Sunday, July 18, 2021
শেষ চিরকুট || মোঃ অলিউল্লাহ্
হেদায়াতের সুর, মোঃ অলিউল্লাহ্
হেদায়েতের সুর
ওহে মুসলমান, সময় থাকিতে সৎ পথে আসো, মজবুত করো ঈমান।
যে ভবের মায়ায় রয়েছো মাতিয়া, রহিম-রহমান নাম ভুলিয়া,
কি জবাব দেবে হিসাবের দিনে, যবে শূন্য আমল নিয়ে যাবে চলিয়া?
নির্বোধ তুমি করো উপহাস, যে ডাকে তোমায় সৎ পথে আসো,
পথভ্রষ্ট হয়ে আনন্দে হাসো, উদ্দেশ্যহীন তরীতে ভাসো।
নামাজ পড়না, রাখোনা রোজা, বাড়াচ্ছ দিনদিন পাপের বোঝা,
কড়ায়-গণ্ডায় হিসেব নেবে- হারাম কাজের পাইবে সাজা।
ওহে মুসলমান, সত্যের পথে হও আগুয়ান
ছেড়ে দাও আজি ধান্দাবাজি, চুরি, সুদ, ঘোষ আর মিথ্যে বলা,
দিনশেষ হলে সব হারাবে, শেষ হয়ে যাবে এ পথ চলা।
মুসলিম বাবার ছেলে হলেই, হবে কী মুসলমান?
ঈমানদার হতে না পারিলে, আল্লাহ-রাসূল না চিনিলে
তুমি কেমন মুসলমান?
ওহে মুসলমান, এখনি সময় ফিরে আসিবার দ্বীনের পথ ধরে,
মসগুল থাকো ইবাদতে দিবস-রজনী জুড়ে, নূরের প্রদীপে আলোকিত করো তব অন্তরে।
কোরআন বুঝে তিলাওয়াত করো, হাদিস পড়ো রোজ,
দ্বীনের কাজে আগুয়ান হয়ে সত্যের করো খোঁজ।
স্মরণ করো বিপদ এলে, মুক্ত করেন কে?
সারা জাহান নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ করেছেন যে।
কবরের ডাক আসবে যখন, থাকবে কী আর উপায়?
তাইতো আজই সাদা কাফনে তৈরি করো তোমায়।
Thursday, July 15, 2021
ব্যবসায় করতে গিয়ে কতটা লাভ করা জায়েজ?
আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন ব্যবসায়িরা পন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মুনাফা ধরে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়েজ?
ইসলামের দৃষ্টিতে কোন লাভের সীমা নির্ধারণ করা আছে কিনা যে, এর চেয়ে বেশি লাভ করা যাবেনা, তা জানার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে সূরা আলে ইমরানের ২৯ নং আয়াতে এই বিষয়ের মূলনীতি নিয়ে বলা হয়েছে- “ হে ঈমানদারেরা তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করোনা, তবে তোমরা একে অন্যের সম্পদ ভোগ করতে পারো কেনা-বেচার মাধ্যমে।”
এই আয়াত থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম, তা হলো কোন বিক্রেতার নির্ধারিত দামে কোন ক্রেতা সেই পন্য খুশি মনে কিনতে রাজি থাকলে বিক্রেতার জন্য সেই লাভ জায়েজ আছে।
এছাড়া বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লাভের কোন পার্সেন্টেজ নির্ধারিত করে দেওয়া হয় নি। কোরআন কিংবা হাদিসে এর বেশি তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
কিন্তু পন্য বিক্রি করতে গিয়ে তিনটি কথা গুরুত্ব সহকারে মাথায় রাখতে হবে। তা হলো-
১. বিক্রেতা এমন কোন মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারে যাতে ক্রেতা রাজি হয়ে যেতে পারে। যেমন- বিক্রেতা বলল আমার পন্য এতো টাকায় কেনা, আসলে এর থেকে কমে কেনা। এরূপ মিথ্যে বলা যাবে না।
২. কোন পন্যের দাম ক্রেতার জানা নাই ভেবে বিক্রেতা যদি চড়া মূল্য হাকিয়ে নেয়। এরকম করাটা অন্যায় হবে। নবী করিম (সঃ) বলেন, সেই লোক আমার উম্মত হতে পারেনা, যে ধোকা দিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়।
৩. পুরাতন পন্যকে নতুন বলে প্রতারণা করা জায়েজ হবেনা।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ওই ব্যক্তির উপর রহম করবেন, যে ব্যক্তি বিক্রি করার সময় কোমলতার পরিচয় দেয়।
যার সাথে লেনদেন করবে তার জন্য যেনো লেনদেন সহজ হয়। খুব বেশি চড়া মূল্য, অনৈহ্য মূল্য বা অযুক্তিক মূল্য, যা ক্রেতার জন্য কষ্ট হয়ে গেলো, সেটা মুমিনের চরিত্র হতে পারেনা। খেয়াল রাখতে হবে ক্রেতার জন্য তা যেনো জুলুম হয়ে না যায়, খুব কষ্ট যেনো না হয়। এটাই নৈতিক হবে। তবে একে হারাম বলা যাবেনা।
সূত্র: শায়খ আহমাদুল্লাহ
#ইসলামে ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিধান; #বেচা-কেনায় কতটুকু লাভ করা শরীয়তে জায়েজ; #বিক্রেতা কতটা লাভ করতে পারবে; # পন্য বিক্রয়ে জুলুম না করা; #ইসলামি শরীয়তে পন্য কেনাবেচা; #ক্রেতার সাথে মিথ্যা বলে বিক্রি করা;
জীবনের বাঁক
জীবনের বাঁক
মোঃ অলিউল্লাহ্
কত দিন পর একটা সুন্দর সকাল দেখছো তাই না? মনে পড়ে ঠিক কত দিন হয়েছে ভোরে ওঠে ফজরের নামাজ পড়ে নির্জন পিচঢালা পথে হাটতে বের হওনি? বহুদিন আগে একবার তুমি আমি আমাদের গ্রামের পিচঢালা পথে এমন কাকডাকা ভোরে হাটতে বের হয়ে ছিলাম মনে আছে?
“আছে
না আবার। অবশ্যই মনে আছে। তখন আমি বাড়ির নতুন বউ। আমি বাড়ির বাইরে যাবো না
বলার পরও তোমার চাপাচাপিতে বোরকা পরে হাটতে বের হয়ে ছিলাম। রাস্তার দুই
পাশে তাল গাছের সারি, মাঠ জুড়ে ফসল। স্তব্ধ সকালে নির্জনতায় আমরা দুজন
ভোরের হাওয়ায় মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলাম।”
তোমার মুখটা আজ অন্যদিনের চাইতে প্রাণবন্ত লাগছে, মনে হচ্ছে লাবণ্যময়ী একটা মায়াবী বদন।
অর্পিতা- হয়েছে, হয়েছে। এই সকাল বেলায় আমার প্রশংসা করে মন প্রফুল্ল করতে হবে না। আমি এমনিতেই খুশি।
আবিদ হাসান - আমি সেটাই বলছিলাম, কোন প্রশংসা না করলেও আজ তোমায় অন্যরকম দেখাচ্ছে। কিন্তু বললে নাতো?
অর্পিতা- কী বলবো?
আবিদ হাসান - এইযে তোমায় প্রশ্ন করলাম, কতদিন পর এমন একটা সুন্দর সকাল দেখছো?
অর্পিতা- মনে নেই। আর ভাবতেও ইচ্ছে করছেনা। এখন শুধু ইচ্ছে করছে, এই মুগ্ধ আবহাওয়ায় মিশে গিয়ে স্নিগ্ধ-সুভাষিত ফুলের ঘ্রাণ টেনে নেই নাক দিয়ে। পাখিদের কিচিরমিচিরে কান পেতে রাখি অনেকটা সময়, শুনতে চাই ও বুঝতে চাই ওরা কি বলা-বলি করছে। কীসে এত আনন্দ ওদের? ঠিক কী এমন আনন্দে ওরা প্রতিভোরে জেগে ওঠে আর মেতে ওঠে কিচিরমিচিরে? ঐ নদীর মাঝখান থেকে ছুটে আসা শীতল হাওয়াটা কেবল আমার মুখে এসে পড়েনা; আমার প্রশ্বাসকে থামিয়ে দিয়ে নিশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে সমস্ত শরীরে একটা অলৌকিক অনুভূতির শিহরণ জাগায়। তুমিই বলো এমন পরিবেশে কী অন্য কিছু ভাবা যায়?
আবিদ হাসান - আমি কী জন্য প্রশ্ন করেছি, তা তুমি ভালো করেই বুঝে গেছো। তাই আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো। আসলে প্রতিদিনই ভাবি বিষয়টা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলি। কথা বলা উচিৎ। দেখো, জীবনটা কি? কেন আমরা দুনিয়াতে এলাম? জীবন ফুরিয়ে গেলে আমরা কোথায় যাবো? কী হবে আমাদের সাথে, সেটা কমবেশি আমরা সবাই জানি।
অর্পিতা- এই সাজ সকালে এসব নিয়ে কথা না বললে হয় না? কত সুন্দর একটা সকাল বলো। এই দেখো কতগুলো বকুল ফুল পরে আছে, আমাকে কিছু কুড়িয়ে দাও না। বাসায় গিয়ে মালা গাঁথবো।
আবিদ হাসান - তুমি আর সিরিয়াস হবে না (মুচকি হেসে)। এই নাও তোমার বকুল ফুল। গাছের তাজা ফুল।
অর্পিতা- তুমি গাছ থেকে কেনো ছিড়তে গেলে। গাছের ফুল গাছেই সুন্দর।
আবিদ হাসান -আরে নাহ, ছিড়ি নি। ডাল ধরে ঝাকি দিয়েছি, আর অনেকগুলো ফুল ঝরে পড়লো। এমনিতেই ঝরে যেতো রোধ ওঠলে। চলো নদীর ঘাটে গিয়ে বসি। (হাটতে, হাটতে) একটা মজার ব্যাপার কী জানো, ঢাকা আসার পর আমি যতবারই বাসা পরিবর্তন করেছি, প্রতিটা জায়গাতেই একটা অসম্ভব সুন্দর আকর্ষণীয় জায়গা খুঁজে পেয়েছি; যেখানে আমি প্রায় প্রতিদিন গিয়ে বসতাম, অবসর সময় কাটাতাম, মন খারাপ হলেই চুপচাপ একাকী বসে ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতাম। এখানে আসার পরও এই গোদারাঘাট ও নদীর পাড়টা আমার খুব ভাল লাগে। বিশেষকরে এই সকালবেলাটা। কারণ কিছুক্ষণ পর থেকেই এখানে হাট বসবে, প্রচুর লোকসমাগম হবে। তখন আর চাইলেও এই নির্জনতা উপভোগ করা যাবেনা।
অর্পিতা- ঢাকা আর কোথায় কোথায় এমন জায়গা ছিল, যেখানে তুমি সময় কাটাতে? আমায় নিয়ে যাবে সেই জায়গা গুলোতে? আমার বিশ্বাস এই জায়গাটির মতো, অন্য জায়গাগুলোও মনোমুগ্ধকর হবে। বাই দ্য ওয়ে, তুমি কিন্তু আমায় সেই বিয়ের পর থেকেই, আশা দিয়ে যাচ্ছো কক্সবাজার নিয়ে যাবে, কিন্তু নিয়ে তো যাচ্ছো না। সুযোগ পেলেই ওখানকার এটা সুন্দর, ওইটা সুন্দর বলে আমায় লোভ দেখাও। নিজে তো বিয়ের আগেই গিয়ে ঘুরে ফিরে সব শেষ করে ফেলেছো।
আবিদ হাসান - হা, হা। কী যে বল, ঘুরাফেরার কী শেষ আছে? আরো কত বাকি। নিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ। ঢাকায় একটা জায়গার নাম ছিল বাসাবো বাগানবাড়ি। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই একটা জায়গা ছিলো কালিবাড়ি মন্দির। বিশালাকারের একটি দিঘি ছিলো এবং চারিপাশে বিশাল বিশাল বটগাছ ও অন্যান্য গাছ ছিল। বসে সময় কাটানোর জন্য বেস্ট টাইম ছিল ভোর সকালে ও বিকাল বেলায়। আরেকটা জায়গা আমার খুব প্রিয় ছিল। বালুঘাট, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভিতরে একটা জায়গা ছিল লাল দিঘির পাড় নামে। বিকেল বেলা টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা কাটাতাম সেখানে। ভীষণ ভালো লাগতো। সবাই যেতে পারতোনা সেখানে, সিভিলরা ঢুকতে পারতোনা। আমার বিশেষ পাশ ছিলো। আরোও অনেক সুন্দর জায়গা ছিল, যেখানে আমি সময় কাটিয়েছি। এখন আর আগের মত সেসব জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে কিনা জানা নেই। শুন, একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবো, উত্তর দিবে?
অর্পিতা- আমি জানি যত গল্পই করিনা কেন, তোমার মাথার ভিতর যেই কথাটা ঘুরছে সেটা না বলা অবদি তোমার শান্তি নেই। আচ্ছা বলোতো জীবনের কোন সময়টা সব থেকে বেশি আনন্দের? মানে শৈশবকাল, কৈশোরকাল ও শেষ বয়সে। -(গুদারাঘাটে বেঞ্চে বসে।)
আবিদ হাসান - বিষয়টা আপেক্ষিক ও কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক।
অর্পিতা- কেমন? বুঝিয়ে বলোতো।
আবিদ হাসান - যেমন ধরো অধিকাংশ মানুষই উত্তর দিবে, সব থেকে আনন্দের সময় হলো শৈশবকাল। কারন ওই সময় জীবন নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা, পিছুটান, ক্যারিয়ার কোন কিছু নিয়েই ভাবতে হয় না। মনের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো যায়, যা সারাজীবন স্মৃতির পাতায় পঞ্জীভূত থাকে। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো কোন দায়িত্বই পালন করতে হয় না। কিন্তু জীবনের যোগ-বিয়োগের হিসাবে এই শৈশবের কোন মূল্যই নাই। তবে কৈশোরকালকে অনেকেই বলে জীবনের বেস্ট টাইম। এই কথাটাও আপেক্ষিক। যেমন কেউ বলল জীবনে সফল হওয়ার জন্য কৈশোরই শ্রেষ্ঠ সময়। এখন প্রশ্ন হলো- সফলতা কী? হাজারটা উত্তর আসবে, যার সুনির্ধারিত কোন উত্তর নেই। শেষ বয়সে মানুষ মূল্যহীন হয়ে যায়। গুরুত্ব হারায় সাথে হারায় সুদীর্ঘকালে গড়ে তোলা স্ট্রং পারসোনালিটিও। যে ব্যক্তি হিসাবে কম গ্রাহ্য তার ব্যক্তিত্ব আর কতটা। আবার অনেকে ডিফারেন্টও হয়। অনেকের শৈশব, কৈশোরের মতো শেষ বয়সটাও সমানতালে সুন্দর হয়ে থাকে। কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব তখনই প্রকাশ পায়, যখন অনন্তকালের জীবনের বুনিয়াদ তৈরি করে নেওয়া যায়। জীবনের যে অংশে সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করে, তার সঠিক ফলাফল লাভের যোগ্য হয়, সেই সময়টিই শ্রেষ্ঠ সময়।
আমি বলবো আমার জীবনের আসল সময় হলো একটা টার্নিং পয়েন্ট বা আমুল পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে আমি চিনেছি নিজেকে অনেকটা। আমি জেনেছি এই দুনিয়ার পরেও আরো একটা জগৎ আছে। আমি উপলব্ধি করেছি এই পৃথিবী নেহাত সৃষ্টি করা হয়নি এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীকেও অহেতুক সৃষ্টি করা হয়নি। সবকিছুর পিছনে একটা মোটিভ রয়েছে। আমার সব থেকে বড় যে পরিবর্তন, তা হলো আমার দৃষ্টিভঙ্গি; আমি জানতে শুরু করলাম প্রকৃত মানুষ কেমন আর জানলাম আমার আসল পরিচয় আমি মুসলমান। আর যখন জানলাম, আমি মুসলমান, তখন আমার দায়িত্ব বেড়ে গেলো। সেই দায়িত্ব আমাকে বলতে চাইলো, ‘You should do something different, Not like others; who doesn't care about after death. It does matter for me, how I treat my time and what will happen to me after ending the time’.
তুমি কি জানতে চাও আমার সে অবস্থার কথা?
অর্পিতা- হ্যা, বলো।
আবিদ হাসান - যখন আমি ভাসছিলাম একটা মাঝিহীন নৌকায়? গন্তব্য না জানা এক যাত্রায় আমি ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। আমি ছিলাম এক উন্মাদ। আমি নিজের ক্যারিয়ার, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ঘূর্ণিতে চক্রাকারে ঘুরছিলাম। তখন কেউ একজন অথবা কোন এক দৈব ধমকা হাওয়া বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে আমার দৃষ্টিকে অবনত করল, আমার উচ্চাভিলাষ গুলো একই রেখে শুধু ধরণটা দিলো পাল্টে অর্থাৎ দুনিয়ার অট্রালিকা, পাহারসম সম্পদ আভিজাত্য আর আত্মসম্ভ্রমের মিছে অহমিকার কথা গেলাম ভুলে। কী জানি হলো আমার মাথাটায়, সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছিল, তারপর স্বচ্ছ চোখ দিয়ে আকাশটাকে দেখতে লাগলাম, কে এই আকাশে মালিক? কে এই সুবিন্নস্ত জমিনের মালিক? পৃথিবীর সকল প্রাণের পালনকর্তা কে? কোন সে ড্রাইভার যে সমস্ত বিশ্ব-ভ্রমান্ডকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি? কেন নিয়ে যাচ্ছেন?
অর্পিতা- সত্যি বলতে কী যখনই জীবনের মানে খুঁজতে চেষ্টা করি, মৃত্যু নিয়ে ভাবি এবং পরকালের কথা কল্পনা করি, তখনই আল্লাহর প্রতি অনেক ভয় জাগে। ভালো কাজ করতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সামান্য হারামও যেন আমায় স্পর্শ না করে। কিন্তু পরক্ষণেই শয়তানের প্রলোভনে আটকে যাই। এক ওয়াক্ত/ দুই ওয়াক্ত নামাজ ছাড়তে ছাড়তে একটা সময় দীর্ঘ গ্যাপ হয়ে যায়। এমনটা কেন হয় জানিনা। কিন্তু তুমি যখনই আমায় অনুপ্রাণিত করো, আমি নতুন উদ্যম খোঁজে পাই। আবার নতুন করে শুরু করি।
আবিদ হাসান- মুসলমানের প্রধান শত্রু শয়তান। সে চাইবেই আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমাদের আসল চ্যালেঞ্জ হলো শয়তানের ধোকায় না পড়ে, বরং শয়তানকে ধোকা দেওয়া। আমাদের ঈমান খুব মজবুত নয়, তাই খুব সহজেই আমরা হেদায়াতের পথ হতে সরে যাই।
অর্পিতা- Exactly, মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই কি মৃত্যুর পর আখেরাত আছে? জান্নাত-জাহান্নাম আছে? নাকি নাই। লক্ষ-কোটি অমুসলিমরা সবাই কি জাহান্নামে যাবে? তারা সবাই কি ভুল? এমন সব প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খায়।
আবিদ হাসান- সেজন্য ঈমানকে আগে মজবুত করতে হবে। একটা বহুতল ভবনের ভিত্তি যদি মজবুত না হয়, তাহলে তা অচিরেই দশে পরে যাবে। তেমনি মুসলমানের ঈমান যদি মজবুত না হয়, তাহলে সে প্রকৃত মুসলমান থাকবেনা। তোমার আশপাশে হাজারো মুসলমান দেখতে পাবে- কেউ নামধারী অর্থাৎ মুসলমান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নিয়েছে বলে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেয়। কেউ আবার বছরে বা সপ্তাহে দু’য়েকবার নামাজ পরে আর ইসলামের অন্যসব বিষয় তোয়াক্কাই করেনা। কেউ কেউ আছেন নিয়মিত নামাজ, রোযাসহ ইসলামের সকল রোকনই সম্পন্ন করেন, কিন্তু তা যথাযথ ভাবে করেন না। আবার আরেক দল আছেন যারা খুবই পুঙ্খানোপুঙ্খভাবে ইসলামের প্রতিটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন, বিশ্লেষণ করেন, জ্ঞানার্জন করে সঠিক বা উত্তম বিষয়টি গ্রহণ করেন আর সেই অনুরূপ আমল করার চেষ্টা করেন। যারা কালে-ভদ্রে ধর্মপালন করেন, তারা শয়তানের হাতের পুতুল। মাঝে মাঝে শয়তান অবসরে গেলে তাদের ভালো কাজ করতে মন চায়, এছাড়া যত হারাম কাজই করুক না কেন, তাদের বিবেক তখন ঘুমিয়ে থাকে।
আমাদের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় পার হয়ে যায় কেবল দুনিয়া নামক ব্যাপারটা মাথায় ঘুরাফেরার মধ্য দিয়ে। যে বিদ্যা অর্জন করি সকল কিছু অন্য নয়নে দেখতে পাবো বলে, সেই বিদ্যান চোখ তো সাধারণ চোখের মতই দেখে সবকিছু। অর্থোপার্জন তো লেখাপড়া না করলেও করা যায়। সামান্য যেকোন কাজ শিখে নিয়েই বছরের পর বছর কাজ করে শ্রম দিয়ে টাকা উপার্জন করা যায়। তাহলে এত সময় দিয়ে শিক্ষালাভ করার দরকার কি? সতেরো-আঠারো বছর বিদ্যার্জন করে আমিও যদি সেই অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করি, মিথ্যে বলি, ঘোষ খাই, সুদ খাই, পরের হক নষ্ট করি, আমানতের খেয়ানত করি, গুরুজনকে অসম্মান করি, অধ:স্তনদের অবজ্ঞা করি, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেপরোয়া আচরণ করি, লোলোপ দৃষ্টি দিয়ে কাউকে স্ক্যান করে নেই এক মুহুর্তেই এবং সেই নেশার ঘোরে রাত্রি যাপন করে দেহ-মনের ক্রিড়ায় লড়াই করি, তাহলে এতো বছরের বিদ্যা থেকে কি গ্রহণ করলাম?
শৈশবের আদর্শলিপির আদর্শ আমাদের মাঝে কোথায়? আমরা কোথায় রক্ষা করলাম, আত্মীয়তার বন্ধন? কোথায় খোঁজ নিলাম প্রতিবেশীর? কোথায় কারো বিপদে এগিয়ে গেলাম? কবে অনাহারীকে আহার দিলাম? কবে অসুস্থকে সেবা করলাম? এসবইতো আমরা বইয়ে পড়েছি, কিন্তু বইয়ের পড়া গুলো আমাদের তো কিছুই দিলনা।
তাই অন্য নয়নে দেখা হলোনা সেই বিদ্যান নয়নের।
তবে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“ ৩৮. এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশী ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল,
৩৯. জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা৷
৪০. আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল
৪১.তার ঠিকানা হবে জান্নাত ৷
৪৬) যেদিন এরা তা দেখে নেবে সেদিন এর অনুভব করবে যেন ( এরা দুনিয়ায় অথবা মৃত অবস্থায় ) একদিন বিকালে বা সকালে অবস্থান করছে মাত্র ৷”
------- সুরা- আন নাযিয়াত, আয়াত-৩৮-৪১ এবং ৪৬
যদি একান্তই আমরা শিক্ষার মর্যাদা ও গুণাগুণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারতাম এবং এক ভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারতাম, তাহলে সেই বইয়ের কথাগুলো আবার মনে করতাম। আল্লাহর বাণীগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করতাম। দুনিয়ার ক্ষণিকের সময়টাকে বেশী ভালো না ভেবে আখেরাতের কথা ভাবতে শুরু করতাম। যে মেধা আমায় একজন ভাল ছাত্রে পরিণত করেছে, আমায় একজন ভালো কর্মজীবী করেছে, সেই মেধার সঠিক প্রয়োগে যদি অনন্তকাল থাকার জায়গাটা বাছাই করতে না পারি অর্থাৎ এখনকার এই মৃদুমুগ্ধ সকালের চাইতে লক্ষ্য-কোটিগুণ উত্তম জায়গাটা না বাছাই করে , দুনিয়ায় উৎকৃষ্ট ভেবে পরকালের নিকৃষ্ট জায়গায় আশ্রয় পাই, তাহলে আমরা আমাদের মেধার সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলাম না। আমাদের বিদ্যা বা মেধা ও বিবেকবোধ দুইয়ে মিলে যদি পরকালের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল না বাছাই করতে পারি, তাহলে সেই বিদ্যা পরিত্যাজ্য ছাড়া কিছুই নয়।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট থাকা উচিৎ। আর সেই টার্নিং পয়েন্ট হবে জীবন বদলানোর মতো উদ্যোগ। সঠিক সময়ে আমাদের রবের ডাকে সারা না দিলে, বিশ্ব নবীর পথ অনুসরণ না করলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। সামান্য জীবনের ক্যারিয়ার গড়তে আমরা ১৫-২০ বছরের প্রস্তুতি নেই। আর যেই স্থানে অনন্তকালের আবাস্থল সেই স্থানের জন্যে কী আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার নেই?
আমাদের এই পরিবর্তন কেবল আখেরাতের পুঁজিই নয়, বরং দুনিয়াতেও আমরা খোঁজে পাবো চমৎকার এক জীবন। যা জীবনকে কতটা সুখ দিতে পারে, কতটা শ্রেষ্ঠ মনোসত্ত্ব তৈরি করতে পারে, তা কল্পনাই করা যাবেনা।
সারা জীবনে এতো জ্ঞানার্জন, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা-ই যে বিষয়টিতে আমাদের কনভিন্স করাতে পারলোনা, সেখানে আমাদের বিবেকের নবজাগরন আমাদের কনভিন্স করল। সারাদিনে মহান আল্লাহর সামনে পাঁচবার দাড়াতে পারা। গিবত বা পরনিন্দা করা এটা কেবল পরচর্চা নয়; নিজের ব্যক্তিত্বের সংকটও তৈরি করে। বরং যেকোন মানুষের উপস্থিতিতে যতটা উত্তম আচরণে আর সামনে গুণান্বিত হওয়া যায়, তার পিছনে তেমনই হওয়া উচিৎ, এতে কেবল লোকের মুখেই ভালো হওয়া নয়; নিজের আত্মতৃপ্তির জায়গাটাও হয় সমৃদ্ধ।
এটা একটা মজার অনুভূতি যে, আমরা সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত কোন মানুষের সম্পর্কে সমালোচনা, নিন্দা, কটুকথা, হিংসা বা বাজে মন্তব্য না করেই একটি দিন পার করতে পারলাম। সারাদিন মিথ্যে না বলে একটা দিন কাটাতে পারলাম। সারাদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারলাম। একটা দিনে আমি অসংখ্যবার আমাদের খালিকের কথা স্মরণ করেছি, তাঁর শোকর গোজার করেছি, তাঁর প্রশংসা করেছি মনে মনে।
আমাদের দ্বারা যদি সারাদিনে কারো কোন ক্ষতি না হয়। কারো অপকার অনিষ্ট না হয়। বিপরীত লিঙ্গের এমন কারো দিকে না তাকানো, যাকে দেখা আমাদের জন্য হারাম; এমনকি একটি দিনে কোন প্রকার হারাম লেনদেন না করা। পারলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করা, অসহায়কে সাহায্য করার চেষ্টা করা আর অসুস্থ্য কেউ থাকলে সেবা করার চেষ্টা করা। আর এই সবই করে আমাদের পালনকর্তার ভয়ে ও তাঁকে সন্তুষ্ট করতে যা কিছু করা হয় সবকিছুর জন্য অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে। সত্যি বলছি, জীবনে এরচেয়ে ভালো অনুভূতি আর কখনো হয়না।
এভাবে একটা মানুষ নিজেকে বদলাতে পারলে, সে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবে তার অতীত ও বর্তমানের অনুভূতি দ্বারা। যখন সে বেহিসেবি দিন কাটিয়েছিলো, এখনকার হিসেব করা দিনগুলোর তাৎপর্য বুঝতে পারবে। আর তখনি একজন সঠিকভাবে দ্বীনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া করছি, যে তিনি আমাকে দয়া করেছেন, আমার ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগ্রত করেছেন। বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সঃ) এর দেখানো পথে চলবার মতো তৌফিক দিয়েছেন। আল্লাহ যেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেইভাবেই আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দেন, আমিন।
অর্পিতা- মাশা আল্লাহ্। আল্লাহ মেহেরবান। আলহামদুলিল্লাহ, তুমি একজন মুসলমান হিসাবে দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করছো। আল্লাহ হেফাযত করুন, আমিন। আমিও চেষ্টা করি নিয়মিত আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলার, যদিও মাঝে মাঝে অনমনস্ক হয়ে শয়তানের ধোকায় পড়ে সময় নষ্ট করি, বিপথে চলে যাই। কিন্তু তোমাকে পাশে পেয়ে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। একজন ভালো সঙ্গীই পারে খুব সহজে তার সঙ্গিনীকে হেদায়াতের পথে নিয়ে আসতে। একজন খারাপ মানুষ যেভাবে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে, তেমনি একজন ভালো মানুষের প্রভাবেও অপরজন ভালো হতে পারে।
ঠিক বলেছো।
অর্পিতা-আমার ভালো লাগে, যখন তুমি নিয়মিত কোরআন ও হাদিসের বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করো এবং আমাকেও সেইভাবে নির্দেশনা দাও। আলহামদুলিল্লাহ।
তুমি দ্বীনের প্রতি খুবই আন্তরিক, মাশা আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসাবে পেয়েছি এবং আমি আশা করছি ভবিষ্যতে আরো ভালোভাবে দ্বীনের পথে চলবে এবং দ্বীনের কাজ করবে, ইনশা আল্লাহ।
Tuesday, December 8, 2020
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হলে যা করবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সকল নেয়ামত দান করেছেন আমাদের। আবার মানুষকে বিপদ দিয়ে, রোগ ও অভাব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে পরীক্ষা করেন। কিন্তু সকল সমস্যার সমাধানও তিনি দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করি, আর তাই যখনই আমরা এমন বিপদে পড়বো তখন আমাদের সকলের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করবো।
দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা অনুভব হলে এই দোয়া পড়বেনঃ
উচ্চারণঃ আউ’যুবিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া আহাযিযু।
অর্থঃ যে ক্ষতি আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশংকা করছি তা হতে আমি আল্লাহর মর্যাদা ও তাঁর কুদরতের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসলিম)
পরম করুণাময় আল্লাহ এই দোয়ার বরকতে আপনাকে ব্যথা মুক্ত করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে প্রতিপালক আমাদের দুনিয়ার সমস্ত নেয়ামত দান করেছেন, তাঁর শুকরিয়া গোজার করা উচিত। প্রতি নিয়ত আল্লাহর অনুগত প্রকাশ করা, কুরআন ও হাদিসের পথে চলা এবং আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে খাস নিয়তে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করে প্রার্থনা করলে, আল্লাহ হয়তো আমাদের সকল ব্যথা দূর করে দেবেন ইনশা আল্লাহ।
Thursday, October 22, 2020
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || বিনোদিনী চরিত্র
- সাহিত্য বিশ্লেষণ, সমালোচনায় মোঃ অলিউল্লাহ
‘চোখের বালি’ উপন্যাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র বিনোদিনী। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রাখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ চরিত্রটি অতি যত্নে গড়া এবং শিল্পীর চরিত্র নির্মাণের নিপুন কৌশল প্রস্ফুটিত হয় বিনোদিনী চরিত্রের মাধ্যমে। বিনোদিনীকে উপস্থাপন করা হয় প্রাপ্ত বসয়স্ক, সুদর্শনা, দক্ষ এবং বিধবা হিসাবে। বিনোদিনীর বাবার আর্থিক অবস্থা সচল না হওয়া সত্ত্বেও সে মেয়েকে মিশনারী মেম রেখে অতিযত্নে পড়াশোনা ও কারুকার্য শিখিয়েছিলেন।
তবে মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার উদাসীনতা ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিনোদিনীর বিধবা মাতা সংসারের অভাবের জন্য মেয়েকে পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। একই গ্রামের মেয়ে বিনোদিনীর মা হরিমতি ও রাজলক্ষী। শৈশবের খেলার সাথী। তাই রাজলক্ষীর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে তার ছেলে মহেন্দ্র দ্বিধায় পরে যায় এবং বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। পরে রাজলক্ষীর জন্মভূমি বারাসতের গ্রাম সম্পর্কিয় এক ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে বিনোদিনীকে তার মা বিয়ে দেয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই বিনোদিনীর স্বামী মারা যায়।
মহেন্দ্র অবশ্য তার কাকীমার বোনঝি আশাকে বিয়ে করে স্বাচ্ছন্দেই সংসার করছিলো। নবদম্পতির কোনরূপ আহ্লাদের বাকি রইলোনা। এমনকি মহেন্দ্রের মা যখন তার জন্মভূমিতে বেরাতে যায়, সেখানে বিহারীর মাধ্যমে তার মাকে চিঠি পাঠায়। কিন্তু মাকে দেওয়া চিঠি যখন বিনোদিনী পরে শোনাচ্ছিল, তখন চিঠির কিছু অংশ পরে বুঝতে পেরেছিলো এই চিঠিতে কেবল স্বামী-স্ত্রির প্রণয়-উপাখ্যান লেখা বৈ কিছু নাই। তাই চিঠি খানা নিজের কাছে রেখে দেয় এবং পরে একেলা ঘরে সেই পড়ে বিনোদিনীর মনে অন্য রকম এক অনুভূতি খেলা করে। বিনোদিনী স্বামী সোহাগ ভালোভাবে বুঝবার আগেই বিধবা হয়, তাই আশা ও মহেন্দ্রের বিবাহ উত্তর সকল বিষয়গুলো চিঠি পড়ে অনুধাবন করছিলো ও নিজের অনূভুতির সাথে মিলিয়ে নিয়েছিল।
বিনোদিনী ভালো করেই জানতো মহেন্দ্র ও বিহারীর সাথে তার বিবাহের কথা-বার্তা হয়েছে। তারা দু’জনেই বিনোদিনীকে দেখতে যাওয়া ও প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু রাজলক্ষী জন্মভূমিতে ফিরে যাবার বিনোদিনীর অধিক যত্নে খুবই তৃপ্ত হয় এবং বাড়ি ফেরার সময় বিনোদিনীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। বিনোদিনী ও আশার মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়। যেহেতু বিনোদিনী সকল কাজেই খুব পারদর্শী তাই আনাড়ি আশাকে কারুকার্য ও ঘরের কাজ শিখানোর মাধ্যমে দু’জন দুজনের সখী হয়ে যায়। আশা তার সইকে নিজের বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মহেন্দ্র এমন অসাধারণ সুন্দরী নারী এর আগে কখনো দেখেনি।
অন্যদিকে বিনোদিনীও আশা ও মহেন্দ্রের বৈবাহিক জীবনভোগের দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে না পেরে তাদেরকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। দিনের পর দিন বিনোদিনীর নিপুন কর্মদক্ষতা, ইংরেজিতে কথা বলা ও তার সৌন্দর্যের জন্য মহেন্দ্রের মনে আচর কাটে। একসময় মহেন্দ্র বিনোদিনীর প্রেমের ফাঁদে বন্দী হয় এবং নিজের স্ত্রীর সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। অন্যদিকে মহিনের বাড়িতে প্রায়ই বিহারী আসে এবং বিনোদিনীর আপ্যায়ন ও আতিথেয়তায় পরিতৃপ্ত হয়। এমনকি বিহারী যখন দূরে চলে যেতো তখন বিনোদিনী অতিযত্নে তার ঘর গোছানো, গ্লাসে ফুল সাজানো ও ঘরটিকে সাজিয়ে ঘুছিয়ে পরিপাটি করে রাখতো।
বিহারী ধীরে ধীরে বিনোদিনীতে মুগ্ধ হয়ে যায়। বিনোদিনী সবই বুঝতে পারে। একদিকে যেমন মহেন্দ্র তার জন্য অত্যন্ত উদাসীন ও তাকে ছাড়া অতি অক্ষম বোধ করে অন্য দিকে তার স্ত্রীর সাথে ক্রমেই ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে থাকে। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে পারেনি, এভাবে সে তার স্বামী বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। আশা তাদের প্রেমালাপ ও দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে এক সময় মহেন্দ্রকে মুক্তি দিলো।
বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইংরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকল প্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল।
বিনোদিনী চরিত্রের দ্বৈতরূপ ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অংকন করেছেন। বিনোদিনী একদিকে নিজের প্রতি অবহেলাকারীদের নাকে দড়ি লাগিয়ে ঝুলিয়েছে অন্যদিকে নিজের কামনা-বাসনার উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। কিন্তু উপন্যাসের শেষের দিকে মহেন্দ্রকে করুণ পরিণতিতে প্রতিফলিত করেছে। চরিত্রের সার্থকতা বিবেচনায় বিনোদনী চরিত্রটি সফল ও ভাস্বর।
* আশা চরিত্র
* রাজলক্ষী চরিত্র
* বিহারী চরিত্র
* অন্নপূর্ণা চরিত্র
Wednesday, October 21, 2020
মুক্তির পথ || মোঃ অলিউল্লাহ
স্বপ্ন তো প্রায় প্রতিরাতেই দেখি। কিছু স্বপ্ন থাকে যা ভালো লাগার, আর কিছু স্বপ্ন থাকে যা অপ্রত্যাশিত। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার আগ্রহ আমার আছে। কিন্তু কে খুব ভালো ব্যাখা দিতে পারে সেটা জানা নাই। কিন্তু আজ শেষরাতের স্বপ্নটা আমায় এতটাই উদাসীন করে তুলল, খুব কৌতুহলী হলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গেলে হয়তো উনি আমায় ভাল একটা ব্যাখা দিতে পারবে। সারাদিন অনেক কিছুই ভেবেছি। কিন্তু ব্যাখ্যা যতটুকু নিজে করতে পেরেছি, সেটা নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে ইতিবাচকভাবেই করেছি। তথাপি একজন আলেমের সাথে দেখা মিলল। সালাম দিয়ে উনার কাছে কিছুটা সময় চাইলাম। কিছুটা কৌতুহল দেখতে পেলাম উনার চোখে-মুখে।
‘কি বলতে চান? একটু সংক্ষেপে বলবেন। আমার কিছু কাজ আছে।’
কিভাবে বলা শুরু করবো ভাবছি। কিন্তু মনে হচ্ছে আমার বলতে একটু বেশি সময় লাগবে। আমি কি অন্য কোন দিন আসবো?
‘কত সময় লাগতে পারে? ত্রিশ মিনিটে হবে?’
হ্যা আশা করছি এর মধ্যে শেষ করতে পারবো। তবে আরো কিছু সময় লেগে গেলে...।
‘আচ্ছা বলুন। কি বলতে চান।’
আমি আসলে আজ শেষ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটা নিয়ে সারাদিন ভেবেছি। নিজের মতো দু’য়েকটা ব্যাখাও দাড় করিয়েছি। কিন্তু এতে আমি তৃপ্ত নই। আমি চাইছি, কেউ একজন আরো ভাল কোন ব্যাখ্যা আমায় দিতে পারবে, সেজন্যেই...।
‘দাড়ান দাড়ান। আপনি ভুল করছেন। আমি আসলে স্বপ্নের এতো ভাল ব্যাখ্যা দেওয়ার জ্ঞান রাখিনা। আপনি বরং অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারেন।’
তবে আমার মনে হচ্ছে, কথাগুলো শুনে কিছু একটা আমায় বলবেন, যা থেকে আমি শিক্ষা নিতে পারবো।
‘দেখুন আমারও ইচ্ছে হচ্ছে আপনার কথাগুলো শুনি। কিন্তু আপনার কোন কাজে আসবো কিনা জানিনা। আচ্ছা বলুন, কী দেখেছেন স্বপ্নে।’
আমি দেখলাম আমি একটা অচেনা দেশের অচেনা এক শহরে কাজে কাজ করতে গিয়েছি। যেদিন সেখানে পৌছলাম, সেদিনই সেখানে একটা দূর্যোগ শুরু হলো। আগে শহরের বর্ণনা দিয়ে নেই। শহরটা খুবই ছোট একটা দ্বীপ এর মতো। একতলা বিশিষ্ট কিছু বাড়ি ও কিছু টিনের ঘর দেখতে পাচ্ছিলাম। বাড়ি গুলো একটা অন্যটা থেকে দূরবর্তী ছিলো। কিন্তু প্রত্যেকটা বাড়িই আধুনিক স্টাইলে ডেকোরেট করা, অর্থাৎ দেখে মনে হবে অভিজাত বা রুচিশীল মানুষের শখের বাড়ি। কিন্তু শহরে যে খুব ধনী মানুষ আছে এমন নয়। আমার স্বপ্নটার সাথে দু’য়েকটা কাহিনীর মিল আছে। প্রথমত আমি নূহ (আঃ) জীবনী পড়ে যা জানতে পেরেছি তার সাথে কিছুটা মিল আছে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের একটি চলচ্চিত্রের একটা অংশের সাথে মিল খোঁজে পাই। কিন্তু যেই ব্যাপারটা জন্য আমি কোন আলেমের কাছে স্বপ্নের ব্যাখা চাইছি সেটা খুব আশ্চর্যজনক।
এবার বলছি কি ঘটছিলো সেখানে। কোথা থেকে যেনো পানির ঢল এসে সবকিছু প্লাবিত করে দিচ্ছিল। চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গেলো। অসংখ্য মানুষের চিৎকার যেনো এক মুহুর্তের মধ্যে পানির সাথে মিলিয়ে গেলো। ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, গৃহপালিত প্রাণীসহ সবকিছু এক মুহূর্তের মধ্যে পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছিল। অনেক দূরে দেখতে পেলাম মসজিদে যে গালিচা বা প্লাস্টিকের যে জায়নামাজ থাকে, সেগুলো ভেসে ভেসে আসছে। অলৌকিকভাবে কিছু মানুষ সেই গালিচার উপর দাড়িয়ে রয়েছে স্থিরভাবে। কিন্তু তারা ডুবে যাচ্ছে না। তারা সবাই নামাজে দাড়ানোর মতো খুবই শৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে আছে। গালিচা গুলো সব ভেসে ভেসে একজায়গায় এসে একত্রিত হলো।
‘তখন আপনি কোথায় ছিলেন?’
দুঃখিত আমি আমার অবস্থানের কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। আমি অনেকটা দূরে একটা উচুঁ টিলার উপর দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম। দেখলাম তখনো সেই টিলায় পানি পৌছায়নি। টিলার চূড়ায় একটা টিনের ঘর রয়েছে। ঘরে অনেক পুরাতন আসবাবপত্র। কৃষ্ণবরে্ণর দুইজন ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে আছে। বাহিরে কী হচ্ছে সেসব নিয়ে তাদের মধ্যে কোন উদ্বেগ দেখতে পায়নি। তবে ঘরের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো আমার দুঃসম্পর্কের এক মামা। উনি আমায় বলল- ‘তুমি এই বিপদের মধ্যে এখানে কেন আসছো? আমরাও বিপদের বাইরে না। যেকোন সময় আমাদের বাড়িও ডুবে যেতে পারে।’
আমি ওনাকে অনেক অনুরোধ করলাম এই ঘরে আমাকে আশ্রয় দিতে। উনি প্রথমে ইতস্তত করছিল, পরে বলল- ‘টাকা পয়সা আছে তোমার কাছে?’
আমি বললাম- টাকা পয়সা যা ছিলো এদেশে আসার পথেই খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি আপনাদের ঘরের সকল কাজ করে দেবো। দয়া করে আমাকে থাকতে দেন। উনি রাজি হলো। এরপর যা দেখলাম, তা আরো বেশি লোমহর্ষক। দূরের সেই গালিচায় যারা রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ দেখতে পেলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন অনেকগুলো খাবার নিয়ে প্রত্যেকের কাছে যাচ্ছে, আর বলছে ‘যার যার কাছে টাকা আছে দাও এবং খাবার কিনে খাও।’
দূরে হলেও কী করে যেনো আমি তাদের সকল কথা শুনতে পাচ্ছি। একজন লম্বা ব্যক্তি তার শিশু পুত্রকে কুলে নিয়ে কাঁদছে। হয়তো তার স্বজনরা পানিতে তলিয়ে গেছে।
‘আচ্ছা এখানে আপনাকে একটু থামতে বলছি। আর জানতে চাইছি, আপনি গত কয়েকদিনে আর কোন আজব স্বপ্ন দেখেছেন কিনা?’
হ্যা দেখেছি। দুইদিন আগে যে স্বপ্নটা দেখলাম, সেটা কিছুটা আশ্চর্যজনক ও অনেকটা ছাড়া ছাড়া স্বপ্ন ছিলো।
‘সেই স্বপ্নটা কি ছিলো? সংক্ষেপে বলেন।’
কিন্তু আপনার তো দেড়ি হয়ে যাবে।
‘আচ্ছা আপনি সময় নিয়ে ভাববেন না। আমার যে কাজটা ছিলো তা পরে করলেও চলবে।’
ঠিক আছে, তাহলে বলছি। সেই স্বপ্নটায় আমি আমার শৈশবের বয়সে ফিরে গিয়েছি। আমার এক বন্ধুকে নিয়ে হিন্দুদের পূজা দেখতে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। আকাশে ঝলমলে বাজি ফুটতে দেখে খুব আনন্দিত ছিলাম আমরা। সেটা ছিল রাতের বেলা। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেখানে নাচ-গান, সার্কাস, বিভিন্ন মূর্তি দেখেছি। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় আমরা অন্ধকারে পথ ভুলে যাই। তখন আমরা দুজনেই হাটতে হাটতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর কোনমতেই হাটতে পারছিলাম না। পা ব্যথা হয়ে এসেছিল। ওহ আমার বন্ধু প্রথমে সেখানে যেতে চাইছিলনা। সে বলছিল হিন্দুদের পূজোয় গেলে, তার মা জানতে পারলে তাকে বকা দিবে। কিন্তু আমি তাকে জোর করে নিয়ে যাই। পথ হারাবার পর ধীরে ধীরে সব কিছু খুব ভৌতিক হতে শুরু করে। চারিপাশে নানা প্রকার শব্দ হচ্ছিল। ভূতুরে কিছু দৃশ্যও দেখে খুব ভয় পেলাম। একটা সময় দুজন কাঁদতে কাঁদতে একস্থানে বসে পড়লাম। তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ফজরের আযান শুনতে পেলাম। তারপর আমি ফজরের নামাজ আদায় করে নেই।
‘আপনি নিয়মিত নামাজ পড়েন?’
চেষ্টা করি। যদিও আগে নিয়মিত ছিলাম না।
‘তারপর কি হলো বলেন।’
আগের স্বপ্নের কথা বলবো? নাকি আজকেরটা?
‘হ্যা আজকে যেটা দেখেছেন, সেটা বলুন।’
তারপর আমি দেখলাম, যারা খাবার নিয়ে যাচ্ছিল তাদের খাবার শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু পরবর্তীতে আর খাবারের কোন জোগান নেই। এটা নিয়ে অবশ্য তাদের কোন অনুতাপ নেই। আমি ঘরে ভিতর গেলাম। দুই/তিন এভাবে কেটে গেল। তারপর বাহিরের আর কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না। দেখতেও পাচ্ছিলাম না কিছু। সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেলো। এরপরেই শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। আমি যেই ঘরে ছিলাম সেই ঘরের লোকজন প্রথমে খাবার না পেয়ে ছটফট করছিল এরপর অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি বিষণ ভয়ার্ত চোখে দেখতে লাগলাম বৃষ্টির কী তান্ডবলীলা। ধীরে ধীরে ঘরের চাল ফোটা হয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টির পানিতে সারা ঘর ভিজে গেল এবং বাহিরে পানির ঢল ভিতরে আসতে শুরু করল।
ভয়ে আর আর্তনাদে আর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভব করলাম। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। ঘড়িতে সময় তখন ৫:১০ মিনিট। ফজরের নামাজ আদায় করলাম।
‘আপনি বলছিলেন আপনার স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা করেছেন। কী ব্যাখ্যা করেছেন সেটা শুনতে চাই।’
না তেমন গুরুত্ববহ কিছু না।
‘তবুও বলুন।’
আমার মনে হয়েছে প্রথম স্বপ্নের সাথে দ্বিতীয় স্বপ্নের যোগসূত্র আছে।
‘কীভাবে?’
প্রথমত পূর্বের স্বপ্নের সময় ও পরবর্তী স্বপ্নের সময় খুব কাছাকাছি। প্রথম স্বপ্নে অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তু ছিলো, তেমনি দ্বিতীয় স্বপ্নেও সুপারন্যাচারাল অনেক কিছু দেখলাম। প্রথম স্বপ্নে আমরা যাচ্ছিলা মূর্তিপূজা দেখতে এবং ফেরার পথে আমরা অনেক ভয় পাই ও বিপদে পড়ি। দ্বিতীয় স্বপ্নেও অনেক বিপদ ও ভয় পেয়েছি।
‘আপনি বলছিলেন কোন এক বিষয়ের কারনে আপনি স্বাভাবিক কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীর কাছে না গিয়ে বিজ্ঞ আলেম খোঁজ করছিলেন। সেটা কেন?’
ও হ্যা, সেটা মূলত স্বপ্ন দেখার সময়ের কারণে এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি অলৌকিক ধাচের কিছু স্বপ্ন দেখছি। আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, যেদিন থেকে আমি আমার জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চাইলাম এবং নিজের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন বোধ করলাম, সেদিন থেকেই এই ধরনের স্বপ্ন এমনকি বাস্তবেও অনেক ঘটনা যেগুলো আমার সাথে ঘটছে সেসবের মিল খোঁজে পেলাম। আমি ধরে নিলাম ব্যাপারটা ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হতে পারে এটা আমার জীবনের পরিবর্তনের কারণে হেদায়াতের ইঙ্গিত, যাতে করে আমি জীবন যাপনের সকল ব্যাপারে আরো বেশি সাবধান হতে পারি। জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা চালিয়ে নিতে পারি। আমার প্রথম স্বপ্ন আমার জন্য অনেকটা সাইরেনের মতো বোধ করছি, আমি নিজেকে ও নিজের আচরণ এবং দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আমার সামনে অনেক বাধা আসবে। আদৌ আমি আমার সরল পথে কতদূর যেতে পারবো সে বিষয়ে আমি সন্ধিহান। আমার পূর্বেকার যাপিত জীবনের অনেক কিছুই অভ্যাসে পরিণত হওয়ায়, সেসব বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটতে চায়। আমি সেটাকে আরো প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরবর্তী স্বপ্নকে অভিজ্ঞতা হিসাবে গ্রহণ করতে পারি। এটা কেবল আমার স্বপ্নের ইতিবাচক দিক, যা আমার কল্যাণের উদ্দেশ্যে ভেবেছি।
আরেকটা হলো নেতিবাচক দিক। সেটা নিয়ে আমি খুব ভীতসন্ত্রস্ত। যেহেতু দু’টো স্বপ্নই অতিপ্রাকৃত উপাদান নির্ভর এবং দূর্যোগ কবলিত, তাই আমি জীবনে অনেক বড় বিপদ আশঙ্কা করছি। এমনকি সেই বিপদ থেকে উৎরানোর কোনো সুযোগও না থাকতে পারে।
‘বুঝলাম। আমি জানি আপনি আমার বলার অপেক্ষায় রয়েছেন যে আমি কী বলবো। আমি আসলে বিশেষ কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু আপনার ধারণাগুলোতে কিছুটা সহমত পোষণ করবো। তবে আপনাকে বলবো, যে জীবন থেকে আপনি পরিত্রান পেতে চান, সে জীবন পরিহার করুন। আপনার বিশ্বাসের খুটিটা আরো মজবুত করেন। জীবনের আসল উদ্দেশ্য, দুনিয়া ও আখিরাত, জন্ম-মৃত্যু ও দুনিয়ার সকল সৃষ্টির প্রতি অবলোকন করে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করুন। গতানুগতিক বা স্বভাব ধর্ম পালন না করে, কেবল পরকালের কথা হিসাব করে আরো বেশি যত্নবান হয়ে ইবাদত করুন।
মনে রাখবেন, শয়তান প্রতিনিয়ত আপনাকে ধোকা দিতে চাইবে। আপনার নামাজ পড়া, সকল ইবাদত সম্পন্ন করার পরও আপনাকে ইসলামের আদর্শ বহির্ভূত কাজ করার জন্য শয়তান আপনাকে উস্কানি দেবে।’
কী রকম?
‘এই ধরুন আপনি সবই করছেন, কিন্তু মনে মনে ভাবলেন নামাজ তো একটু পরেও পড়া যাবে। সবই তো করছি, দ ‘য়েকটা গান শুনলে বা একটা সিনেমা দেখলে কী এমন পাপ হবে? ইসলামের আদর্শ মতোই তো চলছি, কিন্তু আপনার মনের অজান্তেই কিছু ছোট ছোট মিথ্যে বলছেন, টাকনোর নিচে কাপড় পরিধান করছে। কুরআন ও হাদিসের নিষেধ অমান্য করে খামখেয়ালি জীবন যাপন করছেন। তার মানে আপনি নামাজ রোজা করলেও ধর্মীয় বন্ধনে অটুট নন। আপনার বিশ্বাস এখনো অনেক নড়বড়ে।’
আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আরোও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বলবেন কী?
‘হ্যা, বলবো। আপনি এখন থেকে সর্বদাই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন। পরকাল নিয়ে অনেক বেশী ভাববেন। দুনিয়াবী চাহিদার মতো করেই পরকালের চাহিদাকে গুরুত্ব দিন। বেশি বেশি নৈতিক শিক্ষা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন। নিজে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করুন এবং পরিবার পরিজনদের রক্ষা করার চেষ্টা করুন। আমার উপদেশ আপনার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। তবে আমার ভাবনায় যতটুকু আসলো আপনাকে বললাম। তবে আপনি আরোও বড় কোন বুজুর্গ ব্যক্তির স্বরণাপন্ন হতে পারেন।’
Tuesday, October 20, 2020
চোখের বালি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || মহেন্দ্র চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের আলোচিত চরিত্রসমূহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবং বিশ্লেষণাত্মক বৈশিষ্টসমূহ তুলে ধরা হলো।
‘চোখের বালি’ উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি। নিম্নে এসব চরিত্রের পুঙ্খানোপুঙ্খ আলোচনা করা হলো।
মহেন্দ্র
মহেন্দ্র সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। মহেন্দ্র শৈশবেই তার বাবাকে হারিয়েছে। তার মা রাজলক্ষী। আর দশজন মাকে যেরূপ সম্বোধন কিংবা সম্মান করে, মহিনের ব্যবহার তেমন ছিল না। সে বাইশ বছর বয়সে এমএ পাশ করে ডাক্তারি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে। আরম্বরপূর্ণ জীবনযাপন ও স্বেচ্ছাচারিত তার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলেও উপন্যাসের শুরুর দিকে সে তার মাকে ছাড়া কোন কিছুই করতে পারতো না। অর্থাৎ খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মায়ের আচলের নীচে থাকায় অভ্যস্ত।
রাজলক্ষী ও হরিমতি শৈশবের বান্ধবী ও একগ্রামের মেয়ে। হরিমতির কথায় রাজলক্ষী যখন মহিনকে তার বিধবা মেয়ে বিনোদনীকে বিয়ে করতে বলে তখন সে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। মাকে খুশি করার জন্য কোন রকম বলে দেয় যে, বিয়ে করবে। পরে আবার ইতস্তত করে বিয়ে করতে অনিহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে তার মা বিনোদিনীর মাকে পাকা কথা দিলেও পরে না বলতে হয়।
বিহারী মহেন্দ্রকে দাদা বলে সম্বোধন করলেও তারা শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে বন্ধুর মতো। রাজলক্ষী ছেলের জন্য ঠিক করা মেয়েকে বিহারীকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিহারীও বলে দেয় “মা, এইটে পারিব না। যে-মেঠাই তোমার মহেন্দ্র ভালো লাগিল না বলিয়া রাখিয়া দেয়, সে-মেঠাই তোমার অনুরোধে পড়িয়া আমি অনেক খাইয়াছি, কিন্তু কন্যার বেলায় সেটা সহিবে না।” শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র ও বিহারী উভয়ই বিনোদিনীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এই নিয়ে মা ছেলের মধ্যে বেশ মান অভিমান চলে।
মহেন্দ্রের কাকী অন্নপূর্ণাকে সে যারপরনাই ভালোবাসে। কিন্তু অন্নপূর্ণা তার বোনের মেয়ে আশালতাকে বিয়ে করতে বললে, সে নিজে না করতে পারবেনা তাই বিহারীর জন্য দেখতে যেতে রাজি হয়। অন্যদিকে বিহারীও অন্নপূর্ণাকে দেবীর মতো ভক্তি ও অনেক শ্রদ্ধা করে। আর সেজন্য অন্নপূর্ণাকে সে না বলতে পারে না। মহেন্দ্র অনেক সাজসজ্জা করে বিহারীকে নিয়ে কন্যা দেখতে বের হয়।
কন্যার জেঠা অনুকূল বাবু তার তিনতলা বাড়ি সুসজ্জিত করে রেখেছেন। আশাকে দেখার পর বিহারীর উপর জোরপূর্বক চাপানো সিদ্ধান্ত ভুলে গিয়ে বিহারিকে বলে মহিন আশাকে পছন্দ করেছে। ওদিকে বিহারীরও আশাকে ভালো লেগেছে, কিন্তু মহেন্দ্রের ভাব বুঝতে পেরে সে তাকেই বিয়ে করতে বলে। মহেন্দ্র তার মাকে আশার কথা বলায়, রাজলক্ষী মনোক্ষুন্ন হয় এবং অন্নপূর্ণার প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে। অথচ অন্নপূর্ণা এর কিছুই জানেনা। পরে মহিনের জেদের কাছে হার মেনে মা তাকে বিয়ে করাতে রাজি হয়।
পরে বিহারী অন্নপূর্ণাকে অনুরোধ করলে সে তার বোনঝির সাথে মহিনের বিয়ে দিতে রাজি হয়। অন্নপূর্ণা আশার জন্য বিহারীকে পছন্দ করলেও মহিনের জেদের কারনে আশার সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মহিন নববধুর প্রতি খুবই অনুরাগী তাকে ছাড়া যেনো এক বেলাও চলে না। তার কিছু কিছু বারাবারিতে তা মা খুবই বিরক্ত।
ডাক্তার হবার যে ইচ্ছা পোষন করেছিলো তা ধীরে ধীরে শেষ হতে চলল। মহিনের ডাক্তারি ছেড়ে স্ত্রীকে পড়াশোনা করানো নতুন দায়িত্ব হয়ে ওঠল। অবশ্য সেসব বেশিদিন চলল না, স্বামী-স্ত্রী সোহাগ, মান-অভিমান ও বিবাহিত জীবনের উপর শুরু হতে চলল নতুন ঘটনা।
মহিনের মা তার জন্মভূমি যাওয়ার পর কিছুকাল অবস্থান করে সেখানে বিনোদিনীর আদর যত্নে খুবই আনন্দিত। বিহারে তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে বিনোদিনীকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। যেই বিনোদিনীকে একদিন মহিন ও বিহারী অবহেলা করে বিয়ে করতে চায়নি, তাকে দেখে দু’জনেরই চরিত্রের চোখ কপালে উঠেছে।
বিনোদিনী বিধবা হলেও সে ইরেজ ম্যামের কাছে ইংরেজি শিখেছে। সকলপ্রকার কারুকার্য ও গৃহের কাজে খুবই দক্ষ। যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি সে গুণবতী। তার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে বিহারী ও মহেন্দ্র এক সময় পাগলপারা হয়ে যায়। সেই সুযোগে বিনোদিনীও তাদের মানসিকতা বুঝতে পেরে তাদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে।
যেই মহিন একসময় স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় মাতোয়ারা ছিলো, সে এখন বিনোদিনীর ছলনায় মাতাল। বিনোদিনী শুরুতে আশার সখী হয়ে সকল কাজ শিখানোর দায়ভার গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আশা নিজেও জানতে এভাবে সে তার স্বামীকে বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
মহিন চরিত্রটি সর্বদাই দুটানায় ছিলো। তার চরিত্রে সুশিক্ষিতের আধিক্য থাকলেও নিজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় চরিত্রের দুর্বল দিক হিসাবে ফুটে ওঠে। বিহারি তার খুব কাছের বন্ধু হলেও সে নিজ কামনা-বাসনা পূরণ করতে তাকেও ঠকাতে দ্বিধা করেনি। যেই বিনোদিনীকে প্রথমে অবহেলাবসত বিয়ে করতে রাজি হয়নি, তার ছলনায় পরেই শেষ পর্যন্ত তার সংসার ভাঙ্গে। পরিণতিতে সে নিজের স্ত্রীকে যেমন হারায়, তেমনি বিনোদিনীকেও পায়না।
চরিত্রের উভয় সংকট ও মানসিক দুর্বলতা প্রথমত মায়ের সাথে দূরত্ব ও অযত্নের পরিচয় দেয়। প্রিয় স্ত্রীকে হারায় ও বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়। সমগ্র উপন্যাস জুরে যে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল মহেন্দ্র, তার পরিণতি হয়েছে খুব করুণ।
----------------------------------------------------
* আশা চরিত্র
* রাজলক্ষী চরিত্র
* বিহারী চরিত্র
* অন্নপূর্ণা চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন উপন্যাস ও বিস্তারিত আলোচনা
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাসাহিত্যে সর্বমোট ১৩ টি (তেরো) উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃ্দ্ধ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ও বহুল আলোচিত উপন্যাসসমূহ হলোঃ
=>> বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩)
=>> রাজর্ষি (১৮৮৭)
=>> চোখের বালি (১৯০৩)
=>> নৌকাডুবি (১৯০৬)
=>> প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮)
=>> ঘরে বাইরে (১৯১৬)
=>> যোগাযোগ (১৯২৯)
=>> শেষের কবিতা (১৯২৯)
=>> মালঞ্চ (১৯৩৪)
চোখের বালিঃ
‘চোখের বালি’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের সর্বাধিক সমাধৃত ও বহুল আলোচিত উপন্যাস। এ উপন্যাসের
আলোচ্য বিষয় হলো মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, বিধবা বিবাহের সমস্যা এবং পারিবারিক বিভিন্ন রকম আবেগধর্মী, সংবেদশীলতা, বিদ্বেষ, পরকিয়া ও সাংসারিক কলহ। এই উপন্যাসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় চরিত্র মহেন্দ্র । অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো হলো, বিনোদিনী, বিহারী, আশালতা, রাজলক্ষী, অন্নপূর্ণা ইত্যাদি।
ঘরে বাইরেঃ
‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের খুবই জনপ্রিয় উপন্যাস। এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয় ত্রিকোন
প্রেমের ঘটনা, বৈপ্লবিক জাতীয়বাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, নিখিলেস ও বিমলার সাংসারিক টানাপোড়েন, সন্দীপ ও বিমলার পরকিয়া সম্পর্ক। এছাড়াও ধর্মীয় মনোভাব, নৈতিকতা ও স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ উদঘাটন উল্লেখযোগ্য। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে একজন নারীর স্বাধীনতার সীমা অতিক্রম ও গৃহ অভ্যন্তরে নারীর পরাধীন অবস্থা সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
নৌকাডুবিঃ
‘নৌকাডুবি’ রবীন্দ্রনাথের অন্য সকল উপন্যাস হতে ভিন্নতা দেখা গেছে। তবে জীবনের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি
ও সমাজসচেতনতা এখানে ফুটে ওঠে। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রমেশ।
বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য সমালোচনা
বলে নিচ্ছি রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে কতটুকুঃ
* তিনি সর্বমোট কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন ৫২ (বায়ান্নটি)।
* উপন্যাস ১৩ টি।
* নাটক ৩৮ টি।
* প্রবন্ধ ৩৬ টি।
* ছোটগল্প ৯৫ টি।
*সঙ্গীত ১৯১৫ টি।
এছাড়া ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘গীতবিতান’, ‘পত্রসাহিত্য’ রচনা করেন ও ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার তাঁর ভান্ডারে জমা পড়ে। তিনি কবি, চিত্রকর, গায়ক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা আর একজর বিজ্ঞ দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেবল বাংলা সাহিত্য নয় বরং অন্যান্য সকল সাহিত্যের সাথে তুলনা করলেও এমন একজন সাহিত্যিক খোঁজে পাওয়া বিরল। আমি প্রথমত রবীন্দ্র উপন্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। এখানে উপন্যাসের বিষয়বস্তু, পটভূমি, প্রশ্নপত্র বিবেচনা করে সেসবের উত্তরের নিমিত্তে তৈরি করবো বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্নোত্তর। এভাবে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সাহিত্যের প্রতিটি বিষয় নিয়ে লিখবো।
রবীন্দ্র উপন্যাস পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ
লেখক মোঃ অলিউল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত উপন্যাস “মহাপ্রয়াণ” পড়তে ক্লিক করুন- শ্রেষ্ঠ উপন্যাস
Monday, October 19, 2020
অন্তর্দ্বন্দ্ব
অন্তর্দ্বন্দ্ব
--মোঃ অলিউল্লাহ
জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে গিয়ে বিষাদগ্রস্থ হবো তা কে জানত। এটা ঠিক যে আমার কৃত কর্মের কোন নতুন আগাছা জন্ম নেয়নি। কিন্তু আমার সব থেকে বড় প্রতিকূলতা বা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়িয়েছো তুমি। আমি মানছি জীবনের গতিপথে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে কয়েকটা মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি। আর সেজন্যে আমি অনুতপ্ত।
-সরি? ভুল? এটাকে তুমি
ভুল বলবে?
তাহলে কী অন্য কিছু
বলা উচিৎ?
- -এতগুলো পাপকে তুমি কেবল ভুল বলে ইতি টানতে চাইছো?
আমি দুঃখিত। আমি লজ্জিত।
আমি জানি ভুল আর পাপের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু হওয়া উচিৎ। আর আমি এও জানি যে ভুলের সীমা
আমি অতিক্রম করেছি। আমি পাপী। কিন্তু আমি এর গ্লানি আর নিতে পারছিনা। তুমি এমন কেন?
তুমি কেন আমায় সামান্য সান্ত্বনা দেবার স্থলে বারবার আমার অতীতকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে
আমাকে কাঠগড়ায় দাড় করাও? কেন তুমি আমার আর্তনাদ শুনতে পাওনা? কেন তুমি দেখতে পাওনা
যে প্রায়শ্চিত্ত আমি করে যাচ্ছি দিনের পর দিন?
- - প্রায়শ্চিত্ত? হা হা হা, হাসালে বন্ধু। তুমি কী প্রায়শ্চিত্ত কাকে বলে এর সংজ্ঞা ও ভুলে গেছো?
কেন? আমি প্রতিনিয়ত
সৃষ্টিকর্তার সান্নিদ্য পাবার চেষ্টা করছি। আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করছি। আল্লাহর দরবারে
ফরিয়াদ করে ক্ষমা চাইছি আমার কৃত কর্মের জন্য। আমার জীবনে হারাতে হারাতে আর কিছুই বাকি
নাই। এখন আমি নিঃশ্ব। আমি কারো সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত নই। কারো ক্ষতি করতে চাইনা। কারো
প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ বা কোন প্রকার জিঘাংসাও কাজ করেনা। আমার মধ্যে কোন লোভ নেই, লালসা
নেই, উচ্চাকাঙ্ক্ষাও নেই। আমি একেবারে সাদামাটা জীবন যাপন করছি।
- - তো? তাতে কি হয়েছে?
তবুও বলবে আমি প্রায়শ্চিত্ত
করছিনা?
- - না। শুন। তুমি শিক্ষিত হতে পারো। সুশীল হতে পারো। কিন্তু তুমি ভুলে গেছো তুমি যা করেছো, তা কোন দিন ক্ষমা পাবার নয়। আর তুমি যাকে প্রায়শ্চিত্ত বলছো, সেটা আসলে নিজেকে সান্ত্বনা দেবার ছলে তোমাকে নির্দোষ ভাবার অভিপ্রায়। তুমি এখন যা যা করছো, সেটা করাকে প্রায়শ্চিত্ত না বলে, বলা উচিৎ তোমার মানবিক দায়িত্ব। আর সৃষ্টি কর্তার আরাধনা করা, নামাজ পড়া, রোযা রাখা, সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা এগুলো তো একজন আদর্শ মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব। যা তোমার নাবালক থেকে সাবালক হওয়ার সাথে সাথেই করা উচিৎ ছিল। বরং তুমি এতোদিন এসব না করে, এখন করছ। তোমার এতো দিনের না করা সকল কাজের যে অপূর্ণতা, সেগুলোই তো এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। আর তোমার যে শূন্যতা বা হারানোর কথা বললে সেসবের উত্তর একটাই, এসব হবার ছিলো। কেন নয়? তুমি যদি মুসলিম হও, তোমার তো জানার কথা যে তুমি যা অর্জন করবে বা যা কিছু হারাবে সবকিছুই সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। সেসবকে তুমি প্রায়শ্চিত্ত বলতে পারো না।
আচ্ছা তুমি কি একটিবারের
জন্যও আমার হয়ে কথা বলতে পারো না। মানে আমাকে এতো নিরোৎসাহিত না করে, কিছুটা তো আশা
জাগাতে পারো। বলতে তো পারো তুমি এমন কিছু করো, যা করলো তোমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে?
আর তুমি যে আমায় এতো দোষারোপ করছ, আমি কী সব কিছু নিজে থেকেই করেছি? তুমি কিছু করনি?
তুমি আমাকে বাধ্য করনি এসব কাজ করতে? আমি কী তোমার কথা শুনে কিছুই করিনি?
- - অবশ্যই পারি তোমাকে উপায় বলতে। আমি হয়তো তোমাকে কিছুটা পাপ মুক্ত হওয়ার উপায় বলে দিতে পারি। তবে তোমাকে যা করতে বলবো তা তুমি করতে পারবে না। তোমার সেই সাহস নেই। নিজেকে নিষ্কলংক ও নিষ্পাপ করতে যা তোমার করা দরকার, তা তুমি করতে পারবেনা। আর যদি পারো তাহলে আমায় নিশ্চিত করে বলো। আমাকে দোষ দিওনা, কারণ তুমি যা কিছু করেছ সেই সময়টা তোমার শিশুকাল নয়। তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক, শিক্ষিত ও হিতাহিত জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ। তুমি তোমার জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারনি। তোমার ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করতে সদা তুমি উৎসাহী ছিলে। তুমি ভালো মন্দ বিচার না করে কেবল ক্ষণিকের সুখ ভোগ করতে এসব অপকর্ম করেছো। যৌবনের ভার বহন করতে না পেরে তুমি কি না করেছো বলতে পারো? বাবা-মায়ের পাঠানো টাকা পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছো, মদ্যপান করেছো, গান-নাচ, অশালীন জীবন যাপন ও নারীদের ভোগ করা তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আর তুমি কিনা আমায় দোষ দিচ্ছ?
ঠিক আছে বলো আমি কী
করবো? কী করলে আমার এ অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে আমি মুক্তি পাবো? আমি পারবো যা তুমি বলবে,
তা করতে। আমাকে যে পারতেই হবে। বলো আমায়। প্লিজ একটিবার বলো।
- - তাহলে ছুটে তোমার সেই ফুফাতো বোনের কাছে। যাকে ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে দৈহিক মিলনের সূচনা করেছিলে। যদিও সেক্ষেত্রে তোমরা দু’জনেই পাপী, তবে তুমি প্রথমে তার কাছে তোমার দোষ স্বীকার করে বলো কোন উদ্দেশ্যে তার সাথে মিলিত হয়েছিলে? ক্ষমা চাও তার কাছে এবং দু’জন মিলে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। হয়তোবা খোদা তায়ালা তোমায় ক্ষমা করে দিতেও পারে।
- - তারপর যাও সেই সোফিয়ার কাছে, যার মা তোমাদের বাসায় কাজ করতো। তাকে তুমি ধর্ষণ করতে চেয়েছিলে, সঠিক সময়ে তার মা চলে আসায় তোমার হাত বেঁচে যায়। কিন্তু তাকে তুমি কম কিছু করনি। তার ও তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাও।
প্রথমটা মেনে নিলাম
আমার দোষ ছিলো। আর ইচ্ছে করলে তাকে খোঁজেও পাবো ও ক্ষমা চাইতে পারবো। কিন্তু দ্বিতীয়
অভিযোগটি আমি মেনে নিতে পারছিনা। কারণ আমাদের বাসায় যে মহিলা কাজ করতো তার মেয়ে প্রায়ই
আমাকে দৈহিকভাবে উস্কানি দিতো, সে চাইতো আমি তার সাথে কিছু করি। এমনকি সে আমার রোমমেট
এর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আর সব থেকে বড় কথা- সে ও তার মা এখন ঠিক কোথায়
আছে তা জানা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কারণ সেই বাসা ছেড়েছি পনেরো বছর হয়ে গেলো। কী করে জানবো
তারা কোথায় আছে?
- - শুন এসব তোমার মনগড়া যুক্তি। এসব বলে পার পাবেনা বুঝলে? তারপর যাও সেই নিলোফারের কাছে। যার সাথে তুমি দিনের পর দিন ও রাতের পর রাত ফোনালাপ করেছো। প্রেমের অভিনয় করেছো। আর যখনি তাকে সামনাসামনি দেখেছো, তাকে অপছন্দ করে, তিরস্কার করে তুমি চলে আসো। তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কোন মূল্যায়ন করোনি। সে তোমাকে পাবার জন্য বহুকাল চেষ্টা করেছে। হতে পারে সে অসুন্দর কিন্তু তার সুন্দর একটা মন ছিলো। তুমি তাকে কষ্ট দিয়েছো। ক্ষমা চাও তার কাছে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও কোন এক বেগানা নারীর সাথে সম্পর্ক করা ও মিথ্যে আশ্বাস দেবার জন্য।
এটা করতে পারবো। আমি
তার খোঁজ হয়তো পাবো এবং তার কাছে আমি ক্ষমা চাইবো।
- -এরপর যাও শরীফুন্নেছার কাছে ও রিমার কাছে। যাদের তুমি জীবন সঙ্গী করবে বলে দিনের পর দিন তাদের সাথে অবৈধ দৈহিক মিলনে সংঘঠিত হয়েছো। যদিও এতে তারাও সমান অপরাধী। কিন্তু তুমিই ছিলে সবকিছুর নাটেরগুরু। তোমার প্রলোবনে পড়ে মেয়ে দু’টো তাদের সকল সম্ভ্রম ভুলে তোমার হাতে সব কিছু সপে দিয়েছিলো। কী মর্যাদা দিয়েছো তাদের বিশ্বাসের? এমনকি শরীফুন্নেছা যখন নিজেকে শুধরে নিয়ে ভালো হতে চেয়েছিলো তখনো তার সাথে ছলনা করে তুমি তাকে ধর্ষন করেছো। কত পাপ করেছো তুমি নিজে হিসাব করতে পারবে?
কেন এসব
স্মরণ করিয়ে দিচ্ছো আমায়? কেন এতো লজ্জা দিচ্ছো আমাকে। আর কোন মুখ নিয়ে আমি ওদের সামনে
দাড়াবো? আমি কি পারবো এখন ওদেরকে বিয়ে করতে? আমি প্রতিশ্রুতি কি আমি পারবো ফিরিয়ে দিতে?
ওরা কারো না কারো ঘরে সংসার করছে। আমি কিভাবে এখন?
- - যা বলছি তা করতে পারলেই তুমি নিজের কাছে নিজেকে নির্দোষ ভাবতে পারবে। আর তুমি পারবেনা বলেই আমি তোমায় বলেছিলাম, সবই বৃথা চেষ্টা। তোমার সাহস নেই তা করার। তবুও যদি পারো, যাও সেসব মেয়েদের কাছে যাদের তুমি পথে-ঘাটে, ফোনে ও পরিচয় গোপন করে বিরক্ত করতে। ক্ষমা চাও সেই সব দেহবিক্রি করা নারীদের সাথে মিলিত হবার জন্যে। পারবে? জানি পারবে না।
আমি কি করবো বলো। তুমি
যা বলছো, তা কিভাবে করবো। এসব কাজ তো মোটেই সহজতর নয়।
- - কিন্তু এখানেই তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে তা ভেবো না। তোমার সকল কৃতকর্ম যথাযথ ধর্মীয় আইনের আওতায় অথবা গতানুগতি আইনের কাছে আত্মসমর্পন করে সকল অপরাধ স্বীকার করার পর, তোমার বিরোদ্ধে বিচারের যে সিদ্ধান্ত হবে তা মেনে নিলে হয়তো তুমি তোমার বিবেকের কাছে নির্দোষ বলে প্রমাণ করতে পারবে। এখন তোমার হাতেই তোমার দায়বদ্ধতা কিংবা মুক্তি।
এসব তুমি কীভাবে বলতে
পারো? তুমি কী আমার নও? আর যদি তুমি আমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করো, তবে কাকে আমি এতকাল
আপন ভেবেছি? কাকে আমি আমার জীবন দিয়ে অনুসরণ করেছি? কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমি এত
কিছু করেছি?
- - তোমার কান্না আজ দেখার কেউ নেই। তোমার এ কান্নার জন্য তুমিই দায়ী। একদিন আমি তোমাকে অনেক ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুমি আমার কথায় কর্ণপাত না করে নির্ভয়ে এতসব অপরাধ করেছো। আজ তুমি আমায় যতই আপন ভাবো, আমার জন্য বা আমাকে সন্তুষ্ট করতে তুমি কিছুই করনি। তোমার দেহ, তোমার যৌবনের তাড়না, তোমার জিগাংসাই তোমার কাল হয়ে দাড়িয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমি যতই ভাল কাজ করো না কেন, তোমার এই অপরাধবোধ তোমাকে অপরাধী করে রাখবে। কারণ তুমি প্রকৃত অর্থেই অপরাধী ও পাপী। তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত যে তোমাকেই করতে হবে।
Saturday, October 17, 2020
অনুশোচনা
অনুশোচনা
মোঃ অলিউল্লাহ
একদিন আমিও অন্ধকারে ঢিল মেরেছি,
কালোকে সাদা ভেবে বোকা বনে গিয়েছি।
কতইনা বীরত্ব দেখিয়ে একে ওকে বলতে চেয়েছি ভালোবাসি,
পরে অবশ্য দু’একটা জায়গায়, বড্ড নাকানি-চোবানি খেয়েছি।
তবুও বলতে তো পেরেছি বলে কী বাহাদূরীটাইনা করেছি!
দিনশেষে আমিও বুঝতে পেরেছি, কাল বেলায় অবেলাবোধ করে বেলা ফুরিয়েছি।
কী দরকার ছিলো? হিসেব কষার সময় কী ছিলো?
বয়সটাই যত নষ্টের মূল। নাকি ভাবনাগুলোই ছিলো এলোমেলো?
এখনকার মতো তখন যদি বুঝতাম!
কী করতে? মহৎ কোন সাধু-দরবেশ বনে যেতে?
আরে নারে! নেহাত নিজেকে দোষমুক্ত তো রাখতে পারতাম।
কিন্তু সেই ভাবনারা যে ডুবে ছিলো অচেনা এক মগ্নতাতে।
তবে আজ কেন হঠাৎ এসব বলছো শুনি?
নিজ দোষে করেছি ভুল কত তাহাই গুণি।
যে গ্লানি আজ বিবেকের তাড়নায়, সে তো জাগেনি সেই ক্ষণে
অপরাধী হয়ে বয়ে বেড়াই কলঙ্ক কত, তাহা ভুলি কেমনে।
তুমি তো এখন, আর নও তেমন-
কিসের এতো ভাবনা তোমার?
ভাবনা! সে তো মহা যাতনা
যত ভালোর ভান্ডার, করে দিচ্ছে মন্দরা চুরমার।
আশাকে দিও না হতাশার জলে ভাসিয়ে,
জাগ্রত বিবেকের অপার চেষ্টায় যাও মন্দকে ডিঙ্গিয়ে।
দেখবে এ কেবলি তোমার নিজেকে চেনার উপায় বৈ কিছু নয়
দিশেহারা ভাবনারা সব মানবে পরাজয়।
যে পথে পাবে সত্যের আহ্বান, কল্যাণের জয়গান, সর্বসুখের বাণী
তারে লও টানি, ধারণ করো বক্ষে তোমার, যে দিয়েছে দরশন
মন-প্রান উজাড় করে তাঁহারে লও মানি।
সেদিনের বক্রতা ভুলে, সৎ পথে রাখো নিজের নিয়ন্ত্রন।
যে কর্মে তুমি স্রষ্টাকে খুজে পাও,
যে পন্থায় তুমি পরকালের দেখা পাও,
তাহাকে চিরতরে আপন করিয়া নাও
এর চাইতে শ্রেষ্ঠ কিছুই নহে, পারলে খুজিয়া দাও।
Thursday, October 15, 2020
তোমার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান
সেই প্রথম উপলব্ধি আমার যখন তুমি নিরক্ষর হয়েও আমায় অনেক কিছুই শিখাতে শুরু করলে। তোমার আমার সম্পর্কটা সামান্যও দূরত্বের ছিলনা। যদিও আমার আগে তুমি আরো সাতজনকে এই পৃথিবীর আলোতে করেছো আলোকিত। আমার মনে পড়ে, ধীরে ধীরে শৈশব পেড়িয়ে কৈশরে প্রবেশ করলেও আমি তোমার আচল ছাড়িনি। তুমি আমায় ছেড়ে দাও নি একেলা, যেভাবে অন্যান্যদের পথ চলতে কিছুটা ছেড়ে দিয়েছিলে। তুমি প্রাকৃতিক আধুনিকতায় অসম্ভব আধুনিক ছিলে, কিন্তু প্রথাগত ও রীতিসম্মত আধুনিকতার ধার ধারনি। প্রকৃতি তোমায় আমার প্রতি একটু বাড়তি যত্নশীল করেছিল বলেই আমার মধ্যে তুমি নতুন আবিষ্কার করতে চেয়েছো।
এতো আবেগী তুমি আর এতো বেশী সংবেদনশীল যে আমার সামান্য অসদাচরনেই মারাত্মক বেদনাবোধ করতে। আবার আমার অতি তুচ্ছ চাহিদাগুলোকেও অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে তা পূর্ণ করবার তাগিদে ওঠে পড়ে লাগতে। আমি অভাবের ভাবটা বুঝবার আগেই কেমন যেনো তুমি বুঝে যেতে এটা আমার দরকার। অপ্রতুল সব ইচ্ছা পূরণে যখন তোমার কাছে একটার পর একটা বায়না ধরতাম, আমি দেখেছি তোমায়, কী করতে তুমি তা পাইয়ে দিতে আমাকে। আমি দেখেছি কত মানুষের কত অপবাদ ও কত যাতনা সহ্য করেছো আমার জন্য। কিন্তু আমি জানতে চায়নি কেন এতসব করছ আমার জন্য। আর আমার এটাও সঙ্কা ছিলো যে, তুমি আমাকে সাফল্যের চূড়ায় অবতীর্ণ করলেও তার বিনিময়ে আমি তোমায় কিছুই দিতে পারবোনা।
আমার আসঙ্কাগুলো সত্যি হোক তা আমি চাইনি মন থেকে। কিন্তু তুমি সেটাই করলে, যেটা আমার অবচেতন মন বলে দিয়েছিলো। আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছো, আমি যেখানেই থাকতাম। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত তুমি আমার মধ্যে বিরাজ করেছো, যদিও তোমার আরো সন্তানেরা বিদ্যমান ছিলো। সবার প্রতিই সমান মনোযোগ তোমার, তুমি বলতে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম না, যেভাবে বিশ্বাস করেনি তোমার অন্য সন্তানরা। তারা ভাবতো সবচেয়ে বেশী আমাকেই ভালোবাসো। আমিও তাই বিশ্বাস করতাম। কেন জানি আমাকেই তুমি নির্ভরযোগ্য ভাবতে সব সময়।
আবার আমার সকল প্রয়োজনে, বাবা ও মায়ের দায়িত্বটা তুমি একাই নিয়ে নিতে। সেই আদীম ও অনাধুনিক মা কিভাবে উচ্চ শিক্ষিত মায়ের চেয়েও বেশী যত্নশীল হয়ে ওঠতে পারে সেটা তোমায় হারিয়ে বুঝতে পেরেছি। ছোট একটা অপারেশনে আমি একসপ্তাহ হাসপাতালে ছিলাম। আর কাউকে সেখানে পাইনি, তোমাকে ছাড়া। তুমি সর্বদা নিজেকেই আমার জন্য নির্ভরযোগ্য করে রাখতে। আর তুমি জানতে তোমাকে ছাড়া আমি, আমার অন্য ভাই বোনেরা খুবই অসচল। তুমি ততদিন রয়ে গেলে যতদিন আমরা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারি।
কিছু অসাধারণ অভ্যাস ছিল তোমার, যা তুমি আমাদের শিখাতে চেয়েছো। তোমার কিছু গুণাবলী স্বভাবজাতভাবে আমরা পেয়ে গেছি। কিন্তু তুমি মহান রাব্বুল আলামিনের কিছু বৈশিষ্ট খুব যত্নে আকড়ে ধরেছিলে, প্রবল সমস্যাতেও যা কিঞ্চিত নড়ভড়ে হয়নি। আমার ধ্যান ধারণা এই পৃথিবীর বিলাসীতা, আড়ম্বর ও সৌখিনতায় পৌছেগিয়েছিল। আর সেই অবস্থায় তুমি আমায় পৌছে দিয়েছো। কিন্তু নিজেকে তুমি করে রেখেছো স্বভাবজাত অভাবী, অনাহারী, অসহায় আর প্রচন্ডরকমের ধর্মভীরু। আমি ভাবতাম তুমি ধর্ম নিয়ে একটু বাড়াবাড়িই করছো, ধর্মকে এতো মানার কি আছে (আল্লাহ আমায় করুক)। কিন্তু তুমি সমস্ত কাজ করে, চিন্তা ও সকল দায়-দায়িত্ব পালন করেও সৃষ্টি কর্তার শুকরিয়া গোজার করা ও প্রার্থনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে দ্বিধান্বিত হওনি।
সৃষ্টিকর্তার নিকট তোমার সমুন্নত ও সুউচ্চ প্রাপ্তি কামনা করছি। আমার পাপ মুখে তোমার মঙ্গল কামনা করছি। যা তুমি করে গিয়েছি পরকালের জন্যে সেসব যেনো সামান্যও বৃথা না যায়, বরং আল্লাহ তায়ালা যেন তোমার সমস্ত চেষ্টার জন্য অতিরিক্ত সওয়াব বরাদ্দ করে তোমায় জান্নাতের সমুন্নত আশ্রয়ে অবতীর্ণ করেন।
আমি তোমার চলে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক মনে করছিনা কোনভাবেই। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কোন ইচ্ছাকেই উপেক্ষা করার সাহস আমাদের নেই। তিনি অবশ্যই তোমাকে তোমার যথার্থ মর্যাদা দিয়েছেন এই পৃথিবীতে আর তেমনই পুরস্কার হয়তো দিবেন আখিরাতে। সারা জীবনে তোমার যে যন্ত্রণা, তোমার শ্রম ও তোমার সকল ত্যাগের পরিমাণ হিসাব করলে নিজেকে কোনভাবেই তুলনা করতে পারিনা। একজন নারী হয়ে তুমি যা কিছু করেছো, আমি তোমার সন্তান- একজন পুরুষ হয়ে সেই সবের অর্ধেক ও করতে অক্ষম।
তোমার চলে যাওয়ার পর থেকেই তুমি বার বার ফিরে আসো আমার কাছে। একেকরাতে একেকভাবে তুমি স্বপ্ন হয়ে আসো। প্রথমদিকে তোমার আগমণ আমায় সান্ত্বনা দিতো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই আমি বিরহ কাতর হচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি, যেভাবে তোমার অস্তিত্ব আমায় ঘিরে ছিলো যতদিন তুমি ছিলে, এখনো তোমার অস্তিত্ব আমায় সেই ভাবেই অনুসরন করছে। মাগো কেন চলে গেলে? আমার যে বড্ড একা লাগছে মা। তোমায় ছাড়া কি করে থাকি, তুমি কী দেখছো না?
Wednesday, October 7, 2020
আমি দ্রষ্টা
আমি দ্রষ্টা সেই নির্মমতার
যেখানে দেখি দুর্বলের প্রতি দুর্ব্যবহার।
যেখানে দেখি অপপ্রয়োগ ক্ষমতার,
দেখি যেখানে দুশ্চরিত্র ও অত্যাচারির বর্বরতার।
স্বাধীন দেশ হয়েছে কবেই, মানুষ পরাধীন রবেই-
যদি না দেশে স্বাধীনতা আসে মানুষের মাঝে
যদি না দেশ কর্তাগণ জাগ্রত হয় বিবেক তাড়িত হয়ে,
ততদিন নিরব সবাই অসহায়ে, ততদিন মুখ খুলবেনা মৃত্যু ভয়ে।
যেখানে পিতার সম্মুখে সন্তান খুন হয়,
যেখানে স্বামীর সম্মুখে স্ত্রী ধর্ষিত হয়,
যেখানে মায়ের সম্মুখে মেয়ে লাঞ্ছিত হয়,
সে দেশের আইন কী করে নিশ্চুপ রয়?
অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে সহস্র মানুষের মৃত্যু দেখেছি
মহামারিকে আমন্ত্রণ করে লক্ষ মানুষের কর্মহীনতা দেখেছি,
বেহিসেবি দূর্নীতির বাহারি রূপ দেখেছি,
আর স্তব্ধ হয়ে অসহায় মানুষের দুঃখগাথা গল্প লিখেছি।
ক্ষমতার দাপোটে সেচ্ছাচারিতার বৈরি প্রভাবের দ্রষ্টা আমি
কলঙ্কের কলুষতাকে মুছে ফেলে, উচ্চরবের চাপাবাজি শুনেছি
পিড়িতে বসার যোগ্যতা রাখেনা যে,তাকেও দেখেছি মঞ্চের সিংহাসনে
জ্ঞানী-মহাজ্ঞানীকেও এমাটির বুকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে দেখেছি।
আমি কেবলি মামুলি এক দ্রষ্টা, ফরিয়াদ করি হে মহান স্রষ্টা
নিশ্চয়ই তোমার অগোচর নয় কোন কিছু,
সবি তুমি জানো কে কোথায় সমান-অসমান, কোথায় উচুনিচু।
এও জানি তুমি শ্রেষ্ঠ বিচারপতি,
সবকিছুর সঠিক বিচার করবে এটাই আকুতি।