিমতো সেদিনও ঘুমাচ্ছিলাম বাসের সীটে। হঠাৎ করেই কানে টসটস করে এক মেয়ে কন্ঠ ধাক্কা দিচ্ছিলো। চোখ মেলেই দেখলাম আমার পাশেই রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছেন একটি সুন্দরী মেয়ে। আসলে আশপাশে দাড়িয়ে থাকা অনেক ছেলেদের সাথে দাড়াতে গিয়ে উনি বিব্রতবোধ করছেন তা বুঝতে পারলাম। আর সে জন্যই কথা কাটাকাটি করছিলো। কিন্তু তাকে দেখে আমার চোখ ফেরাতে দ্বিধা হচ্ছিল (ফ্রাঙ্কলি স্পিকিং ☺) ।
একবার বাহিরে তাকিয়ে আমি হন্তদন্ত হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। মেয়েটি আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘আপনি বসুন’। এত সুন্দর করে বলল, আমি তাঁর চোখের দিকে তাকালাম একবার আর একবার দুই ঠোটের নড়াচড়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে বসে গেলাম। কিছু সময় ধরে ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়েও ফিরে এসে দেখি অন্য এক স্টেশনে গাড়ি থামলো।
আবারো একবার দাড়ালাম, বরাবরের মতো তখনো মেয়েটি বলল- ‘না না আপনাকে ওঠতে হবে না আপনি বসুন।’
কি আর করার বসে গেলাম। এবার অন্য এক স্টেশনে থামলো গাড়ি। দাড়ালাম সে আবারো একই কথা বলতে গেলো। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, প্লিজ আর বসতে বলবেন না। আমি আপনার কথা শুনে অলরেডি তিনটা স্টপেজ ফেলে চলে আসছি। এমন হতে থাকলে আমার আর আজ অফিসে যাওয়া হবে না।
মেয়েটি ভেবাচেকা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুই বলতে পারলো না। এমন আরো অনেক কিছুই ঘটে পথে ঘাটে। কিছুদিন আগে এক গাড়িতে ওঠেছি খুব কষ্টে ধাক্কাধাক্কি করে। গাড়ির গেইটে দাড়িয়ে কয়েকজন ভদ্র মহিলা। একজন লোক এসে বলল- ‘আপা আমাকে একটু ওঠতে দেন।’
এক ভদ্র মহিলা বলল, ‘গাড়িতে আর জায়গা নেই ওঠার। পরের গাড়িতে আসেন।’
এবার ভদ্রলোক মেজাজ দেখিয়ে বললেন, ‘আপা আমাকে তো ওঠতে দিতেই হবে। তানাহলে গাড়ি এক পা ও সামনে যাবে না।’
ভদ্র মহিলা রেগে গিয়ে বললেন, ‘ এক পা ও সামনে যাবে না মানে কী? আপনি কী প্রেসিডেন্ট নাকি যে আপনার কথায় গাড়ি সামনে যাবে না?’
লোকটি উত্তর দিলো- ‘জ্বিনা আপা, আমি এই গাড়ির ড্রাইভার। আমাকে ছাড়া গাড়ি চালাবে কে?’
সামনে তাকিয়ে দেখলাম আসলেই ড্রাইভারের সীটে কেউ নেই। একদিন তো মহাকান্ড ঘটে গিয়েছিলো। গাড়িতে বসে আছি। গাড়িতে অনেক প্যাসেঞ্জার দাড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ এক ব্যক্তির কাছে, বাসের হেলপার ভাড়া চাইলো। লোকটি বলল, ‘দেখছিস না আমি একহাতে সিগারেট অার অন্য হাতে রেলিং ধরে রেখেছি? কোন আক্কেলে ভাড়া চাচ্ছিস?’
হেলপার বলল- ‘ঠিক আছে, তাইলে আমার হাতে সিগারেট টা দেন আর ভাড়া দেন।’
লোকটি বলল- ‘আমারে কী বলদ পাইছস, তোর হাতে সিগারেট দেই আর তুই এটা খেয়ে ফেল তাইনা? এক কাজ কর, তুই রেলিংটা ধর, আমি ভাড়াটা দিচ্ছি।’
মাঝে মাঝে বিষণ বিরক্ত হই যখন জ্যামে পড়ে থেকে গরমে অতিষ্ঠ হই। আবার কখনো কখনো টানা একটা সময়ে ভাবনার মধ্য দিয়ে হারিয়ে যেতে পারি। ফাহমিদা যখন আমায় বাইক কিনতে বলেছিলো, আমার কিছু লেইম এক্সকিউজ ছিলো। প্রথমত বাইকে বসে আমি ভাবতে পারবোনা, ড্রাইভিং এ কনসান্ট্রেট করতে হবে। অতিরিক্ত খরচ আর নিরাপত্তাজনিত কারণ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার গাড়িতে বসে যেমন হাজারো রকম মানুষের নানা অভিজ্ঞতা ও বাহিরের দৃশ্য সেগুলো বাইকে থেকে উপভোগ করা সম্ভব না।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment