আমার না বলা কথা [মোঃ অলিউল্লাহ্]

আমার না বলা কথা

তুমিই আমায় বলে গেলে,  যা আমার বলার ছিলো তোমাকে।  প্রতিদিন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে তুমি দৌড়ে ছুটে আসতে দরজা খুলে দিতে।  প্রায় প্রতিবারই একটা আবেগি চাহনিতে তোমার বদনখানি দেখতাম।  কোন একটা সময়ে মনে হয়েছিল আমি আর তোমার মনের বারান্দার অদূরে নই।  ইচ্ছে হতো প্রায়ই,  আজই প্রকাশ করি নিজের অভিপ্রায়।  বহুদূরে চলে যাবার নোটিশ এসে গেল,  অব্যক্ত কথাগুলো রইলো অগোচরেই।  তবে কি জানো, চলে যাবার কিছু আগেই তোমার উপস্থিতি আমায় অবাক করেছিলো।

আমার সাজানো কথাগুলো বললে তোমার মুখ দিয়ে।  যদিও দূরে চলে গেলাম,  তবুও তোমার খুব কাছেই রেখে দিলে আমাকে।  প্রতিদিন কতকিছুই না ভেবে যেতাম তোমায় বলবো বলে,  কিন্তু বলার সেই সময়টাই তুমি দিতে না।  শুধু নিজের কথাগুলোই বক্বক্ করে বলতে থাকতে।  অবশ্য এগুলো শুধু যে তোমার একার তা নয়।  আমার না বলা সব কথাগুলোও তুমিই বলে ফেলতে।  আমার বলার দায়িত্বটা বুঝি তোমারই ছিল।  আর সে কারণে আমি সর্বদা চুপ করে থাকতাম।  চলে যাবার সময় বরাবরের মতো বলতে,  এই তুমি তো কিছুই বললে না। 

মুখে ধার করা একটা সামান্য হাসি দিয়ে তোমায় সান্ত্বনা দিতাম।  যা খুবই ক্ষুদ্র ছিল,  তোমায় ভুলানোর জন্যে।  খুব কষ্টে যখন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো,  তখন ভাবতাম-তোমায় বললে হয়তো কিছুটা প্রশান্তি পেতাম।  কিন্তু যখনই মনস্থির করলাম বলবো তোমায়,  ঠিক একই বিষয়ে বলার জন্য তুমি আমায় তাড়া করলে।  বাধ্য হয়ে তোমারটাই শুনলাম,  আর আমার  চাপা কষ্টগুলো তোমাকে দেওয়া সান্ত্বনার সাথে মিশে গেল। 

একদিন মনের ভিতর ঝড় বইছিল,  কেন জানি মনে হচ্ছিল আমি তোমায় ঠকাচ্ছি। আমার অতীতটা তোমায় জানালে হয়তো অনেকটাই হালকা হতে পারবো। পরদিন তুমি সামনে এসে মুখভার করে বসে রইলে।  আমি ভাবছিলাম কিভাবে কথাটা তোমায় বলবো,  আর তখনি অকপটে তুমি বললে- ‘আমার কেউ একজন ছিল, যাকে আমি খুব ভালবাসতাম। ’

আমি কিছুই বললাম না,  মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম।  আর চেষ্টাটা করলাম এইজন্যে যে,  আমারও তো একটা অতীত আছে,  তবে বুকের ব্যথাটা যেন শতগুণে বেড়ে গেল।

আমার মনে পড়ে সেই আষাঢ়ের দিনটির কথা।  যেদিন তুমি আমি বর্ষার জলে নৌকায় চরবো বলে বেড়াতে গিয়েছিলাম। জলের উপর ভেসে ভেসে জলরাশির কলকল শব্দ আর তোমার হাসির শব্দ, দুই মিলে আমায় উদাসীন করে তুলেছিল। আনমনা  হয়ে ভাবনার অতলে হারিয়ে গেলাম। অতলস্পর্শ ভাবনার আধলে আমার মনে কম্পন তৈরি করলো তোমার অতীত। আমি বারবার নিজেকে তোমায় সমর্পণ করতে চেয়েও ব্যর্থ হলাম। জোর করে ভালোবাসতে গিয়ে মনের অভ্যন্তরটাই তোমাকে অবগত করলাম। ততক্ষণে আমার প্রতি তোমার যে মোহ ছিল তা অনেকাংশেই লোপ পেল।  দিনের পর দিন আমি তোমায় লক্ষ্য করলাম।  তুমি আমার পাশে থাকতে ঠিকই,  কিন্তু তোমার মনের গহীনে খেলা করতো কোন এক অতিথি পাখি। 

ধীরে ধীরে তুমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে যে,  তুমি সেই অতিথি পাখির সঙ্গী হয়ে দূর অজানায় ঘুরে বেড়াবে। কোন ঝগড়া বা বিবাদ কিছুই হয়নি আমাদের।  কিন্তু প্রতিবন্ধকতা শুধু আমার বেমানান স্বভাব।  যা ছিল তোমার একমাত্র পুঁজি।  তানাহলে তো তুমি আমার কাছে থেকে মুক্তি পেতে না।  তবে এখনো তুমি রয়ে গেলে আমাতেই।